মাল্টা-বুরেট কালচার, আফনতোভা গোরা ও এনশিয়েন্ট নর্থ ইউরেশিয়ান (ANE)

মাল্টা-বুরেট কালচার

ওভারভিউ : মালটা-বুরেট সংস্কৃতি (Mal’ta–Buret’ culture) হচ্ছে আনু. ২৪,০০০ – ১৫,০০০ বছর পূর্বের আপার প্যালিওলিথিক যুগের একটি আর্কিওলজিকাল কালচার যা উত্তর আঙ্গারা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে, বৈকাল হ্রদের পশ্চিমাঞ্চলে বর্তমান রাশিয়ান ফেডারেশন এর সাইবেরিয়া অঞ্চলের ইরকুৎস্ক ওব্লাস্টে অবস্থিত। ইরকুৎস্ক ওব্লাস্টের উসলস্কি জেলার মালটা গ্রাম ও বোখানস্কি জেলার বুরেট গ্রামের নাম অনুসারে প্রত্নস্থলটির নামকরণ করা হয়েছে। ১৯২০ সালে মালটা গ্রামের কাছে একটি বালকের দেহাবশেষ আবিষ্কৃত হয়, যে আজ থেকে ২৪,০০০ বছর পূর্বে জীবিত ছিল। দেহাবশেষটি MA-1 নামে পরিচিত। ২০১৩ সালে MA-1 নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় যা অনুসারে, এই বালকটি এমন একটি জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভূক্ত ছিল যা সাইবেরীয়, আমেরিকান ইন্ডিয়ান, ও ব্রোঞ্জ যুগের ইউরেশীয় স্তেপ অঞ্চলের ইয়াম্নায়া ও বোতাই জনগোষ্ঠীর জিনগত পূর্বপুরুষের সাথে সম্পর্কিত। বিশেষ করে আধুনিক কালের আদিবাসী আমেরিকান, কেট, মানসি ও সেলকাপদের মধ্যে এমন প্রচুর পূর্বপুরুষত্ব পাওয়া গেছে যা MA-1 এর সাথে সম্পর্কিত। মালটা সংস্কৃতি সম্পর্কে যা যা জানা যায় তার বেশিরভাগই এসেছে রুশ আর্কিওলজিস্ট মিখাইল গেরাসিমভ এর কাছ থেকে। ফরেন্সিক ফেশিয়াল রিকনস্ট্রাকশনে অবদানের জন্য অধিক পরিচিত মিখাইল গেরাসিমভ ১৯২৭ সালে মালটায় খনক করে এই বৈপ্লবিক আবিষ্কারটি করেন। সেই আবিষ্কারের পূর্বে উত্তরাঞ্চলীয় এশিয়ার আপার প্যালিওলিথিক সমাজ সম্বন্ধে কিছুই জানা ছিল না। খনন ও গবেষণার উদ্দেশ্যে বাদবাকি কর্মজীবনে গেরাসিমভ মালটায় আরও দুবার ভ্রহণ করেন।

বাসস্থান ও সরঞ্জামাদি : মালটায় আধা-ভূগর্ভস্থ বাড়ি (semi-subterranean) ছিল, বড় বড় প্রাণীর হাড় দিয়ে এর দেয়াল, আর হরিণের শিং এর উপর পশুর চামড়া দিয়ে ঢেকে দিয়ে এর ছাদ তৈরি করা হয়। এধরণের বাসস্থান সাইবেরীয় কঠোর জলবায়ুর হাত থেকে রক্ষা করত। যেসব প্রমাণ পাওয়া গেছে সেগুলো নির্দেশ করছে যে, মালটা হল পূর্ব সাইবেরিয়ার সব থেকে প্রাচীন প্রত্নস্থল, যদিও রিলেটিভ ডেটিং-এ কিছু অনিয়ম দেখায়। সরঞ্জামাদি নির্মাণে ফ্লিন্ট ন্যাপিং (ফ্লিন্ট পাথরে আঘাত) এর ব্যবহার কিন্তু প্রেশার ফ্লেকিং (চাপ দিয়ে থাক করার) এর অনুপস্থিতি, এবং প্রাথমিক ধরণের প্রস্তরগত সরঞ্জামের অনবরত ব্যবহার থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে তারা প্রাথমিক আপার প্যালিওলিথিক ছিল। তবুও এদের মধ্যে স্ক্রেব্লো (বড় পার্শ্ব ছাটাইকারক বা side scraper) এরও অভাব দেখা গেছে যা অন্যান্য সাইবেরীয় প্যালিওলিথিক প্রত্নস্থলে দেখা যায়। এছাড়া এই সংস্কৃতিতে নুড়ি মজ্জা (pebble core), কিলকাকৃতি মজ্জা (wedge-shaped core), বিউরিন (প্রাগৈতিহাসিক মানুষের বাটালি বা খোদাই যন্ত্র) এবং যৌগিক সরঞ্জাম কখনও পাওয়া যায়নি। এইসব বৈশিষ্ট্যের অভাবের কারণে, আর সেই সাথে এদের শৈল্পিক শৈলীর আশেপাশের কেবল একটি প্রত্নস্থলেই পাওয়া যাওয়া – এই দুই মিলিয়ে মালটা সংস্কৃতি হল সাইবেরিয়ার একটি অনন্য সংস্কৃতি।

শিল্প : আপার প্যালিওলিথিকে দুই ধরণের শিল্প ছিল: দেয়াল চিত্র বা ম্যুরাল শিল্প (যা পূর্ব ইউরোপে বেশি দেখা যায়), আর ম্যামথের দাঁত বা হরিণের শিং-এ খোঁদাই করা বহনীয় শিল্প বা পোর্টেবল আর্ট (এটা পশ্চিম ইউরোপ থেকে, উত্তর ও মধ্য এশিয়া জুড়ে পাওয়া যায়)। এই শৈল্পিক ধ্বংসাবশেষগুলোতে বাঁকা হাড়, ম্যামথ ও শিং জাতীয় বস্তুতে সাধারণত কোন বিশেষজ্ঞের হাতে খোদাই করা পাখি, মানব নারী এসব পাওয়া যায়। এই ধরণের শিল্পগুলো হল মালটা সংস্কৃতির কৃতিত্ব। নারী মূর্তিকা বা female statuettes ছাড়াও তারা পাখির ভাষ্কর্য বানিয়েছে, রাজহংস, রাজহংসী, হাঁস এঁকেছে। মালটা সংস্কৃতির লোকেরা যেসব ম্যামথ সংক্রান্ত বস্তু ব্যবহার করত তার সাথে ১৯শ ও ২০শ শতকের সাইবেরীয় শামানদের বস্তুসমূহের এথনোগ্রাফিক অ্যানালজি করে প্রস্তাব করা হয় যে, মালটা সংস্কৃতির সেই বস্তুগুলো হল পূর্ণ বিকশিত শামানিজমের সাক্ষ্য। সেই সাথে এখানে ম্যামথের দাঁতের ফলকে খোদাই করা চিত্র দেখা যায়। এদের একটি হল ম্যামথের ছবি, যার দাঁত, শুর ও মোটা পা খুব সহজেই চেনা যায়। শরীর বরাবর সরল রেখা বসিয়ে ম্যামথের পশমও এখানে খোদাই করা হয়েছে বলে মনে হয়। আরেকটি চিত্রে দেখা যায় তিনটি সাপ মাথা উঁচু করে আছে আর পাশ ফিরে চেয়ে আছে। বিশ্বাস করা হয় যে এই সাপগুলো কোবরাদের সদৃশ।

