এপিকিউরাস (৩৪২-২৮০ খ্রি.পূ.) ও এপিকিউরীয় দর্শন

ভূমিকা

এপিকিউরীয় দর্শনের উদ্ভব ও বিকাশ ঘটে সিরেনাইক মতের ধারাবাহিকতায়। এই সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা এবং এই দর্শনের প্রধান প্রবক্তা ছিলেন এপিকিউরাস (খ্রি.পূ. ৩৪২-২৮০)। তার জীবনী সম্বন্ধে কোনাে প্রাথমিক দলিল নেই। খ্রিস্টীয় তিন শতকে ডায়ােজেনিস ল্যায়েরটিয়াস তার সম্বন্ধে যা লিখে যান, তাই তার জীবনকথার মূল অবলম্বন। এপিকিউরাস নিজেকে স্বশিক্ষিত বলে দাবি করেন। তবে অন্য সূত্র থেকে জানা যায় যে, তিনি নসিফ্যানিস নামক এক শিক্ষকের কাছে থেকে ডেমােক্রিটাসের দর্শনে এবং প্লেটোর শিষ্য প্যাম্পিলাসের কাছ থেকে দর্শনের বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষাগ্রহণ করেন। এছাড়া তিনি কিছুকালের জন্য জেনােক্রেটিসের ছাত্র ছিলেন বলেও জানা যায়।

যাই হােক, এপিকিউরীয় দর্শনে পূর্ববর্তী কয়েকটি দার্শনিক আন্দোলনের প্রভাব লক্ষ করা যায়। এসবের মধ্যে গ্রিক পরমাণুবাদীরা অন্যতম। বস্তুত, পরমাণুবাদী দর্শনকে এপিকিউরীয় রচনাবলির মূল ভিত্তি বললেও অত্যুক্তি করা হবে না। এপিকিউরীয় চিন্তায় সােফিস্ট মতের প্রভাবও কম নয়। সােফিস্টগণ সংবেদনকে জ্ঞানের মানদণ্ড বলে গ্রহণ এবং ধর্মীয় অনপেক্ষবাদের বিরােধিতা করেছিলেন। এপিকিউরীয়গণ এ ব্যাপারে সােফিস্টদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেন। তবে সােফিস্টদের চেয়ে তারা বিজ্ঞানের প্রতি বেশি আকৃষ্ট ছিলেন। তাছাড়া জ্ঞানের আপেক্ষিকতার ওপর সােফিস্টগণ যতটুকু জোর দিয়েছিলেন, এপিকিউরীয়গণ ততটুকু দেন নি। কিন্তু এসব পার্থক্য সত্ত্বেও সােফিস্টদের ন্যায় এপিকিউরীয়গণও বুদ্ধিবাদের প্রতি আস্থাশীল ছিলেন না, এবং সত্য সম্পর্কে তাদের মানদণ্ডও ছিল সােফিস্টদের মানদণ্ডের ন্যায়ই পুরােপুরি প্রয়ােগিক।

এপিকিউরীয় দর্শনে সিরেনাইকদেরও যথেষ্ট প্রভাব বিদ্যমান। সিরেনাইকগণ খােলাখুলিভাবে বলেছিলেন যে, সুখই জীবনের লক্ষ্য। তারা পুণ্যের জন্যই পুণ্যের সন্ধান, কিংবা জীবনকে দুঃখের আগার বলে মনে করার পক্ষপাতী ছিলেন না। তারা দৈহিক সুখসহ সর্বপ্রকার আনন্দ-বিনােদনের মাধ্যমে জীবনকে পরিপূর্ণভাবে উপভােগ করার পরামর্শ দেন। তাদের দৃষ্টিতে ভালাে খাদ্য সুন্দর বেশভুষা প্রচুর ধনসম্পদ – এ সবই মানুষের কাম্যবস্তু।

এপিকিউরীয় দর্শন প্রচলিত ধর্মমতবিরােধী এবং সর্বপ্রকার কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সােচ্চার। হেলেনিস্টিক আমলে গ্রিক ধর্মের বিশুদ্ধতার অবনতি ঘটে। ভূমধ্যসাগরীয় এলাকার মানুষ বিভিন্ন দেবদেবীর অস্তিত্বে বিশ্বাসস্থাপন করে এবং সহজেই অলৌকিক ঘটনাবলিতে বিশ্বাসী হয়ে ওঠে। এপিকিউরীয় দর্শন এসব নির্বিচার ধর্মবিশ্বাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ঘােষণা করে; কেননা তাদের মতে এ ধরনের মনােভাব মানুষের পক্ষে মােটেই শােভনীয় নয়। এ মনােভাব প্রবল হলে বুদ্ধিসম্মত দর্শন, প্রকৃতিবাদী কলা ও বৌদ্ধিক সংস্কৃতির বিকাশ বন্ধ হয়ে যাবে। তাই এর বিরুদ্ধে তারা রুখে দাঁড়ালেন।

