সম্পর্কিত খবর – বেহাল অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ঋণের বোঝা আরো বাড়বে | বণিক বার্তা
এবারের বাজেট ঘোষণার পর মনের সেই পুরোনো ক্ষতস্থানেই যেন আবার প্রদাহ শুরু হলো। মনে হলো, সেই যে ছোটবেলায় শুনতাম, এক দেশে ছিল এক গরিব কাঠুরে, সে ধার করে কুড়াল কিনতো, তারপর সেই কুড়ালের আয়ে ধার শোধ না করে আবার ধার করে নতুন কুড়াল কিনতো – আমাদের দেশের অর্থনীতির গল্পটাও যেন অনেকটা তেমনই হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘ঋণ করে ঋণ শোধ’ – এই মন্ত্রটা বিগত সরকারের আমল থেকে এমনভাবে আমাদের মজ্জাগত হয়ে গেছে যে, অন্তর্বর্তী সরকার এসেও সেই একই সুর ভাঁজছে। ভাবখানা এমন, যেন এক বিশাল দেনার মহাসমুদ্রে আমরা হাবুডুবু খাচ্ছি, আর কূলের সন্ধান না পেয়ে খড়কুটো আঁকড়ে ধরে আরও গভীরে তলিয়ে যাচ্ছি। এখনই নাকি আমাদের সবার মাথার ওপর প্রায় কুড়ি লাখ কোটি টাকার ঋণের পাহাড়! অঙ্কটা শুনলেই তো সাধারণ মানুষের দম বন্ধ হয়ে আসার জোগাড়। আর এই পাহাড় নাকি দেখতে দেখতে আরও উঁচু হবে, আগামী বছরেই তেইশ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে, তার পরের বছর গিয়ে ঠেকবে ছাব্বিশ লাখ কোটিতে। আমরা যারা দিন আনি দিন খাই, এত শত কোটি টাকার হিসাব আমাদের মাথায় ঢোকে না। আমরা শুধু বুঝি, চাল-ডাল-তেলের দাম বাড়ছে হু হু করে, সন্তানের পড়ার খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছি, অসুখ হলে ভালো চিকিৎসার কথা ভাবতেও ভয় করে, আর আমাদের আয়ের চাকাটা যেন ক্রমাগত শ্লথ হয়ে আসছে, কখনো কখনো মনে হয় উল্টো দিকেই বুঝি ঘুরতে শুরু করেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের মান্যবর অর্থ উপদেষ্টা যখন টেলিভিশনের পর্দায় এসে বাজেট পেশ করছিলেন, তাঁর কণ্ঠেও যেন বিষাদের সুর। তিনি বলছিলেন, আগের সরকারের রেখে যাওয়া প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত এক অর্থনীতিকে টেনে তোলার কঠিনতম দায়িত্ব এখন তাঁদের কাঁধে। দেশের অর্থনীতির যে করুণ ছবি তিনি আঁকলেন, তাতে আশার আলো খুঁজে পাওয়া সত্যিই দুষ্কর। কিন্তু মুশকিল হলো, এই ধ্বংসস্তূপ থেকে মুক্তি পাওয়ার যে পথনকশা তিনি আমাদের দেখালেন, তাতে নতুনত্বের চেয়ে পুরোনো অভ্যাসের ছাপই বেশি। বরং তাঁর কথায় এক ধরনের অসহায়ত্বই যেন ফুটে উঠছিল – আমরা চেষ্টা করছি, কিন্তু ঋণের এই দুষ্টচক্র থেকে বেরোনো যে ভীষণ কঠিন! এই যে অর্থনীতির চাকা আর আগের মতো ঘুরতে চাইছে না, কলকারখানায় নতুন বিনিয়োগ আসছে না, ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা, কৃষকের মুখে হাসি নেই – এমন একটা অবস্থায় সরকার ভাবে, ধার করে হলেও যদি চাকায় একটু তেল দেওয়া যায়, যদি অর্থনীতিটাকে আবার সচল করা যায়! এই ভাবনাটা নতুন নয়। অনেক দিন আগে, জন মেনার্ড কীনস নামে এক দূরদর্শী অর্থনীতিবিদ এই ধরনের কথা বেশ গুছিয়ে বলেছিলেন। তিনি দেখিয়েছিলেন, যখন অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দেয়, যখন বেসরকারি খাত হাত গুটিয়ে বসে থাকে, তখন সরকারের উচিত নিজে থেকে খরচ বাড়িয়ে সামগ্রিক চাহিদাকে চাঙ্গা করে তোলা। এতে নাকি অর্থনীতির চাকায় গতি ফেরে, মানুষের হাতে কাজ আসে, পয়সা আসে, আর সেই পয়সা যখন আবার বাজারে খরচ হয়, তখন অর্থনীতির একটা গুণক প্রভাব (multiplier effect) তৈরি হয়, মানে এক টাকার সরকারি খরচ অর্থনীতিতে কয়েক টাকার সমান প্রভাব ফেলে।