ভেনাস ফিগারিন : হয়তো ভেনাস ফিগারিন বা ভেনাস মূর্তিকাগুলোই প্যালিওলিথিক যুগের পোর্টেবল শিল্পসমূহের সর্বোত্তম উদাহরণ। মালটা আবিষ্কৃত হবার পূর্বে ভেনাসের ক্ষুদ্র প্রস্তরমূর্তিগুলো কেবল ইউরোপেই পাওয়া যেত, যেগুলো বানানো হত ম্যামথের দাঁত থেকে। এগুলো ছিল উচ্চমাত্রায় শৈলীকৃত, আর প্রায়ই এগুলোয় প্রসাধনের ব্যবহার হত, এবং এগুলোতে থাকত অনুপাতহীন বৈশিষ্ট্য (বিশেষ করে স্তন ও নিতম্বের ক্ষেত্রে)। বেশিরভাগের মতে, এই বর্ধিত বৈশিষ্ট্যসমূহের দ্বারা উর্বরতাকে বোঝানো হত। মালটায় বিভিন্ন আকৃতির প্রায় ৩০টি ক্ষুদ্র নারী মূর্তি পাওয়া যায়। এগুলোর আকার ছিল বিভিন্ন ধরণের, সেগুলোতে ছিল ভাষ্কর্যের বাস্তবতাবাদ, কিন্তু তাতে নিখুঁৎভাবে পুনরাবৃত্তির অভাব ছিল। তবে সেগুলোতে নির্দিষ্ট চিহ্নগুলোর বিকাশ লক্ষ করা যায়। প্রথম দৃষ্টিতে মনে হবে যে, মালটার ভেনাসের ফিগারিনগুলো দুই ধরণের: অতিরঞ্জিত আকার নিয়ে পূর্ন শরীরের নারী, আর চিকন, সূক্ষ্ম আকারের নারী। কোনো কোনটি নগ্ন, আবার কোন কোনটিতে কিছু চিহ্ন দেখা যায় যেগুলো লোম বা পোশাককে নির্দেশ করে। ইউরোপের ভেনাস মূর্তিকাগুলোর মুখমণ্ডল খোদাই করা হয়নি, কিন্তু মালটার কোন কোন ভেনাস মূর্তিতে মুখমণ্ডল খোদাই করা হয়েছে। এখানকার বেশিরভাগ মূর্তিই দেখা যায় নিচের দিকে চোখা হয়ে যায়, আর তাই মনে করা হয় যে এটা করা হয় ভূমির সাথে এদেরকে গেঁথে রাখতে বা খাড়া করে রাখতে। মৃতদের আত্মাকে চিহ্নিত করার জন্যেও তাদেরকে ব্যবহার করা হতে পারে। সাইবেরিয়া সহ সারা পৃথিবী জুড়েই “স্পিরিট ডল”-কে ব্যবহার করা হয়েছে, সমসাময়িক অনেক মানুষও স্পিরিট-ডল সম্পর্কিত চর্চা করে থাকে। পশ্চিমা বিশ্বে মালটার ফিগারিনগুলো নিয়ে অনেক আগ্রহের সৃষ্টি হয়, কেননা এগুলো দেখে মনে হয় যে, এরা সেই সময়ের ইউরোপীয় নারীদের শরীরের আকারকে তুলে ধরে। মালটা এবং আপার প্যালিওলিথিক ইউরোপের মধ্যে সাদৃশ্য তাদের সরঞ্জাম ও বসতিগুলোর মধ্যেও সাদৃশ্যের সাথে মিলে যায়। অন্যদিকে, কেউ যুক্তি দিতে পারে যে, একটি দল হিসেবে মালটার ভেনাসের ফিগারিনগুলো পশ্চিম ও মধ্য ইউরোপের ভেনাসের ফিগারিনগুলো থেকে ভিন্ন ছিল। যেমন, কোন সাইবেরীয় নমুনাতেই স্ফীত উদর দেখানো হয়নি যা অনেক ইউরোপীয় নমুনায় দেখানো হয়েছে। সেই সাথে মালটার অনেক ফিগারিনে স্তনেরও অভাব দেখা যায়, খুব কম মূর্তিতেই এমন স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় যা দিয়ে তাদেরকে নারী বলে সংজ্ঞায়িত করা যায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটা, সেটা হল মালটার ভেনাসের ক্ষুদ্র মূর্তিগুলোর প্রায় অর্ধেকের মধ্যে কিছু মুখমণ্ডলীয় খুঁটিনাটি দেখা যায়, যা ইউরোপের ভেনাসের ক্ষুদ্র মূর্তিগুলোতে নেই। এই মানুষগুলো আর তাদের সংস্কৃতির উদ্ভব কোথা থেকে হয়েছে তার নির্দিষ্ট উত্তর বের করা হয়তো সম্ভব হবে না। ২০১৬ সালের একটি জিনোমিক গবেষণা বলছে, মালটা জনগোষ্ঠীর সাথে ডলনি ভেস্টোনিস পিপল (Dolní Věstonice people) ও গ্রাভেটিয়ান কালচারের (Gravettian culture) কোন জিনগত সম্পর্ক নেই।

সিম্বলিজম : প্যালিওলিথিক কালচারের এই প্রাচীনতম স্থানটি নিয়ে আলোচনা করে জোসেফ ক্যাম্পবেল সেখানে পাওয়া নিদর্শনগুলির প্রতীকী রূপগুলিতে মন্তব্য করেছেন, “স্পষ্টতই আমরা একটি পুরা প্রস্তরযুগীয় প্রদেশ নিয়ে কথা বলছি, যেখানে সর্প, গোলোকধাঁধা এবং পুনর্জন্মের মূলভাবগুলো ইতিমধ্যেই একটি প্রতীকী রূপ লাভ করেছে, সেই সাথে চলে এসেছে সানবার্ড ও শামান উড্ডয়নের ধারণা, আছে আগুন রক্ষক দেবীর ধারণা, মানুষের দ্বিতীয় জন্মের মাতার ধারণা, বন্য বিষয়সমূহের নারী ও খাদ্য সরবরাহের দেবীর ধারণা।

আফনতোভা গোরা

ওভারভিউ : আফনতোভা গোরা (Afontova Gora) একটি লেইট আপার প্যালিওলিথিক ও মেসোলিথিক সাইবেরিয়ান প্রত্নস্থলের কমপ্লেক্স যা রাশিয়ার ক্রাসনয়ার্স্ক শহরের ইয়েনিসেই নদীর তীরে অবস্থিত। মালটা-বুরেট সংস্কৃতির লোকেদের সাথে আফনতোভা গোরার সাংস্কৃতিক ও জিনতাত্ত্বিক সম্পর্ক রয়েছে। ১৮৮৪ সালে আই. টি. সাভেনকভ এই কমপ্লেক্সটি প্রথম খনন করেন। এই কমপ্লেক্সে পাঁচ বা তারও বেশি ক্যাম্পসাইটের অনেক স্ট্র্যাটিগ্রাফিক লেয়ার রয়েছে। ক্যাম্পসাইটগুলো ম্যামথ শিকারের প্রমাণ দেখায় এবং এগুলো ছিল ম্যামথ শিকারীদের পূর্ব দিকে প্রসারণের ফল। আফনতোভা গোরায় প্রাপ্ত মানব জীবাশ্মসমূহ হারমিটেজ জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।

