স্রুবনায়া কালচার ও সিমেরিয়ান জাতি

স্রুবনায়া কালচার (১৮৫০-১৪৫০ খ্রি.পূ.)

সিমেরিয়ানদের নিয়ে আলোচনা শুরু করার পূর্বে সিমেরিয়ানদের কালচারের পূর্বপুরুষ কালচার স্রুবনায়া কালচার নিয়ে আলোচনা করে আসতে হবে। স্রুবনায়া সংস্কৃতি (Srubnaya culture) টিম্বার-গ্রেইভ কালচার (Timber-grave culture) নামেও পরিচিত। এটি একটি লেইট ব্রোঞ্জ কালচার যা খ্রিস্টপূর্ব ১৮৫০-১৪৫০ অব্দ পর্যন্ত পন্টিক-কাস্পিয়ান স্তেপের পূর্বাঞ্চলীয় অংশে বর্তমান ছিল। এই কালচারটি কোন কালচার থেকে এলো তা জানতে হলে একটু পেছন দিকে যেতে হবে। পন্টিক-কাস্পিয়ান স্তেপ জুড়ে ৩৩০০-২৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ছিল ইয়াম্নায়া কালচার। যেখান থেকে ইন্দো-ইউরোপীয়রা বিভিন্ন অঞ্চলে অভিপ্রায়ণ করে। এই ইয়াম্নায়া কালচারের উত্তরাঞ্চলীয় উত্তরসুরি ছিল কর্ডেড অয়ার কালচার (২৯০০-২৩৫০ খ্রি.পূ.), পূর্বাঞ্চলীয় উত্তরসুরি ছিল পলতাভকা কালচার (২৫০০-২১০০ খ্রি.পূ.), ও পশ্চিমাঞ্চলীয় উত্তরসুরি ছিল ক্যাটাকম্ব কালচার (২৫০০-১৯৫০ খ্রি.পূ.)। পলতাভকা কালচার ও ক্যাটাকম্ব কালচার প্রতিবেশী কালচার ছিল। পূর্বে যে পন্টিক-কাস্পিয়ান স্তেপে ইয়াম্নায়া কালচার বিস্তৃত ছিল সেখানেই ক্যাটাকম্ব কালচার বিস্তৃত হয়, আর পলতাভকা কালচার বিকশিত হয় তার পূর্ব দিকের ভোলগা-ইউরাল স্তেপ ও ফরেস্ট স্তেপে। এই দুটো কালচার থেকে পরবর্তীতে বিকশিত হয় মিডল ভোলগা ও আপার ডনের ফরেস্ট স্তেপ এলাকায় আবাশেভো কালচার (২৩০০-১৮৫০ খ্রি.পূ.), মিডল ভোলগার আরেক কালচার পতাপভকা কালচার (২৫০০-২০০০ খ্রি.পূ.) ও এদের দক্ষিণে নিপার ইউক্রেইন, রাইট ব্যাংক ইউক্রেইন সহ ডন নদী থেকে বর্তমান মলদাভিয়া অঞ্চল পর্যন্ত মাল্টি-করডনড অয়ার কালচার (২২০০-১৮০০ খ্রি.পূ.)। এই তিন কালচারের মধ্যে আবাশেভো ও পতাপভকা কালচার প্রি ইন্দো-ইরানীয় বা প্রোটো-ইন্দো-ইরানীয় ছিল, ও মাল্টি করডোনড অয়ার কালচার থ্রেসীয় বা ফ্রিজীয় ছিল বলা হয়। যাই হোক, এই তিন কালচারের উত্তর উরি হিসেবে আবাশেভো অঞ্চলের দক্ষিণে পন্টিক-কাস্পিয়ান স্তেপে, অর্থাৎ কৃষ্ণ সাগর, ককেশাস পর্বতমালা ও কাস্পিয়ান সাগরের উত্তরে জন্ম নেয় স্রুবনায়া কালচার (১৮৫০-১৪৫০ খ্রি.পূ.)। এরাও ইন্দো-ইরানীয় ছিল এমন দাবি আছে। শুধু স্রুবনায়া নয়, সিনতাশতা ও অ্যান্দ্রোনোভো কালচারের গঠনেও আবাশেভো ও পলতাভকা কালচারের ভূমিকা ছিল। আর সেই সিনতাশতা ও অ্যান্দ্রোনোভো কালচারকেও ইন্দো-ইরানীয় ভাষার সাথে সম্পর্কিত করা হয়।

যাই হোক, আমাদের আলোচ্য বিষয় স্রুবনায়া কালচার। এই কালচারটি এর পূর্বাঞ্চলীয় প্রতিবেশী অ্যান্দ্রোনোভো কালচারের (২০০০-১৪৫০ খ্রি.পূ.) এর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত ছিল। এই স্রুবনায়া কালচার আসলে এর অঞ্চলের পূর্বে, না পশ্চিমে উদ্ভুত হয়ে পন্টিক কাস্পিয়ান অঞ্চলে এসেছে, নাকি ঠিক ওই অঞ্চলেই গঠিত হয়েছিল, তা নিয়ে প্রত্নতাত্ত্বিকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। সাধারণত এই কালচারটিকে আর্কাইক ইরানীয় ভাষাভাষীদের সাথে সম্পর্কিত করা হয়। এই কালচারের নামকরণ হয়েছে রুশ শব্দ “স্রুব” (Srub) থেকে, যার অর্থ টিম্বার ফ্রেমওয়ার্ক বা কাঠের কাঠামো। তাদের সমাধি কাঠের কাঠামো দ্বারা নির্মিত হতো বলে এই নাম দেয়া হয়েছে। যেটা বলা হলো, এই কালচারটির অঞ্চল ছিল কৃষ্ণসাগরের উত্তর উপকূলের উত্তরে, নিপারের পূর্ব দিকে ককেশাসের নর্দার্ন বেজ হয়ে একেবারে কাশপিয়ান সাগরের উত্তর উপকূল পর্যন্ত, যার পূর্বেই রয়েছে ইউরাল পর্বতমালা। এরা তাদের বিউরিয়াল পিট বা সমাধিগর্তে কাঠের কাঠামো ব্যবহার করত বলেই তাদের এই নাম। এদে সমাধিস্থল বা সেমেটারিগুলোতে ৫ থেকে ১০টি করে কুরগান পাওয়া যায়। সমাধিগুলোতে মানুষের সাথে বিভিন্ন প্রাণীর খুলি ও হাত-পা এর ফসিলও পাওয়া গেছে, সেই সাথে রিচুয়াল হার্থ বা আখা পাওয়া যায়। প্রায়শই পাথরের সিস্ট দেয়া হতো সমাধিতে। স্রুবনায়া বাড়িগুলো ছিল সেমি-সাবটেরানিয়ান, অর্থাৎ এরা পূর্ণ বসতিস্থাপনকারী গোষ্ঠী ছিলনা, বাসা পরিবর্তন করত। আর বাড়িগুলোতে দুটো করে ঘর ছিল। স্রুবনায়া প্রত্নস্থলগুলোতে ব্রোঞ্জের সিকল, চূর্ণকরণ পাথর, গৃহপালিত গবাদি পশু, ভেড়া, শূকর পাওয়া গেছে, যা নির্দেশ করে যে স্রুবনায়া কালচার একই সাথে কৃষিভিত্তিক ও পশুপালনভিত্তিক সংস্কৃতি ছিল। এই অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় ইরানিয়ান হাইড্রোনিম পাওয়া যায়, এখান থেকে এদের ভাষা ইন্দো-ইরানীয় ছিল বলে মনে করা হয়। তাছাড়া এদের পূর্বপুরুষ কালচারকেও প্রি বা প্রোটো-ইন্দো-ইরানীয় বলে চিহ্নিত করা হয়।

এই কালচারের লোকেদের দৈহিক অবশেষ থেকে জানা যায় এরা দেহ ছিল মেসিভলি বিল্ট ইউরোপয়েড, আর এদের মস্তক বা খুলি হলো ডোলিকোসেফালিক বা লম্বা। (মাথার এক পাশ থেকে আরেক পাশের দূরত্ব হলো বাইপ্যারাইটাল ডায়ামিটার, কপাল থেকে মাথার পেছনের দূরত্ব হলো অক্সিপিটোফ্রন্টাল ডায়ামিটার। এই দুই এর অনুপাত করে ১০০ দিয়ে গুণ দিলে সেফালিক ইনডেক্স বের হয়। এটি ৭৫-৭৬ (নারী-পুরুষ) এর নিচে থাকলে খুলি ডোলিকোসেফালিক, সেটার উপরে কিন্তু ৮৩-৮১ এর নিচে থাকলে খুলি মেসাটিসেফালিক, আর সেটার উপরে থাকলে ব্রাকিসেফালিক।) স্রুবনায়ার প্রাথমিক দশা পোক্রোভস্কি এর খুলিগুলো পূর্ণাঙ্গভাবে ডোলিকোসেফালিক, যেগুলো পূর্ববর্তী ফাতিয়ানোভো-বালানোভো কালচার, আবাশেভো কালচার ও সিনতাশতা কালচারের মত, সেই সাথে সমসাময়িক অ্যান্দ্রোনোভো কালচারের পশ্চিমাঞ্চলীয় লোকেদের মত। তবে পতাপভকা কালচারের লোকেদের খুলি এদের তুলনায় কম ডোলিকোসেফালিক। দেখা যায়, স্রুবনায়া কালচার দক্ষিণাঞ্চলীয় স্তেপের দিকে সম্প্রসারিত হতে থাকলে এদের খুলি কম ডোলিকোসেফালিক হতে থাকে, সম্ভবত তা এদের দ্বারা পূর্ববর্তী ইয়াম্নায়া কালচার ও পলতাভকা কালচারের উপাদানগুলো গ্রহণ করার ফলে হয়েছিল। অবশ্য পরবর্তী পর্যায়গুলোতে স্রুবনায়া কালচারের লোকেদের মধ্যে ডোলিকোসেফালি বৃদ্ধি পায়। স্রুবনায়ার লোকেদের শারীরিক গঠন সিথিয়ানদের সাথে অনেকটাই মিলে যায় বলে আগে মনে করা হতো সিথিয়ানরা স্রুবনায়া কালচারের লোকেদের উত্তরসুরি।

