ওক (Woke)

Woke বা ওক শব্দটির উদ্ভব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। শব্দটির উদ্ভবের সময় এটিকে বর্ণবাদী পূর্বসংস্কার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টির জন্যই ব্যবহার করা হত। ধীরে ধীরে অন্যান্য সামাজিক বৈষম্যের ক্ষেত্রে, যেমন ধরুন বিভিন্ন জেন্ডার যেমন নারী বা তৃতীয় লিঙ্গের প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে বা বিভিন্ন সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন যেমন সমকামীদের প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে সচেতনতার ক্ষেত্রেও শব্দটি ব্যবহৃত হতে শুরু করে। ২০১০ এর দশকের শেষের দিক থেকে শব্দটি বামপন্থী রাজনৈতিক আন্দোলন ও দৃষ্টিভঙ্গি বোঝাতে সাধারণভাবে ব্যবহৃত হতে শুরু করে, যেখানে পিপল অফ কালার, এলজিবিটি পিপল ও নারীদের নিয়ে আইডেন্টিটি পলিটিক্সে জোর দেয়া হয়। উল্লেখ্য, এখানে বামপন্থী বলতে কমিউনিস্ট গোছের কিছু বোঝানো হচ্ছে না, সোশ্যাল ও কালচারাল লিবারালদের বোঝানো হচ্ছে।

১৯৩০ এর দশকে আফ্রিকান-আমেরিকান ভার্নাকুলার ইংলিশের মধ্যে “স্টেই ওক” (“stay woke”) শব্দটির উদ্ভব ঘটে, সেক্ষেত্রে “woke” শব্দটির দ্বারা আফ্রিকান আমেরিকানদের প্রতি বৈষম্য ও পূর্বসংস্কারের বিরুদ্ধে ও তাদের সাথে সম্পর্কিত সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যাসমূহ নিরসনে সচেতনতা বোঝাতে ব্যবহৃত হত। বিভিন্ন কনটেক্সটেই শব্দটি ব্যবহৃত হতে থাকে, যেমন লিড বেলি ও এরিকাহ্‌ বাডু এর গানে। ২০১৪ সালে মিসৌরির ফার্গুসনে মাইকেল ব্রাউনের হত্যাকাণ্ডের পর আফ্রিকান আমেরিকানদের বিরুদ্ধে পুলিস শুটিং এর বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরির জন্য ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার (BLM) এক্টিভিস্টরা শব্দটিকে জনপ্রিয় করে তোলে। আফ্রিকান আমেরিকান টুইটার এক্টিভিস্টরা ব্ল্যাক টুইটার নামে একটি ভার্চুয়াল ইনফর্মাল কমিউনিটি গড়ে তুলেছে। “woke” শব্দটিকে এই কমিউনিটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে। এরপর ইন্টারনেট মিমে এটি শব্দটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে এবং যারা আফ্রিকান আমেরিকান নয় তারাও আফ্রিকান আমেরিকানদের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপনের জন্য শব্দটি ব্যবহার করা শুরু করে। কোন কোন কমেন্টেটর নন আফ্রিকান আমেরিকানদের এই টার্ম ব্যবহারকে কালচারাল এপ্রোপ্রিয়েশন হিসেবে দেখে এর সমালোচনা করে। তরুণ মিলেনিয়াল জেনারেশন এই শব্দটিকে আন্তর্জাতিকভাবে ছড়িয়ে দেয়, আর ২০১৭ সালে শব্দটি অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারিতে যুক্ত হয়।