কথিত আছে যে, এথেন্সে বেশ কিছুদিন বসবাসের পর এপিকিউরাস খ্রিস্টপূর্ব ৩২৩ অব্দের কিছু পরে এথেন্স ত্যাগ করেন। কলােফন, মিটিলিন, ল্যাম্পসেকাসসহ এশিয়া মাইনরের বিভিন্ন শহরে শিক্ষাদানের পর খ্রিস্টপূর্ব ৩০৬ অব্দে তিনি এথেন্সে ফিরে আসেন। সেখানে তিনি একটি বাগান ক্রয় করেন। পরবর্তীকালে বাগানটি এপিকিউরাসের বাগান নামে খ্যাত হয়। কথিত আছে যে, প্লেটোর একাডেমিএরিস্টটলের লাইসিয়ামের মতাে এপিকিউরাসের এই বাগানে বহু দর্শনানুরাগীর সমাগম হতাে। তাদের সকলের কাছেই এপিকিউরাস ছিলেন একজন পরম শ্রদ্ধার পাত্র। এই বাগানবাড়ির ছায়াসুনিবিড় পরিবেশেই তিনি জীবনের শেষদিন পর্যন্ত সক্রিয় ছিলেন। তার নৈতিক ও দার্শনিক গ্রন্থাবলির অধিকাংশই হারিয়ে গেছে। এগুলাের কয়েকটির খণ্ডিত অংশ আজও পাওয়া যায়।

এপিকিউরাসের মধুর ব্যক্তিত্ব, বন্ধুবৎসল মানসিকতা এবং উদারনৈতিক মতের ফলে বহু লােক এপিকিউরীয়বাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ওঠে এবং এপিকিউরাসের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে। এপিকিউরাসের মৃত্যুর পরও এ মত উত্তরােত্তর বিস্তারলাভ করে এবং বহুসংখ্যক লােক এ মতে দীক্ষিত হয়। শুধু তা-ই নয়, এপিকিউরাসের মৃত্যুর দুইশ বছরেরও বেশি পরে লিউক্রেটিয়াস এ মতের সমর্থনে বস্তুর স্বরূপ প্রসঙ্গে (On the Nature of Things) শীর্ষক এক চমৎকার কাব্যগ্রন্থ রচনা করেন। বিষয়বস্তুর জটিলতা সত্ত্বেও এই কাব্যগ্রন্থের কয়েকটি কবিতা শুধু ল্যাটিন সাহিত্যেই নয়, সর্বকালের সব সাহিত্যের অতি চমৎকার নিদর্শন বলে প্রশংসা অর্জন করেছে।

এপিকিউরীয়দের মতে, সুখই মানব জীবনের পরম শুভ, সুখই জীবনের পরম লক্ষ্য এবং সুখই স্বকীয় মূল্যের অধিকারী। অন্যান্য জিনিসের মুল্য সুখের কষ্টিপাথরেই যাচাই করতে হয়। সুখ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে যা যতটুকু সহায়ক, তার নৈতিক মূল্যও তত বেশি; আর যা যতবেশি দুঃখের আকর, তার নৈতিক মূল্যও তত কম। দর্শনসহ জ্ঞানবিজ্ঞানের যেকোনাে শাখার উদ্দেশ্যই হওয়া উচিত সুখী জীবনযাপনে মানুষকে সাহায্য করা। সংগীত জ্যামিতি পাটিগণিত ও জ্যোতির্বিদ্যার মতাে যেসব বিজ্ঞান এই লক্ষ অর্জনে সহায়ক নয়, তাদের কোনাে মূল্য নেই, থাকতেও পারে না। জ্ঞানের মানদণ্ড আলিঙ্গন জন্য যুক্তিবিদ্যা ও জ্ঞানবিদ্যা সম্পর্কে কিছু স্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার। পদার্থবিদ অধিবিদ্যাবিষয়ক জ্ঞানও আবশ্যক; কেননা এ জ্ঞানের সাহায্যে আমরা বস্তুর প্রাকলিন কারণ আবিষ্কার করতে পারি। এই জ্ঞানের উপকারিতা প্রচুর। ঈশ্বর, রকমারি প্রাকতিক পদার্থ ও মৃত্যুভয় থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় এই জ্ঞান। মানুষের কাম্যবস্তু কী? আর কী-ইবা তার বর্জন করা উচিত? – এসব প্রশ্নের সদুত্তর পেতে হলে মানব প্রকৃতি সম্বন্ধে যথেষ্ট জ্ঞান ও অন্তদৃষ্টি থাকা দরকার। তবে এপিকিউরীয় দর্শন অনুসারে, আমরা নিশ্চিতভাবে জানি যে, বিশ্বের যাবতীয় পদার্থের উৎস ও কারণ প্রকৃতি। সবকিছুর সৃষ্টি প্রাকৃতিক কারণ থেকে, অতিপ্রাকৃত কারণ থেকে নয়। এই সারসংক্ষেপের আলােকে আমরা এপিকিউরীয় দর্শনকে জ্ঞানতত্ত্ব অধিবিদ্যা ধর্মতত্ত্ব ও নীতিবিদ্যা – এই চার ভাগে বিভক্ত করতে পারি।

