কার ও ইভি ইন্ডাস্ট্রিতে চীনের সাম্প্রতিক আধিপত্য, ইউরোপের উদ্বিগ্নতা, এবং ইইউ বনাম চীনের সম্ভাব্য বাণিজ্য-যুদ্ধ

আধুনিক ইতিহাসের বেশিরভাগ সময়, বৃহত্তম অটোমোবাইল রফতানিকারক দেশ ছিল জাপান এবং জার্মানি। এক্সপোর্ট জায়ান্ট হিসাবে তাদের সাফল্য ভক্সওয়াগেন, বিএমডব্লিউ এবং মার্সিডিজ-বেঞ্জের মতো জার্মান ব্র্যান্ড এবং টয়োটা, হোন্ডা এবং নিসানের মতো জাপানি ব্র্যান্ডগুলিকে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত করে তুলেছে। গাড়ি উভয় দেশের অর্থনৈতিক পরিচয়ের অংশ হয়ে উঠেছে। কিন্তু গত কয়েক বছরে, চীনের ডোমেস্টিক কার ইন্ডাস্ট্রি, এবং বিশেষত দেশটির বৈদ্যুতিক যানবাহন বা ইলেকট্রিক ভেহিকল বা ইভি ইন্ডাস্ট্রি বলতে গেলে বিস্ফোরিত হয়েছে। এই বছরের শুরুতে চীন জার্মানি এবং জাপান উভয়কেই ছাড়িয়ে বিশ্বের বৃহত্তম যানবাহন রফতানিকারক বা ভেহিকল এক্সপোর্টার হয়ে ওঠে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, গাড়ি রফতানিকারক হিসাবে চীনের সাম্প্রতিক দ্রুত উত্থান, বিশেষত ইলেকট্রিক ভেহিকলে তাদের উত্থান ইউরোপের কার ব্র্যান্ডগুলিকে মার্কেটের বাইরে পাঠিয়ে দেবার হুমকিতে ফেলছে, যার কারণে ইইউ বর্তমানে তার অভ্যন্তরীণ শিল্পকে রক্ষা করার জন্য চীনের বিরুদ্ধে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করার কথা বিবেচনা করছে। তাই এখানে কার ইন্ডাস্ট্রিতে চীনের সাম্প্রতিক উত্থান, এই উত্থানের কারণ, ইউরোপীয় রাজনীতিবিদদের এটি নিয়ে উদ্বিগ্নতার কারণ, এবং ইউরোপের পক্ষে তার কার ইন্ডাস্ট্রিকে রক্ষা করা সম্ভব কিনা তা আলোচনা করা হবে।

কার ও বিশেষ করে ইভি ইন্ডাস্ট্রিতে চীনের সাম্প্রতিক উত্থান

আধুনিক ইতিহাসের বেশিরভাগ সময়ে দুটি বৃহত্তম গাড়ি রফতানিকারক – জাপান এবং জার্মানির চেয়েও চীন এগিয়ে গিয়েছে, যার এখন একটি বিশাল ডোমেস্টিক কার ইন্ডাস্ট্রি রয়েছে। (জার্মানি ও জাপান ছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও গাড়ি নির্মাতাদের মধ্যে আছে ফোর্ড এবং জেনারেল মোটোর্স, কিন্তু তারা প্রধানত তাদের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ বাজারে বিক্রি করে, তাই এদের রফতানি সীমিত।) গত কয়েক বছরে চীনের দ্রুত উত্থানের সাথে সাথে পূর্বের সমস্ত হিসাব পরিবর্তিত হয়ে গেছে। খুব বেশি দিন হয়নি যখন চীন কার্যত কোন গাড়িই রফতানি করত না। চীনা সংস্থাগুলি ২০০০ এর দশকের শেষের দিকে বাজারে প্রবেশের চেষ্টা করেছিল, তবে এর কম্বাসশন ইঞ্জিনের গাড়িগুলি পশ্চিমা দেশগুলোর বড় বড় কার কোম্পানিগুলোর সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারেনি (যদিও এটি যে কয়েকটি গাড়ি ব্যাপকভাবে রফতানি করেছিল সেগুলো কিছু এশীয় প্রতিবেশীদের কাছে গিয়েছিল)। কিন্তু গত কয়েক বছরে সব কিছু বদলে গেছে এবং চীন হঠাৎ করে আরও বেশি করে গাড়ি রফতানি শুরু করেছে। ২০২১ সালে, চীনের গাড়ি রফতানি মূলত দ্বিগুণ হয়ে প্রায় ৮ লক্ষ থেকে ১৬ লক্ষ হয়েছে। তারপর ২০২২ সালে চীন জার্মানিকে ছাড়িয়ে জাপানের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গাড়ি রফতানিকারক হয়ে ওঠে এবং তারপরে ২০২৩ সালে, মানে এই বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে দেশটি জাপানকেও অতিক্রম করে বিশ্বের বৃহত্তম গাড়ি রফতানিকারক হয়ে ওঠে। সরকারী পরিসংখ্যান দাবি করে যে, চীন এই সময়কালে ১০.৭ লক্ষ যানবাহন রফতানি করেছে, যা ২০২২ সালের সালের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় ৫৮% বেশি এবং জাপানের চেয়ে প্রায় এক লক্ষ বেশি।

