হিন্দু দেবদেবী : অগ্নি

অগ্নি ঋগ্বেদের প্রধান দেবতা। উৎসর্গীকৃত সূক্তের হিসেবে ইন্দ্রের পরে অগ্নির স্থান হলেও গুণ ও কাজে তিনি সর্বপ্রথম।

অগ্নির সাধারণ গুণসমূহ

  • অগ্নি হব্যবাহ – অর্থাৎ তিনি দেবতাদের মুখরূপে সব দেবতাদের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত হবি গ্রহণ করেন –
    • কৌশিতকী ব্রাহ্মণ ৩/৬/৫/৫ ও তাণ্ড্যমহাব্রাহ্মণ ৬/১/১-এ আছে “অগ্নি দেবতাদের মুখ”।
    • শতপথ ব্রাহ্মণ ৭/১/২৪-এ আছে, দেবগণ অগ্নিমুখে অন্নভোজন করেন।
    • তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ ২/৭/১২/৩-এ আছে, অগ্নি দেবতাদের জঠর বা পাকস্থলি (দেবতাদের উদ্দেশ্যে দেয়া খাদ্য গ্রহণ করেন, এই অর্থে)
  • অগ্নি দেবতাদের দূত। তিনি দূতরূপে হব্য দেবগণের কাছে ও কব্য পিতৃগণ বা পূর্বপুরুষের কাছে পৌঁছে দেন।
    • ঋগ্বেদ ১/১২/১ বলছে – “দেবতাদের দূত দেবতাদের আহ্বানকারী (হোতা) সর্বদেবরূপী (বা সর্বধনের অধিকারী) যজ্ঞের সুষ্ঠু সম্পাদনকারী অগ্নিকে আমি বরণ করি।”
    • শতপথ ব্রাহ্মণ ৩/৫/১/২১ বলছে – “তিনিই দেবতাদের দূত ছিলেন।”
    • শতপথ ব্রাহ্মণ ৩/৫/২০ বলছে – “অগ্নিই দেবতাদের দূত ছিলেন।”
  • অগ্নি যজ্ঞের হতারূপে আহুতি প্রদান করেন, তিনি যজ্ঞের পুরোহিত বা যাগকর্তা –
    • ঋগ্বেদ – ১/১/১-এ বিশ্বামিত্রের পুত্র ঋষি মধুছন্দা বলছেন – “যজ্ঞের পুরোহিত, যজ্ঞের দেবতা, যজ্ঞের ঋক, হোতা ও শ্রেষ্ঠযজ্ঞকলরূপ রত্নধারণকারী অগ্নিকে আমি স্তব করি।”
    • ঐতরেয় ব্রাহ্মণ – ১/২৮/৩/৪ -এ আছে, “অগ্নিই দেবতাদের হোতা।”
    • শতপথ ব্রাহ্মণ ৩/৫/১/২১-এ আছে, “অগ্নি দেবতাদের যাগকর্তা।”
  • অগ্নি সমস্ত যজ্ঞেরই অধিপতি
    • শতপথ ব্রাহ্মণ ১/১/১/২ – “অগ্নি ব্রতপতি”
    • শুক্ল যজুর্বেদ ১/১/১/২ – “হে ব্রতপতি অগ্নি, আমি ব্রতাচরণ করব”
  • অগ্নি ঋষিদের গৃহের অধিপতি (ঋগ্বেদ – ২/৩৬/৫)
  • অগ্নি অন্নের অধিপতি
    • শুক্ল যজুর্বেদ – ৪/৫/২/১ – “হে অন্নপতি তুমি আমাদের অন্ন দাও – এই কথা বললেন। অগ্নিই অন্নপতি, তিনি আমাদের অন্নদান করেন।”
    • তৈত্তীরীয় ব্রাহ্মণ – ২/৫/৭/৩ – “অগ্নি অন্নদাতা অন্নপতি।”
    • ঐতরেয় ব্রাহ্মণ – ১/৮ – “অন্নদাতা বা অন্নপতি বলেই তিনি অগ্নি।”
    • ঐতরেয় ব্রাহ্মণ – ২/৫ – “ইনিই অন্নের অধিপতি।”
    • শ্রীমদ্‌ভাগবদ্‌গীতায় অগ্নিকে অন্নাধিপতি বলার কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে – “অন্ন থেকেই জীবগণ জীবন ধারণ করে, পর্জন্য বা মেঘ থেকে (মেঘ বিগলিত জল থেকে) অন্ন (বা জীবের খাদ্য) জন্মায়, যজ্ঞ থেকে মেঘের উৎপত্তি, যজ্ঞ হয় ক্রিয়াশীলতা থেকে।” এভাবে সেখানে যজ্ঞের অগ্নিকে অন্নের উৎস হিসেবে কল্পনা করে অগ্নিকে অন্নপতি বলা হয়েছে।
  • অগ্নির পিতা সহস্‌ বা বল এবং অন্ন
    • ঋগ্বেদ – ১/১/১ – “হে সহসের পুত্র, তুমি অনুকুলভাবে প্রদীপ্ত হয়ে আমাদের অবিচ্ছিন্ন সুখ দাও। হে অন্নের পুত্র (উর্জো নপাৎ), তুমি আমাদের দ্বারা স্তুত হয়ে আমাদেরকে পাপ থেকে রক্ষা কর।”
    • সহস্‌ শব্দের অর্থ বল বা শক্তি। বলের পুত্র অর্থে সায়নাচার্য লিখেছেন – “শক্তির দ্বারা ঘর্ষণে অগ্নি জন্মগ্রহণ করেন।” এভাবে বল বা সহসের পুত্র অগ্নির একটি প্রাকৃতিক ব্যাখ্যা দাঁড় করা হয়েছে।
    • অগ্নি একই সাথে অন্নপতি, আবার অন্নের পুত্র – এর ব্যাখ্যা সায়ন বলেছেন, জঠরাগ্নি বৃদ্ধির কারনে অগ্নি অন্ননের পুত্র, অর্থাৎ খাদ্যরূপ ইন্ধনের সহায়তায় জঠরাগ্নি বর্ধিত হয়, তাই অন্ন বা খাদ্যের পুত্র অগ্নি।
  • অগ্নি সর্বব্যাপী
    • ঋগ্বেদ – ১/৯৭/৬ – “বিশ্বব্যাপী তার মুখ, তিনিই বিশ্বব্যাপ্ত করে বিরাজমান।”
    • শুক্ল যজুর্বেদ – ১৭/৯৯ – “হে অগ্নি, সমগ্র বিশ্বভুবন ব্যাপ্ত করে তোমার বাসস্থান, সমুদ্রে হৃদয়ে আর জীবের জীবনে (আয়ুতে) তোমার অধিষ্ঠান।”
  • অগ্নি সকল জীবের অধিপতি – “অগ্নি সকল জীবের অধিপতি।” (কৃষ্ণ যজুর্বেদ – ৩/৩/৪/৫)
  • অগ্নি স্বর্গলোকের অধিপতি (ঐতরেয় ব্রাহ্মন – ৩/৪২)