কিন্তু কীনস সাহেব একটা খুব জরুরি কথাও বলেছিলেন, যেটা আমরা প্রায়শই ভুলে যাই বা এড়িয়ে চলি। তিনি বলেছিলেন, এই সরকারি ব্যয়টা হতে হবে উৎপাদনশীল খাতে। এমন খাতে টাকা ঢালতে হবে, যাতে নতুন সম্পদ তৈরি হয়, কর্মসংস্থান বাড়ে, মানুষের আয় বাড়ে। এখন আমাদের দেশে যা হচ্ছে, তাতে কীনসের দাওয়াইটা যেন ঠিকঠাক কাজ করছে না। ঋণের টাকায় যে বিশাল বিশাল প্রকল্প হচ্ছে, তার অনেকগুলোই হয়তো জরুরি, কিন্তু সেই প্রকল্প থেকে দ্রুত আয় আসছে না, বা আদৌ কতটা আসবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। আর ঋণের একটা বড় অংশই যদি চলে যায় আগের ঋণের সুদ পরিশোধ করতে, তাহলে তো নতুন সম্পদ সৃষ্টির সুযোগ আরও কমে যায়। ফলে, কীনসের তত্ত্ব অনুযায়ী যে গুণক প্রভাবের কথা বলা হয়, সেটা আমাদের অর্থনীতিতে খুব একটা জোর পাচ্ছে বলে মনে হয় না। উল্টো, সরকার যখন ব্যাংক থেকে এত বিপুল পরিমাণে ঋণ নেয়, তখন বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণের বাজার সংকুচিত হয়ে যায়। কারণ, ব্যাংকগুলো তখন সরকারকে ঋণ দেওয়াই বেশি নিরাপদ ও লাভজনক মনে করে। অর্থনীতির পরিভাষায় একে বলে ‘ক্রাউডিং আউট এফেক্ট’। এর ফলে, অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি যে বেসরকারি খাত, সেটাই ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে। নতুন বিনিয়োগ থমকে যায়, নতুন শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠে না, কর্মসংস্থানের সুযোগও কমে আসে।
আর এই যে ঋণের বোঝা আমাদের ঘাড়ে পর্বতের মতো চেপে বসছে, এর শেষ কোথায়? এভসে ডোমার নামে আরেকজন প্রাজ্ঞ অর্থনীতিবিদ, এবং প্রায় একই সময়ে পিটার সোয়ানও, একটি খুব সরল কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সত্য আমাদের সামনে তুলে ধরেছিলেন। তাঁদের মতে, একটি দেশের ঋণের বোঝা টেকসই হবে কি না, তা মূলত নির্ভর করে দুটো জিনিসের ওপর – দেশটির মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার আর ঋণের গড় সুদের হার। যদি জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ঋণের সুদের হারের চেয়ে বেশি থাকে, তাহলে ঋণের বোঝা জিডিপির অনুপাতে ধীরে ধীরে কমে আসবে, দেশ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবে। কিন্তু যদি উল্টোটা হয়, অর্থাৎ সুদের হার যদি প্রবৃদ্ধির হারকে ছাপিয়ে যায়, তাহলে ঋণের বোঝা উত্তরোত্তর বাড়তেই থাকবে, ঠিক যেমন তুষারগোলক পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়ার সময় আরও বড় হতে থাকে। আমাদের দেশের দিকে তাকালে কী দেখতে পাই? সরকারি হিসাবেই জিডিপি প্রবৃদ্ধি যেখানে ৩ থেকে ৪ শতাংশের আশেপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে, সেখানে স্বল্পমেয়াদি ট্রেজারি বিলের ওপর সুদের হারই নাকি ১২ শতাংশে পৌঁছে গেছে! তাহলে তো ডোমার-সোয়ানের তত্ত্ব অনুযায়ী আমাদের ঋণের বোঝা কমার কোনো আশাই নেই, বরং তা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তেই থাকবে। ব্যাপারটা অনেকটা এমন যে, আপনার আয় যদি আপনার দেনার সুদের চেয়ে কম হয়, তাহলে আপনি যতই চেষ্টা করুন না কেন, দেনার জাল থেকে মুক্তি পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। আর এই দেনার টাকা যদি এমন সব খাতে ব্যয় হয়, যেখান থেকে দ্রুত আয় ফেরার সম্ভাবনা কম, বা যে প্রকল্পগুলো হয়তো খুব জরুরি নয়, কিন্তু দেখতে খুব ফ্ল্যাশি, তাহলে তো বিপদ আরও গভীর।
