তুরস্ক কি কখনো সুইডেনকে ন্যাটোতে যোগ দিতে দেবে? বিশেষ করে কোরান পোড়ার ঘটনার পর?

ফিনল্যান্ড ও সুইডেন যখন গত বছরের মে মাসে ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার জন্য আবেদন করেছিল, তখন বেশিরভাগ রাজনীতিবিদ এবং বিশ্লেষকরা আশা করেছিলেন যে বেশিরভাগ ন্যাটো সদস্যের সাথে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে তাদের যোগদান তুলনামূলকভাবে সহজ হবে। কিন্তু পশ্চিমাদের জন্য দুর্ভাগ্য যে, তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এখনও সুইডেনের আবেদন আটকে রেখেছেন এবং মনে হচ্ছে যে, গত কয়েক সপ্তাহে তার দাবিগুলি আরও বেড়েছে। সুতরাং এখানে আলোচনা করা হবে কেন তুরস্ক সুইডেনের আবেদন আটকে রেখেছে, এরদোয়ানের দাবিগুলি কীভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ভবিষ্যতে ন্যাটোতে সুইডেনের যুক্ত হবার সম্ভাবনা আছে কিনা।

কেন তুরস্ক সুইডেনের আবেদন আটকে রেখেছে?

একটি দ্রুত রিক্যাপ দিয়ে শুরু করা যাক। আপনি সম্ভবত ইতিমধ্যেই জানেন, ফিনল্যান্ড এবং সুইডেন গত বছরের মে মাসে ন্যাটোতে যোগদানের জন্য আবেদন করেছিল। পশ্চিমাদের জন্য হতাশাজনক, তুর্কি রাষ্ট্রপতি এরদোয়ান প্রায় তাত্ক্ষণিকভাবে এই ধারণার প্রতি কিছুটা দ্বিধা প্রকাশ করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে তুরস্কের বাইরে সক্রিয় কুর্দি গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান না নিলে তিনি দুটি নর্ডিক দেশের অন্তর্ভুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন না।

তবে জুনের শেষের দিকে তিন দেশ ত্রিপক্ষীয় স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করে, যেখানে মূলত বলা হয়েছিল যে তুরস্ক ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনকে ন্যাটোতে যোগদানের অনুমতি দেবে যদি তারা তিনটি কাজ করে। প্রথমত, কিছু কুর্দি সংগঠনকে সমর্থন করা যাবে না যেগুলোকে তুরস্ক কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির সাথে সম্পর্কিত বলে মনে করে, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত তুর্কী আলেমের সাথে সম্পর্কিত হওয়া যাবে না যাকে এরদোয়ান ২০১৬ সালের অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার জন্য দায়ী করেছেন। উল্লেখ্য, কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি হচ্ছে তুরস্কের কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদী সহিংসতার জন্য দায়ী কুর্দি জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। দ্বিতীয়ত, ২০১৯ সালে এরদোয়ান উত্তর সিরিয়ায় সৈন্য পাঠানোর পর তুরস্কের ওপর দেশ দুটো অনানুষ্ঠানিকভাবে যে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপন করেছিল তা প্রত্যাহার করতে হবে। তৃতীয়ত, চুক্তিতে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনকে যে কোনো ‘সন্ত্রাসী সন্দেহভাজনকে’ তুরস্কের কাছে হস্তান্তর করতে হবে।

এখন চুক্তিতে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি, তবে চুক্তি স্বাক্ষরের পরের দিন তুরস্কের বিচারমন্ত্রী তুরস্কের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংবাদ সংস্থাকে বলেছিলেন যে তুরস্ক ফিনল্যান্ডের ১২ জন এবং সুইডেনের ২১ জন সহ ৩৩ জনকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তুর্কি বিচার মন্ত্রণালয়ের মতে, তুরস্ক গত পাঁচ বছরে এই সমস্ত ব্যক্তিদের প্রত্যর্পণের জন্য অনুরোধ করেছিল এবং এখন পর্যন্ত তাদের কোনওটিই অনুমোদিত হয়নি।

