হিন্দু আইন অনুসারে হিন্দু বিবাহ

হিন্দু বিয়ের প্রকৃতি ও উদ্দেশ্য

বিয়ে হচ্ছে নারী-পুরুষের স্বীকৃত মিলন। বৈদিক মতে বিয়েকে বলা হয় অস্থির সাথে অস্থি, মজ্জার সাথে মজ্জার মিলন। নর এবং নারী প্রত্যেকেই বিয়ের আগে অসম্পূর্ণ বলে মনে করা হয়, বিয়ের পর ধরা হয় সম্পূর্ণ বলে। হিন্দু বিয়ে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান। ধর্মীয় বিধানের এটি অঙ্গীভূত বিষয়। হিন্দু ধর্মমতে অবশ্যকরণীয় দশটি সংস্কার হচ্ছে- (১) গর্ভাধান; (২) পুংসবন; (৩) সীমন্তোন্নয়ন; (৪) জাতকর্ম; (৫) নামকরণ; (৬) অন্নপ্রাশন; (৭) চূড়াকরণ; (৮) উপনয়ন; (৯) সমাবর্তন; এবং (১০) বিয়ে।

শাস্ত্র অনুযায়ী বিয়ে একটি পবিত্র আচার। মনে করা হয় জন্মসূত্রে পুরুষের দেহে যে কালিমা সঞ্চালিত হয় বিয়ের মাধ্যমে তা বিদূরিত হয়। নারীর আত্মশুদ্ধিও এটি একমাত্র উপায়। হিন্দু আইনে বিয়ে হচ্ছে ধর্মীয় বিধানের একটা দিক। এজন্য হিন্দু বিয়ে বিচ্ছেদযোগ্য নয়। দেবতাকে সাক্ষী রেখে কন্যা সম্প্রদান এবং গ্রহণ ক্রিয়া সম্পন্ন হয়। তাই, এটিকে চুক্তি হিসেবে গণ্য করা যায় না। স্বামী যতদিন জীবিত থাকবেন স্ত্রীর কাছে ততদিন তিনি দেবতা হিসেবে বিবেচিত। অপরদিকে স্ত্রীকেও স্বামীর দেহের অর্ধেক (অর্ধাঙ্গিনী) হিসেবে বিবেচনা করা হয়। স্বামীর সু এবং কু সকল কর্মের এবং কর্মফলের তিনি ভাগীদার।

হিন্দু বিয়ের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সন্তান উৎপাদন এবং ধর্মীয় আচার সম্পাদন। বংশ রক্ষার প্রয়োজনে এবং পুত্রের জন্য জন্ম দ্বারা পিণ্ডদান ক্রিয়া এবং শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পুন্নাম অর্থাৎ পুৎ নামক নরক থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য বিয়ে অপরিহার্য।

হিন্দু আইনে বিবাহকে একটি Sacrament বা ধর্মীয় সংস্কার হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। হিন্দু আইনে যে কয়টি পবিত্র করণীয় ধর্মীয় সংস্কার রয়েছে, বিবাহ সেগুলোর মধ্যে একটি। শাস্ত্র মতে, “It is more a religious than a secular institution.” তাই মুসলিম আইনের মত, এটাকে দেওয়ানী চুক্তি না বলে ধর্মীয় সংস্কার হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। হিন্দু বৈবাহিক মিলন অবিচ্ছেদ্য বলে গণ্য হয়। তাই চরিত্রের দিক হতে ধর্মনিরপেক্ষতার চাইতে ধর্মীয় বৈশিষ্ট্যের গুণেই বিবাহ সমধিক পরিচিত।

সর্বোপরি স্বামী-স্ত্রীরূপে পবিত্র জীবন যাপন করে ধর্মাচারণ তথা পিণ্ডদানই বিবাহের উদ্দেশ্য। তাই প্রখ্যাতি আইনবিদ Gour-এর ভাষায় আমরা বলতে পারি যে, “Hindu marriage is not a contract but an religious sacrament of purifying ceremony.”

হিন্দু বিবাহ এক হৃদয়ের সাথে অন্য হৃদয়ের স্পর্শ স্থাপন মাত্র। বিবাহের পর বর ও কনের দুটি হৃদয় এক হয়ে যায়। তখন তাদের মাঝে আর পৃথক কোনো সত্তা থাকে না। বিবাহের ফলে স্বামী-স্ত্রীর পাপ-পুণ্য ধর্ম-কর্ম, জীবন-মৃত্যু একাকার হয়ে যায়। আর এ কারণেই স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীকে একই চিতাতে জ্বলতে হতো। হিন্দু আইনের বিধানমতে, বিবাহ একটি পবিত্র ধর্মভিত্তিক অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নর-নারীর মাঝে আত্মার সাথে আত্মার মিলন ঘটে। এটা ইহলোক ও পরলোক পর্যন্ত বিস্তৃত। জীবন নির্বাহ প্রণালির সাথে সংশ্লিষ্ট বলে হিন্দুশাস্ত্রের মতে বিবাহ অবিচ্ছেদ্য।

