প্রায়োগিক নীতিবিদ্যা

(সম্প্রসারিত হবে)

Table of Contents

১। কোটা পদ্ধতি বা সংরক্ষণ এবং নৈতিকতা

কোটা পদ্ধতি বা সংরক্ষণের সংজ্ঞা

কোটা পদ্ধতি বলতে বোঝায় এমন একটি নিয়ােগ বা ভর্তি পদ্ধতি যেখানে অশ্বেতাঙ্গ, নারী বা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদেরকে অতীতের বৈষম্য ও অসমতা হ্রাসের লক্ষ্যে অথবা অতীতে সংগঠিত অন্যায় ও ক্ষয়-ক্ষতি সংশােধনের জন্য তাদের সংখ্যানুপাতিক হারে চাকরিতে বা শিক্ষায়তনে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রতিনিধিত্ব করার সুযােগ করে দেয়া হয় (Quota system is an employment policy of representing women and minorities in the firm in direct proportion to their numbers in society or in the community at large.)। এটিকে ইতিবাচক কাজ বা অ্যাফার্মেতিভ একশন (affirmative action) বা বিপরীত বৈষম্য বা রিভার্স ডিসক্রিমিনেশন (Reverse discrimination) বা অগ্রাধিকারমূলক নিয়ােগ পদ্ধতি বা প্রিফারেনশিয়ান হায়ারিং (Preferential hiring) বলা হয়ে থাকে। অগ্রাধিকারমূলক নিয়ােগ পদ্ধতি বলতে বােঝায় অতীতের বৈষম্য ও অসমতা হ্রাসের লক্ষ্যে অথবা অতীতে সংঘঠিত অন্যায় ও ক্ষয়-ক্ষতি সংশােধনের মানসে অনগ্রসর জনগােষ্ঠীর সদস্যদেরকে (যেমন নারী, অশ্বেতাঙ্গ, উপজাতীয় এলাকা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত বাসিন্দা) চাকরি বা ভর্তির সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এরূপ কারণে কোন শিক্ষায়তনে ভর্তির সুযােগ বা চাকরিতে নিয়ােগদান বা পদোন্নতি প্রদানের প্রক্রিয়াকে (Preferential hiring refers to the practice of giving individuals favored consideration in hiring or promotion for other than job-related reason.)। ইতিবাচক কাজ বলতে এমন পরিকল্পনা প্রণয়নকে বােঝায় যার দ্বারা অতীতে সংঘটিত বৈষম্যের ফলে চাকরি ক্ষেত্রে বা শিক্ষায়তনে বিরাজমান বৈষম্য ও ভারসাম্যহীনতা সংশােধন করা হয়। (Affermative action programs are plans design to correct imbalance in employment that exist directly as a result of past discrimination.)। বিপরীত বৈষম্য হলাে কিছু বৈষম্যমূলক উপায়ে অতীতের বৈষম্য ও অবিচারের ক্ষতিপূরণ ও সংশােধনের একটি প্রক্রিয়া (Revese discrimination is an attempt to correct the past discrimination and injustice by giving certain discriminatory means.)। 

এরূপ বৈষম্যমূলক ভর্তি  বা চাকরি প্রদানের লক্ষ্য এই যে, লিঙ্গগত বা বর্ণগত বা জাতিগত ভেদাভেদ সমূলে উৎপাটন করা এবং বর্তমান সমাজে বিরাজমান অসমতা ও বৈষম্য দূর করা। কখনাে কখনাে নারীদেরকে বা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদেরকে শিক্ষায়তনে ভর্তির সুযােগ বা চাকরিতে নিয়ােগ দান বা পদোন্নতি প্রদানের জন্য বিপরীত বৈষম্য বা কোটা পদ্ধতির প্রবর্তন করা প্রয়ােজন হয়। কোটা পদ্ধতি প্রবর্তন করার উদ্দেশ্য হচ্ছে সমাজের নারী ও সংখ্যালঘুদেরকে তাদের মােট জনসংখ্যার হার অনুপাতে চাকরিতে নিয়ােগ প্রদান করা বা ভর্তির সুযােগ বৃদ্ধির জন্য একটি হার নির্দিষ্ট করে দেয়া। বিপরীত বৈষম্য বা অগ্রাধিকারমূলক নিয়ােগ পদ্ধতি যে সকল নৈতিক সমস্যা সৃষ্টি করে সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা আয়ত্ত্ব করার জন্য কোটা পদ্ধতিটি একটু পর্যালােচনা করা আবশ্যক। ধরে নেয়া হলাে যে, কোন একটি সমাজে ২০ শতাংশ সংখ্যালঘু বাস করে এবং তাদের জন্য ১০ শতাংশ চাকরি রিজার্ভ রাখা হল। অথবা কোন একটি ফার্মে সমান যােগ্যতাসম্পন্ন নারী ও পুরুষ চাকরিতে নিয়ােগের জন্য আবেদন করলাে। ফার্মের কর্মকর্তাবৃন্দ মনে করলাে যে অতীতে অধিক সংখ্যক পুরুষকে নিয়ােগ দেয়া হয়েছে তাই এখন নারী-পুরুষের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার জন্য নারীদের জন্য একটি নির্দিষ্টসংখ্যক কোটা রিজার্ভ রাখা হােক। যেহেতু অতীতে অধিকসংখ্যক পুরুষকে নিয়ােগ দেয়ার ফলে কিছুটা বৈষম্য ও অসমতা বিরাজ করছে তা দূর করার জন্য এটি অপরিহার্য বলে ধরা হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে নারীদের বা উপজাতীয়দের কিছুটা বাড়তি সুযােগ প্রাপ্য ধরা হয়। প্রশ্ন হলো, এরূপ অগ্রাধিকারমূলক নিয়ােগ দান কি নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বৈধ ও ন্যায্য।