সকল দেবতার আত্মা, সকল দেবতা অগ্নিরই প্রকাশ, অগ্নির বিভিন্ন নাম

  • ঋগ্বেদ – ২/১/৩-৭ – হে অগ্নি, তুমি সাধুদের অভিষ্টবর্ষী, অতএব তুমি বিষ্ণু, তুমি বহুলোকের স্তুত্য, তুমি নমস্কারযোগ্য। হে ধনবান স্তুতির অধিপতি (ব্রহ্মণস্পতি)। তুমিই ব্রহ্মা, তুমি বিবিধ পদার্থ সৃষ্টি কর ও বহু প্রকার বুদ্ধিতে অবস্থিতি কর। হে অগ্নি, তুমি ধৃতব্রত, তাই তুমি রাজা বরুণ, তুমি শত্রুদের বিনাশক ও স্তুতিযোগ্য, তাই তুমি মিত্র। তুমি সাধুগণের পালক। তাই তুমি অর্যমা। অর্যমার (দান) সর্বব্যাপী। তুমি অংশ। হে দেব, তুমি আমাদের যজ্ঞে ফল দান কর। হে অগ্নি, তুমি ত্বষ্টা, তুমি পরিচর্যাকারীর বীর্যস্বরূপ, স্তুতিবাক্য সব তোমারই, তোমার তেজ হিতকারী, তুমি আমাদের বন্ধু তুমি শীঘ্র উৎসাহিত কর, তুমি আমাদের উত্তম অশ্ববিশিষ্ট ধন প্রদান কর। তোমার ধন প্রভূত, তুমি মানবজাতির বলস্বরূপ। হে অগ্নি, তুমি অলঙ্কারকারীর (যজমানের) পক্ষে দ্রবিণোদা (স্বর্ণদাতা), তুমি দ্যোতমান সবিতা, রত্নের আধারস্বরূপ। হে নৃপতি, তুমি ধন দাতা ভগ, যে যজমান যজ্ঞগৃহে তোমার পরিচর্যা করে তুমি তাকে পালন কর। হে দেব অগ্নি, তুমি হব্যদাতার পক্ষে অদিতি। তুমি হোত্রা, ভারতী, তুমি স্তুতিদ্বারা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হও। তুমি শতবছরের ইলা, তুমি দানসমর্থ। হে ধর্মপালক, তুমি বৃত্রহন্তা, তুমি সরস্বতী।” এখানে অগ্নিই ইন্দ্র, ব্রহ্মা, বরুণ, রুদ্র, সবিতা, মিত্র, অদিতি, ইলা প্রভৃতি দেব-দেবীরূপে প্রকাশিত হচ্ছেন।
  • ঋগ্বেদ – ৫/৩/১-৩ – “হে অগ্নি, তুমি জাত হয়ে বরুণ হয়ে থাকো, তুমি সমিদ্ধ হয়ে মিত্র হয়ে থাকো, সকল দেবতারা তোমাতে অবস্থিত থাকেন। হে বলের পুত্র, তুমি হব্যদায়ী যজমানের ইন্দ্র। তুমি কন্যাগণের কাছে অর্যমা হও। হে হব্যবান্‌ অগ্নি, তুমি গোপনীয় নাম (বৈশ্বানর নাম) ধারণ কর। যখন তুমি দম্পতীকে একান্তঃকরণ করে দাও, তারা তখন বন্ধুর মত গব্য দ্বারা সিক্ত করে। হে অগ্নি, তোমার আশ্রয়ার্থ মরুৎগণ অন্তরীক্ষকে মার্জন করছে। হে রুদ্র, তোমার জন্য অতি বিচিত্র ও মনোহর বিষ্ণুর যে অগম্য পদ (অন্তরীক্ষ) স্থাপিত হয়েছে তার দ্বারা তুমি উদকের (কিরণসমূহের) গোপন তত্ত্ব পালন কর।”
  • ঋগ্বেদ – ১০/৮৮/৬-৭ – “রাতে অগ্নি তাবৎ সংসারের মস্তক-স্বরপ হন, পরে প্রাতে তিনি সূর্যরূপে উদিত হন। যে অগ্নি বিশেষ প্রজ্বলিত হয়ে সুশ্রী মূর্তি ধারণ করে আকাশে স্থান গ্রহণ করে ঔজ্জ্বল্যের সাথে শোভা পেতে লাগলেন, সেই অগ্নিতে শরীর রক্ষাকারী সকল দেবতা যজ্ঞের দ্রব্য সমর্পণ করলেন।”
  • আচার্য গোভিলকৃত সামবেদীয় গুহ্যসূক্তের পরিশিষ্ট “গৃহ্য সংগ্রহ”-তে অগ্নির বহুবিধ নামের তালিকা দেয়া হয়েছে (১ম প্রপাঠক – ২-৩, ৫-৯, ১১)। একেক প্রকার যজ্ঞে অগ্নির একেক প্রকার নাম হয় – “লৌকিক ভাষায় প্রথমত অগ্নিকে পাবক (পবিত্রকারী) নামে অভিহিত করা হয়। ‘গর্ভাধান’ অনুষ্ঠানে অগ্নিকে মরুৎ বলা হয়, পুংসবন অনুষ্ঠানে বলা হয় চন্দ্রমস, শুঙ্গাকর্মে শভন, গর্ভাধানের অন্তর্গত সীমন্তোন্নয়ন অনুষ্ঠানে বলা হয় মঙ্গল।