জ্ঞানতত্ত্ব

এপিকিউরাসের জ্ঞানতত্ত্বের ভিত্তি ইন্দ্রিয়-প্রত্যক্ষণ। প্লেটোর ন্যায় তিনি ইন্দ্রিয়প্রত্যক্ষণের প্রামাণ্য অস্বীকার করেন নি। তার মতে, ইন্দ্রিয়-প্রত্যক্ষণই যথার্থ জ্ঞানের উৎস। আমরা যা শুনি দেখি অঘ্রাণ ও আস্বাদ করি, তা-ই বাস্তব ও সত্য। সংবেদন ছাড়া জ্ঞানের প্রশ্নই ওঠে না। আমরা যাকে অধ্যাস (illusion) বলি, তা ইন্দ্রিয়প্রতারণা নয়, ভুল অবধারণমাত্র। সংবেদনের যখন ভুল ব্যাখ্যা দেয়া হয় এবং এক বস্তুর সংবেদনকে যখন অন্য বস্তুতে আরােপ করা হয়, তখনই অধ্যাসের সৃষ্টি হয়। অবশ্য ইন্দ্রিয় প্রায়শই আমাদের বস্তু সম্পর্কে ভুল ধারণা দিয়ে থাকে। যেমন : পৃথিবী যে গতিশীল কিংবা দেশ ও কাল যে আপেক্ষিক – ইন্দ্রিয় আমাদের এ জ্ঞান দিতে পারে না। কিন্তু এজন্য আমরা ইন্দ্রিয়কে দোষারােপ করতে পারি না। বস্তুর অসতর্ক ব্যাখ্যাই এর কারণ। তবে আপন পর্যবেক্ষণের পুনরাবৃত্তি ও অপরের পর্যবেক্ষণের সঙ্গে নিজের পর্যবেক্ষণের তুলনা করে ভ্রান্ত অবধারণকে শুদ্ধ করা যায়।

সংবেদন ও ইন্দ্রিয়-অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এপিকিউরীয়গণ জ্ঞান ও সত্য বিষয়ে এক বিস্তৃত মতবাদ গড়ে তােলেন। সংবেদনের প্রতীতি যেমন নিশ্চিত, সংবেদন থেকে প্রাপ্ত সাধারণ ধারণাবলিও তেমনি নিশ্চিত। তবে এসব ধারণার পেছনে কোনাে বিমূর্ত গুণের অস্তিত্ব আছে, একথা এপিকিউরাস স্বীকার করেন নি। তার মতে, প্লেটো ও এরিস্টটল যেসব এসেন্স বা অন্তঃসারের কথা বলেছেন, তাদের কোনাে বাস্তব অস্তিত্ব নেই। সাধারণ ধারণা অমূর্ত; আর বিশেষ বিশেষ বস্তু তাদের মূর্ত ও অস্তিত্বশীল রূপ। এপিকিউরীয় দর্শনের এ ধারণায় মধ্যযুগীয় নামবাদ ও আধুনিক অভিজ্ঞতাবাদের পূর্বাভাস পাওয়া যায়।

