নারী এথলেটদের “নারীত্বের” পরীক্ষা এবং বর্তমান হাইপারএন্ড্রোজেনিজম সমস্যা

লন্ডন ২০১২ অলিম্পিকে ৮০০ মিটার ফাইনালে রৌপ্য হয়ের পর ক্যাস্টার সেমেনেয়া

এই বছর ১২ই অগাস্টে দুতি চাঁদ অলিম্পিকের আসরে ভারতকে প্রতিনিধিত্বকারী ২য় নারী স্প্রিন্টার হিসেবে যোগ দিলেন। রিওতে যোগ দিতে তার কোন সমস্যা হয় নি।

২০১৪ সালে ইন্টারন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব এথলেটিক ফেডারেশন তাকে প্রতিযোগীতা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। আর এর কারণ ছিল, তার শরীর অনেক বেশি মাত্রার টেস্টোস্টেরন উৎপাদন করে। এই কন্ডিশনটার নাম হল হাইপাএন্ড্রোজেনিজম। সংগঠনটি থেকে ব্যাখ্যা করা হয় এটা তার দোষ ছিল না, কিন্তু IAAF পলিসি অনুসারে তার শারীরিক অবস্থাটাই তাকে একজন নারী এথলেট হিসেবে অধিক সুবিধা দেয়।

২০১৫ সালের জুলাইয়ে দুতি চাঁদ কোর্ট অব আরবিট্রেশনে এর জন্য আপিল করলে IAAF জানায়, “হাইপারএন্ড্রোজেনিক নারী এথলেটরা তাদের শারীরিক অবস্থার কারণে কোন তাৎপর্যপূর্ণ সুবিধা লাভ করতে পারে কিনা যাতে সেই এথলেটকে নারী ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগীতা থেকে বাদ দেয়া যায়, এ বিষয়ে IAAF কোন উপসংহার টানতে পারে নি”।

আরবিট্রেটরগণ IAAFকে তাদের পলিসির সপক্ষে সাক্ষ্যপ্রমাণ পেশ করতে দুই বছর সময় দেন। ততক্ষণ পর্যন্ত সংগঠনকে অবশ্যই হরমোন টেস্ট স্থগিত রাখতে হবে বলে জানানো হয়। এটা ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটি মেনে নেয় এবং এর ফলস্বরূপ হরমোন লেভেল না কমিয়েই দুতি চাঁদ এবং অন্যান্য হাইপারএন্ড্রোজেনিক নারী ২০১৬ সালের অলিম্পিকে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়ে যান।

দুতি চাঁদের এই কেসটি ছিল এরকম বড় খেলার আসরে নারী এথলেটদের সেক্স-টেস্টিং এর দীর্ঘ ইতিহাসের সর্বাধুনিক সংযোজন। যদিও এই টেস্ট সময়ের সাথে সাথে অনেকটাই বদলে গেছে, টেস্টগুলোর লক্ষ্যটি এখনও বদলায় নি। সেই লক্ষ্যটি হল, নারী এথলেটদের যথাসম্ভব “নারী” হিসেবে নিশ্চিত করা। আমি সবকিছু বিবেচনা করেই বলছি, উচ্চমাত্রার টেস্টোস্টেরণ যদি কোন নারী এথলেটকে তুলনামূলকভাবে বেশি সুবিধা দেবে কিনা এটা একটা ভুল প্রশ্ন। বরং এক্ষেত্রে আমাদের প্রশ্ন হওয়া উচিৎ, “তাতে কী?”

 