প্রত্নস্থলসমূহ : Afontova Gora I ইনিসেই নদীর পশ্চিম তোরে অবস্থিত, এখানে ঘোড়া, ম্যামথ, রেইনডিয়ার, স্তেপ বাইসন ও লার্জ ক্যানিডদের অবশেষ পাওয়া গেছে। ১৬,৯০০ বছর পূর্বের একটি ক্যানিড টিবিয়া ও খুলি এখানে পাওয়া গেছে, যা কুকুরের টিবিয়া আর খুলির মত, কিন্ত প্রজাতিটি এখন বিলুপ্ত। এটি প্লাইস্টোসিন যুগের বা আধুনিক উত্তরাঞ্চলীয় নেকড়েদের সাথে মেলে না। Afontova Gora II হচ্ছে সেই প্রত্নস্থল যেখানে মানব অবশেষসমূহ পাওয়া যায়। এই স্থলটি ১৯১২ থেকে ১৯১৪ সালে ভি. আই. গ্রোমভ এই প্রত্নস্থলটি খনন করেন। ১৯২৪ সালে জি. পি. সসনোভস্কি, এন. কে. অয়েরবাখ এবং ভি. আই. গ্রোমভ এখানে মানব ফসিল খুঁজে পান। এই প্রত্নস্থলে ম্যামথ, আর্কটিক শেয়াল, রেইনডিয়ার, বাইসন ও ঘোড়ার অবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে। Afontova Gora II এ সাতটি স্তর রয়েছে। তৃতীয় স্তরটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই স্তরটিতে সর্বোচ্চ সংখ্যক সাংস্কৃতিক শিল্পকর্ম পাওয়া যায় এবং এখানেই মানব জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়। এখানে ২০,০০০ এরও বেশি শিল্পকর্ম পাওয়া গেছে। সেই এই স্তরটিতে আছে ৪৫০টি সরঞ্জাম এবং ২৫০টিরও বেশি অস্থিনির্মিত শিল্পকর্ম যেগুলো হাড়, হরিণের শিং ও ম্যামথের দাঁত দ্বারা তৈরি। প্রাথমিক খননের ফলে দুজন পৃথক ব্যক্তির জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়েছিল – একটি ছিল ১১ থেকে ১৫ বছর বয়সের একজন শিশুর উপরের প্রিমোলার দাঁত এবং বাম রেডিয়াস, আলনা, হিউমেরাস, ফ্যালাংক্স, অপরটি ছিল একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ফ্রন্টাল হাড়। Afontova Gora III হচ্ছে সেই প্রত্নস্থল যার খনন কাজ করেন ১৮৮৪ সালে আই. টি. সাভেনকভ। এই প্রত্নস্থলটি ১৮৮০ এর দশকে খনি উত্তোলন দ্বারা বিঘ্নিত হয়। এই প্রত্নস্থলটি ৩টি স্তর রয়েছে। Afontova Gora V আবিষ্কৃত হয় ১৯৯৬ সালে।এই প্রত্নস্থলে খরগোস, পিকা, গুহাবাসী সিংহ, ঘোরা, রেইনডিয়ার, বাইসন ও তিতিরের অবশেষ পাওয়া গেছে। এই কমপ্লেক্সে দুজন ব্যক্তির দেহাবশেষ পাওয়া গেছে যারা Afontova Gora 2 (AG2) এবং Afontova Gora 3 (AG3) নামে পরিচিত। (Afontova Gora 1 নাম দেয়া হয়েছে একটি ক্যানিড বা কুকুর জাতীয় প্রাণীকে প্রাণীকে)।

Afontova Gora 2 : আফনতোভা গোরা ২ নামক মানব জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয় ১৯২০ এর দশকে দ্বিতীয় আফনতোভা গোরায় এবং এটি হারমিটেজ জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। কালনির্ণয় করে জানা গেছে এটি ১৬,৯৬০-১৪,৪৯০ বছর পূর্বের। ২০০৯ সালে গবেষকগণ হারমিটেজ জাদুঘরে গিয়ে এই অবশেষ এর হিউমেরাস হাড় থেকে ডিএনএ গ্রহণ করে। উল্লেখযোগ্য পরিমাণে দূষণের পরেও গবেষকগণ লো কভারেজের জিনোম নিষ্কাশন করতে সক্ষম হন। ডিএনএ বিশ্লেষণ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় এটি একজন পুরুষ ছিল। এই অবশেষটি মালটা-বুরেট সংস্কৃতিতে প্রাপ্ত MA1 (মালটা বালক) জীবাশ্মটির সাথে ঘনিষ্ঠ জিনতাত্ত্বিক সম্পর্ক দেখায়। আফনতোভা গোরা ২ কারিতিয়ানা জনগোষ্ঠী (Karitiana people) ও হান চাইনিজদের সাথেও জিনতাত্ত্বিক সম্পর্ক দেখায়। এর জিনোমের ১.৯-২.৭% ছিল নিয়ান্ডার্থাল থেকে প্রাপ্ত। ফু এট আল. (২০১৬) অনুসারে, AG-2 বিরল ওয়াই-ডিএনএ হ্যাপ্লোগ্রুপ Q1a1 এর অন্তর্গত (যা Q-F746 ও Q-NWT01 নামেও পরিচিত)।