সংবেদন ও ধারণা ছাড়াও অনুমান করা ও অভিমত দেয়া সম্ভব; তবে এদের প্রতিপাদনের জন্য ইন্দ্রিয়-অভিজ্ঞতার সাহায্য নেয়া আবশ্যক। যেমন : ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে আমরা সাদা চোখে এটম বা পরমাণু প্রত্যক্ষ করতে পারি না। সুতরাং প্রত্যক্ষণের বিচারে পরমাণুর অস্তিত্ব একটি আনুমানিক ব্যাপার। কিন্তু পরমাণুকে বুঝে থাকি আমাদের সচরাচর অভিজ্ঞতার সাদৃশ্যানুমান (analogy) দ্বারা, এবং এই সাদশ্যানুমানের ভিত্তিতেই তাদের ওপর আমরা ইন্দ্রিয়-অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত গুণাবলি আরােপ করি। এপিকিউরাসের এই পরখনীতিতে সাম্প্রতিককালের যৌক্তিক দৃষ্টবাদীদের পরখনীতির সুস্পষ্ট পূর্বাভাস রয়েছে। মােটকথা, এপিকিউরীয় দর্শন অনুসারে, জ্ঞান ও সত্যের মানদণ্ড সংবেদন। আমরা যা প্রত্যক্ষ করি তাকেই জানি, এবং এ থেকে আমরা অনুমান করে থাকি যে, এখনও যা প্রত্যক্ষ করা হয়নি তার স্বভাবও হবে প্রত্যক্ষিত বস্তুর স্বভাবের মতাে। সংবেদনের প্রামাণ্যবিষয়ক এপিকিউরাসের গােটা মতটিই ডেমােক্রিটাসের ইন্দ্রিয়-প্রত্যক্ষণ বিষয়ক মতবাদের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এ মতে বস্তুকে নয়, বস্তুর প্রভাবে ইন্দ্রিয়ে প্রতিফলিত বস্তুর কপি বা অনুলিপিকেই আমরা সরাসরি প্রত্যক্ষ করে থাকি।

অধিবিদ্যা ও ধর্মতত্ত্ব

ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে আমরা শুধু জড়বস্তুকেই প্রত্যক্ষ করে থাকি। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, শুধু জড়বস্তুই অস্তিত্বশীল। জড়বস্তুকে ধারণ ও পরিচালনার জন্য শূন্যদেশের অস্তিত্ব অপরিহার্য। অনপেক্ষ সৃষ্টি ও অনপেক্ষ ধ্বংস বলে কিছুই নেই। পদার্থের উৎপত্তি বৃদ্ধি পরিবর্তন ও বিলােপের কারণ কতিপয় মৌল উপকরণের সংযােগ ও বিয়ােগ। এসব উপকরণ জড়পদার্থের সূক্ষ্মতম, অবিভাজ্য ও অপরিবর্তনীয় অণুবিশেষ। অণুগুলাের স্বভাব পরিপূর্ণ। অর্থাৎ তাদের মধ্যে কোনাে শূন্যদেশ নেই। এছাড়া তারা কঠিন ও অচ্ছেদ্য; সুতরাং তাদের ভেঙে বা কেটে ছােট করা চলে না। জড়ের সূক্ষ্ম অচ্ছেদ্য উপকরণ বলেই এদের পরমাণু বলা হয়। এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে, পরমাণুগুলাের সবগুলােই যদি অচ্ছেদ্য জড়ের সূক্ষ্মতম কণা হয়ে থাকে, তা হলে তাদের পারস্পরিক পার্থক্য নির্দেশ করা যায় কী করে? উত্তরে এপিকিউরাস বলেন, পরমাণুগুলাের মধ্যে আকার, আকৃতি ও পরিমাণগত পার্থক্য রয়েছে, এবং এসব পার্থক্যের ফলেই এরা পরস্পর পরস্পর থেকে স্বতন্ত্র। এরা নিয়ত পরিবর্তনশীল। এরা যেমন অসংখ্য, তেমনি এদের ধারণ করার জন্যও রয়েছে এক অনন্ত দেশ, এক অসীম বিশ্বব্রহ্মাণ্ড।