সংস্কৃতিতে হিন্দু বিবাহের মন্ত্র হলো- “হৃদয়ন্ত হৃদয়ং তব হৃদয়ং মম।” অর্থাৎ তোমার হৃদয় ও আমার হৃদয় এক হোক- এহেন পবিত্র মন্ত্র দ্বারা স্বামী-স্ত্রীর দেহ এবং রক্ত-মাংস এবং পরস্পরের অস্থিসমূহ এক বলে গণ্য করা হয়। হিন্দু পণ্ডিতদের মতে, “বিবাহ বন্ধনই হলো নর-নারীর একমাত্র আত্মশুদ্ধির উপায়।” বিবাহবন্ধনের মাধ্যমে একজন তার উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সকল প্রকার কালিমাকে মুছে ফেলে দেহ ও মনকে পবিত্র ও সতেজ করে তুলতে সহায়তা করে। হিন্দু আইন মতে, বিবাহ অনুষ্ঠানের জন্য নিম্নলিখিত কাজ সম্পাদন করতে হয়”-

  • ক. দ্বিবিধ ক্রিয়া অনুষ্ঠান সুসম্পন্নকরণ;
  • খ. যজ্ঞানুষ্ঠান এবং পরম ব্রহ্মার নিকট কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা;
  • গ. সপ্তপদী গমন;
  • ঘ. কন্যা সম্প্রদান ও তা গ্রহণ;
  • ৫. যজ্ঞ বেদীতে হোমার্ঘ দান।

বৈধ বিবাহের অপরিহার্য উপাদান

হিন্দু আইনের বিধান মোতাবেক একটি বৈধ বিবাহের নিম্নলিখিত উপাদানগুলো থাকা অপরিহার্য:

  • (১) বয়স: পক্ষদ্বয়ের বয়স অর্থাৎ বর এবং কনেকে অবশ্যই বিবাহযোগ্য বয়সের অধিকারী হতে হবে। অর্থাৎ উভয়কে সাবালক ও সাবালিকা হতে হবে। ১৯৩৮ সালের সংশোধিত শিশু বিবাহ নিরোধ আইন দ্বারা বিবাহের জন্য কনের বয়স কমপক্ষে ষোল এবং বরের বয়স কমপক্ষে আঠার বৎসর ধার্য করা হয়েছে।
  • (২) সংশ্লিষ্ট পক্ষগণের সম্মতি: একট বৈধ বিবাহ সম্পন্ন হতে গেলে বর এবং কনের অবশ্যই সংশ্লিষ্ট বিবাহে সম্মতি থাকতে হবে।
  • (৩) বিধিসঙ্গত পদ্ধতি: হিন্দু বিবাহ অবশ্যই হিন্দু আইনে অনুমোদিত যে চারটি পদ্ধতি আছে, উহাদের মধ্যে যেকোন একটি পদ্ধতিতে সম্পন্ন হবে।
  • (৪) স্বামী-স্ত্রীর বর্ণ: বিবাহে বর এবং কনেকে একই বর্ণের হতে হয়। তবে বর্ণ এক এবং উপসম্প্রদায় ভিন্ন হলে বিবাহ অবৈধ বলে গণ্য হবে না।
  • (৫) নিষিদ্ধ সম্পর্ক বহির্ভূত: বিবাহের পক্ষগণকে অবশ্যই নিষিদ্ধ সম্পর্ক বহির্ভুত হতে হবে। অর্থাৎ, বর এবং কনের মধ্যে হিন্দু আইনে উল্লিখিত নিষিদ্ধ সম্পর্ক বজার থাকলে উক্ত বিবাহ বন্ধন বৈধ বলে গণ্য হবে না। যেমন- কোন পুরুষ তার একই পূর্বপুরুষান্তর্গত কোন মেয়েকে বিয়ে করতে পারে না।
  • (৬) একাধিক স্বামী: স্বামী জীবিত থাকাকালীন অবস্থায় অর্থাৎ এক বিবাহ বলবৎ থাকাকালে কোন স্ত্রী অন্য কারও সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে না। তাই এর অন্যথা ঘটলে উক্ত বিবাহ বৈধ হবে না।
  • (৭) শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতা: বৈধ বিবাহের ক্ষেত্রে বর এবং কনেকে অবশ্যই শারীরিক ও মানসিক সুস্থ হতে হবে।
  • (৮) অভিভাবকের সম্মতি: বৈধ বিবাহে অভিভাবকের সম্মতি প্রয়োজন। মেয়ের বিবাহে পিতার সম্মতি দরকার। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে মেয়ের মা সম্মতি দিতে পারবে।
  • (৯) আনুষ্ঠানিকতা: বৈধ বিবাহের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত আনুষ্ঠানিকতা পালন করা অপরিহার্য:
    • (ক) দ্বিবিধ ক্রিয়ানুষ্ঠান: বৈধ বিবাহ সুসম্পন্ন করতে হলে দ্বিবিধ ক্রিয়ানুষ্ঠান অবশ্য করণীয়।
    • (খ) আকুল প্রার্থনা: যজ্ঞানুষ্ঠান এবং পরমব্রহ্মের নিকট আকুল প্রার্থনা করতে হয়।
    • (গ) যজ্ঞ অথবা কুশান্ডিকা: এটিও বৈধ বিবাহের প্রয়োজনীয় অনুষ্ঠান হিসেবে গৃহীত হয়েছে। এর অর্থ পবিত্র যজ্ঞাগ্নির সম্মুখে শাস্ত্র নির্দেশমত দেবমন্ত্র গঠন।
    • (ঘ) সপ্তপদীগমন: এর অর্থ বর ও কনের যজ্ঞাগ্নির চতুর্দিকে যুক্তভাবে সাত কদম হাঁটা। এই অনুষ্ঠানের সময় বর এবং কনেকে কতিপয় বেদমন্ত্র পাঠ করতে হয়। এই বেদমন্ত্র পাঠের মাধ্যমে উভয়কে পারস্পরিক দায়িত্ব ও কর্তব্যের বন্ধনে অঙ্গীকারভুক্ত করা। সপ্তপদী সম্পন্ন হওয়া মাত্রই বিবাহ আইনত সম্পন্ন হয়ে যায়। তাই (Emperor Vs. Munchi Ram (1936) 58A11702) পাতায় যথার্থই বলা হয়েছে যে, “The marriage is complete when the seventh step is taken, till then it is imperfect and revocable.”
    • (ঙ) কন্যা সম্প্রদান ও তা গ্রহণ।

