প্রাচীন গ্রেকো-রোমান রহস্যবাদী ধর্মসমূহ

(সম্প্রসারিত হবে)

Table of Contents

ভূমিকা ও “মিস্টিসিজম” শব্দের ব্যুৎপত্তি

রহস্য ধর্ম, রহস্য গোষ্ঠী, পবিত্র রহস্য বা রহস্য (Mystery religions, mystery cults, sacred mysteries or simply mysteries) ছিল গ্রেকো-রোমান জগতের একটি ধর্মীয় সম্প্রদায় যাতে কেবল দীক্ষাপ্রাপ্তরাই (mystai) অংশগ্রহণ করতে পারত। এই ধর্মের মূল বৈশিষ্ট্য হল দীক্ষার বিবরণ এবং আচার অনুশীলনের সাথে সম্পর্কিত গোপনীয়তা, যা বাইরের লোকদের কাছে প্রকাশিত নাও হতে পারে। গ্রেকো-রোমান প্রাচীনত্বের রহস্যগুলির মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ছিল এলিউসিনীয় রহস্যবাদ, যা অনেক প্রাচীন, এমনকি গ্রীক অন্ধকার যুগেরও পূর্বের ছিল। রহস্যবাদী সম্প্রদায়গুলো লেট অ্যান্টিকুইটি বা শেষ প্রাচীন যুগে বিকাশ লাভ করে; রোমান সম্রাট জুলিয়ান বা জুলিয়ান দি অ্যাপোস্টেট (ধর্মত্যাগী জুলিয়ান) খ্রিস্টীয় ৪র্থ শতকে তিনটি পৃথক রহস্যবাদী সম্প্রদায়, বিশেষ করে মিত্রবাদের দ্বারা দীক্ষিত হয়েছিলেন বলে জনা যায়। গ্রেকো-রোমান রহস্যবাদের গোপনীয় প্রকৃতি এবং খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতক থেকে রহস্যবাদী সম্প্রদায়গুলো খ্রিস্টীয় রোমান সাম্রাজ্যের দ্বারা নিপীড়িত হতে থাকায়, এই ধর্মগুলোর ধর্মচর্চা সম্পর্কে বিভিন্ন বিবরণ, চিত্র এবং আন্তঃসাংস্কৃতিক অধ্যয়নের মাধ্যমেই জানতে হয়। “গোপনীয়তা এই ধর্মগুলোর গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে থাকায়, আমরা বিভিন্ন রহস্যবাদী বিশ্বাস সম্পর্কে কমই অবহিত”। এই রহস্যবাদ্গুলো সম্পর্কে অনেক তথ্য এসেছে প্রাচীন রোমের বিশিষ্ট লেখক ও পণ্ডিত মার্কাস টেরেন্টিয়াস ভারোর (খ্রিস্টপূর্ব ১১৬-২৭ অব্দ) কাছ থেকে। জাস্টিন মার্টার ২য় শতাব্দীতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন যে, এই রহস্যবাদগুলো আসলে সত্য ধর্মের শয়তান বা দৈত্যসংক্রান্ত অনুকরণ। এবং সত্য বিশ্বাসের “দৈত্যাদিসংক্রান্ত অনৈতিক নকল”, এবং “মোজেস যেমনটা বলেছেন, এই শয়তানরা জুপিটারের কন্যা প্রোসারপিনা হয়ে মানুষকে উত্তেজিত করে, যাতে তারা তাকে কোরে (গ্রিক নারী মূর্তি) হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে”। (ফার্স্ট অ্যাপোলজি)। প্রথম থেকে চতুর্থ শতাব্দীর মধ্যে, খ্রিস্টধর্ম রহস্যবাদগুলোর সাথে সরাসরি প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। সেই সময় “রহস্যবাদী সম্প্রদায়গুলোও খ্রিস্টীয় বাণীর গ্রহণের ক্ষেত্রে খ্রিস্টধর্মের অ-ইহুদি দিগন্তের একটি অন্তর্নিহিত উপাদান হিসেবে কাজ করে।” তৃতীয় শতাব্দীর শুরু থেকে, বিশেষ করে সম্রাট কনস্ট্যান্টাইনের সময় থেকে রহস্যবাদী ধর্মগুলোর উপাদানগুলো মূলধারার খ্রিস্টান চিন্তায় অন্তর্ভুক্ত হতে শুরু করে, উদাহরণস্বরূপ যা ডিসিপ্লিনা আরকানিতে প্রতিফলিত হয়।

প্রাচীন গ্রিক দর্শনের বিকাশেও গ্রিকো-রোমান রহস্যবাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে পুরাণের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের প্রবণতা সব চিন্তাবিদদের মধ্যেই কমবেশি দেখা যায়। তবে আদি গ্রীক দার্শনিকদের মধ্যে তা এত বেশি উপস্থিত যে, গ্রীক দর্শনকে ভালভাবে বুঝতে হলে তাতে পুরাণ ও ধর্মের প্রভাব কতটুকু ছিল তা নিয়ে আলোচনা করাও আবশ্যক হয়ে পড়ে। গ্রীক দর্শনের সাথে গ্রীকদের বিশ্বাসের সম্পর্ক খুব নিকট ও নিবির। গ্রীক ধর্মের দুটো প্রধান দিক দুটো – হোমার ও হেসিয়ডের অলিম্পিক দেবতাদের ধারণা ও গূঢ় ধর্মমতসমূহ যেগুলোর মধ্যে প্রধান ছিল এলিউসিনীয় ও অর্ফিক ধর্মীয় মত। এই দিকটি প্রাধান্য লাভ করে খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকে। খ্রিস্টপূর্ব ৭ম শতকের দিকে এলিউসিনীয় ধর্মমতের প্রসার ঘটে। সব অনুসারীর জন্য অমরত্বের আশ্বাস, বিস্তারিত দীক্ষামূলক আচার-অনুষ্ঠান, গোপন শপথ ও মরমি মনোভাব ছিল এই ধর্মের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দিক। এখানে নৈতিক আদর্শের চেয়ে ধর্মীয়-আচার-অনুষ্ঠানাদির উপরেই জোর দেয়া হত। ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ সহ ধর্মের বিভিন্ন নির্দেশ পালন করাকেই প্রত্যেকের জন্য যথেষ্ট বলে মনে করা হত। এই ধর্মে বিশ্বাসীদের প্রতি নৈতিক অনুশীলন ও সংস্কার সাধনের চেয়ে মৌলিক আনুগত্যের দাবিই বেশি ছিল। অর্ফিক ধর্মমত এলিউসিনীয় মতের থেকে আলাদা ছিল। প্রথম দিকে এর আচার অনুষ্ঠানাদি ছিল বেশ কঠোর, ও মানুষ বলি দেয়ার প্রথাও তখন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের অন্তর্ভূক্ত ছিল। অর্ফিক মতে, দেবতাদের পূর্ণতার অধিকারী হওয়া ও পরিণামে স্বর্গীয় শক্তির সাথে মিলিত হওয়াই মানুষের লক্ষ্য। তাদের মতে এটি সম্ভব জন্মান্তরবাদের সুদীর্ঘ অনুক্রমের মাধ্যমে। এই লক্ষ্য অর্জনের উপায় হিসেবে অর্ফিকবাদ কিছু কঠোর নিয়ম অনুশীলন করার নির্দেশ প্রদান করে। এই ধর্মে দেহকে মনে করা হত অশুভের উৎস্য। তবে এই মতের সাথে প্রচলিত গ্রীক মতের বিরোধ ছিল। প্রচলিত মত অনুসারে মানুষের দেহই শুভ ও পূর্ণতার উৎস্য। সাধারণ মানুষের কাছে হোমারের ধর্মের (যেখানে দেবতাদের মানুষ রূপে বর্ণনা করা হয়) চেয়ে এইসব গূঢ় ধর্মের আবেদন ছিল অনেক বেশি। অমরতার প্রতিশ্রুতি ও জীবন সম্পর্কে আবেগাত্মক চেতনা প্রভৃতি কারণেই সাধারণ মানুষ তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। পিথাগোরীয়বাদের ওপর অর্ফিকবাদের প্রভাব নিয়ে এই নিবন্ধেই আলোচনা করা হয়েছে।

প্রাচীন পাশ্চাত্য দর্শনের উৎপত্তি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে “প্রাচীন পাশ্চাত্য দর্শনের ভূমিকা” লেখাটি পড়তে পারেন

ইংরেজি শব্দ ‘mystery’ উৎপত্তিগতভাবে গ্রিক বহুবচন Mystêria হিসেবে প্রথম দেখা যায়, পরে এটি ল্যাতিন শব্দ mysterium হিসেবে বিকশিত হয়, যেখান থেকে ইংরেজি শব্দটি এসেছে। গ্রীক শব্দ mystêrion (একবচনে) এর ব্যুৎপত্তি পুরোপুরি পরিষ্কার নয়, যদিও পণ্ডিতগণ মনে করেন শব্দটি গ্রিক শব্দ myo থেকে এসেছে যার অর্থ হচ্ছে “বন্ধ করা”, মূলত চোখ বন্ধ করাকে বোঝায়, আর চোখ বন্ধ করার পর আমরা রহস্যের জগতে চলে যাই। সাম্প্রতিককালের কিছু হিট্টাইট পণ্ডিত প্রস্তাব করেছেন, গ্রিক শব্দটি এসেছে হিট্টাইট ক্রিয়াপদ munnae থেকে, যার অর্থ হচ্ছে “গোপন করা, লুকিয়ে রাখা, দৃষ্টি থেকে আড়াল করা”। এই প্রাচীন গ্রীক শব্দ “mystery” (μυστήριον) এর অর্থ “রহস্য বা গোপনীয় অনুষ্ঠান” এবং এটি ক্রিয়াপদ mueō ( μυέω) এর সাথে সম্পর্কিত যার অর্থ হচ্ছে রহস্যবাদে দীক্ষালাভ, এবং এর বিশেষ্য হচ্ছে mustēs (μύστης) যার অর্থ হচ্ছে দীক্ষাপ্রাপ্ত ব্যক্তি। mustikós (μυστικός ) শব্দটির দ্বারা বোঝায় “রহস্যবাদের সাথে সংযুক্ত”, বা “ব্যক্তিগত, গোপন” (আধুনিক গ্রীকেও এর অর্থ একই)।

গ্রেকো-রোমান রহস্যবাদের বৈশিষ্ট্য

রহস্যবাদ ছিল হেলেনবাদী বা হেলেনিস্টিক ধর্মের তিনটি প্রকরণের একটি, অন্য দুটি ছিল সম্রাট কাল্ট বা কোন জাতি বা রাষ্ট্র সম্পর্কিত জাতিগত ধর্ম, এবং দার্শনিক ধর্ম যেমন নব্যপ্লেটোবাদ। এই হেলেনবাদী ধর্মের এই তিনটি প্রকরণ ধর্মতত্ত্বকেও তিনটি ভাগে ভাগ করে – ভারো এর নাগরিক ধর্মতত্ত্ব বা রাজনৈতিক ধর্মতত্ত্ব, যা রাষ্ট্রধর্ম এবং সমাজে এর স্থিতি আরোপনমূলক প্রভাব নিয়ে বিবেচনা করে; প্রাকৃতিক ধর্মতত্ত্ব যা প্রকৃতি ও স্বর্গীয়তার মধ্যকার দার্শনিক অনুমান বিষয়ে চিন্তা করে; এবং পৌরাণিক ধর্মতত্ত্ব, যা পুরাণ ও ধর্মীয় আচার বিষয়ে চিন্তা করে। রহস্যবাদগুলি এভাবে নাগরিক ধর্মের প্রতিযোগী নয়, বরং পরিপূরক ছিল। কোনও ব্যক্তি সহজেই রাষ্ট্রীয় ধর্মের রীতিনীতিগুলির সাথে জড়িত হতে পারতেন, আবার এক বা একাধিক রহস্যবাদের দীক্ষাও নিতে পারতেন, একই সাথে কোন নির্দিষ্ট দার্শনিক সম্প্রদায়ের সাথেও জড়িত থাকতে পারতেন। গণধর্মের বিভিন্ন বিষয় যেমন বলিদান, আচারগত ভোজন, এবং আচারগত পবিত্রকরণ রহস্যবাদেও ছিল, কিন্তু রহস্যবাদগুলোতে অতিরিক্ত উপাদানও উপস্থিত ছিল যা গোপনে সংঘটিত হত, এবং কেবল তারাই তাতে অংশ নিতে পারতেন যারা সেই রহস্যবাদে দীক্ষিত হতেন। রহস্যবাদী সম্প্রদায়গুলো প্রাচীন ধর্মীয় রীতি সংরক্ষণের জন্য একটি যথাযোগ্য স্থান হিসেবে কাজ করে।

যদিও ইতিহাসবিদরা সমস্ত রহস্যবাদী ধর্মকে শ্রেণিবদ্ধ করার জন্য একটি কঠোর সংজ্ঞা তৈরির প্রচেষ্টা ছেড়ে দিয়েছেন, তবুও রহস্যবাদী সম্প্রদায়গুলিকে বেশ কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্যের দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে। সমস্ত রহস্যবাদী উপাসক সম্প্রদায় তাদের অনুশীলনের গোপনীয়তায় জোর দেয় এবং একটি নতুন সদস্যের দলে যোগদানের ক্ষেত্রে একটি আবেগীয় দীক্ষার রীতি অনুসরণ করে। সদস্যরা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে অংশগ্রহণ করতেন, তারা রাতের বেলায় জমায়েত হতেন, জমায়েতের পূর্বে পবিত্রকরণের ব্যবস্থা থাকত, অংশগ্রহণের জন্য পরিশোধের বাধ্যবাধকতা ছিল, ইহকাল ও পরকালের জন্য পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি ছিল, এবং পুরনো রহস্যবাদী জমায়েতের স্থান সর্বনিকটস্থ নগর থেকে পরিবর্তনশীল দূরত্বে অবস্থান করত। এছাড়া, মিত্রবাদী উপাসক সম্প্রদায় ছাড়া অন্যান্য রহস্যবাদের সদস্যের সকলেই সকলের কাছে মুক্ত ছিল, যাদের মধ্যে নারী ও পুরুষ, দাস ও স্বাধীন নাগরিক, তরুণ ও বৃদ্ধ ইত্যাদি ছিল। সকল ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্যই খরচ ছিল, যার ফলে অনেকেই যোগদান করতে পারত না। আর যদিও রহস্যবাদগুলো গোপন ছিল, সেগুলো খুব বেশি রহস্যময় ছিল না। এই কারণে, প্রাচীন গ্রীক রহস্যবাদগুলোর সম্পর্কে আমাদের মধ্যে যেসব ধারণা রয়েছে সেগুলোকে বোঝা হয়েছে সাধারণ ইন্দো-ইউরোপীয় ধর্ম ও সমান্তরালে ইন্দো-ইরানীয় ধর্মের নির্দিষ্ট বিষয়ের প্রতিফলন হিসেবে। গ্রেকো-রোমান প্রাচীন যুগের রহস্যবাদী সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে রয়েছে এলিউসিনীয় রহস্যবাদ, ডায়োনিসীয় রহস্যবাদ, এবং অর্ফিক রহস্যবাদ। ধর্মীয় ক্ষেত্রে রোমানরা অন্যান্য জাতিদের থেকে যেসব দেবদেবীর ধারণাকে গ্রহণ করেছিল তাদেরকেও রহস্যবাদে পূজা করা হতে থাকে, এদের মধ্যে ছিল মিশরীয় দেবী আইসিস, মিথ্রবাদী রহস্যবাদের পারস্য দেবতা মিথ্রাস বা মিথ্র, থ্রেসীয় বা ফ্রিজীয় সাবাজিয়াস এবং ফ্রিজীয় সিবেলি।

এলিউসিনীয় রহস্যবাদ

ভূমিকা ও ব্যুৎপত্তি

এলিউসিনীয় রহস্যবাদ (Eleusinian Mysteries) ( গ্রিক: Ἐλευσίνια Μυστήρια ) ছিল ডেমেতের এবং পার্সিফোনের উপাসক সম্প্রদায়ের জন্য প্রতি বছর প্রাচীন গ্রিসের এলিউসিসের প্যানহেলেনিক বা সকল গ্রিকের জন্য উন্মুক্ত স্যাংকচুয়ারি ভিত্তিক একটি দীক্ষাদানভিত্তিক ধর্ম বা রহস্যবাদ। তারা হ’ল “প্রাচীন গ্রিসের গোপন ধর্মীয় আচারের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত”। এই রহস্যবাদের ভিত্তি ছিল একটি পুরাতন কৃষিবাদী উপাসক সম্প্রদায়, এবং এটির মাইসিনীয় পর্যায়ের ধর্মীয় অনুশীলন থেকে উদ্ভূত হবার কিছু সাক্ষ্যপ্রমাণও রয়েছে। এই রহস্যবাদ পাতালপুরীর রাজা হেডিসের দ্বারা দেমেতেরের থেকে তার কন্যা পারসিফোনের অপহরণের পুরাণকে প্রতিফলিত করে, যে ঘটনাটি তিনটি পর্যায়ের একটি চক্রে সাধিত হয় : অবতরণ (descent বা হারানো), অনুসন্ধান, এবং উত্তোরণ (ascent বা άνοδος); যেখানে এর মূল সারভাবটি উত্তোরণ যখন পারসিফোনের সাথে তার মা দেমেতেরের পুনর্মিলনী ঘটে। এটি হেলেনবাদী পর্যায়ের একটি প্রধান উৎসব ছিল এবং পরে রোমেও ছড়িয়ে পড়ে। একই ধরণের ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলি নিকট প্রাচ্য এবং মিনোয়ান ক্রিটের কৃষিভিত্তিক সমাজেও দেখা যায়। কৃষ্ণাঙ্গ সমিতিতে এবং মিনোয়ান ক্রেটে দেখা যায়।

আচার, অনুষ্ঠান এবং বিশ্বাসগুলি অ্যান্টিকুইটি বা প্রাচীন যুগ থেকে গোপনে এবং ধারাবাহিকভাবে সংরক্ষণ করা হত। দীক্ষিতদের জন্য, পার্সিফোনের পুনর্জন্ম প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তর প্রবাহিত জীবনের অমরত্বকে প্রতীকায়িত করত, এবং পরকালে তারা পুরস্কৃত হবে বলে বিশ্বাস করত। অনেক চিত্রকর্ম এবং মৃৎশিল্পের টুকরো রয়েছে যা রহস্যগুলির বিভিন্ন দিক চিত্রিত করে। রহস্যগুলি পরকালীন জীবন দেখানো বা সামনে নিয়ে আসার সাথে সম্পর্কিত ছিল বলে কোন কোন পণ্ডিত মনে করেন, এলিউসিনীয় রহস্যবাদের ক্ষমতা ও এতদিন ধরে টিকে থাকার পেছনে যে দুই হাজার বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে চলা আচার, অনুষ্ঠান ও অভিজ্ঞতা রয়েছে তার পেছনে সাইকেডেলিক ড্রাগ বা মানসিক অবস্থা পরিবর্তনকারী ঔষদ বা এনথিওজেনের ভূমিকা রয়েছে। শহরটির নাম এলিউসিস শব্দটিকে গ্রিকপূর্ব বলে মনে হয়, এবং এটি এলিসিয়াম ও গ্রিক দেবী ইলিথিয়া এর নামের সাথে সম্পর্কিত বলে মনে হয়। ইলিউসিস নগরের রহস্যবাদকেই এলিউসিনীয় রহস্যবাদ ( গ্রিক: Ἐλευσίνια Μυστήρια) বলা হয়। এলিউসিস নামটি গ্রিক-পূর্ব বা গ্রিক ভাষার পূর্বে সেই অঞ্চলে যে ভাষা ছিল সেই ভাষার, এবং নামুটি দেবী ইলিথিয়া এর সাথে সম্পর্কিত হয়ে থাকতে পারে। তার নাম Ἐλυσία ( এলিসিয়া ) ল্যাকোনিয়া এবং মেসিনি অঞ্চলে তার নাম ছিল এলিসিয়া (Ἐλυσία), যা সম্ভবত ইলেউসিনিওস এবং এলিউসিস মাসের নামের সাথে সম্পর্কিত, তবে এটি বিতর্কিত।