এপিকিউরাসের আধিবিদ্যক মতের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য এই যে, তিনি পরমাণুগুলাের স্বাধীনইচ্ছা স্বীকার করেছেন। এ জন্যই তারা চলার সময় তাদের গতিপথ রবর্তন করতে পারে। পরমাণুগুলাের মধ্যকার গতির ফলে যে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়, তাতে তারা সংযুক্ত হয়ে যায় এবং বিভিন্ন পৃথিবী গঠন করে। এপিকিউরাসের এ মতের সাথে ডেমােক্রিটাসের মতের পার্থক্য সুস্পষ্ট। ডেমােক্রিটাসের মতে, জগতের যাবতীয় জিনিস আবশ্যিকতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, অথচ এপিকিউরাসের মতে পরমাণুগুলাে স্বাধীন। প্রথম দৃষ্টিতে এপিকিউরাসের এ মতকে অসঙ্গত বলে মনে হয়। প্রাচীন ভাষাকারদের অনেকেই, বিশেষ করে সিসেরাে এ মতের সাথে এর পূর্ববর্তী স্বীকৃত ধারণাবলির কোনাে সঙ্গতি নেই বলে অভিযােগ করেছেন। তবে এখানে মনে রাখা দরকার যে, এপিকিউরাস অনপেক্ষ আবশ্যিকতায় বিশ্বাসী ছিলেন না; কেননা এ ধরনের নিয়ন্ত্ৰণবাদ মেনে নিলে নৈতিক শিক্ষার আর কোনাে অর্থই থাকে না। যেমন, আমরা যদি বিশ্বাস করি যে, আমাদের যাবতীয় কাজকর্ম এক পূর্বনির্দিষ্ট ব্যবস্থার অধীন, তা হলে আমরা প্রকারান্তরে অদৃষ্টবাদই স্বীকার করলাম। এতে আমাদের স্বাধীনইচ্ছার কোনাে অবকাশ থাকে না; আর যেখানে স্বাধীন ইচ্ছা নেই সেখানে নৈতিকতার প্রশ্ন ওঠে না। পরমাণুগুলাে স্বাধীনভাবে তাদের গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে – এপিকিউরাসের এ ধারণা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে যুক্তিযুক্ত। তার মতে, ভারি পরমাণুগুলাে হাল্কা পরমাণুর চেয়ে দ্রুততার সাথে নিচের দিকে পড়ে। নিয়ন্ত্রণবাদে বিশ্বাস করলে একথা স্বীকার করতে হবে যে, ভারি ও হাল্কা পরমাণুগুলাের মধ্যে সংযােগ সম্ভব নয়; আর পরমাণুগুলাের সংযােগ ব্যতিরেকে জগৎ গঠিত হতে পারে। কোনাে বাহ্য শক্তি দ্বারা পরিচালিত না হয়ে পরমাণুগুলাে স্বাধীনভাবে তাদের গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে বলেই বিশ্বের বিভিন্ন গ্রহের উদ্ভব সম্ভব হয়েছে।

অনিয়ন্ত্রণবাদের ওপর এই যে গুরুত্ব আরােপ, তার একটি বিশেষ অর্থ আছে। এতে বােঝা যায় যে, এপিকিউরাস বিজ্ঞানের কোনাে অনপেক্ষ সিস্টেম স্বীকার করেন। নি। আবার ধর্মীয় গোঁড়ামি দ্বারাও তিনি পরিচালিত ছিলেন না। ফলে অদৃষ্টবাদী প্রকৃতি বিজ্ঞানও তিনি গ্রহণ করেন নি। তার কাছে প্রকৃতিজগতে যেমন, মানবিক ক্রিয়াকলাপেও তেমনি স্বাধীনতা বিদ্যমান। আধুনিক বিজ্ঞানেও ডিটারমিনিজম বা অদৃষ্টবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান আমরা দেখি কোয়ান্টাম ইন্ডিটারমিনেসির আলোচনায়।

এপিকিউরাস নাস্তিক ছিলেন, একথা ভাবা ঠিক নয়। তার মতে, দেবতারা অস্তিত্বশীল, যদিও তাদের নিবাসস্থল মানুষ থেকে বহু দূরে। দেবতারা মানুষের ব্যাপার নিয়ে মাথা ঘামান না। মানুষের সাথে দেবতাদের যােগাযােগ সার্বক্ষণিক, এ প্রচালিত। ধর্মমত এপিকিউরাস প্রত্যাখ্যান করেন। তার মতে, দেবতারা মানুষের ধার ধারেন না, মানুষের কোনাে ব্যাপারে হস্তক্ষেপও করেন না। দেবতাদের আকৃতি মানুষের মতো, তবে তারা মানুষের চেয়ে ঢের বেশি সুদর্শন। পুরুষ ও মহিলা উভয় জাতীয় দেবতা আছেন। তারা মানুষের ন্যায় পানাহার করেন এবং গ্রিক ভাষায় কথা বলেন।

এপিকিউরারেস মতে, দেবতারা পরম শান্তিতে বসবাস করেন। অপূণ কামনা বলতে তাদের কিছুই নেই। তারা পরম সুখী। তাদের রাগ দ্বেষ কামনা বাসনা নেই এবং মানুষের কোনাে দুর্বলতাই তাদের কাছে স্থান পায় না। সুতরাং তাদের পক্ষে পার্থিব কারে হস্তক্ষেপ করা অসম্ভব। তারা চিরশান্তিতে নিমগ্ন। সংসার থেকে বহু দূরে থাকায় মানুষের মানুষের দুঃখ-দৈন্য বা কাতরতায় তারা বিচলিত হন না। মানবজীবনের ওপর তাদের কোনাে আধিপত্য নেই। জগতে ভৌতিক ও অলৌকিক বলে যেসব ঘটনার উলেখ আছে সেগুলাের কোনােটিই সত্য নয়। দেবতাদের সাথে মানুষের কোনাে সম্বন্ধ নেই। সুতরাং দেবতাদের ভয়ে ভীত হয়ে মানুষের দুঃখের পরিমাণ বৃদ্ধি করার কোনাে যৌক্তিকতা নেই।

