গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে পশ্চিমা শহর ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এই বিক্ষোভগুলির ক্ষেত্রে কেবল এগুলোর বিস্তৃতিই উল্লেখযোগ্য নয়, সেই সাথে বিক্ষোভকারীদের তারুণ্য বা তরুণ বয়সের ব্যাপারটাও একটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার। এই প্রবণতাটি জরিপের তথ্য দ্বারা সমর্থিত, যা দেখায় যে আজকের তরুণদের মধ্যে ইসরায়েলের চেয়ে ফিলিস্তিনকে সমর্থন করার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি, যা পুরানো প্রজন্মের সাথে একটি পার্থক্যকে চিহ্নিত করে। এই লেখাটিতে অনুসন্ধান করা হবে যে, ইজরায়েল সম্পর্কে তরুণ প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গি আজকের পুরানো প্রজন্ম এবং অতীতের তরুণদের থেকে কীভাবে আলাদা, সেই সাথে এদের দৃষ্টিভঙ্গির এই পরিবর্তনের পেছনের কারণগুলিও পরীক্ষা করা হবে।
জরিপের তথ্যগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, ইসরায়েলের চেয়ে ফিলিস্তিনের প্রতি তরুণদের অগ্রাধিকার পুরোপুরি নতুন নয়। গ্যালাপ জরিপে দেখা গেছে, ২০০১ সাল থেকে, যখন তারা প্রজন্মভেদে আবেগ পরিমাপ করতে শুরু করে, তরুণ আমেরিকানরা ধারাবাহিকভাবে পুরানো প্রজন্মের তুলনায় ফিলিস্তিনের প্রতি বেশি সহানুভূতি দেখিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০০২ সালে, ইসরায়েলের প্রতি নিট সিম্প্যাথি (অর্থাৎ, ফিলিস্তিনের তুলনায় ইসরায়েলের পক্ষে থাকার হার) জেনারেশন এক্স (২৩ থেকে ৩৭ বছর বয়সী) এর জন্য ৩৬%, বেবি বুমারদের (৩৮ থেকে ৫৬ বছর বয়সী) জন্য ৪৩% এবং সাইলেন্ট জেনারেশনের (৫৬ বছরের বেশি বয়সীদের) জন্য ৪৮%। এই তথ্য থেকে জানা যায় যে, ২০০২ সালে সমস্ত প্রজন্ম থেকেই মানুষ ইসরায়েলপন্থী দৃষ্টিভঙ্গির দিকে ঝুঁকলেও পুরানো প্রজন্মগুলি তরুণ প্রজন্মগুলির তুলনায় ইসরায়েলের দিকে বেশি ঝুঁকেছিল। ইসরায়েলের চেয়ে ফিলিস্তিনের প্রতি তরুণ প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক সহানুভূতিতে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিয়ে বৈশ্বিক মতামতের এই বিবর্তিত গতিশীলতা উপলব্ধি করার জন্য এই পরিবর্তনের পেছনের কারণগুলি বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত, বিশেষ করে বিভিন্ন প্রজন্মের মধ্যে মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গির সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলি উল্লেখযোগ্য। ২০০২ সালে, বিভিন্ন বয়সের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সহানুভূতির পার্থক্য ন্যূনতম ছিল। কিন্তু, হামাসের হামলার কয়েক মাস আগে পরিচালিত সাম্প্রতিক গ্যালাপ জরিপগুলি একটি সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থা প্রকাশ করে, যেখানে দেখা যায়, মিলেনিয়াল এবং জেন এক্সের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি নিট সিম্প্যাথিতে এখন ব্যবধান ৩০ পয়েন্টেরও বেশি, আর মিলেনিয়াল এবং বেবি বুমারদের মধ্যে ব্যবধান প্রায় ৫০ পয়েন্টের। উপরন্তু, আমেরিকার ইতিহাসে এবারে প্রথমবারের মতো, তরুণ প্রজন্মে ইসরায়েলের চেয়ে ফিলিস্তিনকে সমর্থন করার সম্ভাবনা বেশি। গ্যালাপ জরিপ ইঙ্গিত দেয় যে মিলেনিয়ালদের ইসরায়েলের প্রতি মোট সহানুভূতি মাইনাস দুই, যা এই গোষ্ঠীর মধ্যে ফিলিস্তিনের প্রতি বৃহত্তর সহানুভূতির ইঙ্গিত দেয়। এটা অনুমান করা যুক্তিসঙ্গত যে জেনারেল জেড, তাদের পছন্দসই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিতে ফিলিস্তিনপন্থী কন্টেন্টের প্রসার এবং সাম্প্রতিক হার্ভার্ড ক্যাপস-হ্যারিস জরিপের ফলাফল দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ফিলিস্তিনিদের প্রতি আরও বেশি ঝুঁকছেন, বিশেষত ২৫ থেকে ৩৪ বছর বয়সীদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি।
এই জরিপের তথ্য দেখায় যে ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে ৫২% বিশ্বাস করে না যে হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের পদক্ষেপ ন্যায়সঙ্গত। কিন্তু সমগ্র আমেরিকা জুড়ে এই বিশ্বাস মাত্র ২১%। মানে তরুণদের বিশ্বাস আমেরিকার ওভারঅল বিশ্বাস থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত। উপরন্তু, এই বয়সের ৬৪% মনে করেন, উভয় পক্ষের অবস্থানই সমানভাবে ন্যায়সঙ্গত, বৃহত্তর জনসংখ্যার মধ্যে মাত্র ৩৯% এর তুলনায়। এটি উল্লেখযোগ্য যে, যদিও ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ২৯% হামাসকে সমর্থন করে (যা অন্য যে কোনও বয়সের গ্রুপের চেয়ে বেশি), তরুণ আমেরিকানরা নন-ভায়োলেন্সের পক্ষে অগ্রাধিকার প্রদর্শন করে ও ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সীদের বেশিরভাগই নিরপেক্ষ অবস্থানের পক্ষে রয়েছে। এই প্রবণতা শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই সীমাবদ্ধ নয়। দ্য ইকোনমিস্টের জরিপে দেখা গেছে, ইউরোপ জুড়ে তরুণরাও পুরনো প্রজন্মের তুলনায় ইসরায়েলপন্থী মনোভাব কম দেখায় এবং ফিলিস্তিনপন্থী দৃষ্টিভঙ্গির দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ে। যুক্তরাজ্যে, সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে যে ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের ইসরায়েলপন্থীদের তুলনায় ফিলিস্তিনপন্থী হওয়ার সম্ভাবনা চারগুণ বেশি, যা যুক্তরাজ্যের ঐতিহাসিকভাবে ইসরায়েলপন্থী অবস্থান এবং দেশটিতে সামগ্রিকভাবে ইসরায়েলপন্থী মনোভাবের কারণে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
তরুণরা কেন ফিলিস্তিনপন্থী দৃষ্টিভঙ্গির দিকে বেশি ঝুঁকছে, এই প্রশ্নটি জটিল এবং বহুমুখী। তবে নিচে এর তিনটি মূল কারণ উল্লেখ ও বর্ণনা করা হচ্ছে বিষয়টি ব্যাখ্যা করার জন্য –
Leave a Reply