বৈদ্যুতিক যানবাহন বা ইভি এর ক্ষেত্রে চীন আরও এগিয়ে রয়েছে। এর কারণ চীন আসলে ২০১৫ সালে ইভি এর বৃহত্তম উত্পাদনকারী হয়ে ওঠে, তবে সেই সময় ইভি মূলত চীনের অভ্যন্তরীণ বাজারে বিক্রি হতো। আর আশ্চর্যজনকভাবে চীনা ভোক্তারা ইতিমধ্যেই ইভি বা ইলেকট্রিক ভেহিকলের প্রতি খুব আগ্রহী, এবং ইভিগুলি বর্তমানে দেশের সমস্ত ভেহিকল বিক্রয়ের প্রায় ৩০%। অথচ ২০১৯ সালেও ইভি এর এই বিক্রির হার সমস্ত ভেহিকল বিক্রয়ের মাত্র ৫% ছিল। আর চীনের এই ৩০% এর স্ট্যাটিস্টিক্সটা যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের চেয়ে অনেক বেশি, যেগুলোতে ইভি বিক্রির হার যথাক্রমে ২০% ও ১০%। এবং স্পষ্টতই, চীনা ভোক্তারা পশ্চিমা ভোক্তাদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে দরিদ্র হওয়া সত্ত্বেও এটি ঘটেছে (২০২২ সালে গড় চীনা পরিবারের আয় ছিল মাত্র প্রায় ৩৭ হাজার ইউয়ান, মানে প্রায় পাঁচ হাজার ডলার)। কিন্তু গত কয়েক বছরে চীনা কোম্পানিগুলো এই ডোমেস্টিক মার্কেটের বাইরে গিয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ইভি বাইরে রফতানি করা শুরু করে। গত বছর, তাদের রফতানি বছরে ১৬৫% বৃদ্ধি পাওয়ার পরে, চীন বিশ্বের বৃহত্তম ইভি রফতানিকারক হিসাবে জার্মানিকে ছাড়িয়ে গেছে এবং এর ইভি রফতানি এই বছর আবার দ্বিগুণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে, যার অর্থ এই যে, চীনের ইভি বিক্রয় শীঘ্রই বিশ্বব্যাপী সমস্ত ইভি বিক্রয়ের ৫০% হয়ে যেতে পারে।

কার ইন্ডাস্ট্রিতে চীনের এই উত্থানের কারণ

তো এখন প্রশ্ন হলো, চীনের কার ইন্ডাস্ট্রি ও এর মধ্যে বিশেষ করে ইভি ইন্ডাস্ট্রি কিভাবে এত উন্নতি করছে? আমি এর উত্তর পাঁচটি পয়েন্টে দিচ্ছি –

প্রথমত, ইউক্রেনের যুদ্ধ থেকে চীন নিঃসন্দেহে উপকৃত হয়েছে। যেহেতু পশ্চিমা গাড়ি সংস্থাগুলি রাশিয়ার বাজার থেকে সরে এসেছে এবং স্যাঙ্কশনগুলো রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ উত্পাদনকে পঙ্গু করে দিয়েছে, তাই রাশিয়ান ভোক্তারা চীনা সংস্থাগুলির দিকে ঝুঁকছে। এই হিসাবে, চীন এই বছরের প্রথম প্রান্তিকে রাশিয়ায় ১.১২ লক্ষ ভেহিকল সরবরাহ করেছে, আর প্রায় একই পরিমাণ ভেহিকল তারা ২০২২ সালের পুরো সময়েই সেখানে বিক্রি করেছিল।

দ্বিতীয়ত, চীনের ইভি রফতানির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ টেসলা থেকে আসে, যা ২০২২ সালে চীনের সমস্ত ইভি রফতানির প্রায় ৫০% এর জন্য দায়ী। এর পেছনে আছে মূলত সাংহাইতে নির্মিত গিগাফ্যাক্টরি, যা বর্তমানে বছরে প্রায় ১২.৫ লক্ষ ভেহিকল উত্পাদন করতে সক্ষম। তবুও, দেশীয় চীনা সংস্থাগুলি এগিয়ে চলেছে এবং এই বছরেই চীনা ব্র্যান্ডগুলি চীনে অবস্থিত বিদেশী ব্র্যান্ডগুলিকে ছাড়িয়ে যাবে। কিন্তু কেন ছাড়িয়ে যাবে? চীন কার কোম্পানিগুলোরই বা এত উন্নতি করার কারণ কী? এখানেই আসছে তৃতীয় ও চতুর্থ পয়েন্ট…