মনােবিদ্যা ও নীতিবিদ্যা

অন্যান্য পরমাণুর ন্যায় আত্মাও জড়পদার্থ দ্বারা গঠিত। তা না হলে আত্মার কর্মস্পৃহা ও সুখ-দুঃখের অনুভূতি বলে কিছু থাকত না। আত্মা যেসব পরমাণুর সমবায়ে গঠিত সেগুলাে মসৃণ, ক্ষুদ্র ও গােলাকার। আত্মাই দেহের সব সংবেদন ও অনুভূতির কারণ। আত্মা জড় থেকে উদ্ভূত বলে দেহবিনাশের সাথে আত্মাও বিনষ্ট হয়ে যাবে। সুতরাং মৃত্যুর পর নরকযন্ত্রণার আশঙ্কা নেই। মৃত্যু মানেই চেতনার বিলুপ্তি। এরপর আত্মার আবার জীবনলাভের প্রশ্ন ওঠে না। মানুষ মৃত্যুকে ভয় পায়, মৃত্যুর কথা ভেবে আতঙ্কিত হয়। আসলে এটি একটি কুসংস্কার। সুতরাং একে পরিহার করা বাঞ্ছনীয়। এপিকিউরাসের মতে, দেবতা ও মৃত্যুভয় মানুষের পার্থিব সুখের প্রধান অন্তরায়। মরণােত্তর জীবনের ধারণা পরিহার করলেই মানুষ জীবনে সুখী হতে পারে; কেননা তখন সে বুঝতে পারে যে, মৃত্যু মানুষের পক্ষে ক্ষতিকর কিছু নয়। মৃত্যুর পর দেহের সঙ্গে মানুষের সব সম্পর্কই লােপ পায় এবং তখন মানুষের কোনাে বােধশক্তিও থাকে না। আর তা থাকে না বলেই মৃত্যুর ভালাে-মন্দ কিছুই মানুষ বুঝতে পারে না। অর্থাৎ মৃত্যুর পর সবই ফুরিয়ে যায়। সুতরাং মৃত্যুকে ভয় করার কোনাে কারণ নেই।

মরণােত্তর জীবন বলে যদি কিছু না থাকে তাহলে মৃত্যুর ভয়ে আমরা সুখভােগ থেকে বঞ্চিত হবাে কেন? মানুষের গােটা প্রকৃতিটাই সুখের ওপর প্রতিষ্ঠিত। শুধু মানুষ কেন, ইতর প্রাণীরাও এক প্রবৃত্তিবশে জন্মমুহূর্ত থেকে সুখের সন্ধান ও দুঃখ পরিহারের চেষ্টা করে। সুতরাং সুখই পরম শুভ। সুখই জীবনের মুখ্য উদ্দেশ্য। সব সুখই শুভ, আর সব দুঃখই অশুভ। তবে সুখের মধ্যেও তারতম্য আছে। এখানেই পূর্ববর্তী সিরােইকদের সাথে এপিকিউরীয়দের পার্থক্য। এরিস্টিপাস ক্ষণিকের সুখকেই কাম্য বলেছিলেন; কিন্তু এপিকিউরাসের মতে, সারা জীবনব্যাপী স্থায়ী তৃপ্তিই প্রকৃত সুখ। যা জীবনের শুভ বা পুরুষার্থ বলে গণ্য, তা আপাতমধুর দৈহিক সুখ নয়। প্রকৃত সুখ স্থায়ী; প্রকৃত সুখ মানে মনের সুখ বা তৃপ্তি, এবং এতে উচ্ছৃঙ্খল জীবনের আবেগ-স্পন্দন নেই। মনের সুখ ইন্দ্রিয়সুখের চেয়ে বেশি কাম্য; কারণ মনের সুখ স্থায়ী, আর ইন্দ্রিয়সুখ ক্ষণস্থায়ী। প্রকৃত সুখ দৈহিক নয়, আধ্যাত্মিক। অতীতের স্মৃতি ও ভবিষ্যতের আশার সাথে এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। সুতরাং ক্ষণিকের দৈহিক সুখ জ্ঞানীব্যক্তির কাম্য হতে পারে না। দৈহিক যন্ত্রণার মধ্যেও জ্ঞানীব্যক্তি সুখের সন্ধান পেতে পারেন। বস্তুত, কতকগুলো জিনিস আপাতকষ্টকর হলেও পরিণামে সুখকর। যেমন, অস্ত্রোপচার বেদনাদায়ক থেকে পরিণামে স্বাস্থ্যজনিত সুখের উৎপত্তি হয়। অতএব এ ধরনের কাজ কল্যাণকর।