আফ্রিকান আমেরিকান উৎপত্তির ঊর্ধ্বে গিয়ে শব্দটির বর্ধিষ্ণু হারে গৃহীত হবার কারণে “woke” শব্দটি আরও বিস্তৃত অর্থ গ্রহণ করে। কেবল রেশিয়াল ইস্যু বা বর্ণবাদী প্রসঙ্গে ব্যবহৃত হবার বদলে শব্দটি সকল বামপন্থী আদর্শকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, আর প্রায়ই মাইনোরিটি গ্রুপগুলোর আইডেন্টি পলিটিক্সকে কেন্দ্র করে শব্দটি ব্যবহৃত হতে থাকে, এমনকি সোশ্যাল জাস্টিসের প্রতি অনুরাগী একাডেমিক মুভমেন্টগুলো (যেমন ক্রিটিকাল রেইস থিওরি বা CRT মুভমেন্ট) শব্দটি ব্যবহার করতে শুরু করে। ফলে শব্দটি বর্ণবাদ-বিরোধিতা ছাড়াও নারীবাদী ও এলজিবিটি ক্যাম্পেইনগুলোতে ব্যবহৃত হওয়া শুরু হয়। এরপর যেসব কোম্পানি এরকম বর্ণবাদ-বিরোধী, নারীবাদী ও এলজিবিটি ক্যাম্পেইনগুলো সাপোর্ট করতে শুরু করে তাদেরকে রেফার বা ডেসক্রাইব করতে “woke capitalism” ও “woke washing” শব্দ দুটির ব্যবহার শুরু হয়।

এভাবে “ওক” শব্দটির ইতিবাচক ব্যবহার যখন তুমুল জনপ্রিয়, ঠিক সে সময়ে পরিস্থিতি অন্যদিকে মোর নিল! ২০২০ সাল আসতে আসতে বিভিন্ন পাশ্চাত্য দেশের দক্ষিণপন্থীরা একরকম আইরনিক ওয়েতে “woke” শব্দটির ব্যবহার শুরু করে, তারা যেসব বামপন্থী আদর্শের সাথে দ্বিমত পোষণ করে সেগুলোকে নির্দেশ করতে। আর তার ফলস্বরূপ একটা সময়ে কিছু বামপন্থী এক্টিভিস্টও “woke” শব্দটিকে তাদের ওপর ব্যবহৃত একটি অফেন্সিভ টার্ম হিসেবে ভাবতে শুরু করে, যা তাদের বৈষম্যবিরোধী ক্যাম্পেইন বা প্রচারসমূহকে কলঙ্কিত করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। আমাদের এই গ্রুপে anindy দা সহ অনেকে “woke” শব্দটি কী অর্থে ব্যবহার করছে তা বুঝতে হলে এই বিশেষ দিকটা সম্পর্কে জানতে হবে, তা নিয়ে লিখব। কিন্তু তার আগে “woke” প্রসঙ্গে আমার নিজের সবচেয়ে ইন্টারেস্টের বিষয় – ওক ক্যাপিটালিজম ও ওক ওয়াশিং টার্ম দুটো সম্পর্কে একটু আলোচনা করে নিচ্ছি।

