শিল্পদর্শন

(চলমান আর্টিকেল)

লিওনার্দো দা ভিঞ্চি

ভূমিকা

রেনেসাঁর অন্যতম প্রধান প্রভাবক লিওনার্দো দা ভিঞ্চি (১৪৫২-১৫১৯) একই সাথে চিত্রশিল্প ও বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখেছেন। তিনি যেমন ছবি এঁকেছেন, তেমনি বহু বৈজ্ঞানিক গবেষণার প্রকল্প তৈরিতে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তিনি বহু বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার তথা যন্ত্রপাতির নকশা এঁকেছেন। কেবল তাই নয়, শিল্প সম্পর্কে তার কিছু ছােট ছােট নিবন্ধ পাওয়া যায়, যার ভিত্তিতে ১৬৫১ সালে “ত্রাত্তাতো দেল্লা পিত্তুরা” (চিত্রকলা বিষয়ক নিবন্ধ বা আ ট্রিয়াটাইজ অন পেইন্টিং) প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে বইটি ইংরেজি সহ বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়। এই গ্রন্থে লিওনার্দোর যে শিল্পচিন্তা, বিশেষ করে চিত্রশিল্প বা চিত্রকলা বিষয়ক ভাবনা প্রকাশিত হয়েছে তার কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে আলােচনা করা যাক।

চিত্রকলার প্রকৃতি

লিওনার্দো দা ভিঞ্চি চিত্রকলা সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রাথমিকভাবে বলেন যে, এটি প্রকৃতির দৃশ্যমান ক্রিয়া-প্রক্রিয়ার অনুকরণকারী বিদ্যা। শিল্পকে অনেকেই অনুকরণ বলেছেন, যেমন প্লেটো ও এ্যারিস্টটলও শিল্পকে প্রকৃতির অনুকরণ বলে চিহ্নিত করেছিলেন। কিন্তু লিওনার্দোর ভাবনা কেবল তাদের কথার প্রতিধ্বনি মাত্র নয়। তিনি একে এক ধরনের সূক্ষ্ম অনুমানলব্ধ চিন্তাদর্শন প্রসূত কলাবিদ্যা এবং প্রকৃতি থেকে জন্মলাভ করা প্রকৃতির বিষয়কে সৃষ্টিশীল ও সুশৃঙ্খলভাবে তুলে ধরার এক প্রকার বিজ্ঞান বলেও চিহ্নিত করেন। তিনি বলেছেন, চিত্রকলাকে অবজ্ঞা করলে দর্শন, প্রকৃতিবিদ্যা তথা বিজ্ঞানকেও অবজ্ঞা করা হয়। তিনি বলেন, “যদি তুমি চিত্রকলাকে অবজ্ঞা কর, যা কিনা প্রকৃতির সব দৃশ্যমান ক্রিয়া-প্রক্রিয়ার একমাত্র অনুকরণকারী, তবে তুমি অবজ্ঞা করবে এক সূক্ষ্ম উদ্ভাবনকে যা চিন্তাদর্শন ও সূক্ষ্ম অনুমানের দ্বারা সব আকারে প্রকৃতি ও গুণাগুণকে বিবেচনা করে, যার মধ্যে সমুদ্র, স্থল, গাছপালা, জীবজন্তু, তৃণ, ফুল সবই আছে, যেগুলোর সবই আলােছায়ায় আবৃত। সত্যই এটি এক বিজ্ঞান, এবং প্রকৃতির যথার্থ সন্তান। কারণ চিত্রকলার জন্ম প্রকৃতি থেকে; বা আরাে সঠিকভাবে বলতে হয় সে প্রকৃতিরই পৌত্রী, কারণ সব দৃশ্যমান বস্তুর জন্ম প্রকৃতি থেকে, আর সেই বস্তুগুলাে থেকেই চিত্রকলার জন্ম। তাই আমরা যথার্থভাবে বলতে পারি সে হচ্ছে প্রকৃতির পৌত্রী, এবং ঈশ্বরের সঙ্গে আত্মীয়তা বন্ধনে যুক্ত।” (লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি, শিল্পচিন্তা, অনুবাদ ও সম্পাদনা, সুকান্ত চৌধুরী, যাদপপুর বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকাশনা, ২০১২, পৃষ্ঠা ২৫)।