দেমেতের এবং পার্সিফোন

এলিউসিনীয় রহস্যবাদ হোমারীয় স্তোত্রের (আনু. খ্রিস্টপূর্ব ৬৫০ অব্দ) একটিতে বর্ণিত কৃষি ও উর্বরতার দেবী দেমেতের সম্পর্কিত একটি পৌরাণিক কাহিনীর সাথে সম্পর্কিত। স্তোত্রটি অনুসারে দেমেতেরের কন্যা পার্সিফোনকে (যাকে কোরে নামেও ডাকা হয়) পৃথিবীর সকল ফুলকে রং করার দায়িত্ব অর্পন করা হয়। কিন্তু এই কাজ শেষ করার আগে, তাকে পাতালপুরীর দেবতা হেডিস অপহরণ করে নিয়ে যান। বিক্ষিপ্ত দেমেতের তার মেয়েকে সারা পৃথিবীতে খুঁজে বেড়ান। তিনি পৃথিবীতে ভয়ঙ্কর খরার সৃষ্টি করেন, যার ফলে মানুষ অনাহারে ভোগে এবং দেবদেবীদের জন্য বলি দেয়া ও তাদের পূজা করা বন্ধ করে দেয়, এর ফলে জিউস বাধ্য হয়ে এবং দেমেতেরের দুর্দশা দেখে তার মেয়ে পার্সিফোনকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেবার ব্যবস্থা করেন।

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, তার অনুসন্ধানের সময় দেমেতের দীর্ঘ পথ ভ্রমণ করেছিল এবং এই পথে অনেক ছোট ছোট অভিযান কাহিনী ছিল। একটিতে তিনি ট্রিপ্টোমেলাসকে কৃষির গোপন বিষয় শিখিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত, জিউসের সাথে আলোচনার পর দেমেতের তার মেয়ের সাথে পুনরায় মিলিত হয়েছিলেন এবং পৃথিবী তার পূর্বের শ্যামলিমা এবং সমৃদ্ধি – প্রথম বসন্তে ফিরে আসে। জিউস এবং অন্যান্য দেবদেবীরা ক্ষুধার্ত মানুষের আর্ত চিৎকারে ও যন্ত্রণার শুনতে পেরেছিলেন, এতে হেডিস বাধ্য হয়ে পার্সিফোনকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু গ্রিক নিয়তিদেবীর একটি নিয়ম ছিল, যেই পাতালপুরী থেকে কোন খাবার বা পানীয় গ্রহণ করবে তাকে সেখানে অনন্তকাল কাটাতে হবে। পার্সিফোনকে তার পুনরুদ্ধারের জন্য প্রেরণ করা হার্মিসের কাছে ছেড়ে দেওয়ার আগে হেডিস তাকে ডালিমের বীজ খেতে (কাহিনী অনুসারে ছয়টি বা চারটি) প্ররোচিত করেছিলেন, যার জন্য তাকে প্রতি বছর কয়েক মাসের জন্য পাতালপুরীতে ফিরে যেতে হয়। তিনি ছয় বা চার মাস (বীজ প্রতি এক মাস) হেডিসের সাথে থাকতে বাধ্য থাকেন এবং বছরের বাকি সময়টি মায়ের সাথে মাটির উপরে থাকেন। এর ফলে একটি দীর্ঘ সময় ধরে দেমেতের পার্সিফোনের অনুপস্থিতির কারণে দুঃখের কারণে পৃথিবীতে চাষে অবহেলা করেন।পার্সিফোন যখন ফিরেআসেন, দেমেতের তখন আনন্দিত হন এবং পুনরায় পৃথিবীর যত্ন নেন।

রহস্যবাদটির কেন্দ্রীয় ভিত্তি ছিল দেমেতের নিয়ে হোমারীয় স্তোত্রের ৪১৫ নং বাক্য, যেখানে শীতকালে পার্সিফোনের হেডিসের কাছে থাকার এবং বসন্তে ফিরে আসার কথা বলা হয়েছে: “এই সেই (পার্সিফোনের ফিরে আসার) দিন, উদার বসন্ত ঋতুর একেবারের শুরুর সময়।” এই কথাটি ভূমধ্যসাগরীয় ঋতু পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত। প্রত্যেক ভূমধ্যসাগরীয় কৃষকই জানে, নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকৃতি মূলত সুপ্তাবস্থায় থাকে। পার্সিফোনের এভাবে পুনর্জন্ম সমস্ত উদ্ভিদজীবনের পুনর্জন্মের প্রতীক এবং তাই এটি এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে জীবনের প্রবাহের মাধ্যমে বয়ে চলা জীবনের অমরত্বেরও প্রতীক। তবে, একজন পণ্ডিত একটি ভিন্ন সংস্করণ প্রস্তাব করেছেন, যা অনুসারে পার্সিফোন হেডিসের সাথে যে চার মাস থাকেন তা গ্রীক শুষ্ক গ্রীষ্মের সাথে মিলে যায়, এই সময়কালে খরা হওয়ার আশঙ্কাও দেখা যায়। কিন্তু ভূমধ্যসাগরীয় গ্রীষ্মের ফলের প্রাচুর্যতা এবং শীতের কোন ফসল না জন্মানোর বাস্তবতার সাথে এই সংস্করণটি মেলে না।

রহস্যবাদের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা

এলিউসিনিয়ার রহস্যগুলি যথেষ্ট পুরাকালের বলে মনে করা হয়। অ্যাটিকার এলিউসিনিয়ন মন্দিরের কয়েকটি অনুসন্ধানে বোঝা যায় যে তাদের ভিত্তি ছিল একটি পুরানো কৃষিভিত্তিক কাল্ট। রহস্যের কিছু অনুশীলন মাইসিনীয় পর্যায়ের ধর্মীয় অনুশীলন দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল, আর তাই গ্রীক অন্ধকার যুগের পূর্বে এর অস্তিত্ব ছিল। খননকাজগুলি দেখিয়েছিল যে মাইসিনীয় আমলে টেলেস্টেরিয়নের অধীনে একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন বা প্রাইভেট দালানের অস্তিত্ব ছিল, এবং মনে হয় উৎপত্তিগতভাবে দেমেতেরের কাল্টটি গোপন বা প্রাইভেটই ছিল, অর্থাৎ তাতে সকলের অংশগ্রহণ ছিলনা। হোমারীয় স্তোত্রে রাজা সিলেয়াসের রাজপ্রাসাদের কথার উল্লেখ করা হয়েছে।

আধুনিক পণ্ডিতদের কেউ কেউ মনে করেন, এই রহস্যবাদের উদ্দেশ্য ছিল “মানুষকে মানবীয় জগৎ থেকে ঐশ্বরিক জগতে উন্নীত করা, যাতে তার মুক্তি নিশ্চিত হয় এবং তার উপর অমরত্ব প্রদত্ত হয়।” তুলনামূলক অধ্যয়ন এই গ্রীক আচার এবং অনুরূপ ব্যবস্থার মধ্যে সমান্তরালতা দেখায় — তাদের মধ্যে কিছু কিছু প্রবীনতর — নিকট প্রাচ্যের ধর্মীয় আচার। এই কাল্টগুলোর মধ্যে রয়েছে মিশরের আইসিস এবং ওসিরিসের রহস্যবাদ, সিরিয়া এর ধর্মের অ্যাদোনীয় কাল্ট, পারস্যের রহস্যবাদ এবং ফ্রিজীয় কাবেইরীয় রহস্যবাদ। কিছু পণ্ডিত যুক্তি দিয়েছিলেন যে এলিউসিনিয়ান ধর্মটি একটি মিনোয়ান কাল্টের ধারাবাহিকতা ছিল, এবং দেমেতের ছিলেন পপি দেবী যিনি ক্রিট থেকে থেকে এলিউসিসে পপি নিয়ে এসেছিলেন। মাইসিনীয় পর্যায়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ডেসপোইনা (যার ধারণা পরে পার্সিফোনের ধারণার সাথে মিশে যায়) ও ইলিথিয়ার (সন্তান প্রসবের দেবী) কাল্ট অধ্যয়ন থেকে নেয়া যায়। লিউকোসুরায় ডেসপোইনার মেগারন এলিউসিসের টেলেস্টেরনের সাথে অনেকটাই মিলে যায়, এবং দেমেতের পোসেইডনের সাথে মিলিত হয়ে ডেসপোইনা উপাধির (কর্ত্রী বা মিস্ট্রেস) এক কন্যার জন্ম দেন যার নাম উচ্চারণ করা যায়না। ক্রিটের অ্যামনিসসের গুহায় দেবী ইলিথিয়া ঐশ্বরিক পুত্রের বার্ষিক জন্মের সাথে সম্পর্কিত, এবং তিনি এনেসিডাওন (পৃথিবীর কম্পনকারী) এর সাথে সম্পর্কিত, যিনি পোসেইডনের পাতালপুরীর রূপ।

এলিউসিসের শিলালিপিগুলোতে ট্রিপ্টোলেমস (সম্ভবত গাইয়া ও ওশেনাসের পুত্র) এর সহচর হিসেবে “দেবীগণ” এর উল্লেখ রয়েছে এবং ইউবুলিয়াস এর সহচর হিসেবে “দেব ও দেবী” (পার্সিফোন ও হেডিস) এর উল্লেখ রয়েছে যারা পাতালপুরী থেকে ফিরে আসার পথের নেতৃত্ব দেয়। পৌরাণিক কাহিনীটি তিনটি পর্যায় সহ একটি চক্রের মধ্যে উপস্থাপিত হয়েছিল: “অবতরণ”, “অনুসন্ধান”, এবং “উত্তোরণ” (গ্রীক “আনোডোস”)। এই পর্যায়গুলোর মধ্যে দুঃখ থেকে সুখের পর্যায়ক্রমিক আবেগ নিহিত ছিল, যার ফলে একজন দীক্ষিত পরমানন্দ লাভ করতে পারতেন। মূল সারভাবটি ছিল পার্সিফোনের আরোহণ এবং তার মা দেমেতেরের সাথে পুনর্মিলন। ভোজের শুরুতে পুরোহিতেরা দুটি বিশেষ পাত্র পূর্ণ করে আবার সেগুলো ঢেলে দিয়ে খালি করতেন, একটিকে পূর্বদিকে ও একটিকে পশ্চিম দিকে খালি করা হত। মানুষ আকাশ এবং পৃথিবী উভয়ের দিকে তাকিয়ে একটি যাদুকরী ছড়াতে চিৎকার করে বলতেন “বৃষ্টি এবং গর্ভধারণ”। একটি আচারে শিশুকে চুলা (ঐশ্বরিক আগুন) থেকে দীক্ষা দেয়া হয়েছিল। মাইসিনীয় শিলালিপিতে পাইস (শিশু) নামটি দেখা যায়, এটি ছিল “ঐশ্বরিক শিশুর” আচার, যে শিশুটি উৎপত্তিগতভাবে ছিল প্লুটাস। হোমেরিক স্তোত্রে আচারটি কৃষি সম্পর্কিত দেবতা ট্রিপ্টোলেমাস এর পুরাণের সাথে সম্পর্কিত। প্রকৃতির দেবী এই রহস্যাবাদে টিকে ছিলেন যেখানে এই শব্দগুলো উচ্চারিত হত: “শক্তিশালী পটনিয়া, একজন মহান সন্তানের জন্ম দিন”। পটনিয়া ( লিনিয়ার বি po-ti-ni-ja : লেডি বা সম্ভ্রান্ত স্ত্রীলোক, মিস্ট্রেস বা গৃহের কর্ত্রী) একটি মাইসিনীয় উপাধি যা দেবদের উপর প্রযুক্ত হত, এবং সম্ভবত গ্রিক-পূর্ব যুগের কোন অনুরূপ উপাধির অনুবাদ ছিল। উদযাপনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তটি ছিল “নীরবে একটি শস্যের মঞ্জরি কাটা” (“an ear of grain cut in silence”), যা নতুন জীবনের শক্তির প্রতিনিধিত্ব করত। শুরুতে এই রহস্যবাদে অমরত্বের ধারণা ছিল নাম কিন্তু দীক্ষিতরা মনে করত পাতালপুরীতে তাদের অধিকতর ভাল ভাগ্য থাকবে। মৃত্যু একটি বাস্তবতা ছিল, তবে একই সাথে ভূমিতে রোপিত বীজ থেকে জন্ম নেয়া বৃক্ষেরমত নতুন সূচনাও তাদের কাছে বাস্তব ছিল। ফেইস্টসের প্রাচীন প্রাসাদের একটি চিত্র পার্সিফোনের “অ্যানোডোস” এর চিত্রের খুব কাছের। সেখানে একটি বাহুহীন ও পদহীন দেবী ভূমি থেকে জন্ম নিয়েছেন এবং তার মাথা বিশাল ফুলে পরিণত হয়েছে। অবাস্তব দেবতা মাটি থেকে বেড়ে ওঠে এবং তার মাথাটি একটি বৃহত ফুলের দিকে পরিণত হয়।

মাইলোনাসের মতে, এলিউসিনীয় রহস্যবাদ দু ধরণের ছিল, ক্ষুদ্রতর রহস্যবাদ ও বৃহত্তর রহস্যবাদ। “ক্ষুদ্রতর রহস্যবাদ প্রতি বছর একবার করে, বসন্তের প্রথমদিকের ফুলের মাস অ্যান্থেস্টেরিয়নে সংঘটিত হত।” এদিকে “বৃহত্তর রহস্যবাদ প্রতিবছর ও প্রতি চার বছর পরপর বিশেষভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হত, যার নাম ছিল পেন্টেটেরিস “। কেরেনেই এই মূল্যায়নের সাথে একমত: “অ্যান্থেস্টেরিয়ন মাসে আগ্রাইতে লেজার রহস্য অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যে মাসটি আমাদের কাছে ফেব্রুয়ারী….দীক্ষাপ্রাপ্তগণ (যারা প্রথমবারের মত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করছেন) দীক্ষাপ্রাপ্তির বছরে এপোপটিয়া -তে (বৃহত্তর রহস্যবাদ) অংশগ্রহণ করতে পারতেন না, তাদেরকে পরের বছর সেপ্টেম্বরে তারা সেটা পালন করত।” এই চক্রটি প্রায় দুই সহস্রাব্দ সময় ধরে চলতে থাকে। দেমেতেরের উদ্দেশ্যে রচিত হোমারীয় স্তোত্র অনুসারে, রাজা সেলেয়াস এই রহস্যবাদের গোপন আচার সম্পর্কে শিক্ষাপ্রাপ্তদের মধ্যে একজন ছিলেন। ডিওক্লেস, ইউমোলপাস, পলিক্সিনাস এবং পুত্র ট্রিপ্টোলেমাসের মতো তিনি একই সাথে এলিউসীয় রহস্যবাদের উৎপত্তিগত পুরোহিতদের মধ্যে একজন ছিলেন, যেখানে ট্রিপ্টোলেমাস দেমেতেরের কাছ থেকে কৃষিকার্য শিখেছিলেন।

অ্যাথেন্সের পিসিস্ট্রাটোসের অধীনে, এলিউসিনীয় রহস্যবাদ সর্বহেলেনীয় হয়ে ওঠে, এবং গ্রিস ও তার বাইরে থেকেও তীর্থযাত্রীরা অংশ নিতে সেখানে অংশগ্রহণ করতে আসতেন। খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দের দিকে, রাষ্ট্র এই রহস্যবাদগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়; তারা দুটি পরিবার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হত, ইউমোলপিডি এবং কেরিকেস। এর ফলে দীক্ষাপ্রাপ্তের সংখ্যা ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। সদস্যপদের জন্য প্রয়োজনীয় ছিল কেবলমাত্র এই যে, সদস্য হতে হলে “রক্তপাপ” থেকে মুক্ত থাকতে হবে (অর্থাৎ কখনও কাউকে হত্যা করা করেন নি এমন ব্যক্তি হতে হবে), এবং বর্বর হওয়া যাবে না (অর্থাৎ গ্রিক ভাষায় কথা বলতে পারতে হবে)। পুরুষ, নারী এমনকি দাসদেরও দীক্ষার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।

অংশগ্রহণকারীরা, যাজকত্ব ও গোপন বিষয়সমূহ

এই রহস্যবাদে অংশ নিতে হলে গোপনীয়তার ব্রত নিতে হত। চার শ্রেণীর লোক এলিউসিনীয় রহস্যবাদে অংশগ্রহণ করতেন –

  • (১) যাজক, পুরোহিত এবং হিয়োরোফ্যান্ট।
  • (২) দীক্ষাপ্রাপ্ত, যারা প্রথমবারের মত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছে।
  • (৩) অন্যরা যারা ইতিমধ্যে একবার অন্তত একবার অংশ নিয়েছিলেন। তারা চতুর্থ বিভাগের জন্য যোগ্য ছিলেন।
  • (৪) যারা এপোপটেইয়া (গ্রীক: ἐποπτεία) (ইংরেজি: “অনুধ্যান”) অর্জন করেছিলেন, যারা দেমেতেরের বৃহত্তর রহস্যবাদ শিখেছিলেন।

এলিউসিনীয় রহস্যবাদে ও মন্দিরে (স্যাংকচুয়ারি) কার্যবাহী যাজকত্বকে বিভিন্ন কার্যক্রম অনুযায়ী বিভিন্ন কার্যালয়ে ভাগ করা হত, নারী ও পুরুষ সকলেই যাজক হতে পারতেন। এলিউসিনীয় রহস্যবাদে ছয় রকমের যাজক থাকতেন:

  • (১) হিয়েরোফ্যান্টেস, মহাযাজক, ফিলেইডি এবং ইউমোলপিডি পরিবার উত্তরাধিকারসূত্রে এই কার্যালয় অধিকার করত।
  • (২) দেমেতেরের মহাযাজিকা, ফিলেইডি এবং ইউমোলপিডি পরিবার উত্তরাধিকারসূত্রে এই কার্যালয় অধিকার করত।
  • (৩) ডাডুকোস, মশাল বহনকারী হিসাবে কাজ করা পুরুষেরা।
  • (৪) ডাডোউকোউসা যাজিকা , ফিলেইডি এবং ইউমোলপিডি পরিবার উত্তরাধিকারসূত্রে এই কার্যালয় অধিকার করত।
  • (৫) হিয়োরোফ্যান্টিডেস, দুজন বিবাহিত যাজিকা: একজন দেমেতেরকে ও আরেকজন পার্সিফোনকে সেবা করতেন।
  • (৬) প্যানাজেইস (‘পবিত্র’) বা মেলিসা (‘মৌমাছি’), যাজিকাদের একটি দল যারা পুরুষদের থেকে বিচ্ছিন্ন জীবন কাটাতেন।

হিয়েরোফ্যান্ট, মহাযাজিকা এবং ডাডুকোউসা যাজিকাদের সকলেই আসতেন ফিলেইডি এবং ইউমোলপিডি পরিবার থেকে, এবং হিয়েরোফ্যান্ট ও ডাডুকোউসা যাজিকাদের পদমর্যাদা সমান ছিল। রহস্যবাদের কার্যাদি পরিচালনা করার সময় মহাযাজিকাদেরকে দেবী দেমেতের এবং পার্সিফোনির ভূমিকা পালন করতে হত। এই রূপরেখাটি কেবল ক্ষুদ্র সারাংশ। এলিউসিনীয় রহস্য সম্পর্কে অনেক মূর্ত তথ্য কখনই লেখা হয়নি। উদাহরণস্বরূপ, কেবল দীক্ষিতরা জানতেন গোপন সিন্দুক কিস্টে -তে, এবং ঢাকনা যুক্ত ঝুড়ি ক্যালাথাসে কী আছে। খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতাব্দীর প্রথম দিকে লিখিত চার্চ পিতাদের একজন রোমের হিপ্পোলিটাস তার “সকল ধর্মদ্রোহিতার খণ্ডন” (Refutation of All Heresies) গ্রন্থে লেখেন, “এথেনীয়রা, এলিউসিনীয় আচারে কাউকে দীক্ষা দেবার সময় এমনভাবে তা করত যেন তাকে এই রহস্যের উচ্চতম স্তরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তাদের সামনে রহস্যবাদটির শক্তিশালী, অপূর্ব ও সবচেয়ে নিখুঁৎ রহস্যবাদী সত্য দান করা হত, যা হল: “শষ্যের একটি মঞ্জরিকে নীরবে কাটা হয়” (“an ear of grain in silence reaped.”)।”