… গোদান যজ্ঞে অগ্নির নাম সূর্য, ‘কেশান্ত’ অনুষ্ঠানে তিনি অগ্নি নামেই পূজিত, বিসর্গে তিনি বৈশ্বানর, বিবাহানুষ্ঠানে যোজক, চতুর্থী হোমে তার নাম শিখী, অপর নাম ধৃতি ও অগ্নি। আবসখ্য যাগে তিনি ভব নামে পরিচিত, বিশ্বদেব যজ্ঞে তিনি পাবক। গার্হপত্য অগ্নি ব্রহ্মা নামে অভিহিত, দক্ষিণাগ্নির নাম ঈশ্বর, আহবনীয় যজ্ঞে তিনি বিষ্ণু; – অগ্নিহোত্র যাগে এই তিন অগ্নি। লক্ষহোমে তার নাম বহ্নি, কোটীহোমে তিনি হুতাশন। প্রায়শ্চিত্ত হোমে তিনি বিধি, পাকযজ্ঞে তিনিস সাহস (সহস বা বলের পুত্র), দেবতাদের যজ্ঞে তিনি হব্যবাহ, পিতৃকার্যে তিনিই কব্যবাহন। পূর্ণাহুতিকালে তার নামে ‘মৃড়‘, শান্তিকর্মে তিনি বরদ নামে খ্যাত। … জীবের উদরে তিনি জঠরাগ্নি, শ্মশানে জীবদেহ ভক্ষণকার্যে ক্রব্যাদ, সমুদ্রস্থিত অগ্নির নাম বাড়বা, জগৎ ধ্বংসকালে তিনি সংবর্তক
  • অথর্ববেদ ১৩/৩/১৩ – “সেই অগ্নি সন্ধ্যাকালে বরুণ হন, প্রভাতে উদিত হয়ে তিনি মিত্র, তিনি সবিতারূপে অন্তরীক্ষ পরিক্রমণ করেন, তিনিই ইন্দ্র হয়ে মধ্যদিনে কিরণ দান করে থাকেন।”
  • শতপথ ব্রাহ্মণ ২/৩/১ – “সন্ধ্যাকালে অগ্নিতে সূর্যকে আহুতি দেয়া হয়, প্রাতে সূর্যে অগ্নিকে আহুতি দেয়া হয়। উদিত হোমের এই রীতি। যখন সূর্য অস্ত যান তখন অগ্নিই জ্যোতি। যখন সূর্য উদিত হন, তখন সূর্য জ্যোতি। নিরুক্ত ১৮/৫-এ যাস্ক বলছেন অগ্নি আর সূর্য ভিন্ন দেবতা – “যে অগ্নির সূক্তে স্তুতি হয়, যে অগ্নির উদ্দেশ্যে হবি প্রদত্ত হয়, সেই অগ্নি পাবকাগ্নি, – অন্তরিক্ষাগ্নি (বিদ্যুৎ) বা দ্যুলোকাগ্নি (সূর্য) নন। ঊর্ধ্বতর জ্যোতির্দ্বয় অন্তরিক্ষাগ্নি এবং দ্যুলোকাগ্নি (বিদ্যুৎ ও সূর্য) অগ্নি নামের ভাগী হন, নিপাত বশে অর্থাৎ উপচারিকভাবে বা অপ্রধানভাবে। কিন্তু অধ্যাপক ম্যাকডোনেল লিখেছেন, “অগ্নি সম্পর্কিত অন্যান্য প্যাসেজে তাকে সূর্যের সাথে চিহ্নিত করা হয়েছে, কারণ বৈদিক বিশ্বাস অনুসারে সূর্য অগ্নিরই একটি ধরণ। তাই অগ্নি উজ্জ্বল আকাশে স্বর্গের আলোক, স্বর্গের প্রধান (৩/২/১৪) … তিনি সকালে সূর্য হিসেবে জন্মান (১০/৮৮/৬)। অথর্ববেদ – ৮/২৮/৯/১৩-এ বলা হয়েছে, সূর্য অগ্নিতে পরিণত হয় এবং অগ্নি থেকে জাত হয়।
  • শতপথ ব্রাহ্মণ – ২/২/১ – দেবগণ সকল রূপ অগ্নিতে স্থাপন করেছেন।
  • শতপথ ব্রাহ্মণ – ১৪/৩/২/৫, ৭/৪/১/২৪, ৯/৫/১/৭ – অগ্নি সকল দেবতার আত্মা
  • ঐতরেয় ব্রাহ্মণ ২/১ – অগ্নিই সকল দেবতারূপে প্রকাশিত
  • তৈত্তীরীয় ব্রাহ্মণ – ১/৪/৪/১০, ঐতরেয় ব্রাহ্মণ- ২/৩ – সকল দেবতাই অগ্নিস্বরূপ
  • ঐতরেয় আরণ্যক – ৯/১/২ – “অগ্নি বৃত্রহন্তা ইন্দ্র
  • বৃহদ্দেবতা ২য় অঃ-এ অগ্নির ৫টি নাম – দ্রবিণোদা, তনূন পাৎ, নরাশংস, পবমান ও জাতবেদা। দ্রবিণোদা অর্থে ধনদাতা, তনূনপাৎ অর্থে দিব্যাগ্নির পৌত্র বা মধ্যমাগ্নির পুত্র, নরাশংস অর্থে নরগণের দ্বারা স্তুত, পাবক অর্থে বিশ্বের পবিত্রতাবিধায়ক, এবং জাতবেদা অর্থে যিনি জন্মমাত্রেই বিশ্বভুবন সম্পর্কে জ্ঞাত আছেন। এগুলো অগ্নির বিশেষণ।
  • Alain Danielou তার Hindu Polytheism গ্রন্থের p.19-এ অগ্নিকে দশটিভাগে বিভক্ত করেছেন – ১। কাষ্ঠাগ্নি, ২। ইন্দ্র বা বায়ু – বজ্রাগ্নির কর্তা – দাবানলের উৎস, ৩। সূর্য বা দ্যুলোকের অগ্নি, ৪। জঠরাগ্নি -জীবনধারণের উৎস, ৫। ধ্বংসাত্মক অগ্নি বা বাড়বানল। এদিকে যজ্ঞাগ্নি ৫ প্রকার – ১। ব্রহ্মা অগ্নি, ২। প্রজাপত্য অগ্নি, ৩। গার্হপত্য অগ্নি, ৪। দক্ষিণাগ্নি, ও ৫। ক্রব্যাদ অগ্নি (চিতাগ্নি)