এখন প্রশ্ন হলো, এত যে টাকা ঋণ করা হচ্ছে, এত যে বিশাল বিশাল অঙ্কের বাজেট তৈরি হচ্ছে, এই টাকাগুলো আসলে যাচ্ছে কোথায়? এর সুফল কি আমরা সাধারণ মানুষ পাচ্ছি? ভাবুন তো, বাজারে যদি প্রচুর ফলমূল আমদানি করা হয়, কিন্তু মানুষের হাতে সেই ফল কেনার মতো পয়সা না থাকে, তাহলে সেই ফলগুলো তো পচেই যাবে, তাই না? পুঁজির ব্যাপারটাও অনেকটা সেই রকম। যখন অনেক বেশি পুঁজি বা টাকা বাজারে অলস বসে থাকে, যখন সেই পুঁজি খাটানোর মতো যথেষ্ট লাভজনক এবং উৎপাদনশীল ক্ষেত্র পাওয়া যায় না, তখন এক ধরনের সংকট তৈরি হয়। অর্থনীতির পণ্ডিত কার্ল মার্ক্স এই বিষয়টাকে বলতেন পুঁজির অতি সঞ্চয়ন বা ‘ওভারএকিউমুলেশন অফ ক্যাপিটাল’। এর মানে হলো, পুঁজি তৈরি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেই পুঁজিকে কাজে লাগিয়ে আরও মুনাফা তৈরির সুযোগ কমে গেছে। তখন পুঁজির মালিকেরা, বা এক্ষেত্রে রাষ্ট্র, এমন সব প্রকল্পে টাকা ঢালতে শুরু করে, যেগুলো হয়তো খুব একটা লাভজনক নয়, বা যেগুলোর উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন আছে, শুধু পুঁজিটাকে কোনো না কোনোভাবে কাজে লাগানোর জন্য। এর ফলস্বরূপ, অর্থনীতির গভীরে সংকট আরও ঘনীভূত হয়। অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্পে জনগণের করের টাকা বা ঋণের টাকা যখন ঢালা হয়, আর সেই প্রকল্প থেকে প্রত্যাশিত সুফল না আসে, তখন তা দেশের অর্থনীতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।
এই ঋণের বাড়াবাড়ি আর তার সম্ভাব্য বিপদ নিয়ে হাইম্যান মিনস্কি নামে আরেকজন অর্থনীতিবিদ খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা বলে গেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, অর্থনীতি যখন দীর্ঘদিন ধরে ভালো চলতে থাকে, তখন মানুষজন, ব্যবসায়ী, এমনকি সরকারও অতিমাত্রায় আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে এবং প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ঋণ নিতে শুরু করে। মিনস্কির মতে, এই ঋণ নেওয়ার প্রক্রিয়াটা কয়েকটি ধাপের মধ্যে দিয়ে যায়। প্রথম ধাপে, যাকে তিনি বলেছেন ‘হেজ ফাইন্যান্স’, ঋণগ্রহীতারা এমন ঋণ নেয় যা থেকে অর্জিত আয় দিয়ে তারা ঋণের আসল ও সুদ উভয়ই পরিশোধ করতে সক্ষম। এটা হলো সবচেয়ে নিরাপদ অবস্থা। কিন্তু ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাস বাড়ার সাথে সাথে তারা দ্বিতীয় ধাপে প্রবেশ করে, যাকে বলা হয় ‘স্পেকুলেটিভ ফাইন্যান্স’। এই পর্যায়ে, ঋণগ্রহীতারা এমন ঋণ নেয় যা থেকে অর্জিত আয় দিয়ে কেবল ঋণের সুদ পরিশোধ করা যায়, আসল নয়। আসল পরিশোধের জন্য তারা সম্পত্তির মূল্যবৃদ্ধির ওপর বা নতুন ঋণের ওপর নির্ভর করে। এরপর আসে সবচেয়ে বিপজ্জনক পর্যায়, যাকে মিনস্কি বলেছেন ‘পনজি ফাইন্যান্স’। এই পর্যায়ে, ঋণ থেকে অর্জিত আয় দিয়ে সুদও পরিশোধ করা সম্ভব হয় না। তখন পুরোনো ঋণের সুদ পরিশোধ করার জন্যই নতুন করে ঋণ নিতে হয়। আমাদের দেশের ‘ঋণ করে ঋণ শোধ’ করার যে নীতি, সেটা শুনলে মিনস্কির এই পনজি ফাইন্যান্সের কথাই বারবার মনে পড়ে যায়। আর এই পনজি প্রক্রিয়ার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হলো আর্থিক সংকট, যখন এই ঋণের বুদ্বুদটা ফেটে যায়, যখন আর নতুন ঋণ পাওয়া যায় না, তখন পুরো ব্যবস্থাটাই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়তে পারে। আমাদের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ যে ৩০ শতাংশে ঠেকেছে বলে খবরে প্রকাশ, এই তথ্য কি সেই অশনি সংকেতই বহন করছে না? এটা কি এই ইঙ্গিত দিচ্ছে না যে, অনেক ঋণগ্রহীতাই হয়তো আর ঋণের কিস্তি শোধ করতে পারছেন না, এবং ব্যাংকগুলোও হয়তো নতুন ঋণ দিয়ে পুরোনো খেলাপি ঋণ ঢাকার চেষ্টা করছে?