নারী এথলেটদের সেক্স-টেস্টিং এর দীর্ঘ ইতিহাস

বিংশ শতকে ইন্টারন্যাশনাল এথলেটিক্স এর সম্মান এবং গুরুত্ব উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকলে সমালোচকদের মাথায় একটি নতুন দুশ্চিন্তা উঁকি দিতে শুরু করে। খেলায় জিতে সম্মান অর্জনের জন্য পুরুষ এথলেটরা “জেন্ডার ফ্রড” বা “লৈঙ্গিক জালিয়াতি” এর আশ্রয় নিতে থাকে তাহলে কী হবে? আর এজন্য IAAF নতুন নতুন পলিসি তৈরি করতে থাকে। যেমন ১৯৪৬ সালে নারী প্রতিযোগীদেরকে তাদের লিঙ্গ নিশ্চিত করার জন্য মেডিকেল সার্টিফিকেট জমা দিতে হত। ১৯৬৬ সালে ইউরোপিয়ান এথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে নারী প্রতিযোগীদেরকে তিনজন গাইনেকোলজিস্ট এর সামনে “নিউড প্যারেড” এ অংশ নিতে হত। এর কারণ ছিল, সেসময় লাইফ ম্যাগাজিন রিপোর্ট করেছিল, সেসময় কয়েকজন নারী এথলেটদের নাকি পুরুষোচিত পারফরমেন্স করতে দেখা গেছে। একই বছরে কমনওয়েলথ গেমসের নারী এথলেটদেরকে তাদের লিঙ্গের প্রমাণ দেয়ার জন্য গাইনেকোলজিকাল পরীক্ষা দিতে হত। ব্রিটিশ পেন্টাথলেট মেরি পিটারস তার অটোবায়োগ্রাফিতে উল্লেখ করেছেন যে, এটা তার জীবনের সবচেয়ে অভদ্র এবং লজ্জাজনক অভিজ্ঞতা ছিল।

১৯৬৭ সালে IAAF একটি “সরল, অধিক প্রাসঙ্গিক এবং সম্মানজনক” ল্যাবরেটরি-বেজড ক্রোমোজোম এসেসমেন্ট এর টেস্ট এর ব্যবস্থা করেছিল। এক্ষেত্রে প্রত্যেক নারী এথলেটের গালের কোষ থেকে নেয়া ক্রোমোজম পরীক্ষা করা হত। এক্ষেত্রে সেক্স ক্রোমোজম যদি XX হত তাহলে তার “ফিমেলনেস” বা “নারীত্ব” প্রমাণিত হয়ে যেত। কিন্তু ফলাফল যদি সেটা ভিন্ন অন্য কিছু হয় তাহলে তার কেরিয়ার সেখানেই শেষ। কিন্তু এরকমও কিছু জেনেটিক এবং বায়োলজিকাল ভেরিয়েশন আছে যা আমাদের চেনা এই ক্রোমোজোমভিত্তিক লৈঙ্গিক পার্থক্যের ধারণাটিকে অনেক জটিল করে দেয়।

পোলিশ স্প্রিন্টার এওয়া ক্লোবুকোস্কাকে ১৯৬৭ সালে স্পোর্টস থেকে বাদ দিয়ে দেয়া হয় কারণ তার ক্ষেত্রে অনেক জায়গায় Y ক্রোমোজম ছিল। তিনি ছিলেন XX/XXY এর একটি জেনেটিক মোজাইক। এক্ষেত্রে তার শরীরের কিছু ক্ষেত্রে XX ক্রোমোজোম আর কিছু ক্ষেত্রে XXY ক্রোমোজোম ছিল। IAAF থেকে জানানো হয় যে, তার বেলায় “one chromosome too many” এর কারণে তাকে নারী বলা যাচ্ছে না। IAAF তার সকল বিজয় বাতিল করে, রেকর্ড বুক থেকে তার নাম কেটে দেয় এবং তার মেডেলগুলোও বাতিল করে। এই পদকগুলোর মধ্যে ১৯৬৪ সালের অলিম্পিকে জেতা গোল্ড এবং ব্রোঞ্জ মেডেলও ছিল। আর এসবই হয় তার প্রকৃতিগত অবস্থার কারণে যা তার জয়ের জন্য খুব সামান্য পরিমাণে প্রভাব রাখতে সক্ষম।

২১ বছর বয়সেই তার এথলেটিক কেরিয়ার শেষ হয়ে যায়। তিনি বলেন, “এটা আমার জীবনে একটা নোংরা এবং বাজে বিষয় ছিল। আমি জানি আমি কী এবং আমি কিরকম অনুভব করি”।

এরপর অনেক নারী এথলেটকেই পাওয়া যায় যাদের শরীরে XY ক্রোমোজোম ছিল, যেমন স্প্যানিশ হার্ডলার মার্তিনেজ পাতিনো। তিনি ১৯৮৫ সালে ডিসকোয়ালিফাইড হয়েছিলেন। তিনি এতে চ্যালেঞ্জ করেন। চ্যালেঞ্জ করার পর তিনি সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হন কারণ তার এন্ড্রোজেন ইনসেন্সিটিভিটি সিন্ড্রোম ছিল। এটা একটি শারীরিক অবস্থা যেখানে ব্যক্তি জেনেটিকালি পুরুষ হলেও শরীর প্রাকৃতিক বা কৃত্রিমভাবে মেল হরমোন যেমন এন্ড্রোজেন, টেস্টোস্টেরনের প্রতি কোন ধরণের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে পারে না। এবং এর ফলে ব্যক্তি নারী হিসেবেই বেড়ে ওঠে।