এখন, ফিনল্যান্ড অবিলম্বে এই সমস্ত মানদণ্ড পূরণ করেছে এবং এপ্রিলে ন্যাটোতে যোগ দিয়েছে, তবে সুইডেনে সমস্যা একটু বেশি ছিল, বিশেষত সেই শেষ মানদণ্ডটি নিয়ে। কারণ সুইডেনের সুপ্রিম কোর্ট সরকারের অন্তত দুটি প্রত্যর্পণ আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে। তখন এরদোয়ান বলেন, তালিকার সবাইকে হস্তান্তর করতে হবে না, তবে তিনি বুলন্দ কেইনস নামের এক সাংবাদিককে ফিরিয়ে দিতে বলেন। ২০১৫ সালে তাকে টুইটারে ‘প্রেসিডেন্টকে অপমান করার’ অভিযোগে তুরস্ক গ্রেপ্তার করে, কিন্তু পরে তিনি পালিয়ে সুইডেনে চলে যান।

এখন, একজন সাংবাদিকের প্রতি এরদোয়ানের এরকম মনোযোগকে অদ্ভুত বলে মনে হয়েছিল এবং অনেক বিশ্লেষক ধরে নিয়েছিলেন যে এরদোয়ান আসন্ন নির্বাচনের দিকে নজর দিচ্ছেন। মূলত, তারা ভেবেছিল যে মুদ্রাস্ফীতি আকাশছোঁয়া হওয়ায় এবং নির্বাচনে বিরোধীদের উত্থানের জন্য এরদোয়ান তুর্কি ভোটারদের ভূ-রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শন করে নিজের জনপ্রিয়তাকে টিকিয়ে রাখতেই সুইডেনের আবেদনটি আটকে রেখেছেন এবং প্রমাণ করছেন যে তিনি ‘দুষ্টু আমেরিকানদের’ দ্বারা বাধ্য হবেন না, যারা তুরস্কে সত্যিই অজনপ্রিয়। তাই বুলন্দ কেইনস এর ব্যাপারটাও একটা এক্সকিউজ মনে হচ্ছিল। তাই আশাও করা হয়েছিল যে নির্বাচনের পরে, রাজনৈতিক চাপ কমে যাওয়ার সাথে সাথে এরদোয়ান নীরবে ইউ-টার্ন নেবেন এবং সুইডেনকে ন্যাটোতে যোগ দিতে দেবেন।

এখন, এটি আশা করার মতো একটি যুক্তিসঙ্গত বিষয়, কারণ তার বিতর্কিত আর্থিক নীতির ক্ষেত্রে তিনি ঠিক এটাই করেছেন। নির্বাচনের আগে তিনি বলেছিলেন যে তিনি কখনই তার নীতি থেকে সরে আসবেন না, আর হাল ছাড়বেন না, কিন্তু নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তিনি নীরবে ঠিক তাই করেছেন। (এটা নিয়ে ইতিমধ্যেই একটি আর্টিকেল লিখেছি, পড়ে দেখতে পারেন)। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সুইডেনের জন্য এমনটা হয়নি, বরং মনে হচ্ছে  সুইডেনের ক্ষেত্রে এরদোয়ানের দাবি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

এরদোয়ানের দাবিগুলি কীভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে?

এখন, সুইডেন এবং ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ সহ তার ন্যাটো মিত্ররা নিশ্চিত যে দেশটি ত্রিপক্ষীয় স্মারকলিপিতে উল্লিখিত তুরস্কের দাবি পূরণ করেছে। কিন্তু এরদোয়ান ততদিনে সেখান থেকে সরে এসে আরও দুটি দাবি নিয়ে এসেছেন। জুনের মাঝামাঝি সময়ে এরদোয়ান বলেছিলেন যে সুইডেনকে তার দেশে তুরস্ক বিরোধী বিক্ষোভ বন্ধ করতে হবে, আর তা না করা পর্যন্ত তিনি সুইডেনকে ঢুকতে দেবেন না। তিনি বলেছিলেন, সুইডেনের নতুন সন্ত্রাসবিরোধী আইনকে স্বাগত জানানো হলেও তুরস্কের নির্বাচনের রাতে স্টকহোমে অনুষ্ঠিত এরদোয়ান বিরোধী বিক্ষোভ পুলিশের প্রতিরোধ করা উচিত ছিল এবং তুরস্ক সুইডেনকে ন্যাটোতে প্রবেশ করতে দেবে না, যতক্ষণ না তারা এই বিক্ষোভগুলি পুনরায় ঘটতে বাধা দেয়।

