কিরকম দেখতে হবে এলিয়েনরা? চলুন দেখা যাক বিবর্তনবাদ কী বলে

Seen on allwallpapersfree.blogspot.com

এলিয়েনদের দেখতে কিরকম এই প্রশ্নটি কয়েক দশক ধরে বাচ্চাদের, ফিল্ম প্রোডিউসাদের এবং বিজ্ঞানীদের অনেক চিন্তার মধ্যে রেখেছে। যদি তাদের অস্তিত্ব থাকে তাহলে এদের দেখে কি আমাদের পরিচিত বলে মনে হবে? নাকি তাদের রূপ হবে আমাদের কল্পনারও অনেক ঊর্ধ্বে? এর উত্তর নির্ভর করছে আমরা বিবর্তনকে কতটা গভীরভাবে চিন্তা করি তার উপর।

হলিউড আমাদেরকে গত কয়েক বছরে হিউম্যানয়েড বা মানুষের মত দেখতে কিছু এলিয়েনের ধারণা দিয়েছে। প্রথম দিকে অভিনেতা অভিনেত্রীগণ রাবার স্যুট পরে এলিয়েন সাজতেন। আর এখন CGI বা কম্পিউটার জেনারেটেড ইমেজারি টেকনোলজি দিয়েই সব কিছু করে ফেলা যায়। কখনও কখনও এলিয়েনদেরকে সাধারণ মানুষের চাইতেও আরও বেশি মানুষ বলে মনে হয় যাতে তাদের সাথে চলচ্চিত্রের দর্শকদের মধ্যে একটি ইমোশনাল কানেকশন বা আবেগজনিত বন্ধন তৈরি হয়- যেমন জেমস ক্যামেরুনের অ্যাভাটার।

বর্তমানে, কেবল পৃথিবীতেই আমরা কোন লাইফফর্মকে গবেষণা করতে পারি। এই লাইফফর্মগুলোর একটি একক উৎস্য ছিল ৩.৫ বিলিয়ন বছর পূর্বে। আর আমাদের এই সাধারণ পূর্বপুরুষ একাই বর্তমানের প্রায় ২০ মিলিয়ন জীবিত প্রাণী প্রজাতির উদ্ভব ঘটিয়েছে। এই প্রাণীদের দেহ প্রায় ৩০টি ভিন্ন ভিন্ন বদি প্ল্যানের গ্রুপে ভাগ করা হয় যেগুলো ফাইলা নামের একটি মেজর গ্রুপে রয়েছে।

এই পাঁচ চোখ বিশিষ্ট ফসিল ওপাবিনিয়া থেকে বর্তমানে পাঁচ চোখ বিশিষ্ট প্রাণীর আবির্ভাব হতে পারত
এই পাঁচ চোখ বিশিষ্ট ফসিল ওপাবিনিয়া থেকে বর্তমানে পাঁচ চোখ বিশিষ্ট প্রাণীর আবির্ভাব হতে পারত

কিন্তু  যখন প্রাণীরা ৫৪২ মিলিয়ন বা তারও আগে ক্যাম্ব্রিয়ান এক্সপ্লোশনের সময় ডাইভার্সিফাইড হয়েছিল, তখন ফান্ডামেন্টাল বডি প্ল্যানগুলোর হয়তো আরও বেশি ডাইভার্সিটি বা বৈচিত্র্য ছিল। যেমন উপরের ছবির ৫ চোখ বিশিষ্ট Opabina এর কথা ভাবুন। অথবা ফুলের মত দেখতে প্রাণী Dinomischus ও সেই সাথে আমাদের নিজেদের দূরবর্তী রিলেটিভ কর্ডেট Pikaia এর কথাও ভাবতে পারেন।

 

জীবনের চলন্ত টেপ

 

