এনশিয়েন্ট হোমিনিডদের ইন্টারব্রিডিং এবং আমরা

ancient-hominids

আমাদের জিনোমের অনেক কিছুই এসেছে এনশিয়েন্ট হোমিনিডদের ইন্টারব্রিডিং এর অবদানে (ভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর সেক্সুয়াল রিপ্রোডাকশনকে ইন্টারব্রিডিং বলে, এর ফলে হাইব্রিড তৈরি হয়। আর মনেব রাখতে হবে হাইব্রিড মাত্রই স্টেরাইল বা অপ্রজননক্ষম নয়) । গত অর্ধদশকের এনশিয়েন্ট ডিএনএ রিসার্চ আমাদের ৫০,০০০ বছরের ইভল্যুশনারি হিস্ট্রির অনেক অবাক করা বিষয় সামনে এনেছে। বোধ হয়, এর মধ্যে সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে আমাদের পূর্বপুরুষের সাথে অন্য ক্লোজলি রিলেটেড হিউম্যান স্পিসিজের ইন্টারব্রিডিং। কিন্তু পৃথিবীর কোথায় এই ইন্টারব্রিডিং হয়েছিল? কোন কোন আর্কাইক স্পিসিজ এর সাথে জড়িত? হিউম্যান জিনোমের কতটুকু অংশ এই আর্কাইক রিলেটিভদের ডিএনএ থেকে নেয়া? আর আমাদের বিবর্তনে আর জেনারেল বায়োলজিতে এই ইন্টারব্রিডিং এর প্রভাব কী? (এনাটমিকালি মডার্ন হিউম্যান ছাড়া Homo গণের অন্যান্য স্পিসিজদের আর্কাইক হিউম্যান স্পিসিজ বলা হয়। এর মধ্যে Homo neanderthalensis (40ka-300ka), Homo rhodesiensis (125ka-300ka), Homo heidelbergensis (200ka-600ka) এবং সম্ভবত Homo antecessor (800ka-1200ka) আছে। এটা একটা আলাদা ক্যাটাগরি যার সাথে এনাটমিকালি মডার্ন হিউম্যান ক্যাটাগরির তুলনা করা হয়ে থাকে। এনাটমিকালি মডার্ন হিউম্যান ক্যাটাগরিতে Homo sapiens sapiens আর Homo sapiens idaltu আছে। 1ka=1000 years)

এই প্রশ্নগুলোই হল ইউরোপ, এশিয়ার ফসিল থেকে পাওয়া ডিএনএ সিকুয়েন্স ও বর্তমান মানুষের জিনোমের গঠন থেকে উদ্ধার হওয়া ইন্টারব্রিডিং এর এভিডেন্স নিয়ে বর্তমান রিসার্চের কেন্দ্র। আফ্রিকায় একটি আর্কাইক স্পিসিজের সাথে ইন্টারব্রিডিং এর কিছু জেনেটিক সিগনেচার সাবসাহারান লোকদের মাঝে পাওয়া যায়। মোটামুটি এই লোকগুলোর ডিএনএ এর ২% একটি আর্কাইক স্পিসিজ থেকে এসেছে। আর এই মিক্সিংটা ঘটেছে ৩৫,০০০ বছর পূর্বের ইন্টারব্রিডিং এর ফলে।

*ইউরোপিয়ান এবং ইস্ট এশিয়ানদের মধ্যে নিয়ান্ডারথাল জিন
নিয়ান্ডারথালদের সম্পর্কে আমরা সবাই কম বেশি পরিচিত। নিয়ান্ডারথাল ও ইউরোপিয়ান এবং ইস্ট এশিয়ানদের ফাউন্ডার মডার্ন হিউম্যান এর একই সময়ে বসবাস করার এভিডেন্স পাওয়া গেছে ইজরাইলের ম্যানটে মডার্ন হিউম্যানের একটা পারশাল স্কাল এর ফসিল থেকে। যা এদের ইন্টারব্রিডিং এর যথেষ্ট সম্ভাবনা দেখায়। ২০১৪ সালে প্রকাশিত একটি এস্টিমেশন নির্দেশ করে যে বর্তমান নন আফ্রিকানদের জিনোমের ১.৫-২% এসেছে নিয়ান্ডারথালদের থেকে। ইস্ট এশিয়ানদের ইউরোপিয়ানদের থেকেও বেশি পরিমাণে নিয়ান্ডারথাল জিন পাওয়া যায় যা ইন্ডিকেট করে এরা সম্ভবত এদের সাথে একবারের বেশি ইন্টারব্রিড করেছিল অথবা ওয়েস্টার্ন ইউরেশিয়ানদের থেকে ভিন্ন কোন প্রক্রিয়া এখানে কাজ করেছে।