এওয়া ক্লোবুকোস্কা
এওয়া ক্লোবুকোস্কা

 

বাধ্যতামূলক টেস্টিং এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ

পরীক্ষা নিরীক্ষার ফলাফলগুলো গোপন রাখা হত যেকারণে আমাদের কাছে তথ্য নেই যে ঠিক কতজন নারীকে খেলাধুলা থেকে এই সমস্ত কারণে বাদ দেয়া হয়েছে। গবেষকগণ ধারণা করেছেন, ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সেক্স টেস্টিং এর মাধ্যমে প্রায় প্রতি ৫০৪ জনের মধ্যে একজন এলিট এথলেটকে ছাটাই করা হয়েছে। একই ভাগ্য বরণ করতে হয়েছে অনেক নিম্নপর্যায়ে খেলা নারী এথলেটকেও। অথবা তারা “নারীত্বের” স্ট্যান্ডার্ডে নিজেদের খাপ খাওয়াতে পারবেন না এই ভয়ে নিজেরাই সরে পড়েন। এরকম নারী এথলেটদের সংখ্যা ঠিক কত তা আমাদের কাছে অজানা।

প্রথম থেকেই এই সব টেস্ট এর বৈধতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রতিবাদ হয়েছিল। নব্বই এর দশকের শুরুর দিকে এই আন্দোলন অনেক বেড়ে যায়, যার ফলশ্রুতিতে ১৯৯২ সালের মে মাসে IAAF সিস্টেমেটিক ক্রোমোজোমাল টেস্টিং এর ইতি টানে। আর IOC (ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক অমিটি) ১৯৯৯ সালে এই টেস্টিংকে বাতিল করে। কিন্তু এই দুটো সংস্থাতেই কোন নারী এথলেটকে তাদের নারীত্ব নিয়ে চ্যালেঞ্জ করা হলে সেই এথলেটের উপর পরীক্ষা নিরীক্ষা করার অধিকার বহাল থাকে। সুতরাং বাহ্যিকভাবে সংস্থা দুটোর নীতিমালার পরিবর্তিত হলেও “নারীর” মত দেখতে না হওয়া বা পারফর্ম না করা নারী এথলেটদের উপর বৈষম্যটি আগের মতই থেকে যায়। আর এটাই ঘটে ২০০৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকান দৌঁড়বিদ ক্যাস্টার সেমেনিয়া এবং ২০১৪ সালে দুতি চাঁদের বেলায়।

 

ক্যাস্টার সেমেনেয়া এবং দুতি চাঁদ

২০০৯ সালের এথলেটিক্স এর ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে ক্যাস্টার সেমেনেয়া ৮০০ মিটার দৌঁড়ের ফাইনালে জয়ের কাছাকাছি আসার এক ঘণ্টা আগেই IAAF থেকে জানানো হয় যে, একজন নারী হিসেবে প্রতিযোগীতা করার যোগ্যতা তার নেই।

পূর্বে কখনও এই “যোগ্যতাগুলো” পরিষ্কার না করা সত্ত্বেও IAAF সেমেনেয়াকে প্রতিযোগীতা থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেয়। এরপরের ১১ মাস সেমেনেয়া খেলাধুলা থেকে বিরত ছিলেন এবং এসময়ে বিশেষজ্ঞরা তার লিঙ্গ নির্ধারণের জন্য কাজ করছিলেন। ট্র্যাকে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে সেমেনেয়া অন্যদের তুলনায় তুলনামূলক ধীরে দৌড়াতেন (যদিও তিনি ২০১২ সালের লন্ডন গেমসে ৮০০ মিটার দৌড়ে তিনি সিলভার মেডেল পান), এজন্য ধরে নেয়া হয় যে তিনি অবশ্যই সেসময় তার টেস্টোস্টেরনকে কমানোর জন্য কোন বাঁধা সহ্য করেন। IAAF এর পরবর্তীতে তৈরি হাইপারএন্ড্রোজেনিজম এর নীতিগুলো এধরণের মতামতকে আরও শক্তিশালী করে।