লিওনার্দো চিত্রকলাকে যেভাবে বিজ্ঞান বলেছেন তা বােঝার পূর্বে বিজ্ঞান বলতে তিনি কী বােঝান তা ব্যাখ্যা করা প্রয়ােজন। ইতালীয় ভাষায় তিনি ‘scientia’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। শব্দটির দ্বারা যেমন ‘বিজ্ঞান’ (science) বোঝায় তেমনি ‘বিদ্যা’ (study)-ও বােঝায়। লিওনার্দো এই উভয় অর্থেই বিজ্ঞান শব্দটি চিত্রকলা প্রসঙ্গে ব্যবহার করেছেন। যাইহােক, বিজ্ঞান শব্দটির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে প্রাথমিকভাবে তিনি যে গুণের কথা বলেন তা হলাে এটা বুদ্ধিবৃত্তির দ্বারা উদ্ভুত এবং এর মধ্যে নতুনত্ব থাকবে। তার ভাষায়, “বিজ্ঞান হচ্ছে বুদ্ধিবৃত্তির সাহায্যে এমন পর্যালােচনা যার শুরু কোনাে বিষয়ের একেবারে প্রারম্ভিক পর্যায়ে, অর্থাৎ যার আগে বিষয়টির কোন অঙ্গ বা অংশ প্রকৃতি জগতে খুঁজে পাওয়া যায় না।” (প্রাগুক্ত, পৃ. ২৫)।

যাইহােক, উপযুক্ত আলােচনায় আমরা দেখেছি চিত্রকলাকে বিজ্ঞান বলতে গিয়ে তিনি প্রথমত একে ‘প্রকৃতির সন্তান’ বলে চিহ্নিত করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে বিজ্ঞান বলতে তিনি এমন কিছুকে চিহ্নিত করেন ‘যার কোন অংশ প্রকৃতিতে খুঁজে পাওয়া যায় না।’ ঐ দুটি কথা আপাত বিরােধপূর্ণ বলে মনে হলেও বিষয়টি তা নয়। প্রকৃতির অনুকরণ দ্বারা চিত্রকলা অনুপ্রাণিত ও অনুসারিত হলেও চিত্রকর যা সৃজন করেন তা প্রকৃতিতে ছিলাে না, এটা তারই সৃষ্টি। এই অর্থে এটি নতুন। আর এই নতুন সৃজনের জন্য চিত্রকরকে আবশ্যিকভাবেই বুদ্ধিবৃত্তির ব্যবহার করতে হয়। তবে এর অর্থ এই নয় যে, এখানে অভিজ্ঞতার কোন স্থান নেই। বরং তিনি অভিজ্ঞতার গুরুত্বকেও স্বীকার করেছেন, এবং বলেছেন যে, ‘অভিজ্ঞতা না থাকলে কোন কিছুই নিশ্চিতভাবে উদ্ঘাটিত হয় না।’ (প্রাগুক্ত, পৃ. ২৬)। কেবল বিজ্ঞান নয় জ্ঞানের সকল শাখাকেই তিনি অভিজ্ঞতার কাছে ঋণী বলেছেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “আমার কিন্তু মনে হয় সব জ্ঞান-বিজ্ঞানই ব্যর্থ আর ভুলে-ভরা, যদি না তার জন্ম হয় অভিজ্ঞতা থেকে, কারণ অভিজ্ঞতাই সব নিশ্চিত জ্ঞানের জননী।” (প্রাগুক্ত, পৃ ২৭)। তিনি আরও বলেন, “সাত্যিকারের বিজ্ঞান হল সেগুলি, যাদের অভিজ্ঞতা ইন্দ্রিয়ের মধ্য দিয়ে চালিত হয়েছে।” (প্রাগুক্ত, পৃ ২৭)। বিজ্ঞানের অন্য একটি দিকের কথা তিনি উল্লেখ করেন তা হলাে সকল বিজ্ঞানের প্রদর্শন ও পরীক্ষণের বিষয়টিকে তিনি অংকশাস্ত্রের ওপর নির্ভরশীল বলে মনে করেন।

