মনে হয়না যুক্তরাজ্য আর রিসেশন এড়াতে পারবে

যুক্তরাজ্য কি রিসেশন বা মন্দার দ্বারপ্রান্তে? রিসেশন বা মন্দা কী সেটা যারা জানেন না, তাদেরকে বলছি, মন্দা হ’ল একটি দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের একটি উল্লেখযোগ্য হ্রাস, যা প্রকাশ পায় দেশের জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) সংকোচন, ব্যবসায়িক ক্রিয়াকলাপ হ্রাস এবং অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে ইকোনোমিক একটিভিটি কমে আসা। মন্দার সময়, উত্পাদন, আয়, কর্মসংস্থান এবং বাণিজ্য ব্যাপকভাবে কমে যায়। এর কয়েকটি মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে – নেতিবাচক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, ভোক্তা ব্যয় হ্রাস, ব্যবসায়িক সংকোচন, আর্থিক বাজারের অস্থিরতা, ও এগুলোকে প্রশমিত করতে সরকারী হস্তক্ষেপ।

যাই হোক, গত বছরের শেষের দিকে, ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড সতর্ক করেছিল যে যুক্তরাজ্য ২০২৩ এবং ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে মন্দার মধ্যে থাকবে, আর তারা দেশটির অর্থনৈতিক অস্থিরতার বিষয়েও সতর্ক করেছিল। তবে এখন পর্যন্ত মন্দা এড়াতে পেরেছে যুক্তরাজ্য। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কেন যুক্তরাজ্য আপাতদৃষ্টিতে এখন পর্যন্ত মন্দা এড়াতে সক্ষম হয়েছে এবং এই সক্ষমতাটি স্থায়ী হতে পারে কিনা। স্পয়লার – সম্ভবত না।

এখন পর্যন্ত যুক্তরাজ্য মন্দা এড়াতে সক্ষম হবার কারণ 

যুক্তরাজ্য এখন পর্যন্ত মন্দা এড়াতে সক্ষম হওয়ার তিনটি কারণ রয়েছে: ভোক্তা স্থিতিস্থাপকতা, সরকারী হস্তক্ষেপ এবং আবহাওয়া। শেষ দুটি কিছুটা একসাথে যায়, তাই আসুন সেখান থেকই শুরু করা যাক।

সরকারী হস্তক্ষেপ : গত বছর যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিকে নিম্নমুখী করার অন্যতম প্রধান বিষয় ছিল জ্বালানির দাম। ইউক্রেনের যুদ্ধ এবং কোভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনীতি পুনরায় চালু হওয়ার ফলে ইউরোপ জুড়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বেড়ে যায়, বিশেষ করে যুক্তরাজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই বৃদ্ধির প্রভাবের একটি অংশ দু’রকম সরকারী হস্তক্ষেপ দ্বারা প্রশমিত হয়েছিল – এনার্জি প্রাইস গ্যারান্টি এবং এনার্জি বিলস সাপোর্ট স্কিম। এই হস্তক্ষেপের মাধ্যমে এনার্জির দাম কার্যকরভাবে সীমাবদ্ধ করা হয়েছিল। আর এগুলো ছাড়াও সরকার এনার্জি বিলের উপর ৪০০ পাউন্ডের একটি ওয়ান-টাইম ডিসকাউন্টও দিয়েছিল। এখানে সমস্যাটি হ’ল এই সরকারী সাপোর্টটা ছিল ভোক্তা বা কনজিউমারদের জন্য, মানে বাসাবাড়ির জন্য, ব্যবসার জন্য নয়। তবে বাণিজ্যিক ভোক্তা বা কমার্শিয়াল কনজিউমারদের জন্য কিছু সাপোর্ট দেয়া হয়েছিল, কিন্তু বিজনেসগুলোকে এনার্জির উচ্চ মূল্যের ভোগান্তি মূলত তাদের নিজেদেরকেই বহন করতে হয়েছিল, আর এখানেই আবহাওয়ার ব্যাপারটা সামনে এসে যায়।