অনেকের মতে অগ্রাধিকারমূলক নিয়ােগ দান একটি বৈষম্যমূলক আচরণ এবং এর ফলে সমাজে নানা প্রকার অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে এবং অন্যায় কাজের প্রশ্রয় দিতে হয়। কোটা পদ্ধতির প্রবর্তনের ফলে বৈষম্য সৃষ্টি করে, যা অন্যায় ও অন্যায্য। মার্কিন পলিটিকাল সাইন্টিস্ট চার্লস ম্যুরে (Charles Murray) মনে করেন যে, অগ্রাধিকারমূলক নিয়ােগ ও ভর্তির সুযােগ জাতিগত বৈষম্য এবং লিঙ্গগত ও সম্প্রদায়গত ভেদাভেদ সৃষ্টিতে সাহায্য করে। কারণ অগ্রাধিকারমূলক নিয়ােগ প্রক্রিয়ার প্রয়ােগের ফলে যােগ্য ও মেধাসম্পন্ন ব্যক্তিগণ চাকরি ও ভর্তির সুযােগ থেকে বঞ্চিত হয়। যার ফলে কাজের উপযােগিতা হ্রাস পায় ও উৎপাদন কমে যায়। তিনি আরাে বলেন যে, এর ফলে সমাজে অসন্তোষ বেড়ে যায় এবং জাতিগত দাঙ্গা ও বিবাদ সৃষ্টি হয়। এর উত্তরে অগ্রাধিকারমূলক নিয়ােগ সমর্থনকারীগণ বলেন যে এরপ অগ্রাধিকারমূলক নিয়ােগ দানের ফলে সাময়িকভাবে শত্রুতা ও বিবাদ দেখা গেলেও ভবিষ্যতে এর সুদূরপ্রসারী ফলাফল ও পরিণতি একটি জাতিগত ও লিঙ্গগত ভেদাভেদ শূন্য সমাজ গড়তে সক্ষম হবে। জাতিগত ও লিঙ্গগত বৈষম্যের কারণে সৃষ্ট অসমতা ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে সংশােধন করা সম্ভব হবে এবং সমাজ থেকে বিরাজমান অসন্তোষ ও বিবাদ দূর করা সম্ভব হবে।