হিন্দু বিবাহের প্রকারভেদ

মনুর মতানুযায়ী হিন্দু বিয়ে আট ধরণের। যথা: (ক) ব্রহ্ম; (খ) দৈব; (গ) আর্য; (ঘ) প্রাজাপত্য, (ঙ) আসুর; (চ) গান্ধব; (ছ) রাক্ষস; (জ) পৈশাচ। এগুলোর মধ্যে অনুমোদিত বিবাহসমূহ:

  • (ক) ব্রহ্ম বিয়ে: ব্রহ্ম বিয়ের মূল কথা হচ্ছে কোন কিছুর বিনিময় ছাড়া বরের হাতে কন্যা সম্প্রদান। ব্রহ্ম বিয়ের নিয়ামানুযায়ী কোন বেদজ্ঞ ও সচ্চরিত্র ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ করে এনে কন্যা সম্প্রদান করা হয়। এ ধরণের বিয়েতে ধর্মীয় অনুষ্ঠান অপরিহার্য। আগে শুধু ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের মধ্যেই ব্রহ্ম বিয়ে সীমাবদ্ধ ছিল। বাংলাদেশের প্রায় সকল হিন্দু পরিবারেই এ ধরণের বিয়ের প্রচলন রয়েছে।
  • (খ) দৈব বিবাহ: এরূপ বিবাহে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে নিয়োজিত কোন পুরোহিতকে দক্ষিণা দানের পরিবর্তে কন্যাদান করা হত। হিন্দু আইনে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে নিযুক্ত পুরোহিতকে গুরুদক্ষিণা প্রদান করা হত। কিন্তু এরূপ বিবাহের ক্ষেত্রে কন্যার পিতা পুরোহিতকে উক্ত গুরু-দক্ষিণা প্রদানের পরিবর্তে নিজ কন্যাকে পুরোহিতের হাতে সম্পাদন করত। এটাই দৈব বিবাহ। এ ধরণের বিয়ে ব্রহ্ম বিয়ের চেয়ে নিকৃষ্টতর বলে বিবেচিত। কিন্তু এতে কনের বাবার কিছু পুণ্য অর্জিত হয় বলে বিশ্বাস করা হতো।
  • (গ) আর্য বিয়ে: এ বিয়েতে কনের বাবা বরের কাছ থেকে উপঢৌকন গ্রহণ করেন। কোন ধর্মীয় কাজে ব্যবহৃত হওয়ার জন্য বর কনের বাবাকে এক বা দু’জোড়া গো-মহিষ প্রদান করেন, বিনিময়ে বাবা রীতি অনুযায়ী তার মেয়েকে দান করেন এবং বর তাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন। বর কর্তৃক উপঢৌকন ধর্মীয় কাজে ব্যবহার না করা হলে এ বিয়ে আসুর বিয়ে বিবেচিত হয়।
  • (ঘ) প্রাজাপত্য বিয়ে: এ ধরণের বিয়েতে কোন অবিবাহিত পুরুষ নিজে কনের বাবার কাছে প্রার্থনা করে কনের পাণি গ্রহণ করেন। বর কনের বাবার কাছে তার মেয়েকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করার অঙ্গিকার করেন এবং কনের বাবা তার মেয়েকে বরের হাতে সোপর্দ করেন এবং বলেন “আজ থেকে তোমরা দু’জন জাগতিক এবং ধর্মীয় কাজের অংশীদার হলে।”

উপরোক্ত চার ধরণের বিয়ে ছাড়াও আরো চার ধরণের বিয়ে প্রচলিত ছিল। কিন্তু এগুলো সমাজে অনুমোদিত ছিল না। অননুমোদিত বিবাহসমূহ হলো –