*দেনিসোভান ইন্টারব্রিডিং
দেনিসোভান নামক আরেকটি প্রজাতি সম্পর্কে জানা যায় কেবল একটা দাঁত, আংগুলের হাড় আর টো বোন এর ফসিল রেকর্ড থেকে। তাদের পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্স দেখায় যে তারা কিছু সাউদইস্ট এশিয়ান, নিউগিনিয়ান আর অস্ট্রেলিয়ান আদিবাসীদের সাথে জিন শেয়ার করে। এই বর্তমান লোকজন নিয়ান্ডারথালদের সাথে ইন্টারব্রিডিং এর জেনেটিক সাইনও দেখায়। মজার ব্যাপার হল আর্কাইক হিউম্যান স্পিসিজ থেকে ধার করা এই জিনগুলো কেবল এই বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে যৌন সম্পর্কের সাইন দেখায় না, কিছু ক্ষেত্রে এগুলো আমাদের উপকারও করে।

*ইন্টারব্রিডিং থেকে পাওয়া উপকারিতা
গত বছর Emilia Huerta-Sánchez ও তার দল আবিষ্কার করে, তিব্বতে এত উচ্চতা থাকার পরেও সেখানকার জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ হল দেনিসোভালদের থেকে প্রাপ্ত একটি জিন। EPAS1 নামক এই জিনটির কারণে এদের হিমোগ্লোবিন বেশি যা এত উচ্চতাতেও বেশি পরিমাণ অক্সিজেন রক্তে পাম্প করতে পারে। নিউগিনিয়ান ও অস্ট্রেলিয়ান আদিবাসীদের ইমিউন সিস্টেমেও দেনিসোভানদের কন্ট্রিবিউশন আছে বলে ধারণা করা হয়।

ইউরোপিয়ানদের ক্ষেত্রে নিয়ান্ডারথালদের সাথে ইন্টারব্রিডিং এর ফলে তারা লিপিড ক্যাটাবলিজম সম্পর্কিত জিন পেয়েছে। লিপিড ক্যাটাবলিজমের ফলে ফ্যাট বা চর্বি বডি সেলে শক্তিতে পরিণত হয়।

অন্যান্য উদাহরণের মধ্যে আছে শ্যুগার মেটাবলিজম; মাসল ও নার্ভাস সিস্টেম ফাংশন; স্কিন ফরমেশন ও স্ট্রাকচার; ত্বক, চুল ও চোখের রং এবং ফিমেল রিপ্রোডাকটিভ সিস্টেম বিশেষ করে ডিম্বাণুর গঠন।

অবশ্যই এক্ষেত্রে দুই ডিরেকশন থেকেই নেচারাল সিলেকশন কাজ করেছে। একটি বিশেষ ক্ষেত্রে নেগেটিভ সিলেকশনের স্পষ্ট উদাহরণ পাওয়া গেছে। নেগেটিভ নেয়ারাল সিলেকশন হল জিন থেকে কিছু এলিল রিমুভ করে দেয়া। একজন নিয়ান্ডারথাল ফিমেল এর এগেইন্সটে ১০০০ জন সমসাময়িক হিউম্যান এরর জিনোমের ম্যাপিং এর ফলে দেখা গেছে এতে নিয়ান্ডারথাল জিন অনেক কম পাওয়া যায়। Y ক্রোমোজোমে নিয়ান্ডারথাল জিন থেকে দেখা যায় পুরুষের ইনফারটাইল হবার চান্স বেশি আর অন্যান্য জিন বিভিন্ন রোগের সম্ভাবনা তৈরি করে যেমন বাইলিয়ারি সিরোসিস, ক্রোনস ডিজিস, স্মোকিং বিহ্যাভিওর, টাইপ টু ডায়াবেটিস ইত্যাদি। কিন্তু হাইব্রিডরা খুব ভালভাবেই টিকে গেছে যা নির্দেশ করে এই হাইব্রিডদের মাঝে খুব শক্তিশালী নেচারাল সিলেকশন হয়েছিল যার ফলে এই জিনগুলো রিমুভ হয়ে যায়।

*দেনিসোভানদের রহস্য
ইন্টারব্রিডিং এর এভিডেন্সের জন্য দেনিসোভানদের জিন কেবল নিউগিনি এর ৬০০০ কিলোমিটার নর্থওয়েস্টে সাউদার্ন সাইবেরিয়ার দেনিসোভা কেভ এর কঙ্কাল থেকেই পাওয়া গেছে। তাহলে কি করে নিউগিনিয়ান আর অস্ট্রেলিয়ান আদিবাসীদের শরীরে এত হাই ফ্রিকুয়েন্সির দেনিসোভান জিন পাওয়া যায় যেখানে মেইনল্যান্ড ইস্ট এশিয়ানদের মধ্যে দেখা যায় এই জিন খুবই কম বা একেবারেই নেই।