সংরক্ষণ বা কোটা পদ্ধতি বা বিপরীত বৈষম্য নীতির পক্ষের যুক্তি

১। ক্ষতিপূরণমূলক ন্যায়পরতা বিপরীত বৈষম্য দাবি করে

নারী, অশ্বেতাঙ্গ ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনগণ সমষ্টিগতভাবে অনেক বৈষম্য ও অসমতার শিকার হয়ে থাকে। ব্যক্তিগতভাবেও তারা তাদের পূর্বপুরুষদের প্রতি যে অন্যায় ও অবিচার হয়েছে তা উপেক্ষা করতে পারে না। তাই এখন আমাদের অতীতের সকল অন্যায় ও অবিচারের ক্ষতিপূরণ করা উচিত। নারী, অশ্বেতাঙ্গ ও সংখ্যালঘুদের প্রতি যে বৈষম্য ও অসমতা করা হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ হিসেবে চাকরি ও ভর্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার প্রদানের মাধ্যমে অতীত বৈষম্য সংশােধন করা সম্ভব। মার্কিন দার্শনিক টম ব্যুশাম্পের (Tom Beauchamp) মতে বিপরীত বৈষম্য পদ্ধতি নৈতিক ও বৈধ। তবে তিনি অতীত অন্যায়ের ক্ষতিপূরণ হিসাবে এর প্রয়ােগ যথার্থ বলে স্বীকার করতে রাজি নন, বরং তিনি মনে করেন যে বর্তমান সময় সমাজে বিরাজমান বৈষম্য দূরীকরণের জন্য এর প্রয়ােজনীয়তা অনস্বীকার্য। এর দ্বারা তিনি সমাজে বিদ্যমান বৈষম্যের উপস্থিতি স্বীকার করেন এবং আরাে বিশ্বাস করেন যে বিপরীত বৈষম্য পদ্ধতির প্রয়ােগের মাধ্যমে এটি দূর করা সম্ভব। তিনি স্বীকার করেন যে বিপরীত বৈষম্য পদ্ধতিটি সমতা নীতি ও উপযােগিতা নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।

২। বিপরীত বৈষম্য পদ্ধতি সামাজিক অস্থিরতা দূরীকরণের সহায়ক

বর্তমানে আমাদের সমাজের অবস্থা নানা প্রকার অস্থিরতায় বাষ্পীভূত। তাই এ অবস্থার পরিবর্তন অনিবার্য। যেমন অশ্বেতাঙ্গদেরকে শেতাঙ্গদের তুলনায় অধিক মাত্রায় কম সুযােগ-সুবিধা দেয়া হয়েছে, তেমনি নারীদেরকে পুরুষের তুলনায় অধিক পরিমাণে সুযােগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। অধিক মাত্রায় জাতিভেদ করার ফলে নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায় চাকরি ও সমাজের অন্যান্য সুবিধাভােগের ক্ষেত্রে সমান সুযােগ পাচ্ছে না। যার ফলে এদের মধ্যে অর্থনৈতিক দূরত্ব ও বৈষম্য বেড়ে চলেছে। সমাজে এরূপ অর্থনৈতিক দূরত্ব ও বৈষম্য বেড়ে যাওয়ার ফলে সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমাজের এ অস্থিরতা দূর করার জন্য বিপরীত বৈষম্য পদ্ধতির প্রবর্তন কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে।

৩। বিপরীত বৈষম্য পদ্ধতি সমাজে বিদ্যমান জাতিগত ও লিঙ্গগত ভেদাভেদ দূর করতে পারে

একমাত্র বিপরীত বৈষম্য পদ্ধতিই পারে বর্তমান সমাজে বিরাজমান জাতিগত ও লিঙ্গগত ভেদাভেদ দূর করতে। যদি অন্য কোন বিকল্প পদ্ধতি দ্বারা এ ভেদাভেদ দূর করার উপায় বের করা যেত তাহলে আমরা এ বিপরীত বৈষম্য পদ্ধতি পরিহার করে ঐ বিকল্প ব্যবস্থাটি গ্রহণ করতাম। কিন্তু এরূপ কোন বিকল্প পথের সন্ধান অদ্যাবধি পাওয়া যায়নি। তাই সমাজে আজও জাতিগত ও লিঙ্গগত ভেদাভেদ বহাল তবিয়তে বিদ্যমান। আমেরিকায় সিভিল রাইট অ্যাক্ট ও ইকোয়াল এমপ্লয়মেন্ট অ্যাক্ট পাশ করার পরও এ ভেদাভেদ একটুও কমেনি এবং কোন প্রকার সুফল পাওয়া যায়নি। মানুষ যদি এ ভেদাভেদ দূর করে সমাজের পরিবর্তন না চায় তাহলে এ অবস্থার কোন উন্নতি হবে না। মানুষ যদি ন্যায্য পথে চলতে না চায় তাহলে এ সমাজে তারা সঠিকভাবে ঠাঁই পাবে না।

৪। অগ্রাধিকারমূলক নিয়ােগ যুক্তিযুক্ত এজন্য যে এর ফলে সমাজ ভবিষ্যতে ভাল ফলাফল ভােগ করবে