এই যে উন্নয়নের নামে এত বড় বড় প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে, তাতে কি দেশের সব অঞ্চলের মানুষ, সমাজের সব স্তরের মানুষ সমানভাবে উপকৃত হচ্ছে? মার্ক্সবাদী ধারার তাত্ত্বিকেরা, যেমন ধরুন ডেভিড হার্ভে, অথবা পল বারান ও পল সুইজি, তাঁরা দেখিয়েছেন যে পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় উন্নয়নটা প্রায়শই অসম বা ‘আনইভেন’ প্রকৃতির হয়। এর মানে হলো, কিছু নির্দিষ্ট এলাকা বা কিছু বিশেষ খাত হয়তো খুব দ্রুত উন্নতি করে, চোখ ধাঁধানো পরিবর্তন আসে সেখানে, কিন্তু দেশের অন্যান্য অনেক এলাকা বা অনেক গুরুত্বপূর্ণ খাত হয়তো সেই উন্নয়নের সুফল থেকে বঞ্চিত হয়, পিছিয়ে পড়ে। আমাদের দেশেও কি আমরা সেই একই চিত্রের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছি না? বিশাল বিশাল ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল, টানেল – এগুলো হয়তো রাজধানীর বা বড় বড় শহরের চাকচিক্য বাড়াচ্ছে, যাতায়াত ব্যবস্থায় কিছুটা উন্নতিও আনছে। কিন্তু এই উন্নয়নের আড়ালে আমাদের কৃষিখাত কি অবহেলিত হচ্ছে না? যে কৃষক আমাদের অন্নের জোগান দেন, তাঁর ভাগ্যের কি খুব একটা পরিবর্তন হচ্ছে? এবারের বাজেটে কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তা তো সেই অসম উন্নয়নের দিকেই ইঙ্গিত করে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তারা কি প্রয়োজনীয় ঋণ ও সহযোগিতা পাচ্ছেন? যদি উন্নয়নটা এমন হয় যে, সমাজের একটা ছোট্ট অংশ আরও ধনী হচ্ছে, আর সাধারণ মানুষ জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে, তাহলে সেই উন্নয়নকে কি আর ‘বৈষম্যহীন’ বলা যায়? এবারের বাজেটে ‘বৈষম্যহীন ও টেকসই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ার প্রত্যয়’ ঘোষণা করা হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া হচ্ছে, সেগুলো কি সেই প্রত্যয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ?
আবার এই যে আমরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, যেমন বিশ্বব্যাংক বা আইএমএফ, অথবা বিভিন্ন ধনী দেশ থেকে বিপুল পরিমাণে ঋণ নিচ্ছি, এতে কি আমরা ধীরে ধীরে এক ধরনের অদৃশ্য নির্ভরতার ফাঁদে জড়িয়ে পড়ছি না? ইমানুয়েল ওয়ালারস্টেইনের মতো বিশ্ব-ব্যবস্থা তত্ত্বের (World-Systems Theory) প্রবক্তারা মনে করেন, বিশ্বের দেশগুলো একটা জটিল কেন্দ্র-প্রান্ত (core-periphery) সম্পর্ক দ্বারা আবদ্ধ। এই তত্ত্বে, উন্নত শিল্পোন্নত দেশগুলো হলো ‘কেন্দ্র’, আর উন্নয়নশীল বা অনুন্নত দেশগুলো হলো ‘প্রান্ত’। কেন্দ্রের দেশগুলো বিভিন্ন অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কৌশলের মাধ্যমে প্রান্তের দেশগুলোর ওপর নিজেদের প্রভাব ও আধিপত্য বজায় রাখে। আর এই ঋণ হলো সেই আধিপত্য বজায় রাখার একটা বড় হাতিয়ার। ঋণের সঙ্গে প্রায়শই জুড়ে দেওয়া হয় নানা ধরনের শর্ত, যেগুলোকে বলা হয় ‘স্ট্রাকচারাল অ্যাডজাস্টমেন্ট প্রোগ্রাম’। এই শর্তগুলো মানতে গিয়ে প্রান্তের দেশগুলোকে অনেক সময় নিজেদের জাতীয় স্বার্থবিরোধী নীতিও গ্রহণ করতে হয়, তাদের নিজস্ব নীতি প্রণয়নের স্বাধীনতা খর্ব হয়। আমাদের বাজেট প্রণয়নেও তো আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিভিন্ন শর্তের একটা বড় ভূমিকা থাকে বলে আমরা প্রায়শই শুনতে পাই। যেমন, ভর্তুকি কমানো, সরকারি ব্যয় সংকোচন, করের আওতা বাড়ানো ইত্যাদি। এই শর্তগুলো হয়তো স্বল্পমেয়াদে কিছু আর্থিক শৃঙ্খলা আনতে সাহায্য করে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এগুলো সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে আরও কঠিন করে তোলে কি না, দেশের সার্বভৌমত্বকে কোনোভাবে সংকুচিত করে কি না, সেই প্রশ্নগুলোও কিন্তু আমাদের করতে হবে। এই ঋণচক্র কি প্রান্তের দেশগুলোকে কেন্দ্রের ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল করে তুলছে না?