২০১০ এর দশকের মধ্যভাগে বিভিন্ন কোম্পানির বিজ্ঞাপনে অব্দি ওক এলিমেন্টগুলো জায়গা করে নেয়। নিউ ইয়র্ক টাইমসের কলামিস্ট রস ডোউহার্ট এরপর লিবারালদের প্রগতিশীল ক্যাম্পেইনগুলোতে সাপোর্ট করার সিগনাল দেবার কোম্পানিগুলোকে বর্ণনা করার জন্য প্রথম “ওক ক্যাপিটালিজম” টার্মটা ব্যবহার করলেন। দ্য ইকোনমিস্টে বলা হলো, তরুণ প্রজন্ম বা মিলেনিয়ালরাই পূর্বের জেনারেশনগুলোর তুলনায় অধিকতর সোশ্যাল লিবারাল দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে, আর তাদেরকে আকর্ষণ করে প্রোফিট কামানোর জন্য কিছু কোম্পানি এরকম লিবারাল আদর্শ সংবলিত এডভার্টাইজ ডিজাইন করা শুরু করেছে, এটা বর্তমান “ওক ক্যাপিটালিজম”-এরই একটি উদাহরণ। কিন্তু কখনও কখনও কোম্পানিগুলোর এই পন্থা অবলম্বন করতে গিয়ে হিতে বিপরীতও হয়। কেন্ডাল জেনারকে ফিচার করা পেপসির বিখ্যাত (আসলে কুখ্যাত) এডটার কথাই ধরা যাক (এডটা দেখতে চাইলে ইউটিউবে একটু গুতোগুতি করবেন)। সেখানে দেখা যায়, রাস্তায় পুলিশের বিরুদ্ধে প্রোটেস্ট হচ্ছে, ব্ল্যাক লাইভ ম্যাটারস প্রোটেস্টে যেরকমটা হয়েছিল, সেরকম পুলিসরাও দাঁড়িয়ে আছে। কেন্ডাল প্রোটেস্ট দেখে কী ভাবল কে জানে, সে হাতে পেপসির ক্যান নিয়ে প্রোটেস্টের মধ্যে প্রবেশ করল, সবাই প্রোটেস্ট ফেলে তাকে দেখে খুশি, হাত তালি দিচ্ছে, আর কেন্ডাল একজন পুলিসের কাছে এসে তাকে তার পেপসির ক্যানটা দিল, পুলিস সেটা গ্রহণ করল, আর তা দেখে কেন্ডাল সহ সকল প্রোটেস্টাররা মহাখুশি! এডটা প্রকাশিত হবার পর থেকে সমালোচনার ঝড় নেমে এলো, বলা হলো পেপসির সুপার পাওয়ারের কারণে এরকম সিরিয়াস প্রোটেস্ট সফল হয়ে যাচ্ছে – এট তুলে ধরার মাধ্যমে এই প্রোটেস্টকেই ছোট করা হয়েছে, যারা এতদিন যাবত ব্ল্যাক লাইভ ম্যাটার্স আন্দোলনে আন্দোলন করে আসছে তাদের নিয়ে তামাশা করা হয়েছে। পেপসি প্রথম দিকে নিজেকে ডিফেন্ড করছিল। পরে বাধ্য হয়ে ক্ষমা চায়। এদিকে অনেক আফ্রিকান আমেরিকান ও লিবারালরা পেপসি বয়কট করা শুরু করে, যার ফলে পেপসির প্রচুর আর্থিক ক্ষতি হয়। একই ইনসিসিয়ারিটির অভিযোগ আসে নাইকির সোশ্যাল ইনজাস্টিস ক্যাম্পেইন, জিলেটের টেক অন টক্সিক ম্যাসকুলিনিটি এডেও। এরাও এইসব এড দিয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