তৃতীয়ত, চীনের অন্যান্য বড় রফতানিকারকদের মতো এই কার কোম্পানিগুলোও সিসিপি বা চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টি থেকে উদার রাষ্ট্রীয় ভর্তুকি পায়, ও সেই সাথে চীনের অভ্যন্তরীণ উত্পাদনের অসাধারণ একটি পরিবেশ আছে, যা খুব সহজেই বিভিন্ন দেশ থেকে বিনিয়োগ আকর্ষণ করে। এমনকি কার ইন্ডাস্ট্রিতে চীনা কোম্পানিগুলোর রাইভাল জার্মান কোম্পানিগুলোরও চীনে বিপুল পরিমাণে বিনিয়োগ রয়েছে! বিনিয়োগের এই মাত্রাটা অবশ্য বিস্ময়কর কিছু নয়। চীনের একটি চিত্তাকর্ষক ম্যানুফ্যাকচারিং বেস রয়েছে, আর সেজন্যই দেশটি ‘ফ্যাক্টরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড’ হিসাবে পরিচিত।

চতুর্থত, চীনের ইভি ইন্ডাস্ট্রি উপকৃত হয়েছে দেশটির ব্যাটারি খাত থেকেও। চীন সবচেয়ে উন্নত ব্যাটারি ইন্ডাস্ট্রি পেয়েছে, যা ইভি উত্পাদনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চীন আক্ষরিক অর্থেই অন্য যে কোনও দেশের তুলনায় ১০ গুণ বেশি ব্যাটারি উত্পাদন করে, এবং দেশটি বিশ্বব্যাপী উত্পাদিত সমস্ত ব্যাটারির ৭৭% এর জন্য দায়ী, এবং এটি মূলত লিথিয়াম উত্পাদন থেকে শুরু করে ক্যাথোড এবং অ্যানোড পর্যন্ত সাপ্লাই চেইনের প্রতিটি ধাপে আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে। এর ফলে চীনা কোম্পানিগুলো ব্যাটারির ক্ষেত্রে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর তুলনায় অনেক বেশি ফ্লেক্সিবল হতে পেরেছে। আমরা জানি রাশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম নিকেল উত্তোলনকারী, আর তাই রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবার পর নিকেল-ভিত্তিক ব্যাটারিগুলি ব্যয়বহুল হতে শুরু করেছিল। কিন্তু চীন ব্যাটারি কোম্পানিগুলো বেশি ফ্লেক্সিবল ছিল বলেই তারা এই অবস্থায় দ্রুত নিকেল-ভিত্তিক ব্যাটারি থেকে লিথিয়াম-ভিত্তিক ব্যাটারিতে সুইচ করতে সক্ষম হয়েছিল।

পঞ্চমত, অনেক পশ্চিমা কার কোম্পানিগুলো ইভি তৈরিতে তেমন ভাল নয় এবং তারা যে ইভিগুলি উত্পাদন করে সেগুলি প্রায়শই ধনী ভোক্তাদেরকে টার্গেট করে বানানো হয়। আর তাই সেগুলো হাইয়ার এন্ড মডেলের ইভি। অন্যদিকে চীনা কার কোম্পানিগুলো সস্তা ও এক্সসিবল ইভি উত্পাদন করে।

ইউরোপীয় রাজনীতিবিদদের এটি নিয়ে উদ্বিগ্নতা

স্বাভাবিকভাবেই কার কোম্পানিতে সম্প্রতি চীনের এই অসাধারণ উত্থান পশ্চিমের জন্য খুব একটা ভাল লক্ষণ নয়, যারা এর ফলে বিশিল্পায়ন বা ডিইন্ডাস্ট্রিয়ালইজেশনের ক্রমবর্ধমান হুমকি সম্পর্কে আরো বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেক সদস্য রাষ্ট্র ভয় পাচ্ছে যে, চীনে উত্পাদিত এই সস্তা ইভিগুলোর এই আকস্মিক আগমন ইউরোপীয় উত্পাদকদের হ্রাস করবে এবং সম্ভবত তাদেরকে মার্কেট থেকে সরিয়ে দেবে। তাই এই মাসের শুরুতে পলিটিকো রিপোর্ট করে, ইউরোপের অভ্যন্তরীণ অটোমোবাইল শিল্পকে রক্ষা করার জন্য ইইউ চীনের সাথে গাড়ি-কেন্দ্রিক বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করার কথা বিবেচনা করছে, আর ফরাসি রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এই বাণিজ্য যুদ্ধে বিশেষভাবে আগ্রহী। এখন প্রশ্ন হল কেন ইউরোপীয় রাজনীতিবিদরা গাড়ি নিয়ে এত উদ্বিগ্ন? কেনই বা ইউরোপীয় ভোক্তারা জাস্ট সস্তা চীনা ইভি পছন্দ করে বলে ম্যাক্রোঁ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৃহত্তম বিজনেস পার্টনার চীনের সাথে বাণিজ্য-যুদ্ধ শুরু করার কথা ভাবছেন? কেনই বা এই শিল্পে চীনের উত্থান ভূ-রাজনীতিতে একটি উত্তপ্ত বিষয় হয়ে উঠেছে? আমি এটারও পাঁচটি কারণ দিচ্ছি –