আসলে, বাজেট তো শুধু কিছু আয়-ব্যয়ের নীরস হিসাবনিকাশ নয়। এর প্রতিটি সংখ্যার পেছনে, প্রতিটি নীতির পেছনে জড়িয়ে থাকে জটিল রাজনৈতিক অর্থনীতির নানা হিসাব-নিকাশ। জেমস বুকানন এবং গর্ডন টুলকের মতো অর্থনীতিবিদরা, যাঁরা ‘পাবলিক চয়েস থিওরি’ বা জনগণের পছন্দ তত্ত্বের অন্যতম প্রবক্তা, তাঁরা মনে করেন যে, সরকার বা রাজনীতিবিদরা যখন কোনো সিদ্ধান্ত নেন, তখন তাঁরা সবসময় বৃহত্তর জনকল্যাণের কথা ভেবেই সেই সিদ্ধান্ত নেন, এমনটা ধরে নেওয়া ঠিক নয়। অনেক সময়ই তাঁরা নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ, ভোটের হিসাব, অথবা বিশেষ কোনো প্রভাবশালী গোষ্ঠীর (যাদেরকে ‘ইন্টারেস্ট গ্রুপ’ বলা হয়) স্বার্থ রক্ষার জন্যই বিভিন্ন নীতি প্রণয়ন করেন। আমাদের দেশেও কি তেমন কিছু ঘটছে? এই যে এবারের বাজেটেও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হলো, এর মাধ্যমে আসলে কাদের স্বার্থ রক্ষা করা হচ্ছে? এই সুযোগ কি সৎ করদাতাদের নিরুৎসাহিত করছে না? বিশাল বিশাল মেগা প্রকল্পগুলো কারা পাচ্ছে, কাদের হাত দিয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে, সেখানে কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর সুবিধা হচ্ছে কি না – এই প্রশ্নগুলো যখন সাধারণ মানুষের মনে উঁকি দেয়, তখন পাবলিক চয়েস থিওরির কথাগুলো আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে।
রাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়েও বিভিন্ন তাত্ত্বিক বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করেছেন। যেমন, নিকোস পুলানত্জাস বা লুই আলথুসারের মতো মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিকরা রাষ্ট্রকে দেখেছেন এমন একটি জটিল কাঠামো হিসেবে, যা বিদ্যমান শ্রেণি সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে এবং শাসক শ্রেণির আধিপত্যকে সুসংহত করতে সাহায্য করে। তাঁদের মতে, রাষ্ট্র তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান (যেমন, আইন, প্রশাসন, পুলিশ, এমনকি বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়া) এবং ভাবাদর্শিক হাতিয়ারের (যেমন, শিক্ষা ব্যবস্থা, গণমাধ্যম, জাতীয়তাবাদী শ্লোগান) মাধ্যমে এমন একটা আবহ তৈরি করে, যাতে মনে হয় সবকিছু স্বাভাবিকভাবেই চলছে, যা কিছু হচ্ছে তা সবার ভালোর জন্যই হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার যখন ‘বৈষম্যহীন ও টেকসই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ার প্রত্যয়’ ঘোষণা করে, তখন সেটা একটা ভাবাদর্শিক বার্তা দেয়। কিন্তু যদি বাজেটের ভেতরের বরাদ্দ এবং নীতিগুলো সেই বার্তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয়, যদি দেখা যায় যে, কিছু নীতি নির্দিষ্ট কোনো ধনী শ্রেণিকে আরও সুবিধা করে দিচ্ছে আর সাধারণ মানুষের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে, তাহলে বুঝতে হবে যে, রাষ্ট্র তার ভাবাদর্শিক আবরণের মাধ্যমে হয়তো কোনো গভীরতর শ্রেণি-স্বার্থকে আড়াল করার চেষ্টা করছে।
এই যে দেশে একটা বড় রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকার এলো, সাধারণ মানুষের মনে একটা চাপা আশা ছিল যে, তারা হয়তো পুরোনো ধ্যানধারণার বৃত্ত ভেঙে নতুন কিছু করবে, অর্থনীতির দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলোর সমাধানে সাহসী পদক্ষেপ নেবে। কিন্তু এবারের বাজেট দেখে সেই আশায় যেন কিছুটা চিড় ধরেছে। বাজেটের পরতে পরতে সেই পুরোনো দিনের গতানুগতিকতার ছাপ বড্ড বেশি স্পষ্ট। রেগুলেশন স্কুলের তাত্ত্বিকেরা, যেমন মিশেল অ্যাগলিয়েটা বা রবার্ট বয়ার, দেখিয়েছেন যে পুঁজিবাদী অর্থনীতি একটা নির্দিষ্ট ‘একুমুলেশন রেজিম’ বা পুঁজি সঞ্চয়নের প্রক্রিয়া এবং সেই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ একটা ‘মোড অফ রেগুলেশন’ বা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ওপর ভর করে চলে। এই ‘একুমুলেশন রেজিম’ হলো কীভাবে সমাজে উদ্বৃত্ত মূল্য তৈরি ও বণ্টিত হয় তার একটা কাঠামো, আর ‘মোড অফ রেগুলেশন’ হলো সেই নিয়মকানুন, প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক রীতিনীতি যা এই সঞ্চয়ন প্রক্রিয়াকে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। যদি এই মৌলিক কাঠামোয়, অর্থাৎ পুঁজি সঞ্চয়নের প্রক্রিয়া এবং তার নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতিতে কোনো পরিবর্তন না আনা যায়, তাহলে শুধু সরকার বদলালে বা কিছু লোক বদলালে অর্থনীতির দিশা খুব একটা বদলায় না। আমাদের দেশেও কি তাই হচ্ছে? সেই একই ঋণনির্ভর প্রবৃদ্ধির মডেল, সেই একই রকম দুর্বল রাজস্ব আদায়ের কাঠামো, সেই একই রকম ঘাটতি বাজেট পূরণের জন্য ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর অতি নির্ভরশীলতা – এগুলো কি এটাই নির্দেশ করছে না যে, সঞ্চয়নের সেই পুরোনো প্রক্রিয়া আর নিয়ন্ত্রণের সেই পুরোনো পদ্ধতিই কার্যত বহাল তবিয়তে টিকে আছে, শুধু পাত্র পরিবর্তন হয়েছে মাত্র?
