ইতালীতে দক্ষিণপন্থার উত্থান, প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, আর তার “বৈপ্লবিক” দক্ষিণপন্থী পলিসিসমূহ

রবিবার ইতালীয়রা তাদের নতুন ইলেক্টোরাল সিস্টেমের অধীনে তাদের প্রথম সরকার নির্বাচন করার জন্য নির্বাচনে অংশ নেয়। ফলাফলে দেখা যায়, এবারের লার্জেস্ট পার্টি হচ্ছে জর্জিয়া মেলনির ব্রাদার্স অফ ইতালি, যা একটি দক্ষিন-পন্থী রাজনৈতিক দল যা গত বছর মারিও দ্রাঘির জোটে যোগ দিতে অস্বীকার করার পর থেকে কার্যত বিরোধী দলে পরিণত হয়েছিল।

তো ইতালির নির্বাচনের ফলাফল, মেলনির রাজনীতি এবং দলটি মূলত অন্যায় পপুলিস্ট ইতালীয় দলের মতো একই পরিণতি ভোগ করবে কিনা সেই ব্যাপারে আলোচনায় যাওয়া যাক…

নির্বাচনের ফলাফলের আলোচনায় যাবার আগে ইতালির নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে একটু ব্যাখ্যা করা যাক। ২০১৭ সালে ইতালির নির্বাচনী ব্যবস্থা সংশোধন করা হয় এবং এর পর থেকে এটিই প্রথম নির্বাচন। নতুন ব্যবস্থায় দুই কক্ষেই সিটের সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে। নিম্নকক্ষ দ্য চেম্বার নামে পরিচিত, যেটিতে আগে ৬৩০ জন ডেপুটি ছিল, এখন রয়েছে ৪০০ জন। অন্যদিকে উচ্চকক্ষ বা সিনেটের সিনেটর ছিল ৩১৫ জন, এখন তা ২০০ জন। উভয় কক্ষই একই সিস্টেমের মাধ্যমে নির্বাচন হয়, যদিও বিদেশে বসবাসকারী ইতালীয়দের দ্বারা প্রণীত মুষ্টিমেয় কয়েকটি আসন বাদ দিয়ে। আসনগুলোর তিন-অষ্টমাংশ নির্বাচিত হয় ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট সিস্টেমে যা সিংগেল মেম্বার ডিস্ট্রিক্টে দেখা যায়। অন্যদিকে বাকি পাঁচ-অষ্টমাংশ সিট হলো মাল্টি-মেম্বার ডিস্ট্রিক্টের, যেখানে প্রোপরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন দিয়ে নির্বাচন হয়।

ভোটাররা প্রতিটি চেম্বারের জন্য কেবল একটি ভোট বা সামগ্রিকভাবে দুটি ভোট দিতে পারেন, যার অর্থ হলো কেউ যখন তার স্থানীয় প্রার্থীদের ভোট দেয় তখন সে আঞ্চলিক পর্যায়েও সেই দলের পক্ষে ভোট দিচ্ছে। যদিও এই আলোচনার জন্য আপনাকে যে আসল জিনিসটি জানতে হবে তা হল সেই ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট সিটগুলোর জন্য পার্টিগুলো তাদের জেতার চান্স বৃদ্ধির জন্য কোয়ালিশন গঠন করতে পারে।

যাইহোক, এই বিশেষ নির্বাচনটি মারিও দ্রাঘির সরকারের সাম্প্রতিক পতনের কারণে শুরু হয়েছিল। দেশটিতে কোনও রাজনৈতিক দলই ২০১৮ সালের শেষ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেনি। যখন কোভিড আঘাত হেনেছিল এবং সরকারকে একে সামাল দিতে হয়েছিল, তখন তারা ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকের প্রাক্তন গভর্নর মারিও দ্রাঘির অধীনে একটি ইউনিটি গভর্নমেন্ট গঠন করেছিল। কিন্তু দ্রাঘির এই ইউনিটি গভর্নমেন্টের বাইরে থাকা বৃহত্তম দলটি ছিল দক্ষিণপন্থী ফ্রেটেলি ডি’ইটালিয়া বা এফডিএল বা ব্রাদার্স অফ ইতালি, যারা তখন ডি ফ্যাক্টো অপোজিশন পার্টি হয়ে ওঠে। এফডিএল মাত্র ৪% ভোট পেয়েছিল। কিন্তু নিজেদেরকে প্রধান প্রতিষ্ঠান-বিরোধী বা এন্টাই এস্ট্যাবলিশমেন্ট দল হিসাবে চিত্রিত করতে পেরেছিল এবং সফলভাবে লেগা নর্ড এবং ফোরজা ইতালিয়ার মতো অন্যান্য ডানপন্থী দলগুলির কাছ থেকে ভোট কেড়ে নেয়, কারণ এই ডানপন্থী দলগুলো দ্রাঘির সাথে জোটবদ্ধ হওয়ার সময় তাদের পপুলিস্ট রাজনীতিকে সংযত করতে বাধ্য হয়েছিল।