ক্ষুদ্রতর ও বৃহত্তর রহস্যবাদ

দুটি এলিউসিনীয় রহস্যবাদ ছিল – বৃহত্তর ও ক্ষুদ্রতর। থমাস টেইলরের মতে, “ক্ষুদ্রতর রহস্যবাদের নাটকীয় প্রদর্শনগুলো শরীরের ভিতরে বশীভূত অবস্থায় আত্মার রহস্যকে প্রতীকায়িত করত, তার ফলে রহস্যবাদী ও জাঁকজমকপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি, ইহকাল ও পরকাল আত্মার আশীর্বাদের মাধ্যমে বস্তুগত প্রকৃতির দূষণ থেকে পবিত্র হবার সময় এবং অবিরাবভাবে বৌদ্ধিক (আধ্যাত্মিক) দর্শনের বাস্তবতায় উন্নীত হবার সময় সেই আত্মার মহত্বকে বুঝতে পারা যায়।” প্লেটোর মতে, “রহস্যবাদটির চূড়ান্ত উদ্দেশ্য ছিল … আমাদেরকে সেই নীতিতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া যেখান থেকে আমরা এসেছি, … বৌদ্ধিক (আধ্যাত্মিক) শুভত্বের নিখুঁৎ উপভোগ”। ক্ষুদ্রতর রহস্যবাদটি আরকন ব্যাসিলিয়াস (এথেন্সের প্রশাসন) পরিচালনায় ফেব্রুয়ারি বা মার্চের দিকে শীতকালের মাঝামাঝিতে অ্যাটিক দিনপঞ্জির ৮ম মাস অ্যান্থেস্টেরিয়া মাসে সংঘটিত হত। দীক্ষার জন্য যোগ্য হতে অংশগ্রহণকারীদেরকে দেমেতের ও পারসিফোনের কাছে একটি শূকরছানাকে উৎসর্গ করতে হত, এবং এরপর আচারগতভাবে ইলিসস নদীতে শুদ্ধ হতে হত। ক্ষুদ্রতর রহস্যবাদের অনুষ্ঠান শেষ হবার পর দীক্ষিত বা মিস্টাইগণ (mystai) বৃহত্তর রহস্যবাদে অংশগ্রহণ করার যোগ্য বলে বিবেচিত হত।

বৃহত্তর রহস্যবাদ গ্রীষ্মকালের শেষে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের দিকে অ্যাটিক দিনপঞ্জির বিড্রোমিয়ন মাসে অনুষ্ঠিত হত, এবং ১০ দিন ধরে চলত। প্রথম কার্যটি ছিল বিড্রোমিয়ন মাসের ১৪শ দিনে এলিউসিস থেকে এথেন্সের অ্যাক্রোপলিসের মন্দির এলিউসিনিয়নে পবিত্র বস্তুগুলো নিয়ে আসা। বিড্রোমিয়নের ১৫শ দিনকে অ্যাগ্রিমস (জনসমাবেশ) বলা হত, সেদিনে হিয়েরোফ্যান্টেস যাজকগণ প্রোরেসিস (prorrhesis) নামক অনুষ্ঠান করত, এবং হিয়েরা-ডিউরো (শিকারকে এখানে আনো) নামক বলিদানের কার্য সম্পন্ন করত। সমুদ্রাভিমুখে যাওয়া দীক্ষিতরা (halade mystai) পুরোহিতদের সাথে এথেন্স থেকে বিড্রোমিয়নের ১৬শ দিনে যাত্রা শুরু করে এবং ফ্যালেরামে গিয়ে সাগরে নিজেদের শরীর ধৌত করে। ১৭শ দিনে, অংশগ্রহণকারীগণ এপিডরিয়া (Epidauria) নামক উৎসবটির সূচনা করে, এই উৎসবটি অনুষ্ঠিত হয় চিকিৎসার দেবতা অ্যাসক্লেপিয়াসকে ভিত্তি করে, এবং এপিডরাসে প্রতিষ্ঠিত তার প্রধান মন্দির (স্যাংকচুয়ারি) এর নামে এই উৎসবের নামকরণ করা হয়েছে এপিডরিয়া। এই “উৎসবের মধ্যে উৎসবটি” উদযাপন করা হয় এথেন্সে অ্যাসক্লোপিয়াসের তার কন্যা হাইজিয়াকে সাথে নিয়ে আসার পুরাণকে কেন্দ্র করে, এবং এই উৎসবে এলিউসিয়নের দিকে একটি মিছিল বের হয়, যে সময় দীক্ষাপ্রাপ্তরা বাসায় অবস্থান করেন (ত্যাগ স্বীকার), এবং সারারাত ধরে উৎসব চলে যা প্যানিকিস (pannykhís) নামে পরিচতি ছিল। ১৮শ দিনে কেরামেইকস (এথেনীয় সমাধিস্থল) থেকে এথেন্স থেকে এলিউসিসগামী ২১ কিলোমিটারের হিয়েরা হোডস (Hierá Hodós) বা পবিত্র রাস্তা ধরে মানুষ এলিউসিসের দিকে ব্রাকই নামক শাখা দোলাতে দোলাতে যাত্রা শুরু করে। একটি নির্দিষ্ট স্থানে তারা ইয়াম্বে (বা বাউবো) এর স্মৃতিতে অশ্লীল কৌতুক ও অশ্লীল শব্দে চিৎকার করতে থাকে, যা কন্যাহারা দুঃখী দেমেতেরের মুখে হাসি ফুটিয়েছিল। এই মিছিলে “ইয়াক্‌চ্‌, ও ইয়াক্‌চে!” (Íakch’, O Íakche!) বলেও চিৎকার করা হয়, যা সম্ভবত ডায়োনিসাসের বিশেষণ বা আলাদা দেবতা পার্সিফোন বা দেমেতেরের পুত্র ইয়াকাসকে নির্দেশ করে চিৎকার করা হয়। মাইলোনাস ও কেরেনির মতে এলিউসিসে পৌঁছানোর পর সারারাত ধরে জেগে প্যানিকিস (pannychis) অনুষ্ঠান পালন করা হয়। হয়তো এটি দেমেতেরের পার্সিফোনকে অনুসন্ধানকে স্মরণ অরেই করা হয়। এক পর্যায়ে, দীক্ষাপ্রাপ্তদেরকে বিশেষ পানীয় কাইকিয়ন পান করানো হয়, যা বারলি ও পেনিরয়াল বা মেনথা পিউলেজিয়াম দ্বারা তৈরি। এই পানীয় সাইকোট্রপিক (মস্তিষ্কের অবস্থার পরিবর্তনকারী) প্রভাব তৈরি করত বলে ধারণা করা হয়।

বিড্রোমিয়নের ১৯শ দিনে, দীক্ষাপ্রাপ্তরা টেলেস্টেরিয়ন নামক একটি বৃহৎ হলে প্রবেশ করে; এর কেন্দ্রে অ্যানাকটরন (Anaktoron) বা প্রাসাদ অবস্থিত যেখানে কেবল হিয়েরোফ্যান্টগণই প্রবেশ করতে পারেন, এবং যেখানে পবিত্র বস্তুসমূহকে রাখা হয়। মিস্টাইগণ টেলেস্টেরিয়নে প্রবেশ করার পূর্বে আবৃত্তি করে, “আমি উপবাস করেছি,আ মি কাইকিয়ন পান করেছি, আমি কিস্তে (বাক্স) থেকে গ্রহণ করেছি এবং কাজ করার পর তা আমি ক্যালাথাসে (মুক্ত ঝুড়ি) রেখে দিয়েছি।” এটি বহুলভাবে সমর্থিত যে, টেলেস্টেরিয়নের ভেতর তিনটি উপাদান থাকত। সম্মিলিতভাবে, এই তিনটি উপাদান অ্যাপোরেতা (Aporrheta) (অপুনরাবৃত্তিযোগ্য) নামে পরিচিত ছিল; এগুলো প্রকাশ করার শাস্তি ছিল মৃত্যু। উপাদানগুলো হলো –

  • (১) ড্রোমেনা (যা যা করা হত), দেমেতার বা পার্সিফোনের পুরাণের নাটকীয় পুনর্নির্মাণ
  • (২) ডেইকনুমেনা (যা যা দেখানো হত), পবিত্র বস্তুগুলি প্রদর্শন করা হত, যেখানে হিয়েরোফ্যান্ট একটি অপরিহার্য ভূমিকা পালন করতেন
  • (৩) লেগোমেনা (যা যা বলা হত), ডেইকুমেনার সাথে হওয়া ভাষ্যসমূহ।

এথেন্সের অ্যাথেনাগোরাস, সিসেরো এবং অন্যান্য প্রাচীন লেখকগণ লেখেন, এই অপরাধের জন্য মেলসের ডায়াগোরাসকে এথেন্সে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়; বিয়োগান্তক নাট্যরচয়িতা ঈস্কাইলাস তার কিছু নাটকের জন্য এই রহস্যবাদের কিছু গোপনীয়তা প্রকাশ করেছিলেন বলে তাকে অভিযুক্ত করা হয়, কিন্তু তাকে মুক্তি দেয়া হয়। রহস্যবাদটির এই কেন্দ্রীয় আচার প্রকাশে নিষেধাজ্ঞাটি চূড়ান্ত ছিল, যে কারণে সম্ভবত সেখানে কী ঘটেছিল সে বিষয়ে প্রায় কিছুই জানিনা। এই রহস্যবাদের চূড়ান্ত পর্যায় নিয়ে দুটো আধুনিক তত্ত্ব রয়েছে। কারও কারও মতে কেবল যাজকগণই পবিত্র রাতের দৃশ্যগুলোকে প্রকাশ করতে পারতেন, যেখানে মৃত্যুর পর জীবনের সম্ভাবনাকে প্রতিনিধিত্ব করা অগ্নি ও বিভিন্ন পবিত্র বস্তু ছিল।অন্যরা এই রহস্যবাদের ক্ষমতা ও এতদিন ধরে টিকে থাকার পেছনে কেবলমাত্র এই ব্যাখ্যাকে যথেষ্ট বলে মনে করেন না, তাদের মতে এই অভিজ্ঞতাগুলো অবশ্যই অভ্যন্তরীন ছিল, এবং কাইকিয়ন পানীয়ে শক্তিশালী মস্তিষ্ক পরিবর্তনকারী বা সাইকোএক্টিভ উপাদানের মাধ্যমে সেইসব অভিজ্ঞতা তৈরি করা হত (নিচে এনথিওজেনিক তত্ত্ব দেখুন)। রহস্যবাদের এই বিভাগে সারারাত ধরে চলা অনুষ্ঠান বা ভোজনপ্যানিকিস ছিল, যেখানে নৃত্য ও বিনোদনের ব্যবস্থা রাখা হত। নৃত্যগুলি রারীয় মাঠে (Rharian field) অনুষ্ঠিত হত, যা প্রথম ফসল জন্মানোর স্থান ছিল বলে মনে করা হত। এই রাতের শেষে বা পরের দিন সকালের প্রথমে একটি ষাঁড়কে বলি দেয়া হয়। সেদিন (২২শ বিড্রোমিয়ন) দীক্ষাপ্রাপ্তগণ বিশেষ পাত্র থেকে তর্পন বা লাইবেশন ঢেলে মৃতদেরকে সম্মান জানাতো। বোয়েড্রোমিয়নের ২৩শ তারিখে, রহস্যবাদের সমাপ্তি ঘটত ও সকলে বাড়িতে ফিরে যেত।

এলিউসিনীয় রহস্যবাদের পতন ও আধুনিক ধারাবাহিকতা

১৭০ খ্রিস্টাব্দে দেমেতেরের মন্দিরকে সারমেশীয়রা ধ্বংস করে, কিন্তু মার্কাস অরেলিয়াস এর পুনর্নির্মাণ করেন। এরপরে অরেলিয়াসকে প্রথম কোন সাধারণ মানুষ হিসেবে আনাকটরনে প্রবেশ করতে দেয়া হয়। খ্রিস্টীয় ৪র্থ এবং ৫ম শতাব্দীতে খ্রিস্টধর্ম জনপ্রিয়তা লাভ করতে থাকার সাথে সাথে এলিউসিসের মর্যাদার পতন শুরু হয়। রোমের শেষ পৌত্তলিক সম্রাট জুলিয়ান প্রায় পঞ্চাশ বছর খ্রিস্টীয় শাসনের পর ৩৬১ থেকে ৩৬৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত শাসন করেন। জুলিয়ান এলিউসিনীয় রহস্যবাদ পুনঃস্থাপন করার চেষ্টা করেন, এবং তিনিই ছিলেন এই রহস্যবাদে দীক্ষাপ্রাপ্ত শেষ সম্রাট।

রোমান সম্রাট প্রথম থিওডোসিয়াস প্রায় ৩০ বছর পরে ৩৯২ খ্রিস্টাব্দে শেষ রোমান সাম্রাজ্যের পৌত্তলিক নির্যাতনের সময় আইন জারি করে সকল মন্দির বন্ধ করে দেন। গথদের রাজা প্রথম অ্যালারিকের অধীনে এরিয়ান খ্রিস্টানরা পুরনো পবিত্র স্থানগুলোকে অপবিত্র করলে এই রহস্যবাদের শেষ অবশিষ্টাংশ বিলুপ্ত হয়ে যায়। গ্রিক দার্শনিকদের জীবনীকার ও ঐতিহাসিক ইউনেপিয়াস চতুর্থ শতাব্দীতে এলিউসিনীয় রহস্যবাদের সমাপ্তির কথা উল্লেখ করেছেন। ইউনেপিয়াস সর্বশেষ বৈধ হিয়েরোফ্যান্টের দ্বারা দীক্ষিত হয়েছিলেন, যিনি সম্রাট জুলিয়ান দ্বারা রহস্যবাদটির পুনপ্রতিষ্ঠার জন্য কমিশনপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে রহস্যবাদটির পতন ঘটে। ইউনাপিয়াসের মতে শেষ হিয়েরোফ্যান্ট একজন দখলদার ছিলেন, “তিনি থেস্পিয়াই এর লোক ছিলেন, এবং মিথ্রাসের রহস্যবাদের পুরোহিত ছিলেন।”

ঐতিহাসিক হ্যানস ক্লফটের মতে, এলিউসিনিয়ান রহস্যবাদের ধ্বংস হওয়া সত্ত্বেও, গ্রীক পল্লীতে এই সম্প্রদায়ের উপাদানগুলি টিকে ছিল। সেখানে দেমেতেরের অনুষ্ঠান ও ধর্মীয় কর্তব্যগুলো কৃষক ও রাখাল সম্প্রদায়ের মধ্য দিয়ে আংশিকভাবে সেইন্ট থেসালোনিকির দেমেত্রিয়াসে (সেইন্ট দেমেত্রিয়াস অফ থেসালোনিকি) স্থানান্তরিত হয়, যিনি ধীরে ধীরে কৃষির স্থানীয় পৃষ্ঠপোষক এবং পৌত্তলিক মাতৃদেবীর “উত্তরাধিকারীতে” পরিণত হন। ১৯৮৫ সাল থেকে, অ্যাকোয়ারিয়ান টাবারনাকল চার্চ বসন্ত রহস্য উৎসব হিসাবে এলিউসিনীয় রহস্যবাদের একটি আধুনিক ধারাবাহিকতা সঞ্চালিত করে আসছে। এই রহস্যবাদগুলো প্রতি বছর দেমেতের এবং পার্সিফোনের সম্মানে অনুষ্ঠিত হয়, এর মাধ্যমে লুকানো জ্ঞান অন্বেষণের দৃষ্টিকোণ থেকে সার্বজনীন ধারণা এবং সত্য অন্বেষণ করা হয়। এটি প্রতি বছর ইস্টার এর সপ্তাহান্তে এটি অনুষ্ঠিত হয়। আধুনিক যুগে এটি প্রথম ১৯৮৫ সালেই অনুষ্ঠিত হয়।

শিল্প, সাহিত্য এবং সংস্কৃতিতে এলিউসিনীয় রহস্যবাদ

অনেক চিত্রকর্ম এবং মৃৎশিল্পের কাজ রয়েছে যা রহস্যবাদগুলোর বিভিন্ন দিককে চিত্রিত করে। ন্যাশনাল আর্কিওলজিকাল মিউজিয়াম অফ এথেন্সে প্রদর্শিত খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীর শেষের দিকের এলিউসিনীয় রিলিফ তাদের মধ্যে একটি। সেখানে ট্রিপলেলেমাসকে দেমেতেরের কাছ থেকে বীজ গ্রহণ করতে এবং মানবজাতিকে ফসল ফলানোর জন্য কীভাবে ক্ষেত্রের কাজ করতে হবে তা শেখানো হচ্ছে, পার্সিফোন সেখানে তার মায়ের হাত ধরে আছেন এবং ট্রিপ্টোলেমাসের মাথায় হাত রেখেছেন তাকে রক্ষা করার জন্য। খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ থেকে ৪র্থ শতকের ফুলদানি এবং অন্যান্য রিলিফ ভাস্কর্যে ট্রিপ্টোলেমাসকে শস্যের মঞ্জরি ধরে থাকতে, ডানাযুক্ত সিংহাসন বা রথে বসে থাকতে, পার্সিফোন ও দেমেতের সহ পাইন মশাল দ্বারা ঘেরা অবস্থায় দেখা যায়। খ্রিস্টপূর্ব ৭ম শতাব্দীর মধ্যভাগ এর প্রত্ন-অ্যাতিক স্মারক অ্যাম্ফোরার (মনুমেন্টাল প্রোটো-অ্যাটিক অ্যাম্ফোরা) ঘাড়ে (উপরের অংশ) পার্সিয়াসের দ্বারা মেডুসার শিরোশ্ছেদ এবং ওডিসিয়াসের দ্বারা পলিফেমসকে অন্ধ করা অঙ্কিত রয়েছে, এটি আর্কিওলজিকাল মিউজিয়াম অফ এলিউসিসে সংরক্ষিত রয়েছে যা এলিউসিসের প্রত্নস্থলে অবস্থিত।

একই জাদুঘরে নিনোয়ান ফলক পাওয়া যায় যেখানে দেমেতের ও তার সাথে পার্সিফোন ও ইয়াকাসকে চিত্রিত করা হয়েছে। তারপরে সেখানে দেখা যায়, দেমেতের কিস্তে এর উপর বসে আছেন এবং পার্সিফোন মশাল নিয়ে দীক্ষাপ্রাপ্তদেরকে তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। দীক্ষাপ্রাপ্তদের প্রত্যেকে একটি করে ব্রাকই বা শাখা ধরে আছে। দীক্ষাপ্রাপ্তদের দ্বিতীয় সারির নেতৃত্ব দিচ্ছেন যাজক ইয়াকস, যিনি এই অনুষ্ঠানের জন্য মশাল ধরে আছেন। তিনি ওম্ফালসের (প্রাচীন গ্রিসের ধর্মীয় পাথর বা নিদর্শন) পাশে দাঁড়িয়ে আছেন এবং তার পাশে একজন অজানা নারী (সম্ভবত দেমেতেরের যাজিকা) কিস্টের উপর বসে আছেন, এই নারী হাতে একটি রাজদণ্ড (স্কেপ্টার) ও কাইকিয়নে পূর্ণ একটি পাত্র ধরে আছেন। প্যানিকিস অনুষ্ঠানও এখানে দেখানো হয়।

শেক্সপীয়ার এর দ্য টেম্পেস্ট-এ দেখা যায় মিরান্ডা ও ফার্দিনান্দের আনুগত্য স্বীকারকে উদযাপন করার জন্য প্রোসপেরো মাস্ক বা মুখোশধারীদের বিনোদন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন, এই আয়োজনে এলিউসিনীয় রহস্যবাদের আভাস পাওয়া যায়, যদিও এখানে দেবদেবীদের গ্রিক নামের বদলে রোমান নাম যেমন সেরেস, আইরিস, ডিস এবং অন্যান্য নাম ব্যবহার করা হয়। মজার বিষয় হচ্ছে, আলকেমি ও হার্মিসবাদের গুহ্য বৈশিষ্ট্যগুলো নাটকে নেয়ার ক্ষেত্রেও এর মাস্ক পর্বে এলিউসিনীয় রহস্যবাদের বিষয়গুলোকে টেনে আনতে হয়েছে।  কার্ল গুস্তাভ ইয়ং (১৮৭৫-১৯৬১) তার মনোবিশ্লেষণী চিকিৎসাকে দীক্ষা ও পুনর্জন্মভিত্তিক আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠানে পুনর্বিন্যস্ত করার জন্য ১৯ শতক ও ২০ শতকের প্রথম দিকের জার্মান ও ফ্রান্সের সনাতন পাণ্ডিত্য থেকে বিভিন্ন শব্দ ও ব্যাখ্যা ধার করেছিলেন। এলিউসিনীয়বাদী রহস্য, বিশেষ করে দেবী কোরে (পার্সিফোন) এর বৈশিষ্ট্যগুলো তার রচনাসমূহে বিশেষভাবে চিত্রিত হয়েছে।