রাইট উইংগার মিমাররা এদের দেখে “গেট ওক, গো ব্রোক” মিম প্রকাশ করে, যা খুব জনপ্রিয় হয়। ২০২০ সালে কালচারাল সাইন্টিস্ট আকানে কানাই আর রসালিন্ড গিল এভাবে বর্ণ, লিঙ্গ, ধর্মভিত্তিক হিস্টোরিকালি মার্জিনালাইজড গ্রুপের প্রতিনিধিদেরকে কোন প্রোডাক্টের মাস্কট হিসেবে ব্যবহার করার “ওক ক্যাপিটালিজম” এর বিপদ নিয়ে সতর্ক করেন। এই কোম্পানিগুলো হয়তো মনে করবে তারা এদের এম্পাওয়ারমেন্ট ও প্রগতিশীলতার মেসেজ দিচ্ছে, আর তার মাধ্যমে লিবারাল তরুণ প্রজন্মকে তাদের প্রোডাক্টের প্রতি আকর্ষণ করছে, কিন্তু ব্যাপারটা সচরাচর এমনটা হয়না। প্রথমত এটা সোশ্যাল জাস্টিসের আইডিয়াকে ইন্ডিভিজুয়ালাইজড ও ডিপলিটিসাইজড করে (হাতে অঢেল সময় থাকলে এই এফেক্ট সম্পর্কে হার্বার্ট মার্কুজার ওয়ান ডাইমেনশনাল ম্যান গ্রন্থটি পড়ে দেখতে পারেন, এই এফেক্টের মাধ্যমে জনতার সোশ্যাল ইস্যুকে পারসোনাল ইস্যু হিসেবে প্রতীয়মান করার চেষ্টা করা হয় ও পারসোনাল লেভেলে কনজিউমারিজম ও অন্যান্য সল্যুশনকে হাইলাইট করে সোশ্যাল ইস্যুর বিরুদ্ধে সোশ্যাল লেভেলে সল্যুশন ও তার জন্য সরকার বা শোষকগোষ্ঠীকে চাপ প্রয়োগের ব্যাপারটাকেই ভেস্তে দেয়া হয়); দ্বিতীয়ত, এডভার্টাইসমেন্টের ফলে প্রোডাক্টকে যেভাবে অমনিপ্রেসেন্ট বা সর্বত্র-বিরাজমান ও সর্বশক্তিমান সত্তাকে (যেমন পেপসি সব সমস্যা সমাধান করতে পারে) সামনে তুলে ধরা হয় তাতে মাইনোরিটি বা মারজিনালাইজড গ্রুপকেই হীন করা হয়, তাদের সাম্যের জন্য অধিকারের ধারণার বিরুদ্ধেই এটি ব্যাকফায়ার হিসেবে কাজ করে। আর এভাবে এই এডভার্টাইজমেন্ট বা কমারশিয়াল বা মাস্কটগুলোতে কেবল মারজিনালাইজড লোকেদেরকেই তুলে ধরে না, সেই সাথে তুলে ধরে বর্তমান বিশ্বের বাঁধাহীন নিওলিবারাল ইকোনমিক সিস্টেমকেও যার সোশ্যাল অর্ডার নিজেই আনজাস্ট, ব্যাপারটা অনেকটা একেবারে অন্তর্নিহিতভাবে সোশ্যাল আনজাস্ট কোন কিছুর দ্বারা সোশ্যাল জাস্টিসকে প্রমোট করার মত বালখিল্যতায় পরিণত হয়, আর এর ফলে এগুলোর ব্যর্থ হওয়াই স্বাভাবিক। মাইনোরিটি-মার্জিনালাইজড গ্রুপ আর্থিকভাবে দুর্বল হয়, অন্যদিকে নিওলিবারাল ইকোনমিকে টিকে থাকতেই হয় দারিদ্র্যকে মেইনটেইন করে, অর্থাৎ যেসব মাইনোরিটি গ্রুপকে কাজে লাগিয়ে এরা প্রোফিট কামানোর জন্য এডভার্টাইজ করছে তাদের দারিদ্র্য ও দুর্দশার জন্যই এদের ইকোনমিক সিস্টেম ও ইকোনমি টিকে আছে, আর যদি তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সেক্ষেত্রেও তারা দোষটা শেষ পর্যন্ত এই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মাইনোরিটিদের ঘাড়েই চাপাবে। এরকম নিওলিবারাল ইকোনমিতে ক্যাপিটালিস্ট বনাম মাইনোরিটি পিপলের মধ্যে যেখানে কার্যত অহি-নকুল সম্পর্ক কাজ করে সেখানে একটা দূর অব্দি গিয়ে এদের এইসব এডভার্টাইসকে খুব একটা ভাল চোখে দেখা হবেনা।