  • (ক) গান্ধর্ব বিয়ে: গান্ধর্ব বিয়ে হচ্ছে নর-নারী নিজের স্বাধীন ইচ্ছাক্রমে পরস্পর পরস্পরকে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করা। এ ধরণের বিয়ে অমনোনীত না হলেও হিন্দু সমাজে একে নিন্দাই মনে করা হতো। প্রকৃতপক্ষে এ রকম বিয়েকে উপপত্নী রাখার শামিল বলে ধরে নেয়া হতো। সামাজিক স্বীকৃতি না থাকলেও বর-কনের পছন্দের উপর নির্ভরশীল থাকায় এ ধরণের বিয়ে একেবারে বিলুপ্ত হয়নি।
  • (খ) আসুর বিয়ে: অনেকটা বিক্রয়ের মত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কন্যাদান করে যে বিয়ে হয় তাকে বলা হয় আসুর বা আসুরিক বিয়ে। কনেকে পতিগৃহে যেতে রত করানোর জন্যে কনেকে কিছু দিতে হতো। কনের বাবা কনের যে মূল্য নির্ধারণ করেন, বর সে মূল্যের বিনিময়ে কনেকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন। কনের মুল্য বাবদ অর্থ পাওয়া যায় তাকে বলা হয় শুল্ক। শুল্কের মালিকানা স্বত্ব অবশ্যই কনেরই থাকে। এ বিয়ের আচার-রীতি ব্রহ্ম বিয়ের মতই। পার্থক্য শুধু শুল্ক দেয়া-নেয়া।
  • (গ) রাক্ষস বিয়ে: রাক্ষস বিয়ে হচ্ছে জোর করে কোন কনেকে হরণ করে নিয়ে বিয়ে করা। ক্ষত্রিয় এবং সামরিক শ্রেণির লোকেরা এভাবে বিয়ে করতো। কনের আত্মীয়-স্বজনকে যুদ্ধে আহত, নিহত বা পরাজিত করে এরা কনেকে ছিনিয়ে নিয়ে বিয়ে করতো। এ বিয়ে সমাজে মনোনীত ছিল না। মাদ্রাজ হাইকোর্ট এ ধরণের বিয়েকে আগাগোড়া বাতিল বলে মত প্রকাশ করেছেন। [(১৮৯১) ১৫ মাদ্রাজ ৩১৬]
  • (ঘ) পৈশাচ বিয়ে: বলাৎকার করে বা ঘুমন্ত অবস্থায় সতীত্ব হরণ করে বা মাদকদ্রব্য সেবনে চৈতন্য লুপ্ত করে বা অজ্ঞান অবস্থায় যে বিবাহ অনুষ্ঠিত হতো উহাকে পৈশাচ বিবাহ বলা হয়। এরূপ বিবাহ অত্যন্ত নিন্দনীয় বলে গণ্য হতো।

উপরোক্ত বিবাহ ছাড়া স্বয়ংবরা বিবাহ প্রথা প্রাচীন ভারতে প্রচলিত ছিল। এই রীতি অনুযায়ী বালিকার পিতা দ্বিগ্বিদেশীয় রাজকুমারগণ কনের পিতৃগৃহে অবস্থান করে তথায় কনেকে স্বয়ং পতি নির্বাচনের সুযোগদান করা হত। এই প্রথা প্রাচীন ভারতের পরাক্রান্ত রাজন্যবর্গের মধ্যে প্রচলিত ছিল এবং ক্ষেত্রবিশেষে বিফল মনোরথ হলে স্বয়ম্বরদের মধ্যে প্রায় যুদ্ধবিগ্রহ দাঙ্গা-হাঙ্গামা হত।

হিন্দু আইনে বিয়ের নিষিদ্ধ স্তরগুলো

হিন্দু দায়ভাগ মতবাদ অনুযায়ী বাংলাদেশে সপিণ্ডজনিত কারণে অর্থাৎ সপিণ্ড কোন নারীকে কোন পুরুষ বিবাহ করতে পারে না। নিম্নে বিবাহের ক্ষেত্রে প্রচলিত নিষিদ্ধ পর্যায়ের নিয়মগুলি বর্ণনা করা হল:

  • ১. সপ্তম পুরুষানুবর্তী কোন বালিকাকে বিবাহ নিষেধ: কোন পুরুষ তদীয় পিতৃকূলের সপ্তম পুরুষানুবর্তী কোন বালিকাকে বিবাহ করতে পারে না।
  • ২. মাতৃকুলের পঞ্চম পুরুষানুবর্তী কোন বালিকাকে বিবাহ নিষেধ: কোন পুরুষ তদীয় মাতৃকুলের পঞ্চম পুরুষানুবর্তী অথবা মাতৃকুলের চতুর্থ পূর্ববর্তী কোন বালিকাকে বিবাহ করতে পারে না।
  • ৩. পিতৃকূলের কারো সাথে আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া নিষেধ: একইভাবে কোন পুরুষ তদীয় পিতৃকুলের সপ্তম পুরুষের মধ্য হতে ত্রিবিধ বন্ধু অথবা পিতৃকুলের পূর্ববর্তী কারো সাথে আত্মীয়তাবন্ধনে আবদ্ধ থাকা বালিকাকে বিবাহ করতে পারে না।
  • ৪. কোন পুরুষ তদীয় মাতৃকুলের চতুর্থ পূর্বপুরুষের কারো সাথে আত্মীয়তা করতে পারবে না: কোন পুরুষ তদীয় মাতৃকুলের পঞ্চম পুরুষনাবর্তী হতে মাতৃকুলের ত্রিবিধবদ্ধ এবং তদীয় চতুর্থ পূর্বপুরুষের কারো সহিত আত্মীয়তা বন্ধনে আবদ্ধ কোন বালিকাকে বিবাহ করতে পারে না।

এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, হিন্দু আইনের দায়ভাগ মতানুযায়ী বিবাহ ক্ষেত্রে একই পূর্বপুরুষ হতে সম্ভূত বংশধরের মধ্যে পুরুষ সম্পর্কে বিবেচিত হয়। অর্থাৎ এই বিধানমতে বিবাহ ক্ষেত্রে একই পূর্বপুরুষ হতে সম্ভূত বংশধরের মধ্যে পুরুষ সম্পর্কে বিবেচিত হয়। তবে, রাঘবেন্দ্র বনাম জয়ারামের মোকদ্দমায় বলা হয়েছে যে, বরপক্ষ স্ত্রীর ভগিনীর কন্যাকে বা বোনঝিকে বিবাহে কোন অন্তরায় নেই। পরবর্তীকালে সময়ের ব্যবধানে জ্ঞাতির মধ্যে নিষিদ্ধ বিবাহের ক্ষেত্রে অনেক শিথিলতা এসেছে এবং যদিও তা Factum valet নীতি কথার মাধ্যমে অচল ও অপব্যবহারপযোগীতা হতে অব্যাহতি লাভ করতে পারেনি।

মিতক্ষরা মতবাদ অনুযায়ী, একজন হিন্দু পুরুষ কোন মহিলার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে না, যদি-

  • ১. তারা উভয়ে তাদের পিতৃকুলের সপ্তম পুরুষের মধ্যে সপিণ্ডজনিত কারণে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে থাকে; অথবা;
  • ২. একইভাবে যদি উভয়ের মধ্যে কোন পক্ষ মাতৃকুলের পঞ্চম পুরুষের মধ্যে সপিণ্ডমতে অযোগ্য হয়ে থাকে।

বিবাহে নিষিদ্ধ সম্বন্ধ

১. সমগোত্রীয় কারণে: এ নিয়মের অধীনে এজন সগোত্রীয় কন্যাকে বিবাহ করতে পারে না। কিন্তু এ নিয়ম ও নিষেধ কেবল ব্রাহ্মণগণের বেলায় প্রযোজ্য। অন্যদের ক্ষেত্রে নয়। সগোত্র বলতে বুঝায় পাত্রের পূর্বপুরুষ এবং কন্যার পূর্বপুরষ যদি একই ব্যক্তি হয়। তবে এরূপ স্তর পাত্রিকে সগোত্র বলা হয়। সুতরাং, দেখা যাচ্ছে, কাশ্যপ বংশের কোন পুরুষ কাশ্যব বংশের কোন কন্যাকে বিবাহ করতে পারে না। বাংলাদেশে ব্রাহ্মণ ব্যতীত শূদ্র অথবা অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যে কেবল সগোত্রজনিত কারণে বিবাহ অবৈধ হয় না।

২. সপিগুজনিত কারণে: দায়ভাগমতে বাংলাদেশে সপিগুজনিত কারণে সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে নিম্নলিখিত আত্মীয়দের মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ:

  • (ক) কোন পুরুষ তদীয় পিতৃকুলের সপ্তম পুরুষানুক অথবা পিতৃকুলের চতুর্থ পূর্ববর্তী কোন বালিকাকে বিয়ে করতে পারে না।
  • (খ) কোন পুরুষ তদীয় পিতৃকুলের সপ্তম পুরুষানুবর্তীদের মধ্য হতে ত্রিবিধ বদ্ধ অথবা তদীয় পিতৃকুলের পূর্ববর্তী কারো সাথে আত্মীয়তা বন্ধনে আবদ্ধ কোন বালিকাকে বিবাহ করতে পারে না।
  • (ঘ) কোন পরুষ তদীয় মাতৃকুলের পঞ্চম পুরুষানুবর্তী হতে মাতৃকুলের ত্রিবিধ বদ্ধ এবং তদীয় চতুর্থ পূর্বপুরুষের কারও সাথে আত্মীয়তা বন্ধনে আবদ্ধ কোন বালিকাকে বিবাহ করতে পারে না।

ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারিণী

নিম্নোক্ত কারণে স্ত্রী স্বামীর কাছ হতে পৃথক থেকে ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারিণী:

  • ১. শারীরিক এবং মানসিক উৎপীড়ন: শারীরিক অথবা মানসিক উৎপীড়নের জন্য যদি স্ত্রীর স্বামীর সঙ্গে থাকা একান্ত অসহনীয় হয়ে উঠে, তবে স্ত্রী পিত্রালয়ের কিংবা অন্য কোন নিরাপদ স্থানে থেকেও স্বামীর নিকট হতে ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারিণী হবে।
  • ২. উপপত্নী বা রক্ষিতা রাখার কারণে: স্ত্রীর নিষেধ সত্ত্বেও স্বামী যদি ঘরে উপপত্নী বা রক্ষিতা লালন করেন তবে তাকে মানসিক উৎপীড়ন বলা যেতে পারে এবং সে কারণে স্ত্রী স্বামী হতে পৃথক থেকেও ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারিণী হবে।
  • ৩. নিরাপত্তাহানীর আশংকা: শারীরিক নির্যাতনজনিত কারণে স্বামীগৃহে স্ত্রীর জীবনের নিরপত্তার আংশকা দেখা দিলে স্বামীর কাছ হতে পৃথক থেকেও ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারিণী।
  • ৪. কুষ্ঠ অথবা সিফিলিস রোগের কারণে: স্বামী কুষ্ঠ অথবা সিফিলিস রোগে আক্রান্ত হলে; এবং
  • ৫. ধর্মান্তরের কারণে স্বামী ধর্মান্তরিত হলে: স্বামীর সাথে বসবাস করতে বাধ্য নয়, এক্ষেত্রে স্ত্রী পৃথক থেকেও ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারিণী।