দিমিত্রিস লায়াকোসের পোইনা ডাম্নি এর ট্রিলোজি এর দ্বিতীয় গ্রন্থ উইথ দ্য পিপল ফ্রম দ্য স্যাক্রেড ব্রিজ গ্রন্থটি একটি সমসাময়িক, আভাঁ গার্দ নাটক যেখানে সামষ্টিক মুক্তিলাভের ধারণাকে সামনে আনার জন্য মৃতের ফিরে আসা ও রেভেনেন্ট (উপকথা অনুযায়ী যেসব মৃতদেহ জীবিতাবস্থায় ফিরে আসে) এর পুরাণের উপাদানগুলোকে এলিউসীয় রহস্যবাদ ও প্রারম্ভিক খ্রিস্টীয় ঐতিহ্যের সাথে মিশ্রিত করায় মনোনিবেশ করা হয়। রচনাটিতে পাতালপুরীতে মৃতের আবাসস্থল ও পৃথিবীতে তাদের পর্যায়ক্রমিক ফেরত আসাকে নির্দেশ করার জন্য ডালিম বা রক্তবীজের চিহ্নকে ব্যবহার করা হয়। অ্যাক্টাভিও ভ্যাজকুয়েজের একতানিক কবিতা “এলিউসিস”-এ এলিউসিনীয় রহস্যবাদ এবং পাশ্চাত্য গুহ্য ঐতিহ্যকে (Western esoteric tradition) নিয়ে আসা হয়েছে। সোসিয়েদাদ জেনারেল দে অতোরেস ওয়াই এদিতোরেস এবং আরটিভিই সিম্ফনি অর্কেস্ট্রা দ্বারা কমিশনপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৫ সালে মাদ্রিদের টিয়েট্রো মনুমেন্টালে এটি আরটিভিই অর্কেস্ট্রা এর দ্বারা প্রথম সম্পাদিত হয় এবং অ্যাড্রিয়ান লিপারের দ্বারা প্রথম পরিচালিত হয়।

এনথিওজেনিক তত্ত্ব

অনেক পণ্ডিত প্রস্তাব করেন যে, এলিউসিনীয় রহস্যবাদের শক্তি এসেছিল কাইকিয়ন থেকে যাকে এনিথিওজেন বা সাইকাডেলিক এজেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হত। যাদুকরী বা ধর্মীয় উদ্দেশ্যে পোশন (potion, যাদুকরী, বিষাক্ত বা চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত তরল মিশ্রণ) বা ফিলট্রেসের (philtres, প্রেম ও কামনা তৈরির জন্য তৈরি পানীয়) ব্যবহার প্রাচীন পৃথিবী ও গ্রিসে সাধারণ ছিল। দীক্ষাপ্রাপ্তদেরকে উপবাসের মাধ্যমে (এই ঔষধের জন্য) সংবেদী করে তোলা হত এবং পরবর্তী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদেরকে প্রস্তুত করা হত (দেখুন সেট এবং সেটিং)। গভীর আধ্যাত্মিক ও বৌদ্ধিক বয়ান শোনানোর মাধ্যমে দীক্ষাপ্রাপ্তদের মনকে উপযোগী করা হত আর তারপর এতে শক্তিশালী সাইকোএক্টিভ বা মানসিক অবস্থার পরিবর্তনকারী ঔষধ প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের মধ্যে এই রহস্যবাদের সাথে সম্পর্কিত আধ্যাত্মিক প্রভাবগুলোকে উদ্দীপিত করা হত। অন্যান্য পণ্ডিতরা এই দাবির পেছনে শক্তিশালী সাক্ষ্যপ্রমাণ না থাকায় এই রহস্যবাদের দীক্ষাদানের ক্ষেত্রে ব্যক্তিকেন্দ্রিক বৈশিষ্ট্যের বদলে সামষ্টিক বৈশিষ্ট্যে জোড় দেন। এনথিওজেনিক তত্ত্বের সমর্থনে অপ্রত্যক্ষ সাক্ষ্যপ্রমাণ হল আলকিবিয়াডেসকে একটি গোপন বাড়িতে “এলিউসিনীয় রহস্যবাদে” অংশগ্রহণের জন্য আংশিকভাবে নিন্দা করা হয়েছিল।

অনেক সাইকোঅ্যাক্টিভ এজেন্টকে কাইকিয়নের উল্লেখযোগ্য উপাদান হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে, যদিও কোন ঐকমত্য বা চূড়ান্ত প্রমাণ ছাড়াই তা করা হয়। এরমধ্যে রয়েছে যব বা রাই শস্যের একটি ছত্রাক পরজীবী এরগট, যাতে এলএসডি এবং এরগোনোভিন উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যালকালয়েড এরগোটামিন থাকে। যাইহোক, আধুনিক এরগট-পরজীবীতে আক্রান্ত যব ব্যবহার করে কাইকিয়ন প্রস্তুতির প্রচেষ্টায় একটি নিষ্পত্তিহীন ফলাফল পাওয়া গেছে, যদিও আলেকজান্ডার শালগিন এবং অ্যান শালগিন বলেছেন এরগনোভিন এবং এলএসএ উভয়ই এলএসডি এর প্রভাবের মত প্রভাব তৈরি করে। সাইকোঅ্যাকটিভ মাশরুম হল আরেকটি প্রার্থী।টেরেন্স ম্যাককেনা অনুমান করেন যে রহস্যবাদগুলো বিভিন্ন ধরনের সিলোসাইবি-তে (Psilocybe) মনোনিবেশ করেছিল। এছাড়া অন্যান্য এনথিওজেনিক ছত্রাক, যেমন আমানিতা মাসকারিয়া-কেও (Amanita muscaria) প্রস্তাব করা হয়েছে। একটি সাম্প্রতিক অনুকল্প থেকে জানা যায় যে প্রাচীন মিশরীয়রা যবের উপর সিলোসাইবি কিউবেন্সিস (Psilocybe cubensis) চাষ করত এবং দেবতা ওসিরিসের কাল্টের ক্ষেত্রে একে ব্যবহার করত। সাইকোঅ্যাকটিভ ঔষধের আরেক প্রার্থী হল পপি থেকে প্রাপ্ত একটি ওপিয়য়েড (আফিক জাতীয়)। দেবী দেমেতেরের কাল্ট হয়তো ক্রিট থেকে এলিউসিসে পপি গাছ নিয়ে এসেছিল, এটা নিশ্চিত যে ক্রিটে আফিম প্রস্তুত হত। আরেকটি তত্ত্ব হচ্ছে কাইকিয়নের সাইকোঅ্যাক্টিভ এজেন্ট হচ্ছে ডিএমটি, যা ফ্যালারি (Phalaris) এবং/অথবা অ্যাকাসিয়া (Acacia) সহ ভূমধ্যসাগরের অনেক বন্য উদ্ভিদ থেকে তৈরি হয়। মৌখিকভাবে সক্রিয় হতে হলে (যেমন আয়াহুয়াস্কার মত) এটিকে অবশ্যই একটি মনোমাইন অক্সিডেজ ইনহিবিটর যেমন সিরিয়ান রু (Peganum harmala) এর সাথে একত্রিত করতে হবে, যা ভূমধ্যসাগর জুড়ে বেড়ে ওঠে।

অন্যথায়, জে নিগ্রো সানসনিজ (১৯৯৪), মাইলোনাস দ্বারা সরবরাহকৃত পৌরাণিক কাহিনী থেকে অনুকল্পায়ন করেন যে, এলিউসিসের রহস্যবাদ যোগাসনের “সংযমের” মত শ্বাস নিয়ন্ত্রণ দ্বারা প্ররোচিত মানব স্নায়ুতন্ত্রের প্রোপ্রিওসেপশন (শরীরের নড়াচড়ার প্রতি সচেতনতা ও বোধ) এর মধ্য দিয়ে দীক্ষাদানের সময় ভাবসমাধি (Trance) তৈরি করত। সানসোনিজ ধারণা করেন যে হিয়েরোফ্যান্ট কিস্তে নামক যে পবিত্র বস্তু ধারণ করা বাক্সটি উন্মুক্ত করতেন তা আসলে দীক্ষাপ্রাপ্তের করোটির একটি গুহ্য প্রতিনিধি, যেখানে পবিত্র আলো দেখা যেত এবং পবিত্র শব্দ শোনা যেত, কিন্তু এটা কেবল ভাবসমাধির অনুশীলনের নির্দেশনার পরেই হত। একইভাবে, কাল্ট প্রতিষ্ঠার সাথে সংশ্লিষ্ট ফল ডালিমের বীজ ভর্তি কক্ষ, ভাবসমাধি চলাকালীন সময়ে দীক্ষাপ্রাপ্তের হৃদপিণ্ডের প্রোপ্রিয়োসেপশনকেই গুহ্যভাবে বর্ণনা করে।

ডায়োনিসীয় রহস্যবাদ

ভূমিকা ও উৎপত্তি

ডায়োনিসীয় রহস্যবাদ (Dionysian Mysteries) ছিল প্রাচীন গ্রিস এবং রোমের একটি ধর্মীয় আচার ছিল যা কখনও কখনও বাধা এবং সামাজিক প্রতিবন্ধকতাগুলি অপসারণের জন্য এবং একটি প্রাকৃতিক অবস্থায় ফিরে যেতে ব্যক্তিসত্তাকে মুক্তি দেবার জন্য মাদক এবং অন্যান্য বোধি-সঞ্চারণ পদ্ধতি যেমন নৃত্য ও সঙ্গীত ব্যবহার করত। এটি গ্রীক সমাজ দ্বারা প্রান্তিকায়িতদের, যেমন নারী, দাস, বিতাড়িত এবং অনাগরিকদের জন্যেও কিছু মাত্রায় মুক্তির ব্যবস্থা রেখেছিল। গ্রিক দেবতা ডায়োনিসাস সম্পর্কিত ধারণা ক্রমশ পাতালপুরী থেকে অতিন্দ্রীয় জগতের দিকে সরে আসার সাথে সাথে চূড়ান্ত পর্যায়ে ডায়োনিসীয় রহস্যবাদের কেন্দ্রও পাতালপুরী থেকে অতিন্দ্রীয়বাদের দিকে সরে যায়। ডায়োনিসীয় রহস্যবাদ একটি রহস্যবাদ হওয়ায় এটি কেবল দীক্ষিতদের জন্যই সংরক্ষিত ছিল, ফলে এর উপাসক সম্প্রদায় সম্পর্কিত অনেক বিষয়ই অজানা রয়ে গেছে এবং গ্রেকো-রোমান বহুঈশ্বরবাদের পতনের কারণে হারিয়ে গেছে; এটি সম্পর্কে আধুনিক কালে যা যা জানা যায় তা এসেছে এই রহস্যবাদ সম্পর্কিত বিভিন্ন বিবরণ, চিত্রকর্ম এবং আন্তঃসাংস্কৃতিক অধ্যয়নের মাধ্যমে। প্লোভদিভের (প্রাচীন ফিলিপ্পোপোলিস) গ্রেট ব্যাসিলিকায় প্রাচীন গ্রিক ভাষায় লেখা ২৫৩ – ২৫৫ সালের একটি প্রাচীন রোমান শিলালিপি আবিষ্কৃত হয়। শিলালিপিটি ডায়োনিসীয় রহস্যবাদকে নির্দেশ করে এবং রোমান সম্রাট ভ্যালেরিয়ান এবং গ্যালিয়েনাসের কথাও উল্লেখ করে। এটি একটি বৃহৎ কেন্দ্রস্তম্ভে পাওয়া গেছে যা গ্রেট ব্যাসিলিকা নির্মাণের সময় নির্মাণ উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল।

গ্রীক মূলভূমি ও রোমান সাম্রাজ্যের ডায়োনিসীয় রহস্যবাদ কোন অজানা স্থানের (সম্ভবত থ্রেসীয় বা ফ্রিজীয়) আরও আদিম দীক্ষামূলক উপাসক সম্প্রদায় থেকে উদ্ভূত হয়েছে যা সনাতন গ্রিক পর্যায়ে সমগ্র ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত হয়। ডায়োনিসীয় রহস্যবাদের প্রসারণ ছিল দ্রাক্ষাসুরা বা ওয়াইনের প্রসারের সাথে সম্পর্কিত, ধর্মানুষ্ঠান বা স্যাক্রামেন্ট এর সাথে এই দ্রাক্ষাসুরার সম্পর্ক ছিল, এই রহস্যবাদের স্যাক্রামেন্টে দ্রাক্ষাসুরা পান করতে হত। একই সাথে এনথিওজেন বা ধর্মের সাথে সম্পর্কিত মানসিক অবস্থা পরিবর্তনকারী মাদকের সাথেও এর সম্পর্ক ছিল, যদিও মিড (mead, মূলত মধু বা ফল থেকে প্রস্তুত সুরা বা মদ) এর উৎপত্তিগত ধর্মানুষ্ঠানের সাথে সম্পর্কিত হয়ে থাকতে পারে। একটি সরল ধর্মীয় আচার হিসাবে শুরু হয়ে, এটি গ্রীক সংস্কৃতিতে দ্রুত একটি জনপ্রিয় রহস্যবাদে বিকশিত হয়েছিল, যা গ্রিক অঞ্চলের বিভিন্ন অনুরূপ উপাসক সম্প্রদায়কে (এবং তাদের দেবদেবীদেরকে) সেসময়ের আদর্শরূপ গ্রিক সংশ্লেষণের মাধ্যমে গ্রহণ করে নিয়েছিল, যার শেষ দিকের একটি প্রকরণ ছিল অর্ফিকবাদ। যাই হোক, গ্রিক ইতিহাসের শেষ দিকে এবং জোড়পূর্বক খ্রিস্টায়ন পর্যন্ত এই রহস্যবাদের বিকাশমূলক বর্ণালীর সকল ধাপই পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল জুড়ে সমান্তরালভাবে টিকে ছিল।

থ্রেস এবং এশিয়া মাইনোর উভয় স্থানেই ডায়োনিসাস জনপ্রিয়তার জন্য, এবং দ্বাদশ অলিম্পীয় দেবদেবীদের মধ্যে ডায়োনিসাস না থাকায়, প্রাচীন গ্রিসে ডায়োনিসাসের পরমানন্দময় কাল্ট থ্রেস ও এশিয়া মাইনোর থেকে পরবর্তীকালে এসেছে বলে পূর্বে মনে করা হত। তবে মাইসিনীয় লিনিয়ার বি ট্যাবলেটগুলিতে ডায়োনিসাসের নাম আবিষ্কৃত হবার পর এই তত্ত্বটি পরিত্যাগ করা হয়, এবং মনে করা হয় প্রাচীন গ্রিসে ডায়োনিসাসের কাল্টটি গ্রিক সভ্যতা গড়ে ওঠার পূর্বেই তৈরি হয়েছিল। প্রথমদিকে অলিম্পীয় দেবদেবীদের মধ্যে ডায়োনিসাসের অনুপস্থিতির কারণ হিসেবে ধরা হয় তার সামাজিক বর্জন এবং তার কাল্টের প্রান্তিকীকরণ। এই কাল্টটি মিনোয়ান ক্রিট (প্রাচীন দেবতা জাগ্রিয়াসের দিক থেকে) নাকি আফ্রিকা, নাকি প্রোটো-স্যাবাজিয়স হিসেবে থ্রেস বা এশিয়া মাইনোরে উদ্ভূত হয়েছিল, সেই উত্তর পাওয়া যায়নি। কোন কোন পণ্ডিত মনে করেন, এই কাল্টটি এই স্থানগুলোর স্থানীয় নয়, বরং গৃহীত কাল্ট ছিল, এবং প্রারম্ভিক দিকে এটি একটি পরমানন্দময় কাল্ট ছিল, যদিও মিনোয়ান সংস্কৃতি থেকে অবশ্যই এটি অনেক উপাদান গ্রহণ করেছে।

রহস্যবাদে দ্রাক্ষাসুরার ভূমিকা

প্রাচীন মধ্য আমেরিকার এনথিওজেন-জনিত কাল্টের মত ডায়োনিসাসের কাল্ট মূলগতভাবে দ্রাক্ষাসুরা কাল্ট ছিল। এই দ্রাক্ষাসুরা কাল্টের সাথে সম্পর্কিত ছিল দ্রাক্ষালতা বা আঙ্গুরের চাষ, এর জীবনচক্র সম্পর্কিত বোধ এবং আঙ্গুরের বিভাজিত শরীর থেকে গাঁজনের মাধ্যমে দ্রাক্ষাসুরার প্রস্তুতি। এই জীবনচক্রের বোধ ছিল দ্রাক্ষালতার শরীরকে দেবতা ডায়োনিসাসের শরীরের সাথে একাত্ম ভাবা, গাঁজনের সাথে তারা পাতালপুরীতে থেকে যাওয়া দেবতা ডায়োনিসাসের সারকে সম্পর্কিত করত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়তি হল, দ্রাক্ষাসুরার মাদক এবং বাধাহীনতার প্রভাবকে দেবতা ডায়োনিসাসের আত্মার ভর করা বলে মনে করাহত, মনে করা হত এর মাধ্যমেই একজন ডায়োনিসাসকে লাভ করতে পারে। দ্রাক্ষাসুরাকে মাটিতেও ঢালা হত, মনে করা হত এখান থেকে দ্রাক্ষালতার পুনর্জন্ম হবে, আর এভাবে চক্রটি পূর্ণ হত। এই কাল্ট কেবল দ্রাক্ষালতার সাথেই সম্পর্কিত ছিল না, দ্রাক্ষাসুরার বা ওয়াইনের অন্যান্য উপাদানগুলোর সাথেও এটি সম্পর্কিত ছিল। গন্ধ ও ওষধিগুণের জন্য দ্রাক্ষাসুরার মধ্যে অন্যান্য উপাদান যেমন ভেষজ, ফুল এবং রেসিনজাতীয় দ্রব্য মেশানো হত। পণ্ডিতরা প্রস্তাব দিয়েছেন যে, প্রাথমিক দ্রাক্ষাসুরায় অ্যালকোহলের পরিমাণ অম থাকায়, যথার্থ মানসিক অবস্থা পরিবর্তনকারী প্রভাবের জন্য ধর্মানুষ্ঠান বা স্যাক্রামেন্টের দ্রাক্ষাসুরার মধ্যে এনথিওজেন জাতীয় দ্রব্যাদি মেশানো হত। মধু এবং মোমকে প্রায়শই দ্রাক্ষাসুরায় মেশানো হত, আরও প্রাচীন মদ্য মিডও ব্যবহার করা হত। ক্যারোলি কেরানি প্রস্তাব করেছেন, পূর্বে গ্রিকরা ডায়োনিসাসের সাথে মৌমাছির ঝাঁককে সম্পর্কিত করতেন, এবং নব্যপ্রস্তরযুগীয় মদ্য মিডের প্রথার সাথে এই মৌমাছির ঝাঁকের সম্পর্ক ছিল। পরবর্তীতে দ্রাক্ষাসুরার প্রথা এই মিডের প্রথাকে প্রতিস্থাপিত করে এবং আংশিকভাবে গ্রহণ করে নেয়। সম্ভবত থ্রেসীয় ভুট্টা দেবতা সাবাজিয়াসের সাথে একাত্ম করার মধ্য দিয়ে মিড এবং বিয়ারকে (খাদ্যশস্য ভিত্তিক মদ) ডায়োনিসাসের কাল্টের আওতায় নিয়ে আসা হয়।