২০১৫ সালের ১০ অক্টোবরে প্রকাশিত একটি গবেষনায় স্রুবনায়া কালচারের ১৪টি অবশেষ নিয়ে সার্ভে করা হয়। এদের মধ্যে ৬ জন ছিল পুরুষ যাদের y-DNA হ্যাপ্লোগ্রুপ হলো R1a1. ১৪ জনের শরীর থেকে mtDNA নিয়ে দেখা যায়, ৫ জনের হ্যাপ্লোগ্রুপ H, চারজনের U5, দুজনের T1, আর T2, K1b, J2b ও I1a একজনের করে। ২০১৭ সালের একটি জেনেটিক স্টাডিতে দেখা যায়, সিথিয়ানদের মাইটোকন্ড্রিয়াল লিনিয়েজ স্রুবনায়াদের মতই, যার ফলে গবেষকগণ সিথিয়ানদেরকে স্রুবনায়াদের উত্তরসুরি হিসেবে চিহ্নিত করেন। ২০১৮ সালে একটি স্টাডিতে প্রথম দিকের স্রুবনায়া কালচার ও পরবর্তী সিথিয়ান কালচারগুলোর জনগোষ্ঠী নিয়ে (যাদের মধ্যে সিমেরিয়ান, সিথিয়ান, সারমেশিয়ান ছিল) গবেষণা করা হয় (উল্লেখ্য সিথিয়ান কালচার বলা হলে সিমেরিয়ান, সারমেশিয়ান, মাসাগেটি, শক প্রভৃতি জাতিকেও অন্তর্ভূক্ত করতে হবে, সেক্ষেত্রে সিথিয়ানদেরকে সিথিয়ান প্রোপার বলা হয়। এই জাতিগুলোর সাংস্কৃতিক সাদৃশ্যের জন্য এদের সকলকে মিলে সিথিয়ান কালচার বলা হয়)। স্রুবনায়া কালচারের দুটো প্রত্নস্থনের ৬ জন পুরুষ অবশেষকে বিশ্লেষণ করা হয়, এদের সকলের মধ্যে হ্যাপ্লোগ্রুপ R1a1a1 পাওয়া যায়। সিমেরিয়ান, সারমেশিয়ান ও সিথিয়ান পুরুষদের বেশিরভাগের মধ্যেই হ্যাপ্লোগ্রুপ R1b1a1a2 পাওয়া যায়, যদিও একজন সারমেশিয়ান পুরুষের মধ্যে হ্যাপ্লোগ্রুপ R1a1a1 পাওয়া যায়। গবেষণার লেখকগণ প্রস্তাব করেন, সিথিয়ানরা স্রুবনায়ার উত্তরসুরি নয়, বরং স্রুবনায়া ও সিথিয়ান কালচারের জাতিগুলো সবাওই ইয়াম্নায়া কালচার থেকে উদ্ভুত। ২০১৮ সালে প্রকাশিত একটি জেনেটিক স্টাডিতে স্রুবনা কালচারের ১২টি মানব অবশেষকে বিশ্লেষণ করা হয়। এদের ৬ জনের yDNA বের করে দেখা যায় এদের ৩ জনের হ্যাপ্লোগ্রুপ R1a1a1b2 বা এর বিভিন্ন সাবক্লেডের, একটি R1, একটি R1a1 ও একটি R1a1a এর। mtDNA এর ক্ষেত্রে ৫ জন U এর সাবক্লেডগুলোর, ৫ জন H এর সাবক্লেডগুলোর, ও দুজন T এর সাবক্লেডগুলোর। স্রুবনা কালচারের লোকেদের সাথে কর্ডেড অয়ার কালচার, সিনতাশতা কালচার, পতাপভকা কালচার ও অ্যান্দ্রোনোভো কালচারের লোকেদের জেনেটিক্সের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক পাওয়া যায়। এদের লোকেদের মধ্যে ইয়াম্নায়া পূর্বপুরুষত্ব ও মধ্য ইউরোপীয় মিডল নিওলিথিক পূর্বপুরুষত্বের মিশ্রণ পাওয়া যায়। এই জেনেটিক ডেটা নির্দেশ করে, এই কালচারগুলো স্তেপ অঞ্চলে মধ্য ইউরোপীয় জনগোষ্ঠীর পুনরাভিপ্রায়ণের ফলে তাদের ও স্তেপের লোকেদের মিশ্রণের ফলে সৃষ্টি হয়েছে।

স্রুবনায়া কালচারের উত্তরসুরি সংস্কৃতিসমূহ এবং সিমেরিয়ান সম্পর্ক 

সিমেরিয়ানদের উদ্ভবের বিষয়টি খ্রিস্টপূর্ব ১২শ থেকে ১০ম শতকের বেলোজারস্কায়া কালচার, এবং পরবর্তী ও অধিকতর নিশ্চিতভাবে দানিউব ও ভোলগা নদীর মধ্যবর্তী স্থানে খ্রিস্টপূর্ব ১০ম থেকে ৭ম শতকের নোভোচেরকাস্ক কালচারের সাথে সম্পর্কিত।

বেলোজারস্কায়া কালচার (খ্রিস্টপূর্ব ১২শ-১০ম শতক) : ১৪৫০ সালের দিকে স্রুবনায়া কালচারের অবসান ঘটে। এরপর পন্টিক কাস্পিয়ান স্তেপ অঞ্চলে বেলোজারস্কায়া কালচার, বন্ডারিখিনস্কায়া কালচার প্রভৃতি দেখা যায়। বেলোজারস্কায়া কালচার (Belozerskaya culture) ছিল লেটার ব্রোঞ্জ এইজের একটি আর্কিওলজিকাল কালচার যা খ্রিস্টপূর্ব ১২শ থেকে ১০ম শতক পর্যন্ত বর্তমান ছিল, এবং ইউক্রেইন ও মলদোভার স্তেপ থেকে স্রুবনায়া কালচারকে প্রতিস্থাপিত করে। লোয়ার ডন, কুবান ও ক্রিমিয়ায় এই কালচারের অবশেষ পাওয়া যায়। এদের বসতি, সমাধি, ধন-সম্পদ সহ বিভিন্ন বিষয় পাওয়া গেছে। এদের বসতিতে পিট হাউজ, সেমি-পিট হাউজ, এবং ফ্ল্যাট গ্রাউন্ডে স্টোন ফাউন্ডেশন সমেত বাড়ি পাওয়া গেছে, যেখানে সমাধিগুলো টুমুলি ও গ্রেইভ ফিল্ড টাইপ। মৃতদেহকে চতুষ্কোণ গর্তের ওপর কাঠের ফ্লোরে রেখে সমাহিত করা হতো, মৃতের পজিশন হতো ফিটাল পজিশন, অর্থাৎ মাতৃগর্ভে শিশুর অবস্থানের পজিশন, সাধারণত একপাশে শোয়া থাকত, মাথা থাকতো দক্ষিণের দিকে। সমাধিদ্রব্যগুলোর মধ্যে একটি কি দুটি কাঠের বর্তন থাকত, ধাতব বস্তু খুব কমই থাকত। এই কালচারটি ছিল সিমেরিয়ানদের কালচার, এবং পরে এটি বেলোগ্রুদভ কালচার ও আরও পরে সিথিয়ানদের দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়।

বনডারিখিনস্কায়া কালচার (খ্রিস্টপূর্ব ১১শ-৯ম শতক) : বনডারিখিনস্কায়া কালচার (Bondarikhinskaya culture) ছিল লেইট ব্রোঞ্জ যুগীয় আর্কিওলজিকাল কালচার যা খ্রিস্টপূর্ব ১১শ থেকে ৯ম শতক পর্যন্ত বর্তমান ছিল, এবং স্রুবনায়া কালচারকে প্রতিস্থাপিত করেছিল। নিপার নদীর পশ্চিম তীর থেকে আপার ও মিড সেভেরস্কি ডনেটস পর্যন্ত এই কালচারের অবশেষগুলো পাওয়া যায়, পূর্বে এটি ডন বেসিন ও মিড ওকা পর্যন্ত বিস্তৃত। এই কালচারে দুর্গকৃত ও দুর্গবিহীন বসতি পাওয়া গেছে, গ্রেইভ ফিল্ড, ট্রিজার ও অন্যান্য বিষয়ও পাওয়া গেছে। এরা পিট হাউজ, সেমি পিট হাউজ ও ফ্ল্যাট গ্রাউন্ডের উপর বাড়িতে বাস করত। সমাধিস্থলগুলো ছিল টুমুলি ভিত্তিক, এবং ফ্ল্যাট গ্রাউন্ড সমাধি, সেই সাথে মৃতদেহকে চুল্লি বা ক্ষুদ্র গর্তে দাহও করা হতো। এই কালচারের পর এখানে ইউখনোভস্কায়া কালচার ও গোরোডেটস কালচার আসে।

