নিউট্রন স্টারের কলিশন উদ্ঘাটন করতে পারে এক্সোটিক ম্যাটারের গোপন রহস্য

ফান্ডামেন্টাল ফিজিক্সের সবচেয়ে জটিল এক্সপেরিমেন্টগুলোর অনেকগুলোর ক্ষেত্রেই প্রচুর পরিমাণে শক্তি এবং বৃহৎ ল্যাবরেটরির প্রয়োজন হয়। আর এক্ষেত্রে পৃথিবীর সবচেয়ে এডভান্সড ল্যাবরেটরি সার্নও (CERN) মহাবিশ্বের ব্যাখ্যা দেবার জন্য পদার্থবিদদের চিন্তাগুলোর প্রত্যেকটিকে পরীক্ষা করার ক্ষমতা রাখে না।

কিন্তু ভিখারিরা তো আর পছন্দ করার উপায় থাকে না। ইউনিভার্সিটি অব হেলসিংকির দুজন গবেষক আশা করছেন যে, কোয়ান্টাম ফিজিক্সের একটা উত্তর তারা আকাশ থেকে পাবেন। কথাটা আক্ষরিক অর্থেই সত্য কারণ সঠিক ভাবে বললে তারা এই উত্তরটি পাবেন নিউট্রন স্টারের মধ্যকার কলিশন বা ধাক্কার মধ্য দিয়ে।

নিউট্রন স্টার হল সুপারনোভার প্রচণ্ড ঘন অবশেষ। তারা এতটাই ঘন যে মাত্র ৩০ কিলোমিটার ব্যাসের নিউট্রন স্টারে থাকে সূর্যযের ভরের দ্বিগুণ পরিমাণ ভর। তারা ডিজেনারেট ম্যাটার দিয়ে তৈরি যেখানে পরমাণুগুলো খুব টাইটলি বা আঁটসাঁটভাবে একত্রে লেগে থাকে। কিন্তু এক্ষেত্রে একটা সন্দেহ আছে যে তাদের কোরে বা কেন্দ্রে আসলে কী ঘটে।

গবেষক আলেক্সি কারকেলা এবং আলেক্সি ভুওরিনেন বেশ কিছু অপশন নিয়ে চিন্তা করেন। তারা বলেন নিউট্রন স্টারগুলো এক্সট্রিম কন্ডিশন বা চরম অবস্থায় সাধারণ ম্যাটার দিয়ে প্রস্তুত হতে পারে। অথবা এই চরম অবস্থার ফলে কোন স্টেট অব ম্যাটার তৈরি করে যা আগে আমরা কোনদিন দেখি নি, যেমন ডিকনফাইনড (মুক্তভাবে ঘুরে বেড়ানো) কোয়ার্ক ম্যাটার।

ফিজিক্স রিভিউ লেটারস  জার্নালে তারা একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন। সেখানে তারা দুটো নিউট্রন স্টার একসাথে যুক্ত হলে বা তাদের মধ্যে সংঘর্ষ হলে কিভাবে বিভিন্ন কোর সিনারিও বা কেন্দ্রের ঘটনা তাদের থেকে নিঃসৃত গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভকে প্রভাবিত করবে সে তার একটা হিসাব করেছেন। শীঘ্রই LIGO এর মত ইনস্ট্রুমেন্টগুলো এই ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করতে পারবে।

ভুওরিনেন বলেন, “শেষ পর্যন্ত আমরা এই প্রশ্নটির একটি উত্তর পেতে পারি যে, নিউট্রন স্টার পুরোপুরি সাধারণ বা অর্ডিনারি এটমিক নিউক্লিয়াস দিয়ে তৈরি নাকি তারা ডিকনফাইনড কোয়ার্ক ম্যাটার এর ফর্মে আরও এক্সোটিক ম্যাটার দিয়ে তৈরি”।

কোয়ার্ক হল প্রোটন ও নিউট্রনের ফান্ডামেন্টাল কমপোনেন্ট বা মৌলিক অংশ। আর প্রোটন ও নিউট্রন পরমাণুর কেন্দ্রে অবস্থান করে। কোয়ার্করা সবসময় বাউন্ড বা যুক্ত হয়ে অবস্থান করে। হয় তিনটি কোয়ার্ক একত্রে যুক্ত হয়ে প্রোটনের মত ট্রিপলেট গঠন করে। নয়তো দুটো কোয়ার্ক যুক্ত হয়ে মেসোসের মত কাপল গঠন করে। এছাড়া ল্যাবে চারটি কোয়ার্ক নিয়ে টেট্রাকোয়ার্ক এবং পাঁচটা কোয়ার্ক নিয়ে পেন্টাকোয়ার্কও প্রস্তুত করা হয়েছে। আমরা যা কোনদিন পাইনি তাহল একটি সিংগেল বা একক কোয়ার্ক। কিন্তু এই মুক্ত বা ডিকনফাইন্ড কোয়ার্ক একটি অবস্থা বা স্টেট হতে পারে যেখানে কোয়ার্করা কোন প্লাজমায় মুক্তভাবে চলাচল করতে পারে।

এই গবেষণাটি এবসল্যুট জিরো এর চেয়ে উচ্চ তাপমাত্রায় এই কোয়ার্কের মডেল তৈরির উপকরণের জোগান দিচ্ছে যা নিউট্রন স্টারের কোরের মডেল তৈরিতে সাহায্য করবে যেখানে তাপমাত্রা বিলিয়ন বিলিয়ন ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড।

এখন আমাদের দৃষ্টি হচ্ছে LIGO এর দিকে। এই বছর তারা তাদের অবজার্ভেশন আবার শুরু করলে আশা করা যায় বিজ্ঞানীগণ কোন নিউট্রন স্টারের কলিশন দেখে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারবেন।

 

তথ্যসূত্র:

  1. http://journals.aps.org/prl/abstract/10.1103/PhysRevLett.117.042501
  2. https://www.helsinki.fi/en/news/mapping-the-exotic-matter-inside-neutron-stars

 

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.