অন্যান্য উদ্ভিদগুলি যেগুলি দ্রাক্ষাসুরার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয় সেগুলিও দ্রাক্ষাসুরার রীতিতে অন্তর্ভূক্ত হয়ে যায়, যেমন আইভি (মাদকতার বিরুদ্ধে কাজ করে বলে মনে করা হত, তাই দ্রাক্ষাসুরার বিপরীত, এই ফুল গ্রীষ্মের বদলে শীতকালে ফুটতে দেখা যায়); ডুমুর (অধিবিষ বা টক্সিন থেক শুদ্ধির জন্য) এবং পাইন (দ্রাক্ষাসুরার একটি সংরক্ষণকারী বা প্রিজারভেটিভ হিসেবে)। ষাঁড় (যার শিং দিয়ে দ্রাক্ষাসুরা পান করা হত) এবং ছাগলও (যার চামড়া সেলাই করে দ্রাক্ষাসুরার ধারক বা ওয়াইনস্কিন বানানো হত, এবং যার চড়ার ফলে দ্রাক্ষালতার ছাটাই হয়ে যায়) এই ধর্ম বা কাল্টের অংশ ছিল, শেষ পর্যন্ত এদেরকে ডায়োনিসাসের প্রকাশ হিসাবে দেখা হয়। এই সম্পর্কগুলোর কয়েকটি উর্বরতা দেবদেবীদের (ডায়োনিসাসের মতো) সাথে সংযুক্ত হয়ে যায়, এবং এই দেবদেবীদের নতুন ভূমিকার অংশ হয়ে যায়। দ্রাক্ষাসুরা সংক্রান্ত মতবাদ ও রীতি (Wine lore) এবং এর প্রতীকবাদ বুঝতে পারাটা এখান থেকে যে কাল্ট উদ্ভূত হয়েছে তা বোঝার মূল চাবিকাঠি, দ্রাক্ষাসুরা তৈরির প্রক্রিয়ায় দ্রাক্ষাসুরা প্রস্তুত ছাড়াও অন্যান্য তাৎপর্য ছিল, যার মধ্যে জীবন, মরণ, পুনর্জন্ম অন্তর্ভূক্ত ছিল, এবং এটি মানব মনস্তত্ত্ব সম্পর্কেও অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে।

ডায়োনিসাসের কাল্টটি প্রাচীন গ্রিসে দ্রাক্ষাসুরা (ওয়াইন) এর আমদানির সাথে সাথে এসেছে ধরে নেয়া হয়। সম্ভবত দ্রাক্ষাসুরার উদ্ভব হয় প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ৬০০০ অব্দে দুটি স্থানের একটিতে – মেসোপটেমিয়া এবং পারস্যের সীমানারেখা এবং জাগ্রোস পর্বতমালার অঞ্চলে (সাথে এশিয়া মাইনোরের সমৃদ্ধ দ্রাক্ষাসুরা সংস্কৃতি), বা উত্তর আফ্রিকার লিবিয়া বা অন্যান্য অঞ্চলের পর্বত ঢালের বুনো দ্রাক্ষালতা থেকে। উত্তর আফ্রিকা থেকে প্রাচীন মিশরে প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০ অব্দে দ্রাক্ষাসুরা প্রবেশ করে, এবং উত্তর আফ্রিকাতেই শরীরে পশুর ভর করার মত ধারণা সম্বলিত পরমানন্দগত ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের প্রচলন ছিল, যার একটি রূপ বর্তমান মরক্কোর আইসাওয়া সুফি সম্প্রদায়ের মধ্যে দেখা যায়, এই আইসাউয়া সুফি কাল্টে ছাগল-মানব এবং চিতাবাঘ-মানব এর বিষয় অন্তর্ভূক্ত রয়েছে (যদিও এই সম্প্রদায়টি ডায়োনিসীয় কাল্ট দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকতে পারে)। যাই হোক, এই শৃঙ্খলের পরবর্তী ধাপ হচ্ছে মিনোয়ান ক্রিট, যেখানে মিশরীয়, থ্রেশীয় এবং ফিনিশীয়দের কাছ থেকে দ্রাক্ষাসুরা আমদানি করা হয় এবং এর উপনিবেশগুলোতে (যেমন গ্রীসে) তা রপ্তানি করা হয়। যেহেতু “ডায়োনিসাস” নামটি ক্রিট এবং গ্রিস ব্যতীত অন্য কোথাও পাওয়া যায়না, তাই সম্ভবত ডায়োনিসীয় রহস্যবাদ সম্ভবত প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দ থেকে ১০০০ অব্দের মধ্যে নিজের রূপ পরিগ্রহ করে নিয়েছিল।

ধর্মীয় আচার

আচার অনুষ্ঠানগুলো ছিল ঋতুভিত্তিক মৃত্যু-পুনর্জন্ম ধারণার ভিত্তিতে ঘটত, যা কৃষিভিত্তিক কাল্টগুলোর মধ্যে সাধারণ ছিল, যেমন এলিউসিনীয় রহস্যবাদ। সমসাময়িক গ্রীক এবং মিশরীয় পর্যবেক্ষকদের মতে ওসিরীয় রহস্যবাদ ডায়োনিসীয় রহস্যবাদের সমান্তরাল ছিল। আত্মার ভর করার (স্পিরিট পোজেশন) সাথে সভ্যতার নিয়ম এবং সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্তির ধারণা জড়িত ছিল। এটি সভ্য সমাজের বাইরে এবং আদিম প্রকৃতির ফিরে আসাকে উদযাপন করত – যা পরবর্তীতে রহস্যবাদী ভাব তৈরি করে। এটি সামাজিকীকরণীয় ব্যক্তিত্ব এবং অহং থেকে মুক্ত হয়ে ঐশ্বরিক অবস্থা বা আদিম অবস্থায় গমনের (কখনও দুটোই) সাথে সম্পর্কিত ছিল। এই অর্থে ডায়োনিসাস ছিলেন পশু-দেবতা বা আধুনিক মনোবিজ্ঞানের ভাষায় অচেতন মন। এ জাতীয় ক্রিয়াকলাপটিকে উর্বরতামূলক, বলদায়ক, ক্যাথারটিক (পীড়ন কমানোর জন্য আবেগের বহিঃপ্রকাশ জাতীয়), মুক্তিদাত্রী এবং রূপান্তরমূলক হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, আর তাই সমাজের প্রান্তিকীকৃত লোকেদের, যেমন নারী, দাস, বহিরাগত ও “বিদেশীদের” (অনাগরিক) জন্য এটি আবেদনময় ছিল। রোমান স্যাটার্নালিয়ার মতোই এই কাল্টে সকল অংশগ্রহণকারীর ভূমিকা পাল্টে যেত, এবং এখানে সবাই সমান ছিল। যদিও গ্রীক ডায়োনিসীয় অনুষ্ঠানগুল নারীর সাথে সম্পর্কিত ছিল, এই কাল্টের কর্মকর্তাদের উপাধি নারী ও পুরুষ উভয় লিঙ্গেরই পাওয়া গেছে, যা এই কাল্টটি কেবলমাত্র নারীর জন্য ছিল – এমন দাবির বিরুদ্ধে যায়।

ভাবসমাধি তৈরি এই কাল্টের কেন্দ্রীয় বিষয় ছিল, কিন্তু এটি কেবল রাসায়নিক পদার্থের মাধ্যমেই আনা হত না, একই সাথে এখানে বুলরোরার (প্রাচীন বাদ্যযন্ত্র) এর সাহায্যে আত্মাকে আনয়ন এবং ড্রাম ও বাঁশির সাথে সাথে সামষ্টিক নৃত্যের ব্যবস্থাও ছিল (যা ভাবসমাধি আনয়নে অবদান রাখত)। ভাবসমাধিকে (ট্রেন্স) পরিচিত নৃতাত্ত্বিক পদগুলির সাহায্যে বর্ণনা করা হয়, এর সাথে সম্পর্কিত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ অঙ্গসঞ্চালন (যেমন সকল ভাবসমাধি আনয়নমূলক কাল্টে পেছন দিকে মাথা ঝাঁকানো দেখা যায়) আজকের দিনে অ্যাফ্রো-আমেরিকান ভুডু এবং সম্পর্কিত কাল্টগুলোতে দেখা যায়। ভুডুর রীতি অনুসারে, ভাবসমাধির সাথে নির্দিষ্ট ছন্দের সম্পর্ক ছিল। ডায়োনিসীয় অনুষ্ঠানের সাথে সম্পর্কিত গ্রীক গদ্যেও ছন্দ পাওয়া যায় (যেমন ইউরিপিদেসের দ্য বাক্কি)। সনাতন উক্তিগুলির এই সংগ্রহটি গ্রীক পাহাড়ের পল্লীতে সংঘটিত অনুষ্ঠানগুলোর বর্ণনা করে, যেখানে ভোজনের দিন মিছিল শোভাযাত্রা হত:

অন্ধকারে ডুবে যেত বলে তারা মশাল জ্বালায়, তারপর তারা পেছন দিকে মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে উজ্জ্বল চোখে সামনে এগিয়ে চলে, ড্রামের বাজনার সাথে তারা নেচে চলে যাতে তাদের রক্ত আলোরিত হয় (অথবা তারা মাতালের মত করে হাঁটে যা ডায়োনিসীয় চলনভঙ্গী নামে পরিচিত)। পরমানন্দের এই অবস্থায় তারা নিজেরা নিজেদের ত্যাগ করে, তারা বন্যভাবে নাচে এবং ‘ইউওই!’ বলে চিৎকার করে (যা ঈশ্বরেরই নাম), আর সেই গভীর পরমানন্দের সময় তারা ঈশ্বরের সাথে একাত্ম হয়ে যায়। তারা ঈশ্বরের আত্মায় পূর্ণ হয়ে ওঠে এবং ঐশ্বরিক ক্ষমতা অর্জন করে। এই চর্চা গ্রীক সংস্কৃতিতে মায়েনাড, থাইয়াদেস এবং বাক্কোইইদের বাক্কানালদের দ্বারা প্রদর্শিত হত; অনেক গ্রীক শাসক এই কাল্টকে সভ্য সমাজের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করেন এবং এটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিলেন (যদি পুরোপুরি দমন না করা হয়)। পরেরটি ব্যর্থ হয়; পূর্বেরটি এথেন্সে গৃহচর্চিত ডায়োনিসাসবাদকে এথেন্সের রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়। এটি ছিল ডায়োনিসাসবাদের একটি রূপ- একটি কাল্ট যা বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন রূপ গ্রহণ করে (প্রায়ই আদিবাসী দেবতা এবং তাদের আচার-অনুষ্ঠানকে গ্রহণ করে, যেমনটা ডায়োনিসাস নিজেও করেছিলেন)। গ্রীক বাক্কোই দাবি করে যে, দ্রাক্ষাসুরার মত, ডায়োনিসাসের স্বাধ বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ছিল; যা তাদের পুরাণ ও সংস্কৃতিকে প্রতিফলিত করে, তিনি বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নাম এবং রূপে আবির্ভূত হন।

ডায়োনিসীয় উপকরণাদি ও পবিত্র প্রাণী

এই রহস্যবাদের অনুষ্ঠানের জন্য যেসব উপকরণ লাগে সেগুলো হল – কান্থারস, বড় হাতল সহ পান করার পেয়ালা, উৎপত্তিগতভাবে রাইথন (ষাঁড়ের শৃঙ্গ থেকে নির্মিত), পরবর্তীতে কাইলিক্স বা দ্রাক্ষাসুরার গবলেট; থাইরস, শীর্ষে পাইন শঙ্কুযুক্ত দীর্ঘ দণ্ড (জাদুদণ্ড), দীক্ষাপ্রাপ্ত এবং ঈশ্বর যাদের উপর ভর করেছেন তারা বহন করত; স্টেভ, আচারের স্থান চিহ্নিত করার জন্য একবার মাটিতে ছুড়ে ফেলা হত; ক্রেটার, মিশ্রিত করার বাটি; ফ্ল্যাগেলাম, একটি চাবুক; মিনোয়ান দ্বিমুখী কুড়াল, একবার বলিদানের জন্য ব্যবহৃত হত, পরবর্তীতে গ্রীক কোপিস দ্বারা প্রতিস্থাপিত (বাঁকা ছোড়া); রেটিস, শিকারির জাল’ লরেল মুকুট এবং জোব্বা জাতীয় পোশাক, বেগুনি রঙের জোব্বা, বা চিতাবাঘ বা হরিণের চামড়া দিয়ে নির্মিত পোশাক নেবিক্স; শিকারের বুটজুতা; পার্সোনা মুখোশ; বুলরোরার (বাদ্যযন্ত্র); সালপিনেক্স, লম্বা, সোজা ডঙ্কা বা শিঙা; প্যান বাঁশি; টিম্পেনান, হ্যান্ড ড্রাম; লিকনন, ডুমুরের সাথে পবিত্র ঘুড়ি; ডায়োনিসাসের জন্য ঐতিহ্যবাহী নৈবেদ্য; কস্তুরী, ভাম, লোবান, শিলারস, আইভি, আঙ্গুর, পাইন, ডুমুর, দ্রাক্ষাসুরা, মধু, আপেল, গাঁজা, অর্কিসের মূল, কাঁটাগাছ (থিস্টল), সমস্ত বন্য ও গার্হস্থ্য বৃক্ষ।

ডায়োনিসাসে চিতা বা ষাঁড়ের মতো অসংখ্য পবিত্র প্রাণী রয়েছে। অন্যান্য পবিত্র প্রাণীগুলির মধ্যে রয়েছে: সিংহ এবং অন্যান্য বড় বিড়াল, ছাগল, গাধা এবং সর্পগুলি। ষাঁড় এবং ছাগল এবং তাদের “শত্রু”, চিতাবাঘ (বা কোনও বড় বিড়াল – গ্রীকরা ভারতের কিছু অংশে উপনিবেশ স্থাপন করার পর, শিবের বাঘ কখনও কখনও ঐতিহ্যবাহী প্যান্থার বা লেপার্ডকে (চিতাবঘকে) প্রতিস্থাপিত করে), এবং সর্প (সম্ভবত সাবাজিয়াস থেকে প্রাপ্ত, তবে এটি উত্তর আফ্রিকীয় কাল্টেও পাওয়া গেছে); এছাড়াও, ডলফিন, সিংহ এবং মৌমাছিও রয়েছে। ষাঁড়ের সাথে ডায়োনিসাসের সংযোগ একাধিক বিশেষণে পাওয়া যায়। দ্য বাক্কি নাটকে পেন্থাস, যিনি থিবিসে ডায়োনিসাসের উপাসনার বিরোধিতা করতেন, তিনি ডায়োনিসাসের মাথায় ষাঁড়ের শিং দেখেছিলেন। ষাঁড়ের সাথে সংযুক্ত ডায়োনিসাসের বিশেষণগুলো হল – টরোকেফ্লোস / টরোক্রানোস / টরোমেটোপোস এবং টরোস। গ্রীক টরোকেফ্লোস (Ταυροφαγος) অর্ফিকবাদে ব্যবহৃত ডায়োনিসাসের একটি পদবি। (Orph. Hymn. 51. 2.) এটি নদী এবং সমুদ্রের একটি পদবি হিসাবেও দেখা যায়, যেগুলো ভূমিতে তাদের উর্বরাক্তির প্রভাবকে নির্দেশ করার জন্য প্রতীকীভাবে ষাঁড়কে প্রতিনিধিত্ব করত। (Eurip. Iphig. Aul. 275, Orest. 1378 ; Aelian, V. H. ii. 33; Horat. Carm. iv. 14, 25.)। টরোস হলো একটি ষাঁড়, ডায়োনিসাসের একটি পদবি হিসাবে দেখা যায়। (Eurip. Bacch. 918 ; Athen. xi. p. 476; Plut. Quaest. Graec. 36 ; Lycoph. Cass. 209. )।

ডায়োনিসাসের আহ্বান (অরফিক স্তোত্র থেকে)

  • “আমি জোরে গর্জনশীল এবং উল্লসিত ডায়োনিসাসকে আহ্বান জানাচ্ছি,
    আদিম, দ্বৈত প্রকৃতির, তিনবার জন্মগ্রহণকারী, বাক্কীয় প্রভু,
    বন্য, অনবদ্য, গোপনীয়, দুই শিং এবং দুই আকৃতির।
    আইভী আবৃত, ষাঁড়মুখী, যোদ্ধা, গর্জক, বিশুদ্ধ,
    তুমি কাঁচা মাংস নাও, তোমার ভোজ আছে, গাছপালায় মোড়ানো, আঙ্গুরের গুচ্ছ দিয়ে সাজানো।
    সম্পদশালী ইউবুলিয়াস, জিউস দ্বারা পরিণত অমর দেবতা
    যখন সে পার্সিফোনের সাথে অবর্ণনীয় মিলনে মিলিত হয়।
    আমার কণ্ঠে কান দাও, হে ধন্য,
    আর তোমার সুন্দরী নিম্ফ আমার উপর নিঃশ্বাস নিচ্ছে নিখুঁত হাঁ এর চেতনায়”।
  • “শারীরিক বা আধ্যাত্মিকভাবে নেশাগ্রস্ত হয়ে একজন দীক্ষাপ্রাপ্ত এমন বোধের তীব্রতা পুনরুদ্ধার করে যা পূর্বে তার বিচক্ষণতা ধ্বংস করে দিয়েছিল; তিনি বিশ্বকে দেখেন আনন্দ এবং সৌন্দর্যে ভরা হিসেবে, এবং তার কল্পনা হঠাৎ করে প্রতিদিনের ব্যস্ততার কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করে। বাক্কীয় আচার ‘enthusiasm’ তৈরি করে, যার ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হচ্ছে, ঈশ্বর প্রার্থনাকারীর মধ্যে প্রবেশ করেন, যে প্রার্থনাকারী মনে করেন যে তিনি ঈশ্বরের সাথে একাত্ম হয়ে গেছেন।”
  • অরফিক স্তোত্র ৪৪, ডায়োনিসাস বাসারিয়াসের উদ্দেশ্যে একটি স্তোত্র –
    “এসো, ধন্য ডায়োনিসাস (ডায়োনিসোস), বিভিন্ন নামযুক্ত, ষাঁড়মুখী, বজ্র থেকে জন্মগ্রহণকারী, বাক্কাস (বাক্কোস)। তুমি সর্বজনীন শক্তির বাসারীয় দেবতা, যার তরবারি, রক্ত এবং পবিত্র ক্রোধ আনন্দিত থাকে। তুমি স্বর্গীয় আনন্দের আত্মহারা, প্রচণ্ড গর্জনশীল, প্রচণ্ড অনুপ্রেরণাকারী, দণ্ডধারী। দেবতা হয়েও তুমি মানুষের মাঝে বাস করো। হে প্রসন্ন দেব, তুমি আমাদের কাছে এসো, আনন্দিত মনে এসো।”
  • অরফিক স্তোত্র ৪৫, লিকনিটাস বাক্কাসের উদ্দেশ্যে (লিকনিটোস ডায়োনিসাস)
    “অমৃত থেকে উপধূপন – লিকনিতান বাক্কাস (লিকনিটোস ডায়োনিসস), দ্রাক্ষালতার বাহক, তোমাকে এই স্বর্গীয় অনুষ্ঠানের প্রতি আশীর্বাদ বর্ষণ করতে আহ্বান জানাই, যেখানে নিম্ফরা অলঙ্কৃত হয়ে, হাসোজ্জল মুখে আসে, যেখানে পরমানন্দের দেবী ভেনাস (অ্যাফ্রোডাইটি) আসে। তোমার ক্ষেপাটে পদক্ষেপের সাথে পাগল নিম্ফের পদক্ষেপ মেলে, এবং তোমরা হালকা পদক্ষেপে নেচে যাও। জোভের বা জিউসের পরামর্শে ও প্রোসারপিনার (পার্সিফোন) পালনে তুমি সকল দেবদেবীদের মধ্যে সবচেয়ে ভীতিকর হয়ে ওঠো। এসো, এই মিনতিকরের কণ্ঠস্বর শোনো, হে প্রসন্ন এসো, আর এই অনুষ্ঠানও প্রসন্নতার সহিত চালিত হোক।”
  • অরফিক স্তোত্র ৪৬, বাক্কাস পেরিকিওনিয়াস (ডায়োনিসাস পেরিকিওনিওস) –
    “সুগন্ধী থেকে উপধূপন – বাক্কাস পেরিসিওনিয়াস (ডিওনিসোস পেরিকিওনিওস), আমার প্রার্থনা শোনো, তোমার যত্নের জন্য ক্যাডমাসের পরিবার পাগল হয়ে গিয়েছিল, যখন পৃথিবীতে বজ্রের বর্ষন হয়, পৃথিবী অগ্নিদগ্ধ হয়, তীব্র জলস্রোত তৈরি হয়, তখন তোমার স্তম্ভগুলো অতুলনীয় শক্তির সাথে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে। হে শক্তিশালী বাক্কাস, এই অনুষ্ঠানকে আশীর্বাদ করো, এবং আনন্দের সহিত এসে এই মিনতিকরকে আশীর্বাদ করো।”

