ঔদাসীন্যবাদ (Apatheism) ও ব্যবহারিক নাস্তিক্যবাদ (Practical atheism)

ঔদাসীন্যবাদ (Apatheism)

ভূমিকা

ঔদাসীন্যবাদ (Apatheism) মানে হলো ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে বা আস্তিক্যবাদ সম্পর্কে উদাসীন থাকার অবস্থান। এটা ইংরেজি Apatheism শব্দটির পারিভাষিক শব্দ, যা Apathy (উদাসীন) এবং Theism (আস্তিক্যবাদ)  এর মিশ্রণ, যার মানে হলো আস্তিক্যবাদ সম্পর্কে উদাসীন, বা ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে উদাসীন। যাই হোক, ঔদাসীন্যবাদ বলতে আসলে এক বা একাধিক ঈশ্বরের অস্তিত্ব বা অনস্তিত্ব সম্পর্কে উদাসীনতাকেই বোঝায়।

২০০১ সালে মার্সার বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপক রবার্ট ন্যাশ এই ধারণাটির প্রবর্তন করেন, যা নিদৃষ্ট কোন বিশ্বাস-ব্যবস্থা বা অবিশ্বাস-ব্যবস্থার চেয়ে একটি মনোভাবকেই বেশি নির্দেশ করে। একজন ঔদাসীন্যবাদী নিরপেক্ষ থাকেন, তিনি ঈশ্বর বা দেব-দেবীদের অস্তিত্ব স্বীকার বা অস্বীকার করতে আগ্রহী নন, আর এই জাতীয় প্রশ্নগুলিকে অপ্রাসঙ্গিক বলে মনে করেন। ঐতিহাসিকভাবে, ডেনিস দিদেরোকে (১৭১৩-১৭৮৪) প্রারম্ভিক ঔদাসীন্যবাদী বলে মনে করা হয়, যিনি বলেছিলেন, “হেমলককে পার্সলে ভেবে ভুল না করাটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু ঈশ্বরে বিশ্বাস বা অবিশ্বাস করাটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়।”

দার্শনিক ট্রেভর হেডবার্গ (Trevor Hedberg) ঔদাসীন্যবাদকে ধর্মদর্শনের মধ্যকার আনচার্টেড টেরিটরি বা অজানা অধ্যায় বলে উল্লেখ করেছেন। রাজনৈতিক তাত্ত্বিক এবং সাংবিধানিক আইন পণ্ডিত অ্যাডাম স্কট কুঞ্জ (Adam Scott Kunz) ঔদাসীন্যবাদকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন – “এটি হচ্ছে (১) কোন ঈশ্বরের অস্তিত্ব, (২) কোন ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্যের অধিবিদ্যাগত ও বাস্তব মূল্য, এবং/অথবা (৩) প্রাকৃতিক জগতের সাথে সেই ঈশ্বরের মধ্যকার মিথস্ক্রিয়া সম্পর্কে ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবন উভয় ক্ষেত্রেই উদাসীনতার দার্শনিক প্রবণতা দেখানো।”

অনেকে মনে করেন সাংবাদিক জোনাথন রুচি ২০০৩ সালে তার রচনা “Let It Be”-তে Apatheism শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু সত্যিকার অর্থে ক্যানাডিয়ান সমাজতাত্ত্বিক স্টুয়ার্ট জনসনই Apatheism শব্দটির প্রথম ব্যবহার করেন, যিনি ধর্মনিরপেক্ষকরণ এব্ব্বং বর্ধিষ্ণু ধর্মীয় ঔদাসীন্যের মধ্যে এই ঔদাসীন্যবাদের উপস্থিতিকে চিহ্নিত করেছিলেন।

মানসিকতা

ঔদাসীন্যবাদ অনন্যভাবে মনে করে যে দেবতাদের অস্তিত্ব বা অনস্তিত্ব নিয়ে বিতর্ক জীবনের যেকোন কিছুর ক্ষেত্রেই মৌলিকভাবে অপ্রাসঙ্গিক। এই অবস্থানটি নাস্তিক্যবাদ বা অজ্ঞেয়বাদের মধ্যে থাকা সংশয়বাদ থেকে পৃথক, যেখানে ঈশ্বরের অস্তিত্ব আদৌ আছে কিনা তা নিয়ে সক্রিয়ভাবে প্রশ্ন তোলা হয়। ঔদাসীন্যবাদ কেবল এই জাতীয় বিতর্ককে পেরিফেরিয়াল হিসাবে উপেক্ষা করে, আধ্যাত্মিক অনুমানের চেয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা এবং ব্যবহারিকতার দিকে সামাজিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।