দ্রাঘির জোটের একটা রাজনৈতিক দল ছিল ফাইভ স্টার মুভমেন্ট। দলটি ছিল বিগটেন্ট আদর্শের, মানে এর ভেতরে ডান থেক বাম সব আদর্শের লোক ছিল। দেশের সংকটজনক পরিস্থিতির কারণেই হয়তো এই বিগটেন্ট দলটি আর এক থাকতে পারল না। স্বাভাবিকভাবে দলটি দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। তবে সবচেয়ে সমস্যার ব্যাপারটা হলো যখন দলটির ভাগ দ্রাঘির জোট থেকে সরে যায়। ফলে দ্রাঘির জোটটাই কলাপ্স করে। দ্রাঘির জোট থেকে তাদের সরে যাবার কারণ ছিল এই যে, তারা মনে করত ইউক্রেইনে রাশিয়ার আক্রমণের বিরুদ্ধে দ্রাঘি একটু বেশিই এগ্রেসিভ হয়ে গেছে। এদিকে দ্রাঘিও ভেবে বসলেন যে, তিনি ফাইভ স্টার মুভমেন্ট ছাড়া নতুন কোন সরকার তৈরি করতে পারবেন না, ফলে তিনি রিজাইন করলেন। আর এরফলেই দরকার হলো এই নতুন নির্বাচনের।

প্রধান সরকার দল, অর্থাৎ ইউনিটি গভর্নমেন্টের যেখানে ভগ্নদশা সেখানে ৪% আসনের ডি ফ্যাক্টো অপোজিশন পার্টি এফডিএল ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, দক্ষিণপন্থী ও সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তুষ্টদেরকে নিজের পক্ষে টেনে নিয়েছে। ভোটের পূর্বের কয়েক মাসেও এফডিএল ও ডেমোক্রেটিক পার্টির পোলিং গ্যাপ তেমন ছিলনা, সমানে সমানেই ছিল, তবে নির্বাচনের কিছু পূর্বে এই গ্যাপ বেড়ে যায়, এফডিএল এর পপুলারিটি বাড়ে, সেই সাথে ফাইভ স্টার মুভমেন্টেরও পপুলারিটি বাড়ে। শেষ পররন্ত দক্ষিণপন্থী পার্টিগুলো, অর্থাৎ এফডিএল, লেগা ও ফোর্জা ইতালিয়া একটি ইলেক্টোরাল কোয়ালিশন গঠন করতে সম্মত হয়, সেন্ট্রাল রাইট অ্যালায়েন্স নামে। এটা তাদের জন্য সুবিধাজনক ছিল, আর জেতার চান্সও বাড়িয়ে দেয় কেননা দ্রাঘির ইউনিটি গভর্নমেন্ট থেকে সরে আসার জন্য ডেমোক্রেটিক পার্টি ফাইভ স্টার মুভমেন্টের সাথে কোয়ালিশনে জড়াতে অসম্মত হয়, ফাইভ স্টার মুভমেন্টের কারণেই দ্রাঘির সরকারের পতন ঘটে। তবে ডেমোক্রেটিক পার্টি ছোট ছোট সেন্ট্রিস্ট পার্টির সাথে কোয়ালিশন করার চেষ্টা করে, কিন্তু সফল হয়নি। ছোট ছোট সেন্ট্রিস্ট পার্টিগুলো বরং একটা আলাদা সেন্ট্রিস্ট অ্যালায়েন্সে নির্বাচন করে। শেষে ডেমোক্রেটিক পার্টি ইতালিয়ান গ্রিন পার্টি ও বেশি কিছু ছোট ছোট বাম দলের সাথে কোয়ালিশনে যায়। এভাবে যেখানে বামপন্থীরা দুর্বল হয়ে যায়, সেখানে ডানপন্থীরা সুযোগ বুঝে অ্যালায়েন্স তৈরি করে নেয়। ইলেকশনের আগের শেষ রাউন্ডের পোলিং-এ দেখা যায় এফডিএল ২৫% এরও বেশি সাপোর্ট পাচ্ছে, যেখানে ডেমোক্রেটিক পার্টি ২০% আর ফাইভ স্টার মুভমেন্ট ১৩% পাচ্ছিল।

