মৃতের চার পাশে গরিলাদের শোকাকুল আচরণ মানুষকে হার মানায়

গোরিলারা মৃতের লাশের চারপাশে থেকে দুঃখের লক্ষণ দেখায়। জীবিত গরিলা এর সাথে মৃত গোরিলা এর মধ্যে সামাজিক সম্পর্ক যত বেশি ঘনিষ্ঠ থাকে, তাদের মিথস্ক্রিয়া তত বেশি হয়। কখনও কখনও জীবিত গোরিলা মৃত গোরিলার পাশে থেকে দিন কাটায় ও রাতে একই ঘরে ঘুমায়। আবার তারা অচেনা গোরিলার মৃত্যুতেও বর্ধিত শোক প্রকাশ করে থাকে।

গবেষকগণ প্রায়শই গরিলা তাদের প্রিয়জনদের মৃতদেহের প্রতি কেমন আচরণ করেন তা দেখার সুযোগ মিস করেন, কারণ একটি দলের মৃতপ্রায় গোরিলারা মৃত্যুর সময় প্রায়ই দল থেকে অন্যত্র চলে যায়, যাতে তারা একাকী শান্তিতে মরতে পারে। অন্যদিকে চিড়িয়াখানায় থাকা গোরিলাদের আচরণ তাদের প্রাকৃতিক আচরণ জানার জন্য নির্ভরযোগ্য নয়।

যাইহোক, ডিয়ান ফসি গরিলা তহবিলের ডঃ এমি পোর্টার একটি দলের সদস্য যারা রুয়ান্ডার ভলানোস ন্যাশনাল পার্কে অসুস্থতার কারণে দুটি গোরিলা মারা যাবার পর সেখানকার ঘটনা দেখে ও ভিডিও করেছিল। ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো এর কাহুজি-বিগা জাতীয় উদ্যানের গ্রাউয়ারের গরিলা (Grauer’s gorillas) দলের একটি সাম্প্রতিক মৃত গোরিলার আবিষ্কারের বিষয়টির সাথে এর তুলনা করা হয়েছে।

উভয় ক্ষেত্রেই, গরিলারা মৃতের শরীরের পাশে বসে, গন্ধ শোঁকে ও খোঁচা দেয়। কিন্তু সেই সাথে তারা মৃত গোরিলার শরীর দলাইমালাই করে ও চাটেও। মৃত মাউন্টেইন গরিলাগুলির মধ্যে একজন ছিল ডোমিনেন্ট মেল বা কর্তৃত্বশীল পুরুষ টাইটাস, আরেকজন ছিল ডোমিনেন্ট ফিমেল বা কর্তৃত্বপূর্ণ নারী টাক। এই দুজনই তাদের ৩০ বছরের কোঠায় ছিলেন। গোরিলার মানদণ্ডে এটি মৃত্যুর জন্য ন্যায়সঙ্গত বয়সই। এই দুজনের দলকেই গবেষকগণ কয়েক দশক ধরে পর্যবেক্ষণ করছেন, এবং এদের সামাজিক সম্পর্কও গবেষকদের জানা ছিল।

প্রত্যাশিতভাবেই, ডঃ এমি পোর্টার পিয়ারজে জার্নালে প্রকাশ করেন, জীবিত গরিলারা তাদের নিকটতম জিনগত এবং সামাজিক বন্ধনের মৃত গোরিলার সাথে সবচেয়ে বেশি সময় কাটায়। টাকের কিশোর পুত্র “ধীরে ধীরে হাত দিয়ে তার মায়ের মাথা নড়ানোর চেষ্টা করেছিল” এবং এমনকি তার মাই ছাড়ানোর পরও সে তার মায়ের স্তন চোষার চেষ্টা করেছিল। দলের বয়স্ক সদস্যরা মৃতদেহের দিকে তাকিয়ে ছিল, আর তাকিয়ে থাকার পর্যায়গুলোর মধ্যে মধ্যে তারা তাদের বুকে আঘাত করছিল, গাছগুলো ভাঙ্গছিল এবং মৃতদেহকে আঘাত করছিল।

পোর্টারের রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্ক নারী গোরিলারা বাদে গ্রাউয়ারের গরিলারাও একটি মৃত সিলভারব্যাক গোরিলা দেখে অদ্ভুতভাবে একই আচরণ দেখিয়েছে। সন্ধানে “স্ট্রাইকশে অনুরূপ” আচরণ প্রদর্শন করে, পোর্টারের রিপোর্ট। সম্ভবয় এদের বেশিরভাগের কাছে এই মৃত গোরিলাটি অপরিচিত হবার পরও তারা তাকে দলাইমালাই বা আদর করে, নিজেদের বুকে আঘাত করে।

গ্রাউয়ারের গরিলা আর মাউন্টেইন গরিলাকে একই প্রজাতি হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়, তবে এরা ভিন্ন উপ-প্রজাতি। আর তাই মৃত ব্যক্তির প্রতি এদের একই আচরণ করার ব্যাপারটি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

একটি বিবর্তনীয় দৃষ্টিকোণ অনুযাযী, এই আচরণের মধ্যে গুরুতর ত্রুটি আছে। সহজেই মৃতদের থেকে জীবিতদের মধ্যে ইবোলা সংক্রমিত হতে পারে। ইবোলা গরিলার গুরুতর বিপন্ন অবস্থার জন্য বিশেষভাবে দায়ী। কোন গোরিলা যদি শিকারির পাতা ফাঁদে ধরা পড়ে যায় বা মারা যায়, আর অন্যান্য গোরিলারা তার আশেপাশে থেকে এভাবে অনেক ক্ষণ যাবৎ দুঃখ করে, তাহলে তাদের এই নিকটবর্তিতাও গোটা দলের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

ফলস্বরূপ, এই আচরণটি যদি গুরুত্বপূর্ণ না হত তাহলে এর টিকে থাকার সম্ভাবনা ছিল না। সম্ভবত, সামাজিক প্রাণী হওয়ায় গরিলারা এত বেশি দুঃখ পায়। টিকে থাকার জন্য একজন গোরিলার কাছে নিজেদের পরিবারের প্রতি উদাসীন হবার চেয়ে নিজের প্রজাতির অন্যান্য সদস্যদের যত্ন নেয়াটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ, যার ফলে প্রজাতির অন্যান্য সদস্যরাও তার প্রতি একইরকম যত্নশীল হবে।

তথ্যসূত্র –
1. জার্নাল লিংক – https://peerj.com/articles/6655/

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.