সমাজের অগ্রগতির সাথে সাথে ঔদাসীন্যবাদ ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ জানায়, এটি এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার করে যা আধ্যাত্মিক অনুসন্ধানের চেয়ে বাস্তবতাকে অগ্রাধিকার দেয়। এটি সমসাময়িক সংস্কৃতির মধ্যে ধর্মতাত্ত্বিক আলোচনায় জড়িত হওয়ার পরিবর্তে তাত্ক্ষণিক, ব্যবহারিক উদ্বেগগুলিতে মনোনিবেশ করার প্রবণতা দেখায়। এই পরিবর্তনটি ব্যক্তিগত পরিচয়, সামাজিক মূল্যবোধ এবং ক্রমবর্ধমান ধর্মনিরপেক্ষ বিশ্বে আধ্যাত্মিকতা এবং নৈতিকতা সম্পর্কিত সম্মিলিত বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে।

অ্যাডাম স্কট কুঞ্জ যুক্তি দিয়েছেন যে, নাস্তিকতার বিপরীত যেমন আস্তিক্যবাদ, ঔদাসীন্যবাদের বিপরীত হচ্ছে উৎসাহবাদ। ঔদাসীন্যবাদকে বিশ্বাসের একটি ভিন্ন রূপ হিসাবে দেখার পরিবর্তে, কুঞ্জ একে ঔদাসীন্য থেকে উৎসাহ বা উদ্যোগ অক্ষ এবং অতিক্যবাদ থেকে নাস্তিক্যবাদ অক্ষ নিয়ে একটি দ্বিমাত্রিক লেখচিত্র বা বর্ণালীর ধারণা দান করেন। এক্ষেত্রে তিনি বলেন, একজন ব্যক্তি ঔদাসীন্যবাদী হয়েও আস্তিক থেকে নাস্তিকের মধ্যে যেকোন কিছু হতে পারেন, কেবল তার এই অবস্থানকে তিনি অপ্রাসঙ্গিক ভাববেন বা তা নিয়ে উদাসীন থাকবেন। এক্ষেত্রে ব্যক্তির উদাসীন বা উৎসাহী হবার সাথে তার আস্তিক বা নাস্তিক হবার কোন সম্পর্ক নেই। ব্যক্তি স্বাধীনভাবে দুই অক্ষ থেকেই যে কোন নিজস্ব অবস্থান গ্রহণ করতে পারেন।

দেখা যায়, আস্তিক্যবাদীদের মধ্যে যারা ডেইস্ট বা শ্বরবাদী হন (ডেইজম বা শ্বরবাদ দ্বারা ঈশ্বরে বিশ্বাস কিন্তু কোন প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মে অবিশ্বাস নির্দেশ করে) তাদের মধ্যেই ঔদাসীন্যবাদ বেশি যেহেতু প্রাতষ্ঠানিক ধর্ম থেকেই ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্য, ভক্তি, প্রার্থনা, আচার-অনুষ্ঠান ও ঈশ্বর বা দেবদেবীর সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে জড়িত হবার ব্যাপারগুলো থাকে। ডেইস্টরা প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মকে অস্বীকার করেন বলে তারা এসব ব্যাপারেও উদাসীন হন। আবার নাস্তিক্যবাদীদের মধ্যে যারা কমিউনিস্ট বা সাম্যবাদী হন তাদের মধ্যেও ঔদাসীন্যবাদ সাধারণ থাকে, কেননা তারা ঈশ্বরে অবিশ্বাসের চেয়ে সমাজ পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত উৎপাদন ব্যবস্থা বা অর্থনীতির দিকে বেশি জোর দেন বলে ঈশ্বরের অস্তিত্ব-অনস্তিত্বের ব্যাপার তাদের কাছে গৌণ হয়ে যায়, এবং তারা সেক্ষেত্রে ঔদাসীন্য দেখান। অপরপক্ষে, আস্তিক্যবাদীদের মধ্যে যারা কোন ধর্মাবলম্বী তাদের মধ্যে ঔদাসীন্যবাদ কম ও উৎসাহ বেশি দেখা যায়, কেননা তারা পরকালের সুখ-দুঃখ, আনুগত্য, প্রার্থনা, আচার ইত্যাদির সাথে সম্পর্কিত থাকে, অন্যদিকে নাস্তিক্যবাদীদের মধ্যে যারা নব্য-নাস্তিক্যবাদী বা নিওএথিস্ট তাদের মধ্যেও উৎসাহ বেশি থাকে, কেননা তারা ধর্মকেই সমাজের অন্যতম প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং সমাজের সকল ক্ষেত্রেই ধর্ম, অযৌক্তিকতা, কুসংস্কারকে নির্মূল করতে চান।