প্রথমত, কার ইন্ডাস্ট্রি একটি বিশাল ইন্ডাস্ট্রি, এবং সম্ভবত ইন্ডাস্ট্রিটির এই বিশালতা অব্যাহত থাকবে। যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানি সহ অনেক পশ্চিমা দেশগুলির জন্য গাড়ি আসলে মূল্যের দিক থেকে তাদের এক নম্বর আমদানি, এমনকি এটি তেলের মতো বড় পণ্যগুলির চেয়েও এগিয়ে। এবং বিশ্বব্যাপী মোটরগাড়ি শিল্প গত বছর প্রায় তিন ট্রিলিয়ন ডলার রাজস্ব অর্জন করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন সহ বিশ্বজুড়ে রাজনীতিবিদরা এই মুহুর্তে তাদের ডোমেস্টিক কার ইন্ডাস্ট্রিকে বজায় রাখতে বিশেষভাবে আগ্রহী, কারণ আগামী বছরগুলিতে বৈদ্যুতিক গাড়ি বা ইভি এর ব্যবসা বিশাল হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ব্লুমবার্গ বলছে, ইভি ইন্ডাস্ট্রি ২০৫০ সালের মধ্যে ৪৬ ট্রিলিয়ন ডলারের বাজার হবে। তাই ইউরোপ ও আমেরিকার রাজনীতিবিদরা আশা করেন যে, তারা যদি দেশীয় ইভি শিল্প গড়ে তুলতে পারে তবে তা ব্যাটারি উত্পাদন এবং সবুজ হাইড্রোজেন উত্পাদনের মতো অন্যান্য ডোমেস্টিক গ্রিন ইন্ডাস্ট্রিকেও ধরে রাখতে সহায়তা করতে পারে। আর এই সমস্ত শিল্পগুলি দেশকে বিশাল পরিসরের কর্মসংস্থান এবং প্রবৃদ্ধি প্রদান করবে, পাশাপাশি রিশোরিং বা অনশোরিং এর মাধ্যমে দেশগুলো তাদের কৌশলগত নির্ভরতা বা স্ট্র্যাটেজিক ডিপেন্ডেন্সি হ্রাস করবে। এই কারণেই বিশ্বজুড়ে রাজনীতিবিদরা, বিশেষত ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদরা অটোমোবাইল রফতানিকারক হিসাবে চীনের অভূতপূর্ব উত্থান সম্পর্কে এত উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন।

দ্বিতীয় পয়েন্টে যাবার আগে অনশোরিং, রিসোরিং ও স্ট্র্যাটেজিক ডিপেন্ডেন্সির ব্যাপারগুলো একটু ব্যাখ্যা করা দরকার। এই আলোচনা বুঝতে কাজে দেবে। একটি দেশের কোন কোম্পানি যদি সেই দেশের মধ্যে তার প্রোডাকশন সাইট সেট আপ করে তাহলে সেটা অনশোরিং, যদি দেশের বাইরে প্রোডাকশন সাইট সেট আপ করে তাহলে সেটা অফশোরিং। আর যদি এমন হয় যে কোম্পানিটি অফশোরিং করেছে, মানে অন্য কোন দেশে নিজেদের প্রোডাকশন সাইট সেট আপ করেছে, কিন্তু এখন সেখান থেকে সেটা তার নিজ দেশে ফিরিয়ে আনবে, তবে সেটা রিশোরিং। এখন অনশোরিং নিয়ে দুটো কথা বলতে চাই – প্রথমত, কোন কোম্পানি যে দেশে অনশোরিং করবে, সেই কোম্পানির প্রোডাকশনের জন্য সেই দেশের জিডিপি বাড়বে, কোম্পানিটির প্রোডাকশন ও এক্সপোর্ট সেই দেশের প্রোডাকশন ও এক্সপোর্ট হিসেবে গণ্য হবে, আর বেশিরভাগ সময় তা সেই দেশের ইন্ডাস্ট্রি বলে গণ্য হবে। যেমন টেসলা আমেরিকান কোম্পানি হলেও চিনে তার গিগাফ্যাক্টরি যে ইভি তৈরী করে তা চীনের জিডিপি বৃদ্ধি করে, তা চীনের প্রোডাকশন হয়, এক্সপোর্টেড হলে চীনের এক্সপোর্ট হয়, ইন্ডাস্ট্রিটাও চীনের বলে গণ্য হয়। এখন থেকে ইউএস এর জিডিপি তখনই উপকৃত হবে যদি ইলোন মাস্ক চীনে টেসলার হওয়া প্রফিট ইউএস-এ নিয়ে আসে বা ইউএস-এ ইনভেস্ট করে। তবে পরোক্ষভাবে এতে ইউএস এর কিছু লাভ হয়, যেমন টেসলার প্রোডাকশন বাড়লে এর কনজাম্পশন, মার্কেট শেয়ার, স্টক, মার্কেট ক্যাপিটাল সব বাড়ে, তাতে এর ইউএস কনজিউমার ও স্টক-হোল্ডারদের লাভ হয়, টেসলারও রেপুটেশন বাড়ে, আর এগুলোও ইউএস এর ইকোনমির সাথে সম্পর্কিত। আর খেয়াল রাখতে হবে যে কোন দেশের ইকোনমির সব কিছু এর জিডিপি দিয়ে রিপ্রেসেন্টেড হয়না।