অর্ফিকবাদ

ভূমিকা ও উৎপত্তি

প্রাচীন গ্রীক এবং হেলেনবাদী বিশ্বে, পাশাপাশি থ্রেসীয়দের থেকে উদ্ভূত গ্রিক পাতালপুরীতে অবতরণ ও উত্তোরণ করা পৌরাণিক চরিত্র ও কবি অরফিয়াস সংক্রান্ত লিখিত সাহিত্যের সাথে সম্পর্কিত ধর্মীয় বিশ্বাস এবং অনুশীলনের একটি সমষ্টিকে অর্ফিকবাদ (Orphism, কম ক্ষেত্রে Orphicism; প্রাচীন গ্রিক: Ὀρφικά ) নামটি প্রদান করা হয়। অর্ফিকবাদীরা ডায়নিসাসকে (যিনি একবার পাতালপুরীতে নেমে ফিরে এসেছিলেন) এবং পার্সেফোনকে (যিনি বার্ষিকভাবে একটি মৌসুমের জন্য পাতালপুরীতে নামেন ও তারপর ফিরে আসেন) সম্মান জানায়। অর্ফিকবাদকে পূর্বের ডায়োনিসীয় ধর্মের সংস্কার হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে, যেখানে প্রাক-সক্রেটীয় দর্শনের একটি অংশের উপর ভিত্তি করে ডায়োনিসাস সম্পর্কিত পুরাণের পুনর্পাঠ এবং হেসিওডের থিওগনি এর পুনর্বিণ্যাস করা হয়েছিল।

অরফিজমের কেন্দ্রীয় কেন্দ্রবিন্দু হল টাইটানদের হাতে দেবতা ডায়োনিসাসের দুর্ভোগ ও মৃত্যু, যা অর্ফিকবাদের কেন্দ্রীয় পুরাণের ভিত্তি রচনা করে। এই পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, শিশু ডায়োনিসাসকে মেরে ফেলা হয়, ছিঁড়ে ফেলা হয় এবং টাইটানরা তাকে খেয়ে ফেলে। প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য, জিউস টাইটানদের বজ্র দিয়ে আঘাত করে ও তাদেরকে ছাইয়ে পরিণত করে। এই ছাই থেকে মানবতার জন্ম হয়। অর্ফিকবাদ অনুসারে এই পৌরাণিক কাহিনীটি মানবতাকে দ্বৈত প্রকৃতির বলে বর্ণনা করে: এর একটি প্রকৃতি হল দেহ (সোমা বা sōma), যা মানুষ টাইটানদের কাছ থেকে লাভ করেছে এবং আত্মা (সাইকি psychē) যা মানুষ লাভ করেছে ডায়োনিসাসের কাছ থেকে। টাইটানীয় বস্তুগত অস্তিত্ব থেকে মুক্তি অর্জন করার একজনকে ডায়োনিসীয় রহস্যবাদে দীক্ষা নিতে হবে এবং টেলেটে নামক একটি ধর্মীয় আচারের মধ্য দিয়ে যেতে হবে যা তাকে পবিত্র করবে এবং দুঃখ ও জরা থেকে মুক্তি এনে দেবে। অর্ফিকবাদীরা বিশ্বাস করত, মৃত্যুর পরে তারা অরফিয়াস এবং অন্যান্য বীরদের সাথে অনন্তকাল কাটাবে। তাদের মতে যারা এই রহস্যবাদে দীক্ষিত হয়নি (এমিয়েত্রি বা amyetri) তারা মুক্তি পাবে না, বরং চিরকাল ধরে তাদের পুনর্জন্ম ঘটতে থাকবে। অর্ফিকবাদীরা দীক্ষা ও আচারের মাধ্যমে পবিত্রতা আর্জনের পর সেই পবিত্রতাকে বজায় রাখার জন্য আধ্যাত্মিক দূষণ থেকে মুক্ত একরকম সন্ন্যাস জীবনযাপন করত। তারা কঠোর নিরামিষাসী জীবন পালন করত, এমনকি নির্দিষ্ট কয়েক ধরণের শিমও (bean) ভক্ষণ করত না।

অর্ফিকবাদ নামটি কিংবদন্তি কবি-নায়ক অর্ফিয়াসের নামে নামকরণ করা হয়েছিল, যাকে ডায়োনিসীয় রহস্যবাদের উদ্ভাবক হিসেবে দাবি করা হয়। তবে প্রথম দিকের উৎস্য এবং মূর্তিতত্ত্বে অরফিয়াস ডায়োনিসাসের চেয়ে অ্যাপোলোর সাথে আরও ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন। তার পৌরাণিক কাহিনীটির কয়েকটি সংস্করণ অনুসারে তিনি ছিলেন অ্যাপোলোর পুত্র এবং তার জীবনের শেষদিকে তিনি অন্যান্য দেবতাদের উপাসনা থেকে দূরে সরে গিয়ে নিজেকে কেবল অ্যাপোলোর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেছিলেন। বৈশিষ্ট্যপূর্ণভাবে চিহ্নিত অর্ফিকবাদী বিশ্বাসের কবিতাগুলোর সময়কাল খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে বা অন্তত খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীর, এবং খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতকের গ্রাফিতিগুলো “অর্ফিকবাদীদের” (“Orphics”) নির্দেশ করে। দারভেনি প্যাপিরাস অনুসারে অর্ফীয় পুরাণ খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতকের শেষের দিকে রচিত হয়েছিল, এবং এটি এর চেয়েও পুরনো হতে পারে। অর্ফীয় দৃষ্টিভঙ্গি এবং অনুশীলন হেরোডোটাস, ইউরিপিদেস এবং প্লেটো দ্বারা সত্যায়িত হয়। প্লেটো “অর্ফিউস-দীক্ষাদাতা” (Ὀρφεοτελεσταί) এবং সংশ্লিষ্ট আচার-অনুষ্ঠানের কথা উল্লেখ করেছিলেন, যদিও “অর্ফীয়” সাহিত্য সাধারণভাবে এই আচার-অনুষ্ঠানের সাথে কতদূর সম্পর্কিত তা নিশ্চিত নয়। বার্ট্র্যান্ড রাসেল (১৯৪৭) সক্রেটিস সম্পর্কে উল্লেখ করেছিলেন, “তিনি কোনও গোঁড়া অর্ফিকবাদী নন; তিনি কেবলমাত্র এর মৌলিক মতবাদগুলোকে গ্রহণ করেন, এর কুসংস্কার ও পবিত্রতার অনুষ্ঠানকে নয়।”

পিথাগোরীয়বাদের সাথে অর্ফিকবাদের সম্পর্ক

অর্ফিকবাদী দৃষ্টিভঙ্গি এবং অনুশীলন পিথাগোরীয়বাদের মধ্যে সমান্তরাল উপাদান রয়েছে, এবং বিভিন্ন সূত্র অনুসারে, পিথাগোরাস বা পিথাগোরীয়রা নিজেরাই প্রারম্ভিক অর্ফিকবাদী রচনাগুলো তৈরি করেছিলেন; অন্য সূত্র অনুসারে, পরবর্তী দার্শনিকগণ বিশ্বাস করতেন, পিথাগোরাস অর্ফিকবাদের একজন দীক্ষাপ্রাপ্ত ছিলেন। পিথাগোরীয়বাদ ও অর্ফিকবাদের মধ্যে কোনটি কোনটিকে প্রভাবিত করেছে তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কোন কোন পণ্ডিত বলেন, অর্ফিকবাদ ও পিথাগোরীয়বাদ দুটি ভিন্ন ধারা হিসেবে শুরু হয়, যা পরবর্তীতে কিছু সাদৃশ্যের জন্য একে অপরের সাথে মিশ্রিত হয়ে যায় বা এদের আলাদা সত্তা নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। অন্যেরা যুক্তি দেন, এই দুটো ধারার উৎপত্তি একই, এবং এদেরকে একই সত্তা হিসেবে বিবেচনা করা যায়, যাকে “অর্ফিকো-পিথাগোরীয়বাদ” বলা হয়। পিথাগোরীয়বাদ অর্ফিকবাদের প্রত্যক্ষ উত্তরসুরীর একটি অংশ, এই বিশ্বাসটি লেট এন্টিকুইটি বা শেষ প্রাচীন যুগে অস্তিত্বশীল ছিল, যখন নব্যপ্লেটোবাদী দার্শনিকগণ পিথাগোরীয়বাদী শিক্ষার অর্ফিকবাদী উৎপত্তিকে মেনে নেন। প্রোক্লাস লেখেন: “অর্ফিয়াস অর্ফিকবাদী রহস্যবাদের মাধ্যমে যেসব গোপন শিক্ষা দীক্ষাপ্রাপ্তদেরকে দান করেছিলেন, থ্রেসের লিবার্থায় অ্যাগ্লাওফেমাসের কাছে দীক্ষা গ্রহণের পর পিথাগোরাস সেগুলোকে বিস্তারিতভাবে শেখেন। এর ফলে তার কাছে ঈশ্বর সম্পর্কিত জ্ঞান প্রকাশিত হয় যা অর্ফিয়াস তার মা ক্যালিওপির কাছ থেকে শিখেছিলেন।” ১৫শ শতকে, নব্যপ্লেটোবাদী গ্রিক পণ্ডিত কনস্টান্টাইন ল্যাসকারিস (যিনি আরগোনটিকা অরফিকা কবিতাটি আবিষ্কার করেছিলেন) একজন পিথাগোরীয় অর্ফিয়াসকে বিবেচনা করেছিলেন। বার্ট্রান্ড রাসেল (১৯৪৭) উল্লেখ করেন, “অর্ফিকবাদীরা ছিলে একটি সন্যাসী সম্প্রদায়; দ্রাক্ষাসুরা তাদের কাছে কেবলই একটি প্রতীক ছিল, যা পরবর্তীতে খ্রিস্টীয় স্যাক্রামেন্টে প্রবেশ করে। তারা যে নেশাকে খুঁজতেন তা ছিল ঈশ্বরের সাথে মিলনের “এনথুসিয়াজম” এর। তারা এভাবে মনে করতেন রহস্যবাদী জ্ঞানকে সাধারণ উপায়ে অর্জন করা যায় না। পিথাগোরাস হয়ে এই রহস্যবাদী উপাদান গ্রিক দর্শনে প্রবেশ করে, যিনি অর্ফিকবাদের একজন সংস্কারক ছিলেন, যেমনটা অর্ফিয়াস ছিলেন ডায়োনিসাসের ধর্মের সংস্কারক। পিথাগোরাস হয়ে অর্ফিকবাদী উপাদানগুল প্লেটোর দর্শনে প্রবেশ করে, এবং প্লেটো থেকে তা পরবর্তীকালের দর্শনে প্রবেশ করে যা যেকোন মাত্রায় ধর্মীয় ছিল।”

প্রাথমিক অর্ফিকবাদী এবং পিথাগোরীয় সূত্রসমূহের অধ্যয়নসমূহ তাদের সম্পর্কের বিষয়ে অধিকতর দ্ব্যর্থক, এবং যেসব লেখকগণ পিথাগোরাসের জীবদ্দশার আশেপাশের সময়কালের ছিলেন তারা কখনই অর্ফিকবাদে পিথাগোসাসের দীক্ষাপ্রাপ্তির কথা উল্লেখ করেন নি, এবং সাধারণভাবে অর্ফিয়াসকে একজন পৌরাণিক চরিত্র হিসেবেই চিহ্নিত করেছেন। তারপরও খ্রিস্টপূর্ব ৫ম ও ৪র্থ শতকের লেখকগণ দুই মতবাদের মধ্যে শক্তিশালী সম্পর্ক খুঁজে পান। প্রকৃতপক্ষে কেউ কেউ দাবি করেন, পিথাগোরাস কেবল অর্ফিকবাদের দীক্ষাপ্রাপ্ত ছিলেন না, বরং তিনিই প্রথম অর্ফিকবাদী গ্রন্থ রচনা করেন। বিশেষ করে কিওসের আয়ন দাবিকরেন, পিথাগোরাস সেইসব কাব্য রচনা করেন যা পৌরাণিক চরিত্র অর্ফিয়াসের উপর আরোপ করা হয়, এবং এপিজেনিস তার অন ওয়ার্ক্স এট্রিবিউটেড টু অর্ফিয়াস গ্রন্থে কয়েকটি প্রভাবশালী অর্ফিক কাব্যকে প্রারম্ভিক পিথাগোরীয়দের রচনা বলে দাবি করেছিলেন, যাদের মধ্যে অর্ফিকবাদী কবি সার্কপ্সও একজন। সিসেরোর মতে, অ্যারিস্টোটলও দাবি করেছিলেন যে অর্ফিয়াসের অস্তিত্ব কখনই ছিল না, এবং পিথাগোরীয়রাই কিছু অর্ফিকবাদী কবিতার কৃতিত্ব সারকন নামে একটি চরিত্রকে দান করেছিল। পিথাগোরীয়বাদের মধ্য দিয়ে নব্যপ্লেটোবাদীরা অর্ফিয়াসের ধর্মতত্ত্বকে গ্রিসের উৎপত্তিগত ধর্মীয় ধারার কেন্দ্র হিসেবে মনে করতেন। তবে প্রারম্ভিক সূত্রগুলো অনুসারে অর্ফিকবাদী ধর্মের উদ্ভব ঘটে একটি মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন ও অল্পসংখ্যক মানুষের ধর্মীয় আন্দোলন (ফ্রিঞ্জ মুভমেন্ট) হিসেবে, যেখানে এর পুরাণ ও ধর্মীয় আচারকে মূলধারার বাইরের ও অশাস্ত্রীয় বলে বিবেচনা করা হত, এবং এর মধ্যে এমন অনেক উপাদান ছিল যেগুলো খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ ও ৫ম শতকের মিশরীয় ধর্মের সদৃশ ছিল। আধুনিক ঐতিহাসিকগণ এই দৃষ্টিভঙ্গিটিকেই অধিকতর সমর্থন করেন।

কর্নফোর্ড বলেন, পিথাগােরিয়বাদ হচ্ছে, অর্ফিক মতবাদের একটি সংস্কারধর্মী আন্দোলন, আর অর্ফিক মতবাদ হচ্ছে, ডাইওনিসীয় রহস্যবাদের একটি সংস্কারধর্মী আন্দোলন। পিথাগোরাসের দর্শন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, নীতিতত্ত্ব ও আত্মতত্ত্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত পিথাগােরীয় ধর্মমত মূলত অর্ফিক মতের দ্বারা প্রভাবিত, অর্ফিক ধর্মমত অনুসারীরাও আত্মার দেহান্তর বা জন্মান্তরের ধারণায় বিশ্বাসী ছিল এবং দেহ থেকে আত্মাকে স্বতন্ত্র ও উন্নত সত্তা হিসেবে বিশ্বাস করত। দেহান্তরের প্রক্রিয়ায় আত্মা তার বিশুদ্ধতার পরিবর্তন করে এই ধারণাও অর্ফিকদের মধ্যে পাওয়া যায়। অর্ফিকগণও বিশ্বাস করত যে, আত্মা অমর, দেহ ধ্বংস হয়, কিন্তু আত্মা ধ্বংস হয় না। তাদের মতে, জন্মের ফলে আত্মা তার যে স্বর্গীয় পবিত্রতা হারায়, মৃত্যুর পর তা হেডেসে (Hades) পুনরায় পরিশােধিত হয় এবং পরে পুনরায় পৃথিবীতে নতুন জন্মলাভ করে। পিথাগােরীয় মতে, আত্মার বিশুদ্ধিলাভের মাধ্যমে জন্মমৃত্যু চক্র থেকে মুক্তিলাভ এবং ঈশ্বরের সাথে মিলিত হওয়াই জীবনের লক্ষ্য। অর্ফিকদের মতাে পিথাগােরীয়রা দ্বৈতবাদী ছিলেন। তাদের মতে, মানুষের আত্মাকে তারা দেহের চেয়ে উৎকৃষ্ট বলে মনে করতেন এবং বিশ্বাস করতেন যে, মানুষের স্বরূপ তার আত্মার নিহিত দেহ ক্ষণস্থায়ী ভাবাবেগের অধিষ্ঠান এবং মৃত্যুতে তা বিনষ্ট হয়ে যায়; কিন্তু আত্মা অমর ও অবিনশ্বর। ধর্মের লক্ষ্য আত্মাকে একটি নুিখত শুভ সত্তায় রূপান্তরিত ও প্রতিষ্ঠিত করা। পাপাচার পরিণামে জয়ী হতে পারে না, কেননা তা এক ধরনের পীড়া। পরিপূর্ণ ধর্মীয় উকর্ষলাভের জন্য এক দীর্ঘ নৈতিক বিশুদ্ধি প্রক্রিয়ার প্রয়ােজন।

পিথাগোরীয়রা তাদের আচারে অনেক অর্ফিক শব্দ ব্যবহারও করতেন যেগুলো পরবর্তীতে একাডেমিয়া সব বিভিন্ন প্রচলিত ক্ষেত্রে প্রবেশ করে। ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভের আশায় কৃত ধর্মানুষ্ঠান বোঝাতে ব্যবহৃত শব্দ orgy শব্দটির মত theory শব্দটিও ছিল একটি অর্ফিক শব্দ। কর্নফোর্ড এর অনুবাদ করেছেন আবেগপূর্ণ সহানুভূতি সহযোগে অনুধ্যান। পিথাগোরাস বলছেন, যখন কেউ আবেগপূর্ণ সহানুভূতি-সহযোগে অনুধ্যান করে তখন তার অবস্থা হয় পীড়িত ঈশ্বরের মতো। অর্থাৎ, তার মৃত্যু হয় এবং আবার সে নতুন করে জন্ম নেয়। পিথাগোরাসের কাছে আবেগপূর্ণ সহানুভূতি সহযোগে অনুধ্যান ছিল বুদ্ধিবৃত্তিক, তার সূচনা গাণিতিক জ্ঞানের মধ্য দিয়ে। এইভাবে পিথাগোরাসবাদের মধ্য দিয়ে theory শব্দটি ক্রমে তার আধুনিক অর্থ অর্জন করেছে। কিন্তু পিথাগোরাসের দ্বারা উদ্বুদ্ধ সবার কাছে তা আধ্যাত্মিক জ্ঞানের একটি উপাদান হিসেবেই থেকে গিয়েছিল। পাঠশালায় যারা অনিচ্ছুকভাবে হলেও একটু-আধটু গণিত শিখেছে তাদের কাছে এটা অদ্ভুত মনে হতে পারে। কিন্তু গণিতের আকস্মিক উপলব্ধির গভীর আনন্দলাভের অভিজ্ঞতা যাদের হয়েছে, যারা গণিত ভালোবাসে, তাদের কাছে পিথাগোরীয় দৃষ্টিভঙ্গি-যদি সত্য নাও মনে হয়-পুরোপুরি স্বাভাবিক বলে মনে হবে। মনে হতে পারে, অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক তার অভিজ্ঞতার উপাদান-বস্তুর দাস, কিন্তু খাঁটি গণিতজ্ঞ সঙ্গীতজ্ঞের মতো এক নিজস্ব সুশৃঙ্খল সুন্দর জগতের স্বাধীন স্রষ্টা।

পুরাণ ও পরকাল

অর্ফিক থিওগনিসমূহ হেসিওডের থিওগোনির মতই বংশলতিকামূলক কাজ, কিন্তু এদের ভেতরের খুটিনাটি ভিন্ন। অর্ফিক থিওগনিসমূহ প্রতীকীভাবে নিকট প্রাচ্যের মডেলের সদৃশ। মূল গল্পটি হচ্ছে, ডায়োনিসাসের পূর্বজন্ম জাগ্রিয়াস ছিলেন জিউস ও পার্সিফোনের পুত্র। জিউস শিশুটিকে তার উত্তরসুরী ঘোষণা করেন যা তার স্ত্রী হেরাকে রাগিয়ে দেয়। তিনি শিশুটিকে হত্যার জন্য টাইটানদের উস্কে দেন। এরপর টাইটানরা জাগ্রিয়াসকে আয়না ও শিশুদের খেলনার দ্বারা ছলনার মাধ্যমে ধরে ফেলেন, তাকে ছিড়ে টুকরো টুকরো করেন এবং ভক্ষণ করেন। অ্যাথিনা জাগ্রিয়াসের হৃদপিণ্ডকে রক্ষা করেন এবং জিউসকে ব্যাপারটি জানিয়ে দেন। জিউস টাইটানদের এই পাপের জন্য তাদেরকে বজ্রের দ্বারা আঘাত করেন। তাদের ছাই থেকে পাপী মানবজাতির জন্ম হয়, যার মধ্যে টাইটান ও জাগ্রিয়াসের শরীর নিহিত। মানুষের আত্মাটি ডায়োনিসাসের অংশ, আর তাই তা স্বর্গীয়, কিন্তু শরীরটি ছিল টাইটান অংশের যা তার আত্মাকে বন্দি করে রাখে। এভাবে ঘোষণা করা হয় যে, পুনর্জন্মের চক্র বা মেটেমসাইকোসিসের মাধ্যমে আত্মা তার পোষকদেহের কাছে ১০ বার প্রবেশ করবে। শাস্তির পর জাগ্রিয়াসের বিচ্ছিন্ন অঙ্গগুলোকে অ্যাপোলো সচেতনভাবে সংগ্রহ করেন এবং এগুলোকে ডেলফির পবিত্র ভূমিতে সমাহিত করেন। পরের শতকগুলোতে, পুরাণের এই সংস্করণগুলোর বিকাশ ঘটে যেখানে অ্যাপোলোর দ্বারা জাগ্রিয়াসের অঙ্গগুলোর সমাহিতকরণের ফলে ডায়োনিসাসের পুনর্জন্ম ঘটে, এভাবে অ্যাপোলো তার ডায়োনিসিওডোটেস (ডায়োনিসাসের সম্প্রদায়ক) উপাধিটি লাভ করেন। অ্যাপোলো এই অঙ্গের বিচ্ছিন্নকরণের পুরাণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন কারণ তিনি এনকসমিক আত্মাকে মিলনের দিকে প্রত্যাবর্তনের প্রতিনিধিত্ব করেন।