এরপর গত সপ্তাহে সুইডিশ কর্তৃপক্ষ ঈদের প্রথম দিনে স্টকহোমের একটি মসজিদের বাইরে কোরান পোড়ানো ইরাকি বংশোদ্ভূত এক শরণার্থীকে বিক্ষোভের অনুমতি দেওয়ার পর আরেকটি নতুন উত্তেজনার বিষয় উঠে আসে। এখন, সুইডিশ কর্তৃপক্ষ ওই ব্যক্তিকে একটি জাতিগত গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য অভিযুক্ত করেছে এবং সুইডিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটিকে ইসলামোফোবিক কাজ হিসাবে বর্ণনা করেছে, এবং উল্লেখ করেছে এটি কোনওভাবেই সুইডিশ সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রতিফলিত করে না। কিন্তু একই সাথে এও বলা হয়েছে যে, সুইডেন সমাবেশ, মত প্রকাশ এবং প্রদর্শনের স্বাধীনতার অধিকারকে সাংবিধানিকভাবে সুরক্ষা করে, এবং এই কারণে সুইডিশ সরকার কোরান পোড়ানোকে নিষিদ্ধ করতে পারে না।

উল্লেখ্য, সুইডিশ পুলিশ প্রাথমিকভাবে এই বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করেছিল, তবে একটি সুইডিশ আপিল আদালত রায় দিয়েছে যে নিষেধাজ্ঞাটি ব্যক্তির মত প্রকাশের স্বাধীনতার লঙ্ঘন। এদিকে এরদোয়ান এর কোনোটাকেই ভালোভাবে নেননি। মুসলিমদের ঈদের ছুটি উপলক্ষে এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমরা অহংকারী পশ্চিমা জনগণকে শিক্ষা দেব যে, মুসলমানদের পবিত্র মূল্যবোধকে অপমান করা মত প্রকাশের স্বাধীনতা নয়।” শুধু এরদোয়ানই নন, ইরাক, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মরক্কো সহ অনেক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ সুইডিশ রাষ্ট্রদূতদের তলব করেছে এবং বৃহস্পতিবার বাগদাদে সুইডিশ দূতাবাসে বিক্ষোভকারীরা হামলা চালিয়েছে।

ভবিষ্যতে ন্যাটোতে সুইডেনের যুক্ত হবার সম্ভাবনা আছে কি?

যাইহোক, এখন মনে হচ্ছে, মূল তিনটি চুক্তি এবং বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করার সাথে সাথে এরদোয়ান এও চান যে, সুইডেন ন্যাটোতে যোগদানের আগে কোরান পোড়ানো নিষিদ্ধ করুক। আর যদি এটাই এরদোয়ানের রেড লাইন হয়, তবে তার জন্য এটি কেবল একটি ম্যাক্সিমালিস্ট বার্গেইনিং স্ট্র্যাটেজি নয়, সেই সাথে এর অর্থ হ’ল সুইডেনের শীঘ্রই ন্যাটোতে যোগদানের সম্ভাবনা কম। কোরান পোড়ানো সহ মত প্রকাশের স্বাধীনতা স্পষ্টতই সুইডেনের সংবিধান দ্বারা সুরক্ষিত এবং এমনকি যদি সুইডিশ সরকার এটি পরিবর্তন করতে চায়ও, তবুও এটি সুইডেনে একটি জনপ্রিয় বিষয় হবে না। এর কারণ হচ্ছে, সুইডিশদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ন্যাটোতে যোগ দিতে চাইলেও,  এবারে তার চেয়েও বড় সংখ্যাগরিষ্ঠ (প্রায় ৮০% সুইডিশ) সুইডেনের সংবিধান ও আইন রক্ষার জন্য অন্তত ন্যাটোর অন্তর্ভুক্তি বিলম্বিত করতে পছন্দ করবে। সুতরাং সুইডিশ সরকার কেবল এরদোয়ানের জন্য পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে অনুপ্রাণিত হবে না।