চেরনোগোরিভকা ও নোভোচেরকাস্ক কালচার (৯০০-৬৫০ খ্রি.পূ.) : চেরনোগোরিভকা ও নোভোচেরকাস্ক কালচার (Chernogorivka and Novocherkassk cultures) ছিল ইউক্রেইন ও রাশিয়ার খ্রিস্টপূর্ব ৯০০ থেকে ৬৫০ অব্দের লৌহযুগীয় স্তেপ কালচার, যা প্রুট ও লোয়ার ডনের মধ্যে অবস্থিত ছিল। তারা প্রাক-সিথিয়ান কালচার ছিল যাদেরকে সিমেরিয়ান জাতির সাথে সম্পর্কিত করা হয়। ১৯৭১ সালে লোয়ার নিপার রিভার বেসিনে ভিসোকাজা মোগিলা কুরগান (সমাধি) আবিষ্কৃত হয়, যেগুলোকে পরে সমাধি নং ২ ও ৫ হিসেবে চিহ্নিত করাহয়। এর মধ্যে সমাধি নং ৫ ছিল লেইট চেরনোগোরিভকা পিরিয়ডের (৯০০-৭৫০ খ্রি.পূ.) ও সমাধি নং ৫ ছিল নবীনতর নোভোচেরকাস্ক পিরিয়ডের (৭৫০-৬৫০ খ্রি.পূ.)। নোভোচেরকাস্ক কালচার দানিউব ও ভোলগার মধ্যবর্তী বিশাল অঞ্চল জুড়ে সম্প্রসারিত হয়, এবং এটি ইস্টার্ন ইউরোপিয়ান থ্রেকো-সিমেরিয়ান আর্টিফ্যাক্টের সাথে সম্পর্কিত। সিমেরিয়ানদের উদ্ভবের বিষয়টি খ্রিস্টপূর্ব ১২শ থেকে ১০ম শতকের বেলোজারস্কায়া কালচার, এবং পরবর্তী ও অধিকতর নিশ্চিতভাবে দানিউব ও ভোলগা নদীর মধ্যবর্তী স্থানে খ্রিস্টপূর্ব ১০ম থেকে ৭ম শতকের নোভোচেরকাস্ক কালচারের সাথে সম্পর্কিত।

কোবান কালচার : কোবান কালচার স্রুবনায়া কালচার থেকে আসেনি, তবুও সিমেরিয়ানদের সাথে এই কালচারের সম্পর্ক আছে বলে এই কালচার সম্পর্কে তুলে ধরা হচ্ছে।

কোবান কালচার (Koban culture) ছিল খ্রিস্টপূর্ব ১১০০ থেকে ৪০০ অব্দের লেইট ব্রোঞ্জ কালচার ও আয়রন এইজ কালচার যা নর্দার্ন ও সেন্ট্রাল ককেশাসে অবস্থিত ছিল। এটির পূর্বে এই অঞ্চলে ছিল ওয়েস্টার্ন ককেশাসের কলচিয়ান কালচার (৭০০০ – ৬০০ খ্রি.পূ.) ও আরও পূর্বের কারাচই কালচার (খ্রিস্টপূর্ব ১০ম শতক)। এর নামকরণ করা হয়েছে নর্দার্ন ওসেটিয়ার কোবান গ্রামের নামে, যেখানে ১৮৬৯ সালে আবিষ্কৃত সমাধি বা কুরগানে যুদ্ধ-কুঠার বা ব্যাটল-এক্স, ড্যাগার টাইপ ছোড়া, বিভিন্ন সজ্জার আইটেম ও অন্যান্য বস্তু আবিষ্কৃত হয়। পরবর্তিতে সেন্ট্রাল ককেশাসে এর আরও সাইট আবিষ্কৃত হয়। গ্রেট ককেশাস রেঞ্জের উভয় দিকেই এই কালচারটির বিকাশ ঘটে, এবং কাবারদিনো-বাল্কারিয়া, কারাচাই-চেরকেসিয়া, নর্থ ওসেটিয়া-আলানিয়া ও ত্‌শিনভালি অঞ্চলের জর্জিয়ার সেন্ট্রাল রেজিয়নে এই কালচারের সম্প্রসারণ ঘটেছিল। এটি জর্জিয়ার উচ্চ নর্থ-ওয়েস্টার্ন অঞ্চলে যেমন রাচা ও স্‌ভেনেটিতে পৌঁছে যায়। উত্তর-পূর্ব ককেশাসের কোন কোন অঞ্চলে কোবান বসতি ছিল, বিশেষ করে আধুনিক ইনগুশেটিয়া ও চেচনিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে। উত্তরে এই কালচারটি তেরেক নদী পর্যন্ত ও ক্রাসনোদার অঞ্চলের লাবা নদী পর্যন্ত যায়। কোবান কালচারের প্রাথমিক পর্যায়, বিশেষ করে পশ্চিমে এটির প্রাথমিক পর্যায় শুরু হয় খ্রিস্টপূর্ব ১৩শ শতকে, যা সাম্প্রতিক রেডিওকার্বন ডেট থেকে জানা গেছে। বিচ্ছিন্ন সমাধিস্থল বাদ দিয়ে কোবান কালচারের বসতিসমূহ নিয়ে খুব একটা গবেষণা হয়নি, তবে আধুনিক চেচনিয়ার বিভিন্ন সাইট, যেমন সারঝেন ইউর্ত, বামুত ইত্যাদি প্রধান কেন্দ্রগুলো, যেগুলো খ্রিস্টপূর্ব ১১শ থেকে ৭ম শতক পর্যন্ত বর্তমান ছিল সেগুলো নিয়ে ভাল গবেষণা হয়েছে।

এই কালচারের অবশেষগুলোর মধ্যে এদের বাসস্থান, কোবল ব্রিজ, অল্টার, লৌহ বস্তু, হাড়, কাদামাটি ও পাথরের অবজেক্ট – এসব আছে। সিলক ও স্টোন গ্রেইন গ্রাইন্ডার পাওয়া গেছে। শস্যের মধ্যে এরা গম, রাই, বার্লি উৎপাদন করত। পশুর মধ্যে গবাদি পশু, ভেড়া, ছাগল, গাধা, শূকর, ঘোড়া পালন করত। তাদের দোকান পাটও ছিল, সেখানে আর্টিসানরা কাজ করত, মৃৎশিল্প, স্টোন-কাস্টিং, বোন-কার্ভিং ও স্টোন-কার্ভিং বিক্রি করত। উন্নত স্টেইজের মেটালার্জির প্রমাণও পাওয়া গেছে। বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে প্রোফেশনাল অরগানাইজেশনের মধ্যে পার্থক্য ছিল। ট্‌লি সমাধিস্থলে (Tli cemetery) প্রচুর সমাধি পাওয়া গেছে। এটি দক্ষিণ ওসেটিয়ার ট্‌লি গ্রামের পাশে অবস্থিত। এর প্রাথমি সমাধিগুলো ছিল খ্রিস্টপূর্ব ১৬শ থেকে ১৪শ শতকের, মানে প্রাক-কোবান কালের। এই সমাধিটিকে পরে প্রায় কোবান পিরিয়ডের পুরোটা সময় জুড়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

আমজাদ জাইমোউখা (Amjad Jaimoukha) মনে করেন, কোবান কালচার প্রাথমিকভাবে নাখ (Nakh) জাতির ছিল। তিনি দাবি করেন, এই কালচার সম্ভবত বর্তমান নর্দার্ন ককেশিয়ান নাখদের (অর্থাৎ চেচেন ও ইংগুইশ) জিনতাত্ত্বিক পূর্বপুরুষদের কালচার ছিল। হয় কোবান, নয় খারাচই ছিল আজকের চেচেনদের ভাষাতাত্ত্বিক পূর্বপুরুষ, অর্থাৎ চেচেনদের উদ্ভব হয়েছে তাদের মাতৃভূমিতে ৩ থেকে ৪ হাজার বছর পূর্বে। জাইমোউখা প্রস্তাব করেন, সিথিয়ান আক্রমণের ফলে কোবান কালচারের সমাপ্তি ঘটে। জোহানা নিকোলস লিখেছেন, “সেন্ট্রাল দাঘেস্তানে শেষ ৮ হাজার বছর জুড়ে একটি অবিচল প্রত্নতাত্ত্বিক ধারাবাহিকতা দেখা যায়, যা নির্দেশ করে, নাখ-দাঘেস্তানিয়ান ভাষা-পরিবার ধীর্ঘদিন ধরেই এইখানকার আদিবাসী।” ২০২০ সালে ক্লিন-ইয়ার সম্প্রদায় ও কোবান কালচারের মানব-অবশেষের জিন নিয়ে জেনেটিক অ্যানালাইসিস করা হয়। গবেষণায় দেখা যায় একটি স্যাম্পল পিতৃহ্যাপ্লোগ্রুপ D-Z27276 এর, যা আধুনিক তিবেতান জনগোষ্ঠীর সাথে সম্পর্কিত। অন্যান্য পিতৃ-হ্যাপ্লোগ্রুপগুলো ছিল J1 এবং G-M285.