বিজ্ঞানের মধ্যে লিওনার্দো শ্রেণিকরণ করেন। তাত্ত্বিক বিজ্ঞান, যাকে তিনি ‘বিজ্ঞান’ বলেই কেবল প্রকাশ করেছেন, তাকে তিনি মনের মধ্যে সৃষ্টি বলে চিহ্নিত করেন। তবে মনের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া বা তাত্ত্বিকভাবে চর্চা মানে এই নয় যে, তা অভিজ্ঞতার জগতের সাহায্য ছাড়া চর্চিত হয়। এর অর্থ এই বিজ্ঞানের কাজটি প্রধানত মানসিক। অন্যদিকে রয়েছে যান্ত্রিক বা প্রযুক্তিগত বিজ্ঞান, যার কাজ অভিজ্ঞতার দ্বারা হাতে-নাতে প্রমানসিদ্ধ উপায়ে কাজ করা। তবে তিনি আধা-যান্ত্রিক নামে অন্য এক ধরনের বিজ্ঞানের কথা বলেছেন। এই বিজ্ঞানের উৎপত্তি মনে তথা এটি মানসিক বিজ্ঞান বা তাত্ত্বিক বিজ্ঞান হিসেবে সূচিত হয় কিন্তু শেষ হয় যান্ত্রিক বা কায়িক প্রক্রিয়ায়। তাই তিনি তাকে আধা-যান্ত্রিক বিজ্ঞান বলে চিহ্নিত করেন। চিত্রকলাকে তিনি এ ধরনের বিজ্ঞান বলে অভিহিত করেন। লিওনার্দো বলেন, “জ্যোতির্বিদ্যা ধরনের বিজ্ঞানে হাতের কাজের ভূমিকা আছে, যদিও তাদের সূচনা মনে- যেমন চিত্রকলা, যা শুরু হয় পর্যবেক্ষকের মনে কিন্তু হাতের দ্বারা রূপায়িত না হলে তা পূর্ণতা লাভ করে না।” (প্রাগুক্ত, পৃ. ২৭)। উদাহরণ হিসেবে তিনি দেখান যে, চিত্রকলায় কতগুলাে ধারণা সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হয় তা হলাে, ছায়াবৃত্ত, অবয়ব, বর্ণ বা রং, ঘনত্ব, আকৃতি, অবস্থান, নৈকট্য, গতি ও নিশ্চলতা। এই ধারণাগুলাে বৈজ্ঞানিক নীতিমালা দ্বারা নির্ধারিত হয়। এই বিজ্ঞান তাত্ত্বিক বা মানসিক। এখানে হাতের কাজের কোন দরকার নেই। কিন্তু এই ধারণাগুলাে গ্রহণ করে চিত্রকর যখন কোন চিত্র অংকন করেন তখন তা তার নিজের কৌশল বা কলা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে অভিজ্ঞতাভিত্তিক বাস্তবনির্ভর কর্মের মাধ্যমে তা অগ্রসর হয়। এজন্য লিওনার্দো চিত্রকলাকে আধা-যান্ত্রিক বিজ্ঞানই কেবল বলেননি, তিনি একে কলার মর্যাদাও দিয়েছেন। মজার বিষয় হলাে, লিওনার্দো চিত্রকলাকে ‘চিত্রকলা বিজ্ঞান’ বলতেই সাচ্ছন্দবােধ করতেন। চিত্রকলা বিজ্ঞান বলতে তিনি ইতালীয় ভাষায় “scientia della pittura” শব্দটি ব্যবহার করেছেন।

যাইহােক, লিওনার্দোর মতে, চিত্রকলার প্রথম সূত্র হলাে ‘বিন্দু’। অবশ্য অন্য বিজ্ঞান বা মননচর্চার বিষয়ও বিন্দুর ধারণানির্ভর বলে তিনি মনে করেন। চিত্রকলার দ্বিতীয় সূত্র রেখা, তৃতীয় সূত্র সমতল এবং চতুর্থ হলাে সমতল বহিঃসীমায় ঘেরা বস্তু বা অবয়ব। লিওনার্দোর মতে, চিত্রকলার কার্যকলাপ কেবল বস্তুর বাহ্যিক রূপ পর্যন্ত বিস্তৃত। আর সে কারণে এই বিদ্যা বস্তুর অবভাসিক রূপকেই চিত্রিত করতে পারে। চিত্রকলা বা চিত্রকলা বিজ্ঞান বল্পজগতের অবভাসিক রূপ দেখেই তার অনুকরণ অনুকৃতি করতে চায়, এটি বস্তুর বাইরের রূপের মধ্যে বর্ণ ও আকৃতির অনুকরণ করে। বস্তুর অবভাস বা প্রকাশিত রূপের অন্তরালের কোন সময় নিয়ে চিত্রকলা অনুসন্ধান চালাতে পারে না। এই দিক থেকে দর্শনের চাইতে চিত্রকলার পরিধি সীমিত। তবে চিত্রকলা যে অংকনবিদ্যা চর্চা করে তার ওপর অন্য অনেক বিদ্যা নির্ভর করে। লিওনার্দোর ভাষায়, “চিত্রকলার মূলে যে অংকনবিদ্যা, তা দিয়ে সে স্থপতিকে তার স্থপত্যগুলি দৃষ্টিনন্দন করতে শেখায়, প্রশিক্ষিত করে নানা রকম পাত্রের প্রস্তুতকারক, কুম্ভকার, স্বর্ণকার, তন্তুবায় ও সূচিশিল্পীদের। অক্ষর দিয়ে যে বিভিন্ন ভাষা লেখা হয়, তা চিত্রকলারই সৃষ্টি, সেই গণিতজ্ঞকে তার সংখ্যা ও চিহ্ন দান করেছে এবং জ্যামিতির নকশার নির্দেশ দিয়েছে। সেই প্রশিক্ষিত করছে দৃষ্টিবিজ্ঞানী, জ্যোতির্বিদ, যন্ত্রবিদ আর বস্তুকারদের।” (প্রাগুক্ত, পৃ: ২৯)।