যদিও অগ্রাধিকারমূলক নিয়ােগের ফলে আপাত বাধার ও শত্রুতার সম্মুখীন হওয়ার আশংকা থাকতে পারে, কিন্তু বাস্তবে লিঙ্গগত ও জাতিগত ভেদাভেদ দূরীভূত হওয়ার ফলে সুদূরপ্রসারী উত্তম সমাজ উপহার পেতে পারে। এমতের অনুসারীদের মতে বিপরীত বৈষম্য পদ্ধতি কেবলমাত্র সমান সুযােগের পথ প্রশস্ত করে না, বরং লিঙ্গগত ও জাতিগত ভেদাভেদ দূরীভূত করার চেষ্টা করে থাকে এবং পূর্ণাঙ্গ ও বিশুদ্ধ সমতার পথের দ্বার উন্মুক্ত করে। এ মতের অনুসারীগণ বিশ্বাস করেন যে এ পদ্ধতি অনুসরণের ফলে সমান সুযােগের সুবিধা ছাড়াও স্বার্থের সমান বিবেচনার সুযােগ লাভ করবে এবং স্বার্থের সমান বিবেচনা নীতি প্রয়ােগ করে ভবিষ্যতে লাভবান হবে। এ কথা অসত্য নয় যে অনেক দেশই কোন একটি নীতির কাছাকাছি পৌঁছতে পারে না। এর কারণ এই যে তারা কিছু ব্যক্তিকে সমান সুযােগ দিতে অস্বীকার করে এবং অন্যের স্বার্থের প্রতি কম গুরুত্ব আরােপ করে থাকেন।

সংরক্ষণ বা কোটা পদ্ধতি বা বিপরীত বৈষম্য নীতির বিপক্ষের যুক্তি

১। বিপরীত বৈষম্য নীতিটি সমতা নীতির প্রয়ােগকে ব্যাহত করে

বিপরীত বৈষম্য নীতি অসমতাকে সমর্থন করে। কারণ এ নীতির অর্থই হচ্ছে জৈবিক কারণে কোন এক লিঙ্গের বা জাতির মানুষকে অগ্রাধিকারমূলক ভর্তি বা নিয়ােগের সুযােগ করে দেয়া এবং অন্য এক লিঙ্গের বা জাতির মানুষকে বঞ্চিত করা। এর সংজ্ঞার মধ্যেই অসমতা ও বৈষম্যের অংকুর নিহিত রয়েছে। এ নীতির প্রয়ােগ মানেই বৈষম্য ও অসম আচরণ করা। সমান আচরণ তখনই সম্ভব যখন সকল মানুষের সঙ্গে সমান আচরণ সম্ভব হয়। জাতিগত ও লিঙ্গগত ভেদাভেদ পরিত্যাগ করে সমানভাবে পুরস্কৃত বা শাস্তি প্রদান করা গেলেই সমতা নীতির প্রয়ােগ করা যায়। বিপরীত বৈষম্যের ধর্ম এর বিপরীতমুখী এবং এজন্যই অন্যায়।

২। বিপরীত বৈষম্য যােগ্য ও মেধাসম্পন্ন মানবসম্পদের অপচয় ঘটায়

এটিই বিপরীত বৈষম্য নীতির সবচেয়ে বড় ত্রুটি। এ নীতির প্রয়ােগের ফলে কিছু যােগ্য ও মেধাবী জনশক্তি উপযুক্ত পজিশনে ও স্থানে নিয়ােগের সুযােগ পায় না। এমন সব ব্যক্তি সমাজে রয়েছে যারা মেডিকেল বা ইঞ্জিনিয়ারিং বা আইনে ভর্তি হতে পারে না বা চাকরির সুযােগ থেকে বঞ্চিত হয়। তারা ভর্তির বা চাকরিতে নিয়ােগের সুযােগ পেলে ভবিষ্যতে, দেশের ও জাতির বৃহত্তর সেবা ও কল্যাণ সাধন করতে পারতাে। সরকারের এ পলিসি অনুসরণ করতে গিয়ে নিয়ােগকর্তদেরকে অনেক যােগ্য প্রার্থীদেরকে উপেক্ষা করতে হয়। এরূপ করা চাকরিদাতাদের জন্য যেমন অন্যায্য তেমনি যাদেরকে বঞ্চিত করা হচ্ছে তারাও সুবিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

৩। বিপরীত বৈষম্য শ্বেতাঙ্গ, পুরুষ ও সংখাগরিষ্ঠ্যদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে

বিপরীত বৈষম্য শ্বেতাঙ্গ, পুরুষ ও উপজাতীয় জনগােষ্ঠীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে যার ফলে এরা অসুখী জনগােষ্ঠীতে পরিণত হয়। এটা তাদের প্রতি অন্যায় ও অবিচার করার শামিল। এর ফলে এদের মধ্যে বৈরিতা ও কলহ দেখা দিতে পারে যা সুদূর ভবিষ্যতে সমাজ ও জাতির জন্য ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হতে পারে।