থ্রেকো-সিমেরিয়ান : থ্রেকো-সিমেরিয়ান (Thraco-Cimmerian) হলো একটি হিস্টোরিওগ্রাফিকাল ও আর্কিওলজিকাল টার্ম। আর দেখেই বোঝা যায়, শব্দটি থ্রেসিয়ান ও সিমেরিয়ান নিয়ে গঠিত। এই শব্দটি খ্রিস্টপূর্ব ৮ম থেকে ৭ম শতকের আর্কিওলজিকাল কালচার নির্দেশ করে যা পূর্ব-মধ্য ইউরোপ ও কৃষ্ণসাগরের পশ্চিমাঞ্চলের সাথে সম্পর্কিত। ১৯২৫ সালে পল রেইনেকে প্রস্তাব করেন, নর্থ-থ্রেসিয়ান-সিমেরিয়ান সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলটি ইস্টার্ন আল্পসের নবীনতর হলস্ট্যাট কালচারের (১২০০-৫০০ খ্রি.পূ., কেল্টিকভাষী) সাথে ওভারল্যাপ করে। ১৯৩০ এর দশকে রোমানিয়ান আর্কিওলজিস্ট ও হিস্টোরিয়ান আয়ন নেস্টর এই থ্রেকো-সিমেরিয়ান শব্দটির প্রথম সূচনা করেন। তিনি প্রস্তাব করেছিলেন যে পূর্ববর্তী স্রুবনা কালচারের এলাকা থেকে সিথিয়ান সম্প্রসারণের কারণে সিমেরিয়ানরা ইউরোপীয় লৌহযুগের শুরুর দিকে পশ্চিম দিকে সরে আসে। এই সিমেরিয়ান আক্রমণের ফলেই ম্যাচিওর হলস্ট্যাট কালচার (হলস্ট্যাট সি) এর বিকাশ ঘটে। ১৯৮০ এর দশক পর্যন্ত এই ধারণাটি পণ্ডিতদের মধ্যে বেশ প্রচলিত ছিল। কিন্তু ৮০ ও ৯০ এর দশকে অধিকতর সিস্টেমেটিক স্টাডির মাধ্যমে দেখা যায়, এখানে আসলে কোন সিমেরিয়ান আক্রমণ ঘটেনি, বরং খ্রিস্টপূর্ব ৯ম থেকে ৭ম শতকে তুলনামূল ধীর বিকাশ ঘটে। এর ফলে পূর্বে যে অর্থে “থ্রেকো-সিমেরিয়ান” শব্দটি ব্যবহার করা হতো, এখন সেই অর্থে আর ব্যবহার করা হয়না, এবং এটির সাথে বর্তমানে থ্রেসিয়ান বা সিমেরিয়ানদের কোন প্রত্যক্ষ সম্পর্কও নেই। প্রত্নতাত্ত্বিকভাবে থ্রেকো-সিমেরিয়ান আর্টিফ্যাক্টগুলোর মধ্যে সমাধিদ্রব্য ও হোর্ডসমূহ আছে। এগুলো সব আপার ক্লাস, লাক্সারি অবজেক্টের অংশ, যেমন অস্ত্র, হর্স ট্যাক্স, গহনা, আর সেই সময়ের ক্ষুব কম সংখ্যক সমাধিতেই এগুলো পাওয়া যায়। এরা সাধারণত ব্রোঞ্জ আইটেম, বিশেষ করে ঘোড়ার ট্যাকগুলো, যেগুলো লেইট আর্নফিল্ড কালচারাল কনটেক্সটে পাওয়া যায়। ককেশাস ও নর্দার্ন জর্জিয়ার কোবান কালচার থেকে এগুলো ছড়িয়ে গিয়েছিল। এই কোবান কালচার ও স্রুবনায়া কালচার খ্রিস্টপূর্ব ৯ম ও ৭ম শতকে প্রাক-সিথিয়ান চেরনোগোরোভকা ও নোভোচেরকাস্ক কালচারে মিশে যায়। খ্রিস্টপুর্ব ৭ম শতকে থ্রেকো-সিমেরিয়ান অবজেক্টগুলো ইস্টার্ন ও সেন্ট্রাল ইউরোপে আরও ছড়িয়ে যায়। উত্তরে এগুলো ডেনআর্ক ও ইস্টার্ন প্রুশিয়া অব্দি, এবং পশ্চিমে লেইক জুরিখ অব্দি পৌঁছে যায়। এই ব্রোঞ্জ আর্টিফ্যাক্টগুলোর সাথেই সেখানকার সর্বপ্রাচীন আয়রন আর্টিফ্যাক্টগুলোর আগমন ঘটে, যা ইউরোপে লৌহ যুগ নিয়ে আসে। আর এটাই হলস্ট্যাট কালচারের প্রোটো-কেল্টিক সম্প্রসারণকে চিহ্নিত করে।

এই প্রত্নতাত্ত্বিক সংস্কৃতির আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি যে, খ্রিস্টপূর্ব ১৪৫০ অব্দে স্রুবনায়া কালচারের অবসান ঘটে, এরপর খ্রিস্টপূর্ব ১২শ থেকে ১০ম শতকে তার উত্তরসুরি হিসেবে পন্টিক-কাস্পিয়ান স্তেপে বোলজারস্কায়া কালচার বর্তমান ছিল, যা ছিল সিমেরিয়ান কালচার, বা যা সিমেরিয়ান জাতি গঠন করেছিল। এরপর এদের ওপর কোবান কালচারের প্রভাব আসে, এবং এরা সেই প্রভাব সহ চেরনোগোরিভকা ও নোভোচেরকাস্ক কালচার গঠন করে, যা ৯০০ থেকে ৬৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত বর্তমান ছিল। এরাও সিমেরিয়ানই। অর্থাৎ সিমেরিয়ানরা খ্রিস্টপূর্ব ১২শ শতক থেকে ৬৫০ সাল পর্যন্ত পন্টিক-কাস্পিয়ান স্তেপে অবস্থান করে। এরপর সিথিয়ানরা পন্টিক কাস্পিয়ান স্তেপে এসে এদেরকে বিতাড়িত করে।

সিমেরিয়ান

ভূমিকা

সিথিয়ানদের আগমনের পূর্বে ও স্রুবনায়াদের পর পন্টিক কাস্পিয়ান স্তেপে সিমেরিয়ানদের কালচারের কথা দেখা যাচ্ছে। এদের সম্পর্কেও কিছু আলোচনা করা যাক। সিমেরিয়ানরা ছিল যাযাবর ইন্দো-ইউরোপীয় জনগোষ্ঠী, যাদের আগমন হয় খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ অব্দের দিকে পন্টিক-কাস্পিয়ান স্তেপে। এরা এরপর সেখান থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া ও মধ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপে অভিপ্রায়ণ করে। সিমেরিয়ানদেরকে সমসাময়িককালের অনেকেই সাংস্কৃতিকভাবে সিথিয়ান বলে দাবি করেন, তবে তারা নৃতাত্ত্বিকভাবে সিথিয়ান প্রোপারদের থেকে আলাদা, যারা পরবর্তীতে স্থিথিয়ানদেরকে তাদের অঞ্চল থেকে সরিয়ে দিয়েছিল, বা সিথিয়ানদেরকে প্রতিস্থাপিত করেছিল। সিমেরিয়ানরা কোন লিখিত রেকর্ড রেখে যায়নি, তাদের বেশিরভাগ তথ্যই খ্রিস্টপূর্ব ৮ম ও ৭ম শতকের আসিরিয়ান নথিগুলো থেকে ও খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতক ও পরবর্তী কালের গ্রিকো-রোমান নথিগুলো থেকে পাওয়া যায়। সিমেরিয়ান নামটির উদ্ভব অনিশ্চিত। ভাষাতাত্ত্বিক জানোস হারমাট্টার মতে শব্দটি ওল্ড ইরানিয়ান *Gayamira থেকে এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে “ক্ল্যান বা গোষ্ঠীসমূহের সমষ্টি”। আবার সেরগেই তখতাশিয়েভ ও ইগর দিয়াকোনফ বলেন, শব্দটি ওল্ড ইরানিয়ান *Gāmīra বা *Gmīra থেকে এসেছে যার অর্থ “mobile unit” বা “সচল দল”। আস্কল্ড ইভান্তচিক বলেন নামটির অরিজিনাল ফর্ম হচ্ছে *Gimĕr- বা *Gimĭr- যার অর্থ অনিশ্চিত।