নতুন পলিসি অনুসারে, কোন নারী এথলেট এর শরীরে প্রতি লিটার রক্তে ১০ ন্যানোমোলস (নরমাল মেল রেঞ্জ এর সর্বনিম্ন সীমা) বা তার বেশি ফাংশনাল টেস্টোস্টেরন থাকলে তাকে প্রতিযোগীতা থেকে অযোগ্য ঘোষনা করা হবে।

এরপর সেই নারী এথলেট তার টেস্টোস্টেরন লেভেল ১০ ন্যানোমোলের নিচে নামিয়ে পুনরায় আবেদন করতে পারেন। এটা সার্জিকালি করা যায়। এর জন্য ইন্টারনাল টেস্টিস বাদ দেয়া যেতে পারে, হরমোন সাপ্রেসিং মেডিকেশন নেয়া যেতে পারে অথবা দুটোই করা যেতে পারে। এন্ড্রোজেন ইন্সেন্সিটিভিটি সিন্ড্রোমে আক্রান্ত নারীরা এই পলিসি থেকে মুক্ত।

এই নতুন পলিসিটি পূর্বের “জেন্ডার ভেরিফিকেশন পলিসি” এর স্থান গ্রহণ করে। IAAF, IOC এবং তাদের এফিলিয়েটেড ফেডারেশনগুলো তাদের রুল বুক থেকে সেক্স টেস্টিং এর সমস্ত নিয়ম কানুন মুছে ফেলে এবং এই নতুন হরমোন টেস্টের নীতি যোগ করে। এক্ষেত্রে সেখানে উল্লেখ করা হয়, “এথলেটদের স্বাস্থ্যের রক্ষার” জন্যই এই হরমোন টেস্ট এর নীতি চালু করা হয়েছে।

যাই হোক, কেবলমাত্র নারীদের বেলায় এই “স্বাস্থ্য রক্ষা” এর নিয়ম চালু করা দেখে মনে হচ্ছে, পুরুষদের এরকম কোন “স্বাস্থ্যরক্ষার” প্রয়োজন নেই। পুরুষদের ক্ষেত্রে তাদের প্রাকৃতিক টেস্টোস্টেরনের কোন আপার লিমিট বা উচ্চসীমা নেই। তাছাড়া যেসকল পুরুষের দেহে টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ কম তারা “থেরাপিউটিক ইউজ এক্সেম্পশন” এ আবেদন করতে পারেন এবং নিজেদের এন্ড্রোজেন বৃদ্ধির জন্য তাদের প্রেসক্রাইব করা স্টেরয়েড গ্রহণ করতে পারেন।

দুতি চাঁদের কেসে দ্য কোর্ট অব আর্বিট্রেশন ফর স্পোর্টস এর সিদ্ধান্ত হাইপারএন্ড্রোজেনিজম এর জন্য কোন রকম পরীক্ষা নিরীক্ষা করা বা এজন্য কাউকে বাতিল করাকে স্থগিত করে (অন্ততপক্ষে ২০১৬ সালের অলিম্পিক গেমসের জন্য)। এই ঘটনাটি চাঁদ, সেমেনেয়া এবং অন্যান্য নারী এথলেটদের যারা প্রচলিত নারীত্বের স্ট্যান্ডার্ডে খাপ খান না তাদের বিষয়ে নতুন করে অনেক আগ্রহের জন্ম দিয়েছে।

 

টেস্টোস্টেরনের প্রশ্নটি আসল বিষয়টিকেই পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে

দুতি চাঁদ রিও অলিম্পিকে কোন পদক পান নি। কিন্তু ক্যাস্টার সেমেনেয়া গত কয়েক মাসে দৌড়ে যেভাবে উন্নতি করেছেন তাতে অনেকেই আলোচনা করছিল যে ৮০০ মিটারে তিনিই স্বর্ণপদক জিততে পারেন। এবং তিনি জিতেও দেখান। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, তার অতিরিক্ত টেস্টোস্টেরন কি তাকে কোন সুবিধা দান করেছিল?

এক্ষেত্রে আমার কথা হল, করেও যদি, তাতে কী?