নির্বাচনে দেখা যায়, সিংগল মেম্বার ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট ডিস্ট্রিক্টগুলোতে ইতিহাসের সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে, মাত্র ৬৪%। এফডিএল এবার ২৬% ভোট পেয়ে গেছে, যা অন্যান্য যেকোন ডানপন্থী দলের চেয়ে অনেক বেশি। অন্য দুই ডানপন্থী দলের মধ্যে লেগা পেয়েছে ৮.৭৭% এবং ফোর্জা ইতালিয়া পেয়েছে ৮.১১% ভোট। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছে সেন্ট্রাল লেফট ডেমোক্রেটিক পার্টি – ১৯%, বিগ টেন্ট দল ফাইভ স্টার মুভমেন্ট পেয়েছে ১৫.৪৩% ভোট। সব মিলে এভাবে রাইট উইং কোয়ালিশন পায় মোট ৪৪% পপুলার ভোট, যেখানে লেফট-উইং ব্লক পায় ২৬%। ফাস্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট সিটে রাইট উইং-দের ভাস্ট মেজোরিটি থাকায় তারাই এখন উচ্চ ও নিম্ন উভয় কক্ষেই মেজোরিটি পাবার পথে রয়েছে। মানে দক্ষিণপন্থী দলগুলোর সেন্ট্রাল-রাইট অ্যালায়েন্সই তাই সরকার গঠন করতে যাচ্ছে যাকে এখন লিড করবে এফডিএল এর জর্জিয়া মেলোনি। পার্লামেন্টে এফডিএল-এরই সিট সবচেয়ে বেশি হচ্ছে, আর মেলোনিই হবে ইতালির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী।

তো এই হলো নির্বাচনের কথা। এবার জানা যাক, এফডিএল এর পলিসি সম্পর্কে। অতীতে এফডিএল এর নেতারা বেশ কিছু বিতর্কিত মন্তব্য করেছিল, যেমন “হিটলার একজন মহান রাজনীতিক ছিলেন”, “মুসোলিনি একজন ভাল রাজনীতিবিদ ছিলেন”, “মেলোনি একজন মহান নেত্রী, তিনি একজন সত্যিকারের ফ্যাসিস্ট”। আর মেলোনি নিজেও একসময় ইতালির নিও-ফ্যাসিস্ট মুভমেন্টের ইয়থ উইং এর সদস্য ছিলেন। তবে এটাও ঠিক যে, এদের দলের এইসব উক্তি মূলত পপুলিস্ট, এসব পলিসির দিক দিয়ে এরা বাইট করার চেয়ে বার্ক করে বেশি। কনজার্ভেটিজমের দিক দিয়ে এরা অনেকটা ইউকে-এর কনজারভেটিভদের মতই। ইকোনমিক পলিসির ক্ষেত্রে, মেলোনি অনেক দিক দিয়েই একজন ক্লাসিক ফিসকাল কনজারভেটিভ বা ইকোনমিক লিবারাল। তিনি ডেফিসিট পছন্দ করেননা, তিনি ওয়েলফেয়ারে স্পেন্ডিং কাট করতে চান, সেই সাথে ইতালিয়ান বিজনেসগুলোর ট্যাক্সও কমিয়ে আনতে চান। তবে ইইউ এর একটা ব্যাপার আছে এখানে। ইইউ বা ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বলা হয়েছে, ইতালি যদি ইইউ এর কোভিড রিকভারির ২০০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের বন্ড পেতে যায় তাহলে তাদেরকে বেশ কিছু ইকোনমিক রিফর্মের দিকে যেতে হবে। দ্রাঘি তার ভিত্তিতে একটা স্ট্রাকচারাল রিফর্ম ইমপ্লিমেন্ট করেছিলেন। মেলোনি বলেছেন তিনি দ্রাঘির সেই রিফর্মের সাথেই থাকছেন। যাই হোক, মেলোনির সাথে অন্যান্য ফিসকাল কনজারভেটিভদের পার্থক্য হচ্ছে তাদের তুলনায় মেলোনি বেশি ন্যাশনালিস্টিক। তিনি গ্লোবালাইজেশন পছন্দ করেন না, তিনি ডোমেস্টিক বিজনেসগুলো সাপোর্ট করার জন্য বেশি খরচ করতে চান, সেই সাথে তিনি বিদেশী কোম্পানিগুলোর ইতালীয় কোম্পানিগুলোকে ক্রয় করাকেও ব্যান করবেন। একই সাথে তিনি একজন নাটালিস্ট, মানে পপুলেশন গ্রোথ চান। আর তাই ইতালীয়রা যাতে বেশি করে সন্তান গ্রহণ করে তাই তিনি পরিবারগুলোতে সাপোর্টও বৃদ্ধি করবেন।