উদ্ভব

সিমেরিয়ানরা খুব সম্ভবত একটি যাযাবর ইরানীয় বা ইউরেশীয় স্তেপ জনগোষ্ঠী ছিল। অন্যান্য প্রস্তাব হচ্ছে এরা সম্ভবত থ্রেসীয় ছিল, অথবা ইরানীয় শাসক শ্রেণী দ্বারা শাসিত থ্রেসীয় ছিল, বা থ্রেসীয়দের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত একটি পৃথক নৃগোষ্ঠী ছিল, বা মিওটিয়ান অরিজিনের জনগোষ্ঠী ছিল। তবে এদের থ্রেসীয় উদ্ভবের অনুকল্পকে সমালোচনা করে বলা হয়, স্ট্র্যাবো ভুল করে সিমেরিয়ান ও এদের ট্রেরেস অঞ্চলের থ্রেসীয় উপজাতীয় মিত্রদেরকে গুলিয়ে ফেলে এদের থ্রেসীয় অরিজিনের কথা বলেছিলেন। এদের কথা প্রথম জানা যায় খ্রিস্টপূর্ব ৮ম শতকের হোমারের ওডিসি থেকে। সেখানে উল্লেখ আছে, এরা ওশিনাসেরও দূরে কোথাও থাকে, যেখানে কখনও সূর্যের আলো পৌঁছয় না, এবং তা পৃথিবীর প্রান্তে এবং হেডিস বা নরকের প্রবেশদ্বারে অবস্থিত। খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকে এরিস্টিয়াস অফ প্রোকনিয়াস (Aristeas of Proconnesus) বলেন, সিমেরিয়ানরা একদা পন্টিক কাস্পিয়ান স্তেপে বাস করত। হেরোডোটাসের মতে, সিমেরিয়ানরা খ্রিস্টপূর্ব ৮ম ও ৭ম শতকে ককেশাস ও কৃষ্ণসাগরের উত্তরে বাস করত, যেখানে বর্তমান ইউক্রেইন ও রাশিয়ার অবস্থান। হেরোডোটাসের মতে সিমেরিয়ানদের সামাজিক কাঠামো দুটো দল নিয়ে গঠিত যেগুলোর সদস্য সংখ্যা মোটামুটি একই। এই দুটো দলের একটি হলো সিমেরিয়ান প্রোপার বা কমোনার বা সাধারণ জনতা, আরেকটি হলো রাজাগণ বা রাজকীয় জাতি। সুলিমিরস্কি ও টেইলর তাদের ১৯৯১ সালের একটি লেখায় নির্দেশ করেন যে, সিমেরিয়ানদের মধ্যে এই দুটো শ্রেণী বা বর্ণ (শাসক বর্ণ ও নিচু বর্ণ) এরা অন্তত খ্রিস্টপূর্ব ২য় সহস্রাব্দের শেষ থেকে অনুসরণ করে আসছে। উঁচু জাতির লোকেদের উদ্ভব ইরানীয়-ভাষী জনগোষ্ঠী যেমন সিথিয়ানদের থেকে, যারা ক্যাটাকম্ব কালচারের লোকেদেরকে নিচু জাতি বা কমোনার হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের ওপর শাসন জারি করেছে। এভাবে উদ্ভব সিমেরিয়ান কালচার আরও শক্তিশালীভাবে স্রুবনায়া কালচার (১৮৫০-১৪৫০ খ্রি.পূ.) এবং/অথবা বেলোজারস্কায়া কালচারের (খ্রিস্টপূর্ব ১২শ-১০ম শতক) সাথে সম্পর্কিত। পরবর্তীতে এটিকে দানিউব ও ভোলগা নদীর মধ্যবর্তী স্থানে খ্রিস্টপূর্ব ১০ম থেকে ৭ম শতকের নোভোচেরকাস্ক কালচারের সাথে সম্পর্কিত করা হয়, যেক্ষেত্রে এভিডেন্স ও নিশ্চয়তা আরও বেশি।

দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় সিমেরিয়ানরা

খ্রিস্টপূর্ব ৮ম ও ৭ম শতকে সিমেরিয়ানরা তাদের মূল এলাকা পন্টিক-কাস্পিয়ান স্তেপ থেকে বিতাড়িত হয় ও ইউরেশীয় স্তেপে যাযাবরদের উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সরে আসার কারণে তারা দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় অভিপ্রায়ণ করতে বাধ্য হয়। হেরোডোটাসের মতে এই অভিপ্রায়ণ শুরু হয় মাসাগেটিরা পশ্চিম দিকে সরে এসে সিথিয়ানদেরকে অক্সারতেস নদী (ও ভোলগাও) ক্রস করে পশ্চিমে সরে আসতে বাধ্য করে। এভাবে সিথিয়ানরা পন্টিক স্তেপে চলে এসে সিমেরিয়ানদের অঞ্চল দখল করে নেয়। সিথিয়ানদের চাপে পড়ার পরও সিমেরিয়ান অভিজাতগণ তাদের জমি ছেড়ে দিতে রাজি হয়নি। এর ফলে তারা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং একে অপরকে হত্যা করে, তাদেরকে টাইরাস নদীর পাশে একটি কুরগানে সমাহিত করা হয়। এরপর সাধারণ লোকেরা দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় অভিপ্রায়ণ করে। সিমেরিয়ানরা কৃষ্ণ সাগরের তীর বরাবর অভিপ্রায়ণ করে আনাতোলিয়া বা বর্তমান তুরস্ক অঞ্চলের এশিয়া মাইনোর অংশে পৌঁছয়। কিন্তু কৃষ্ণসাগরের পূর্ব উপকূলের পথটি ঘোড়া নিয়ে অভিপ্রায়ণের জন্য অনুকূল নয় বলে আধুনিক পণ্ডিতগণ বলেন, সিমেরিয়ানরা সেদিক দিয়ে না গিয়ে গ্রেটার ককেশাসের ক্লুখর, আলাগির ও দারিয়াল গিরিপথ ধরে গিয়েছিল, অর্থাৎ তারা ওয়েস্টার্ন ককেশাস ও জর্জিয়া হয়ে কলচিসে এসে প্রাথমিকভাবে বসতি স্থাপন করেছিল। সিথিয়ানরা তাদেরকে পুনরায় ধাওয়া করে, এরফলে তারা কাস্পিয়ানের তীর ধরে গিয়ে আজকের দিনের আজারবাইজানে চলে যায়। নিনেভে ও কালাহ এর রয়াল আর্কাইভে অস্টেন হেনরি লাইয়ার্ডের আবিষ্কারগুলোর মধ্যে সিমেরিয়ান আক্রমণ নিয়ে আসিরিয়ানদের প্রাথমিক নথিসমূহ রয়েছে। এই নথিগুলোতে লেখা হয়েছে সিমেরিয়ান আদিনিবাস ছিল গামির, যা কৃষ্ণসাগরের দক্ষিণে অবস্থিত, উত্তরে নয়।

দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় সিমেরিয়ানদের উপস্থিতির প্রাথমিক পর্যায়ে তাদের কার্যপরিচালনার কেন্দ্র ছিল ট্রান্সককেসিয়া, আর খ্রিস্টপূর্ব ৬৬০ এর দশক অব্দি তাদের চিত্তিভূমি সেটাই ছিল। সিমেরিয়ানদের প্রথম নথিভূক্ত দেখা যায় নব্য-আসিরীয় সাম্রাজ্যের নথিতে, যা ছিল খ্রিস্টপূর্ব ৭২০ থেকে ৭১৪ অব্দের সময়কালের মধ্যে। এই সময়ে আসিরিয়ান গোয়েন্দা বিভাগ রাজা দ্বিতীয় সারগনকে রিপোর্ট করে যে, উরার্তুর রাজা প্রথম রুসা সিমেরিয়ানদের উপর আক্রমণ করতে গিয়ে পরাজিত হয়েছেন। তিনি যে অঞ্চলে সিমেরিয়ানদের উপর আক্রমণ পরিচালনা করেছিলেন তা হয় বর্তমানের জর্জিয়ায়, না হয় পূর্বাঞ্চলীয় কাপ্পাদোশিয়ার গুরানিয়ায়। একই বছরে আরেকটি আসিরিয়ান গোয়েন্দাবিভাগের রিপোর্ট পাওয়া যায়, সেখানে বলা হয় যে, সিমেরিয়ানরা মানী রাজ্যের (kingdom of Mannae) অঞ্চল হয়ে এসে উরার্তু রাজ্যে আক্রমণ করেছে। ৭০৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সিমেরিয়ানরা নব্য-আসিরীয় সাম্রাজ্যের সীমানা অতিক্রম করার চেষ্টা করে, কিন্তু তারা দ্বিতীয় সারগনের কাছে পরাজিত হয়, যদিও যুদ্ধে দ্বিতীয় সারগন মারা যান। আসিরিয়া যখন এসারহাড্ডন রাজা ছিলেন (৬৮১-৬৬৯ খ্রি.পূ.) তখন সিমেরিয়ানরা ট্রান্সককেশিয়া থেকে আনাতোলিয়ায় অভিপ্রায়ণ করে, তবে সিমেরিয়ানদের একটি অংশ দ্বিতীয় সারগনের সময় থেকে মানী রাজ্যে থেকে গিয়েছিল। এভাবে সিমেরিয়ানদের মধ্যে ইস্টার্ন ও ওয়েস্টার্ন দুটো বিভাগ তৈরি হয়।

৬৭৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আলাদাভাবে মানী রাজ্যে অবস্থিত সিমেরিয়ানদের ইস্টার্ন গ্রুপকে চিহিত করা যায়, এরা ৬৭৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দের আসিরীয় আক্রমণের বিরুদ্ধে মানীদের মিত্র হিসেবে কাজ করে, আর এরপর থেকে ইস্টার্ন সিমেরিয়ানরা সবসময় আসিরিয়ার বিরুদ্ধে মানীর মিত্র ছিল। ৬৭৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ইস্টার্ন সিমেরিয়ানদের সম্পর্কে আসিরিয়ান নথিতে লেখা হয়, এই ইস্টার্ন সিমেরিয়ানরাই তাদের মিডিয়া থেকে নজরানা আদায়ের ক্ষেত্রে একটি সম্ভাব্য হুমকি। একই সময়ের আরেকটি আসিরীয় নথিতে উল্লেখ আছে যে, ইস্টার্ন সিমেরিয়ানরা সিথিয়ানদের সাথে মৈত্রী করে আসিরীয় অঙ্গরাজ্য পারসুমাশ বা পারসুয়া (পশ্চিম ইরানে), এবং বিট হাম্বানে হানা দিচ্ছে, এবং আসিরিয়ান সাম্রাজ্যের সাথে এর অধীনস্ত রাজ্য হুবিশকিয়ার মধ্যে যোগাযোগে বাধার সৃষ্টি করছে। ৬৭১ থেকে ৬৬৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে এল্লিপি ও মেডিস কাশতারিতির অধীনে সাফল্যের সাথে আসিরিয়ার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলে খ্রিস্টপূর্ব ৬৭০ এর দশকে ইস্টার্ন সিমেরিয়ানরা এল্লিপি ও মেডিসের সাথে মৈত্রীজোট করে।