দ্বিতীয়ত যেটা নিয়ে বলতে চাই সেটা হল স্ট্র্যাটেজিক ডিপেন্ডেন্সি বা কৌশলগত নির্ভরশীলতা। জার্মানি আর চীন দিয়ে উদাহরণ এক্সপ্লেইন করি। যদি জার্মানি তার কোন লক্ষ্য, ক্রিয়াকলাপ বা ফলাফলের জন্য চীনের ওপর নির্ভরশীল থাকে তাহলে ইইউ চীনের ওপর স্ট্র্যাটেজিক ডিপেন্ডেন্সি দেখাচ্ছে। দেশের ক্ষেত্রে এই নির্ভরশীলতা মূলত প্রোডাকশন, ইনভেস্টমেন্ট, ট্রেড ইত্যাদি নিয়ে হয়। এখন অনশোরিং এর প্রসঙ্গে বলছি, জার্মানির কোন কোম্পানি যদি চীনে অফশোরিং করে, মানে চীনে তার প্রোডাকশন সাইট সেটাপ করে তাহলে সেটার জন্য চীনের ওপর জার্মানির প্রোডাকশন, সাপ্লাই চেইন রিলেটেড স্ট্র্যাটেজিক ডিপেন্ডেন্সি তৈরী হচ্ছে, মানে জার্মানি চীনের ওপর কৌশলগতভাবে নির্ভরশীল হচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্ট্র্যাটেজিক ডিপেন্ডেন্সি খুব রিস্কি হতে পারে, বিশেষ করে যদি দেশ দুটোর সম্পর্কে টানাপোড়েন থাকে। যদি এমন হয় যে, শক্তি ও খাদ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ সম্পদের ক্ষেত্রে চীনের ক্ষেত্রে জার্মানির নির্ভরশীলতা থাকে, তাহলে যদি কখনো জার্মানি বা ইইউ ও চীনের সম্পর্ক খারাপ হয় আর চীন জার্মানিকে এগুলোর সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, তবে এর জন্য জার্মানিতে খাদ্য ও শক্তির অভাবে সামাজিক অস্থিতিশীলতা তৈরী হবার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। এই অবস্থা থেকে বাঁচবার জন্য আগে থেকেই জার্মানিকে চীনের ওপর তার স্ট্র্যাটেজিক ডিপেন্ডেন্সি কমাতে হবে, আর সেটা করা যেতে পারে অনশোরিং ও রিসোরিং এর মাধ্যমে, মানে জার্মানি এর কোম্পানিগুলোকে শক্তি ও খাদ্যভিত্তিক প্রোডাকশন সাইট জার্মানিতেই সেটাপ করতে হবে বা অনশোরিং করতে হবে, আর যদি ইতিমধ্যেই চীনে জার্মানি প্রোডাকশন সাইট তৈরী করে থাকে তবে সেগুলোকে জার্মানিতে স্থানান্তরিত করতে হবে, অর্থাৎ রিশোরিং করতে হবে। ব্যাটারি ইন্ডাস্ট্রি রিনিউয়েবল এনার্জির সাথে সম্পর্কিত ইন্ডাস্ট্রি, তাই এটার ইন্ডাস্ট্রি ইইউ এর দেশগুলো চীনে অফশোরিং করলে অথবা অনশোরিং না করলে, মানে নিজেদের দেশে ব্যাটারির প্রোডাকশন না করলে, ইইউ এর চীনের ওপর স্ট্র্যাটেজিক ডিপেন্ডেন্সি তৈরী হচ্ছে, কারণ ইইউ এর ইভি ইন্ডাস্ট্রি চীনের ব্যাটারি ইন্ডাস্ট্রির ওপর নির্ভরশীল হবে। আর এর ফলে ইইউ এর সাথে চীনের মধ্যে টানাপোড়েনের সৃষ্টি হলে যদি চীন ইইউ এর ব্যাটারির সাপ্লাই চেইন বন্ধ করে দেয় ইইউ এর ইভি ইন্ডাস্ট্রি ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