Afontova Gora 3 : ২০১৪ সালে, দ্বিতীয় আফনতোভা গোরায় আরও মানব অবশেষগুলো পাওয়া যায় ইয়েনেসেই নদীর উপর একটি নতুন সেতু নির্মাণের সময় উদ্ধারমূলক খননের সময়। এই অবশেষগুলো দুজন ভিন্ন নারীর – একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীর এটলাস হাড় এবং একটি কিশোরী নারীর ম্যান্ডিবল ও পাঁচটি নিম্নপাটির দাঁত যার বয়স ১৪-১৫ বছর ছিল। প্রথমদিকে মনে করা হয়েছিল এই নতুন প্রাপ্ত জীবাষ্মগুলোর সময়কাল মোটামুটিভাবে আফনতোভা গোরা ২ এর মতই হবে। ২০১৭ সালে একটি প্রত্যক্ষ এএমএস ডেটিং এর মাধ্যমে জানা যায় এরা ১৬,১৩০ – ১৫,৭৪৫ বছর পুরনো (খ্রি.পূ. ১৪,৭১০±৬০ অব্দ)। আফনতোভা গোরা ৩ এর ম্যান্ডিবলকে কোমল (gracile) হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। গবেষকগণ আফনতোভা গোরা ৩ এর দাঁতের অঙ্গসংস্থান বিশ্লেষণ করে এই উপসংহার টেনেছেন যে, এর দাঁতগুলো আলতাই-সায়ান অঞ্চলের আরেকটি জীবাশ্ম (দ্য লিস্টভেনকা চাইল্ড) এর সাথে সবচেয়ে বেশি সদৃশ, যা পশ্চিমাঞ্চলীয় বা পূর্বাঞ্চলীয় কোনটাই নয়। আফনতোভা গোরা ৩ এবং লিস্টভেনকা পৃথক দন্তবৈশিষ্ট্য দেখায় যেগুলো মালটা বালক (MA1) সাইবেরীয় জীবাশ্মগুলোর থেকে ভিন্ন। আফনতোভা গোরা ৩ এর একটি দাঁত থেকে ডিএনএ নিষ্কাশন করে তার বিশ্লেষণ করা হয়েছে। আফনতোভা গোরা ২ এর তুলনায় গবেষকগণ এখান থেকে উচ্চ কভারেজ এর জিনোম পেতে সক্ষম হন। ডিএনএ বিশ্লেষণ থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে জীবাশ্মটি একজন নারীর ছিল। মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায় এই জীবাশ্মটি হ্যাপ্লোগ্রুপ R1b এর। এর জিনোমের ২.৯-৩.৭% ছিল নিয়ান্ডার্থাল উদ্ভূত। ২০১৬ সালের একটি গবেষণায় গবেষকগণ নিশ্চিত করেন আফনতোভা গোরা ২, আফনতোভা গোরা ৩ ও মালটা ১ (মালটা বালক) থেকে একই সাধারণ উত্তরসুরি এসেছে যেগুলোকে একত্রে মালটা গুচ্ছ (Mal’ta cluster) বলা হয়। জিনতাত্ত্বিকভাবে আফনতোভা গোরা ৩ মালটা ১ এর তুলনায় আফনতোভা গোরা ২ এর ঘনিষ্ঠ নয়। মালটা ১ এর সাথে তুলনা করলে দেখা যায় আফনতোভার বংশগতি আধুনিক মানুষের উপর বেশি অবদান রেখেছে, এবং এটি আমেরিকার আদিবাসীদের প্রতি জিনতাত্ত্বিকভাবে বেশি ঘনিষ্ঠ। ফিনোটাইপগত বিশ্লেষণ দেখায় আফনতোভা গোরা ৩ rs12821256 অ্যালিল বহন করে যা ইউরোপীয়দের সোনালী চুলের সাথে সম্পর্কিত, যার ফলে আফনতোভা গোরা ৩ হয়ে যায় এই উদ্ভূত অ্যালীলটির সর্বপ্রথম পরিচিত ব্যক্তি যে এই সোনালী চুলের সাথে সম্পর্কিত অ্যালীলটি বহন করেছিল।

এনশিয়েন্ট নর্থ ইউরেশিয়ান (ANE)

মাল্টা-বুরেট এর প্রতিনিধি : আর্কিওজেনেটিক্সে এনশিয়েন্ট নর্থ ইউরেশিয়ান (ANE) নামটি একটি পূর্বপুরুষগত উপাদানকে প্রদান করা হয়েছে যা নর্দার্ন সাইবেরিয়ার ইয়ানা পিপল, মাল্টা-বুরেট কালচার ও তাদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত জনগোষ্ঠীকে প্রতিনিধিত্ব করে। ANE-কে MA-1 বা “মালটা বালক” এর সাথে সম্পর্কের দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হয়। মালটা বালক হচ্ছে মালটা-বুরেট সংস্কৃতির প্রত্নস্থলটিতে পাওয়া একটি মানব জীবাশ্ম, জীবাশ্মটি যে বালকের সে ২৪,০০০ বছর আগের লাস্ত গ্লেশিয়াল ম্যাক্সিমামের সময় জীবিত ছিল। তার জীবাশ্মটি ১৯২০ সালে আবিষ্কৃত হয়। MA-1 হচ্ছে বেসাল ওয়াই-ডিএনএ R* (R-M207*) এর একটি মাত্র উদাহরণ, অর্থাৎ হ্যাপ্লোগ্রুপ R* এর একটি মাত্র সদস্য। এটি হ্যাপ্লোগ্রুপ R1 ও R2 এর নয়, যেগুলো হল হ্যাপ্লোগ্রুপ R* এরই গৌণ সাবক্লেডসমূহ। MA-1 এর মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএটি হল হ্যাপ্লোগ্রুপ U এর একটি অমীমাংসিত সাবক্লেডের।

উদ্ভব : রাঘভান এট আল. (২০১৩) ও বালথার (২০১৩) অনুসারে, ANE গোষ্ঠীকে “বেসাল টু মডার্ন ডে ইউরোপিয়ান” বলা হয়েছে, কিন্তু ইস্ট এশিয়ানদের সাথে এদেরকে সম্পর্কিত করা হয়নি, এবং এরা সম্ভবত সেন্ট্রাল এশিয়ার ইউরেশিয়ান স্তেপে উদ্ভূত বলে সাজেস্ট করা হয়েছে। লাজারিডিস এট আল. (২০১৪) অনুসারে, ANE ও ওয়েস্টার্ন হান্টার গ্যাদারার (WHG) এর সাধারণ পূর্বপুরুষ  প্রায় ৪০,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ইস্টার্ন ইউরেশিয়ান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, এবং প্রায় ২২,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ANE ও WHG বিচ্ছিন্ন হয় (যে MA-1 ফসিলকে ANE এনসেস্ট্রাল কম্পোনেন্টের প্রতিনিধি ধরা হয় তা ২২,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের)। জিওং এট আল. (২০১৯)-এ, ANE-কে ইউরোপের প্যালিওলিথিক বা মেসোলিথিক হান্টার-গ্যাদারারদের সাথেও সম্পর্কিত করা হয়েছে। এদিকে, কানাজাওয়া-কিরিয়ামা এট আল. (২০১৭) গবেষণা অনুসারে, MA-1/Mal’ta-তে, অর্থাৎ ANE-তে ইস্ট-ইউরেশিয়ান বা ইস্ট এশিয়ান রিলেটেড কম্পোনেন্টও থাকতে পারে যা এদের এন্সেস্ট্রির ২১-২৭% কন্ট্রিবিউট করে, বাদ বাকি অংশ ইউরেশিয়া রিলেটেড। তাছাড়া, ল্যাজারিডিস এট আল. (২০১৬) গবেষণায় দেখানো হয়েছে, ইস্টার্ন হান্টার গ্যাদারার (EHG) হলো WHG এবং Onge→Han ক্লাইনের মিশ্রণ, এর মানে এখান থেকে ANE-কে Onge→Han ক্লাইনের একটি জনগোষ্ঠী বোঝানো হচ্ছে। এখান থেকে বোঝা যাচ্ছে, ২৪,০০০ বছরের পূর্বে WHG এর অস্তিত্ব ছিলনা, সেক্ষেত্রে তার পূর্বে যা ছিল তাকে ANE আর WHG মিলে মিশে ইউরোপিয়ান বলতে হবে। এই ইউরোপিয়ানরা ৪০,০০০ বছর আগে ইস্ট এশিয়ান বা ইস্ট ইউরেশিয়ানদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, তারও আগে বেসাল ইউরেশিয়ানদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ২২,০০০ খ্রি.পূ.-তে যেটা হলো তা হচ্ছে, ইউরোপিয়ানদের একটি অংশ WHG হলো, আরেকটি অংশ ইস্ট ইউরেশিয়ানদের সাথে হালকা মিশে (যাদের সাথে ৪০ হাজার বছর আগে বিচ্যুতি হয়েছিল) ANE হলো। অন্যভাবে বললে, ইউরোপিয়ানদের পূর্বের অংশ ইস্ট ইউরেশিয়ানদের সাথে মিশে পশ্চিম অংশের সাথে আলাদা হলো, যেখানে পূর্বের অংশ ANE আর পশ্চিম অংশ WHG হয়ে উঠল। একটা মজার বিষয় হলো ওয়াই ডিএনএ হ্যাপ্লোগ্রুপ R* গেল ANE-তে, কিন্তু R এর ডেরিভেশন R1b WHG এর।