অগ্নির সর্বত্র বিরাজিত অবস্থা, ওষধিস্বরূপতা ও তিনরূপ

  • ঋগ্বেদ – ৩/২৯/১১ – গর্ভস্থ অগ্নিকে তণুনপাৎ বলে। অগ্নি যখন প্রত্যক্ষ হন তখন তিনি আসুর, যখন অন্তরীক্ষে তেজ বিকাশ করেন্ন তখন মাতরিশ্বা হন। অগ্নি প্রসৃত হলে বায়ুর উৎপত্তি হয়।
  • ঋগ্বেদ – ১/৭০/২ – যে অগ্নি জলের গর্ভস্বরূপ, যিনি অরন্যেরও গর্ভ, যিনি স্থাবর ও জঙ্গমের গর্ভরূপে সর্ববস্তুর অন্তরে অবস্থিত, সেই অগ্নি গৃহে এবং পর্বতে হবি লাভ করেন। সেই অমৃতরূপী সুকর্মযুক্ত অগ্নি প্রজাবৎসল রাজার মত আমাদের হিত করে থাকেন।
  • “হে অগ্নি, আমরা তোমার তিন প্রকারের তিনি মূর্তি জানি, তোমার স্থান অনেক স্থলে আছে তাও জানি। তোমার অতি নিগূঢ় যে নাম, তাও জেনেছি, আর যে উৎপত্তিস্থান থেকে তুমি এসেছে তাও জানি।” – ঋগ্বেদ – ১০/৪৫/২। অগ্নির তিন জন্ম বা তিনরূপের কথা বেদে বারবার বলা হয়েছে – (১) যজ্ঞশালায় আহ্বনীয়, (২) গার্হপত্য ও দক্ষিণাগ্নি, এবং (৩) সূর্য, বিদ্যুৎ ও অগ্নি। – ঋগ্বেদ – ১/৯৫/৩, ৪/১/৭, শুক্ল যজুর্বেদ ১২/৮। শুক্ল যজুর্বেদ ২/২-এ, অগ্নির তিনটি নাম পাওয়া যায় – ভুবপতি, ভুবনপতি ও ভূতপতি। একটি উপাখ্যান অনুসারে এই তিনজন অগ্নির তিন ভাই। ডঃ ক্ষিতীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মনে করেন, অগ্নির ত্রিবিধ মূর্তির কল্পনাতেই পরবর্তীকালের বহু দেবতার মূলে একেশ্বরের চিন্তা সম্ভব হয়েছে। (Vedic Selections, voul. I, C.U. p.4)
  • শুক্ল যজুর্বেদ – ১১/৪৬-এ অগ্নি সমুদ্রমধ্যস্থ জলের গর্ভস্বরূপ। এখানে “অপাং গর্ভ’ শব্দের উল্লেখ আছে, যার অর্থে আচার্য মহীধরবলেন, এর অর্থ হচ্ছে মেঘস্থিত বিদ্যুৎ এবং সমুদ্রিয়ম্‌ বলতে বাড়বাগ্নি বোঝানো হয়েছে।
  • শুক্ল যজুর্বেদ – ১২/৩৩ – অগ্নি, তুমি ওষধীর গর্ভে অবস্থিত, বনস্পতির গর্ভে অবস্থিত, সকল জীবকুলের গর্ভে অবস্থিত, জলের গর্ভে বিরাজমান। তুমি সমস্ত বিশ্বের কেতু (জ্ঞানরূপী), বিশ্বভুবনের গর্ভরূপে অন্তরস্থিত।
  • অথর্ববেদ – ১৯/১/৩/২ – “হে অগ্নি, তোমার যে তনু জলে বর্তমান (বড়বাগ্নিরূপে), যে তনু বনে (দাবানলরূপে) যে তনু ওষধি, পশু এবং অন্তরীক্ষে (মেঘস্থিত বিদ্যুৎরূপে) অবস্থিত, সেই সকল তনু একত্র কর এবং তাদের দ্বারা আমাদের অজস্র ধন দান কর।
  • শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ – ২/১৭ – যে দেব অগ্নিতে, যিনি জলে, যিনি বিশ্বভুবনে প্রবেশ করেছেন, যিনি ওষধিতেবনস্পতিতে, সেই দেবতাকে নমস্কার।

