পারমাণবিক পর্যায়ে তাপগতিবিদ্যাও অদ্ভুত হয়ে যায়

আইস কিউব গলে যায় আর গরম কফি ঠাণ্ডা হয়। এই ব্যাপারগুলো আমাদের মাঝে খুব পরিচিত যেগুলো থার্মোডাইনামিক্স বা তাপগতিবিদ্যার সূত্র দিয়ে ব্যাখ্যা করা হয়। কোন ডিভাইসে, বস্তুগুলো সবসময় একই তাপমাত্রা লাভ করতে চায় যাকে থার্মোডাইনামিক ইকুইলিব্রিয়াম বা তাপীয় সাম্যাবস্থা বলে।

কিন্তু বিষয়টি যখন আলাদা আলাদা পরমাণুর ক্ষেত্রে চিন্তা করা হয়, তখন এটা আর তেমন সহজ সরল থাকে না। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফর্নিয়া এর গবেষকগণ বাফার গ্যাস কুলিং প্রক্রিয়াটি নিয়ে গবেষণা করেছেন। এটা একটি পদ্ধতি যেখানে আয়নদেরকে ঠাণ্ডা পরমাণুর ক্লাউড বা মেঘে ডুবিয়ে ঠাণ্ডা করা হয়।  প্রচলিত ধারণা অনুসারে, ঠাণ্ডা এটমগুলোর আয়নগুলো থেকে শক্তি গ্রহণ করার কথা এবং এর ফলে ঠাণ্ডা আয়ন পাওয়া যাবার কথা।

কিন্তু এক্ষেত্রে সবসময় তেমনটা ঘটে না। নেচার কমিউনিকেশনস  জার্নালে প্রকাশিত একটি পেপারে গবেষকদের এই দলটি আবিষ্কার করেছেন যে, আয়নগুলোর চূড়ান্ত তাপমাত্রা এদের আদি বা প্রাথমিক তাপমাত্রা এবং  আয়নের সংখ্যার উপরে নির্ভর করে।

গবেষণাটির কোঅথর প্রফেসর এরিক হাডসন বলেন, ” তাপগতিবিদ্যার সূত্র থেকে এই আপাত বিচ্যুতির বিষয়টি এরকম যে, একটি উষ্ণ আপেলের পাই ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা হবে নাকি বাষ্পে পরিণত হয়ে যাবে তা নির্ভর করে পাইটিকে যখন জানালার কাছে ঠাণ্ডা করতে রাখা হয়েছিল তখন তার তাপমাত্রা কত ছিল তার উপর”। (পাইকে ঠাণ্ডা করার জন্য সাধারণত জানালার পাশে রাখা হয়)।

এই বিশেষ গবেষণায়, গবেষকগণ ৩ মিলিয়ন লেজার-কুলড ক্যালসিয়াম ক্লাউডের এটমের মাঝে ১০টি বেরিয়াম আয়নকে প্রবেশ করিয়ে তাদেরকে ঠাণ্ডা করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দেখা যায় কোন কোন সময়ে তারা ঠাণ্ডা হয় নি।

এই পদ্ধতিটি একরকম মিনিয়েচার ফ্রিজের মত। এখানে একটি কুল্যান্ট থাকে (ঠাণ্ডা পরমাণুগুলো) যেগুলো অন্য কিছু থেকে তাপ শোষণ করে নেয়। দুর্ভাগ্যবশত এই পারমাণবিক পর্যায়ে নন-ইকুইলিব্রিয়াম বা অসাম্যাবস্থার অবস্থা দেখা যায়। বাফার গ্যাস কুলিং অবশ্যই পূর্বে যা ভাবা হয়েছিল তার চেয়ে অনেক বেশি জটিল এবং সূক্ষ্ম। এক্ষেত্রে সমগ্র সিস্টেমের জটিলতাকেই বিবেচনায় আনতে হবে।

গবেষণাটির লিড-অথর স্টিভেন শোয়াল্টার জানান,  “আমাদের প্রাপ্ত এই ফলাফলটি দেখায় যে, আপনি আপনার ডিভাইসে কোন বাফার গ্যাসকে ব্যবহার করতে পারবেন না, তা যতই ঠাণ্ডা হোক না কেন এবং যতই কার্যকরী কুল্যান্ট বলে একে মনে করা হোক না কেন।

এই আবিষ্কারটি অবশ্যই তাপগতিবিদ্যার সূত্রের লঙ্ঘন নয়। কিন্তু এটা আমাদের দেখাচ্ছে যে মাইক্রোওয়ার্ল্ডে প্রবেশ করলে কোন ভাল এবং প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতিও অদ্ভুত হয়ে উঠতে পারে। যেহেতু বাফার গ্যাস কুলিং এর ফরেন্সিক কাজ থেকে এন্টিম্যাটার প্রোডাকশন পর্যন্ত অনেক রকম প্রয়োগ আছে, এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গভাবে জ্ঞান অর্জন করা অনেক জরুরি।

 

তথ্যসূত্র:

  1. http://www.nature.com/ncomms/2016/160811/ncomms12448/full/ncomms12448.html
  2. http://newsroom.ucla.edu/releases/ucla-physicists-discover-apparent-departure-from-the-laws-of-thermodynamics

 

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.