একটি বিখ্যাত থট এক্সপেরিমেন্টে বায়োলজিস্ট স্টিফেন জে গুল্ড জিজ্ঞেস করেছিলেন, যদি আমরা আমাদের জীবনের টেপকে পিছন দিকে ঘুরাই বা রিওয়াইন্ড করি এবং আবার চালু করি তাহলে কী হবে ? গুল্ড ইভোল্যুশনে চান্স এর গুরুত্ব সম্পর্কে যুক্তি দিয়ে বলেন, প্রথম দিকের একটি সামান্য বিষয়ের পরিবর্তন করলে সময়ের সাথে সাথে এর কন্সিকোয়েন্স বা ফলাফল বর্ধিত হতে থাকবে। আমরা যেই ইতিহাসটিকে জানি তার সেই ভারশনে Pikaia (নিচের ছবি) বা একেবারে এরই মত কোন প্রাণী টিকে গিয়েছিল এবং চূড়ান্তভাবে এর থেকেই ফিশেস বা মৎস্য, এম্ফিবিয়ানস বা উভচর, রেপটাইল বা সরীসৃপ এবং ম্যামাল বা স্তন্যপায়ীর আবির্ভাব ঘটে, আবার এই স্তন্যপায়ীদের থেকে আবির্ভাব ঘটে আমাদের অর্থাৎ মানুষের। কিন্তু কি হত যদি এই প্রজাতিটি কোন কারণে ধ্বংস হয়ে যেত? হয়তো অন্য কোন গ্রুপ কোন বুদ্ধিমান জীবের উদ্ভব ঘটাত, হয়তো আপনি এই আর্টিকেলটি আপনার ওই দুটো চোখ দিয়ে না পড়ে ৫টা চোখ দিয়ে পড়তেন। এখন সময়কে রিওয়াইন্ড করে দিলে আমাদের এই মানুষের আবির্ভাবই যেখানে অনিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে সেখানে অন্য কোন গ্রহে এলিয়েনদের আমাদের মত করে বিবর্তিত হবার সম্ভাবনা কতখানি?

পিকাইয়া, একটি প্রাথমিক কর্ডেট। এদের গ্রুপে মানুষ অন্তর্ভূক্ত
পিকাইয়া, একটি প্রাথমিক কর্ডেট। এদের গ্রুপে মানুষ অন্তর্ভূক্ত

 

ইভোল্যুশনারি বায়োলজিস্ট সাইমন কনওয়ে মরিসের মতে এই প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে ইভোল্যুশনের একটি বিশেষ ফেনোমেনন ইভোল্যুশনারি কনভারজেন্স-এ। ইভোল্যুশনারি কনভারজেন্স হল একটি প্রক্রিয়া যার ফলে দূরবর্তী সম্পর্কের প্রাণীরা বিবর্তিত হয়ে দেখতে একে অপরের কাছাকাছি হয়ে যায়। যেমন ডলফিন, টুনা ফিশ এবং বিলুপ্ত ইখথিওসরদের প্রত্যাকেরই একই রকম স্ট্রিমলাইনড আকৃতি ছিল। এরা সকলেই আলাদা আলাদাভাবে পানিতে কার্যকরীভাবে দ্রূতবেগে ছোটার সিলেক্টিভ প্রেশারের কারণে একইরকম বৈশিষ্ট্যে বিবর্তিত হয়।

কিন্তু কী ধরণের এলিয়েন বায়োলজি আমরা আশা করতে পারি? কার্বন-বেজড বায়োকেমিস্ট্রি এরকম যে কার্বন একটি স্থিতিশীল ব্যাকবোন চেইন তৈরি করতে পারে এবং অন্যান্য এলিমেন্টের সাথে স্ট্যাবল কিন্তু ভাঙ্গা সহজ এরকম বন্ধন তৈরি করতে পারে। অন্যান্য এলিমেন্ট, বিশেষ করে সিলিকন এবং সালফার পৃথিবীর মত তাপমাত্রায় কম স্থিতিশীল বন্ধন তৈরি করে। পানি অথবা অন্যান্য দ্রাবকও এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়। বিবর্তন ঘটার জন্য সেখানে ডিএনএ, আরএনএ বা এর সমধর্মী কোন ইনফরমেশনকে স্টোরিং এবং রেপ্লিকেশনের মেকানিজমও থাকা প্রয়োজন। যদিও পৃথিবীতে প্রথম কোষ অনেক তাড়াতাড়ি চলে এসেছে, কিন্তু বহুকোষী প্রাণীর বিবর্তন হতে আরও ৩ বিলিয়ন বছর লেগে গেছে। সুতরাং এও তো হতে পারে যে অন্য গ্রহ জীবনের প্রথম স্টেজ, সেই এককোষী প্রাণীতেই আটকে আছে।