অগ্নি পুরুষ, ব্রহ্ম, আত্মা 

  • ঋগ্বেদ – ২/৬/৬ – “হে অগ্নি, তুমি জনগণের অন্তরে গমন কর।”
  • ঋগ্বেদ – ১/১৪৯/২ – “যে অগ্নি মানবজাতির মতো দ্যাবাপৃথিবীরও উৎপাদক, তিনি যশোযুক্ত হয়ে বর্তমান আছেন, এবং তা থেকেই জীবগণ সৃষ্টির আস্বাদন প্রাপ্ত হয়। তিনি গর্ভাশয়ে প্রবেশ করে সমস্ত জীবের সৃষ্টি করেন।”
  • ঋগ্বেদ – ১০/৫/৭ – “অগ্নি সৎও বটে, অসৎও বটে, তিনি পরমধামে আছেন, তিনি আকাশের ওপর সূর্যরূপে জন্মেছেন। অগ্নিই আমাদেরকে আগে জন্ম দিয়েছেন, তিনি যজ্ঞের পুর্ববর্তীকালে অবস্থিত ছিলেন। তিনি বৃষও বটে, গাভীও বটে, অর্থাৎ স্ত্রী-পুরুষ উভয়রূপী।” সায়ন ঋকটির ব্যাখ্যায় বলেছেন, অসৎ শব্দের অর্থ সৃষ্টির পূর্বাবস্থা, আর সৎ শব্দের অর্থ সৃষ্টির পরবর্তী অবস্থা। উপনিষদের ব্রহ্মও সৎ, অসৎ, স্ত্রী, পুরুষ – সর্বব্যাপী, সর্বজীবের আত্মা, তাই অনেকে ঋগ্বেদের এই ঋকে অগ্নিকে ব্রহ্মস্বরূপ কল্পনা করা হয়েছে বলে দাবি করে থাকেন।
  • শতপথ ব্রাহ্মণ – ৯/৫/১/৮৮ – অগ্নিই সর্বভুতের প্রাণ
  • শতপথ ব্রাহ্মণ – ১০/৪/১/৬, ২৪/৯/১/১৫ – পুরুষই অগ্নি
  • শতপথ ব্রাহ্মণ – ১০/১/২/৩ – অগ্নিই মন
  • শতপথ ব্রাহ্মণ – ১৪/৬/১৩ – “এই অগ্নিই বৈশ্বানর, তিনি মানুষের অন্তর্লোকে বিরাজ করেন, যার দ্বারা খাদ্য পরিপাক হয়, যা কিছু ভোজন করা হয়, সবই অগ্নি, তার এই শব্দ হয়।”
  • ঐতরেয় আরণ্যক – ২/৪/২ – “অগ্নি মানুষের মুখে বাক্‌রূপে অবস্থান করে।”
  • ঈশোপনিষৎ ১৮ – “হে অগ্নি, তুমি আমাদের সব কাজই জানো, আমাদের অপকারী পাপগুলোকে দূর কর। আমরা প্রচুর পরিমাণে বারবার তোমাকে নমস্কার করছি।”
  • মনু অগ্নিকে আত্মা বলে স্বীকার করেছেন।
  • গীতা – ১১/১৯-এ কৃষ্ণ অগ্নি রূপে বিভাসিত, অর্জুন তাকে প্রজ্বলন্ত অগ্নিমুখ বিশিষ্টরূপে প্রত্যেক্ষ করেছেন। গীতা ১৫/১৪-তে কৃষ্ণ বলেন, “আমি অগ্নিরূপে জনগণের দেহ আশ্রয় করে প্রাণ ও অপান সমন্বিত চতুর্বিধ অন্ন পাক করি।”
  • মার্কণ্ডেয় পুরাণ – ৯৯ অঃ – হে পাবক, তোমার দ্বারাই সব কিছু সৃষ্ট হয়, তোমার দ্বারাই বর্ধিত হয়, তোমাতেই সকলের উদ্ভব, অন্তকালে তোমাতেই লীন হয়। হে দেব, তুমি জল সৃষ্টি কর, পুনরায় সেই জল তুমি পান কর, প্রাণীদের পুষ্টির জন্য তুমি সেই জল পান কর। তুমি দেবতাদের মধ্যে তেজরূপে, সিদ্ধগণের মধ্যে কান্তিরূপে অবস্থান কর। … হে ভগবন, তুমি জলে দ্রবরূপী, বায়ুতে বেগরূপী। হে অগ্নি, ব্যাপ্তির জন্য তুমি আকাশের আত্মারূপে অবস্থিত। হে অগ্নি, সর্বজীবকে পালন করে তুমি তাদের অন্তরে বিরাজ কর। কবিগণ তোমাকে এক বলে থাকেন, তোমাকে তিনও বলে থাকেন।
  • মার্কণ্ডেয়পুরাণ ৯১ অঃ-তে “তুমি সমস্ত দেবতাগণের মুখ। ভগবান তোমার সহায়তাতেই হবির্ভোজন ও অখিল দেবতার তৃপ্তি সাধন করেন, তাই তুমিই সমস্ত দেবতার প্রাণ। তোমাতে যে হবি আহূত হয়, তা পরম পবিত্রভাব প্রাপ্ত হয়ে পরে জলরূপে পরিণত হয়ে থাকে। তাতে অখিল ওষধির জন্ম হয়। সেই ওষধির দ্বারাই জন্তুগণ সুখে জীবন ধারণ করে। সকলেই তোমার দ্বারা আপ্যায়িত ও সম্বদ্ধহয়ে তোমাতেই উদ্ভূত ও তোমাতেই অন্তে লয়প্রাপ্ত হয়। হে দেব, তুমিই জলের সৃষ্টি কর। তুমিই তা ভক্ষণ করে থাক। আবার তোমার দ্বারাই পচ্যমান হয়ে সেগুলো সব প্রাণীর পুষ্টির কারণ হয়ে থাকে। তুমি দেবগণে তেজোরূপে ও সিদ্ধগণে কান্তিরূপে অবস্থান করছ। তুমি আকাশে ব্যাপিত্ব এবং তুমিই সর্বত্র আত্মারূপে অবস্থিত আছ। হে অগ্নি, তুমিই সর্বভূতের অন্তরে বিচরণ করে তাদের প্রতিপালন করছ। কবিগণ তোমাকে এক ও পুনর্বার ত্রিবিধ বলে নির্দেশ করেছেন।”
  • স্কন্দপুরাণের আবস্ত্যখণ্ডে অগ্নি ব্রহ্মাকে বলছেন – “জগতের রক্ষা বিষয়ে আমি কর্তা, তুমি অনুকর্তা (নিমিত্তরূপী)। আমি যা পূর্বে নির্মাণ করেছি, তুমি তাই সম্পন্ন কর।”
  • আচার্য যোগেশচন্দ্র রায় লিখেছেন, “অগ্নি ঋগ্বেদের এক প্রধান দেবতা। তিনি দ্বিশতাধিক সূক্তে স্তুত হয়েছেন। অন্য দেবতাদের সাথেও তার স্তুতি আছে। এই সকল স্তুতি পড়লে মনে হয় তিনি কেবল কাষ্ঠাগ্নি নন, তিনি বিশ্বের অগ্নি, বিশ্বের শক্তি।”
  • প্রশ্নোপনিষদে অগ্নিকে প্রাণ বলে স্বীকার করা হয়েছে।
  • অরবিন্দের মতে অগ্নি জ্ঞানময় ঐশ্বরিক ইচ্ছার প্রতীক। তিনি বলেছেন, “মনস্তাত্ত্বিকভাবে আমরা অগ্নিকে devine will হিসেবে গ্রহণ করতে পারি, যা devine wisdom থেকে perfectly inspired হয়েছে, এবং একটির অপরকে প্রয়োজন, যা Truth-consciousness এর active বা effective power.”
  • ডঃ ক্ষিতীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মনে করেন, অগ্নির ত্রিবিধ মূর্তির কল্পনাতেই পরবর্তীকালের বহু দেবতার মূলে একেশ্বরের চিন্তা সম্ভব হয়েছে। (Vedic Selections, voul. I, C.U. p.4)
  • অগ্নি শব্দের অর্থ প্রসঙ্গে সায়নাচার্য বাজসনেয়ীর মত উল্লেখ করে বৃহদ্দেবতা – ২/২৪-এ বলেছেন, “যেহেতু অগ্নি জীবগণের আগে জন্মেছেন, যজ্ঞেও যেহেতু সবার আগে অবস্থান করেন, কাষ্ঠদাহ অন্নাদি পাক করতে নিজের অঙ্গ বা শরীর নিয়ে আসেন, সেজন্যই জ্ঞানীগণ তাকে অগ্নি নামে স্তব করেন্ন।” শতপথ ব্রাহ্মণ ২/২/২/২/- এও একই কথা আছে। পারস্কর গৃহ্যসূত্র ৫/১১-এ আছে, অগ্নি প্রথম দেবতা। সাংখ্যায়নব্রাহ্মণ ৯ম অধ্যায়ে আছে অগ্নি জীবসমূহের অধিপতি। উল্লেখ্য, ঐতরেয় উপনিষদ – ১/২-এ “এই ব্রহ্মই সৃষ্টির অগ্রে বর্তমান ছিলেন।” বৃহদারণ্যক উপনিষদ ১/৪/১৭ – “এই আত্মাই অগ্রে ছিলেন।” এভাবে উপনিষদে ব্রহ্ম অগ্নির ধারণার স্থলাভিষিক্ত হন।
  • মহাভারতের শান্তিপর্ব ৩৪২/১২-তে অগ্নিকেই ব্রহ্ম বলা হয়েছে।
  • যাস্ক নিরুক্ত ৭/১৮/২-এ বলেছেন, এক মহান আত্মারূপে অগ্নিই মিত্র, বরুণ, সূর্য, ইন্দ্র ইত্যাদিরূপে ঋষিগণকর্তৃক স্তুত হয়েছেন।
  • সাংখ্যায়নব্রাহ্মণ ৯ অঃ অনুসারে অগ্নিই ব্রহ্ম