গ্রেট ককেশাস এলাকার কোবান কালচার থেকে ওয়েস্টার্ন ইরানিয়ান মালভূমিতে ব্রোঞ্জ এনে ইস্টার্ন সিমেরিয়ানরাই সেখানে লুরিস্তান ব্রোঞ্জ কালচারের সূচনা করে থাকতে পারে। খ্রিস্টপূর্ব ৭০০০ থেকে ৬০০ অব্দ পর্যন্ত ওয়েস্টার্ন ককেশাসে কলচিস কালচার ছিল, এরপর মধ্য ও উত্তরাঞ্চলীয় ককেশাসে ১১০০-৪০০ খ্রি.পূ.-তে ছিল কোবান কালচার। কলচিয়ান কালচারের রেঞ্জ ছিল আর্লি ব্রোঞ্জ যুগ থেকে লৌহ যুগ, আর কোবানের রেঞ্জ ছিল লেইট ব্রোঞ্জ যুগ থেকে লৌহ যুগ। কোবান কালচারটি শুরুতে ছিল নাখ জাতির, যাদেরকে চেচেন জাতির পূর্বপুরুষ বলে মনে করা হয়, কিন্তু পরের দিকে সেই কালচারে সিথিয়ান, সিমেরিয়ানদের আক্রমণের প্রমাণ পাওয়া যায়, ধরে নেয়া যায় সিমেরিয়ান, সিথিয়ানরা পন্টিক স্তেপ থেকে সরে এসে ককেশাস অঞ্চলে অবস্থান নিয়েছিল ও নাখ-দাগেস্থানিদের কোবান কালচারের সাথে মিথোস্ক্রিয়া করেছিল। লুরিস্তান ব্রোঞ্জ কালচার ছিল ওয়েস্টার্ন ইরানিয়ান কালচার, যেখানে বর্তমান পারশিয়ান লুর জনগোষ্ঠীর আধিক্য দেখা যায়। এই কালচারটি পারসিয়ানই হবে, বিশেষ করে ওয়েস্টার্ন ইরানের পারশিয়ান লুর জনগোষ্ঠীর প্রাগৈতিহাসিক কালচার হয়ে থাকবে। এই কালচারের ব্রোঞ্জ আর্টিফ্যাক্টগুলোকে ডেট করে দেখা যায় এগুলো ১০০০ থেকে ৬৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের, আর এগুলোর সাথে সিথিয়ান আর্টের বেশ সম্পর্ক আছে। সিথিয়ান আর্টের এই সম্পর্ক আসলে সিমেরিয়ানদের সাথে সম্পর্ক নির্দেশ করে, কারণ সিমেরিয়ান ও সিথিয়ানদের মধ্যে সাংস্কৃতিকভাবে বেশ সাদৃশ্য ছিল, শুধু তাই না, এই সাংস্কৃতিক সাদৃশ্যের জন্য সিথিয়ান, সিমেরিয়ান, সারমেশিয়ান, মাসাগেটি সব জাতিকে মিলে এককভাবে সিথিয়ান কালচার বলা হয় যেখানে কেবল সিথিয়ানদেরকে সিথিয়ান প্রোপার বলে নির্দেশ করা হয়।

এবারে ওয়েস্টার্ন সিমেরিয়ানদের নিয়ে আলোচনা করা যাক। এদের কেন্দ্র ছিল আনাতোলিয়ায়। ৬৭৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সিমেরিয়ান রাজা তিউশপা (Teušpa) কাপ্পাদোশিয়ার হুবুশনায় এসারহাড্ডনের কাছে পরাজিত ও নহত হন। কিন্তু আসিরিয়ানদের এই সামরিক অভিযান পুরোপুরি সফল হয়নি ও তারা হুবিশনার আশপাশের এলাকাকে শক্তভাবে দখল করতে পারেনি, সেই সাথে তারা তাদের সীমান্তকেও নিরাপদ করতে পারেনি। অন্যদিকে আসিরিয় অঙ্গরাজ্য কুওয়িকে (Quwê) তাবাল, কুজ্জুরাক ও হিলাক্কু জাতির আক্রমণের হুমকির মধ্যে ফেলে রাখা হয়েছিল। তিউশপার বিরুদ্ধে এসারহাড্ডনের বিজয়ের বছরের একটি আসিরিয়ান চুক্তি দেখা যায় নিনেভে-তে একটি “সিমেরিয়ান ডিটাচমেন্ট” এর অস্তিত্ব ছিল। কিন্তু এর দ্বারা আসিরিয়ান সেনাদলে সিমেরিয়ান ভাড়াটে সৈন্য বা মারসেনারিদের বোঝানো হলো নাকি কেবলই সিমেরিয়ান ধনুক ও সিমেরিয়ান হর্স হার্নেসে সজ্জিত আসিরিয়ান সেনাদলকে বোঝানো হলো তা স্পষ্ট নয়। ৬৭৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সিমেরিয়ানরা উরার্তিয়ান রাজা দ্বিতীয় রুসার সাথে সন্ধি করে ফ্রিজিয়া রাজ্যে আক্রমণ করে ও ধ্বংস করে, এর ফলে ফ্রিজিয়ার রাজা মাইডাস আত্মহত্যা করে। এই রাজা মাইডাসকে নিয়ে গ্রিক পুরাণের একটি কিংবদন্তী আছে, যিনি ডায়োনিসাসের কাছে কোন কিছুতে হাত দিলেই তা সোনা হয়ে যাবার বর পান, এই কিংবদন্তীটি ফ্রিজিয়ার আর্থিক সমৃদ্ধিকেই নির্দেশ করে থাকতে পারে। যাই হোক, সিমেরিয়ানরা ফ্রিজিয়ানদের পুরোপুরি দমন না করে আংশিকভাবে দমন করেছিল বলে মনে হয়, এবং খ্রিস্টপূর্ব ৬৭০ এর দশকের একটি আসিরিয়া ওরাকুলার টেক্সটে দেখা যায়, সিমেরিয়ানরা আসিরিয়ানদের নববিজিত অঙ্গরাজ্য মেলিডের বিরুদ্ধে ফ্রিজিয়ানদেরকে মিত্র হিসেবে পাবার জন্যই তাদেরকে এই আংশিকভাবে দমন করে। ৬৭৩ খ্রিস্টপূর্বাদের একটি নথিতে দেখা যায়, উরার্তুরাজ দ্বিতীয় রুসা তার সেনাদলে অনেক সিমেরিয়ান মারসেনারিকে নিয়োগ দিয়েছেন, এবং সিমেরিয়ানদের সাথে সন্ধি করেছেন, এবং এদেরকে নিয়ে তিনি তার ৬৭২ খ্রিস্টপূর্বাব্দের সামরিক অভিযানে যাত্রা করেন। এরপর ৬৭১ থেকে ৬৬৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে সিমেরিয়ানরা দ্বিতীয় রুসার অধীনে থেকে উরার্তিয়ান সীমান্তের নিকট অবস্থিত আসিরিয়ান অঙ্গরাজ্য শুব্রিয়ায় (Šubria) আক্রমণ করেন। ৬৭১ থেকে ৬৭০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে আসিরিয়ান সেনাবাহিনীতেও কিছু সিমেরিয়ান ডিভিশনের কথা পাওয়া যায়, কিন্তু জানা যায়না যে এরা আসলেই সিমেরিয়ান ছিল, নাকি সিমেরিয়ান কায়দায় সজ্জিত আসিরীয় ছিল।