আবহাওয়া : যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপের বেশিরভাগ অংশেই এবারের শীতকালটি ছিল ব্যতিক্রম ধরণের উষ্ণ, যার অর্থ হ’ল এনার্জির স্টোরেজ যেভাবে নেমে আসার কথা আশা করা হয়েছিল, তা সেভাবে নেমে আসেনি। আর এর ফলে এনার্জি বা জ্বালানির মূল্য কমে যায়, এর ফলে ব্যবসা এবং বাসাবাড়ির ওপর চাপ কমে, এবং শেষ পর্যন্ত এগুলি টিকে যায়। বেনিফিট এবং পেনশনের মতো অন্যান্য ক্ষেত্রেও সরকারী হস্তক্ষেপ ব্যবহার করা হয়েছিল। যদিও পাবলিক সেক্টরের ক্ষেত্রে বেতন সরকার এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আলোচনার সাপেক্ষে ছিল, পেনশন এওয়ার্ড এবং বেনিফিট এনটাইটেলমেন্টগুলোকে মুদ্রাস্ফীতির কারণে বাড়ানো হয়, যার ফলে সমাজের একটা বড় অংশের জন্য দৈনন্দিন খরচ আর সেভাবে বৃদ্ধি পায়না। আর এখানেই আসে তৃতীয় কারণটি – ভোক্তা স্থিতিস্থাপকতা বা কনজিউমার রেজিলিয়েন্স।

ভোক্তা স্থিতিস্থাপকতা : জিনিস পত্রের দাম বেড়ে গিয়ে মানুষের গৃহস্থালি বাজেটে চাপ সৃষ্টি সত্ত্বেও ভোক্তারা দৈনন্দিন ব্যয়ের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্যভাবে স্থিতিস্থাপক ছিল। এই ভোক্তা স্থিতিস্থাপকতার ব্যাপারটা একটু বুঝিয়ে বলি। ইনফ্লেশনের উদাহরণই ধরি। ইনফ্লেশনের ফলে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়তে থাকলে রেজিলিয়েন্ট বা স্থিতিস্থাপক ভোক্তারা এর সাথে মানিয়ে নেয় ও সেই অনুযায়ী নিজেদের স্পেন্ডিং বা খরচকে এডাপ্ট করে নেয়। এরা স্পেন্ডিং হুট করে খুব কমিয়ে দেয়না, এর ফলে প্রোডাক্ট ও সার্ভিসের ডিমান্ড ও গ্রোথ হুট করে কমে ইকোনোমির বেশি ক্ষতি করেন। কিন্তু ভোক্তা অস্থিতিস্থাপক বা নন-রেজিলিয়েন্ট হলে এই দামের বৃদ্ধির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারেনা। তারা হুট করে খরচ অনেক কমিয়ে দেয়, আর এর ফলে দেশের এগ্রিগেট ডিমান্ড হুট করে কমে যায়, অর্থনীতিরও বেশি ক্ষতি হয়। ইংল্যান্ডে ভোক্তা স্থিতিস্থাপকতা বেশি ছিল, মানে ভোক্তা বা কনজিমাররা বেশ রেজিলিয়েন্ট আচরণ করেছে। এর ফলে ডিমান্ড খুব হ্রাস পায়নি ও দেশের ইকোনোমিক এক্টিভিটিও খুব কমেনি, অর্থাৎ এটা যুক্তরাজ্যকে রিসেশন থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করেছে।

এখন উপরের এই তিনটি পয়েন্টের কোনোটিই বলছে না যে, যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি একটি চমৎকার অবস্থানে ছিল বা আছে। সর্বোপরি, মুদ্রাস্ফীতি এখনও অবিশ্বাস্যভাবে উঁচু, এবং দেশটির অর্থনীতি মার্চে ০.২% পতনের পরে এপ্রিলে মাত্র ০.৩% বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এটাও বলতে হবে যে, এই তিনটি ফ্যাক্টরের কারণে যুক্তরাজ্য মন্দার ভবিষ্যদ্বাণী থাকলেও সেটাকে এড়িয়ে যেতে পেরেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই মন্দা এড়িয়ে চলার ব্যাপারটা যুক্তরাজ্যের জন্য কি স্থায়ী হতে পারে? অর্থনৈতিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও যুক্তরাজ্য কি মন্দা এড়াতে সক্ষম হবে?

