ব্ল্যাকহোল একাই ডার্ক ম্যাটারকে ব্যাখ্যা করতে পারে না

জ্যোতির্বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অনেক প্রশ্ন আছে যেগুলোর উত্তর এখনও পাওয়া যায় নি। এই আনসলভড প্রশ্নগুলোর মধ্যে অন্যতম হল ডার্ক ম্যাটার যার উত্তর খোঁজার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীদেরকে অনেক জটিলতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। যদি বর্তমান পদার্থবিদ্যা সঠিক হয় তাহলে মহাবিশ্বের ভর-শক্তির শতকরা ২৭ ভাগই ডার্ক ম্যাটার দিয়ে তৈরি এবং যদিও এই ডার্ক ম্যাটার নিয়ে অনেক হাইপোথিসিজ আছে, আমরা এখনও জানিনা এটা আসলে কী।

কিন্তু প্রিন্সটনের ইনস্টিটিউট ফর এডভান্সড স্টাডির একজন পোস্ট ডকটোরাল ফেলো টিমথি ব্র্যান্ট এর মতে আমরা ডার্ক ম্যাটার কী সেটা না জানলেও এটা জানি যে ডার্ক ম্যাটার কী নয়। এস্ট্রোফিজিকাল জার্নাল লেটারস  এ তার ডোয়ার্ফ গ্যালাক্সি নিয়ে গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। এই গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে ডার্ক ম্যাটার ব্ল্যাকহোল দিয়ে গঠিত হতে পারে না, অন্তত কেবল মাত্র ব্ল্যাকহোল দিয়ে গঠিত হতে পারে না।

ডার্ক ম্যাটারের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এগুলো কেবল গ্র্যাভিটির সাথে ইন্টারেক্ট করে। আরা তাই ব্ল্যাক হোল দিয়ে একে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা খুব একটা পাগলামি নয়। এই থিওরি আরও বেশি জটিল হয়ে যায় যখন ডার্ক ম্যাটারের সবগুলো বৈশিষ্ট্য হিসাবে আনা হয়। যেমন ডার্ক ম্যাটারকে অবশ্যই বিগব্যাং এর প্রথম মুহূর্তেই তৈরি হতে হবে, ডার্ক ম্যাটার নিজেরা নিজেদের সাথে ইন্টারেক্ট করতে পারে না ইত্যাদি।

একটি সম্ভাবনা হল ডার্ক ম্যাটার হল মেসিভ কমপ্যাক্ট হ্যালো অবজেক্টস (MACHOs)। এরা হচ্ছে সেই ব্ল্যাকহোলগুলো যেগুলো সরাসরি বিগব্যাং এর এনার্জি ফ্লাকচুয়েশনের কারণে তৈরি হয়। MACHOs রা খুব আকর্ষণীয় হয় যখন এগুলো টেস্টিং হাইপোথিসিজের কাছে আসে, এসময় আমরা তাদের আশেপাশের আলাদা আলাদা বস্তুকে দেখতে পাই।

গ্র্যাভিটি বা মহাকর্ষের কারণে কিভাবে আলো বেঁকে যায় সেটা দেখে জ্যোতির্বিজ্ঞানীগণ MACHOs এর উপস্থিতি টের পান। যাই হোক, গ্র্যাভিটেশনাল লেন্সিং সার্ভে এর মধ্য দিয়ে এদের কোন এভিডেন্স পাওয়া যায় নি। এটা নির্দেশ করছে যে যদি তাদের অস্তিত্ব থাকে তাহলে তাদের ভর অন্তত সূর্যের চেয়ে ৩০ গুণ বেশি হবে। একই সাথে মিল্কিওয়ে এর বাইরের দিকের (এই এলাকা হ্যালো নামে পরিচিত) স্টেলার বাইনারিদের নিয়ে গবেষণায় পাওয়া যায় MACHOs এর ভর সর্বোচ্চ ১০০ সৌরভর হতে পারে।

সুতরাং এই ৩০ ও ১০০ সৌরভরের মাঝামাঝি ভরের ব্যাপারে কী বলা যায়? গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভের আবিষ্কারের ফলে MACHOs নিয়ে গবেষণা নতুন করে উদ্দীপনা পায়। গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভের সিগনালের জন্য যে ব্ল্যাকহোলগুলো দায়ী ছিল সেগুলো এই এলাউড ম্যাস রেঞ্জ এর মধ্যেই ছিল। আর এক্ষেত্রে তাই একটি ইন্টারেস্টিং প্রস্তাব ছিল যে এই MACHOs ই হল ডার্ক ম্যাটার। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্গণ এমটা প্রস্তাব করেছিলেন।

 

অবশিষ্ট রেঞ্জগুলো টেস্ট করার জন্য ব্রান্ট পর্যবেক্ষণ করেন কিভাবে নক্ষত্রগুলো ইরিডেনাস ২ এর কেন্দ্রের চারদিকে ঘোরে। ইরিডেনাস ২ হল একটি ছোট গ্যালাক্সি যা মিল্কিওয়ে এর চারদিকে ঘোরে। এই ছোট গ্যালাক্সিটি অনেক ঘন এবং এতে প্রচুর পরিমাণে ডার্ক ম্যাটার আছে। আর ব্র্যান্ট তার পর্যবেক্ষণকে ব্যাখ্যা করার জন্য হিসাব করেছেন যে MACHOs কে ১০ সৌরভরের চেয়ে কম ভরের হতে হবে।

ব্র্যান্টের গবেষণা আমাদেরকে দেখাচ্ছে যে MACHOs এর কোন রেঞ্জই ডার্ক ম্যাটারকে ব্যাখ্যা করতে পারেনা। এই অর্থ এই নয় যে সেখানে কোন প্রিমর্ডিয়াল ব্ল্যাকহোল নেই, এর অর্থ এই যে ডার্ক ম্যাটারকে অবশ্যই অন্য কিছু দিয়ে তৈরি হতে হবে।

 

তথ্যসূত্র:

  1. http://iopscience.iop.org/article/10.3847/2041-8205/824/2/L31/meta;jsessionid=A8EB5B4D27176253D2388C2A8874E283.c1.iopscience.cld.iop.org
  2. http://www.iflscience.com/space/gravitational-waves-observed-first-time/
  3. http://www.iflscience.com/space/do-gravitational-waves-hint-at-dark-matter/

 

1 Comment

  1. নিচের লাইনে সামান্য অসামঞ্জস্য দেখা যাচ্ছে, টাইপিং মিসটেক হতে পারে।
    //আরা তাই ব্ল্যাক হোল দিয়ে একে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা খুব একটা পাগলামি নয়।//
    সম্ভবত এখানে ‘নয়’ শব্দটা হবে না, উপরের প্যারা অনুসারে।

Leave a Reply to বর্ণমালা Cancel reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.