পরকিয়ায় বিজ্ঞান

পার্টনারকে চিটিং করা বা পরকিয়া প্রত্যেক কালচারেই একটা ট্যাবু। তবুও দেখা যায় ব্যাপারটাকে বিভিন্ন মুভি, গান ইত্যাদিতে উৎসাহিত করা হয়। কিন্তু কেন মানুষ চিটিং করে (ফার্স্ট প্লেসেই)? এর পেছনে কি কোন বিজ্ঞান লুকিয়ে আছে?

স্তন্যপায়ীদের মধ্যে মাত্র ৩ থেকে ৫ শতাংশ মনোগ্যামাস। অর্থাৎ তারা তাদের সারাটা জীবন একটি মাত্র সঙ্গী নিয়েই কাটিয়ে দেয়। আর মানুষও এই ক্যাটাগরিতে কিনা তা নিয়ে বিজ্ঞানমহলে ডিবেট আছে। কেউ বলে মনোগ্যামাস, কেউ পলিগ্যামাস, কেউ মিডলি পলিগ্যামাস আবার কেউ বলে মানুষ একেবারেই ইউনিক। মতভেদ আছে মনোগ্যামাস, পলিগ্যামাস এর সংজ্ঞা নিয়েও। Pepper Schwartz বলেন, একমাত্র রাজহাঁসই প্রকৃত মনোগ্যামাস কারণ সঙ্গীর মৃত্যুর পরও এরা কারও সাথে মেটিং করে না। সে যাই হোক, মনোগ্যামি, পলিগ্যামি নিয়ে না হয় অন্য কোনদিন আলোচনা হবে। এখন পরকিয়ায় ঢোকা যাক।

ইভোল্যুশনারি পারস্পেকটিভ থেকে একটি বিশেষ এডভান্টেজ বা সুবিধা তৈরি হয় যদি একজন পার্টনার খাদ্যের সন্ধান করলে আরেকজন বাচ্চাদের দেখভাল করে। কিন্তু কোনভাবে এক্সট্রাপেয়া্র মেটিং বা চিটিং বা পরকিয়া মানুষের মধ্যে অনেক কমন হিউম্যান বিহ্যাভিওর। ডোপামিন রিসেপ্টরের জন্য একটি জিন কোডিং নারী-পুরুষের পরকিয়ায় ভূমিকা রাখে। ডোপামিনকে অনেক সময় হ্যাপি হরমোন বলা হয় এবং এটা সুখদায়ক কাজ যেমন শরীরচর্চা, খাদ্যগ্রহণ, অর্গাজম ইত্যাদি ক্ষেত্রে রিলিজড হয়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, এই জিনের লং এলিল যুক্ত মানুষের ৫০ শতাংশই পরকিয়া করে যেখানে শর্ট এলিল থেকে পরকিয়া করে মাত্র ২২ শতাংশ। লং এলিল যুক্ত মানুষের আবার ঝুঁকি গ্রহণ, মাদকাসক্তি, এলকহিলজম এসবের প্রবণতাও বেশি। বোধ হয় ‘a cheater,always a cheater’ ফ্রেজটির সত্যি একটি বাস্তব ভিত্তি আছে।

ভ্যাসোপ্রেসিন হরমোনেরও এক্ষেত্রে ভূমিকা আছে। কাডল হরমোন (আদর হরমোন) নামে পরিচিত অক্সিটোসিনের মতই ভ্যাসোপ্রেসিন বিশ্বাস, সহানুভূতিশীলতা ও সোশ্যাল বন্ডিংকে প্রভাবিত করে। একটি পলিগ্যামাস মাউন্টেইন ভোলের রেওয়ার্ড সেন্টারে ভ্যাসোপ্রেসিন ইনজেক্ট করে দেখা গেছে এতে তাদের মনোগ্যামাস হবার টেনডেন্সি বৃদ্ধি পায়। অটিজমে আক্রান্ত লোকদের ভ্যাসোপ্রেসিন লেভেল কম থাকে। এর ফলে তারা সামাজিক রীতিনীতি সম্পর্কে ধারণা লাভে বাঁধাপ্রাপ্ত হয়। ২০১৪ সালের সাত হাজাররে বেশি ফিনিশ যমজ নিয়ে একটি গবেষণায় দেখা গেছে পরকিয়া করা মহিলাদের জিনে একটি ভেরিয়েন্ট থাকে যা ভ্যাসোপ্রেসিন রিসেপ্টরের জন্য কোড করে। আরও কিছু স্টাডিতেও দেখা যায় লো লেভেল ভ্যাসোপ্রেসিন চিটিং এ ইনফ্লুয়েন্স করে।

অর্থও এক্ষেত্রে একটি ফ্যাক্টর। যেসব ক্ষেত্রে পুরুষেরা তাদের ফিমেল কাউন্টারপার্টের তুলনায় অনেক বেশি অর্থ আয় করে তাদের চিটিং এর প্রবণতা বেশি। কিন্তু স্টে-এট-হোম ড্যাড (বাসায় থাকা বেকার পিতা) দেরও চিটিং এর প্রবণতা বেশি দেখা যায়। তবে দুই পার্টনারেরই একই আর্নিং পটেনশিয়াল থাকলে চিটিং এর প্রবণতা অনেক হ্রাস পেতে দেখা যায়।

অবশ্যই অনেক লাইফ ফ্যাক্টরই পরকিয়ার কারণ হতে পারে যেমন আনরিজল্ভড ইমোশনাল সমস্যা, পূর্বে থাকা রিলেশনশিপ, অধিক মাত্রায় মদ্যপান ইত্যাদি। এক্ষেত্রে সেম সেক্স রিলেশনশিপ নিয়ে খুব একটা স্টাডি করা হয় নি। যাই হোক, আমাদের মনোগ্যামাস পলিগ্যামাস যাই হই না কেন এটা স্পষ্ট যে, চিটিং অনেকের ক্ষেত্রেই পরিষ্কারভাবে বায়োলজি বা জেনেটিক বেজড।

সহায়তা- AsapSCIENCE

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.