ইনিকোয়ালিটি বা অসাম্যের উপর ভিত্তি করেই এলিট স্পোর্টগুলোর পত্তন হয়েছে। আমরা লেভেল প্লেইং ফিল্ডের মিথকে পছন্দ করি, কিন্তু বাস্তবে এর কোন অস্তিত্ব নেই। রিওতে খেলা ২০৭টি জাতির ৭৫টিই কখনও কোন পদক জেতে নি। ধনী এবং ক্ষমতাবান দেশগুলোই সবসময় অলিম্পিকে নেতৃত্ব দেয়। অন্যদিকে নানান সমস্যাগ্রস্ত, যুদ্ধ-বিধ্বস্ত, অনুন্নত দেশগুলো কেবলই তাদের সম্পদের অভাবের কারণে কাউকে অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন তৈরি করার মত অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের দেশে স্পোর্টকে প্রমোট করতে পারে না। এখানে সবসময় একটি পরিষ্কার বৈষম্য কাজ করে যার জন্য কোন ধরণের শোরগোল বা কথাবার্তা শোনা যায় না বললেই চলে।

কিন্তু আমরা এখানে যে হাইপারএন্ড্রোজেনিজমের কথা বলছি তা দেহের একটি অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্য যা এথলেটিক পারফরমেন্সের উন্নতি ঘটায়। আর বিজ্ঞানীরা বলেন এলিট স্পোর্টগুলোতে এরক প্রতিভার উদাহরণ প্রচুর আছে।

গবেষকগণ ২০০ এর বেশি জেনেটিক ভেরিয়েশনের সাথে তাদের প্রতিটির জন্য ফিজিকাল পারফরমেন্স কিরকম হয় তা বিশ্লেষণ করেছেন। দেখা গেছে, এদের মধ্যে ২০টি ভেরিয়েশন এলিট এথলেটিসিজম এর সাথে সম্পর্কিত। এই ২০ প্রকারের পারফরমেন্স-এনহান্সিং বা কর্মদক্ষতা-বর্ধক পলিমরফিজম (PEP) দৈহিক উচ্চতা, রক্তপ্রবাহ, মেটাবলিক এফিশিয়েন্সি, মাসল মাস, মাসল ফাইবারস, বোন স্ট্রাকচার, পেইন থ্রেসহোল্ড, ফেটিগ রেজিস্টেন্স, পাওয়ার, স্পিড, এনডিউরেন্স, আঘাত প্রবণতা বা ইনজুরি প্রতি সাসেপ্টিবিলিটি, সাইকোলজিকাল এপ্টিচুড এবং রেস্পিরেটরি এবং কার্ডিয়াক ফাংশন সহ আরও অনেক শারীরিক বৈশিষ্ট্যে যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। কিন্তু তারপরেও এরকম বিশেষ সুবিধাযুক্ত এথলেটদেরকে কখনও ডিসকোয়ালিফাই করা হয় না, বরং তাদেরকে সেলিব্রেট করা হয়।

উদাহরণস্বরূপ সাতবার অলিম্পিক মেডেল বিজেতা ফিনল্যান্ডের এরো ম্যান্টিরান্টার কথা বলা যায়। তিনি নর্ডিক স্কিইং এ সর্বকালের সেরা ছিলেন। এই খেলাটির জন্য অবিশ্বাস্য রকমের স্টামিনার দরকার হয়। আর এই বৈশিষ্ট্যটি তখনই পাওয়া যায় যখন শরীরে রেড ব্লাড সেল বা লোহিত রক্তকণিকার প্রাচুর্য থাকবে যা মাংশপেশিতে যথেষ্ট পরিমাণে অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারবে। আর তাই অনেক এন্ডিউরেন্স এথলেট অধিক উচ্চতায় প্রশিক্ষণ নেন, অল্টিচুড চেম্বারে ঘুমান যাতে তাদের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। কেউ কেউ আবার অবৈধভাবে ব্লাড ডোপিং করেন বা কৃত্রিম এরিথ্রোপ্রোটিন হরমোন (EPO) গ্রহণ করেন।

ম্যান্টিরান্টার মৃত্যু হয় ২০১৩ সালে। তাকে উপরে বর্ণিত উপায়গুলোর কোনটিকেই গ্রহণ করতে হয় নি। তার শরীরে প্রাইমারি ফ্যামিলিয়াল এবং কনজেনিটাল পলিসাইথেমিয়া নামে একটি কন্ডিশন ছিল। এটা EPOR জিনের একটি ভেরিয়েশন যার কারণে তার শরীরে সাধারণ মানুষের তুলনায় ৬৫ শতাংশ বেশি লোহিত রক্ত কণিকা তৈরি হত। দ্য স্পোর্টস জিন এর লেখক ডেভিড এপস্টেইন ম্যান্টিয়ান্ট্রার EPOR ভেরিয়েশনকে “গোল্ড মেডেল মিউটেশন” বলে উল্লেখ করেছেন।