কেন যুক্তরাজ্যের আর নিজেকে মন্দার হাত থেকে বাঁচাতে পারবে বলে মনে হয়না 

এটি আসলে মুদ্রাস্ফীতির উপর নির্ভর করে, যা অনেক উঁচুই রয়ে গেছে। এই ব্যাপারটা বোঝার জন্য তাই ইনফ্লেশন বা মুদ্রাস্ফীতি কি সেটা বোঝা দরকার। খুব সংক্ষেপে মুদ্রাস্ফীতি, মন্দা ও বেঞ্চমার্ক সুদের হারের সম্পর্ক বুঝিয়ে দিচ্ছি। যারা অলরেডি জানেন তারা এই প্যারা স্কিপ করবেন। যারা জানেননা পড়ে নিন, এই আলোচনা সহ অর্থনীতি রিলেটেড অনেক আলোচনাতেই কাজে দেবে। যদি একটি দেশে ভোক্তাদের ডিমান্ড যদি অনেক বাড়ে কিন্তু সেই দেশে প্রোডাক্ট ও সার্ভিসের উৎপাদন তত না বাড়ে, তাহলে মানুষ এই অতিরিক্ত ডিমান্ডের কারণে বেশি খরচ করে একই জিনিস কিনবে, মানে একটি প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের পেছনে যত খরচ হবার কথা ছিল, তার ডিমান্ড বেশি হওয়ায় তার চেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে, মানে তার দাম বাড়ছে, ইনফ্লেশন। আবার দেশে ডিমান্ড আছে কিন্তু আমদানি আসছে না, ধরুন রাশিয়া-ইউক্রেইনের যুদ্ধের কারণে জ্বালানি আসছে না, তাহলেও দেশে অলরেডি স্টোরেজে থাকা জ্বালানির জন্য খরচ বেশি হচ্ছে, মানে দাম বাড়ছে, মানে ইনফ্লেশন। সরকার তার খরচ বাড়াচ্ছে, বিভিন্ন পাবলিক প্রজেক্ট, সোশ্যাল প্রোগ্রাম, ইনফ্রাস্ট্রাকচারে খরচ বাড়াচ্ছে, তাতে ইকোনোমিতে বেশি অর্থ ইনজেক্ট করা হচ্ছে, কিন্তু যত অর্থ ইনজেক্ট করা হলো সেই অনুযায়ী যদি উৎপাদন না বাড়ে, তাহলে মার্কেটে বাড়তি অর্থ থাকছে, যা বিদ্যমান প্রোডাক্ট ও সার্ভিসের দাম বাড়াচ্ছে, ইনফ্লেশন হচ্ছে। দেশে নতুন ইনভেস্টমেন্ট আসছে মানে বিজনেস বাড়বে, কিন্তু সেটা বাড়াবে জন্য র মেটেরিয়াল ও রিসোর্স লাগবে। কিন্তু ইনভেস্টমেন্ট মানে নতুন টাকা এলেও সেই টাকা দিয়ে বিজনেসের জন্য যে কাঁচামাল ও রিসোর্স কিনতে হবে তা বাজারে নেই, মানে অত উতপাদিত হয়নি বা আমদানি হয়নি, মানে দেশের ইকোনোমিতে বিদ্যমান প্রোডাক্ট-সার্ভিসের চেয়ে বেশি অর্থ ঢুকছে, সেটা দাম বাড়াচ্ছে, ইনফ্লেশন হচ্ছে। এভাবে বিভিন্নভাবে ইনফ্লেশন হয়। জিনিসপত্রের দাম বাড়লে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেঞ্চমার্ক সুদের হার বা বেইজ রেইট কমিয়ে দেয়, ফলে ভোক্তা ও সংস্থাগুলো কম ঋণ নিয়ে খরচ করতে চায় বা বেশি সঞ্চয় করতে চায়। এর ফলে ভোক্তাদের ডিমান্ড কমে, খরচ কম করে, ফলে উৎপাদনের তুলনায় ডিমান্ড ও বাজারে আসা টাকা কমে যায় ও ইনফ্লেশনের সমাধান হয়। কিন্তু তাতে একই সাথে মানুষের খরচ কমে যায় ও বিজনেসগুলোর প্রোডাকশন। আর এর ফলে ইকোনোমি স্লো হয়। আর যদি এই ইনফ্লেশন অনেক বাড়ে, তবে তা ট্যাকল দিতে সুদের হারও অনেক বাড়ানো হয়। কিন্তু সুদের হার অনেক বেড়ে গেলে ইকোনোমিক একটিভিটি কমতে কমতে রিসেশন।