যুক্তি

নিম্নে ঔদাসীন্যবাদের সাথে সম্পর্কিত কিছু যুক্তি তুলে ধরা হলো :

  • অপ্রাসঙ্গিকতা: যদি ঈশ্বরের অস্তিত্ব থেকে থাকে এবং তার অস্তিত্ব প্রমাণিতও হয়, এটা কোন কিছুই পরিবর্তিত করবে না, এতে কিছুই আসে যাবেনা। আর তাই ঈশ্বর বা কোন ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে কি নেই তার আলোচনাতেও কিছু আসে যায়না, এসম্পর্কিত যেকোন আলোচনাই অর্থহীন। এই যুক্তিটি ব্যবহারিক নাস্তিক্যবাদ বা Practical Atheism এর যুক্তির মতোই।
  • আগ্রহের অভাব : ঈশ্বরের অস্তিত্ব-অনস্তিত্ব টপিকে কোন আগ্রহ নেই, আর তাই ঈশ্বরের অস্তিত্ব-অনস্তিত্বের ব্যাপারে অবস্থান ঔদাসীন্যবাদী। (এক্ষেত্রে ঔদাসীন্যবাদী অবস্থান নেয়ার জন্য কোন এক্সটার্নাল ভ্যালিডেশনের মুখাপেক্ষী হওয়া হচ্ছেনা, ইনার ভ্যালিডেশন থেকেই অবস্থান নেয়া হচ্ছে, যেটা হচ্ছে নিজের আগ্রহের অভাব। এই অবস্থানটা অস্তিত্ববাদী।)
  • নৈতিকতা : নৈতিকতার উৎস ঈশ্বর নন বা কোন কিছুর নৈতিকতা-অনৈতিকতা ঈশ্বরের উপর নির্ভর করেন। আর তাই ঈশ্বরের অস্তিত্ব থাকুক বা না থাকুক এতে নৈতিক সিদ্ধান্তে কোন পরিবর্তন আসবে না. আর তাই ঈশ্বরের অস্তিত্ব ও অনস্তিত্বের বিষয় অপ্রাসঙ্গিক।

সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গিসমূহ

নিচে ঈশ্বরের অস্তিত্ব-অনস্তিত্ব বিষয়ে ঔদাসীন্যবাদের সাথে মিল আছে এরকম দুটো অবস্থানের উল্লেখ করা হচ্ছে, কিন্তু এদের সাথে ঔদাসীন্যবাদকে গুলিয়ে ফেলা যাবেনা –

ঔদাসীন্যবাদী অজ্ঞেয়বাদ (Apathetic agnosticism) বা ব্যবহারিক অজ্ঞেয়বাদ (Pragmatic Agnosticism) : এই অবস্থান অনুসারে, ঈশ্বর বা দেবদেবীর অস্তিত্ব বা অনস্তিত্বকে কখনও প্রতিষ্ঠা করা যাবেনা, এদের অস্তিত্ব আছে কি নেই তা কখনও জানা যাবে না, বিতর্ক করে এই বিষয়ে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে না। অন্যদিকে যদি ঈশ্বরের অস্তিত্ব থেকেও থাকে তবুও মানুষের সাথে কী হবে না হবে, মানুষের পরিণতি, পরিস্থিতি কী বা কী হবে তা নিয়ে এই ঈশ্বর বা দেবদেবীরা চিন্তিত বলে মনেও হয়না। কাজেই মানুষের জীবনে ঈশ্বরের তেমন কোন প্রভাব নেই।

দ্বিতীয়টি হচ্ছে ব্যবহারিক নাস্তিক্যবাদ (Practical atheism) যা নিয়ে আলাদাভাবে লেখা হচ্ছে।

ব্যবহারিক নাস্তিক্যবাদ (Practical atheism)

ব্যবহারিক নাস্তিক্যবাদ বা Practical atheism অনুসারে কোন মানুষকে ঈশ্বর বা দেবদেবীর বিষয়ে মাথা না ঘামিয়েই বা কোন রকম বিবেচনা না করেই জীবন যাপন করা উচিৎ। এখানে ঔদাসীন্যবাদের মতো ঈশ্বর সম্পর্কিত প্রশ্নগুলোকে অপ্রাসঙ্গিক বলে মনে করা হয়না। তবে প্রশ্নগুলোর উত্তরকে অপ্রাসঙ্গিক বলে মনে করা হয়। মানে ঈশ্বরের অস্তিত্ব ও অনস্তিত্ব নিয়ে আলোচনার দরকার আছে, কিন্তু উত্তর যাই হোক না কেন, অর্থাৎ ঈশ্বর থাকুক বা না থাকুক, জীবন-যাপনে এর কোন প্রভাব থাকা উচিৎ নয়। একজন ব্যক্তি ঈশ্বরে বিশ্বাস করে আস্তিক্যবাদী হতে পারেন, কিন্তু জীবন-যাপনের ক্ষেত্রে তার এই বিশ্বাসের কোন প্রভাব নেই বলে মনে করে তিনি ব্যবহারিক নাস্তিক্যবাদী হতে পারেন।