 

১৯৬৪ সালের ইনসব্রাক অলিম্পিকে এওয়া ম্যান্টিরান্টা
১৯৬৪ সালের ইনসব্রাক অলিম্পিকে এওয়া ম্যান্টিরান্টা

তাহলে এবার বলুন, ম্যান্ট্রিয়ান্ট্রারেই বিশেষ দৈহিক বৈশিষ্ট্যটি ক্যাস্টার সেমেনেয়া বা দুতি চাঁদের প্রাকৃতিকভাবে অধিক টেস্টোস্টেরন প্রস্তুতির বৈশিষ্ট্যটির সাথে কতটা পৃথক? কেনই বা একদিকে প্রাইমারি ফ্যামিলিয়াল এবং কনজেনিটাল পলিসাইথেমিয়া গণ্য হয় জেনেটিক গিফট হিসেবে আর  অন্যদিকে হাইপারএন্ড্রোজেনিজম গণ্য হয় একটি জেনেটিক কার্স বা অভিশাপ হিসেবে? স্বাস্থ্যরক্ষার নামে নারী এথলেটদের উপর এই বৈষ্যম্য আর কতদিন চলবে? আর কতদিন একজন নারী এথলেটকে “নারীত্বের” পরীক্ষা দিতে হবে আর রাখতে হবে নিজেকে কৃত্রিমভাবে “নারী” বানিয়ে?

 

তথ্যসূত্র: 

  1. http://www.tas-cas.org/fileadmin/user_upload/Media_Release_3759_FINAL.pdf
  2. http://www.press.uillinois.edu/books/catalog/58ctr3rx9780252038167.html
  3. http://dx.doi.org/10.1016/j.endeavour.2010.09.005
  4. https://books.google.com/books?id=jFYEAAAAMBAJ&pg=PA63&lpg=PA63&dq=%E2%80%9Cthere+had+been+persistent+speculation+through+the+years+about+women+who+turn+in+manly+performances.%E2%80%9D&source=bl&ots=jAZWikIlN_&sig=TgyZcnJJrnAPsMkz8aW0LON0V6U&hl=en&sa=X&ved=0ahUKEwiY1ou91ajOAhUJ34MKHeDvCX4Q6AEIITAB#v=onepage&q=%E2%80%9Cthere%20had%20been%20persistent%20speculation%20through%20the%20years%20about%20women%20who%20turn%20in%20manly%20performances.%E2%80%9D&f=false
  5. https://www.amazon.com/Mary-Autobiography-Wooldridge-Ian-Peters/dp/0099123304
  6. http://dx.doi.org/10.1001/jama.1972.03200220032008
  7. http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC1478807/
  8. http://rua.ua.es/dspace/handle/10045/15015
  9. http://www.tandfonline.com/doi/pdf/10.1080/00336297.2011.10483678?needAccess=true&redirect=1
  10. http://www.thelancet.com/pdfs/journals/lancet/PIIS0140673605678415.pdf
  11. http://link.springer.com/chapter/10.1007/978-0-230-36746-3_28#page-1
  12. https://books.google.com/books?id=e-7kAgAAQBAJ&pg=PA118&lpg=PA118&dq=jaime+schultz+%22concerns+that+she+does+not+meet+the+requirements+to+compete+as+a+woman%22&source=bl&ots=fc9EPAcz_p&sig=5imIubO9b21ex7v2dVX-9QfgonY&hl=en&sa=X&ved=0ahUKEwigkduM0r7OAhUG9x4KHQzDALAQ6AEIIjAB#v=onepage&q=jaime%20schultz%20%22concerns%20that%20she%20does%20not%20meet%20the%20requirements%20to%20compete%20as%20a%20woman%22&f=false
  13. http://www.bbc.com/sport/olympics/36991646
  14. https://www.iaaf.org/news/iaaf-news/iaaf-to-introduce-eligibility-rules-for-femal-1
  15. https://www.wada-ama.org/en/what-we-do/science-medical/therapeutic-use-exemptions
  16. https://www.theguardian.com/sport/2016/aug/11/caster-semenya-sebastian-coe-iaaf-cas-testosterone-olympics?CMP=share_btn_fb
  17. http://www.thehindu.com/sport/other-sports/rio-olympics-2016-brief-glimpse-of-olympics-but-all-worth-it-for-dutee-chand/article8984186.ece
  18. http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC3993978/
  19. http://thesportsgene.com/

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.