কোন এক অজানা সময়ে সিমেরিয়ানরা এশিয়া মাইনোরের কাপ্পাদোশিয়ায় তাদের আইন চালু করে, বিথনিয়া, পাফলাফোনিয়া ও ট্রোড আক্রমণ করে, এবং আনাতোলিয়ার পন্টাস এলাকার গ্রিক নগররাষ্ট্র ও উপনিবেশ সিনোপি দখল করে নেয়। সিমেরিয়ানরা লিডিয়া রাজ্য আক্রমণ অরে, যার রাজা ছিলেন জাইজিস (Gyges)। ফ্রিজিয়ায় রাজা মাইডাসের আত্মহত্যার পর দেশটি জাইজেসের লিডিয়ার অধীনস্ত অঞ্চলে পরিণত হয়েছিল। তিনি একজন শক্তিশালী রাজা ছিলেন। তিনি ৬৬৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দের শুরুর দিকে নিও-আসিরিয়ান সাম্রাজ্যের সাথে সিমেরিয়ান আক্রমণের ব্যাপারে যোগাযোগ করেন বটে, কিন্তু তাদের কোন সহায়তা ছাড়াই তিনি ৬৬৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সিমেরিয়ানদেরকে পরাজিত করেন, ও সিমেরিয়ান সৈন্যরা লিডিয়ান গ্রামাঞ্চলে আক্রমণ করলে তিনি তাদেরকে বন্দী করে আসিরীয়রাজ আশুরবানিপালকে উপহার হিসেবে পাঠান। আসিরিয়ান নথি অনুসারে, সেই সময়ে সিমেরিয়ানরা ইতিমধ্যেই আনাতোলিয়ায় বসতিস্থাপন করে যাযাবরের বদলে কৃষিভিত্তিক জীবনযাপন করা শুরু করে দিয়েছে। অ্যান্থোনি স্পালিংগারের মতে সিমেরিয়ানরা ৬৫৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পুনরায় লিডিয়ায় আক্রমন করে, যা তদকালীন আসিরিয়ান নথিতে পাওয়া যায়। এই আক্রমণকে “ওয়েস্টল্যান্ড” বা “পশ্চিমাঞ্চলের” জন্য “অশুভ ইঙ্গিত” বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে “ওয়েস্টল্যান্ড” বলতে লিডিয়াকে বোঝানো হয়েছে। কিন্তু এরপর যেসব ঘটনা ঘটে তা দেখে আস্কল্ড ইভান্টচিক মনে করেন এই “ওয়েস্টল্যান্ড” আসলে লিডিয়া নয়, বরং নিও-আসিরিয়ান সাম্রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে দখলকৃত অঞ্চলসমুহ, সম্ভবত সাম্রাজ্যের কুওয়ি অঙ্গরাজ্য বা বর্তমান সিরিয়ার কোন অঞ্চল। লিডিয়ান রাজা জাইজেস কর্তৃক পরাজিত হবার পর সিমেরিয়ানরা এই ওয়েস্টল্যান্ড অঞ্চলটি জয় করে। এই সিমেরিয়ান আক্রমনগুলো আসিরিয়ারাজ আশুরবানিপালকে তার উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের নিরাপত্তা নিয়ে এতটাই শঙ্কিত করে তোলে যে তিনি এর ফলে ভবিষ্যদ্বাণীর আশ্রয় গ্রহণ করেন। ৬৫৭ সালের এই ভবিষ্যদ্বাণী সংক্রান্ত নথিতে দেখা যায় সিমেরিয়ান রাজাকে “শার-কিশ্‌শাতি” অর্থাৎ “বিশ্বের রাজা” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই অভিধাটি মেসোপটেমিয়ায় একটি সময়ে কেবল একজন একক শাসককেই প্রদান করা হতো, আর সাধারণত সেই সময় কেবল নিও-আসিরিয়ান সাম্রাজ্যের শাসককেই তা প্রদান করা হতো। তবে এই ভবিষ্যদ্বাণীতে আশুরবানিপালকে এই নিশ্চয়তাও দেয়া হয় যে তিনি তার এই হারিয়ে যাওয়া “বিশ্বরাজ” অভিধাটি ফিরে পাবেন। এই নথি থেকে মনে করা যায় যে, সিমেরিয়ানরা আসলে লিডিয়া নয় ৬৫৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আসিরিয়ান সাম্রাজ্যের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলেই আক্রমণ করে একটা বড় অংশ জয় করেছিল, যার ফলে তারা আশুরবানিপালের থেকে “ওয়ার্ল্ড হেজিমনি” নিজেদের হাতে নিয়ে নিয়েছিল। সিমেরিয়ানদের হাতে এভাবে “বিশ্বের সর্বোচ্চ ক্ষমতাটি” ৬৫০ এর দশক, এমনকি ৬৪০ এর দশকের প্রথম দিক অব্দি বর্তমান ছিল। এদিকে সিমেরিয়ানদের হাতে এভাবে আসিরিয়ার দুর্বল হয়ে যাবার ফলে লিডিয়ারাজ জাইজিসও আর সিমেরিয়ানদের বিরুদ্ধে আসিরীয় সাপোর্টের উপর নির্ভর করতে পারেননি, তিনি নিও-আসিরিয়ান সাম্রাজ্যের সাথে সকল কূটনীতির সমাপ্তি টানেন।

৬৪৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সিমেরিয়ানরা পুনরায় লিডিয়া আক্রমণ করেন তাদের শাসক লিগডামিসের অধীনে। প্রাচীন গ্রিকে তাকে বলা হয়েছে লুগডামিস, আর আসিরিয়ান নথিতে বলা হয়েছে তুগদাম্মি। এই আক্রমনে সিমেরিয়ানরা লিডিয়ানদেরকে পরাজিত করে ও তাদের রাজধানী সার্ডিস দখল করে নেয়, শুধু তাই নয়, লিডিয়ান রাজা জাইজিসও এই আক্রমণের ফলে নিহত হন। সার্ডিস লুণ্ঠন ও ধ্বংস করে লিগডামিস সিমেরিয়ানদেরকে নিয়ে আনাতোলিয়ার পশ্চিম তীরে অবস্থিত আয়োনিয়া ও ঈওলিসের গ্রিক নগর-রাষ্ট্রসমূহে আক্রমণ করে। এই আক্রমণের ফলে বাতিনেটিস অঞ্চলের অধিবাসীরা পালিয়া ঈজিয়ান সাগরের দ্বীপসমূহে চলে যায়, এবং ক্যালিমেকাস ও আলেকজান্দ্রিয়ার হেসিকিয়াস রচিত পরবর্তী গ্রিক রচনাগুলোতে উল্লেখ আছে যে লিগডামিস এই আক্রমণের সময় এফিসাসের আর্তেমিসের মন্দিরটি ধ্বংস করেছিলেন। লিডিয়া ও এশিয়াটিক গ্রিক নগরাষ্ট্রে আক্রমণের পর প্রায় ৬৪০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে সিমেরিয়ানরা আসিরিয়ান সাম্রাজ্যের উত্তর-পশ্চিম সিমান্তের সিলিসিয়ায় সরে যায়, যেখানে লিগডামিস আসিরিয়ার বিরুদ্ধে তাবালের রাজা মুগাল্লুর সাথে জোটবদ্ধ হয়। কিন্তু মুগাল্লু তার কথা রাখেননি, তিনি লিগডামিসের বিরুদ্ধে চড়াও হন, আর অগত্যা লিগডামিসকে আসিরিয়ার সাথে সন্ধি করে আসিরীয় অধীনস্ততা ও আনুগত্য স্বীকার করতে হয় ও আশুরবানিপালকে নজরানা পাঠাতে হয়। কিন্তু লিগডামিস তার আনুগত্যের শপথ ভেঙ্গে পুনরায় আসিরিয়ান সাম্রাজ্যে আক্রমণ করে বসেন। কিন্তু ৬৪০ খ্রিস্টপূর্বাব্দেই লিগডামিস অসুস্থ হয়ে মারা যান ও তার পুত্র সান্ডাকশাত্রু (Sandakšatru) সিমেরিয়ানদের শাসক হন।

৬৩৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সিমেরিয়ানরা লিডিয়ায় পুনরায় আক্রমণ করে, তবে এবারে এই আক্রমণের নেতৃত্ব দেয় থ্রেশিয়ান ট্রেরেস জাতি, যারা থ্রেসিয়ান বসফোরাস জুড়ে অভিপ্রায়ণ করে এবং তাদের রাজা কোবোসের অধীনে লিসিয়ানদের সাথে মৈত্রী করে আনাতোলিয়া আক্রমণ করে। এই আক্রমণের সময়ে জাইজেসের পুত্র আরডিস তার শাসনের ৭ম বছরে ছিল। লিডিয়ানরা পুনরায় পরাজিত হয় ও সার্ডিস পুনরায় দখল করা হয়। সম্ভবত আরডিস এই আক্রমণে নিহিত হন। আরডিসের পুত্র ও উত্তরাধিকারী সাডিয়াত্তিসও সিমেরিয়ানদের আরেকটি লিডিয়া আক্রমণে নিহিত হয়ে থাকতে পারেন। এর কিছুকাল পর আসিরিয়ানদের অনুমতি নিয়ে ও লিডিয়ানদের সাথে সন্ধি করে সিথিয়ানরা তাদের রাজা মাডিয়েসের (Madyes) অধীনে আনাতোলিয়ায় প্রবেশ করে। তারা এশিয়া মাইনোর থেকে থ্রেসীয়রাজ ট্রেরেসকে বিতাড়িত করে ও সিমেরিয়ানদেরকে পরাজিত করে। এরপর আর সিমেরিয়ানরা কখনও হুমকি হয়ে আসেনি। এরপর সিথিয়ানরাই তাদের অঞ্চল সেন্ট্রাল আনাতোলিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত অরে। খ্রিস্টপূর্ব ৫৯০ এর দশকে দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার মেডিসদের দ্বারা বিতাড়িত হবার পূর্বে আনাতোলিয়ার এই অঞ্চলটি সিথিয়ানদের অধীনেই ছিল। যাই হোক, সিথিয়ান রাজ মাডিয়াস ও লিডিয়ান রাজ জাইজিসের নাতির পুত্র আলিয়াত্তিসের যৌথ বাহিনীর দ্বারাই সিমেরিয়ানদের অন্তিম পরাজয় ঘটে। সিমেরিয়ানদের বিরুদ্ধে এই জয়ের ক্রেডিস গেছে স্ট্র্যাবোর লেখায় সিথিয়ানরাজ ম্যাডিয়েসের কাছে, আর হেরোডোটাস ও পলিনাসের লেখায় লিডিয়ানরাজ আলিয়াত্তেসের কাছে। এই অন্তিম পরাজয়ের পর সিমেরিয়ানরা ইতিহাস থেকে পুরোপুরি হারিয়ে যায়। তারা এরপর সম্ভবত কাপ্পাডোশিয়ায় থেকে গিয়েছিল, যাদেরকে আর্মেনীয় ভাষায় “Gamirk” বা গামির্ক বলা হতো, শব্দটি সম্ভবত সিমেরিয়ান থেকেই এসেছে। সিমেরিয়ানদের একটি অংশ আদ্রামিটিয়ামের নিকট ট্রোডেও থেকে গিয়ে থাকতে পারে।