বিস্তৃতি : MA1 এবং আফনতোভা গোরার সদৃশ মানব গোষ্ঠী আমেরিকার আদিবাসী, ইউরোপীয়, ককেশীয়, মধ্য এশীয়দের মধ্যে জিনগত অবদানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, সেই সাথে এটি মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষুদ্র অবদান ও পূর্ব এশীয়দের মধ্যে কিছু অবদান রেখেছে।

  • ইউরোপ : প্রাচীন ব্রোঞ্জ যুগীয় স্তেপ কালচার ইয়াম্নায়া কালচার ও আফানাসিয়েভো কালচারে এটি পাওয়া যায়। জিনোমগত গবেষণাসমূহ এও নির্দেশ করছে যে, ANE পূর্বপুরুষত্ব প্যালিওলিথিক যুগের অনেক পর ইয়াম্নায়া সংস্কৃতির দ্বারা পশ্চিম ইউরোপে প্রবেশ করেছিল। ইয়াম্নায়া জনগোষ্ঠীর লোকেদের অবশেষ পরীক্ষা করে দেখা গেছে তাদের মধ্যে পরোক্ষভাবে ৫০% ANE পূর্বপুরুষত্ব ছিল। ল্যাজারিডিস এট আল. (২০১৬) উল্লেখ করেন, ANE পূর্বপুরুষত্বের একটি ক্লাইন ইউরোপের পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত বিস্তৃত। আধুনিক ইউরোপীয়দের মধ্যেও ৭%-২৫% ANE মিশ্রণ পাওয়া যায় যা সরাসরিভাবে ইয়াম্নায়া থেকে এসেছে, কিন্তু ব্রোঞ্জ যুগের পূর্বের ইউরোপীয়দের মধ্যে এই ANE পূর্বপুরুষত্ব ছিল না। ইয়াম্নায়া প্রভাব ছাড়াও ইউরোপীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে ANE পূর্বপুরুষত্ব পাওয়া যায়। এটি এসেছে ইউরোপীয়দের সাথে ইস্টার্ন হান্টার গ্যাদারারদের (EHG) সাথে মিথোস্ক্রিয়ার ফলে, যার ফলে স্কান্ডিনেভিয়ান হান্টার গ্যাদারার (SHG) জনগোষ্ঠীর উদ্ভব হয়।
  • আমেরিকা : ফ্লেগনতভ এট আল. (২০১৬) খুঁজে পান, ANE পূর্বপুরুষত্বের বৈশ্বিক সর্বোচ্চ রয়েছে আধুনিক আমেরিকার আদিবাসী, কেটস, মানসি ও সেলকাপ জনগোষ্ঠীতে। দক্ষিণ আমেরিকার আদিবাসীদের ৪২% পূর্বপুরুষত্ব এই ANE এর থেকে এসেছে, যেখানে উত্তর আমেরিকার আদিবাসীদের ক্ষেত্রে এই পূর্বপুরুশত্ব ১৪-৩৮% এর মধ্যে যা মালটা-বুরেট জনগোষ্ঠীর জিন প্রবাহ থেকে এসে থাকতে পারে। এই পার্থক্যটি তৈরি হয়েছে আমেরিকায় সাইবেরীয়দের পশ্চাৎবর্তী অভিপ্রায়ণের কারণে। এক্ষেত্রে সবচাইতে কম পূর্বপুরুষত্ব পাওয়া যায় এস্কিমো ও আলাস্কার আদিবাসীদের মধ্যে, কেননা এই জনগোষ্ঠীসমূহ আমেরিকায় মোটামুটি ৫,০০০ বছর পূর্বের অভিপ্রায়ণের ফল। আমেরিকার আদিবাসীদের মধ্যে অন্যান্য জিন প্রবাহ হয়েছে পূর্ব ইউরেশীয়দের থেকে।
  • সাইবেরিয়া ও পূর্ব এশিয়া : MA1 দুটো প্রাচীন আপার প্যালিওলিথিক সাইবেরীয় স্যাম্পলের সাথেও সম্পর্কিত যাদেরকে ইয়ানা নদীর পাশে পাওয়া গেছে, এদেরকে এনশিয়েন্ট নর্থ সাইবেরিয়ান (ANS) বলে। অন্য দক্ষিণ-মধ্য সাইবেরীয় জনগোষ্ঠী (আফনতোভা গোরা-২) এর জিন সিকুয়েন্সিং এর মাধ্যমে জানা গেছে এটি ১৭,০০০ বছর পুরনো, এবং এর অটোসোমাল জেনেটিক সিগনেচার মালটা বালক -১ এরটার সাথে মিলে যায়। এটি নির্দেশ করে, এই অঞ্চলটিতে মানুষ শেষ হিম সর্বোচ্চ এর সময় জুড়ে অবিরামভাবে বসতি স্থাপন করেছে। MA1 আপার প্যালিওলিথিক চীনের তিয়ানিউয়ান মানবের (Tianyuan man) সাথেও সম্পর্কিত।