এখন আসল কথায় আসা যাক। গত মাসে, সরকারী পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে যুক্তরাজ্যে মুদ্রাস্ফীতি ৮.৭%-এ স্থিতিশীল ছিল, যা ব্যাংক এবং অর্থনীতিবিদদের প্রেডিকশন ৮.৪% এর চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। এই মুদ্রাস্ফীতি কমাতে ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডকে প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত সুদের হার বাড়াতে হয়েছিল। চলতি মাসের শুরুতে ব্যাংকটি বেস রেট বা বেঞ্চমার্ক ইন্টারেস্ট রেট বা বেঞ্চমার্ক সুদের হার ৪.৫% থেকে ২৫ বেসিস পয়েন্টের (০.২৫%) পরিবর্তে ৫০ বেসিস পয়েন্ট (০.৫%) বাড়িয়ে ৫%-এ উন্নীত করে। এখন, যদি এই মুদ্রাস্ফীতি অব্যাহত থাকে এবং সুদের হার বাড়তে থাকে তবে সরকারের পক্ষে বিষয়গুলো কঠিন হয়ে উঠবে। বিশ্লেষকরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, এই সুদের হার যদি ৬%-এ পৌঁছায় তবে মন্দা মূলত নিশ্চিত (মানে আর বেশ রেট বা সুদের হার ১০০ বেসিস পয়েন্ট বা ১% বাড়লেই মন্দা নিশ্চিত)। এবং দুর্ভাগ্যবশত, যদি আমরা সুদের হারের অগ্রগতির দিকে তাকাই, তবে এই সুদের হার ৬% এর স্তরকে অতিক্রম করাটাই বেশি সম্ভাব্য বলে মনে হচ্ছে। বন্ধকের হার বা মর্টগেজ রেইট (যা বেঞ্চমার্ক ইন্টারেস্ট রেইট বা বেস রেইটের উপর নির্ভর করে) ইতিমধ্যে এই বছরে আগের চেয়েও আরও বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং সর্বশেষ যা দেখা যাচ্ছে তা হচ্ছে, বাজারগুলি এখন বছরের শেষে সুদের হার ৬% অতিক্রম করার সম্ভাবনা ৭০% দেখছে।

শেষ পর্যন্ত, এই মন্দার কারণ হচ্ছে মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস করা, অর্থনীতিবিদদের মতে কখনও কখনও একটি ব্যয়বহুল কাজ। কেন সেটা ইতিমধ্যে বলেছি। এটা করতে গিয়ে উৎপাদন, ইকোনোমিক একটিভিটি কমে যায়। মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে। আর তাই শেষ পর্যন্ত ঋষি সুনাকও তাই মর্টগেজ হোল্ডারদের সাপোর্ট দিতে অনিচ্ছুক। কেননা ইনফ্লেশন কমাতে স্পেন্ডিং কমিয়ে আনতেই হবে। মর্টগেজ পরিশোধ করতে আপনার ২০০ পাউন্ড অতিরিক্ত লাগলে তবেই আপনি আপনার অন্যান্য কাজে ২০০ পাউন্ড কম খরচ করবেন। আর তাতে দেশে ইনফ্লেশন কমবে, যেটা এখন যুক্তরাজ্যে দরকার। অন্যথা ইনফ্লেশন বেড়ে সুদের হার বেড়ে রিসেশন। এখন অর্থনীতিতে সুদের হার এবং মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব বর্ণনা করার সময় অর্থনীতিবিদরা প্রায়শই সেক্রিফাইস রেশিও বা বলিদান অনুপাত সম্পর্কে বলেন, যা হচ্ছে বেঞ্চমার্ক ইন্টারেস্ট রেইট ১% বাড়ালে ইনফ্লেশন যা কমে আর জিডিপিতে যে নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট পড়ে তার অনুপাত। এখন কোনও একক সেক্রিফাইস রেশিও নেই, তবে সাম্প্রতিক হিসাবগুলো অনুসারে এই অনুপাত ৩ থেকে ৪ এর মধ্যে আছে। মানে হল ইনফ্লেশন রেইট ১% কমলে জিডিপি কমে ৩-৪%।