অগ্রাধিকারমূলক নিয়ােগের পশ্চাদশী যুক্তি (Backward-looking argument for preferential hiring)

আলোচনা

অগ্রাধিকারমূলক নিয়ােগের যুক্তিসমূহকে সাধারণত দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়ে থাকে – একটি পশ্চাৎদর্শী যুক্তি এবং অন্যটি দূরদর্শী যুক্তি। পশ্চাৎদর্শী যুক্তিটি সর্বজনগ্রাহ্য সমতা নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। সুযােগের সমতা নীতির মূল বক্তব্য হলাে সমাজের মর্যাদাপূর্ণ পদসমূহ সকল মানুষের মধ্যে ন্যায্য প্রতিযােগিতার ভিত্তিতে পূরণ ও বণ্টন করা উচিত। এ নীতিটির দুটি অংশ। প্রথম অংশে বলা হয় যে পদগুলাে সমাজের মানুষের মধ্যে যােগ্যতা ও সামর্থ্যের ওপর ভিত্তি করে বণ্টন করা উচিত যাতে পদসমূহের জন্য নির্ধারিত ও প্রত্যাশিত কাজগুলাে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হতে পারে। দ্বিতীয় অংশে বলা হয় যে, প্রত্যাশিত পদে নিয়ােগের জন্য প্রয়ােজনীয় যােগ্যতার গুণাবলী অর্জনের সমান সুযােগ থাকা উচিত।

আমাদের সমাজে সুযােগের সমতা নীতির উভয় দিককেই উপেক্ষা করা হয়। অধিকাংশ সমাজে বিকলাঙ্গ, বয়স্ক, নারী, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য হওয়ার কারণে মানুষ বৈষম্যের শিকার হয়ে চাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ধনীদের ছেলেমেয়ের শিক্ষায়তন গরিবদের ছেলেমেয়ের শিক্ষায়তনের তুলনায় শ্রেষ্ঠ, শ্বেতাঙ্গদের ছেলেমেয়ের শিক্ষায়তন অশ্বেতাঙ্গদের ছেলেমেয়ের শিক্ষায়তনের তুলনায় উত্তম। মেধাবী মেয়েরা অনেক ক্ষেত্রে প্রকৌশল, চিকিৎসা, মেরিন সাইন্স ইত্যাদি বিষয়ে পড়ার সুযােগ কম পায়। বিকলাঙ্গরা প্রায় সব ক্ষেত্রে কম-বেশি অবহেলিত ও উপেক্ষিত রয়ে গেছে। অগ্রাধিকারমূলক নিয়ােগের সমর্থকগণের মতে সুযােগের সমতা নীতির লঙ্ঘন অন্যায্য ও অন্যায়। কারণ এর ফলে যােগ্য প্রার্থীগণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের মতে অগ্রাধিকারমূলক নিয়ােগ যুক্তিযুক্ত এই জন্য যে, এর ফলে যাদের প্রতি অতীতে বৈষম্য ও অবিচার করা হয়েছে কিছুটা হলেও তার ক্ষতিপূরণ করা হয়।

সমালােচনা

অগ্রাধিকারমূলক নিয়ােগের সবচেয়ে উল্লেখযােগ্য সমালােচনা হলাে এই যে, এরূপ নিয়ােগের ক্ষেত্রে চাকরি বা ভর্তির সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এমন কারণের ওপর নির্ভর করে অগ্রাধিকারমূলক নিয়ােগ প্রদান করা হয়। বিচারক হার্লিন এরূপ অগ্রাধিকারমূলক বিবেচনার জন্য আমেরিকার শাসনযন্ত্রকে বর্ণ-অন্ধ শাসনতন্ত্র বলে উল্লেখ করেছেন। এর দ্বারা তিনি বােঝাতে চেয়েছেন যে, আমেরিকার শাসনযন্ত্রে জাতি বা বর্ণ ভেদাভেদের কারণে কোন নাগরিককে তার অধিকার ও সুযােগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। সমালােচকগণ বলেন যে বর্ণ-অন্ধ বা লিঙ্গ-অন্ধ নীতি সুযােগের সমতা নীতি থেকেই অনুমিত। কারণ তারা মনে করেন যে, সকল নাগরিকদেরই পদের যােগ্যতানুসারে নিয়ােগ পাওয়ার অধিকার আছে। জাতি, বর্ণ বা লিঙ্গ নিয়ােগ লাভের যােগ্যতা হিসাবে বিবেচিত হতে পারে না। যদি তাদের দাবি সত্য হয়, তাহলে অগ্রাধিকারমূলক নিয়ােগ সুযােগের সমতা নীতি ভঙ্গ করে। এর কারণ এই যে, এটি বর্ণ-অন্ধ বা লিঙ্গ-অন্ধ নীতির পরিপন্থী।