যাই হোক, যে কথাগুলো লিখলাম সেগুলো ওক ক্যাপিটালিজমের সিরিয়াস ক্রিটিকদের কথাবার্তা। “ওক ওয়াশিং” টার্মটার কথাও বলব বলছিলাম। ব্রিটিশ লেফট উইং কমেন্টেটর ওয়েন জোনস দ্য গার্ডিয়ানে ২০১৯ সালে এই টার্মটা প্রথম প্রয়োগ করেন। কাহিনী হলো ওয়েস্টার্ন সোসাইটির মার্কেটে অনেক ব্র্যান্ড চলে এসেছে যেগুলো প্রগতিশীলতাকে ব্যবহার করে বিক্রি বাড়াচ্ছে। কার কোম্পানি বলছে, আমি কেবল কার কোম্পানি না, আমি জেন্ডার ইকুয়ালিটির পক্ষে লড়ি, আমার কার কিনলে আপনিও জেন্ডার ইকুয়ালিটির পক্ষে লড়বেন; ফ্লগিং শ্যাম্পুর কোম্পানি বলছে, আমি কেবল ফ্লগিং শ্যাম্পুর কোম্পানি নই, আমি ডাইভার্সিটির জন্য লড়ি, আমার প্রোডাক্ট কিনলে আপনিও তাই করবেন; বেটিং কোম্পানি বলছে আমি এলজিবিটি রাইটের জন্য কাজ করি, আমার এখানে জুয়া খেললে বা বাজি খেললে আপনিও এলজিবিটিদের অধিকারের লড়াইয়ে সামিল হবেন। এবং মজার ব্যাপার হলো এতে আসলেই বিক্রি বেড়ে যাচ্ছে। এদের এইসব দাবিতে কিছু সত্যতাও থাকে, এরা আসলেই কখনও কখনও কিছু টাকা এই মাইনোরিটি গ্রুপগুলোতে চ্যারিটি করে (যদিও তা লাভের তুলনায় সামান্যই), আবার তাদের প্রোডাক্টে মাইনোরিটি গ্রুপের সিম্বল চিপকে দিয়ে ডাইভার্সিটি প্রমোট করার দাবি করে। প্যাডি পাওয়ার কোম্পানি তো গে প্রাইডে রঙধনু লাগিয়ে একটা খালি ওপেন টপ বাস পাঠিয়ে দাবি করেছিল, “এটা গে প্রোফেশনাল ফুটবলারদের অফিশিয়াল বাস!” (এরকম কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই)। নিজেদের এলজিবিটি যোদ্ধা দাবি করা বেটিং কোম্পানিও বলছে, আমরা এর মাধ্যমে এলজিবিটি কমিউনিটির লোকদেরকে সাহসের সাথে সামনে এগিয়ে আসতে উৎসাহিত করছি”। মানুষ সবসময় নিজেকে নৈতিক অবস্থানে ফেলতে চায়, এডভার্টাইসগুলো মানুষের নৈতিকতার জায়গায় নাড়া দেয়, আর তখন নিজেকে নৈতিক প্রমাণের জন্যই তার মধ্যে প্রোডাক্ট বা সারভিস ক্রয় করার প্রবণতা কাজ করা শুরু করে। এর পেছনের সাইকোলজিকাল ব্যাপার নিয়ে আপাতত লিখছিনা। একই ভাবে একটা সময় গ্রিনওয়াশিং এর ব্যাপারটা রমরমা ছিল, এখনও আছে। ব্র্যান্ডগুলো “আমার প্রোডাক্ট/সার্ভিস কিনলে আপনি পরিবেশের উপকার করবেন” দাবি করে বিক্রি বাড়াতো, তবে একটা সময় এটা ফেইল করতে শুরু করে, কারণ অনেক প্রোডাক্ট/সার্ভিসই আসলে পরিবেশের উলটো ক্ষতি করে বলে প্রমাণিত হয়, মানুষও বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। কিন্তু এবারে এর বদলে জায়গা করে নিয়েছে “ওক-ওয়াশিং” – এটা এখন রমরমা।

একটা কথা বলে রাখি। “ওক ক্যাপিটালিস্ট” বা “ওক ওয়াশার” এবং “ওক” – এই দুটো ভিন্ন সত্তা। ওক ক্যাপিটালিজমের সমালোচনা করলে ওকদের সমালোচনা হয়না, আবার ওক ক্যাপিটালিস্ট বা ওক-ওয়াশারদের কাজের দায় ওকদের ওপর পড়েনা। ওকদের এক্টিভিজম আর ওক ক্যাপিটালিস্ট বা ওক-ওয়াশিং ফেনোমেনা পুরোপুরি ভিন্ন জিনিস, “ওক এক্টিভিস্টরাই” ওক ক্যাপিটালিজম ও ওক-ওয়াশিং এর সমালোচনা করে। তাই দুটোকে এক করে দেখা অনুচিৎ। এবারে নিন্দার্থে “ওক” শব্দটির ব্যবহার সম্পর্কে বলা যাক…