তালাকের কারণ

প্রাচীন হিন্দু আইন পর্যালোচনায় দেখা যায় সে সময় হিন্দু বিবাহ প্রথায় তালাকের প্রচলন ছিল না। মেইন-এর বিবরণ অনুযায়ী নিম্নবর্ণের হিন্দুদের মধ্যে তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদের কিছু হদিস পাওয়া যায়। হিন্দু সামাজিক প্রথার কিছু কিছু ক্ষেত্রে নারদকৌটিল্যের গ্রন্থসমূহে পুনর্বিবাহের উল্লেখ আছে। নারদের মতে, স্বামীর মৃত্যু, যৌন অক্ষমতা বা স্বামীর অবর্তমানের জন্য হিন্দু মহিলাদের মধ্যে দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণের রেওয়াজ ছিল। এটি অবশ্য মনু অস্বীকার করেন। হিন্দু বিবাহ আইন ১৯৫৫ অনুসারে, ভারতে যেহেতু তালাকের অনুমোদন দিয়েছে, সেহেতু উক্ত আইনের ১৩ ধারা অনুযায়ী স্বামী বা স্ত্রী নিম্নোক্ত কারণে আদালতে তালাকের জন্য আবেদন করতে পারে: যেমন- যৌন কেলেংকারী, সংসার-ধর্ম ত্যাগ ও নির্যাতন সংক্রান্ত অভিযোগ। ভারতে বিবাহ আইন ১৯৭৬ প্রদান করা হয়েছে। তালাকের ডিক্রি পাওয়ার পর পক্ষগণের যে কেউ দ্বিতীয়বার বিবাহ করতে পারে, এক বছর অপেক্ষার প্রয়োজন হয় না। হিন্দু আইনে নিম্নের বিষয়গুলোকে নির্যাতনের কারণ হিসেবে গণ্য করা হয়:

  • ১. বিদ্রূপ বা মৌখিক গালমন্দ: যদি পক্ষগণের কেউ একে অপরকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে গালিগালাজ করে তবে তা নির্যাতন হিসেবে গণ্য হবে। তবে স্বামী স্ত্রীর স্বাভাবিক রাগ বা ক্ষোভকে নির্যাতনের আওতায় আনা যায় না। তবে তৃতীয় ব্যক্তির উপস্থিতিতে স্ত্রী যদি এমন অশ্লীল বাক্য ব্যবহার করে যা স্বামীর মনঃকষ্টের কারণ হতে পারে তবে তা নির্যাতন হিসেবে গণ্য হবে।
  • ২. নির্যাতনের হুমকি: যদি শারীরিক উন্মত্ততা বা হিংস্রতা এমন পর্যায়ে পৌছে, যা কোনো পক্ষের জীবন, স্বাস্থ্য বা অঙ্গের নিরাপত্তাকে আশঙ্কাগ্রস্ত করে তোলে।
  • ৩. স্বামীর মদ্যপান: মদ্যপানজনিত হিংস্রতা বা অস্বাভাবিকতা যদি স্ত্রীর শারীরিক বা মানসিক অসুস্থতার কারণ হয়ে দাঁড়ায় তা স্ত্রীর প্রতি নিষ্ঠুরতা হবে। তবে স্বাভাবিক মদ্যপান নির্যাতনের কোন পূর্বশর্ত নয়।
  • ৪. যৌনক্রিয়া:
    • (ক) যদি কোন স্ত্রী স্বামীর সঙ্গে যৌনক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে অস্বীকার করে তবে স্ত্রী স্বামীর যৌন উদাসীনতা বা অনীহা নির্যাতনের কারণ হবে।
    • (খ) স্বামী যদি স্ত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে অতিরিক্ত বা এমন বিকৃত যৌনক্রিয়ায় বাধ্য করে যা স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয় তবে তাও নিষ্ঠুরতা হিসেবে গণ্য হবে।
    • (গ) স্বামী যদি স্ত্রীকে কোন আগন্তুকের সাথে অবৈধ মেলামেশা বা দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করতে বাধ্য করে তবে তা স্ত্রীর প্রতি নিষ্ঠুরতা হবে।
    • (ঘ) অন্যায়ভাবে যদি স্ত্রীর প্রতি অসতীত্বের অভিযোগ আনা হয়, তবে তা স্ত্রীর প্রতি নিষ্ঠুরতা হবে।
  • ৫. যৌন অক্ষমতা: স্বামীর যৌনক্ষমতা নেই এটি জানা সত্ত্বেও যদি স্বামী তার স্ত্রীকে স্পর্শ করে। অর্থাৎ, পুরুষাঙ্গ স্থাপন সত্ত্বেও রতিক্রিয়া শুরুর পূর্বে বীর্যস্খলন হয়ে যায় তাহলে তা স্বাভাবিক পরিপূর্ণ যৌন ক্রিয়া নয় বিধায় স্ত্রী পরিতুষ্ট হবে না। সুতরাং, এটিও স্ত্রীর প্রতি নিষ্ঠুরতা হিসেবে গণ্য হবে।
  • ৬. মস্তিষ্ক বিকৃতি: পক্ষগণের কেউ যদি অর্থাৎ, স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে কেউ যদি তিন বছর অপ্রকৃতিস্থ বা মস্তিষ্ক বিকৃত অবস্থায় থাকে এবং তাকে চিকিৎসা করা সত্ত্বেও যদি সুস্থ বা স্বাভাবিক অবস্থায় অপ্রকৃতিস্থ বা মস্তিষ্ক বিকৃত অবস্থায় থাকে, অর্থাৎ চিকিৎসা করা সত্ত্বেও যদি সুস্থ বা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে না আসে তবে অপরপক্ষ তালাকের জন্য আবেদন করতে পারে। এ নিয়ম ভারতীয় বিবাহ আইন ১৯৭৬ সংশোধনী হওয়ার পূর্বে বহাল ছিল।
  • ৭. বাংলাদেশের হিন্দুদের মধ্যে তালাক প্রথার প্রচলন আছে কী?: বাংলাদেশের হিন্দুদের মধ্যে তালাক প্রথার প্রচলন অদ্যাবধি প্রবর্তিত হয়নি। তবে এটি ভারতে প্রচলিত আছে। হিন্দুদের মধ্যে তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদজনিত অসংখ্য মামলা ভারতের বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন অবস্থায় আছে। প্রাচীনকালের হিন্দু আইনে তালাক অর্থাৎ বিবাহ বন্ধন ছিন্ন করার কোন বিধান ছিল না। ব্রাহ্মণ্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ সম্পূর্ণরূপেই নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু বর্তমান সমাজের ব্যবস্থাপকগণ এই মতবাদ পোষণ করেন যে, অবস্থাধীনে বিবাহ বন্ধন ছিন্ন করা যুক্তিসঙ্গত। বর্তমান যুগে সমাজের কল্যাণের জন্য এবং সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং প্রগতির প্রতি দৃষ্টি রেখে যুক্তসঙ্গত কারণ বর্তমান থাকলে বিবাহ বিচ্ছেদ আইন প্রয়োগের দ্বারা বলবৎ করা হয়েছে। এই আইন হিন্দু বিবাহ বিধি আইন নামে পরিচিত।