লেগেসি

আকিমিনিদ সম্রাট দারিয়ুস দ্য গ্রেট ৫১৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বেহিস্তুন লেখ উৎকীর্ণ করেন। সেই লেখে গিমিরি (Gimirri) শব্দটির উল্লেখ আছে। শব্দটিকে ইরানিয়ান শক বা সিথিয়ানদের আসিরো-ব্যাবিলনিয়ান ইকুইভ্যালেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ সিমেরিয়ানদের ইতিহাস থেকে হারিয়ে যাবার এক শতক পর যখন পারস্য আকিমিনিদ শাসক দারিয়াস দ্য গ্রেট দ্বারা শাসিত হচ্ছে তখনও সিমেরিয়ানদের উল্লেখ হয়েছে। রয়াল ফ্রাংকিশ অ্যানালসে ফ্রাঙ্ক জাতির মেরোভিঞ্জিয়ান রাজারা তাদের একটি প্রাক-ফ্রাংকিশ উৎপত্তি দাবি করত, যার নাম ছিল সিকাম্ব্রি বা সাগ্যাম্ব্রি (Sicambri or Sugambri)। এই সিকাম্ব্রি গ্রুপটিকে পণ্ডিতগণ পৌরাণিকভাবে সিমেরিয়ানদের সাথে সম্পর্কিত করেছিল যারা দানিউব নদীর মুখে বাস করত, কিন্তু পরে দেখা যায় এরা সেখান থেকে না এসে আধুনিক নেদারল্যান্ডের গেল্ডারল্যান্ড থেকে এসেছিল, এবং এদের নাম সিয়েগ নদীর (Sieg river) নামে নামকরণ করা হয়েছে। আর্লি মডার্ন হিস্টোরিয়ানরা বলত কেল্ট বা জার্মানরা সিমেরিয়ানদের থেকে এসেছে, এটার জন্য তারা সিম্ব্রি (Cimbri) বা সিমরি (Cymry) জাতির নামের সাথে সিমেরি (Cimmerii) নামের সাদৃশ্যের যুক্তি দিত। ১৭শ শতকের কেল্টিসিস্টরা এই ধরণের যুউক্তি দিয়েছিল। কিন্তু আজকের কেল্টিক ভাষাতাত্ত্বিকগণ মনে করেন Cymro (ওয়েলশম্যান, বহু. Cymry) শব্দটি ব্রিথোনিক (Brythonic) শব্দ *kom-brogos থেকে এসেছে, যার অর্থ হলো স্বদেশবাসী বা একই দেশের অধিবাসী। বাইবেলীয় শব্দ “Gomer”-কে সিমেরিয়ানদের সাথে সম্পর্কিত করা হয়েছে। জর্জিয়ান জাতীয় হিস্টোরিওগ্রাফি অনুসারে সিমেরিয়ানরা (জর্জিয়ান ভাষায় গিমিরি (Gimirri)) কলচিয়ান ও আইবেরিয়ান কালচারের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। হিরো বা বীর এর জন্য প্রচলিত বর্তমান জর্জিয়ান শব্দ হচ্ছে gmiri, যা সিমেরিয়ান বা Gimirri শব্দটি থেকেই এসেছে বলা হয়। ধারণা করা হয় সিমেরিয়ানরা শেষ পর্যন্ত কাপ্পাডোশিয়ায় বসতিস্থাপন করে বাস করেছিল। কাপ্পাদোশিয়াকে আর্মেনিয়ানরা বলে গামির্ক (Gamirk), এই নামটি সিমেরিয়ানদের নাম থেকেই উদ্ভুত হয়ে থাকতে পারে। এও ধারণা করা হয় যে আধুনিক আর্মেনিয়ান শহর গিউমরি (Gyumri) এর নামটিও সিমেরিয়ানদের থেকে এসেছে যারা এই অঞ্চলটি দখল করে এখানে বসতিস্থাপন করেছিল।

ভাষা

ঐতিহাসিক মুহাম্মদ ডান্ডামায়েভ ও ভাষাতাত্ত্বিক জানোস হারমাত্তার মতে সিমেরিয়ানরা ইরানিয়ান ভাষাসমূহের সিথিয়ান গ্রুপের একটি ডায়ালেক্টে কথা বলতো, এবং তারা সিথিয়ান প্রোপারদের সাথে কোন ইন্টারপ্রিটারের সহায়তা ছাড়াই কথা বলতে পারত। সিমেরিয়ান ভাষার কেবল পারসোনাল নেইম বা ব্যক্তিনামই আসিরিয়ান লেখগুলোর মধ্য দিয়ে টিকে আছে। এই নামগুলো হচ্ছে –

  • তিউশপা (Teušpa) : ভাষাতাত্ত্বিক জানোস হারমাত্তার মতে, এই নামটি ওল্ড ইরানিয়ান *Tavispaya থেকে এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে “বলের সাথে স্ফীত বা উচ্ছ্বসিত”। তবে ভাষাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে আস্কল্ড ইভান্তচিক এর তিনটি বিকল্প ওল্ড ইরানিয়ান উৎপত্তি প্রস্তাব করেন – *Taiu-aspa (“ঘোড়া হরণকারী”), Taiu-spā (কুকুর হরণকারী) বা Daiva-spā (স্বর্গীয় কুকুর)।
  • ডুগডাম্মে (Dugdammê) বা ডুগডাম্মি (Dugdammi) বা টুগডাম্মে (Tugdammê), গ্রিকদের লেখকদের দ্বারা উচ্চারিত হয় লুগডামিস (Lúgdamis) : জানোস হামাত্তার মতে এই নামটি ওল্ড ইরানিয়ান *Duydamaya, অর্থাৎ “সুখ প্রদান” থেকে এসেছে। এডউইন এম. ইয়ামাউচিও নামটিকে ইরানিয়ান বলেছেন, তিনি এক্ষেত্রে নামটির সাথে ইস্টার্ন ইরানিয়ান শাখার সিথিয়ান গ্রুপের ওসেটিক ভাষার শব্দ “Tux-domæg” এর সম্পর্ক দেখিয়েছেন, যার অর্থ হলো “শক্তির সাথে শাসন করা”। ভাষাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে, আসকল্ড ইভান্তচিক প্রস্তাব করেন, Dugdammê বা Lúgdamis নামটি ছিল আনাতোলিয়ান ভাষা থেকে আগত একটি লোনওয়ার্ড বা ধারকৃত শব্দ, আরও বিশেষভাবে বললে আনাতোলিয়ান শাখার লুইয়ান ভাষার লোনওয়ার্ড। তবে তিনি নামটির হুরিয়ান দেবতা Teyśəba বা Tešub নামটির কোন ভেরিয়েন্ট থেকে আসার বিকল্প সম্ভাবনার কথাও বলেছেন।
  • সান্ডাকশত্রু (Sandakšatru) : এই নামটি আসলে আসল নামটির ইরানীয় পাঠ। ১৯৮১ সালে একটি রচনায় ম্যানফ্রেড মেয়ারহফার (Manfred Mayrhofer) বলেন, এই নামটিকে সান্ডাকুরু (Sandakurru) হিসেবেও পাঠ করা যায়। জানোস হামাত্তার মতে, এটি এসেছে ওল্ড ইরানিয়ান *Sandakuru থেকে, যার অর্থ “চমকপ্রদ পুত্র” (splendid son)। এদিকে আসকল্ড ইভান্তচিক বলেন, Sandakšatru নামটি একটি যৌগিক শব্দ, যা আনাতোলিয়ান দেবতা Sanda, এবং ইরানীয় শব্দ -xšaθra এর মিলন।

১৯৯১ সালের একটি রচনায় আইজাক আসিমভ সিমেরিয়ান অরিজিনের বিভিন্ন অঞ্চলের নামকে ট্রেস করেন। তিনি প্রস্তাব করেন, সিমেরিয়াম শব্দটি থেকে তুর্কিক টপোনিম কিরিম (Qırım) এসেছে, আর সেখান থেকে “ক্রিমিয়া” শব্দটি এসেছে।

জিনতত্ত্ব

২০১৮ সালের অক্টোবরে সায়েন্সে প্রকাশিত একটি জেনেটিক স্টাডিতে তিনজন ক্রিমিয়ান ব্যক্তির অবশেষ নিয়ে গবেষণা করা হয় যাদেরকে খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ থেকে ৮০০ অব্দের মধ্যে সমাহিত করা হয়। এদের মধ্যে দুজনের থেকে y-DNA স্যাম্পল এক্সট্র্যাক্ট করে হ্যাপ্লোগ্রুপ R1b1a ও Q1a1 পাওয়া গেছে, অন্যদিকে তিনটি mtDNA স্যাম্পল পাওয়া গেছে, যেগুলো ছিল হ্যাপ্লোগ্রুপ H9a, C5c ও R. ২০১৯ সালের জুলাই মাসে কারেন্ট বায়োলজিতে আরেকটি গবেষণা প্রকাশিত হয়। সেটায়ও তিনজন সিমেরিয়ান ব্যক্তির অবশেষ নিয়ে গবেষণা করা হয়। দেখা যায় উদ্ধারকৃত yDNA হ্যাপ্লোগ্রুপ ছিল R1a-Z645 ও R1a2c-B111, এবং তিনটি mtDNA স্যাম্পল ছিল H35, U5a1b1 ও U2e2.

তথ্যসূত্র

Srubnaya culture, Cimmerians, Belozerskaya culture, Thraco-Cimmerian, Bondarikhinskaya culture, Koban culture, Novocherkassk culture

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.