চিত্রকলা যে ছবি বা অংকিত রূপ তৈরি করে তা ন-ভাষিক। এটাকে লিওনার্দো বােবা কাব্য বলেও চিহ্নিত করেছেন। কাব্য তার বক্তব্য ভাষার মাধ্যমে প্রকাশ করে, কিন্তু চিত্র ভাষাহীনভাবে তা প্রকাশ করে থাকে। চিত্র যদি কোন মননক্রিয়া প্রকাশ করে থাকে বা কোন আবেগ প্রকাশ করে তবে তা প্রকাশ করে নানা রকম রং ও আকৃতির গতিভঙ্গির দ্বারা। তাই চিত্রকলা দৃশ্যমানভাবে বােধ, মনন বা ভাব প্রকাশের একটি বিদ্যা। লিওনার্দোর মতে, চিত্রকলা একসাথে এবং বিভিন্নভাবে মনের বিভিন্ন অভিব্যক্তি স্বল্প পরিসরে প্রকাশ করার একটি উৎকৃষ্ট বিদ্যা। কেননা ছবিতে আনুপাতিক সামঞ্জস্যের দ্বারা মনের বিভিন্নভাব একসাথে ফুটিয়ে তােলা সম্ভব। অন্যদিকে, আলাদা করেও ঐ ভাবগুলাে চিত্রকর তুলে ধরতে পারেন। সৌন্দর্যকে প্রকৃতির চাইতেও অধিকতর জীবন্ত ও স্থায়ী রূপ দানের একটি বিদ্যা হিসেবেও চিত্রকলাকে তুলে ধরেন লিওনার্দো দা ভিঞ্চি। কেননা প্রকৃতি প্রদত্ত কোন বিষয় যেমন মানবদেহের কোন অপূর্ণতাকে চিত্রকর ইচ্ছামত পূর্ণতা দিতে চেষ্টা করতে পারেন। প্রকৃতিগতভাবে মানুষ বা অন্য কোন প্রাকৃতিক দৃশ্য কিংবা বস্তু একটি নিদিষ্ট সময়ে প্রাকৃতিক নিয়মেই বিলুপ্ত হতে পারে। কিন্তু কোন ছবি বা একে আরও অধিকতর সময় ধরে রাখা যায়। লিওনার্দোর ভাষায়, “হে আশ্চর্য বিজ্ঞান, তুমি নশ্বর মানবদেহের সৌন্দর্যের লক্ষণগুলি জীবন্ত করে রাখো যাতে তা প্রকৃতিসৃষ্ট বস্তুর চেয়ে বেশি দীর্ঘস্থায়ী হয়, কারণ প্রকৃতির সৃষ্টিগুলি কালের গতিতে ক্রমাগত অনিবার্যভাবে জরার দিকে এগিয়ে চলে। ঐশ্বরীয় প্রকৃতির সঙ্গে এমন বিজ্ঞানের ঠিক সেই সম্পর্ক, যে সম্পর্ক তার সৃষ্টি ও ক্রিয়ার সঙ্গে প্রকৃতির সৃষ্টি ও ক্রিয়ার, সেজন্যই তা পূজ্য।” (প্রাগুক্ত, পৃ. ৪০)।

প্রকৃতিতে অবিরত আলাে-ছায়ার খেলা চলে। এই খেলার মাধ্যমে দৃষ্ট যে দৃশ্যরূপ প্রকৃতিতে বিরাজমান চিত্রকলা বিজ্ঞান সেই দৃশ্যগুলােকে শৈল্পিক আকারে উপস্থাপন করে এবং তার বৈজ্ঞানিক পঠন-পাঠন করে থাকে। এ ক্ষেত্রে মন এবং হাত দুটোকেই চিত্রকর কাজে লাগান। লিওনার্দোর ভাষায়, “চিত্রকলার যথার্থ ও বৈজ্ঞানিক নীতি প্রথমে নির্ধারণ করে ছায়ায় অবস্থিত বস্তু বলতে কী বােঝায়, আদি বা মৌলিক ছায়া কী, ব্যুৎপন্ন বা আনুষঙ্গিক ছায়াই বা কী, আর আলাে কী, অর্থাৎ কিনা অন্ধকার, আলাে, বর্ণ, কায়া বা অবয়ব, গঠন, অবস্থান, দূরত্ব, নৈকট্য, গতি ও স্থিতি। এগুলি কেবল মননের দ্বারা বুঝতে হয়, এখানে হাত লাগিয়ে কাজ করার প্রশ্ন নেই। এদের যােগ হল চিত্রকলাবিজ্ঞান, যা তার অনুধাবনকারীদের মনের মধ্যে থাকে। তা থেকে জন্ম নেয় হাতের আসল কাজ, যা পূর্বোক্ত মনন বা বিদ্যার চেয়ে অনেক বেশি সমীহের বস্তু।” (প্রাগুক্ত, পৃ. ৫৭)।