সাম্প্রতিককালে ভারতে পূর্বের হিন্দু বিবাহ বিধি আইনটি ১৯৫৫ সালের হিন্দু বিবাহ আইন দ্বারা বহুলাংশে সংশোধিত হয়েছে। এই সংশোধনী আইন অনুসারে কোন দম্পতি যদি যৌথভাবে এ মর্মে আদালতে আরজি পেশ করে যে, তিন বছর বিবাহিত জীবন যাপন করার পরেও তাদের মধ্যে কোন অবস্থাতেও মনের মিল হচ্ছে না এবং তাদের পক্ষে দাম্পত্য জীবনের দায়-দায়িত্ব পালন করা অসম্ভব হয়ে উঠেছে বিধায় তারা এই ক্ষণে আদালতের সমীপে বিবাহ বিচ্ছেদ প্রার্থনা করছে, এক্ষেত্রে আদালত দরখাস্ত দাখিলের তারিখ থেকে ৬০ দিন অতিক্রান্ত হওয়া মাত্রই কোনরূপ সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়াই বিবাহ বিচ্ছেদ কার্যকর করবে। তবে বাংলাদেশে বসবাসরত হিন্দুদের বিবাহ বিচ্ছেদ সম্পর্কিত কোন আইনই প্রযোজ্য নয়। বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত হিন্দুদের বিবাহ বিচ্ছেদের উপর কোন আইন বা অর্ডিন্যান্স প্রণয়ন করা হয়নি।

বর্তমান ভারতীয় বিবাহ আইন

ভারতে ১৯৫৫ সালে The Hindu Marriage Act, 1955 পাস হওয়ার পর বিবাহ সম্পর্কিত আইনে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। এই আইনে যে সকল মৌলিক পরিবর্তন আনয়ন করেছে তাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কতকগুলো পরিবর্তন নিম্নে দেওয়া হলো:

  • ১. এই আইন অনুযায়ী হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন ও শিখদের মধ্যে অনুষ্ঠিত সকল বিবাহকে বৈধ বিবাহ বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
  • ২. এই আইন হিন্দু বিবাহের ক্ষেত্রে মিতক্ষরা ও দায়ভাগ মতবাদের মধ্যে নিষিদ্ধ পর্যায়ের সম্পর্ক সংক্রান্ত পার্থক্য রহিত করেছে।
  • ৩. এই আইন এই প্রথমবারের মত হিন্দুদের মধ্যে এক বিবাহ প্রবর্তন করেছে এবং দ্বিবিবাহকে ভারতীয় দণ্ড আইনের আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধে পরিণত করেছে।
  • ৪. এই আইন কুমারী বিবাহ ও বিধবা বিবাহের মধ্যে পার্থক্য রহিত করেছে।
  • ৫. এই আইন বিবাহের জন্য বালকদের ক্ষেত্রে ২১ ও বালিকাদের ক্ষেত্রে ১৮ বছর বিবাহযোগ্য বয়সরূপে নির্ধারণ করেছে।
  • ৬. এই আইন প্রাচীন হিন্দু আইনের আট প্রকারের বিবাহের কোনটিকে বিশেষভাবে স্বীকৃতি না দিয়ে কেবল বৈধ বিবাহের শর্তাবলী নির্ধারণ করে দিয়েছে।
  • ৭. এই আইন বৈধ বিবাহের জন্য কোন বিশেষ অনুষ্ঠানকে নির্দিষ্ট করে দেয়নি। এতে বলা হয়েছে যে, কোন বৈধ বিবাহ অনুষ্ঠিত হতে হলে তা বিবাহের যে কোন এক প্রকারের প্রথাগত আচার-অনুষ্ঠানাদি অনুযায়ী সম্পাদিত হতে হবে।
  • ৮. এই আইনে এই প্রথমবারের মত হিন্দু বিবাহকে রেজিস্ট্রিভুক্ত করার বিধান দেওয়া হয়েছে।
  • ৯. এই আইনে বিবাহ পক্ষগণের দাম্পত্য সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের ধারা প্রবর্তন করা হয়েছে।
  • ১০. আদালত কি কি কারণে স্বামী-স্ত্রীর পৃথক থাকার নির্দেশ দিবে এই আইনে তার বিধান দেওয়া আছে।
  • ১১. হিন্দু বিবাহের পক্ষগণ কি কি কারণে বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য আদালতে মামলা দায়ের করতে পারবে, তার বিধানও এই আইনে আছে। এটি ছাড়াও এই আইনে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে বিবাহ বিচ্ছেদের বিধানও আছে।
  • ১২. এই আইনে পুনর্বিবাহের ধারাও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বৈধ বিবাহ বিচ্ছেদের পর যে কোন পক্ষ পুনরায় বিবাহ করতে পারবে।
  • ১৩. এই আইনের আওতায় বিবাহ পক্ষগণের মধ্যে মামলা চলাকালে আদালত সংক্ষুব্ধপক্ষের আবেদনক্রমে খরচ প্রদানের জন্য অপর পক্ষকে নির্দেশ দিতে পারে।
  • ১৪. এই আইনে স্বতন্ত্রভাবে বাসকারিণী স্ত্রীকে ভাতা এবং ভরণপোষণ প্রদানের জন্য আদালত স্বামীকে স্থায়ী নির্দেশ দিতে পারে।
  • ১৫. এই আইনে মামলা চলাকালে ও ডিক্রি প্রদানের পরেও সন্তানের তত্ত্বাবধানের ব্যবস্থা সংক্রান্ত ধারা সংযোজিত হয়েছে।
  • ১৫. নিষিদ্ধ পর্যায়ের সম্বন্ধের ব্যক্তি ও সপিণ্ডদের মধ্যে ১৯৫৪ সালের The Special Marriage Act-এর অধীনে অনুষ্ঠিত প্রথাগত বিবাহকে এই আইন নিষিদ্ধ করেন।

উচ্চতর আদালতের Rulings

  1. Two essentials for a valid marriage under the Hindu Law are-
    • (i) invocation enforce sacred fire and
    • (ii) Saptapadi, to be fulfilled by the couple.
    • some other rites amongst the Bangladeshi Hindus. [35 DLR 160]
  2. Unmarried daughter’s marriage expenses are to be borne by the joint family property before actual sepration of the property on partition. [13 DLR 232]
  3. Widow remarriage. Custom allows such marriage. [19 DLR 935]
  4. There is a presumption in favour of marriage rather than concubinage. Where a man and woman are proved to have lived together as husband and wife, the law will presume, unless contrary is clearly proved, that they were living together in consequence of a valid marriage. [4 DLR 237)
  5. If the daughter is unable to obtain maintenance from her husband or after his death from his family: her father, if he has got a separate property of his own, under a moral obligation to maintain her. [12 DLR 142]
  6. Where the validity of marriage is disputed, the Court must find specifically whether the requisites ceremonies were performed. [35 DLR 160]
  7. A Hindu widow remarrying a member of other religion forfeits her right to the estate of her husband. The word ‘Widow’ includes all widows including one who remarries. [12 DLR 634]
  8. The Hindu Widow’s Remarriage Act embraces all widows without distinction, barring their right to inherit their deceased husband’s property upon their contracting fresh marriage. [29 DLR (AD) 137]
  9. The section 3 of the Hindu Widow’s Remarriage Act does not lay down that the marriage of a Hindu widow by itself would lead to the forfeiture of her rights of guardianship. [4 DLR 492]
  10. Marriage, presumption of – With regard to marriage carried a valid presumption that a marriage in law under the Hindu system was solemnised upon observance of all the legal formalities including saptapdi and invocation before the sacred fire. [Swapon Kumar Gain Vs. Amita Golder; 58 DLR (HCD) 26]
  11. Hindu Personal Law on Marriage Requisites of a valid Hindu Marriage- There was a marriage ceremony between the parties in the temple of the deity Kali in presence of many persons – It is obvious that nuptial rites in Hindu Shastra are so complicated that an exact observance of their details is not easy and is beyond the comprehension of the ordinary participants or the attendants of the ceremony. But once the celebration of the ordinary participants or the attendants of the ceremony. But once the celebration of that marriage in fact is established there shall be a presumption of there being a marriage in law and observance of the essential ceremonies. [Utpal Kunti Das Vs. Monju Rani Das; 5 BLT (AD) 283]

তথ্যসূত্র

  • হিন্দু আইন, জনেন্দ্রনাথ সরকার, বিবেকানন্দ সরকার, নিউ ওয়ার্সী বুক কর্পোরেশন, ২০১৬

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.