ডায়োনিসাসের পুনর্জন্মের দুটি অর্ফিক গল্প আছে: একটিতে ডায়োনিসাসের পুনর্জন্ম ঘটে তার পিতা জিউসের উরুতে প্রবিষ্ট ডায়োনিসাসের হৃদপিণ্ড থেকে, আরেকটি অনুসারে ডায়োনিসাসের পুনর্জন্ম ঘটে জিউসের সাথে মরণশীল নারী সেমিলির মিলনের মাধ্যমে। এই বিবরণগুলোর অনেকগুলোই ধ্রুপদী লেখকদের বিবরণ বিবরণ থেকে ভিন্ন। দামাস্কিয়াস বলেছেন যে, অ্যাপোলো “তাকে (ডায়োনিসাস) একত্রিত করেন এবং তাকে ফিরিয়ে আনেন”। খ্রিস্টীয় লেখক ফার্মিকাস ম্যাটারনাস তার গ্রন্থ অন দি এরর অফ প্রোফেন রেলিজিয়ন গ্রন্থে ভিন্ন বিবরণ দিয়েছেন। তিনি বলেন যে, জুপিটার ( জিউসের) উৎপত্তিগতভাবে ক্রিটের একজন মরণশীল রাজা ছিলেন (ইউহেমেরাসের ধারণা), আর ডায়োনিসাস তার পুত্র ছিলেন। ডায়োনিসাসকে হত্যা করা হয়েছিল, এবং তারপরে তাকে ভক্ষণ করা হয়েছিল। কেবল তার হৃদপিণ্ডকেই এথেনা উদ্ধার করতে পারেন। এক ডায়োনিসাসের মত করে একটি জিপসামের মূর্তি (টাইটানরা নিজেদেরকে লুকিয়ে রাখতে জিপসাম ব্যবহার করত) বানানো হয় এবং তার মধ্যে তার হৃদপিণ্ডটিকে স্থাপন করা হয়।

অরফিক থিওগনিসমূহে রয়েছে –

  • (১) “প্রোটোগনোস থিওগনি”- হারিয়ে গেছে, আনু. খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ অব্দে রচিত, যা সম্পর্কে দারভেনি প্যাপিরাসের ভাষ্য থেকে জানা যায়, এবং এতে ধ্রুপদী লেখকদের (এম্পিডোক্লেস ও পিন্ডার) উল্লেখ রয়েছে।
  • (২) “ইউডেমিয়ান থিওগনি” – হারিয়ে গেছে, খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীতে রচিত। এটা ছিল বাক্কীয়-কোউরেটীয় সংশ্লেষী কাল্টের ফল।
  • (৩) “র‍্যাপসোডিক থিওগনি” – হারিয়ে গেছে, হেলেনবাদী যুগে রচিথয়েছিল যার মধ্যে পূর্বের রচনাগুলোও অন্তর্ভূক্ত ছিল। একে পরবর্তী নব্য-প্লাতোবাদী লেখকদের সংক্ষিপ্তসারগুলির মাধ্যমে জানা যায়।

অর্ফীয় স্তোত্র, ৮৭টি স্বল্প দৈর্ঘ্যের হেক্সামেট্রিক কবিতা যা হেলেনবাদী যুগের শেষ দিকে বা রোমান সাম্রাজ্যের প্রারম্ভিক কালে রচিত হয়েছিল। টিকে যাওয়া লিখিত টুকরোগুলো পরকাল সম্পর্কে বেশ কিছু বিশ্বাস প্রদর্শন করে যেগুলো ডায়োনিসাসের মৃত্যু এবং পুনরুত্থান সম্পর্কিত “অর্ফীয়” পৌরাণিক কাহিনীর অনুরূপ। ওলবিয়ায় পাওয়া হাড়ের ফলকে (খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দী) সংক্ষিপ্ত এবং রহস্যময় খোদাই করা লিপি পাওয়া যায়, যেমন: “জীবন. মৃত্যু. জীবন. সত্য. ডিও(নিসাস). অর্ফিক্স.” (“Life. Death. Life. Truth. Dio(nysus). Orphics.”)। এই হাড়ের ফলকের কার্যকারিতা অজানা।

থুরি, হিপ্পোনিয়াম, থেসালি এবং ক্রিটের (খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতাব্দী ও পরবর্তীকালের) সমাধিসমূহে পাওয়া স্বর্ণপাতার ফলকে মৃতদের উদ্দেশ্যে নির্দেশ (টোটেনপাস) পাওয়া যায়। যদিও এই পাতলা ফলকগুলোর লেখাগুলো প্রায়ই অত্যন্ত খণ্ডিত, সম্মিলিতভাবে তারা পরকালে যাবার একটি সাধারণ দৃশ্য উপস্থাপন করে। যখন কোন মৃত ব্যক্তি পাতালপুরীতে আসে, তখন সে বাধার সম্মুখীন হবে বলে আশা করা হয়। তাকে অবশ্যই লেথে নদীর জল (যা পান করলে মানুষ অতীতের সব ভুলে যায়, এছাড়া লেথে এর অর্থও স্মৃতিশক্তিহীনতা) পান না করার কথা মনে রাখতে হবে, কিন্তু নেমোসিনি নদীর (যা পান করলে মৃতের সব মনে পড়ে ও সে সর্বজ্ঞ হয়, এছাড়া নেমোসিন শব্দটি স্মৃতিকে নির্দেশ করে) জল পান করতে হবে। তাকে সূত্রমূলক অভিব্যক্তি প্রদান করা হয় যা দিয়ে তিনি নিজেকে পরকালের অভিভাবকদের কাছে উপস্থাপন করতে পারেন – “আমি পৃথিবী ও তারকাময় আকাশের পুত্র। আমি তৃষ্ণার্ত হয়ে মরছি; কিন্তু তাড়াতাড়ি আমাকে স্মৃতির হ্রদ থেকে ঠান্ডা জল পান করতে দাও।” অন্যান্য স্বর্ণপত্রে পাতালপুরীর শাসকদের উদ্দেশ্যে নির্দেশ দেখা যায়, “হে একই দিনে তিনবার সুখী, এখন তুমি মারা গেছো, এবং এখন তুমি জীবন লাভ করেছ। পার্সিফোনকে বলো যে, বাক্কীয় ব্যক্তিটি তোমাকে মুক্ত করেছেন।”

ডেসপোইনা

ভূমিকা ও ব্যুৎপত্তি

গ্রীক পুরাণে ডেসপোইনা ( গ্রিক: Δέσποινα , ডেসপোইনা) দেমেতের এবং পোসেইডন এর কন্যা এবং আরিয়নের বোন ছিলেন। এলিউসিনীয় রহস্যবাদের কেন্দ্রীয় চরিত্রদের মধ্যে অন্যতম দেমেতেরের সাথে তিনিও ছিলেন আর্কাডীয় কাল্ট এর রহস্যবাদের দেবী যাকে ডেসপোইনা (“বাড়ির কর্ত্রী”) নামে পূজা করা হত। তার আসল নামটি তার রহস্যবাদে দীক্ষিতদের ছাড়া কারও কাছে প্রকাশ করা হয়নি। খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীতে পসানিয়াস লিখেছেন, দেমেতেরের দুজন কন্যা ছিল, জিউসের সাথে মিলনের ফলে কোরে এর জন্ম হয়, পরবর্তীতে পোসেইডনের সাথে মিলনের ফলে ডেসপোইনার জন্ম হয়। পসানিয়াস স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন যে কোরেই পার্সিফোন, কিন্তু তিনি ডেসপোইনার আসল নাম প্রকাশ করেননি। পৌরাণিক কাহিনিতে পোসেইডন ডিমিটার দেখে তাকে কামনা করেছিলেন। পোসেইডনকে এড়ানোর জন্য দেমেতের একটি ঘোটকীর আকার নেন, কিন্তু পোসেইডন একটি ঘোটক বা পুরুষ ঘোড়ার রূপ নিয়ে তখন দেমেতেরের সাথে সঙ্গম করেন। এই মিলন থেকে দেমেতেরের একটি কন্যা ডেসপোইনা এবং একটি ঘোড়া, আরিয়নের জন্ম হয়। এই ঘটনার ফলে দেমেতেরের মধ্যে ক্রোধের সৃষ্টি হয়, এজন্য তাকে এরিনিস (তার ফলে ঘুরে তার রাগ কারণে Demeter এছাড়াও বিশেষণ, দেওয়া হয়েছিল Erinys (ক্রোধিত) বিশেষণও দেয়া হয়।

ডেসপোইনা শব্দটি (“মিসট্রেস”, Δέσποινα ) এসেছে *des-potnia থেকে, যার অর্থ, “বাড়ির গৃহিনী”, এই শব্দটি আবার এসেছে প্রত্ন ইন্দো ইউরোপীয় বা পিআইই *dóm(ha)os থেকে, যার অর্থ “গৃহ”। প্রত্ন ইন্দো ইউরোপীয় *dem(ha)- দ্বারা “নির্মাণ” বোঝায়, এবং *potniha- দ্বারা “বাড়ির কর্ত্রী” বোঝায়, যার সাথে গ্রিক শব্দ domos এবং potnia তুলনীয়। এর পুংলিঙ্গ রূপটি হ’ল ডেস্পোটেস, “বাড়ির কর্তা” ( Δεσπότης ); তুলনীয় গ্রিক শব্দ posis। সংশ্লিষ্ট সত্যায়িত আকার মাইসিনীয় গ্রিক ভাষায় লিনিয়ার বি ধ্বনিদলভিত্তিক লিপিতে লেখা হয়েছিল “po-ti-ni-ja” (পটনিয়া) এবং সম্ভবত “po-se-da-o” এবং “po-se-da-wo-ne” (পোসেইডন), শব্দগুলো সনাতন গ্রিসে অভিন্ন বা সম্পর্কিত অর্থের সাথে গৃহীত হয়েছিল। সম্ভবত দেমেতের একটি সম্পর্কিত শব্দ, কেউ কেউ যার অর্থ দাঁড় করিয়েছেন “ঘরের মা” ( পিআইই *dems-mater থেকে)।

ডেসপোইনার কাল্ট

সংক্ষিপ্ত বর্ণনা : প্রাচীন গ্রীক ধর্মের ইতিহাসে ডেসপোইনার কাল্টটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর্কিডীয় কাল্টগুল একটি আদিমতর ধর্ম থেকে এসেছে। স্পষ্টতই, এই অঞ্চলে প্রবেশ করা প্রথম গ্রীকভাষী লোকদের ধর্মীয় বিশ্বাস এখানকার আদিবাসীদের জনগণের বিশ্বাসের সাথে মিশ্রিত হয়েছিল। ব্রোঞ্জ যুগের সময়কার মিনোয়ান এবং মাইসিনীয় উভয় সভ্যতার কাল্টগুলোর মধ্যেই প্রকৃতি, জন্ম এবং মৃত্যুর দেবীর প্রাধান্য ছিল। ওয়ানাক্স ছিলেন তার পুরুষ সঙ্গী (পেরেড্রস), এবং সাধারণত এই উপাধিটি সমুদ্রের রাজা ও দেবতা পোসেইডনকে প্রদান করা হয়। আর্কাডিয়ার বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ডের পুরাণে, উত্তর ইউরোপীয় লোককাহিনীর মতই পাতালের নদীর আত্মা একটি ঘোড়া হিসেবে (পোসেইডন হিপ্পিয়োস) প্রতীয়মান হয়। তিনি ঘোটকী দেমেতেরের সাথে মিলিত হন, এবং এই মিলন থেকে তিনি ঘোড়া আরিয়ন এবং একটি কন্যার জন্ম দেন, যার উৎপত্তিগত আকারও ঘোড়ারই ছিল। এখান থেকে মনে হয় যে প্রকৃতির শক্তি হিসাবেই গ্রীক দেবদেবীদের উদ্ভব হয়েছিল এবং পরে তাদের উপর অন্যান্য বৈশিষ্ট্য আরোপ করা হয়েছিল। প্রকৃতির এই শক্তিগুলোর থেকে মানবায়িত রূপের নিম্ফ ও দেবদেবীর বিকাশ ঘটেছে, যাদের মাথা বা লেজ পশুর মত। তাদের মধ্যে কেউ কেউ যেমন প্যান এবং সিলেনাস সনাতন যুগ (ক্লাসিকাল গ্রিস) পর্যন্ত টিকে ছিল। দুজন প্রধান আর্কাডীয় দেবী ছিলেন দেমেতের ও ডেসপোইনা (পরবর্তীতে পার্সিফোন), এদের সাথে ঝড়না ও পশুদের এবং দেবী আর্তেমিসের (পটনিয়া থেরন: “পশুদের কর্ত্রী”, আর্তেমিস ছিলেন প্রথম নিম্ফ) ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। লাইকোসুরার একটি মার্বেল রিলিফে দেসপোইনার ঘোমটা রয়েছে, যার উপরে আচারগত নৃত্যরত মানুষের ছবি দেয়া হয়েছে যাদের মাথা বিভিন্ন পশুর। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বাঁশি ধরে আছে। এগুলি পশুর মুখোশযুক্ত নারী বা সংকর প্রাণীর মিছিল হতে পারে। অনুরূপ মাইসিনীয় ফ্রেস্কো এবং সোনার আংটিতেও ডেইমনদের একই রকম পশুর মুখোশ পরিহিত মানুষের মিছিল দেখা যায়। বেশিরভাগ মন্দিরে ঝর্ণার নিকটে নির্মিত হয়েছিল এবং এদের মধ্যে কয়েকটিতে সর্বদা প্রজ্জ্বলিত অঙ্গির উপস্থিতির সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। লাইকোসুরায় ছাগলের দেবতা প্যানের মন্দিরের সামনের একটি স্থানে আগুন জ্বালানো হত। এলিউসিসের মেগারন এবং লাইকোসুরার ডেসপোইনার মেগারনের মধ্যে বেশ মিল পাওয়া যায়।

লাইকোসুরার স্যাংকচুয়ারি : মেগালোপোলিস শহরের পশ্চিমে লাইকোসুরার একটি মন্দিরে (স্যাংকচুয়ারি) ডেসপোইনার পূজা করা হত। যদিও এই কাল্টটি সর্বহেলেনীয় না হয়ে স্থানীয় কাল্টই ছিল, তবুও প্রাচীন রহস্যবাদী ধর্মের অধ্যয়নের জন্য এই প্রত্নস্থলটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। পরবর্তীতে, ডেসপোইনার ধারণা পার্সিফোনের ধারণার সাথে মিশ্রিত হয়ে যায়। সাধারণ জনগণের মধ্যে তিনি তার উপাধি ডেসপোইনে নামে পরিচিত ছিলেন, ঠিক যেমন সাধারণ মানুষ জিউস ও দেমেতেরের মেয়েকে কোরে (মেইডেন বা কুমারী) পদবী দান করে। যে নারীরা উপাসনাস্থলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাদের একটি নির্দিষ্ট পোশাকের নিয়ম ছিল, এবং তাদের কালো ও বেগুনী (পার্পল) রং এর পোশাক পরা নিষিদ্ধ ছিল, সম্ভবত একারণে যে মন্দীরের পুরোহিতা সেই রং এর পোশাক পরতেন।

উৎপত্তি : রহস্যবাদটিতে দেমেতের তার মেয়ে ডেসপোইনার নিচে দ্বিতীয় দেবী ছিল, নামবিহীন “দেশপোইনা”। দেখে মনে হয় যে আর্কিডিয়ায় পুরাণগুলি ব্রোঞ্জ যুগে উত্তর থেকে আগত প্রথম গ্রীক-ভাষী মানুষের সাথে সংযুক্ত ছিল। নদী ও ঝর্ণার সাথে দুটি দেবীর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। তারা নদীর ও ঝরণার দেবতা পোসেইডনের সাথে এবং বিশেষত প্রথম নিম্ফ আর্টেমিসের সাথে সম্পর্কিত ছিলেন। তার বিশেষণ, “কর্ত্রী” (দ্য মিস্ট্রেস) এর সাথে ক্রিটের নসস এবং সক্ষিণ গ্রিসের পাইলসে প্রাপ্ত মাইসিনীয় গ্রিক লিপির সাদৃশ্য রয়েছে। পরে, ডেসপোইনা এলিউসিনীয় রহস্যবাদের দেবী কোরে (পার্সিফোন) এর সাথে একটি জীবন-মরন-পুনর্জন্ম চক্রে মিশ্রিত হয়ে যান। কার্ল কেরেনি বলেন, কাল্টটি ছিল একজন মিনোয়ান দেবীর ধারাবাহিকতা, এবং তার নামটি মিনোয়ান-মাইসিনীয় দেবী da-pu2-ri-to-jo,po-ti-ni-ja এর কথা স্মরণ অরিয়ে দেয়, অর্থাৎ নসসের “ল্যাবিরিন্থ এর কর্ত্রী” (মিস্ট্রেস অফ দ্য ল্যাবিরিন্থ), যার নাম নেয়া যায়না (এখানে ল্যাবিরিন্থ বলতে ক্রিটের ল্যাবিরিন্থ বা গোলকধাঁধার কথা বলা হচ্ছে)।

বিশেষণ : “দেসপোইনা” বেশ কয়েকজন দেবীর বিশেষণ ছিল, বিশেষত এফ্রোডাইটি, পার্সিফোন, ডেমিটার এবং হেকাটির । এলিউসিনীয় রহস্যবাদের তিনজন দেবীর মধ্যে দুজন ছিলেন পার্সিফোন এবং দেমেতের। হয়তো তারা বিভিন্ন লিনিয়ার বি শিলালিপিতে উল্লিখিত “দুই রাণী”। অলিম্পিয়ায় তাদেরকে ডেসপোইনাই ( Δέσποιναι) বলা হত। ডেসপোইনা নামক উপাধিটি মাইসিনীয় উপাধি “পটনিয়া” po-ti-ni-ja) এর সাথে সম্পর্কিত যা দিয়ে সাধারণত দেবীদেরকে নির্দেশ করা হয়। এই ঐশ্বরিক উপাধিটি গ্রিক-পূর্ব উদ্ভূত অনুরূপ উপাধির অনুবাদ হয়ে থাকতে পারে, যেমনটা খ্রিস্টধর্মের “আওয়ার লেডি” উপাধিটি বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়। মনে হয় উৎপত্তিগত উপাধিটি ছিল ঈজীয় মাতৃদেবীর।