চিত্রকলা ও কাব্য

লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি চিত্রকলার প্রকৃতি ও গুরুত্ব বােঝানাের জন্য বিভিন্ন ধরনের বিদ্যার সাথে এর তুলনামূলক আলােচনা করেছেন। তবে কাব্যের সাথে তার তুলনা করেছেন সবচেয়ে বেশি। তিনি চিত্রকলাকে কাব্যের চাইতে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যা বলে অভিহিত করেছেন। তিনি দেখান যে কাব্য তার বিষয়বস্তু তুলে ধরে ভাষার মাধ্যমে – ‘অক্ষরের কল্পকায়ায়’। কিন্তু চিত্রকলা দৃষ্টির সম্মুখে অনেকটা হুবহু প্রকৃতি প্রদত্ত বস্তু বা বিষয়গুলির দৃশ্যমান প্রতিকৃতি উপস্থাপন করে। লিওনার্দো মনে করেন মানুষের দৃষ্টিশক্তির মাধ্যমে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা কোন বর্ণনা বা ভাষার মাধ্যমে প্রাপ্ত অনুকৃতির চাইতে অনুভূতিতে অধিকতর প্রতিঘাত করে বলে। তার মতে, কাব্যের চাইতে চিত্রকলা অপেক্ষাকৃত মহত্তর ইন্দ্রিয়ের সেবা করে। মহত্তর ইন্দ্রিয় বলতে তিনি চোখকে বুঝিয়েছেন। তিনি বলেন, “চোখ হচ্ছে আত্মার বাতায়ন; প্রকৃতির অশেষ কীর্তি সবচেয়ে অপূর্ব ও সম্পূর্ণভাবে অনুধাবন করতে এই আমাদের বােধশক্তির প্রধান অবলম্বন।(প্রাগুক্ত গ্রন্থ, পৃ: ৩৬)। তিনি কবিসহ ইতিহাসবিদ এমনকি গণিতবিদকেও এই কথা বলেন যে, তারা যদি যথার্থভাবে চক্ষু-ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে না নিতেন তাহলে তাদের বিদ্যায়ও সঠিক সিদ্ধান্তে পৌছানাে বা যথার্থ জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব হতাে না।

চিত্রকর দৃশ্যযােগ্য বিষয়ের স্রষ্টা। তার সৃষ্টিকর্ম যে জ্ঞান প্রদান করে তা বুঝতে কোন অতিমাত্রায় মেধা দরকার হয় না। সহজেই তার প্রদত্ত তথ্য, নির্দেশনা বা অভিব্যক্তি মানুষ বুঝতে পারে। কবি বা অন্য কেউ যতভাবেই মানুষকে কিছু বোঝাতে চেষ্টা করুন না কেন চিত্রকরের বোঝানাের প্রক্রিয়া সবচাইতে সহজ। ছবি নীরব ভাবে কথা বলে। লিওনার্দো বলেন, “হে কবি, তুমি যদি কলমে-আঁকা ছবি দিয়ে কোনাে কাহিনী চিত্রায়িত করতে পারো, চিত্রকর তার তুলি দিয়ে তা আরও সহজে চিত্তাকর্ষক করে, আরাে সংক্ষেপে ও কম ক্লান্তিকরভাবে করতে পারে। তুমি যদি ছবিকে বল মূক কাব্য, চিত্রকর কাব্যকে বলতে পারে অন্ধ ছবি।” (প্রাগুক্ত, পৃ ৩৬)। মূক বা বােবা হওয়া যেমন অপূর্ণতা, অন্যদিকে অন্ধ হওয়াও অপূর্ণতা। লিওনার্দো প্রশ্ন করেন যে, কোনটি বেশি দুর্দশা, অন্ধ হওয়া নাকি বােবা হওয়া। তিনি দেখান যে, কবিতার বিষয়গুলাে কল্পনা করে মনের মধ্যে চিত্র গ্রহণ করতে হয়, অন্যদিকে ছবির বিষয়সমূহ চোখের সামনেই উদ্ভাসিত হয়। কবি মানুষের নাম বা কতগুলাে বিষয়ের নাম উল্লেখ করে, কিন্তু চিত্রকর নাম নয়, সেই নামের ব্যক্তি বস্তু বা বিষয়কে প্রতিমূর্তি হিসেবে উপস্থাপন করেন। এ ক্ষেত্রে লিওনার্দো প্রশ্ন করেন যে, কোন্‌টি আসলের নিকটতম কোন ব্যক্তির নাম নাকি ঐ ব্যক্তির প্রতিমূর্তি। তার মতে, অবশ্যই কোন ব্যক্তি বা বস্তুর প্রতিমূর্তি তার নিছক নামের চাইতে অধিকতর হৃদয়গ্রাহী। উদাহরণ দিতে গিয়ে লিওনার্দো বলেন, “আমি শুধু এটাই চাই, কোন দক্ষ চিত্রকর একটা যুদ্ধের মত্ততার ছবি আঁকুক, আর এক কবি তা নিয়ে লিখুক, এবং দুটিই জনসমক্ষে উপস্থিত করা হােক। দেখা যাবে কোটি বেশি দর্শক আকর্ষণ করে, কোন্‌টি নিয়ে বেশি আলােচনা হয়, কোনটি বেশি প্রশংসা পায়, কোনটি বেশি সন্তুষ্ট করে। অবশ্যই ছবিটি বেশি সন্তুষ্ট করবে, অনেক বেশি উপকারী ও সুন্দর বলে। কোন স্থানে ঈশ্বরের নাম লেখ, আর সামনাসামনি তার একটা প্রতিকৃতি রাখো, দেখবে কোনটি বেশি পূজা পায়। (প্রাগুক্ত গ্রন্থ, পৃ: ৩৭)।

উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি আরও দেখান যে, কোন সুন্দরী নারীকে কবি মনমুগ্ধকর বর্ণনা দ্বারা শােভিত ও আকর্ষণীয় করে তুলতে চেষ্টা করুক না কেন, কোন দক্ষ চিত্রকর যদি তার ছবি এঁকে তার প্রতিমূর্তি হাজির করেন তাহলে সর্বস্তরের মানুষ ঐ ছবিটিকেই বেশি গুরুত্ব দেবে, ছবিটিই অপেক্ষাকৃত বেশি মানুষের হৃদয়ে দাগ কাটবে। কেবল মানুষ নয়, তার মতে, চিত্রকর্ম দেখে অন্যান্য প্রাণীও আকৃষ্ট হয়, কিন্তু কবিতা অন্যান্য প্রাণির বােধগম্য হয় না, বা অন্য  প্রাণী কবিতার গুরুত্ব বুঝতে পারে না। প্রকৃতির নিজস্ব উপাদান যেমন মানুষ সহ প্রাণিকূলের নিকট আকর্ষণীয় হয় তেমনি ছবি বা চিত্রকর্ম মানুষ সহ অন প্রাণিকেও আকর্ষণ করে। লিওনার্দো এমন একটি ছবির উদাহরণ দিয়েছেন যাতে কোন ব্যক্তির প্রতিকৃতি অংকিত হয়েছে – ঐ ছবিটি তার সন্তানদের যেমন প্রিয় হয়েছে, একই সাথে পালিত কুকুরও ছবিটিকে আদর করতে এগিয়ে এসেছে। (প্রাগুক্ত, পৃ ২৮)।

চিত্রকলা ও কাব্য উভয়ই অনুকরণ (imitation)। কিন্তু লিওনার্দো দেখান যে, কাব্য অনুকরণ করে ভাষার মাধ্যমে। শব্দ ও কথার মাধ্যমে কবি প্রকৃতিকে বা কল্পরূপের অনুকরণ করে। কিন্তু চিত্রকর সরাসরিভাবে প্রকৃতির ক্রিয়া অনুকরণ করে। তাই কাব্যের চাইতে চিত্রকলার অনুকরণ অধিকতর উত্তম অনুকরণ। লিওনার্দোর ভাষায়, “ভাষার চেয়ে প্রকৃতির ক্রিয়া অনেক বেশি মহান, কারণ ভাষা মানবসৃষ্ট; মানুষের ক্রিয়ার সঙ্গে প্রকৃতির ক্রিয়ার তুলনা যেন মানুষের সঙ্গে ঈশ্বরের। তাই শব্দ দিয়ে মানুষের কাজ আর কথা অনুকরণ করার চেয়ে প্রকৃতি সৃষ্ট বস্তুসমূহ অনুকরণ করা বেশি মহান, কারণ সেগুলি সত্য ও বাস্তব প্রতিরূপ। কবি, তুমি যদি কেবল তােমার নিজের বৃত্তির স্মরণ নিয়ে, নানা বস্তুর নানারকম আকৃতি ও অবস্থানের প্রতিরূপ দিয়ে প্রকৃতির সৃষ্টি-ক্রিয়া বর্ণনা করতে চাও, চিত্রকরের অপরিসীম বেশি ক্ষমতার কাছে হেরে যাবে। কিন্তু যদি তুমি কাব্যের অতিরিক্ত অন্য নানা বিদ্যায় নিজেকে ভূষিত করো, যেমন জ্যোতিষ, অলঙ্কার, ধর্মশাস্ত্র, দর্শন, জ্যামিতি, পাটিগণিত ইত্যাদি, তবে তুমি আর কবি থাকছ না; তুমি বদলে অন্যকিছু হয়ে গেছ, ফলে বর্তমান আলােচনার বাইরে চলে গেছ।” (প্রাগুক্ত, পৃ, ৩৫-৩৬)।