এপিকিউরীয়গণ সুখকে সদর্থক ও নঞর্থক, এ দুই ভাগে বিভক্ত করেন। সদর্থক সুখ বলতে তারা বুঝেছেন সুখের বাস্তব অনুভূতিকে; আর নঞর্থক সুখ বলতে বুঝেছেন সেই মানসিক অনুভূতি বা প্রশান্তিকে যা দুঃখের অনুপস্থিতি থেকে দূরে রাখে। এপিকিউরাস যে সুখকে কাম্য বা শুভ বলেছেন তা আসলে এই নঞর্থক সুখ বা দুঃখের অভাব। তার মতে, প্রকৃত সুখ মানেই দুঃখের অভাব। আর দুঃখ-কষ্টের অবসান। যথার্থ সুখলাভের জন্য মানুষ যেন চেষ্টা করে, এটিই ছিল এপিকিউরাসের নির্দেশ।

সুখবাদীদের অনেকেই পরিমাণগত সুখের ওপর জোর দিয়েছেন এবং প্রগাঢ়তম সুখের বাস্তব অনুভূতিকেই কাম্য বলেছেন। কিন্তু এ ব্যাপারে এপিকিউরাস ভিন্নমত পােষণ করেন। তিনি সুখ (pleasure) ও আনন্দ (happiness)-এর মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করেছেন। তার মতে, দৈহিক বা কামজ ক্রিয়াকলাপ বড়জোর ক্ষণিকের সুখ দিতে পারে, স্থায়ী আনন্দ নয়। আনন্দই জীবনের পরমশুভ বা পুরুষার্থ। প্রজ্ঞা বীর্য মিতাচার আত্মসংযম ন্যায়পরতা প্রভৃতিগুণের ওপর প্লেটো এরিস্টটল ও স্টোয়িক দার্শনিকগণ যে গুরুত্ব আরােপ করেছিলেন, এপিকিউরাস তা-ই করলেন তার সুখবাদের ওপর এক মার্জিত প্রলেপ দেয়ার উদ্দেশ্যে। আর এজন্যই এপিকিউরীয় নৈতিক মত সর্বকালের সবচেয়ে উত্তম ও উন্নতমানের মতবাদ বলে স্বীকৃত ও প্রশংসিত।

এপিকিউরীয়দের মতে সামাজিক চুক্তির মাধ্যমেই সমাজের উৎপত্তি। আত্মস্বার্থ নীতিই সামাজিক জীবনের ভিত্তি। আত্মরক্ষার জন্যই বিভিন্ন ব্যক্তি মিলিত হয়ে সমাজ গঠন করে। ন্যায়পরতা অধিকার দায়িত্ববােধ প্রভৃতি সামাজিক চুক্তির ফলশ্রুতি। অনপেক্ষ ন্যায়পরতা বলে কিছু নেই। আর তথাকথিত প্রাকৃতিক অধিকারসমূহও আসলে মানুষের প্রয়ােজন সিদ্ধির উদ্দেশ্যে প্রণীত আচরণবিধি ছাড়া আর কিছু নয়। কোনাে আইনকে যথার্থ বলা চলে তখনই যখন সে আইন সমাজের সব মানুষের নিরাপত্তাবিধানে সক্ষম হয় বা মানুষের কল্যাণের পক্ষে উপযােগী বলে বিবেচিত হয়। আমরা ন্যায়পরায়ণ হই এজন্য যে, তাতে আমাদের উপকার হয়। অশুভ বলে কিছু নেই; অন্যায়ের ফলেই অশুভের সৃষ্টি। কর্তৃপক্ষের শিকার না হওয়া, কিংবা শাস্তির ভয় থেকে অব্যাহতির উপায় অন্যায় অনুষ্ঠান থেকে বিরত থাকা। সামাজিক কাজকর্মে অংশগ্রহণ করাতে কোনাে স্থায়ী আনন্দ নেই। এজন্যই বিজ্ঞজন একে এড়িয়ে চলতে চান। অভিজ্ঞতার আলােকে কতকগুলাে বিধিনিয়ম সব মানুষের সামাজিক জীবনের পক্ষে উপযােগী বলে প্রমাণিত হয়েছে। এসব অভিন্ন নিয়ম সব সমাজে সমানভাবে প্রচলিত। এছাড়া পরিবেশ ও অবস্থার পার্থক্যের জন্যই বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন আইন প্রণীত হয়ে থাকে। অধিকার ও ন্যায়পরতার ভিত্তি উপযােগিতা – এ ধারণার ওপর এপিকিউরীয়গণ যে সমাজদর্শন প্রতিষ্ঠা করেছেন তা প্লেটো এরিস্টটলের মতের বিরােধী। বস্তুত, এ মতের সাথে সােফিস্টদের ব্যক্তিবাদী মতের যথেষ্ট মিল রয়েছে। স্টোয়িকদের সামাজিক মতবাদে গ্রিক দর্শনের মূল গতানুগতিকতা অক্ষুন্ন রয়েছে।