প্রত্নতত্ত্ব : পসানিয়াস যখন খ্রিস্টীয় ২য় শতকে লাইকোসুরার স্যাংকচুয়ারিতে ভ্রমণ করেছিলেন তখন সেখানকার ভাষ্কর্যগুলো ৩০০ বছরেরও বেশি সময়ের পুরনো ছিল। খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীতে, সম্রাট হাদ্রিয়ানের একটি মূর্তি মন্দিরে উৎসর্গ করা হয়েছিল। তৃতীয় শতাব্দীর গোড়ার দিকে সেভেরান পর্যায়ের মেগালোপোলিসের মুদ্রাগুলিতে কাল্ট সম্পর্কিত একটি মূর্তি চিত্রিত দেখা যায়। প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটিতে একটি ছোট সংগ্রহশালা রয়েছে, সেখানে ছোট ছোট সন্ধানের পাশাপাশি কাল্ট দলটির কিছু অংশও রয়েছে, ডেসপোইনা ও দেমেতেরের কাল্ট মূর্তিগুলোর বাকিগুলো ন্যাশনাল আর্কিওলজিকাল মিউজিয়াম অফ এথেন্সের প্রদর্শনীতে রয়েছে। এই সংগ্রহগুলির মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য নিদর্শনটি হ’ল ডেসপোইনার ঘোমটা, যা একটি জটিল আলংকারিক নিদর্শন, সম্ভবত এটি সেই সময়কাল বয়নকৃত শিল্পসমূহের প্রতিনিধিত্ব করে। এছাড়াও মন্দিরটিতে (স্যাংকচুয়ারি) প্রাপ্ত আর্টেমিস, দেমেতের, অ্যানাইটস এর মস্তক ও সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ট্রাইটোনেস এর মূর্তিও প্রদর্শন করা হয়।

ট্রোফোনিয়াস

ভূমিকা, নামের ব্যুৎপত্তি ও পরিচয় : ট্রোফোনিয়াস (Trophonius) ( /trəˈfoʊniəs/ ; প্রাচীন গ্রিক : Τροφώνιος Trophōnios) একজন গ্রিক দেবতা বা বীর, তবে কখনই নিশ্চিত হওয়া যায়নি তিনি এদের কোনটি ছিলেন, তাকে নিয়ে একটি সমৃদ্ধ পৌরাণিক ঐতিহ্য এবং গ্রিসের বিওটিয়ার লিভাডিয়ায় একটি ভবিষ্যদ্বাণীমূলক উপাসকসম্প্রদায় রয়েছে। নামটি ট্র্যাফো থেকে প্রাপ্ত, যার অর্থ “পুষ্ট করা”। স্ট্রাবো এবং বেশ কয়েকটি শিলালিপি তাকে জিউস ট্রেফোনিওস হিসাবে উল্লেখ করে। গ্রিক বিশ্বে বেশ কিছু অন্যান্য থোনিক জিউসকে জানা যায় যাদের মধ্যে জিউস Μειλίχιος মেলিকিওস (“মধুময়” বা “কল্যাণকামী” জিউস), ও জিউস Χθόνιος থোনিওস (“মর্তের জিউস”), যেগুলো হেডিসের অন্যান্য নাম ছিল। একই ধরনের নির্মাণ রোমান বিশ্বেও পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, লাজিও এর লেভিনিয়াম এর একটি মন্দীর ঈনিয়াসের জন্য উৎসর্গীকৃত ছিল, যার শিরোনাম ছিল “ইউপিটার ইনডিজেস” (মর্তের জুপিটার)। ট্রোফোনিয়াস ছিলেন মিনীয়দের ও অর্কোমেনাসের রাজা আরগিনাসের পুত্র, এবং অ্যাগামিডিসের ভাই। কিন্তু অ্যাপোলোকে তার স্বর্গীয় পিতা বলা হয়।

পুরাণ : অ্যাপোলোকে উদ্দেশ্য করা হোমারীয় স্তবগান অনুসারে, তিনি অ্যাগামিডিসের সাথে ডেলফির ওরাকলে অ্যাপোলোর মন্দিরটি নির্মাণ করেন। নির্মাণ শেষ হয়ে গেলে ওরাকল এই ভাইদেরকে ছয় দিনের জন্য যা কিছু কামনা করার করতে বলেন, ৭ম দিনে তাদের সর্বোত্তম ইচ্ছাটি পুরণ করা হবে। তারা তাই করেন এবং ৭ম দিনে তাদের মৃতদেহ পাওয়া যায়। মেনান্ডারের প্রবাদ, “ঈশ্বর যাদেরকে ভালোবাসেন তাদেরকে তরুণ অবস্থাতেই তুলে নেন”-এই ঘটনাটি থেকেই আসে। পসানিয়াসের একটি বিকল্প গল্প অনুসারে, তারা বিওটিয়ার রাজা হিরিয়াসের জন্যে একটি গুপ্ত কোষাগার নির্মাণ করেছিলেন যার গুপ্তপথ কেবল তারাই জানতেন। এই গুপ্তপথ দিয়ে ঢুকে তারা হিরিয়াসের সম্পর চুরি করতেন। রাজা এটা জানতেন কিন্তু চোরকে চিনতেন ন। এরফলে তিনি একটি ফাঁদ পাতেন। অ্যাগামিডিস সেই ফাঁদে পা দেন, ট্রোফোনিয়াস তাই তার মাথা কেটে নেন যাতে হিরিয়াস চোরকে চিনতে না পারেন। তারপর তিনি চিরতরে লিভেডিয়া (বা লেবাডিয়া) এর গুহাই পালিয়ে যান ও উধাও হয়ে যান। লিভাডীয়রা ট্রোফোনিয়াসের গুহাটি সম্পর্কে জানতেননা, কিন্তু তারা প্লেগের স্বীকার হলে ডেলফির ওরাকলের ভবিষ্যদ্বক্তার কাছে শলা নিতে এলে সেখানকার পিথিয়া তাদেরকে বলেন, একজন বেনামী বীর তার প্রতি অবহেলার জন্য তাদের প্রতি রাগান্বিত , আর তাই তাদেরকে তার সমাধি খুঁজে বের করে তার পূজা করতে হবে। কয়েকবার সমাধিটি খোঁজার প্রচেষ্টার পরও একে খুঁজে পাওয়া গেল না, প্লেগ রোগের সংকটের সুরাহা হল না। একদা এক রাখাল বালক মৌমাছিদের সারিকে অনুসরণ করতে করতে দেখে তারা মধুর দিকে না গিয়ে মাটির একটি গর্তের দিকে যাচ্ছে। সেখানে গিয়ে বালকটি ট্রোফোনিয়াসের সমাধিটি খুঁজে পান, এরপর লিভেডিয়ার প্লেগ রোগের অবসান ঘটে এবং স্থানটি একটি বিখ্যাত ওরাকলে পরিণত হয়। উপরের পুরাণগুলো ছাড়া অন্যান্য জায়গাতেও ট্রোফোনিয়াসের উল্লেখ পাওয় যায়। ইউরিপিডিস লিখিত আয়ন -এ নিঃসন্তান জুথাস ডেলফিতে যাবার পথে ট্রোফোনিয়াসের কাছ থেকে পরামর্শ নেন। গ্রিসের শেষ প্রাচীনকাল বা লেট এন্টিকুইটির কিংবদন্তি বুদ্ধিমান, জ্ঞানী এবং ভবিষ্যৎদ্রষ্টা অ্যাপোলোনিয়াস অফ টায়ানা একবার সেই মন্দিরে যান এবং আবিষ্কার করেন ট্রোফোনিয়াস ছিলেন পিথাগোরীয় নীতিসমূহের প্রবক্তা। প্লুটার্কের ডি জেনিয়ো সক্রেটিস গ্রন্থটি মহাবিশ্ব এবং ট্রফনিয়াসের ওরাকলে প্রাপ্ত মৃত্যু পরবর্তী জীবন এর সম্পর্কে নিয়ে একটি বিস্তৃত স্বপ্নদর্শন ব্যক্ত করেছে যা ট্রোফোনিয়াসের ওরাকল থেকে প্রাপ্ত।

কাল্ট : পসানিয়াস তার বিওটিয়া সম্পর্কিত নথিতে (৯.৩৯), ট্রোফোনিয়াসের কাল্ট সম্পর্কে বিস্তারিত লিখেছেন। যেই ওরাকলের পরামর্শ নিতে চাইত তাকেই কিছুদিনের জন্য একটি নির্দিষ্ট বাড়িতে বাস করতে হত, সেখানকার হারক্রিনা বা এরকিনা নদীতে স্নান করতে হত এবং উৎসর্গীকৃত মাংস খেতে হত। এরপর দিনের বেলায় তাকে ধারাবাহিকভাবে ক্রোনাস, অ্যাপোলো, জিউস, হেরা, দেমেতের, ইউরোপা সহ বিভিন্ন দেবদেবীর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করতে হত। রাতের বেলায় তাকে আগামিডিস এর সাথে সম্পর্কিত পবিত্র গুহায় একটি ভেড়াকে ছুড়ে দিতে হত, লেথে ও নেমোসাইনে নামক দুটো নদীর জল পান করতে হত, এবং তারপর গুহাটিতে নেমে আসতে হত। সেখানে বেশিরভাগ পরামর্শগ্রহীতা তাদের হতবুদ্ধি ও ভীত হয়ে যায় এবং উপরে উঠে এসে সম্পূর্ণ অভিজ্ঞতাই ভুলে যায়। এরপরে, পরামর্শগ্রহীতাগণ নেমোসাইনের চেয়ারে বসেন, যেখানে মন্দিরের পুরোহিতগণ তাদের প্রলাপ শোনেন এবং তা থেকে তাদের জন্য ভবিষ্যদ্বাণী রচনা করেন।

ধ্রুপদী ঐতিহ্যে ট্রোফোনিয়াস : “প্রচণ্ড ভয়ে ভোগা” প্রকাশে “ট্রফোনিওসের গুহায় নামা” প্রবাদটি প্রচলিত হয়ে যায়। এরিস্টোফেনিসের “ক্লাউডস” এ এটির ব্যবহার হয়। হেরাক্লিডেস পন্টিকাস সহ একাধিক প্রাচীন দার্শনিক ট্রোফোনিয়াসের উপাসক সম্প্রদায় বিষয়ে উল্লেখ করেছেন যা এখন হারিয়ে গেছে। ধ্রুপদী পণ্ডিতদের কাছে ট্রোফোনিয়াস আগ্রহের বিষয় ছিল কারণ লেথে ও নেমোসাইনের সাথে প্লেটোর রিপাবলিকের শেষের দিকে ‘এর’ এর পুরাণ, সোনার পাতা সমেত অর্ফীয় অন্তেষ্টিক্রিয়ার সাথে সম্পর্কিত খোদাইসমূহ এবং হেসিয়ডের থিওগনিতে উল্লিখিত স্মৃতি ও ভুলে যাওয়া সম্পর্কিত বিভিন্ন অনুচ্ছেদের সাথে লেথে ও নেমোসাইনের ঘনিষ্ঠ সমান্তরালতা ছিল। দ্য হেলফায়ার ক্লাব তাদের পানভোজনোৎসব পরিচালনার জন্য অশ্লীল দেয়াল চিত্রের মাধ্যমে একবার “ট্রোফোনিয়াসের গুহা” এর পুনর্নির্মাণ করেছিল। দার্শনিক ফ্রিডরিখ নিৎশে তার “ডেব্রেক” এর ভূমিকায় তার নৈতিক পূর্বসংস্কারের পাতালে তার শ্রমকে পরোক্ষভাবে প্রকাশের জন্য নিজেকে “ট্রোফোনিয়াস” হিসেবে উল্লেখ করেন।

অন্যান্য রহস্যবাদ

  • অ্যাটিসের কাল্ট – একটি গ্রীক কাল্ট যা রোমান সাম্রাজ্যের প্রারম্ভিক সময় থেকে অনুসরণ করা শুরু হয়। এটি অ্যাটিসের পুরাণকে অনুসরণ করে, অ্যাটিস একজন ঈশ্বরতুল্য চরিত্র যিনি জিউসের পাঠানোর শূকর দ্বারা নিহত হন।
  • সিবেলির কাল্ট – গ্রিস, আনাতোলিয়া ও রোমে সিবেলি বা ম্যাগনা ম্যাটারকে অনুসৃত অনেকগুলো কাল্ট ছিল। এই উপাসনা সম্প্রদায়টি সিবেলিকে অনুসরণ করত, যিনি ছিলেন একজন আনাতোলীয় “মাতৃদেবী”। যাইহোক, এটি রোমে উপস্থিত হওয়ার পরে, রোমানরা সিবেলিকে একজন ট্রোজান দেবী হিসাবে পুনরায় আবিষ্কার করে। সিবেলির কাল্টে দীক্ষাপ্রাপ্তির জন্য নির্বীর্জকরণের বা খোজাকরণের (অণ্ডকোষের কর্তন) প্রয়োজন হত, রোমে এটি সমালোচিত হত বলে সেখানে এর সদস্য সংখ্যা অল্প ছিল। খোজাকরণের এই রীতিটি পরবর্তিতে পশুবলি দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়, কিন্তু তারপরও এর সদস্য সংখ্যা কমই ছিল।
  • আইসিসের রহস্যবাদ – এটি ছিল তুলনামূলকভাবে প্রচলিত ও সুপরিচিত কাল্ট। যদিও বেশিরভাগ রহস্যবাদী কাল্টই যেখানে হেলেনবাদী সংস্কৃতি ও ধর্মের সাথে সম্পর্কিত ছিল, সেখানে আইসিসের কাল্টটি মিশরের জ্ঞান ও জাদুর দেবী আইসিসের উপাসনা করত। এটি হেলেনবাদী (বা হেলেনিস্টিক) যুগে (খ্রিস্টপূর্ব ৩২৩ অব্দ থেকে ৩০ খ্রিস্টাব্দ) এর উদ্ভব ঘটে।
  • মিথ্রবাদী রহস্যবাদ – সবচাইতে বিখ্যাত গ্রেকো-রোমান রহস্যবাদী কাল্টগুলোর মধ্যে অন্যতম। তারা গ্রিক দেবতা-বীর মিথ্রাসের পুরাণ অনুসরণ করত। এর আরও একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ছিল তাদের উপাসনা-স্থল হিসেবে ভূগর্ভস্থ কাঠামো যার সবগুলোতেই প্রবেশদ্বারে একটি পবিত্র ষাঁড় হত্যাকারী মিথ্রাসের একটি ম্যুরাল বা ভাস্কর্য ছিল।
  • স্যাবাজিয়সের কাল্ট – এই কাল্টটি সাবাজিয়স নামে এক যাযাবর অশ্বারোহী দেবতার পূজা করত। তিনি একজন থ্রেসীয়/ফ্রিজীয় দেবতা ছিলেন, কিন্তু গ্রীক ও রোমানরা তাকে জিউস/জুপিটার ও ডায়োনিসাসের মিশ্রণ হিসেবে ব্যাখ্যা করত।
  • সেরাপিসের কাল্ট – গ্রেকো-মিশরীয় দেবতা সেরাপিসকে অনুসরণ করা একটি কাল্ট। তিনি এবং তার কাল্ট রোমে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে, যার ফলে তিনি মিশরের বাইরে দেবী আইসিসের সঙ্গী হিসেবে ওসিরিসের স্থলাভিষিক্ত হন। তিনি শোভাযাত্রা ও মন্দিরে পূজিত হন।
  • জুপিটার ডোলিকেনাসের রহস্যবাদ

প্রারম্ভিক খ্রিস্টধর্মের উপর প্রভাব

আধুনিক পণ্ডিতেরা রহস্যবাদী ধর্মের উপর খ্রিস্টধর্মের নির্ভরশীলতার সরল ধারণা প্রত্যাখ্যান করেন। খ্রিস্টধর্ম নিজে যদি রহস্যবাদী কাল্ট নাও হয়ে থাকে, তবুও খ্রিস্টধর্মের উৎপত্তিতে রহস্যবাদী কাল্টগুলোর ব্যাপক প্রভাব ছিল – এই ধারণাটি ১৯শ শতকের শেষ ও ২০শ শতকের শুরুর দিকের জার্মান পণ্ডিতদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল। এই প্রবণতা আংশিকভাবে ছিল খ্রিস্টধর্মের ইতিহাসের সমালোচনামূলক ঐতিহাসিক বিশ্লেষণের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি (যেমন ডেভিড স্ট্রসের ডাস লেবেন জেসু (১৮৩৫-৬)) এবং খ্রিস্টধর্মের উৎপত্তিকে তার পৌত্তলিক পরিবেশ থেকে ব্যাখ্যা করতে চাওয়া পণ্ডিতদের মধ্যকার ধর্মনিরপেক্ষ প্রবণতার ফলাফল। উদাহরণস্বরূপ, পণ্ডিতেরা টারসাসের একটি মিথ্রবাদী রহস্যবাদী কাল্ট থেকে পলের ধর্মতত্ত্ব প্রতিপাদনের প্রচেষ্টা শুরু করেন, যদিও সেখানে কোন রহস্যবাদের অস্তিত্ব ছিল না এবং ১ম শতাব্দীর শেষ হওয়ার আগে কোন মিথ্রবাদী রহস্যবাদের অস্তিত্ব ছিল না। পণ্ডিতদের মনোভাব পরিবর্তিত হতে শুরু করে যখন মিশরবিদ্যা একটি শিক্ষায়তনিক শাখা হিসেবে প্রতীয়মান হতে শুরু করে এবং ১৯৫২ সালে আর্থার নক কর্তৃক একটি বৈপ্লবিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়, যেখানে নিউ টেস্টামেন্ট বা নবপুস্তকে রহস্যবাদী পরিভাষাসমূহের প্রায় অনুপস্থিতি সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়। যদিও কেউ কেউ খ্রিস্টধর্মে আচার-অনুষ্ঠান যেমন অভিসিঞ্চন এবং ইউক্যারিস্টের উৎপত্তিকে রহস্যবাদী ধর্মের সাথে সম্পর্কিত করার চেষ্টা করেছেন, এটা প্রমানিত হয়েছে যে অভিসিঞ্চনের উৎপত্তি বরং ইহুদি ধর্মের শুদ্ধিকরণ আচারেই নিহিত এবং প্রাচীন বিশ্বে কাল্ট খাদ্য এত ব্যাপক ছিল যে তাদের উৎপত্তি যে কোন একটি উৎস থেকেই দেখানো যায়। রহস্যবাদী ধর্মগুলো থেকে খ্রিস্টধর্মের বিষয়বস্তুর উদ্ভবের অনুসন্ধানও ব্যর্থ হয়েছে; তাদের অনেকগুলোরই (যেমন এলিউসিনীয় এবং সামোথ্রেসীয় রহস্যবাদ) কোন বিষয়বস্তু ছিল না, বরং এগুলো দীক্ষানুষ্ঠানের সময় বিভিন্ন বস্তু দেখানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।

আধুনিক গবেষণায় দেখা যায় যে খ্রীষ্টধর্ম কোন রহস্যবাদী ধর্ম না হলেও এটিকে প্রারম্ভিক খ্রিস্টধর্মের বিরোধীরা রহস্যবাদী ধর্মগুলোর সাথে তুলনা করেছিলেন, যেমন লুসিয়ান এবং সেলসাস। জাস্টিন মার্টার সহ অধিকাংশ প্রথম দিকের খ্রিস্টানরা এই রহস্যবাদগুলোর বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করেন। জাস্টিন খ্রিস্টধর্মকে পৌত্তলিক ধর্মের সাথে তুলনা করেছেন, কিন্তু পণ্ডিতেরা তার এই তুলনার অগভীরতার জন্য তার সমালোচনা করেছেন। অন্যদিকে, যখন কনস্ট্যান্টাইন রোমান সাম্রাজ্যের সম্রাট হন এবং খ্রিস্টধর্মকে বৈধ করেন, খ্রিস্টানরা পৌত্তলিক নির্যাতনের ভয় হারিয়ে ফেলেন এবং প্রথমবারের মত রহস্যবাদী ধর্মগুলো থেকে কিছু ধারণা খ্রিস্টান চিন্তার মূলধারায় পরিণত হয়।

তথ্যঋণ

উইকিপিডিয়া নিবন্ধ – Greco-Roman mysteries, Eleusinian Mysteries, Dionysian Mysteries, Orphism (religion), Despoina, Trophonius

5 Trackbacks / Pingbacks

  1. প্রাচীন পাশ্চাত্য দর্শনের ভূমিকা ও আউটলাইন – বিবর্তনপথ
  2. পিথাগোরাস (খ্রি.পূ. ৫৬২ – ৪৯৩ অব্দ), পিথাগোরীয়বাদ ও নব্যপিথাগোরীয়বাদ – বিবর্তনপথ
  3. নীটশের দর্শন – বিবর্তনপথ
  4. মাইলেসীয় দার্শনিক সম্প্রদায় (খ্রি.পূ. ৬ষ্ঠ শতক) – বিবর্তনপথ
  5. পাশ্চাত্যের ইতিহাস ও চিন্তা-ঐতিহ্যের আউটলাইন – বিবর্তনপথ

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.