এবারে আসা যাক মেলোনির সোশ্যাল পলিসিতে। আর এগুলোই হলো বর্তমান ইতালীতে আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু। তিনি প্রায়ই তথাকথিত এলজিবিটি লবি এর বিরুদ্ধে র‍্যালি করেন, সেই সাথে “আইডিওলজি অফ জেন্ডারের” বিরোধিতা করেন। কিন্তু এখানে তার পলিসি প্লাটফর্মটা অনেকটাই দুর্বল, হয়তো পপুলিস্ট সাপোর্টের জন্য এসব বলেন, কেননা এফডিএল ইতালীতে সেইম সেক্স সিভিল ইউনিয়নকে মেইন্টেইন করার কথা বলেছেন, এবং একই সাথে তিনি ইতালির এক্সিস্টিং এবরশন আইনও পরিবর্তন করতে চাননা। একইভাবে, মেলোনি ও এফডিএল স্পষ্টতই ইউরোস্কেপ্টিক। তারা অয় ইইউ ত্যাগ করতে চায়, নাহয় কারেন্সি হিসেবে ইউরোকে ত্যাগ করতে চায়। তবে অন্যান্য রাইট উইং দলের সাথে মেলোনি ও এফডিএল এর পার্থক্য হচ্ছে এই দলটি রাশিয়া-ইউক্রেইনের যুদ্ধে নাক গলানোর পক্ষপাতী, তিনি ইউক্রেইনকে বেশি করে সাপোর্ট দিতে চান, এবং দেশটিতে আর্ম শিপমেন্ট পাঠাতে চান। তবে তার সবকটা সোশ্যাল পলিসির মধ্যে সবচেয়ে কন্ট্রোভারশালটি হলো, তিনি নর্থ আফ্রিকান কোস্টের বেশ কিছু অংশে নেভাল ব্লকেড দেয়ার প্রস্তাব করছেন। কিন্তু এখানে বেশ কিছু অস্পষ্টতা রয়েছে। প্রথমত, কিভাবে তা ইমপোজ করা হবে তা অস্পষ্ট, দ্বিতীয়ত, ইইউ এর বর্ডার কন্ট্রোল এজেন্সি ফ্রন্টেক্স যে ইতিমধ্যেই সেখানে একরকম ব্লকেড মেইন্টেইন করে তার চেয়ে এটা বেশি সফল হবে কিনা তা অস্পষ্ট।

তো এখন প্রশ্ন হচ্ছে ইতালীতে এই এফডিএল এর ভবিষ্যৎ কী হবে? আর ইতালিরই বা ভবিষ্যৎ কী হবে। এখনও তা বলার সময় আসেনি। ইতিহাস বলছে, ইতালীতে সেখানে যেকোন রিফর্মকে প্রমিস করা সহজ, কিন্তু তা বাস্তবায়ন করা কঠিন। অনেক পলিটিশিয়ানই রিফর্মের প্রচেষ্টা নিয়েছিলেন কিন্তু কেউই সাফল্য পায়নি। ১৯৯০ এর দশকের প্রথম দিকে পোস্ট-ওয়ার পলিটিকাল সিস্টেমের কলাপ্সের পর থেকে কোন পার্টি বা অ্যালায়েন্সই ইতালীতে রিইলেক্টেড হতে পারেনি, অর্থাৎ কোন পার্টি বা অ্যালায়েন্সই তাদের শাসনামলে জনগণকে সেভাবে সন্তুষ্ট করতে পারেনি যার ফলে তারা আবার তাদেরকে নির্বাচনে জিতিয়ে আনবে। আবার দেখা যায় ইতালীয় সরকারগুলো গড়ে ক্ষমতায় থাকার কাল মাত্র ২০ মাস। তবে এর মানে এই নয় যে এফডিএল-ও একই লাইনে হাঁটবে। কেবল এটুকুই বলার যে, ইতালিতে এফডিএল এর উত্থানও একটা কমন প্যাটার্ন অনুসারেই হয়েছে, যে প্যাটার্নের ভবিষ্যৎ ইতালীয় পলিটিক্সে খুব একটা ভালর দিকে যায়না।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.