জিনগত অবদান : ANE যেসব জেনেটিক এনসেস্ট্রাল কম্পোনেন্ট গঠনে অবদান রেখেছে –

  • ইস্টার্ন হান্টার গ্যাদারার (EHG) দলটি ANE থেকে সবচেয়ে বেশি (৭৫%) পূর্বপুরুষত্ব লাভ করেছে। উত্তর ইউরোপের কারেলিয়ায় পাওয়া দুটো ও রাশিয়ার সামারায় পাওয়া একটি মানব অবশেষ এই দলটির প্রতিনিধিত্ব করে। কারেলিয়ার দুজনের একজন ওয়াই-ডিএনএ হ্যাপ্লোগ্রুপ R1a-M417 এর, যে আনু. ৮৪০০ বছর পূর্বে বসবাস করত, আরেকজন ওয়াই-ডিএনএ হ্যাপ্লোগ্রুপ J এর, যে আনু. ৭২০০ বছর পূর্বে বসবাস করত। সামারার জন ওয়াই-ডিএনএ হ্যাপ্লোগ্রুপ R1b-P297, এবং আনু. ৭৬০০ বছর পূর্বে বাস করত। এই বংশগতি আনু. ১৮,০০০ বছর পূর্বের আফনতোভা গোরা এর প্রাচীন পূর্ব ইউরেশীয় ANE নমুনাটির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। লাস্ট গ্লেশিয়াল ম্যাক্সিমামের সমাপ্তির পর ওয়েস্টার্ন হান্টার গ্যাদারার (WHG) এবং EHG এনসেস্ট্রি পূর্ব ইউরোপে মিশ্রিত হয়ে যায়, যার ফলে মেসোলিথিক ইউরোপে ANE থেকে উদ্ভূত পূর্বপুরুষত্বের প্রাথমিক উপস্থিতি দেখা যায়। সাক্ষ্য-প্রমাণসমূহ নির্দেশ করে যে, ANE-গণ পূর্ব সাইবেরিয়া থেকে পশ্চিমে অভিপ্রায়ণ করে এবং নিজেদের মধ্যে WHG ও অন্যান্য পশ্চিম ইউরোপীয় জনগোষ্ঠীকে শোষণ করে নেয়।
  • ককেশিয়ান হান্টার গ্যাদারার (CHG) এর প্রতিনিধিত্ব করে জর্জিয়ার সাতসুরবিলা গুহার একটি মানব অবশেষ যে আনু. ১৩,০০০ বছর পূর্বে জীবিত ছিল, এবং এটি ৩৬% ANE  উদ্ভূত মিশ্রণ বহন করে। তাদের পূর্বপুরুষত্বের বাকিটা আসে জুজুয়ানা গুহার (Dzudzuana cave) মানব অবশেষটি থেকে যে প্রায় ২৬,০০০ বছর পূর্বে জীবিত ছিল, যার মধ্যে ANE মিশ্রণ নেই। প্রায় ১৩,০০০ বছর পূর্বে সাতসুরবিলায় ককেশাসে ANE পূর্বপুরুষত্ব আসবার পর CHG এর মধ্যে মধ্যে জুজুয়ানা সম্পৃক্ততা কমে যায়।
  • স্কান্ডিনেভিয়ান হান্টার গ্যাদারার (SHG) এর প্রতিনিধিত্ব করে ৬০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সুইডেনের মোটালায় সমাহিত এক ব্যক্তির পাওয়া অবশেষ। এরা WHG এর উত্তরসুরি ছিল যারা দক্ষিণ থেকে স্কান্ডিনেভিয়ায় গিয়ে বসতি স্থাপন করেছিল। সেই সাথে পরবর্তীতে EHG-রাও নরওয়ে এর তীরবর্তী অঞ্চল হয়ে স্কান্ডিনেভিয়ায় প্রবেশ করে।
  • ইরান নিওলিথিক (Iran_N) এর প্রতিনিধিত্বকারী অবশেষ আজ থেকে ৮৫০০ বছর পূর্বে বেঁচে ছিল, যার মধ্যে ৫০% ANE উদ্ভূত উপাদান ছিল, এবং বাকি ৫০% ছিল জুজুয়ানা সম্পর্কিত উপাদান। এর ফলে তারা অন্যান্য নিয়ার ইস্টার্ন ও আনাতোলিয়ান নিওলিথিকদের থেকে ভিন্ন, যাদের মধ্যে কোন ANE উপাদান ছিল না। পরবর্তীতে ইরান নিওলিথিকরা ইরান চ্যালকোলিথিকদের দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়, এই ইরান চ্যালকোলিথিকরা ছিল ইরান নিওলিথিক এবং নিয়ার ইস্টার্ন লেভান্ত নিওলিথিকের মিশ্রণ।
  • এনশিয়ান্ট বেরিঞ্জিয়ান/অ্যান্সেস্ট্রাল নেটিভ আমেরিকান (AB/ANA) হল আপওয়ার্ড সান রিভার প্রত্নস্থলে (dubbed USR1) প্রাপ্ত ১১,৫০০ বছর পূর্বের একটি শিশুর অবশেষের উপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট প্রত্নজিনতাত্ত্বিক পূর্বপুরুষত্ব।এই প্রাচীন বেরিঞ্জীয় পূর্বপুরুষত্ব ২০,০০০ বছর পূর্বে এন্সেস্ট্রাল নেটিভ আমেরিকান (ANA) পূর্বপুরুষত্ব থেকে এসেছে। এই ANA ২০,০০০ বছর পূর্বে ৪২-৪৩% ANE উপাদান এবং ৫৭-৫৮% ইস্ট এশিয়ান (EA) উপাদানের মিশ্রণে তৈরি হয়। গবেষণায় প্রাপ্ত এই ফলাফলটি লাস্ট গ্লেশিয়াল ম্যাক্সিমামের সময় আমেরিকায় মানব অভিপ্রায়ণের মডেলটির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
  • ওয়েস্ট সাইবেরিয়ান হান্টার গ্যাদারার (WSG) হল নির্দিষ্ট জিনতাত্ত্বিক বংশগতি যা ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম সায়েন্স জার্নালে নথিবদ্ধ হয়। WSG-তে ৩০% EHG পূর্বপুরুষত্ব, ৫০% ANE পূর্বপুরুষত্ব, এবং ২০-৩৮% ইস্ট এশিয়ান (EA) পূর্বপুরুষত্ব পাওয়া যায়।
  • ওয়েস্টার্ন স্তেপ হার্ডারস (WSH) হলো পন্টিক কাস্পিয়ান স্তেপের ইয়াম্নায়া কালচারের সাথে সম্পর্কিত জনগোষ্ঠীকে চিহ্নিত করার এন্সেস্ট্রাল কম্পোনেন্ট, একে প্রায়শই স্তেপ এন্সেস্ট্রি বলা হয়। এটি WHG, EHG ও আর্লি ইউরোপিয়ান ফার্মার (EEF) পূর্বপুরুষত্ব নিয়ে গঠিত।
  • লেইট আপার প্যালিওলিথিক লেক বৈকাল হচ্ছে Ust’Kyakhta-3 (UKY) যা ১৪,০৫০-১৩,৭৭০ বছর পূর্বে বর্তমান ছিল, এতে ৩০% ANE ও ৭০% ইস্ট এশিয়ান এনসেস্ট্রি রয়েছে।
  • লেইক বৈকাল হলোসিন – বৈকাল এনিওলিথিক (Baikal_EN) ও বৈকাল আর্লি ব্রোঞ্জ এইজ (Baikal_EBA) যথাক্রমে ৬.৪% ও ২০.১% ANE অ্যান্সেস্ট্রি পেয়েছে, যেখানে তাদের বাকি এন্সেস্ট্রি এসেছে ইস্ট এশিয়ান থেকে। বৈকাল হ্রদের পার্শ্ববর্তী Fofonovo_EN এর ১২-১৭% ANE এবং ৮৩-৮৭% ইস্ট এশিয়ান এন্সেস্ট্রি ছিল।
  • হোক্কাইদো জমন পিপল (Hokkaido Jōmon people) দ্বারা বিশেষভাবে জাপানের সর্ব-উত্তরের হোক্কাইদো অঞ্চলের জমন পিরিয়ডের পপুলেশনকে বোঝায়। যদিও জমন পিপল প্রধাণত ইস্ট এশিয়ান লিনিয়েজ থেকে এসেছে, তবুও একটি গবেষণায় এদের মধ্যে নর্দার্ন ইউরেশিয়ান ইয়ানা স্যাম্পলের সাথে সম্পর্ক পাওয়া গেছে, যারা নিজে মাল্টার সাথে সম্পর্কযুক্ত ANE-রিলেটেড গ্রুপ ছিল, এই ANE অংশটি প্রায় ২০%। আর এটা সাজেস্ট করে যে, হোক্কাইদো জমন পপুলেশনের মধ্যে একটি মাইনোর ইয়ানা জিন ফ্লো ঘটে থাকতে পারে। ৩৫০০ বছর পুরনো আরেকটি হোক্কাইদো জমন স্যাম্পলে ১৪% ইউরোপিয়ান রিলেটেড এনসেস্ট্রি পাওয়া গেছে। জিনাম এট আল (২০১৫) গবেষণায় দেখা গেছে, আইনু পিপলের অনেকের মধ্যে জিন অ্যালিল পাওয়া গেছে যেগুলো ইউরোপিয়ানদের মধ্যে পাওয়া যায়, কিন্তু জাপানিজ ও অন্যান্য ইস্ট এশিয়ানের মধ্যে অনুপস্থিত। এই অ্যালিলের কারণে আইনুদের মধ্যে ইউরোপিয়ান-লাইক অ্যাপিয়ারেন্স দেখা যায়, এবং সেটা প্যালিওলিথিক নর্দার্ন ইউরেশিয়া থেকে এসেছে। ২০২১ সালের একটি আর্কিওলজি স্টাডি থেকে জানা যায় যে, হোক্কাইদো জমন পিপল গঠিত হয়েছে ইস্ট এশিয়ান রিলেটেড “জমন ট্রাইব অফ হনশু” ও ইউরোপিয়ান রিলেটেড “টারমিনাল আপার প্যালিওলিথিক পিপল” (TUP পিপল) থেকে, প্রথমটি হোক্কাইদোর ও পরেরটি প্যালিওলিথিক নর্দার্ন ইউরেশিয়ার ইন্ডিজেনাস। হনশু জমন গ্রুপ প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ১৫,০০০ অব্দে সেখানে আসে ও ইন্ডিজেনাস “TUP” পিপলের সাথে মার্জ করে হোক্কাইদো জমন গ্রুপ ফর্ম করে। হোক্কাইদো জমন ও ওখোতস্ক পিপলের মিশ্রণে আইনু পিপল গঠিত হয়।

