ওয়ার্ম হোল কি ব্ল্যাকহোলের কেন্দ্রের ইনফিনিট সিংগুলারিটি সমস্যার সমাধান দিতে পারবে?

ইউনিভার্সিটি অব ভ্যালেন্সিয়া এবং ইউনিভার্সিটি অব লিসবনের গবেষকগণ ব্ল্যাকহোলের একটি সমস্যার সমাধান করার জন্য জেনারেল রিলেভিটির ঊর্ধ্বে গিয়ে চেষ্টা করছেন। আর এই সমস্যাটি হল ব্ল্যাকহোলের কেন্দ্রের ইনফিনিট সিংগুলারিটি।

তারা যে ব্ল্যাকহোল নিয়ে কাজ করছেন তা একটি স্পেশাল কেস, যেটার অস্তিত্ব প্রকৃতিতে নেই। কারণ এটা ইলেক্ট্রিকালি চার্জড অবস্থায় থাকে এবং এটা ঘুর্ণনরত নয় (আসল বা রিয়াল ব্ল্যাকহোল ঘুর্ণনরত এবং চার্জবিহীন হয়ে থাকে)। তাদের সল্যুশনে সিংগুলারিটি কোন ইনফিনিটি ডেন্সিটি বা অসীম ঘনত্ব নয়, বরং এখানে সিংগুলারিটি হল ওয়ার্মহোল। ওয়ার্মহোল হল একটি ভিন্ন স্থান ও কালে যাবার জন্য একটি ব্রিজ।

এই সল্যুশন বা সমাধানে পৌঁছানোর জন্য বিজ্ঞানীগণ ব্ল্যাকহোলের সাথে একটি গ্রাফিন লেয়ার বা ক্রিস্টালের তুলনা করেন। কারণ এদের জ্যামিতি থেকে ব্ল্যাকহোলের মাঝে স্পেসটাইম এবং সিংগুলারিটি এর জ্যামিতি বা জিওম্যাট্রি তৈরি করা যাবে। এটা ক্লাসিকাল এন্ড কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি  জার্নালে প্রকাশিত হয়।

ইউনিভার্সিটি অব ভ্যালেন্সিয়া এর প্রফেসর এবং গবেষণাটির প্রধান অথর গনজালো অলমো বলেন, “মাইক্রোস্কোপিক স্ট্রাকচারে ক্রিস্টালের যেমন ইম্পারফেকশন বা ত্রুটি থাকে, ব্ল্যাকহোলের কেন্দ্রীয় অঞ্চলটিকেও একইরকম ভাবে স্পেসটাইম বা স্থানকালের এনোমালি বা অসঙ্গতি হিসেবে ব্যখ্যা করা যায়। আমরা সকল সাম্ভাব্য অপশন নিয়ে চিন্তা করেছি এবং প্রকৃতিতে দেখা বিষয়গুলো থেকে উৎসাহিত হয়েছি”।

ব্ল্যাকহোলের সিংগুলারিটি যে অবিশ্বাস্য রকমের জটিল সেটা বারবার প্রমাণিত হয়েছে। আর এটার পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য রিলেটিভিটি এবং কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে একত্রিত করা জরুরি। কিন্তু সমস্যা হল রিলেটিভিটি এবং কোয়ান্টাম মেকানিক্স একত্রে ভাল কাজ করে না।

অলমো বলেন, “আমাদের থিওরিটি প্রাকৃতিকভাবেই ইলেক্ট্রিকালি চার্জড বা তরিতাহিত ব্ল্যাকহোলের কিছু সমস্যার সমাধান করে ফেলে। প্রথমে আমরা সিংগুলারিটি সমস্যার সমাধান করি যেহেতু ব্ল্যাকহোলের কেন্দ্রে ওয়ার্মহোল নামের একটি দরজা আছে  যার মধ্য দিয়ে স্পেস এবং টাইম কনটিনিউ করতে পারে”।

তাদের এই ব্যাখ্যায় ইলেক্ট্রিক চার্জড ব্ল্যাকহোলের সিংগুলারিটি একটি ওয়ার্মহোল দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়, অর্থাৎ সেখানে যে সিংগুলারিটির কথা ধরা হচ্ছে তা আসলে একটি ওয়ার্মহোল। আর এখানে এই ওয়ার্মহোলের আকার সেই ব্ল্যাকহোলের ইলেক্ট্রিকাল চার্জ বা তড়িৎ আধানের সমানুপাতিক। চার্জের পরিমাণ যত বড় হবে, ওয়ার্মহোলের আকারও তত বড় হবে। তাত্ত্বিকভাবে, একজন সাহসী আবিষ্কারক যদি ব্ল্যাকহোলে প্রবেশ করতে পারেন যেখানে তিনি একটি ইন্টেন্স টাইডাল ফোর্স দ্বারা স্ট্রেচড হবেন (এই প্রক্রিয়াটি স্প্যাঘেটিফিকেশন নামে পরিচিত), তাহলে তিনি এরপর ওয়ার্মহোল দিয়ে প্রবেশ করবেন এবং মহাবিশ্বে আবার একটি পিস হিসেবে ফিরে আসবেন।

এই আবিষ্কারটি সকলের মনে অনেক কৌতুহলের জন্ম দিচ্ছে কারণ যদিও জেনারেল রিলেটিভিটি ওয়ার্মহোলের ভবিষ্যদ্বাণী করে, তাদের স্ট্যাবল বা স্থিতিশীল করার জন্য কিছু এক্সোটিক ম্যাটারের প্রয়োজন হয়। কিন্তু এই ওয়ার্মহোলগুলো সরলভাবেই সাধারণ ম্যাটার ও এনার্জি নিয়েই তৈরি হয়।

প্রকৃতিতে ইলেক্ট্রিক চার্জড ব্ল্যাকহোল তৈরি হতে পারে বলে মনে করা হয় না। কিন্তু ব্ল্যাকহোলের বৈশিষ্ট্যগুলো তদন্ত করার জন্য বিশেষ করে যদি ব্ল্যাকহোলটি স্ট্যাবল ওয়ার্মহোলের মত কোন সমাধানের দিকে নিয়ে যায় তাহলে এই ইলেক্ট্রিকালি চার্জড ব্ল্যাকহোলের যথেষ্ট গুরুত্ব আছে। এছাড়া একটা সময়ে তো আসল ব্ল্যাকহোলকেও কেবল তাত্ত্বিক বা থিওরেটিকাল আইডিয়া বলেই মনে করা হত, তাই না?

 

তথ্যসূত্র:

  1. http://iopscience.iop.org/article/10.1088/0264-9381/33/11/115007/meta;jsessionid=AB21556A1ADC6FA97C82F9BA6C56DF98.c3.iopscience.cld.iop.org
  2. http://ruvid.org/ri-world/black-holes-might-have-a-back-door/

 

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.