তাহলে অন্তর্বর্তী সরকারের বাজেটকে আমরা কীভাবে মূল্যায়ন করবো? কীনসীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, ঋণের মাধ্যমে সরকারি ব্যয় বাড়িয়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার চেষ্টাটা হয়তো সংকটের সময়ে জরুরি, কিন্তু সেই ব্যয় যদি উৎপাদনশীল না হয়, যদি তা নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে না পারে, যদি তা উচ্চ মূল্যস্ফীতিকে আরও উস্কে দেয় এবং গুণক প্রভাব তৈরি করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সেই দাওয়াই হিতে বিপরীত হতে পারে। ডোমার-সোয়ানের মডেল আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে, বর্তমান প্রবৃদ্ধির হার আর সুদের হারের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের ঋণের বোঝা কমার কোনো সম্ভাবনা নেই, বরং তা আরও স্ফীত হবে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক ভয়াবহ দায় রেখে যাবে। সামাজিক খাতে, যেমন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে, বরাদ্দ কমে গেলে তার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব হবে আরও মারাত্মক। মার্ক্সবাদী এবং মিনস্কির তত্ত্বের আলোকে দেখলে, এই অতিমাত্রায় ঋণনির্ভরতা এবং অনুৎপাদনশীল খাতে পুঁজির কেন্দ্রীভবন আর্থিক অস্থিতিশীলতার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। খেলাপি ঋণের পাহাড় এবং সম্ভাব্য দেউলিয়া পরিস্থিতি সেই ইঙ্গিতই বহন করে। অসম উন্নয়নের তত্ত্ব আমাদের বলছে, এই উন্নয়ন মুষ্টিমেয় কিছু মানুষকে সুবিধা দিলেও, বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে, বিশেষ করে কৃষক, শ্রমিক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের আরও প্রান্তিক করে তুলছে। বিশ্ব-ব্যবস্থা তত্ত্বের নিরিখে, এই ঋণচক্র আমাদের বৈদেশিক নির্ভরতা বাড়াচ্ছে এবং জাতীয় অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্বকে সীমিত করছে। আর পাবলিক চয়েস এবং রাষ্ট্র সম্পর্কিত সমালোচনামূলক তত্ত্বগুলো আমাদের ভাবতে বাধ্য করছে যে, এই বাজেট প্রণয়নের পেছনে কাদের স্বার্থ কাজ করছে এবং রাষ্ট্রযন্ত্র কীভাবে এই প্রক্রিয়াকে বৈধতা দিচ্ছে। রেগুলেশন স্কুলের পারস্পেক্টিভ থেকে দেখলে, অন্তর্বর্তী সরকার বিদ্যমান অর্থনৈতিক সঞ্চয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কাঠামোতে কোনো মৌলিক পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেনি, বরং পুরোনো পথেই হেঁটেছে।
সব মিলিয়ে, এবারের বাজেট ঘোষণার পর আশার চেয়ে আশঙ্কার মেঘই যেন বেশি ঘনীভূত হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা তাঁর ভাষণের শুরুতে যে আশার আলো দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন, বাজেটের বিস্তারিত বিবরণে তার প্রতিফলন খুঁজে পাওয়া কঠিন। তিনি অর্থনীতির ভিত মজবুত করার কথা বলেছেন, কিন্তু যে পথে হাঁটার ইঙ্গিত দিয়েছেন, তাতে সেই ভিত আরও নড়বড়ে হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। তিনি যে স্বপ্নের বাংলাদেশের কথা বলেছেন – ‘আগামীর সেই বাংলাদেশে সবার জন্য মানসম্মত জীবন এবং সর্বস্তরে বৈষম্যহীন ব্যবস্থার নিশ্চয়তা’ – সেই স্বপ্ন যদি ঋণের টাকায় কেনা এক রঙিন ফানুস হয়, তবে সেই ফানুস আকাশে উড়তে না উড়তেই ফেটে যাবে না তো? এই প্রশ্নটাই আজ লক্ষ কোটি সাধারণ মানুষের মনে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। আমরা, এই দেশের সাধারণ মানুষ, খুব বেশি কিছু তো চাই না। আমরা শুধু চাই, আমাদের মাথার ওপর ঋণের এই জগদ্দল পাথর যেন আর ভারী না হয়। আমরা চাই, দুটো পয়সা যেন সঞ্চয় করতে পারি, ছেলেমেয়েদের জন্য একটা অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ যেন রেখে যেতে না হয়, দু’বেলা দু’মুঠো খেয়েপরে যেন শান্তিতে ঘুমাতে পারি। আমাদের এই সামান্য চাওয়াগুলো কি কোনোদিনই পূরণ হবে না? এই প্রশ্ন বুকে নিয়ে আমরা তাকিয়ে থাকি এক অনিশ্চিত আগামীর দিকে।