এখন, স্পষ্টতই এটি নির্ভর করে যে আপনি অর্থনীতি থেকে মুদ্রাস্ফীতি কমাতে কত দ্রুত কাজ করেন তার উপর। কিন্তু বর্তমান ৮.৭% ইনফ্লেশন রেইটকে ব্যাংকের টার্গেট অনুসারে ২%-এ নামিয়ে আনতে চাইলে স্পষ্টতই সেক্রিফাইস রেশিও অনুসারে যুক্তরাজ্যের জিডিপি ২০-২৫% কমতে যাচ্ছে, যেটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক হবে, আর যার মানে হচ্ছে রিসেশন। আর তাই বিশ্লেষকরাও মনে করেন না যে যুকরাজ্য আগের মতো মাঝারি মেয়াদের মন্দা এড়াতে সক্ষম। ব্লুমবার্গ ইকোনমিকসের বিশ্লেষণে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে যে ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড বছরের শেষে যুক্তরাজ্যকে মন্দার দিকে ঠেলে দিতে বাধ্য হবে, কারণ তারা আশা করে যে মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস করার জন্য ব্যাংক সুদের হার আরও বাড়াবে এবং সেখান থেকে এই উদ্ধৃতিটি দেয়া হয়েছে – “ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড বাজারের প্রত্যাশা অনুসরণ করলে আমরা আশা করব ২০২৫ সালের চতুর্থ প্রান্তিকের মধ্যে অর্থনীতি প্রায় ১% সংকুচিত হবে, আর গভীর মন্দা দেখা যাবে।”

তবে যুক্তরাজ্যের জন্য আশার আলো দেখা যাচ্ছে। যদি গত কয়েক বছর আমাদের কিছু শিখিয়ে থাকে তবে তা হ’ল মুদ্রাস্ফীতি সম্পূর্ণরূপে আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই এবং এটি মূলত বৈশ্বিক কারণগুলির দ্বারা নির্ধারিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, বর্তমান মুদ্রাস্ফীতির ফ্যাক্টরগুলো মূলত মহামারী এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ দ্বারা চালিত হয়েছে। তাই সব সময় এই সম্ভাবনাও থাকে যে গ্লোবাল ফ্যাক্টরগুলো কোনোভাবে ইকোনোমিকে রক্ষায় করবে। যেমন গ্লোবাল ফুড ও এনার্জি প্রাইস যদি কোন বৈশ্বিক কারণে খুব কমে যায়, তবে যুক্তরাজ্যের ইকোনোমির পেলেও হাওয়া আসতে শুরু করবে। (তাই চোখ খালি ইকোনোমিক্স নয়, জিওপলিটিক্সের দিকেও রাখতে হবে)… তবে সেই দিকটার উপর নির্ভর করে কিছু প্রেডিক্ট করা কঠিন।