যাইহোক, দ্বিতীয়ত, ম্যাক্রোঁর মতে, চীন ফেয়ার প্লে খেলছে না, এবং চীনের উদার রাষ্ট্রীয় ভর্তুকি ব্যবস্থা ইউরোপীয় নির্মাতাদের পক্ষে চীনের অযৌক্তিক সস্তা গাড়িগুলির সাথে প্রতিযোগিতা করা অসম্ভব করে তুলছে। এমনকি কিছু ইউরোপীয় কর্মকর্তা চীনের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় বাজারে তাদের ইভি ডাম্প করারও অভিযোগ করেছেন। তো এই ডাম্পিং কী জিনিস? ডাম্পিং মূলত তখনই হয় যখন একটি দেশ ইচ্ছাকৃতভাবে আরেকটি দেশের বাজারকে প্রচণ্ড সস্তা পণ্য দিয়ে প্লাবিত করে, আর তার জন্য সাধারণত প্রচুর ভর্তুকি দেওয়া হয়, যাতে যে দেশে সস্তা পণ্যগুলো ডাম্প করা হয়েছে সেই দেশের কোম্পানিগুলোর বিজনেস ধ্বংস হয়ে যায় ও তারা মার্কেটের থেকে সরে যায়। আর চীনের এই ডাম্পিং নতুন কিছুও নয়। ২০১০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে চীন ইস্পাত দিয়ে ঠিক এই কাজটাই করেছিল। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে দাম কমানোর জন্য বাজারে খুবই সস্তা ইস্পাতের লোড ফেলে দিয়েছিল। এর ফলে চীনা ইস্পাত উত্পাদনকারীরা সাময়িকভাবে লোকসানের শিকারও হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত এটি ছিল আন্তর্জাতিক ইস্পাত বাজারের উপর নিয়ন্ত্রণ সুসংহত করার ও ইউরোপীয় এবং আমেরিকান উত্পাদনকারীদের দেউলিয়া করার একটি প্রচেষ্টা। আর ম্যাক্রোঁ সন্দেহ করেন যে চীন ইভি নিয়েও ঠিক সেরকমই কিছু করার চেষ্টা করছে। তারা ইভি দিয়ে ইউরোপীয় বাজারকে প্লাবিত করে কার ইন্ডাস্ট্রিতে একসময়কার প্রভাবশালী ইউরোপীয় নির্মাতাদের দমন করার চেষ্টা করছে।

তৃতীয়ত, ইউরোপে কার লবির উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রাজনৈতিক ক্ষমতা রয়েছে। বিশেষত জার্মানির মতো দেশে এই লবি খুব শক্তিশালী, কেননা গাড়ি উত্পাদনকারী অঞ্চলের রাজনীতিবিদদের ভাগ্য মূলত কার কোম্পানি এবং তাদের কর্মীদের খুশি রাখার উপর নির্ভর করে। তাই যদি ইউরোপের কার কোম্পানিগুলো চীনের কারণে মার্কেট থেকে সরে যাবার হুমকিতে পড়ে, তাহলে হুমকিতে পড়বে সেই অঞ্চলের রাজনীতিবিদরাও।