২০২০ সালের শেষের দিকে দক্ষিণপন্থীদের অনেকেই “ওক কালচার” নামে একটি টার্ম ব্যবহার করতে শুরু করে। এরপর এর সাথে তাল দিয়ে বা বলতে পারেন সুযোগ পেয়ে দক্ষিণমনস্ক মিডিয়া সোর্সগুলোও “ওক” শব্দটি পেজোরেটিভ বা নিন্দার্থে ব্যবহার করা শুরু করে দেয়। ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনের বিরোধিরা এবং যারা ওক ক্যাম্পেইনসমূহকে একচুয়াল সোশ্যাল প্রবলেমের তুলনায় বাড়াবাড়ি বলে মনে করে তারাই প্রথমে এই টার্মটিকে উপহাস অর্থে ব্যবহার করা শুরু করেছিল। দ্য গার্ডিয়ানের কমেন্টেটর কেনিয়া হান্ট বলেন, নিন্দার্থে ওক শব্দটি “আইডেন্টিটি পলিটিক্স এর দাস” বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। দ্য গার্ডিয়ানের স্টিভেন পুল বলেন, শব্দটি “অতিরিক্ত আদর্শবান লিবারালদের উপহাস করতে” ব্যবহৃত হয়। ফাইভথার্টিএইট-এ জার্নালিস্ট পেরি বেকন জুনিয়র বলেন আমেরিকান দক্ষিণপন্থীরা “ওক” শব্দটির দ্বারা “যে সকল লিবারাল ধারণাকে তারা পছন্দ করেনা, বিশেষ করে যেসব লিবারাল ধারণা নতুন জন্মলাভ করেছে” সেগুলোকে বোঝাতে ব্যবহার করে।

এমন কি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান পার্টির সদস্যরাও ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্যদের সমালোচনা করতে গিয়ে “ওক” শব্দটির ব্যবহার শুরু করে। এদিকে ডেমোক্রেটিক পার্টির তুলনামূলক সেন্ট্রিস্ট সদস্যরা তুলনামূলক বামপন্থী সদস্যদের সমালোচনা করতে গিয়েও “ওক” শব্দটি ব্যবহার করে। বেকনের মতে রিপাবলিকান পার্টির এই এন্টি-ওক অবস্থান তাদের ব্যাকলাশ পলিটিক্সের অংশ। তার মতে, এদের ব্যাকলাশ পলিটিক্স হচ্ছে এরকম যে, যখনই আফ্রিকান আমেরিকানরা কখনও কোন রকম পলিটিকাল গেইন করে বা তাদের পক্ষে সাংস্কৃতিক রীতিনীতি পরিবর্তিত হতে শুরু করে, তখন কনজার্ভেটিভরা বা দক্ষিণপন্থীরা এদের বিরোধিতার জন্য যেটাই পায় সেটাকেই আঁকড়ে ধরে, এখন এন্টি-ওক অবস্থানকে, বা ওক শব্দের পেজোরেটিভ ব্যবহারকে জনপ্রিয় হিসেবে পেয়েছে, তাই এরাও সেটাকে ব্যবহার করা শুরু করেছে।