অগ্নির আকার

  • বেদের metaphorical imagery
    • ঋগ্বেদ ১/১২/১২ – হে অগ্নি, তোমার শুভ্রবর্ণ দীপ্তি দিয়ে সকল দেবতার আহ্বানোপযোগী স্তোত্রের দ্বারা যুক্ত হয়ে আমাদের স্তুতি গ্রহণ কর।
    • ঋগ্বেদ ১/১৪০/১ – পবিত্র জ্যোতিবিশিষ্ট শুভ্রবর্ণতমোনাশী অগ্নির বাসস্থান (যজ্ঞস্থান) বস্ত্রের মতো কুসুমাবৃত কর।
    • ঋগ্বেদ ৫/২/৩ – আমি সোনালী রঙ এর দাঁত বিশিষ্ট শুভ্রবর্ণ আয়ুধতুল্য (জ্বালা) নির্মাণকারী অগ্নিকে স্বস্থান থেকে দেখেছি।
    • ঋগ্বেদ ১০/৬/৩ – অগ্নির দাঁত সোনালী রঙ এর, বিচিত্রদীপ্তিসম্পন্ন অগ্নির কেশ হলুদ রঙ এর অথবা সাদা রঙ এর।
    • ঋগ্বেদ ৩/২/১৩ – বিচিত্রগতি পিঙ্গলবর্ণকেশযুক্ত অগ্নিকে স্তুতি করি।
    • ঋগ্বেদ ১/৪৫/৬ -এ অগ্নি শোচিষ্কেশ অর্থাৎ দীপ্তিময় কেশ যুক্ত।
    • শুক্ল যজুর্বেদ ১৫/১৫ – অগ্নি হরুদ্বর্ণকেশবিশিষ্ট, হরিদ্বর্ণ শ্মশ্রুবিশিষ্ট।
    • ঋগ্বেদ ১/৫৮/৫ – তিনি তপুর্জম্ভ অর্থত শিখারূপ অস্ত্রধারী অথবা শিখারূপ মুখ বিশিষ্ট।
    • ঋগ্বেদ ৫/৭/৭ – তিনি সুবর্ণশ্মশ্রুবিশিষ্ট, উজ্জ্বল দন্তধারী, মহান এবং অপ্রতিহত বলসম্পন্ন।
    • ঋগ্বেদ ১০/৮৭/২ – তিনি অয়োদংষ্ট্র অর্থাৎ লৌহসদৃশ দন্তযুক্ত এবং জিহ্বা দ্বারা রাক্ষস আক্রমণকারী।
    • ঋগ্বেদ ১/১৪৬/১ – পিতামাতার (দ্যাবাপৃথিবীর) ক্রোড়স্থিত, তিন মাথা বিশিষ্ট, সাতটি রশ্মিবিশিষ্ট ও বিকলতারহিত অগ্নিকে স্তব কর।
    • ঋগ্বেদ ৩/৩০/২ – হে অগ্নি, তোমার অন্ন তিন প্রকার, তোমার স্থান তিন প্রকার। হে যজ্ঞ সম্পাদক অগ্নি, তোমার তিনটি জিহ্বা আছে। তোমার তিন প্রকার শরীর দেবগণের অভিলষিত। তুমি প্রমাদরহিত হয়ে সেই তিন শরীর দ্বারা আমাদের স্তুতি পালন কর।
    • ঋগ্বেদ ৩/৬/২ – তুমি মহিমা দ্বারা অন্তরীক্ষ ও পৃথিবী থেকে প্রকৃষ্টতর হও। তোমার অংশভূত সাত জিহ্বাবিশিষ্ট বহ্নিগুলো পূজিত হোক।
    • শুক্ল যজুর্বেদ ১৭/৭৯ – হে অগ্নি, তোমার সাতটি জিহ্বা, সাতজন ঋষি, সাতটি প্রিয়স্থান।
    • মহাভারত আদিপর্ব ২৩১/৫ – সপ্তজিহ্বা ও সপ্তমুখ বিশিষ্ট ক্রর লেলিহান অগ্নি অগ্রসর হচ্ছেন।
    • ঋগ্বেদ ১/৩১/১৩ – হে অগ্নি, তুমি যজমানের পালক, যজ্ঞ বাধাশূন্য করার জন্য কাছে থেকে চার চোখ বিশিষ্ট রূপে দীপ্যমান রয়েছ।
    • ঋগ্বেদ – অগ্নি সহস্রাক্ষ
    • শুক্ল যজুর্বেদ ১৭/৭১ – হে হাজার চোখবিশিষ্ট অগ্নি, তোমার শতসংখ্যক মূর্ধা, শতসংখ্যক প্রাণ, সহস্র ব্যান। একটি মন্ত্রে অগ্নির হাজার শিং আছে।
    • ঋগ্বেদ ৪/৪/১ – অগ্নি ধনুর্ধারী।
    • Sir Charles Eliot তার Hinduism and Buddhism গ্রন্থের p.5-এ লিখেছেন, “তিনি আগুনের মত ভালকানের দেবতা নন, বরং আগুনকেই স্বর্গীয় বলা হয়েছে। তার appearance এর বর্ণনা আসলে anthropomorphic নয়, বরং shining streaming flames এর metaphorical imagery দেখা যায়।”
  • পুরাণ-তন্ত্রের anthromorphism
    • বিষ্ণুধর্মোত্তর – রক্তবর্ণ, জটাধারী, শিখার মালায় ভূষিত, সৌম্য, ত্রিনেত্র, শ্মশ্রুধারি, চতুর্ভুজ, চারিদন্তবিশিষ্ট, ধুম্রবর্ণবসন পরিহিত, বায়ু সারথিশোভিত ধূমচিহ্নাঙ্কিত চারটি শুকপক্ষিশোভিত রথে আরূঢ় অগ্নি মূর্তি নির্মাণ করবে। ইন্দ্রের শচীর মত তার বামে রত্নপাত্রহস্তা স্বাহা থাকবেন। তার দক্ষিণহস্তদ্বয়ে অগ্নিশিখা ও ত্রিশূল এবং বামহস্তে অক্ষমালা থাকবে। তেজের রঙ রক্তবর্ণ হওয়ায় তারও শরীর রক্তবর্ণ হবে।
    • পণ্ডিত অমূল্যচরণ বিদ্যাভূশণ তার গ্রন্থ ভারত সংস্কৃতির উৎসধারা গ্রন্থের পৃ. ১১৪-এ লিখেছে, বাগ্‌দণ্ড, ধিগ্‌দণ্ড, ধনদণ্ড ও বধদণ্ড – এই চারটি দণ্ডের দ্যোতক অগ্নির চারটি দণ্ড। চার শুক চার বেদের দ্যোতক।
    • বিশ্বকর্মাশিল্পশাস্ত্রে অগ্নি মেষারূঢ়।
    • হেমাদ্রিবর্ণিত অগ্নির বর্ণায় অগ্নির বাম উরুর ওপর আসীনা তার পত্নী সাবিত্রী।
    • প্রপঞ্চসারতন্ত্র ৬/৮৮ – “ত্রিনয়ন, অরুণবর্ণ, জটাবদ্ধমস্তক, শুভ্রবসন, রক্তপদ্মাসনাসীন, স্কন্ধবিলম্বিত স্বর্ণহার কৃষানুকে নমস্কার কর।”
    • সৌরপুরাণ – পিঙ্গলবর্ণের ভ্রূ, শ্মশ্রু, কেশ ও অক্ষি; রক্তবর্ণ উদর, স্থূলদেহ, ছাগবাহন, অক্ষসূত্রধারী, শক্তিধারক, সপ্তশিখাবিশিষ্ট।
    • শারদাতিলক ১৪/৯৫ – স্কন্ধবিলম্বিতসুবর্ণমাল্য ও রক্তবর্ণমাল্যধারী, চন্দনে শোভিত, শিখাপুঞ্জরূপী, জটাকলাপশোভিতমস্তক, শুভ্রবস্ত্রপরিহিত; শক্তি, স্বস্তিক, দর্ভমুষ্টি, জপমালা ও ঘৃতপূর্ণ শ্রুক (কোশা) হস্তে ধারণকারী; ত্রিনয়ন রক্তবর্ণ অগ্নিকে বন্দনা করি।
    • মহানির্বাণতন্ত্র ৯/২১ – প্রভাতসূর্যতুল্য, সপ্তজিহ্বা ও দুই মস্তকবিশিষ্ট, ছাগারোহী, শক্তিধারী, জটামুকূটশোভিত অগ্নিকে ভজনা কর।
    • তন্ত্ররাজতন্ত্র ৪৬/৬ – রক্তপদ্মসদৃশ অরুণবর্ণ, হস্তে স্রুব, শক্তি, বর ও অভয়; অমিতকিরণসম্পন্ন অমিতগতিচঞ্জল নেত্রত্রয়সমন্বিত অগ্নি তোমাদের রক্ষা করুন।
    • প্রপঞ্চসারতন্ত্র ১৬/২৮ – শক্তিস্বস্তিকপাশ অংকুশ, বরদ এবং অভয়মুদ্রা হস্তে ত্রিমুখ, মুকুট প্রভৃতি বিবিধ অলঙ্কারে অলঙ্কৃত পাবক প্রসন্ন হয়ে তোমাদের রক্ষা করুন।
    • মৎস্যপুরাণ ২৬১/৯-১২ – দীপ্ত সুবর্ণতুল্যদেহধারী, অর্ধচন্দ্রাসনে অবস্থিত, প্রভাতসূর্যতুল্য তার মুখটিও নির্মাণ করতে হবে। যজ্ঞোপবীতধারী, দীর্ঘকেশধারী, বাককরে কমণ্ডলু, দক্ষিণহস্তে জপমালা, শিখাসমূহসংযুক্ত, উজ্জ্বল ও শ্রেষ্ঠ অজবাহন (অগ্নিপ্রতিমা নির্মাণ করবে)।
    • তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ ৩/৮/২৩ – অগ্নির উদ্দেশ্যে ছাগবলির উল্লেখ আছে। গোভিলগৃহ্যসূত্র ৩/২/৫১ – অগ্নি যজ্ঞের দক্ষিণা হিসেবে ছাগ ও সূর্যাগ্নির অপর মূর্তি ইন্দ্র-যজ্ঞের দক্ষিণা হিসেবে মেষদানের ব্যবস্থা আছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পূষা ও ছাগবাহনকে অনেকে সূর্যের নামান্তর বা রূপান্তর বলেন। মণ্ডলান্তর্বর্তী সূর্য বা বর্ষচক্রে পরিক্রমণরত সূর্য বেদে একপাদ অজ বা ছাগ নামে অভিহিত। মহাভারতে অগ্নির বিবরণও অনুরূপ। E. W. Hopkins তার Great Epics of India গ্রন্থে মহাভারত বর্ণিত অগ্নি সম্পর্কে লিখেছেন, “বায়ু দেবতা অনিলের পুত্র অনল হিসেবে অগ্নিকে সাতটি লাল জিহ্বাবিশিষ্ট হিসেবে বর্ণনা করা অয়েছে, সেই সাথে তার সাতটি লাল ঘোড়া আছে, সাতটি মুখমণ্ডল আছে, একটি বিশাল মুখ আছে, লাল ঘাড় আছে, মধু রঙ এর চোখ আছে, উজ্জ্বল আলো দানকারী চল আছে এবং সোনালী ঘোড়া আছে। তিনি প্রথম অন্ধকার দূরীভূত করেন, যাকে ব্রহ্মা তৈরি করেছেন।”