পৃথিবীর মত কোন গ্রহে, এলিয়েন সূর্য বা সূর্যগুলো থেকে রেডিয়েশনও শক্তির উৎস্য হিসেবে বায়োকেমিকেল পাথওয়েতে ব্যবহৃত হবে। মোটামুটিভাবে একটি বড় বহুকোষী প্রাইমারী প্রোডিউসার বা প্রাথমিক উৎপাদকদের জন্য সৌরশক্তিকে কার্যকরীভাবে ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে আর সেজন্য তার শাখা প্রশাখা ও পাতায় লাইট গ্যাদারিং সিস্টেমেরও প্রয়োজন হয়। এই পৃথিবীতে এক্ষেত্রে একইরকম আকার এবং স্বভাব এর কনভার্জেন্টলি বিবর্তন ঘটেছে। সুতরাং আমরা আশা করতেই পারি যে পৃথিবীর কোন গ্রহে উদ্ভিদও পৃথিবীর মতই হবে।

কিছু ব্যতিক্রম সহ, প্রাণীরা হয় প্রাইমারি প্রোডিউসার বা নিজেরা নিজেদেরকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করবে। আর এটা করার জন্য অনেকগুলো উপায় আছে। খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রায়ই প্রথমে মুখের ব্যবহার করতে হয়, সুতরাং প্রাণীদের প্রান্তদ্বয়ে মাথা ও লেজ থাকে। ফুড আইটেমগুলোকে ধরে রাখতে ও নিয়ন্ত্রণ করতে দাঁত ও চোয়ালের দরকার। শক্ত সারফেসের উপর দিয়ে চলাচলের জন্য বিশেষ ধরণের স্ট্রাকচারের দরকার যেমন সিলিয়া, মাসকুলার ফুট অথবা পা যাতে একটি সামনে ও পেছনের দিক থাকে। আর সাধারণত এরফলে বাইল্যাটারাল সিমেট্রি বা দ্বিপার্শ্বিক প্রতিসমতা (ডান বা বাম) তৈরি হয়। আসলে বেশিরভাগ প্রাণীই বাইল্যাটারিয়া নামের সুপারগ্রুপের মধ্যে পড়ে।

 

কেন জায়ান্ট ইন্টেলিজেন্ট “ইনসেক্ট” নেই? 

জায়ান্ট ওয়েটা, বৃহত্তম ইনসেক্টগুলোর মধ্যে একটি
জায়ান্ট ওয়েটা, বৃহত্তম ইনসেক্টগুলোর মধ্যে একটি

 

কিন্তু বড় মস্তিষ্ক যুক্ত বুদ্ধিপ্রাণ প্রাণী যারা ইন্টারস্টেলার ডিস্টেন্স বা আন্তনাক্ষত্রিক দূরত্ব পাড়ি দিতে সক্ষম তাদের বেলায় কী বলা যায়? ইনসেক্ট বা পতঙ্গরা এপর্যন্ত পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি স্পিসিজ রিচ বা প্রজাতিবহুল গ্রুপ। কেন এলিয়েনরা তাদের মত দেখতে হতে পারে না? দূর্ভাগ্যবশত কঙ্কালতন্ত্র বাইরের দিকে থাকলে বৃদ্ধি খুব কঠিন হয়ে যায়। এর সাথে পিরিয়ডিক শেডিং এবং রিগ্রোথ এর ব্যাপারথাকে। পৃথিবীর মত কোন গ্রহে বহিকঙ্কালযুক্ত ছোট টেরেস্ট্রিয়াল প্রাণীরা মৌল্টিং এর সময় তাদের নিজেদের ভরের জন্যই কলাপ্স করবে। এছাড়া জটিল মস্তিষ্কের জন্য একটা নির্দিষ্ট আকারের প্রয়োজন হয়।