টীকা
এই আলোচনায় বেশ কয়েকজন অর্থনীতিবিদ ও চিন্তকের নাম এসেছে। তাদের ও তাদের দেয়া ধারণাগুলো সম্পর্কে কিছু কথা এখানে উল্লেখ করছি।
মার্ক্সিস্ট ধারার
১. কার্ল মার্ক্স (Karl Marx):
ধরণ: প্রতিষ্ঠাতা মার্ক্সবাদী (Foundational Marxist) বা ধ্রুপদী মার্ক্সবাদী (Classical Marxist)।
ব্যাখ্যা: মার্ক্সবাদ তাঁর নামেই পরিচিত। তিনিই এই চিন্তাধারার মূল প্রবক্তা। তাঁর প্রধান কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে “ডাস ক্যাপিটাল” (Das Kapital) এবং ফ্রেডারিক এঙ্গেলসের সাথে যৌথভাবে রচিত “কমিউনিস্ট মেনিফেস্টো”। মার্ক্স পুঁজিবাদের শোষণমূলক চরিত্র, শ্রেণি সংগ্রাম (বুর্জোয়া ও প্রলেতারিয়েতের মধ্যে), উদ্বৃত্ত মূল্য (surplus value), পুঁজির সঞ্চয়ন, শ্রমিক শ্রেণির বিচ্ছিন্নতা (alienation), ঐতিহাসিক বস্তুবাদ (historical materialism) এবং পুঁজিবাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও তার অবশ্যম্ভাবী পতন ও সমাজতন্ত্রের উত্থানের তত্ত্ব দিয়েছেন। তাঁর চিন্তাধারা পরবর্তী সকল মার্ক্সবাদী ধারার ভিত্তি স্থাপন করেছে।
২. পল বারান (Paul Baran) ও পল সুইজি (Paul Sweezy):
ধরণ: নয়া-মার্ক্সবাদী (Neo-Marxist), বিশেষত মনোপলি ক্যাপিটালিজম স্কুল (Monopoly Capitalism School)-এর তাত্ত্বিক।
ব্যাখ্যা: বারান ও সুইজি মার্ক্সের ধ্রুপদী পুঁজিবাদের বিশ্লেষণকে বিংশ শতাব্দীর উন্নত পুঁজিবাদী দেশগুলোর প্রেক্ষাপটে প্রসারিত করেন, যেখানে প্রতিযোগিতামূলক পুঁজিবাদের স্থান নিয়েছে একচেটিয়া বা মনোপলি ক্যাপিটালিজম। তাঁদের বিখ্যাত গ্রন্থ “Monopoly Capital” (১৯৬৬)-এ তাঁরা দেখিয়েছেন কীভাবে বৃহৎ কর্পোরেশনগুলো অর্থনৈতিক উদ্বৃত্ত (economic surplus) তৈরি ও শোষণ করে, এবং এই উদ্বৃত্তের ব্যবহারের সমস্যা কীভাবে সাম্রাজ্যবাদ, সামরিকীকরণ ও অপচয়মূলক ব্যয়ের জন্ম দেয়। তাঁরা ক্লাসিক্যাল মার্ক্সিজমের কিছু ধারণাকে সমসাময়িক করার চেষ্টা করেন।
৩. ডেভিড হার্ভে (David Harvey):
ধরণ: সমসাময়িক মার্ক্সবাদী (Contemporary Marxist), বিশেষত ভূগোল ও নগর অধ্যয়নে মার্ক্সবাদী চিন্তার প্রভাবশালী প্রয়োগকারী (Marxist geographer and urban theorist)।
ব্যাখ্যা: হার্ভে মার্ক্সের “ক্যাপিটাল” এবং অন্যান্য কাজকে ভিত্তি করে পুঁজিবাদের স্থানিক (spatial) ও ভৌগোলিক দিকগুলো বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে পুঁজিবাদ স্থানকে (space) তার নিজের প্রয়োজনে পুনর্গঠন করে এবং এই প্রক্রিয়ায় কীভাবে অসম ভৌগোলিক বিকাশ (uneven geographical development), সংকট তৈরি ও স্থানান্তরিত হয়। তাঁর “Accumulation by dispossession” (দখলের মাধ্যমে সঞ্চয়ন) ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যা ব্যাখ্যা করে কীভাবে আদিম সঞ্চয়নের প্রক্রিয়াগুলো আজও বিভিন্ন রূপে বিশ্বজুড়ে বিদ্যমান।
৪. ইমানুয়েল ওয়ালারস্টেইন (Immanuel Wallerstein):
ধরণ: বিশ্ব-ব্যবস্থা তত্ত্বের (World-Systems Theory) প্রবক্তা, যা মার্ক্সবাদী চিন্তাধারা ও নির্ভরশীলতা তত্ত্ব (Dependency Theory) দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত (Heavily influenced by Marxism and Dependency Theory)।
ব্যাখ্যা: ওয়ালারস্টেইন সরাসরি নিজেকে মার্ক্সবাদী হিসেবে সবসময় পরিচয় না দিলেও তাঁর কাজ মার্ক্সীয় শ্রেণি বিশ্লেষণ, পুঁজিবাদের ঐতিহাসিক বিকাশ এবং শোষণের ধারণার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। তিনি পুঁজিবাদকে একটি একক বিশ্ব-ব্যবস্থা হিসেবে দেখেন, যেখানে কেন্দ্র (core), আধা-প্রান্ত (semi-periphery) ও প্রান্ত (periphery) অঞ্চলের মধ্যে অসম অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক বিদ্যমান। এই ব্যবস্থায় কেন্দ্র প্রান্তকে শোষণ করে উদ্বৃত্ত আহরণ করে। তাঁর তত্ত্ব মার্ক্সবাদের সাম্রাজ্যবাদ তত্ত্বের একটি আধুনিক রূপায়ণ হিসেবেও দেখা যেতে পারে।