অগ্নির পূজা

ভারতবর্ষে ব্রাহ্মণ্য ও বৌদ্ধ ধর্মে অগ্নিপূজা : যুগের পরিবর্তনে এবং বৌদ্ধরভাবে যাগযজ্ঞের জটিল ক্রিয়াপদ্ধতি ক্রমশ” অপ্রচলিত হয়ে যায়। হিন্দুধর্মের পুনরুত্থানকালে পৌরাণিকযুগে প্রধানতঃ গুপ্ত রাজাদের রাজত্বকালে বিভিন্ন দেবতার মূর্তিপূজার ব্যাপক প্রচলন হয়। এই সময়েই সম্ভবত অগ্নিরও মূর্তিপূজা প্রচলিত হয়। ছাগবাহন ও মেষবাহন শ্মশ্রুমণ্ডিত অগ্নির প্রস্তরমূর্তি নানাস্থানে পাওয়া গেছে। কিন্তু আরও পূর্বে খ্রি.পূ. ১ম ও খ্রিস্টীয় ১ম শতকে অগ্নির মূর্তিপূজার প্রচলন ছিল বলে মনে হয়। শুঙ্গবংশীয় মিত্ররাজাদের অন্যতম অগ্নিমিত্র ও ভানুমিত্রের তাম্রমুদ্রায় রেলিং ঘেরা বেদির ওপর দণ্ডায়মান অগ্নির মূর্তি অঙ্কিত আছে। অগ্নির মস্তকে ৫টি কিরণ অঙ্কিত, এই ৫টি কিরণ অগ্নির পঞ্চশিখা (Ancient Indian Numismatics – S. K. Chakravarti, p. 206)। পাহাড়পুরের মন্দিরগাত্রের দুই পাশে শিখামণ্ডিত জপমালা ও কমণ্ডলুধারী দ্বিভুজ অগ্নির মূর্তি আছে। ত্রিবাঙ্কুরের কান্দিয়ুরে শিবমন্দিরে দুটি ছাগমুণ্ড সমন্বিত সপ্তভূজ ও ত্রিপাদ বিশিষ্ট অগ্নির মূর্তি বিদ্যয়ান। বিহারে প্রাপ্ত মধ্যযুগীয় একটি অগ্নি-বিগ্রহ দ্বিভুজ, স্বিপদ, স্থূলোদর, শ্মশ্রুমণ্ডিত মেষ বা ছাগবাহন। দক্ষিণহস্তে জপমালা ও বামহস্তে কমণ্ডলুধারী উপবীত, মুকুট, কুণ্ডল, কণ্ঠহার, কেয়ূর ও সর্বাঙ্গে শিখাশোভিত। (Hindu Divinities in Japanese Buddhist Pantheon). বৌদ্ধ মহাযানের অন্তর্ভুক্ত বজ্রযান সম্প্রদায়ের উপাস্য দেবদেবীদের মধ্যে বহু হিন্দু দেবতাও প্রবেশাধিকার লাভ করেছিলেন। এই সকল দেবতার মধ্যে অগ্নিও আছেন। অষ্টদিক্‌পালের অন্তর্গত অগ্নি বৌদ্ধদেবতাদের পংক্তিতে স্থান করে নিয়েছেন। বৌদ্ধদেবতা অগ্নি সম্পর্কে বিনয়তোষ ভট্টাচার্য তার বৌদ্ধ দেবদেবী পৃ. ১১৪-এ লিখেছেন, “অগ্নিকোণের অধিপতি অগ্নিদেব রক্তবর্ণ, একমুখ, দ্বিভুজ এবং ছাগবাহন। দুই হাতে যজ্ঞপাত্র, শ্রুব ও কমণ্ডলু ধারণ করেন। এর লাল রঙ অমিতাভের দ্যোতক।” হিন্দু ধর্মচর্যা থেকে যাগযজ্ঞ কখনও বিলুপ্ত হয়নি। গুপ্তরাজাদের মুদ্রা থেকেই প্রমাণ পাওয়া যায় যে সে যুগে মূর্তিপূজার সঙ্গে যাগযজ্ঞেরও অনুষ্ঠান হতো। পরবর্তীকালে, এমনকি আধুনিককালেও উপনয়ন, বিবাহ ইত্যাদি সামাজিক কর্মের অঙ্গ হিসেবে এবং মূর্তিপূজার অঙ্গ হিসেবে হোমের বা যজ্ঞের প্রচলন আছে। বৈদিক যজ্ঞের সংক্ষিপ্ত প্রকরণ হিসেবে হোম-যজ্ঞ আজও অনুষ্ঠিত হয়। আধুনিক কালে মূর্তি গড়ে অগ্নিপূজার প্রচলন দেখা যায়না। অগ্নি ও ব্রহ্মার অভিন্নতা স্বীকৃত হওয়ায় অগ্নির অপর মূর্তি হিসবী ব্রহ্মা পূজা কোথাও কোথাও প্রচলিত আছে। অগ্নিতে আহুতি দেবার মন্ত্র স্বাহা। যজ্ঞাগ্নির সাথে স্বাহা মন্ত্র অবিচ্ছেদ। তাই স্বাহা হলেন অগ্নির পত্নী। ঋগ্বেদ ৮/৬৩/৫-এ অগ্নির নাম স্বাহাপতি। মহাভারতে বনপর্ব ২০৪ অঃ-তে দক্ষকন্যা স্বাহা ছয় ঋষিপত্নীর বেশে ছয়বার কামার্ত অগ্নির সাথে মিলিত হয়েছিলেন এবং অগ্নির তেজে ষড়াননের জন্ম দিয়েছিলেন। মোহেন-জো-দারোর ধ্বংসাবশেষের মধ্যে যজ্ঞশালার অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হয়েছে। তাই ৩০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দেও ভারতবর্ষে অগ্নির উপাসনা ছিল বলে অনেকে দাবি করেন।

প্রাচীন ইরানীয়দের অগ্নিপূজা : অগ্নি উপাসনা পৃথিবীর আদিমকাল থেকেই বহু দেশে বহু জাতির মধ্যে প্রচলিত ছিল, এখনও আছে। ঋগেদের প্রধান যাগ হলো সোম যাগ। আবেস্তায় যজ্ঞকে ‘হওম’ (Haoma) বলা হয়েছে। যজ্ঞকে ভারতীয় ভাষাতেও হোম বলা হয়। Keith তার Religion and philosophy of the Veda গ্রন্থের p. 161-এ বলেছেন, “আবেস্তার অগ্নি শক্তিশালী ও বিকশিত ritual এর কেন্দ্র। অগ্নি-পুরোহিত Athravan ও বৈদিক অথর্বানদের উৎপত্তি স্পষ্টতই এক।” Sir Charles Eliot তার Hinduism & Buddhism গ্রন্থের p. 63-এ বলেছেন, “আবেস্তায় sacrific-কে Yasna বলে, হোতৃ-পুরোহিত হলেন Zoatar. Atharvan হলো Athravan, Mitra হলো Mithra.” John Rhinnels তার Persian Mythology গ্রন্থের p. 37-এ বলছেন, ইরানীয়গণ অগ্নি উপাসক ছিলেন। জরথুস্ত্রপন্থীদের কাছে আতর্‌ (Atar) বা অগ্নির স্থান সর্বোচ্চ। বৈদিক আর্যদের মতো ইরানীয়গণ অগ্নিতে যজ্ঞীয় দ্রব্যাদি প্রদান করত ও বিশ্বাস করত যে অগ্নি দূতরূপে দেবতাদের কাছে উপহৃত দ্রব্যাদি পৌঁছে দেন। সূর্য, বিদ্যুৎ ও অগ্নিরূপে তার তিন মূর্তি। আতর্‌ যজ্ঞকর্তাকে সুখ সম্পদ দান করে থাকেন। তিনি অহুরমজ্‌দর পুত্র এবং অহুরমজ্‌দর সত্যাদেশের প্রতীক। জম্যদ্‌থস্‌ত্‌ উল্লিখিত কাহিনী অনুসারে আতর্‌ কঠোর সংগ্রামে অজিদহক্‌কে পরাজিত করেছিলেন। কুষাণ মুদ্রায় অথ্‌শো (Athsho), পারশক আতর্‌ বা অগ্নির শ্মশ্রুমণ্ডিত মূর্তি অঙ্কিত দেখা যায়। একটি মুদ্রায় অগ্নিদেব পাশধারী দ্বিভুজ দণ্ডায়মান, তার স্কন্ধদেশ থেকে শিখা নির্গত হচ্ছে। অন্য একটি মুদ্রায় অথ্‌শো হাতুড়ি ও অন্যান্য অগ্নি প্রজ্জ্বলন ও সংরক্ষণের যন্ত্রাদি বহন করছেন।

