মানুষ সহ অন্যান্য প্রাইমেটদের মস্তিষ্কের বিবর্তনের রহস্যের জট খুলল

প্রাচীনতম প্রাইমেটদের মস্তিষ্ক ছোট ছিল কিন্তু আধুনিক প্রাইমেটদের মস্তিষ্কের সাথে এই মস্তিষ্কগুলোর কিছু গঠনগত সাদৃশ্য রয়েছে

মানব মস্তিষ্ক হল প্রকৃতির অন্যতম জটিল সৃষ্টি, যদিও ঠিক কোন কোন প্রক্রিয়ায় মস্তিষ্ক বিবর্তিত হয়েছিল তা একটি রহস্য হয়ে আছে। যাই হোক, কিছু প্রাচীন প্রাইমেটের মস্তিষ্ককে ভারচুয়ালি রিকনস্ট্রাক্ট বা পুনর্গঠিত করে বিজ্ঞানীরা মানুষের মস্তিষ্কের প্রাচীন আকার সম্পর্কে ধারণা লাভ করেছেন। তাদের গবেষণাটি থেকে বের হয়ে আসে যে, প্রাইমেটদের মস্তিষ্কের আয়তনে বৃদ্ধি পেতে শুরু করবার পূর্বে তাদের মস্তিষ্কের কিছু মূল স্ট্রাকচারের উন্নয়ন ঘটেছিল।

জার্নাল অব হিউম্যান ইভোল্যুশন এ এই গবেষণাটি প্রকাশিত হয়। গবেষকগণ এখানে উল্লেখ করেন, কীভাবে তারা এক্সরে কম্পুটেড টমোগ্রাফি ব্যবহার করে মস্তিষ্কের ভারচুয়াল মডেল তৈরি করেছেন যা একসময় লেমুরদের মত এডাপ্টিফর্মদের মাথায় অবস্থান করত। এডাপ্টিফর্মরা হল প্রাচীনতম প্রাইমেটদের মধ্যে একটি। এরা প্রায় ৫০ মিলিয়ন বছর পূর্বে অবস্থান করত এবং আমাদের জানা প্রথম প্রাইমেট পূর্বপুরুষ প্লেসিএডাপ্টিফর্মের আবির্ভাবের কিছু সময় পরে এরা আবির্ভূত হয়। এডাপ্টিফর্মের তিনটি ভিন্ন প্রজাতির মাথার খুলি ব্যবহার করে গবেষকগণ তাদের মস্তিষ্কের সাথে বর্তমান প্রাইমেটদের মস্তিষ্কের তুলনা করেন।

তাদের প্রধান আবিষ্কারগুলোর মধ্যে একটি হল, এডাপ্টিফর্মদের মস্তিষ্ক আকারের দিক থেকে প্লেসিএডাপ্টিফর্মের মস্তিষ্কের সাথে অনেকটা একইরকম হলেও এদের মাঝে কিছু গাঠনগত ভিন্নতা রয়েছে। আর এখান থেকেই কিভাবে বর্তমান প্রাইমেটদের মস্তিষ্ক গঠিত হয়েছে এই বিষয়ে কিছু প্রধান সূত্র পাওয়া যায়।

যেমন, এডাপ্টিফর্মের মস্তিষ্কগুলোতে প্লেসিএডাপ্টিফর্মের মস্তিষ্কের নিওকর্টেক্সের চেয়ে বড় নিওকর্টেক্স থাকে। মস্তিষ্কের নিওকর্টেক্স অঞ্চলটি দৃষ্টি এবং ক্ষুদ্র অলফ্যাক্টরি বাল্ব যা ঘ্রাণ গ্রহণ করে তার সাথে সম্পর্কিত। এখান থেকে বোঝা যায় যে এডাপ্টিফর্মরা প্লেসিএডাপ্টিফর্ম এর চেয়ে দর্শন ও ঘ্রাণের উপর বেশি নির্ভরশীল ছিল। এদিকে আধুনিক প্রাইমেটদের মস্তিষ্কে বড় নিওকর্টেক্স থাকে। সুতরাং এই আবিষ্কারটি কিভাবে আমাদের মস্তিষ্কটি এখনকার মত বিবর্তিত হল সেই প্রশ্নের সমাধান দিচ্ছে। এছাড়াও এটি প্রাইমেট ব্রেইনের টাইমলাইনের বহু পুরাতন রহস্যের সমাধান দিচ্ছে। গবেষণাটি বলছে প্রাইমেট ব্রেইনের অনেক প্রধান বৈশিষ্ট্যই আবির্ভূত হয়েছে যখন মস্তিষ্কটি তুলনামূলকভাবে ছোট ছিল। পরবর্তীতে কেবল মস্তিষ্ক আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা প্রাইমেট ব্রেইন সংক্রান্ত পূর্বের থিওরিকে (এটি আগে বড় হয় তারপর বিশেষিত হয়) ভুল প্রমাণ করেছে।

গবেষণাটির লেখক জোনাথন ব্লক বলেন, “এটা সত্য যে মানুষ সহ অন্যান্য প্রাইমেটদের অনেক বড় মস্তিষ্ক আছে, কিন্তু মস্তিষ্ক আগে থেকেই বড় ছিল না। আমাদের গবেষণাটি দেখাচ্ছে, প্রাচীনতম প্রাইমেটদের আসলে তুলনামূলকভাবে ছোট মস্তিষ্ক ছিল। সুতরাং প্রাইমেটরা বড় মস্তিষ্ক নিয়ে যাত্রা শুরু করেনি”।

 

তথ্যসূত্র:

  1. http://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S0047248416300689
  2. http://www.eurekalert.org/pub_releases/2016-08/uof-hdp081116.php

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.