যে কারণে বিবর্তন হয়তো আমাদের ধারণার চেয়েও চতুর

বছরের পর বছর ধরে আমাদের বিজ্ঞানীরা বিতর্ক করে আসছেন যে ঠিক কতটুকু ব্যাপ্তি জুড়ে বিবর্তন লক্ষ্যহীণতা বা উদ্দেশ্যহীণতাকে (randomness) ধারণ করে চলছে। কিন্তু সাম্প্রতিক একটি পেপার দাবি করছে যে, বিবর্তন ব্যাপারটা হয়তো আমাদের প্রাথমিক ধারণার তুলনায় আরেকটু বেশি অগ্রসর- এবং সেটা শুধু তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গী থেকেই নয়।

ইউকেতে অবস্থিত University of Southampton এর  বিবর্তনবিদ, Richard Watson এর ভাষ্যমতে, বিবর্তন পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে “শিক্ষা গ্রহণ” করতে পারে না, যা হয়তো ব্যাখ্যা করতে পারতো যে উদ্দেশ্যহীণ একটা প্রক্রিয়া, প্রাকৃতিক নির্বাচন কিভাবে এত জটিল ও চতুর নকশাগুলো তৈরি করতে পারে।

Trends in Ecology & Evolution থেকে প্রাপ্ত, Watson এবং জার্মানির Parmenides Foundation এর Eörs Szathmáry বলেন, আমরা এখনো বিবর্তনের কার্যপ্রক্রিয়া সম্বন্ধে আমাদের ধারণাকে বিকশিত করতে পারি। তারা বলেন, নিউরাল নেটওয়ার্ক যেভাবে পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে বুদ্ধিমান আচরণগুলোকে বিকশিত করে, সেরকম শিক্ষা গ্রহণ পদ্ধতিকে নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আমরা এটা করতে পারি।

Watson বলেন “ডারউইনের বিবর্তনতত্ত্ব ড্রাইভিং পদ্ধতি সম্পর্কে বর্ণনা দেয়, কিন্তু শিক্ষা তত্ত্ব বা লার্নিং তত্ত্ব ডারউইনের ভাষ্য থেকে খুব একটা পৃথক নয়। এটা বিবর্তনের ক্ষমতা সম্পর্কে আমাদের ধারণার ব্যাপ্তি ঘটায়। এটা প্রমাণ করে যে উন্নত সমস্যা-সমাধানের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য উৎপন্নে প্রাকৃতিক নির্বাচন একাই যথেষ্ট।”

প্রচলিত বিবর্তনতত্ত্ব বলে কিভাবে সময়ের স্রোতে প্রাণীর বিবর্তনের সাথে ক্রমবর্ধমান অভিযোজনের জন্য উদ্দেশ্যহীণ পরিবর্তন এবং নির্বাচনই যথেষ্ট। কিন্তু Watson এবং Szathmáry এর মতে, এই পদ্ধতি লার্নিং থিওরির সাথে বেমানান নয়, যা দেখায় একটি প্রক্রিয়ার বিকাশে, যাকে আমরা ‘বুদ্ধিমান’ আচরণ বলে থাকি, তার জন্য কিভাবে ক্রমবর্ধমান অভিযোজন (একটি নিউরাল নেটওয়ার্কের মত) যথেষ্ট।

তিনি আরও বলেন, “আমরা যখন বিবর্তনের উৎপন্ন বিষ্ময়কর, আপাতদৃষ্টিতে বুদ্ধিমান নকশাগুলোর দিকে তাকাই, কিভাবে লক্ষ্যহীণ পরিবর্তন এবং নির্বাচন এদের উৎপাদন করেছে তা বুঝতে কিছু কল্পনার সাহায্য নিতে হয়। কিন্তু প্রাকৃতিক নির্বাচন কি তার নিজের পদ্ধতির প্রকৃষ্টতা ব্যখ্যা করতে পারে? এই আত্ম-উল্লেখ ধারণা প্রচলিত বিবর্তনতত্ত্বের জন্য সমস্যাজনক হলেও লার্নিং থিওরির জন্য নয়।”

তাঁরা বলেন, নতুন কিছু রিসার্চ ইতিমধ্যেই এই রকম লার্নিং বিবর্তন প্রদর্শন করছে, এমনকি অযৌন এবং যৌন প্রক্রিয়ায় প্রজননে সক্ষম উভয় ধরণের প্রাণীর নির্বাচনও।

Watson বলেন, “শিক্ষাতত্ত্ব বা লার্নিং থিওরি আমাদের এটা বুঝতে সাহায্য করে যে কিভাবে বিবর্তন সময়ের সাথে সাথে নিজের প্রক্রিয়া পরিবর্তন করতে থাকে। যেমন, যে অংশ পরিবর্তন ও নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করে তার বিবর্তনের মাধ্যমে বা যে অংশ প্রজননের সম্পর্কের গঠন যা পরবর্তী প্রজন্ম নিয়ন্ত্রণ করে তার বিবর্তনের মাধ্যমে- প্রাকৃতিক নির্বাচন তার নিজের বিবর্তন ক্ষমতা পরিবর্তন করতে পারে। যদি বিজ্ঞানীরা এই ধরণের শিক্ষাতত্ত্বকে তাদের বিবর্তন নিয়ে পড়াশোনার আওতায় নিয়ে আসে। আমরা নতুন উপায়ে বিবর্তনের ধাঁধা সমাধান করতে পারব এবং এও উপভোগ করতে পারব যে কিভাবে বিবর্তন এর বিষ্ময়কর ফলাফলগুলো উৎপন্ন করে।”

তিনি আরও বলেন, “যদি বিবর্তন নিজেই এর অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে পারে, এবং এভাবেই সময়ের সাথে নিজের বিবর্তন ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়, তবে তা বিবর্তনের ফলে উৎপন্ন চরম বিষ্ময়কর নকশাগুলো রহস্য উদঘাটনে উল্লেখযোগ্য সাহায্য করবে। প্রাকৃতিক নির্বাচন এমন জ্ঞান গ্রহণে সক্ষম যা একে সূক্ষ্ণভাবে বিবর্তনে সক্ষম করে তোলে। এটা রোমাঞ্চকর কারণ এটা ব্যাখ্যা করে যে কেন প্রাণের নকশাগুলো এত জটিল, সুনিপুণ এবং বুদ্ধিমান।”

 

তথ্যসূত্র:

  1. https://www.sciencedaily.com/releases/2015/12/151218085616.htm
  2. http://www.southampton.ac.uk/news/2015/12/evolution-learning-theory-study.page
  3. http://www.iflscience.com/plants-and-animals/intelligent-design-without-creator-why-evolution-may-be-smarter-we-thought/

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.