তুলনামূলকভাবে বড় মস্তিষ্ক, সরঞ্জামাদি ব্যবহারের কিছু মাত্রা এবং সমস্যা সমাধানের ক্ষমতাকে পৃথিবীর সাথে সম্পর্কিত বলে মনে হয়। এবং এইগুণগুলো কয়েকবার বিবর্তিত হয়েছে এপ, তিমি, ডলফিন, কুকুর, টিয়া, কাক এবং অক্টোপাসের বেলায়। কিন্তু এপরা টুল বা সরঞ্জামাদি বড় মাত্রায় ব্যবহার করার ক্ষমতা ডেভেলপ করেছে। আর এটা অংশত দুই পায় হাঁটার কারণে হয়েছে, কারণ এর ফলে সামনের দুই হাত ফ্রি হয়ে গেছে, এবং সেই সাথে আমাদের আঙ্গুলের ডেক্সটারিটির জন্যেও (একারণে আমাদের মাঝে লিখিত ভাষারও বিকাশ ঘটেছে)।

সুতরাং জুরির রায় অনেকটা এরকমই যে, যদি বুদ্ধিমান এলিয়েনের অস্তিত্ব থেকেই থাকে তাহলে তারা দেখতে আমাদের সদৃশ হবে। এক্ষেত্রে মানুষের কেবল দুই চোখ এবং দুই কান (যা স্টেরিও ভিশন এবং হেয়ারিং এর জন্য একেবারে যথেষ্ট), এবং কেবল দুটো পা (যা প্রাথমিক  স্থিতিশীল চারটি পা থেকে কমে দুটো হয়েছে) গুরুত্বপূর্ণ হতেও পারে, আবার নাও হতে পারে। আমাদের শরীরে অন্যান্য আরও অঙ্গ এসেছে কেবল সম্ভবত অনিবার্য বাইল্যাটারাল সিমেট্রির কারণে। তবুও আমাদের শরীরের অন্যান্য অনেক অঙ্গই সম্ভবত কেবল চান্সের কারণেই এসেছে। আমাদের হাতে এবং পায়ে যে পাঁচটা করে আঙ্গুল আছে তা আমাদের চতুষ্পদ পূর্বপুরুষের পাঁচটা আঙ্গুলে স্থিতি হওয়ারই কারণে। তাদের অনেক ক্লোজ রিলেটিভের সাতটা বা আটটা করে আঙ্গুল ছিল।

আসলে ডেভেলপমেন্টের সময় সকল প্রজাতিই কোন না কোন এক্সিডেন্টাল “লকিং ডাউন” এর শিকার, যার ফলে বডি প্ল্যান স্টেরিওটাইপড হয়ে যায় এবং ইভোল্যুশনারি টাইমের সাথে ইনফ্লেক্সিবল বা অনমনীয় হয়ে যায়। এগুলোর বিবর্তন আমাদের শরীরে কেবল চান্স বা এক্সিডেন্টের কারণেই হয়, ফাংশনিং বা কোন কাজের সুবিধার জন্য হয় না। এই এক্সিডেন্টাল বিষয়গুলোর থেকে ফাংশনালগুলোকে জটমুক্ত করা হল ইভোল্যুশনারি বায়োলজির একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ। আর এটা আমাদেরকে এলিয়েন লাইফফর্ম কিভাবে আমাদের চেয়ে ভিন্ন হতে পারে তা বুঝতে সাহায্য করবে।

স্পেসে ইন্টেলিজেন্ট লাইফ খোঁজার ক্ষেত্রে আমাদের প্রধান উপায় হল রেডিও অথবা গামা ট্রান্সমিশন শোনা। এই প্রচেষ্টাগুলো পৃথিবীর মত গ্রহগুলোর সৌরজগতের প্রতি মনোযোগ দিয়েই করা হয়েছে কারণ এগুলোকেই জীবন ধারণের জন্য সবচেয়ে উপযোগী বলে মনে করা হয়। কারণ “না জানা জীবনকে” খোঁজার চেয়ে “জানা জীবনকে” খোঁজাই অনেক বেশি সহজ।

 

তথ্যসূত্র: 

  1. http://www.nytimes.com/2002/05/21/us/stephen-jay-gould-60-is-dead-enlivened-evolutionary-theory.html?pagewanted=all
  2. http://pandasthumb.org/archives/2004/07/simulating-the.html
  3. http://evolution.berkeley.edu/evolibrary/article/evograms_04
  4. http://www.scientificamerican.com/article/why-do-most-species-have/

 

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.