ফর্সা ত্বক ও সোনালী চুলের বিবর্তন : KITLG SNP rs12821256 এর উদ্ভূত অ্যালীলটি সম্ভবত ইউরোপীয়দের সোনালী চুলের সাথে সম্পর্কিত, এবং সোনালী চুলের কারণ। এই অ্যালীল বহন করা জ্ঞাত সর্বপ্রাচীন মানুষটি হল সাইবেরিয়ার ANE অবশেষ আফনতোভা গোরা ৩, যা খ্রিস্টপূর্ব ১৬১৩০ – ১৫৭৪৯ অব্দে জীবিত ছিল। এই অ্যালীলটি সামারা, মোতালা ও ইউক্রেইনের (১০১২৪, ১০০১৪ ও ১১৭৬৩) এর হান্টার-গ্যাদারার অবশেষসমূহের মধ্যে উপস্থিত, একই সাথে স্তেপ পূর্বপুরুষত্ব যুক্ত পরবর্তীতে আসা বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর অবশেষেও এই অ্যালীলটি পাওয়া যায়। যেহেতু EHG এর মধ্যে এই অ্যালীল পাওয়া যায়, কিন্তু WHG পূর্বপুরুষত্বে এটি পাওয়া যায়না, এখান থেকে বোঝা যায় যে, ANE জনগোষ্ঠীর মধ্যেই এই অ্যালীলটির উদ্ভব ঘটেছিল। জেনেটিসিস্ট ডেভিড রাইখ বলেন, সোনালী চুলের জন্য দায়ী এই KITLG জিন ইউরেশীয় স্তেপ থেকে ANE পূর্বপুরুষত্ব যুক্ত মানবগোষ্ঠীর বৃহদায়তনীয় অভিপ্রায়ণের সাথে সাথে মূলভূমির ইউরোপে প্রবেশ করে। হানেল ও কোলবার্গ (২০২০) গবেষণাটি বলছে, যেসব জনগোশঠীর মধ্যে ANE ছিল তারাই ফর্সা ইউরোপীয় স্কিন ও সোনালি চুলের জন্য দায়ী।

কম্প্যারেটিভ মিথোলজি : ANE কম্পোনেন্ট পৃথিবীর বিস্তৃত পরিসরে ছড়িয়ে আছে বলে কম্প্যারেটিভ মিথোলজির স্কলাররা এর মাধ্যমে এটি বহন করা লোকেদের মিথোলজিগুলোর সাধারণ অংশ নিয়ে মিথোলজিগুলোর উৎস্য রিকনস্ট্রাক্ট করার চেষ্টা করেছেন।