গ্রিক সহ ইউরোপীয়দের অগ্নিপূজা : অমূল্যচরণ বিদ্যাভূষণ তার ভারত সংস্কৃতির উৎসধারা গ্রন্থের পৃ. ৮৪-তে বলছেন, “ইউরোপে গ্রিকদের মধ্যে Vulcan, Hephaistos, Hestia অগ্নিদেবতা। প্রাচীন প্রুশিয়া, রুশ ও লিথুনিয়ান জাতি অগ্নির পূজা করত। এখনও ইউরোপে অগ্নিপূজার ছিঁটেফোঁটা আছে।  দুর্গাদাস লাহিড়ী তার পৃথিবীর ইতিহাস ১ম খণ্ডে বলছেন, “ল্যাটিন ভাষায় অগ্নিকে বলা হতো ইগ্নিস (Ignis), এবং স্লাভোনিক ভাষায় ওগ্নি (Ogni)। প্রাচীনকালে প্রুশিয়া, রাশিয়া ও লিথিয়ানীয়েরা অগ্নিপূজক ছিল। প্রাচীন গ্রিকরাও অগ্নি উপাসক ছিল। গ্রিকদের দ্বারা বিভিন্ন নামে অগ্নি উপাসিত হতেন। ঋগ্বেদ ১/১২/৬-এ অগ্নিকে ‘যুবা’ বলা হয়েছে। কোন কোন স্থলে তিনি যবিষ্ঠ। কোন কোন পণ্ডিত মনে করেন যে গ্রিক দেবতা Hephaostos যবিষ্ঠ শব্দের কগনেট। এ ছাড়াও গ্রিক দেবতা Prometheus ও Phoroneus বৈদিক অগ্নিদেবের বিশেষণ প্রমন্থ ও ভরণ্যু শব্দের কগনেট, এবং Vulcan অগ্নির মূর্ত্যন্তর উল্কা শব্দের কগনেট। (Muir’s Sanskrit Texts – vol. V, p. 199). গ্রীক পুরাণের প্রমিথিউস স্বর্গ থেকে মানবের কল্যাণের জন্য অগ্নি চুরি করে মর্তে এনেছিলেন। হোমারের কাব্য অনুসারে হেফাএস্টাস জিউস ও হেরার পুত্র। হেফাএস্টাস পূর্বদিগাগত অগ্নি দেবতা। (Greek Mythology – Jon Pinsent, p.17). গ্রিকদেবী হেস্‌তিয়াও অগ্নিদেবতা। শুভ্র ভস্মাবৃত জওলন্ত কাঠ কয়লা হেস্‌তিয়ার  প্রতীক। (Greek Myths – Robert Graves – Vol I, p. 75). পৃথিবীর অন্যান্য দেশের অগ্নিপূজা সম্পর্কে Taylor তার Primitive Culture গ্রন্থের p.285-এ বলেছেন, “Estonian bride তার নতুন hearth and home consecrate করে আগুনে বা ওভেনে টাকা ছুড়ে দিয়ে, এই বিষর্জন দেয়া হয় fire mother Tule-Ema এর উদ্দেশ্যে। Carinthian peasant আগুনের মধ্যে lard ছুড়ে দেয় বা গলিয়ে দেয় যাতে আগুন তাদের ঘরবাড়ি না পোড়ায়। Bohemian-দের কাছে আগুনের ওপর থুতু ছেটানো একটি godless বিষয়….”

প্রাচীন ইহুদিদের মধ্যে এবং জাপানে ও মেক্সিকোতে অগ্নিপূজা : প্রাচীন ইহুদিধর্মেরও অগ্নিপূজা একটি প্রধান অঙ্গ ছিল। ইহুদিগণ দেবতা ও পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে অগ্নিতে আহুতি প্রদান করত। ওল্ড টেস্টামেন্টে দেখা যায়, ইহুদিজাতির মধ্যে অগ্নির কাছে সন্তান-সন্ততি উৎসর্গ করার প্রথা ছিল।” জাপানে তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্মে অগ্নির একটি সম্মানজনক স্থান আছে। অগ্নি এখানে জ্ঞানরাজ্যে প্রতীক, কিংবা বলা যায়, অগ্নি জ্ঞানেরই বিগ্রহ। জাপানে ক-তেন (Ka-ten) বা অগ্নি দ্বাদশ রক্ষাকারী দেবতার অন্যতম এবং দক্ষিণপূর্ব কোণের রক্ষক। জাপানী ক-তেন চতুর্ভুজ বা দ্বিভুজ, সন্ন্যাসীর বেশধারণকারী – কোথাও শিখাবেষ্টিত – কোথাও কোথাও নীলমেষ বাহন। শিমন্‌জকু সংকলিত শোসেসতু ফুডো কি (Shosestu-Fudo-Ki)-র মতে প্রজ্বলিত অগ্নির পটভূমিকায় ক-তেনের মূর্তি হবে তপস্যারত সন্ন্যাসীর। তার কেশ ও শ্মশ্রু সাদা – গাত্রবর্ণ ঘন লাল – তার দেহ শোভিত হবে রত্নখচিত মুকুট, কণ্ঠহার, বাজু ও অন্যান্য অলঙ্কারে, তার কটি বেষ্টিত স্বল্প বসন রক্তবর্ণ, তিনি চতুর্ভুজ, – প্রথম দক্ষিণ হস্তদ্বয়ে ত্রিভুজাকৃতি বেদী ও জপমালা, বামহস্তদ্বয়ে জলপাত্র (কমণ্ডলু) ও যষ্টি। (Hindu Divinities in Japanese Buddhist Pantheoin – D. N. Bakshi – p. 53).  মেক্সিকোর অগ্নিদেবতার নাম Xiuhtechuhtli, তার সঙ্গে নয়জন দেবতা। এই নয়জনের মধ্যে যজ্ঞীয় খড়্গের দেবতা Itztli, সূর্যদেবতা PiltZintecuhtli, শস্যদেবতা Cinteotl, মৃত্যু দেবতা Mictlan-tecuhtli, জল ও পৃথিবীর অধিষ্ঠাত্রী Chalchihuitlicue প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। মেক্সিকোবাসীরা অগ্নিদগ্ধ জীবের দু”খ উপশমের জন্য অগ্নিতে ঔষধ প্রদান করত। মেক্সিকোবাসীদের আরেকটি দেবতা Tezcatlipocas. ইনি প্রধানত বিদ্যুতের মত শক্তির অধিষ্ঠাতা। (Mexican Mythology – Irene Nicholson, p. 46).

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.