যাইহোক, একটি ভাল সম্ভাবনা রয়েছে যে, এরদোয়ান সত্যিই সুইডেনকে ন্যাটোতে প্রবেশ করতে না দেওয়ার জন্য নতুন অজুহাত নিয়ে আসছেন যাতে তিনি তার সুবিধা সর্বাধিক করতে পারেন এবং যতটা সম্ভব ছাড় পেতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, এরদোয়ান স্পষ্টতই তুরস্ককে এফ-16 এবং এফ-35 দেওয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে চাপ দিতে চান, কেননা এরদোয়ান ২০১৫ সালে রাশিয়ার তৈরি এস-400 এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম কেনার পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেটাকে আটকে রেখেছে। মজার ব্যাপার হলো, শুধু তুরস্কই চাপ প্রয়োগ করছে না, কারণ মনে হচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলোও একই ধরনের কিছু করছে। গত সপ্তাহেই রয়টার্স জানায়, সুইডিশ ও আমেরিকান তদন্তকারীরা এরদোয়ানের এক ছেলের বিষয়ে পুনরায় তদন্ত শুরু করেছেন, যেখানে বিশেষ করে দেখা হচ্ছে তুরস্কের বাজারে প্রভাবশালী অবস্থান অর্জনে সহায়তা করার জন্য তিনি একটি মার্কিন কোম্পানির সুইডিশ এফিলিয়েটেড সংস্থার কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন কিনা।

শেষ পর্যন্ত, সুইডেন শীঘ্রই ন্যাটোতে যোগদানের সুযোগ পাবে কিনা তা নির্ভর করে, সুইডেনের কোরান বিরোধী এবং এরদোয়ান বিরোধী বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করা নিয়ে এরদোয়ান কী আশা করছেন তার ওপর, বা এই নতুন দাবিগুলি এরদোয়ানের পক্ষে যতটা সম্ভব ছাড় নেওয়ার বৃহত্তর খেলার অংশ কিনা তার ওপর। যেমনটা আমরা দেখতে পাচ্ছি, এই দুটো সম্ভাবনার মধ্যে পরেরটি হবার সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে হচ্ছে, কিন্তু তারপরেও, সুইডেনকে শীঘ্রই ছেড়ে দেয়াটা তুরস্কের জন্য কঠিন হবে। এবং সুইডেনের জন্য একমাত্র সিলভার লাইনিং হচ্ছে, এরদোয়ানের আনপ্রেডিক্টেবিলিটির মানে এই না যে ভবিষ্যতে যেকোন কিছু হওয়া সম্ভব। তবে বরাবরের মতোই, এটি প্রেডিক্ট করা সত্যিই কঠিন।

তথ্যসূত্র

1 – https://www.nato.int/nato_static_fl2014/assets/pdf/2022/6/pdf/220628-trilat-memo.pdf
2 – https://www.reuters.com/article/us-turkey-sweden-idUSKBN26Y2GX
3 – https://www.aljazeera.com/news/2022/6/29/turkey-extraditions-finland-sweden
4 – https://www.aljazeera.com/news/2022/6/29/turkey-extraditions-finland-sweden
5 – https://www.firstpost.com/world/they-impose-sanctions-on-turkey-erdogan-reiterates-opposition-to-nato-membership-for-finland-sweden-10684691.html
6 – https://www.nato.int/nato_static_fl2014/assets/pdf/2022/6/pdf/220628-trilat-memo.pdf
7 – https://m.bianet.org/english/world/271682-sweden-refuses-to-extradite-journalist-bulent-kenes-to-turkiye
8 – https://www.pewresearch.org/short-reads/2014/10/31/the-turkish-people-dont-look-favorably-upon-the-u-s-or-any-other-country-really/
9 – https://www.reuters.com/world/turkey-wont-back-swedish-nato-bid-unless-it-stops-anti-turkish-protests-erdogan-2023-06-14/
10 – https://www.france24.com/en/europe/20230702-swedish-govt-condemns-islamophobic-burning-of-koran-outside-stockholm-mosque
11 – https://www.premiumtimesng.com/news/top-news/607356-saudi-us-iran-others-react-as-man-burns-quran-in-sweden.html
12 – https://www.bloomberg.com/news/articles/2023-06-29/turkey-s-erdogan-slams-sweden-over-koran-burning-in-new-nato-tensions
13 – https://www.dw.com/en/swedens-fraught-path-to-nato-accession/a-66085063
14 – https://www.reuters.com/world/us-swedish-prosecutors-study-graft-complaint-naming-son-turkeys-erdogan-2023-06-26/

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.