সংযুক্ত আরব আমিরাত বৃষ্টি নামাবার জন্য একটি কৃত্রিম পর্বত তৈরি করতে চায়

shutterstock_258657008_0.jpg

সংযুক্ত আরব আমিরাত বা ইউ.এ.ই. আক্ষরিক অর্থেই ‘বৃষ্টি নামাতে’ চাচ্ছে। এই কুখ্যাত উষ্ণ এবং শুষ্ক দেশটিতে পানি নিঃসন্দেহে অতি মূল্যবান বস্তু আর এই পানির পরিমাণও সেখানে অনেক কম। যাই হোক, এক্ষেত্রে জলবায়ুর প্রভাবকে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। এই জলবায়ুর প্রভাবের কারণেই বিগত কয়েক দশকে এই অঞ্চলটি অতিমাত্রায় ও বিপজ্জনকভাবে উষ্ণ হয়ে উঠেছে।

আর যেহেতু সেখানে খাবার পানির পরিমাণ এত কম, তাই দেশটি এই সমস্যাটির একটি বৃহৎ পরিসরের সমাধান খুঁজে বের করেছে। এরাবিয়ান বিজনেস পত্রিকায় রিপোর্ট করা হয়েছে, দেশটি একটি কৃত্রিম পর্বত তৈরি করতে যাচ্ছে। আর এই পর্বতের উচ্চতা এতটাই উঁচু হবে যে তা আশেপাশের পরিবেশকে ব্যবহার করে সেই অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হবে।

প্রাকৃতিকভাবেই বাতাসে জলীয়বাষ্প হিসাবে পানি অবস্থান করে। যখন এই বাতাস পর্বতের সংস্পর্শে আসে, তখন তা উপরের দিকে উঠতে থাকে। উপরে ওঠার ফলে এই বাতাস শীতল হয়ে যায়। বাতাস শীতল হতে হতে একটা সময় এটা পানি ধরে রাখার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। আর এরফলে ঘটে বৃষ্টিপাত। দেশটি ভাবছে, কৃত্রিম পর্বতটা এই উপায়েই বৃষ্টি ঝড়িয়ে তাদেরকে পানির একটি নতুন উৎস্যের সন্ধান দেবে।

একটি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ‘ইউনিভারসিটি করপোরেশন ফর এটমস্ফেরিক রিসার্চ (UCAR)’ বর্তমানে কৃত্রিম পর্বতটির সঠিক প্রোপরশনগুলো নির্ণয়ের জন্য কম্পিউটার মডেলিং ব্যাবহার করে কাজ করছে। কৃত্রিম পর্বত তৈরি করা নিঃসন্দেহে অনেক কঠিন কাজ।  UCAR এর গবেষক রোয়লফ ব্রুইন্টজেস বলেন, “পর্বত তৈরি এত সহজ কাজ নয়”।

বৃষ্টিপাত বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম চেষ্টা করা হয়েছে। চীনের ‘সিডস ক্লাউড’ প্রযুক্তি এদের একটি যেখানে মেঘের দিকে রাসায়নিক পদার্থপূর্ণ রকেট নিক্কেপ করা হয়। এই কেমিকেলগুলো সেখানে গিয়ে বরফের ক্রিস্টাল তৈরি করা শুরু করে যা মেঘের মধ্যে বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়। এতে তারা এক বছরে ৫০ বিলিয়ন টন বৃষ্টি তৈরি করতে সক্ষম হয় যার দ্বারা তারা এখন কৃষিকাজের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াওমিং প্রদেশেও UCAR একই পদ্ধতিতে গত কয়েক বছর ধরে বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে এসেছে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে তাদের এই প্রোজেক্টটি একটি মহৎ প্রচেষ্টা হতে যাচ্ছে। এটার জন্য কনস্ট্রাকশন মেটারিয়ালগুলোর ডিটেইলস এখনও পরিমাপ করা হয় নি। কিন্তু নিশ্চিন্তভাবেই প্রচুর পরিমাণ কনস্ট্রাকশন মেটারিয়ালের প্রয়োজন হবে এর জন্য।

তানজানিয়ার মাউন্ট কিলিমাঞ্জারোর কথাই ধরুন। এর উচ্চতা হল ৫৮৯৫ মিটার ও ভূমির ব্যাস মোটামুটিভাবে ৪০ কিলোমিটার। এই পর্বতটিকে মোটামুটি সিমেট্রিক বা প্রতিসমই বলা যায় যেকারণে একে কোণক ধরে হিসাব করা সম্ভব। এই হিসাবে এই পর্বতটির আয়তন দাঁড়ায় প্রায় ২৪৬৯ কিউবিক কিলোমিটার। পর্বতটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফোনোলাইট নামক পাথর দ্বারা তৈরি। এর অর্থ হল সমগ্র পর্বতটির ভর হবে ৬.২ কোয়াড্রিলিয়ন টন। সুতরাং যদি UCAR এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত কিলিমাঞ্জারোর মত একটি পর্বত তৈরি করতে চায় তাহলে তাহলে তাদের প্রচুর পরিমাণে মেটারিয়ালের প্রয়োজন হবে।

ব্রুইন্টজেস বলেন, “এই প্রোজেক্টটি যদি সরকারের জন্য অনেক বেশি ব্য্যবহুল হয়ে যায় তাহলে অবশ্যই একে আর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে না। কিন্তু এতে তারা ভবিষ্যতে এটা করার জন্য কিরকম অল্টারনেটিভ নিয়ে তারা কাজ করতে পারবেন এসম্পর্কে ধারণা পাবেন। যদি দেখা যায়, প্রোজেক্টটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব, তাহলে দ্বিতীয় ধাপে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি সিদ্ধান্ত নেবে এই প্রোজেক্টটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নাকি অসম্ভব”।

http://www.arabianbusiness.com/exclusive-uae-mulls-man-made-mountain-in-bid-improve-rainfall-630079.html

– ভেলোসিটি হেড

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.