(তবে আপাতত মনে হচ্ছে ওয়াগনারের সাম্প্রতিক ব্যর্থ অভ্যুত্থান রাশিয়াকে দ্রুত স্টেপের দিকে যেতে চালিত করবে সেটা হোক পুনরায় মোবিলাইজেশন বা শান্তি প্রক্রিয়া। আরেকটি খুব কম আলোচিত ফ্যাক্টর হচ্ছে সাম্প্রতিক আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও অটোমেশনের রেভোল্যুশন। উৎপাদনে তার ব্যাপক প্রভাব আপাতত ২০৩০ এর আগে আশা করা হচ্ছে না, কিন্তু তাও যে হারে এর উন্নতি হচ্ছে, বলা যায়না ২০২৫ সালের মধ্যে এটি যুক্তরাজ্যের উৎপাদনে বা যেসব জায়গা থেকে দেশটি বিভিন্ন জিনিস আমদানি করে সেই সব দেশের উৎপাদনে বড়সড় পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে কিনা, যার ফলে ইনফ্লেশনের  সমস্যা দূর হয়। যুক্তরাজ্য বলেই প্রেডিক্ট করছি, কারণ দেশটি এই সেক্টরে বেশ খরচ করছে, এর মিত্র দেশগুলোও। আবার বলছি, এই দিকগুলো ধরে প্রেডিক্ট করাটা লং শট… ও হ্যাঁ, আরেকটা সম্ভাবনার জায়গা আছে… যদি যুক্তরাজ্য পুনরায় রেফারেন্ডাম দিয়ে ইইউতে ঢুকতে চায় আর ইইউ তাদেরকে গ্রহণও করে, তাহলেও একটা উপায় হতে পারে, কিন্তু সেটাও ওই লং শট…)

শেষ পর্যন্ত, যদিও, পরিস্থিতি খুব ভাল দেখাচ্ছে না, এবং যেটা মনে হচ্ছে সেটা হ’ল যুক্তরাজ্য এই বছরের শেষের দিকে একটি বছর ব্যাপী মন্দায় প্রবেশ করবে, যা ইতিমধ্যে সংকটাপন্ন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের জন্য আরও একটি খারাপ খবর।

তথ্যসূত্র 

1 – https://www.theguardian.com/global/2023/may/23/imf-uk-recession-tax-cuts-jeremy-hunt-debt
2 – https://www.newstatesman.com/comment/2023/06/uk-avoided-recession-inflation-growth
3 – https://kpmg.com/uk/en/home/insights/2018/09/uk-economic-outlook.html
4 – https://helpforhouseholds.campaign.gov.uk/help-with-your-bills/
5 – https://commonslibrary.parliament.uk/research-briefings/cbp-9680/
6 – https://www.ons.gov.uk/economy/grossdomesticproductgdp/bulletins/gdpmonthlyestimateuk/april2023
7 – https://www.ons.gov.uk/economy/grossdomesticproductgdp/bulletins/gdpmonthlyestimateuk/april2023
8 – https://www.reuters.com/markets/europe/investors-increase-bets-uk-recession-rate-hikes-bite-2023-06-22/
9 – https://www.bloomberg.com/news/articles/2023-06-17/britain-faces-recession-and-flood-of-job-losses-if-rates-hit-6?srnd=premium-uk
10 – https://www.theguardian.com/business/2023/may/26/rishi-sunak-warned-over-possible-uk-recession-in-2024
11 – https://twitter.com/faisalislam/status/1673700753779613698
12 – https://www.youtube.com/watch?v=zLzWRh-0UJw&ab_channel=SkyNews
13 – https://www.philadelphiafed.org/-/media/frbp/assets/economy/articles/business-review/1993/brnd93lb.pdf
14 – https://www.theguardian.com/business/2023/may/26/jeremy-hunt-will-back-more-interest-rate-rises-even-if-it-pushes-uk-to-recession-bank-of-england
15 – https://www.federalreserve.gov/econres/feds/files/2022079pap.pdf
16 – https://www.philadelphiafed.org/-/media/frbp/assets/economy/articles/business-review/1993/brnd93lb.pdf
17 – https://www.bloomberg.com/news/articles/2023-06-27/boe-set-to-tip-uk-into-recession-by-year-end-economists-say
18 – https://apnews.com/article/bank-of-england-interest-rates-inflation-a87fa97e33df6e79f7097cc2acd955fa
19 – https://www.nytimes.com/2023/06/24/business/bank-of-england-inflation.html
20 – https://www.bloomberg.com/news/articles/2023-06-27/boe-set-to-tip-uk-into-recession-by-year-end-economists-say
21 – https://www.telegraph.co.uk/business/2023/06/22/bank-of-england-britain-recession/

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.