লিওনার্দো ঘােষণা করেন, চিত্রকলা নিজের পরিধির মধ্যে প্রকৃতির সকল রূপ বা আকৃতি ধারণ করতে পাবে। কিন্তু তার মতে, কবি কেবল তার নাম বর্ণনাই করতে পারেন; সবকিছুকে সার্থকভাবে চিত্রায়িত করতে পারেন না। আর তাদের সকল বর্ণনা সর্বসাধারণের নিকট বােধগম্যও হয় না। বলা হয়ে থাকে যে, কবি চিত্রকরের চাইতে নৈতিক শিক্ষা, উপদেশ এবং কোন আদর্শ প্রচার করতে অধিকতর সুদক্ষ। কেননা কবি তার ইচ্ছামত বর্ণনার মাধ্যমে এগুলাে সুন্দরভাবে তুলে ধরতে পারেন। কোন বর্ণনার ক্ষেত্রে কবির সীমাবদ্ধতা নেই। কিন্তু লিওনার্দো এমন কথা স্বীকার করেন না। তার মতে, চিত্রকরও তার ছবির মধ্য দিয়ে নৈতিক শিক্ষা, উপদেশ, এমনকি সামাজিক অনেক রীতি-নীতি, আচার প্রকাশ করতে পারেন। অত্যন্ত সার্থকভাবেই চিত্রকর তা করতে পারেন। উদাহরণ হিসেবে তিনি প্রাচীন যুগের গ্রিক চিত্রকর আপেল্লেস (Apelles, খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতক) অংকিত ‘কলঙ্ক’ বা ‘Calumny’ নামক ছবির কথা তুলে ধরেন। এই ছবিতে সমাজে কলঙ্ক রটনার প্রবণতা এবং তার কুফল তুলে ধরা হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে, আপেল্লেস অংকিত আসল ছবিটি এখন আর পাওয়া যায় না। তবে তার ঐ ছবিটি নিয়ে যে সকল গল্প বা বর্ণনা প্রচলিত আছে তার ভিত্তিতে রেনেসাঁকালীন চিত্রকর সান্দ্রো বত্তিচেল্লি ১৪৯৪-৯৫ সালে ক্যালামনি অফ আপেল্লেস (Calumny of Apelles) নামে একটি ছবি আঁকেন।

প্রকাশ প্রক্রিয়ার সুবিধার দিক থেকেও লিওনার্দো চিত্রকরকে কবির থেকে এগিয়ে রাখতে চান। তার মতে, কবি তার বর্ণনার মাধ্যমে নানা কথা বলতে পারেন। নানারকম উপমা দিয়ে কোন কিছু চিত্রায়িত করতে চাইতে পারেন, কিন্তু তার এই বর্ণনা প্রক্রিয়া ধারাবাহিকভাবে সুদীর্ঘ হতে থাকবে। একসাথে অনেক কথা বা অনেক রূপের অভিব্যক্তি বা প্রকাশ কবির পক্ষে কষ্টকর। কিন্তু চিত্রকর এই কাজে সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন। তিনি একটি চিত্রের মাধ্যমে অনেক কিছু একসাথে প্রকাশ করতে পারেন। উদাহরণ হিসেবে আমরা বলতে পারি যে, কোন যুদ্ধের বর্ণনা দিয়ে কবি বিরাট মহাকাব্য রচনা করতে পারেন। কিন্তু চিত্রকর একটি ছবির মাধ্যমে অতিসংক্ষেপে অনেক ঘটনা একত্র করে যুদ্ধের বিরাট কাহিনীকে স্বল্পপরিসরে প্রকাশ করতে পারেন। আবার চিত্রকর ইচ্ছা করলে খণ্ড খণ্ড ভাবে যুদ্ধের বিভিন্ন অংশকে চিত্রায়িত করতে পারেন। প্রকাশের এই প্রক্রিয়ার কারণে চিত্রকর্ম মানুষের মনে অধিকতর প্রভাব ফেলতে পারে বলে লিওনার্দো মনে করেন। কবি যেভাবে দীর্ঘ বর্ণনায় কোন বিশেষ ঘটনাকে প্রকাশ করতে চান বা কোন বিশেষ সৌন্দর্য কিংবা রূপ বর্ণনা করতে চান তার ধারাবাহিকতা অনুযায়ী মানুষের স্মৃতিতে এককভাবে চিত্রায়িত হওয়া কষ্টকর হয়ে যায়; কিন্তু চিত্রকর এমন এক সমন্বিত ঐক্যতান গড়ে তােলেন যা স্বল্পপরিসরে প্রকাশিত; তাই উপভোগকারী মানুষ সহজেই তা বুঝতে ও মনে রাখতে সক্ষম হয়।