অগ্রাধিকারমূলক নিয়ােগ সুযােগের সমতা নীতির প্রথম অংশ লঙহন করে। কারণ দৃষ্টান্ত হিসাবে বলা যায় যে, আইন কলেজে শ্বেতাঙ্গদের পরিবর্তে কম যােগ্যতার অধিকারী অশ্বেতাঙ্গদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। সুযােগের সমতা নীতির দ্বিতীয় অংশে বলা হয়, যােগ্যতা অর্জনে সকলের সমান সুযােগ থাকা উচিত। এ শর্ত পূরণ না হলে কোন নিয়ােগ ন্যায্য হতে পারে না। শ্বেতাঙ্গরা অশ্বেতাঙ্গদের তুলনায় ভাল স্কুলে পড়ে – কাজেই বৈষম্য সমাজের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এখন কথা হল অশ্বেতাঙ্গরা বা নারীরা যদি ক্ষতিপূরণ পেতে পারে তাহলে আমেরিকায় বসবাসকারী বাংলাদেশীয়, ভারতীয়, আইরিশ, সার্বীয়, ক্রোয়েশীয় বা আমেরিকার বিভিন্ন উপজাতীয় সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ ক্ষতিপূরণ হিসাবে কেন অগ্রাধিকারমূলক নিয়ােগ পেতে পারবে না? তারাও অতীতে অনেক বৈষম্যের শিকার হয়েছে।

লেখক লিসা নিউটনের মতে, সুযােগের সমতা নীতির দ্বারা বিপরীত বৈষম্য নীতির যৌক্তিকতা প্রমাণ করা সম্ভব নয়। কারণ বিপরীত বৈষম্য নীতি সুযােগের সমতা নীতির অবমূল্যায়ন ঘটায়। কোন আইনের দ্বারাই জনগণের প্রতি সুবিচার করা সম্ভব হয় না। তাই সুযােগের সমতা নীতির দ্বারা বিপরীত বৈষম্য নীতির যৌক্তিকতা প্রমাণ করা সম্ভব নয়। এমনকি সমতা নীতির ওপর ভিত্তি করে ন্যায় বিচার উপেক্ষা করা উচিত নয়। কারণ ন্যায়পরতার নীতি সমতা নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। লিসার মতে, ন্যায়পরতাতত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে বিপরীত বৈষম্য নীতি প্রমাণ করা যায় না। কারণ এর ফলে এমন সকল সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে যেগুলাের সমাধান দেয়া কোন মতেই সম্ভবপর নয়। অতীতে কোন দলের প্রতি বৈষম্য করা হয়ে থাকলে বর্তমানে তার ক্ষতিপূরণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু কি পরিমাণ বৈষম্য করা হয়েছে বা কিভাবে ক্ষতিপূরণ করা হবে বা এর মাত্রা কি হবে তা নির্ধারণ করা কঠিন ও অসম্ভব কাজ। তাই তিনি বলেন যে, বিপরীত বৈষম্য পলিসি ন্যায়বিচার, আইন ব্যবস্থা, সমতা বিধান অসম্ভব করে তােলে।

জুরিস্ট উইলিয়াম ব্ল্যাকস্টোনের মতে অতীতে সংঘটিত বৈষম্যের ক্ষতিপূরণের নিমিত্তে বিপরীত বৈষম্য পলিসি গ্রহণ করা নৈতিক ও আইনগত উভয় দিক থেকে অন্যায়। তার মতে বিপরীত বৈষম্য পলিসি অনুসরণের ফলে ভালর তুলনায় অধিক পরিমাণে ক্ষতির আশংকা রয়েছে। তার বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয় যে, বিপরীত বৈষম্য পলিসি উপযােগবাদীদের উপযােগিতা নীতি বা ন্যায়পরতা নীতির দ্বারা প্রমাণ করা সম্ভব নয়। কাজেই বিপরীত বৈষম্য পলিসি মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ করা ন্যায্য নয়। তিনি আরাে অভিমত দেন যে, অগ্রাধিকারমূলক প্রােগ্রাম বিপরীত বৈষম্য পলিসি মাধ্যমে প্রমাণ করা শুধু অসম্ভবই নয়, বরং অসঙ্গতিপূর্ণও।