চতুর্থত, ইউক্রেইনে রাশিয়ার আক্রমণ এবং এর সাথে ইউরোপের গ্যাস ও তেল সরবরাহে বিঘ্নতার সৃষ্টি ইউরোপীয়দেরকে শক্তি নির্ভরতা বা এনার্জি ডিপেন্ডেন্সি সম্পর্কে সতর্ক করে তুলেছে। সুতরাং, ইউরোপীয় রাজনীতিবিদরা উদ্বিগ্ন যে, যদি তারা তাদের ডোমেস্টিক ইভি ইন্ডাস্ট্রিকে রক্ষা না করে তবে তারা একটি ডোমেস্টিক ব্যাটারি ইন্ডাস্ট্রিকেও ধরে রাখতে সক্ষম হবে না, যেটা নিজেও একটি এনার্জি ইন্ডাস্ট্রি। ইউরোপ রাশিয়ার উপর এনার্জি ডিপেন্ডেন্ট বা জ্বালানি-নির্ভরশীল হয়ে একবার ভুল করেছে, এবারে পুনর্নবীকরণ শক্তি নিয়েও তারা একই ভুল করতে চায়না। কিন্তু ইউরোপ যদি এখন চীনের ইভি ইন্ডাস্ট্রির উত্থানের হাত থেকে নিজেদের ইভি ইন্ডাস্ট্রিকে রক্ষা না করে, আর এর ফলে তারা নিজেদের ব্যাটারি ইন্ডাস্ট্রিকেও হারিয়ে ফেলে, তবে ইউরোপ পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উত্পাদনের মূল উপাদান ব্যাটারির জন্য চীনের এবং অন্যান্য ব্যাটারি উত্পাদকদের উপর নির্ভরশীল হয়ে উঠবে, ঠিক যেমন তারা হাইড্রোকার্বন যুগে রাশিয়ার উপর এনার্জি ডিপেন্ডেন্ট হয়ে উঠেছিল।

পঞ্চমত, ইউরোপ বিশিল্পায়ন বা ডিইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশনের হুমকি সম্পর্কে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। গাড়ি এবং ভারী শিল্প ইউরোপের অর্থনৈতিক পরিচয়ের একটি অংশ, বিশেষত জার্মানির ক্ষেত্রে এটি ভীষণভাবে সত্য। তবে ইউরোপে তুলনামূলকভাবে উচ্চ জ্বালানি মূল্য এবং বাইডেনের মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস আইনের জন্য এই ইন্ডাস্ট্রিগুলো ইতিমধ্যেই আমেরিকায় চলে যাচ্ছে। তাই ইউরোপীয়রা একই সাথে আমেরিকা এবং চীন উভয়ের কাছে শিল্প হারানোর সম্ভাবনা সম্পর্কে উদ্বিগ্ন, যা বিশিল্পায়ন বা ডিইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন ত্বরান্বিত করবে। এই বিশিল্পায়ন ইতিমধ্যেই ইউরোপের জন্য অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিকভাবে কঠিন বলে প্রমাণিত হয়েছে।

কিন্তু ইউরোপের পক্ষে তার কার ইন্ডাস্ট্রিকে রক্ষা করা সম্ভব কি?

ইউরোপের কাছে এই সমস্যার কোনও সহজ সমাধান নেই। চীনের উপর অ্যান্টি-ডাম্পিং ব্যবস্থা আরোপ প্রায় নিশ্চিতভাবেই একটি প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করবে, যা একটি পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য যুদ্ধে পরিণত হতে পারে। আর ইউরোপের জন্য এটি স্পষ্টতই খারাপ খবর হবে, বিশেষত জার্মান কার কোম্পানিগুলোর জন্য যারা চীনের কার কোম্পানিগুলোতে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। আর এই কারণে জার্মানি এই ইস্যুতে ফ্রান্সের নেতৃত্ব অনুসরণ করতে অনিচ্ছুক। এই ব্যাপারে একটু বিস্তারিত বলছি। জার্মানি এখানে ফ্রান্স ও অনেক ইইউ রাজনীতিবিদদের উল্টো দিকে হাঁটছে, যদিও ইউরোপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কার ব্র্যান্ডগুলো জার্মান-ভিত্তিক কোম্পানিই। দেশটি চীনের ইউরোপে চীনের কার-ডাম্পিং এর ধারণা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে, আর সেই সাথে মনে করে, চীনের গাড়ির ওপর কোনোরকম এন্টাই-ডাম্পিং পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ নয়, কেননা সেটা হলে ইইউ এর সাথে চীনের একটি বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হতে পারে, আর সেটা হলে জার্মানিরই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি, কেননা জার্মানি চীনে গাড়ির বৃহত্তম রফতানিকারক এবং জার্মানির গাড়ি নির্মাতা কোম্পানিগুলোর সাথে চীন গাড়ি নির্মাতা কোম্পানিগুলোর বেশ কয়েকটি যৌথ উদ্যোগ রয়েছে; জার্মানি তার ইভির জন্য ব্যাটারি এবং অন্যান্য উপাদানগুলির উত্স হিসাবে চীনের উপর নির্ভর করে; আর জার্মানির কার কোম্পানিগুলো বিভিন্ন উপায়ে চীন বা চীনা কার কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ করেছে, যেমন –