ওপরের আলােচনা থেকে এ সত্য অত্যন্ত স্পষ্ট যে এপিকিউরীয় দর্শনের বাণী কানাে বিশেষ ধর্ম বা জাতির সংকীর্ণ গণ্ডীতে সীমাবদ্ধ নয়। ফলে দেখা যায়, গ্যাসেন্ডির তাে একজন ক্যাথলিক, হুইটম্যানের মতাে একজন সর্বেশ্বরবাদী এবং বার্ট্রান্ড রাসেলের মতাে একজন গণিতবিদের চিন্তায় সমানভাবে এপিকিউরীয় প্রভাব বর্তমান। বস্তুত, কোনাে কোনাে দিক থেকে লিউক্রেটিয়াসের প্রসিদ্ধ কবিতাটির মর্ম রাসেলের এ ফ্রি ম্যানস ওয়ারশিপ গ্রন্থের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

প্রশ্ন উঠতে পারে, এপিকিউরীয় দর্শন এত আকর্ষণীয় হলাে কীভাবে? কী করেইবা তা এত ব্যাপক আবেদন সৃষ্টি করতে পারল? উত্তরে বলা যায়, একিপিউরীয় দর্শনের মূল ভিত্তি ব্যক্তিবাদ; ব্যক্তিই এ দর্শনের যাত্রাবিন্দু। একথা সকলেরই জানা যে, অধিকাংশ শিল্পী ও চিন্তাবিদই সচরাচর অন্তর্মুখী হয়ে থাকেন। এ জন্যই তারা সমাজের মুক্তির চেয়ে নিজেদের সংবেদন প্রয়ােজন ও আবেগানুভূতি নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকেন। এ ধরনের মনােবৃত্তিসম্পন্ন মানুষের কাছে এপিকিউরীয় দর্শনের আবেদন নিতান্তই একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। দ্বিতীয়ত, এপিকিউরীয়বাদ এমন একটি দর্শন যা-কিনা বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতার সময় মানুষের মনে আশার সঞ্চার করতে পারে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক কলহের ফলে বাইরের জগৎ যখন মানুষের কাছে দুর্বিষহ হয়ে ওঠে, তখন ব্যক্তির পক্ষে নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকাই মানসিক প্রশান্তিলাভের উৎকৃষ্ট উপায়। তৃতীয়ত, এপিকিউরীয় দর্শনের একটি বৈজ্ঞানিক তাৎপর্য রয়েছে। এ দিক থেকে আধুনিক মানুষের কাছে এর আবেদন বেশি হবারই কথা। আধুনিক যুগের অধিকাংশ মানুষ বিজ্ঞানকে একটি কল্যাণকর বিষয় এবং মানুষের বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় বলে মনে করে। প্রচলিত কুসংস্কার ও লালিত ভ্রান্ত ধারণাবলির চ্যালেঞ্জ হিসেবে এপিকিউরাস যে মত প্রচার করেছিলেন, আজকের দিনের বৈজ্ঞানিক পরিবেশে এর ব্যাপক আবেদন ও সমর্থন নিতান্তই একটি বােধগম্য ব্যাপার। বস্তুত, এ ধরনের চিন্তার মাধ্যমেই মানুষের প্রকৃত মুক্তিলাভ সম্ভব। পরিশেষে উল্লেখ্য, এপিকিউরীয় দর্শনের এমন একটি দিকও আছে, যা আমাদের বৌদ্ধ দর্শনের নির্বাণের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

তথ্যসূত্র

পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস : থেলিস থেকে হিউম, প্রথম খণ্ড, ডঃ আমিনুল ইসলাম, মাওলা ব্রাদার্স, ঢাকা, ২০১৪, পৃ.১৬৬-১৭৩

 

1 Trackback / Pingback

  1. পাশ্চাত্যের ইতিহাস ও চিন্তা-ঐতিহ্যের আউটলাইন – বিবর্তনপথ

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.