অগ্রাধিকারমূলক নিয়ােগের দূরদর্শী যুক্তি (Forward-looking argument for preferential hiring)

আলোচনা

দূরদর্শী যুক্তির সমর্থকগণ বিশ্বাস করেন যে, অগ্রাধিকারমূলক নিয়ােগ দ্বারা শুধু জাতিগত, লিঙ্গগত, বর্ণগত বা সম্প্রদায়গত ভেদাভেদ দূর করে চাকরি ও ভর্তির ক্ষেত্রে সুযােগের সমতা নীতির প্রয়ােগ করা যায়না, বরং এর জন্য আরাে গভীরভাবে সাম্য প্রতিষ্ঠার পথ সৃষ্টি করে সন্তোষজনক পরিণতির দিকে অগ্রসর হয়। সন্তোষজনক পরিণতি ও ফলাফল কি, তা জানার পূর্বে আমাদের জানা উচিত সমান সুযােগের নীতির কি কি সীমাবদ্ধতা আছে। বিভিন্ন পদ পূরণের ক্ষেত্রে আমরা যদি সমান সুযােগের নীতির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন দেখতে চাই তাহলে অধিক যােগ্যদেরকে যােগ্য পদে নিয়ােগ দেয়া উচিত। যেহেতু অন্যান্য পদসমূহের তুলনায় উচ্চতর পদের গুরুত্ব ও মর্যাদা বেশি তাই এ সকল পদে বেতনও বেশি দেয়া হয়। সাধারণত পদ বন্টনে সমান সুযােগের নীতির ওপর অধিক গুরুত্ব দেয়া হলে কম মেধাবীদের তুলনায় অধিক মেধাসম্পন্ন আবেদনকারীদেরকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়। এটি স্বার্থের সমবিবেচনা নীতির পরিপন্থী। স্বার্থের সমবিবেচনা নীতি অনুসারে সমান স্বার্থের দাবিদার ব্যক্তিদের মধ্য থেকে কোন ব্যক্তিকে কম বা বেশি গুরুত্ব প্রদান সঙ্গত নয়। এ মতবাদ বাহ্যিক সমতার ওপর তেমন গুরুত্ব দেয় না। তাই কে বুদ্ধির দিক থেকে সমান বা নৈতিক দিক থেকে সমান তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কাজেই কোন মানুষ অন্যের তুলনায় অধিক মেধাসম্পন্ন না কম মেধাসম্পন্ন তাতে কিছু যায় আসে না। বরং গুরুত্বপূর্ণ কথা হলাে সমান স্বার্থের ক্ষেত্রে সমান বিবেচনা পাওয়াই ন্যায্য অধিকার।

স্বার্থের সমবিবেচনা নীতিই সমান সুযােগের নীতির মূল ভিত্তি। সমতা সম্পর্কীয় নীতিগুলাের মধ্যে স্বার্থের সমবিবেচনা নীতির স্থান খুব সীমিত। কারণ সর্বোচ্চ মেধার অধিকারীদের কোন যােগ্য পদে নিয়ােগ দেয়া হলে তারা সুখী হয়ে দক্ষতা প্রদর্শন করে ভাল দক্ষতার পরিচয় দিতে সক্ষম হন। এর ফলে তারা সকলের স্বার্থরক্ষার চেষ্টা করতে পারেন। অবশ্য সমান সুযােগের নীতির পক্ষে এটি আংশিক সত্য। এটি সমান সুযােগের নীতিতে মেধা ও পদের মধ্যে সামঞ্জস্য ও যৌক্তিকতা প্রদর্শনের একটি প্রচেষ্টা। কিন্তু এর দ্বারা এটা প্রমাণিত হয় না যে, উচ্চ পদ হলেই বেতনের পরিমাণ অধিক হবে। তবে একথা সত্য যে, মেধাসম্পন্ন যােগ্য প্রার্থীদের আকর্ষণ করার জন্য উচ্চ পদের বেতন বেশি হওয়া বাঞ্ছনীয়। অন্যথায় মেধাবীদের কর্মস্থলে ধরে রাখা সম্ভব হবে না।

অগ্রাধিকারমূলক নিয়ােগের সমর্থনকারীদের মতে সমান সুযােগ প্রদানের মাধ্যমে স্বার্থের সমতা নীতির প্রয়ােগ সম্ভব। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই সমতা নীতির অনুসরণ সঠিকভাবে করে না। এরূপ প্রতিষ্ঠান কোন কোন ব্যক্তিকে সমান সুযােগ প্রদান করে না। এবং কোন সকল ব্যক্তির সন্তুষ্টি বিধানের গুরুত্ব অনুভব করে না।