১. এগুলো চীনে তাদের গাড়ি উত্পাদন এবং বিক্রয়ের জন্য চীনা গাড়ি নির্মাতাদের সাথে যৌথ উদ্যোগ প্রতিষ্ঠা করেছে, যেমন ভক্সওয়াগনের এসএআইসি (SAIC) এবং এফএডাব্লুয়ের (FAW) সাথে যৌথ উদ্যোগ রয়েছে, বিএমডাব্লুর ব্রিলিয়েন্সের সাথে একটি যৌথ উদ্যোগ রয়েছে এবং ডেইমলারের বিএআইসির (BAIC) সাথে একটি যৌথ উদ্যোগ রয়েছে। এই যৌথ উদ্যোগগুলির মাধ্যমে জার্মান কার কম্পানিগুলো চীনের নিয়ম মেনে চীনের বৃহত এবং ক্রমবর্ধমান গাড়ির বাজারে অ্যাক্সেস লাভ করে।
২. এগুলো গাড়ি এবং এর উপাদানগুলো উত্পাদন এবং বিকাশের জন্য চীনে কারখানা এবং গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র নির্মাণ করেছে, যেমন চীনে ভক্সওয়াগনের ৩৩টি প্রোডাকশন সাইট এবং চারটি গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র রয়েছে, বিএমডাব্লু এর চারটি প্রোডাকশন সাইট এবং একটি গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র রয়েছে এবং ডেইমলারের ছয়টি প্রোডাকশন সাইট এবং একটি গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র রয়েছে। এই বিনিয়োগগুলি জার্মান গাড়ি নির্মাতাদের তাদের ব্যয় হ্রাস করতে, গুণমান উন্নত করতে এবং তাদের পণ্যগুলি স্থানীয় পছন্দ এবং প্রয়োজনের সাথে খাপ খাইয়ে নেবার সুযোগ করে দেয়।
৩. এগুলো নতুন টেকনোলজির উদ্ভাবন ও শেয়ার করার জন্য চীনা টেক কোম্পানিগুলোর সাথে পার্টনারশিপ তৈরী করেছে, যেমন ভক্সওয়াগন ইভি এবং অটোনোমাস ড্রাইভিং বিকাশের জন্য জেএসি মোটরস এবং হুয়াওয়ের সাথে পার্টনারশিপ করেছে, বিএমডব্লিউ ডিজিটাল পরিষেবা এবং ব্যাটারি বিকাশের জন্য টেনসেন্ট এবং সিএটিএলের সাথে পার্টনারশিপ করেছে এবং ডেইমলার স্মার্ট কার এবং গতিশীলতা পরিষেবা বিকাশের জন্য গিলি এবং বাইডুর সাথে পার্টনারশিপ করেছে। এই পার্টনারশিপ জার্মান গাড়ি নির্মাতাদের ডিজিটালাইজেশন, বৈদ্যুতিকীকরণ এবং সংযোগের ক্ষেত্রে চীনের শক্তিকে কাজে লাগানোর সুযোগ দেয়।

তাই চীনা ইভি ডাম্পিংয়ের কাল্পনিক হুমকির কারণে জার্মানি চীনের সাথে তার লাভজনক এবং কৌশলগত সম্পর্ককে বিপন্ন করতে চায় না। এটা ঠিক যে, চীনের ইভি ইন্ডাস্ট্রির উত্থানের জন্য জার্মানি নিজেই রিনিউয়েবল এনার্জি ডিপেন্ডেন্সি ও ডিইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশনের হুমকিতে পড়বে, জার্মানির নিজের কার কোম্পানিগুলোও ইভি মার্কেট থেকে সরে যাবার সম্ভাবনায় পড়বে, কিন্তু তাও সেটা জার্মানির পক্ষে ফ্রান্স ও ম্যাক্রোর এন্টাই-ডাম্পিং স্টেপস ও বাণিজ্য-যুদ্ধের দিকে যাওয়া সম্ভব নয়, তাকে এর বিরোধিতা করতে হবে, ও চীনের সাথে কম্পিটিশনের জন্য অন্য উপায় খুঁজতে হবে।

আর তাছাড়া এটিও স্পষ্ট নয় যে, এই এন্টাই-ডাম্পিং পদক্ষেপ একটি টেকসই কৌশল হবে কিনা, অর্থাৎ আসলেই কাজে আসবে কিনা। চীন যদি ফেয়ার প্লে নাও খেলে থাকে, তবুও ইউরোপকে চীন এবং আমেরিকার শিল্পের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা চালিয়ে যেতে হবে। আর সত্যি বলতে, ইউরোপের কার কোম্পানিগুলো ইভি এর যুগের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে স্পষ্টভাবেই বেশ ধীর। সর্বোপরি, যদিও বিশিল্পায়ন সম্পর্কে ইউরোপীয় উদ্বেগগুলি সুপ্রতিষ্ঠিত, ইউরোপের কার ইন্ডাস্ট্রিগুলোকে রক্ষা করা বেশ ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য হবে। তবে তারা বিফল হয় কিনা তা সময়ই বলে দেবে।

তথ্যসূত্র

 

 

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.