দার্শনিক  জাফিয়া জীবিকা (Zofia Zdybicka) চার রকম ব্যবহারিক নাস্তিক্যবাদের তালিকা করেছেন, যেখানে –

  • (১) ব্যক্তি ধর্মীয় নীতি দ্বারা চালিত হননা,
  • (২) ঈশ্বর বা দেবদেবীর ক্ষেত্রে ব্যক্তির আগ্রহ নেই,
  • (৩) ঈশ্বরের ধারণা সম্পর্কে ব্যক্তি অবগত নন,
  • (৪) ব্যক্তিগত বা সামাজিক স্টোরে বৌদ্ধিক উদ্দেশ্য বা ব্যবহারিক কাজে ঈশ্বর বা দেবদেবীর ধারণাকে ব্যক্তি বিবেচনায় আনেন না।

ঐতিহাসিকভাবে, ব্যবহারিক নাস্তিক্যবাদকে বরাবরই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হয়েছে। মনে করা হয়েছে এই লোকগুলো নৌতিকভাবে ব্যর্থ, ইচ্ছাকৃতভাবে অজ্ঞ ও ভক্তি-শ্রদ্ধাহীন। যাদেরকে ব্যবহারিক নাস্তিক্যবাদী বলে মনে করা হতো, তাদের মধ্যে কোনো রকম নৈতিকতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা নেই বলে মনে করা হতো। ফরাসি ক্যাথলিক দার্শনিক Étienne Borne বলেন, “ব্যবহারিক নাস্তিক্যবাদ মানে ঈশ্বরের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা নয়, বরং কার্যক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে ঈশ্বরহীনতা; এটি নৈতিকভাবে মন্দ, এর দ্বারা নৈতিক আইনগুলোর নিরঙ্কুশ বৈধতা অস্বীকার করা হয়না, বরং কেবল সেই আইনগুলোর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা বোঝায়।”

তথ্যসূত্র

  • Sean Phillips (November 7, 2013). “Apatheism: Should we care whether God exists?”. nooga.com. Archived from the original on August 5, 2017. Retrieved September 30, 2018.
  • Austin Cline (July 16, 2017). “What Is an Apatheist?”. ThoughtCo. Retrieved October 14, 2018.
  • Kunz, Adam Scott (2021-05-08). “Apatheism: A Primer”. Medium. Retrieved 2021-05-10.
  • Robert J. Nash, Religious Pluralism in the Academy: Opening the Dialogue (2001)
  • Jonathan Rauch (May 2003). “Let it Be”. The Atlantic. Retrieved September 30, 2018.
  • John Tyrrell (1996). “Commentary on the Articles of Faith”. Archived from the original on 2007-08-07. To believe in the existence of a god is an act of faith. To believe in the nonexistence of a god is likewise an act of faith. There is no verifiable evidence that there is a Supreme Being nor is there verifiable evidence there is not a Supreme Being. Faith is not knowledge. We can only state with assurance that we do not know.
  • Austin Cline (March 8, 2017). “Agnosticism for Beginners – Basic Facts About Agnosticism and Agnostics”. ThoughtCo. Retrieved October 14, 2018.
  • Zdybicka, Zofia J. (2005). “Atheism” (PDF). In Maryniarczyk, Andrzej (ed.). Universal Encyclopedia of Philosophy. Vol. 1. Polish Thomas Aquinas Association. Retrieved 2010-05-04.
  • Austin Cline (July 2, 2017). “Definition of Practical Atheist”. ThoughtCo. Retrieved October 14, 2018.
  • Zdybicka, Zofia J. (2005), “Atheism” (PDF), in Maryniarczyk, Andrzej (ed.), Universal Encyclopedia of Philosophy, vol. 1, Polish Thomas Aquinas Association, retrieved 2010-05-04
  • Borne, Étienne (1961). Atheism. New York: Hawthorn Books. ISBN 0-415-04727-7.
  • Herrick, Jim (1985). Against the Faith. London: Glover & Blair. p. 75. ISBN 0-906681-09-X.

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.