সমালােচনা

আমরা ইতােমধ্যে দেখেছি যে, অগ্রাধিকারমূলক নিয়ােগের দূরদর্শী যুক্তির উদ্দেশ্য হলাে মানুষের জন্য অধিক সমান সুযােগ-সুবিধা সৃষ্টি করা এবং এমন একটি সমাজ গঠন করা যেখানে একই স্বার্থের অধিকারী সকল মানুষকে সমান সুযােগ-সুবিধা দেয়া সম্ভব হয়। এর একটি সম্ভাব্য উদাহরণ হলাে – কোন একটি সমাজের মানুষের দৃঢ় বিশ্বাস যে, নারীরা প্রকৌশলী হতে পারে না। যেহেতু প্রকৌশল পেশা একটি সম্মানজনক ও উচ্চ বেতনের পেশা এবং অনেক নারীর এরূপ বিষয় জ্ঞান অর্জনের মতাে মেধাশক্তি আছে, তাই তারা অগ্রাধিকারমূলক নিয়ােগ পেলে সমান দক্ষতা প্রমাণের সমান সুযােগ পাবে। অগ্রাধিকারমূলক নিয়ােগের যৌক্তিতার জন্য এটুকু বলাই পর্যাপ্ত নয়। যদি এরূপ সুযােগ প্রদান করার ফলে পুরুষ জাতির অধিকার লঙ্ঘিত হয় তাহলে এটি কি ন্যায্য হবে না হবে সে ব্যাপারে বিতর্ক রয়েছে। কারাে কারাে মতে কোন পদে নিয়ােগ পাওয়ার জন্য জাতি, বর্ণ বা লিঙ্গ যােগ্যতা হিসাবে গণ্য হওয়া উচিত নয়। উচ্চ শিক্ষা, দক্ষতা, কর্ম ক্ষমতা প্রভৃতি নিয়ােগ পাওয়ার যােগ্যতা হিসাবে গণ্য হওয়া উচিত। তবে স্বার্থের সমবিবেচনার জন্য যােগ্যতায় ছাড় দেয়ার প্রয়ােজন রয়েছে।

ধরে নেয়া হলাে যে, কোন এলাকায় একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হলাে। কিন্তু এখান থেকে পাস করে সবাই শহরে চাকরি করতে আগ্রহী। অথচ গ্রামের দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্রগুলাে চিকিৎসকের অভাবে সেবা প্রদান করতে পারছে না। গ্রামের আবেদনকারীরা যদি পাশ করে এবং গ্রামে চাকরি করতে আগ্রহী হয় তাহলে তাদের ভর্তির সুযােগ করে দেয়া উচিত। এরূপ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া অন্যায় নয়। কারণ চিকিৎসা শিক্ষার উদ্দেশ্য কেবল বড় বড় চিকিৎসক তৈরি করা নয়। বরং চিকিৎসাসেবা প্রদান করাই এর প্রধান ও মুখ্য উদ্দেশ্য। তেমনি শ্বেতাঙ্গরা অশ্বেতাঙ্গদের চিকিৎসা করতে অনাগ্রহী হতে পারে। সে ক্ষেত্রে অশ্বেতাঙ্গদের ভর্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত নয় কি? এর উত্তরে কোন ব্যক্তি হয়ত বলতে পারেন যে, অশ্বেতাঙ্গদের চেয়ে শ্বেতাঙ্গরাই অশ্বেতাঙ্গদের চিকিৎসা প্রদানে বেশি আগ্রহী হতে পারেন। তাদের এ যুক্তি অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু জাতি, বর্ণ বা লিঙ্গ ভর্তির যোগ্যতা হিসাবে গণ্য হওয়া উচিত নয়। কারণ ভর্তি বা নিয়ােগের পলিসি সাধারণভাবে সকলের জন্য একইভাবে উন্মুক্ত হওয়া উচিত। কোন সচেতন নাগরিক এ কথা বলতে পারেন না যে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পলিসি থেকে পরীক্ষার স্কোর বা গ্রেডিং বাতিল করা হােক।

তথ্যসূত্র

প্রায়োগিক নীতিবিদ্যা, এ.এস.এম. আবদুল খালেক, অনন্যা, ঢাকা, ২০০৯, পৃ. ৪৪৬-৫৫৩

1 Trackback / Pingback

  1. আউটলাইন – বিবর্তনপথ

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.