  • পরকালের পাহাড়ায় কুকুর : যেমন, আদারওয়ার্ল্ডকে কুকুর পাহাড়া দিচ্ছে – এই মিথেমটি সম্ভবত ANE বিশ্বাস থেকে উদ্ভুত। কেননা একই বিশ্বাস ইন্দো-ইউরোপিয়ান, নেটিভ আমেরিকান ও সাইবেরিয়ান মিথোলজিতে পাওয়া যায়। Siouan, Algonquian, Iroquoian এবং সেন্ট্রাল ও সাউথ আমেরিকান বিশ্বাস হলো মিল্কিওয়েতে একটি ভয়ঙ্কর কুকুর অবস্থান করছে, আত্মা যখন ইহকাল থেকে পরকালে যাবে তখন কুকুরটি তার পরীক্ষা নেবে। সাইবেরিয়ান চুকচি ও তুঙ্গুস বিশ্বাস হচ্ছে একটি গার্ডিয়ান অফ আফটারলাইফ ডগ ও একটি স্পিরিড ডগ মৃত ব্যক্তির আত্মাকে শোষণ করে নেবে ও তাকে পরকালের পথ দেখাবে। ইন্দো-ইউরোপীয় মিথগুলোতে, এই কুকুরটি সারবেরাস, শর্বর (যমের কুকুর) ও গারমার (Garmr) নামে পরিচিত। এনথনি ও ব্রাউন উল্লেখ করেন, এটি হচ্ছে প্রাচীনতম মিথেমগুলোর একটি যাকে কম্প্যারেটিভ মিথোলজির মাধ্যমে রিকভার করা সম্ভব। হিন্দু মিথোলজিতে শর্বর হলো যমের অধীনে থাকা একটি কুকুর। নেদারওয়ার্ল্ডকে যে দুটো কুকুর পাহাড়া দেয় এটি তার মধ্যে একটি। শর্বরকে ক্যানিস মেজোর নামে কনস্টিলেশন দ্বারা চিহ্নিত করা হয়, যেখানে আরেকটি কুকুরকে চিহ্নিত করা হয় ক্যানিস মাইনোর দ্বারা। এই উভয় কুকুর নেদারওয়ার্ল্ডের গেইটকে পাহাড়া দেয়, যে নেদারওয়ার্ল্ড পিতৃলোক বা বৈবস্বতলোক নামে পরিচিত, এটি যমের অধীনস্ত অঞ্চল। বৈদিক সাহিত্যে বলা হয়েছে মৃত আত্মার পথ হচ্ছে মিল্কিওয়ে ছায়াপথ, আর শর্বর সেটাকে পাহাড়া দেয়, যেমনটা নেটিভ আমেরিকানদেরও বিশ্বাস। শর্বরকে গ্রিক মিথোলজিতে সারবেরাসের (Cerberus) সাথে তুলনা করা হয়, যার বৈশিষ্ট্য শর্বরের মতই। কিন্তু সারবেরাসের কোন সঙ্গীর কথা বলা নেই, আর সাধারণত তাকে তিন মাথাওয়ালা কুকুর হিসেবে উল্লেখ করা হয়। নর্স মিথোলজিতে শর্বরের সাথে তুলনীয় হচ্ছে ওডিনের নেকড়ে। ওডিন দ্য অলফাদার যমের মতই আসনে বসেন যাকে দুটো কুকুর পাহাড়া দেয়, যদিও শিকারী, ওয়ান্ডারার, ঝড় ও শীতের দেবতা ওডিন বৈদিক রুদ্রের সাথেই বেশি তুলনীয়। এদিকে নর্স মিথোলজিতে গার্মার হচ্ছে একটি নেকড়ে বা কুকুর যা হেল ও র‍্যাগনারকের সাথে সম্পর্কিত, আর একে হেলের গেইটের রক্ত মাখা গার্ডিয়ান হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। ওল্ড নর্সে Garmr শব্দের অর্থ হলো rag বা ন্যাকরা। এর এটিমোলজি নিশ্চিত নয়। ব্রুস লিংকন তার ১৯৯১ সালের গবেষণায় গারমার, শর্বরা ও গ্রিক মিথের কুকুর সারবেরাস এর নামগুলো একই প্রোটো ইন্দ ইউরোপীয় রুট *ger- থেকে উদ্ভুত বলে দাবি করেন। কিন্তু পরে ডেনিয়েল অগডেন এই মত প্রত্যাখ্যান করেন। উল্লেখ্য শর্বর শব্দের অর্থ হচ্ছে চিত্র-বিচিত্র বা স্পটেড। ওল্ডার সংস্কৃতে শর্বর বা শর্বরাকে কর্বরা লেখা হতো। শব্দটি প্রোটো ইন্দো ইউরোপীয় শব্দ *k̑érberos থেকে এসেছে, যার অর্থ স্পটেড বা দাগাঙ্কিত। ডেনিয়েল অগডেনের মতে সারবেরাস ও শর্বর উভয়ই প্রোটো ইন্দো ইউরোপীয় কেরবেরস শব্দ থেকে এসেছে, যার প্রোটো ইন্দো ইউরোপীয় রুট হলো *ker-. অন্যদিকে গারমার শব্দটি এসেছে প্রোটো ইন্দো ইউরোপীয় রুট *gher- থেকে, যার অর্থ “to growl” অর্থাৎ গরগর করা বা ঘেউ ঘেউ করা।
  • চিকিৎসার সাথে সম্পর্কিত কুকুর : আরেকটি কুকুর সম্পর্কিত বিশ্বাস, মিথ ও রিচুয়াল আছে যা মৃত্যু নয় বরং চিকিৎসার সাথে সম্পর্কিত। যেমন, প্রাচীন নিকট প্রাচ্য ও তুর্কিক-কিপচাক মিথগুলোতে কুকুরকে চিকিৎসার সাথে সম্পর্কিত করা হয়, এবং সাধারণত এদেরকে অপবিত্র হিসেবে ক্যাটাগোরাইজ করা হয়। একই রকম মিথ-প্যাটার্ন ৩৫০০ বিসি এর কাজাখস্থানের এনিওলিথিক সাইট বোতাই-তে ছিল বলে ধরা হয়, যেখানে কুকুর রোগের এবজর্ভার, এবং সেই সাথে অসুখ ও ইভলের বিরুদ্ধে বাড়ির পাহাড়াদারকে রিপ্রেজেন্ট করে থাকতে পারে। মেসোপটেমিয়ায় দেবী নিন্তিনুগ্‌গা (Nintinugga) চিকিৎসার সাথে সম্পর্কিত, যা কুকুরকে সাথে থাকে বা কুকুরকে সিম্বোলাইজ করে। এদিকে গ্রিস, ইতালি, হিট্টাইট রোগ ও ইভল শুষে নেয়া কুকুরের বাচ্চার ধারণা ও সে সম্পর্কিত সেক্রিফাই রিচুয়াল দেখা যেত, যা সম্ভবত নিয়ার ইস্টার্ন ট্রেডিশন দ্বারা প্রভাবিত ছিল।
  • ম্যাজিক ও রিচুয়াল নলেজের সাথে সম্পর্কিত নেকড়ে : ফিলোলজিস্ট আলেকজান্ডার লোমা বলেন, নেটিভ আমেরিকান ও ইন্দো-ইউরোপিয়ানদের মধ্যে যে নেকড়েকে রিচুয়াল নলেজ ও ম্যাজিকের সাথে সম্পর্কিত বলে ধরা হয় তা সাধারণ ANE ঐতিহ্যকে নির্দেশ করতে পারে। নাভাজোদের (Navajo) মধ্যে mai-coh শব্দ দ্বারা একই সাথে নেকড়ে ও “উইচ” বোঝায়, সিওউক্সদের (Sioux) মধ্যে shunk manita tanka দ্বারা “কুকুরের মতো শক্তিশালী স্পিরিট” বোঝায়। প্রোটো ইন্দো ইউরোপীয় রুট *ṷeid দ্বারা জ্ঞান ও আলোকপ্রাপ্তি বোঝায়, হিট্টাইট ও ওল্ড নর্স ভাষায় নেকড়েকে যথাক্রমে ṷetna ও witnir বলা হয়। সেই সাথে স্লাভিক ভাষাসমূহে ওয়েরওলফ এর জন্য নির্দিষ্ট শব্দেও এই রুট আছে, যেমন সার্বিয়ান ভাষায় vjedo-gonja, স্লোভেনিয়ান ভাষায় vedanec, আর ইউক্রেনিয়ানে viščun। ঐতিহাসিক মাইকেল পি. স্পেইডেল এজটেক কোয়াঞ্চিস ওলফ ওয়ারিয়ারদের ফাইটিং ম্যাডনেস ও ড্যান্সিং ফ্রেঞ্জির সাথে জার্মানিক ম্যাড ওলফ-ওয়ারিয়র বা বারসার্ক এর তুলনা করেছেন, এবং বলেছেন, এগুলোর একই ঐতিহাসিক উৎপত্তি থাকতে পারে, হয়তো যে উৎস্য থেকে এসেছে সেখানে এই ওলফ ওয়ারিয়রের ব্যাপারটা ওয়ারিয়র-সোসাইটিগুলোতে সাধারণ ছিল, ওয়ারিয়র যত বেশি রেকলেসলি এটাক করতে চাইবে, তত বেশি জেতার সম্ভাবনা থাকবে, আর এই ফাংশন থেকেই এর এগুলোর উদ্ভব হয়ে থাকবে।
  • মানুষ ও জলজ প্রাণীর সম্পর্ক : কম্প্যারেটিভ মিথোলজিস্ট বার্নার্ড সেরগেন্টের মতে, লিথুয়ানিয়ান মিথের এগল দ্য কুইন অফ সার্পেইন্টস (Eglė the Queen of Serpents) এর মিথের সাথে আমেরিকান কিছু জনগোষ্টী যেমন ওয়াইয়াম্পি (Wayampi), ইয়াঘান (Yahgan) ও কুজদের (Coos) মিথের মিল আছে, আর এর ব্যাখ্যা হতে পারে এই যে, ANE-দের মধ্যেই এরকম কোন নারীর কোন জলজ প্রাণীকে বিয়ে করে মানুষের এক্সোগ্যামির বিরুদ্ধে জারি থাকা আইন লঙ্ঘন করা, আর তারপর স্থল ও জলের জগতের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করার মিথ প্রচলিত ছিল।

 

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.