চিত্রকলা ও মূর্তিশিল্প

লিওনার্দো চিত্রকলায় যেমন দক্ষ ছিলেন তেমনি মূর্তিশিল্প বা ভাষ্কর্যশিল্পেও তার দখল ছিলাে। এই উভয় দিকের পারদর্শিতাকে পুঁজি করে তিনি এই উভয় প্রকার শিল্পের তুলনামূলক আলােচনা বা মূল্যায়ন করেছেন। তিনি দাবি করেছেন যে, যেহেতু চিত্রকলা এবং মূর্তিশিল্প এই উভয় বিদ্যায় তার দখল আছে তাই তিনি এদের মূল্যায়ণের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষভাবে সঠিক মন্তব্য করতে পারবেন। লিওনার্দো দেখান যে, মূর্তিশিল্প তার ছায়া নিজে নিয়ে চলতে পারে না। কিন্তু চিত্রশিল্প নিজের ছায়া নিজেই সঙ্গে নিয়ে চলে। মূর্তিশিল্পী তার মূর্তির মধ্যে নানা রঙের প্রকৃতিগত ভিন্নতার প্রয়ােগ করে বৈচিত্র্য সৃষ্টি করতে পারেন না, কিন্তু চিত্রকর বৈচিত্র্য সৃষ্টি করতে পারেন। পরিপেক্ষিত সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে চিত্রশিল্পের কোন বেগ পেতে হয় না। তার মতে, একজন চিত্রশিল্পী ইচ্ছা করলে কোন ছবির পরিপেক্ষিত একশ মাইলও বিস্তৃত করতে পারেন। কিন্তু মূর্তিশিল্পে এ ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। লিওনার্দোর মতে, মূর্তিশিল্পে পরিপেক্ষার প্রয়ােগ মােটেই সঠিক মনে হয় না। (প্রাগুক্ত, পৃ. ৪১)। বিশেষকরে বায়ু সংক্রান্ত পরিপেক্ষা ব্যবহারে মূর্তিশিল্প একেবারেই অপারগ বলে তিনি উল্লেখ করেন। তাছাড়া আলােক-উৎসারী অবয়ব বানানাের ক্ষেত্রে আলােকের প্রতিফলন, আয়নার মতাে কোন উজ্জ্বল জিনিসে কোন আলােক রশ্মির অবস্থান, কুয়াশা, অন্ধকার, ঝড় এবং আরাে অগণিত বিষয়ের প্রতিকৃতি তৈরিতে মূর্তিশিল্প অপারগ বলে লিওনার্দো উল্লেখ করেন। (প্রাগুক্ত, পৃ. ৪১)।

অন্য বিচারে তিনি চিত্রশিল্পকে মূর্তিশিল্পের চাইতে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী শিল্প বলে অভিহিত করেন ও এর ব্যাপক প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “অতএব চিত্রকলা আর মূর্তিশিল্পের তুলনা সম্পর্কে আমি এই বলতে ইচ্ছুক যে, চিত্রকলা বেশি সুন্দর, কল্পনাশ্রয়ী ও পরিপূর্ণ; ওদিকে মূর্তিশিল্প বেশি টেকসই, কিন্তু তার আর কোন গুণ নেই। মূর্তিশিল্পী অল্প পরিশ্রমে এমন একটা কিছু বাস্তবে তৈরি করে, চিত্রকলা যার আপাত রূপ দৃষ্টিগ্রাহ্য করে দেখায়। কী অলৌকিক ব্যাপার- যা অশরীরীকে শরীরী করে দেখায়, সমতল বস্তুকে দেখায় উঁচু-নীচু করে, নিকট বস্তুকে দূরে! এক কথায়, চিত্রকলা অসংখ্য সম্ভাবনার দ্বারা ভূষিত, মূর্তিশিল্পে যার অভাব রয়েছে।”

তথ্যঋণ –
(১) নন্দনতত্ত্ব, ডঃ মোঃ শওকত হোসেন, তিথি পাবলিকেশন, ২০১৭, পৃ. ১৬০-১৬৯
(২) লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি, শিল্পচিন্তা, অনুবাদ ও সম্পাদনা, সুকান্ত চৌধুরী, যাদপপুর বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকাশনা, ২০১২, পৃষ্ঠা ২৫-৫৭

1 Trackback / Pingback

  1. পাশ্চাত্যের ইতিহাস ও চিন্তা-ঐতিহ্যের আউটলাইন – বিবর্তনপথ

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.