Skolund এবং Jakobsson এর একটি স্টাডি সাজেস্ট করে, দেনিসোভান ডিএনএ মেইনল্যান্ড ইস্ট এশিয়ানদের মধ্যেও পাওয়া যেতে পারে কিন্তু এটা খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন কারণ এটা একেবারেই লো লেভেলে আছে। কিন্তু এটা যদি সত্য হয় তাহলে বলা যায়, হয়তো মেইনল্যান্ড ইস্ট এশিয়াতেই দেনিসোভানদের সাথে ইন্টারব্রিডিং হয়েছিল যা দেনিসোভা কেভ থেকে বেশি দূরে নয়। আর তার পরে এই জিন নিউগিনি ও অস্ট্রেলিয়ায় চলে এসেছে।

বর্তমান মানুষের শরীরে দেনিসোভান জিন নিয়ে Molecular Biology and Evolution জার্নালে প্রকাশিত নতুন একটি স্টাডি ইস্টার্ন ইউরেশিয়া থেকে নেটিভ আমেরিকান পপুলেশনে লো লেভেল দেনিসোভান জিনের অস্তিত্ব সম্পর্কে কনফার্ম করেছে।

Max Planck Institute for Evolutionary Anthropology এর Pengfei Qin এবং Mark Stoneking বিশ্বের ২২১টি পপুলেশনের ২৪৯৩ জন মানুষের ৬০০,০০০ জেনেটিক মার্কার নিয়ে পরীক্ষা করেছেন। তার দেখেছেন, বর্তমান নিউগিনির মানুষ এবং অস্ট্রেলিয়ার উত্তরের একটি জিনোম স্যাম্পলে ৩.৫% দেনিসোভান জিন রয়েছে। তুলনামূলকভাবে ইস্ট এশিয়ান এবং নেটিভ আমেরিকানদের শরীরে মাত্র ০.১৩ থেকে ০.১৭% দেনিসোভান জিন রয়েছে। Qin এবং Stoneking এই বলে উপসংহার টানেন যে, দেনিসোভান এনসেস্ট্রি নিউগিনিয়ান এনসেস্ট্রি এর সাথে খুব শক্তিশালীভাবে যুক্ত। সুতরাং, নিউগিনির বাইরে দেনিসোভান ডিএনএ এর উপস্থিতি নিউগিনি থেকে অস্ট্রেলিয়া, সাউদইস্ট এশিয়া, এবং মেইনল্যান্ড ইস্ট এশিয়াতে সাম্প্রতিক পপুলেশন মাইগ্রেশন নির্দেশ করে। অন্য কথায়, অতীতের কোন এক সময়ে কিছু নিউগিনিয়ান তাদের দেনিসোভান জিন নিয়ে নর্দার্ন অস্ট্রেলিয়ায় মাইগ্রেট করেছিল এবং মেইনল্যান্নড ইস্ট এশিয়ায় ফিরে গিয়েছিল। এর ফলে এই দেনিসোভান জিন সেই এলাকাগুলোতে ছড়িয়ে যায়। যাই হোক, এখন পর্যন্ত এই আইডিয়া সমর্থনে কোন আর্কিওলজিকাল অথবা জেনেটিক এভিডেন্স পাওয়া যায় নি। কিন্তু এনশিয়েন্ট হিউম্যান ডিএনএ নিয়ে এত বেশি আবিষ্কার ও এদের দ্বারা কনফার্মড হওয়া আর্কিওলজিকাল মডেলগুলোর কারণে আমরা এটাকে ডিজমিস করতে পারি না। আমাদের হয়তো এটা নিশ্চিত করতে আরও কিছুকাল অপেক্ষা করতে হবে।

http://www.pnas.org/content/108/37/15123.short

http://www.nature.com/nature/journal/v505/n7481/abs/nature12886.html

http://www.genetics.org/content/194/1/199.short

http://www.sciencemag.org/content/338/6104/222.short

http://www.nature.com/nature/journal/v512/n7513/abs/nature13408.html

http://www.nature.com/ncomms/2014/140401/ncomms4584/full/ncomms4584.html?WT.ec_id=NCOMMS-20140402

http://www.nature.com/nature/journal/v507/n7492/abs/nature12961.html

http://www.pnas.org/content/108/45/18301.short

http://mbe.oxfordjournals.org/content/32/10/2665.abstract

1 Trackback / Pingback

  1. দেনিসোভান মানুষের সম্পর্কে নতুন তথ্য উদঘাটন এবং নতুন এনশিয়েন্ট হিউম্যান স্পিসিজ এর এভিডেন্স | bib

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.