নিন্দার্থে ওক শব্দের ব্যবহার দেখা যায় যুক্তরাজ্য বা ইউনাইটেড কিংডমেও। সেখানে প্রাক্তন অভিনেতা ও বর্তমান এক্টিভিস্ট “কেন আমি ওক নারীর সাথে ডেইট করব না” নামে একটি আর্টিকেল পাবলিশ করেন, আর তারপর রাজনৈতিক ভাষ্যকার বা পলিটিকাল কমেন্টেটর টোবি ইয়ং “ওকদের মনে ভীতিসঞ্চারনের” জন্য তার প্রশংসা করেন। দক্ষিণমনস্ক ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড দ্য সান পিয়েরে হ্যারি ও তার স্ত্রী মেঘান মারকলকে “অপ্রেসিভ কিং এন্ড কুইন অফ ওক” বলে অভিযুক্ত করে। আরেক দক্ষিণমনষ্ক দৈনিক ডেইলি মেইল হ্যারিকে “ফান লাভিং ব্লোক থেকে প্রিন্স অফ ওক”-এ পরিণত হয়েছে বলে উল্লেখ করে।

এগুলো গেল ২০২০ সালের হিসাব। ওক নিয়ে এই বছরও কম কাণ্ড হয়নি। জানুয়ারি মাসের একটি বক্তৃতায়, অস্ট্রেলিয়ান মিডিয়া মঘুল রুপার্ট মারডক পাশ্চাত্য সমাজকে “অফুল ওক অর্থোডক্সি” হবার জন্য অভিযোগ করেন। জুন মাসে ওহায়ো র‍্যালিতে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউএস আর্মির কিছু “ওক জেনারেলদেরকে” সমালোচনা করেন। ইতিহাসে এডওয়ার্ড কলস্টন নামে অষ্টাদশ শতকের এক ব্রিটিশ রাজনীতিককে পাওয়া যায়, যিনি আটলান্টিক স্লেইভ ট্রেডের সাথে জড়িত ছিলেন। ব্রিস্টলে তার একটা মূর্তি আছে, স্লেইভ ট্রেডের জন্য তার মূর্তিটি উপড়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, তা করাও হয়। এর পর ব্রিটেইনের অনেকেই এরকম আরও অনেক মূর্তি সরিয়ে ফেলার জন্য দাবি করা শুরু করে। এই দেখে যুক্তরাজ্যের কমিউনিটিস সেক্রেটারি রবার্ট জেনরিক এই আন্দোলনকারীদেরকে “ওক” বলে নিন্দা করেন।

দ্য গার্ডিয়ানে ভাষ্যকার স্টিভ রোজ বলেন, দক্ষিণপন্থীরা “ওক” শব্দটিকে উইপনাইজ করেছে, অর্থাৎ অস্ত্রে পরিণত করেছে। তিনি বলেন, ঠিক যেরকম “পলিটিকালি কারেক্ট” শব্দটির জন্ম বামপন্থীদের হাতে, কিন্তু পরে তাকে দক্ষিণপন্থীরা গ্রহণ করে নিয়ে বামপন্থীদের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করেছে, ঠিক তেমনি “ওক” শব্দটির ক্ষেত্রেই একই হাল হয়েছে। মার্কিন লিংগুইস্ট ও সোশ্যাল ক্রিটিক জন ম্যাকহোর্টারও একই তুলনা দিয়েছেন। ভাষ্যকার কেনান মালিক বলেন, এভাবে “ওক” ও “আনওক” এর মধ্যে বাইনারি বিভাজন তৈরি হচ্ছে ট্রাইবাইলিস্ট আচরণ, এবং এটি গঠনমূলক রাজনৈতিক আলোচনায় বাধাপ্রদান করবে। যাই হোক, সময় যত এগোচ্ছে “ওক” শব্দটাও তত বেশি করে ইতিবাচকতা হারিয়ে নেতিবাচকতা ধারণ করছে, আর ইন্টারনেটের কারণে ইংরেজি জানা সকলের কাছেও শব্দটি নেতিবাচক হিসেবেই জনপ্রিয় হচ্ছে। লিবারালিজম-বিরোধীদের হয়তো তাদের বিরোধিতার জন্য একটি ভাল শব্দের অভাবে ভুগছিল, এখন সেটা তারা পেয়ে গেছে, আর সেটাও তারা নিজেরা আবিষ্কার করেনি, লিবারালদের থেকেই চুরি করে নিয়েছে। এই ব্যাপারটা বেশ ইন্টারেস্টিং আমার কাছে…

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.