৫. নিকোস পুলান্টজাস (Nicos Poulantzas) ও লুই আলথুসার (Louis Althusser):
ধরণ: কাঠামোগত মার্ক্সবাদী (Structural Marxist)
ব্যাখ্যা:
লুই আলথুসার: তিনি মার্ক্সবাদের একটি বিজ্ঞানসম্মত ও অপেক্ষাকৃত কম মানবতাবাদী (anti-humanist) ব্যাখ্যার ওপর জোর দেন। তাঁর মতে, সমাজ একটি জটিল কাঠামো যেখানে অর্থনৈতিক ভিত্তি ছাড়াও রাজনৈতিক ও ভাবাদর্শিক স্তরগুলোর আপেক্ষিক স্বায়ত্তশাসন রয়েছে। তিনি “ভাবাদর্শিক রাষ্ট্রযন্ত্র” (Ideological State Apparatuses – ISAs) এবং “নিপীড়নমূলক রাষ্ট্রযন্ত্র” (Repressive State Apparatuses – RSAs) ধারণার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করেন কীভাবে পুঁজিবাদী রাষ্ট্র তার শাসন টিকিয়ে রাখে এবং জনগণের সম্মতি আদায় করে।
নিকোস পুলান্টজাস: আলথুসারের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পুলান্টজাস রাষ্ট্রের মার্ক্সবাদী তত্ত্বকে আরও বিকশিত করেন। তিনি “রাষ্ট্রের আপেক্ষিক স্বায়ত্তশাসন” (relative autonomy of the state) তত্ত্বের জন্য পরিচিত। তাঁর মতে, রাষ্ট্র সরাসরি শাসক বুর্জোয়া শ্রেণির একটি সরল হাতিয়ার নয়, বরং এটি বিভিন্ন শ্রেণির দ্বন্দ্বের একটি ঘনীভূত ক্ষেত্র এবং পুঁজিবাদী ব্যবস্থার দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থ রক্ষার জন্য এটি বুর্জোয়া শ্রেণির কোনো বিশেষ অংশের তাৎক্ষণিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করতে পারে।
৬. হাইম্যান মিনস্কি (Hyman Minsky):
ধরণ: সাধারণত পোস্ট-কেইন্সিয়ান (Post-Keynesian) অর্থনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত, তবে তাঁর কাজে মার্ক্সীয় সংকট তত্ত্বের (Marxist crisis theory), বিশেষ করে পুঁজিবাদের অন্তর্নিহিত অস্থিতিশীলতার ধারণার সাথে গভীর সাদৃশ্য রয়েছে।
ব্যাখ্যা: মিনস্কি সরাসরি মার্ক্সবাদী শিবিরে ছিলেন না। কিন্তু তাঁর “আর্থিক অস্থিতিশীলতা প্রকল্প” (Financial Instability Hypothesis) দেখায় যে, পুঁজিবাদের স্বাভাবিক বিবর্তনেই আর্থিক সংকট তৈরি হয়। দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সময়কালে ঋণ গ্রহণ বাড়তে থাকে এবং আর্থিক খাত ক্রমশ ঝুঁকিপূর্ণ ও ফটকামূলক (speculative) হয়ে পনজি ফাইন্যান্সের দিকে ধাবিত হয়, যা পরবর্তীতে আর্থিক সংকটের জন্ম দেয়। পুঁজিবাদের এই অন্তর্নিহিত অস্থিতিশীলতার ধারণা মার্ক্সের সংকট তত্ত্বের সাথে অনেকাংশে মিলে যায়, যেখানে মার্ক্স দেখিয়েছেন যে পুঁজিবাদ নিজেই তার সংকটের বীজ বহন করে।
৭. মিশেল অ্যাগলিয়েটা (Michel Aglietta) ও রবার্ট বয়ার (Robert Boyer):
ধরণ: ফরাসি রেগুলেশন স্কুল (French Regulation School)-এর প্রধান তাত্ত্বিক। এই স্কুলটি মার্ক্সবাদী চিন্তাধারা, বিশেষত আলথুসারের কাঠামোগত মার্ক্সবাদ, থেকে উদ্ভূত ও প্রভাবিত।
ব্যাখ্যা: রেগুলেশন স্কুল বোঝার চেষ্টা করে যে, পুঁজিবাদ তার অন্তর্নিহিত দ্বন্দ্ব ও সংকট প্রবণতা সত্ত্বেও কীভাবে নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক পর্বে তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকতে পারে। এজন্য তাঁরা “একুমুলেশন রেজিম” (regime of accumulation) বা পুঁজি সঞ্চয়নের একটি নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক ধরণ (যেমন, ফোর্ডিজম) এবং তাকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক নিয়মকানুন, রীতিনীতি ও রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের সমষ্টি, অর্থাৎ “মোড অফ রেগুলেশন” (mode of regulation) ধারণার প্রবর্তন করেন। এই স্কুলের বিশ্লেষণ মার্ক্সীয় কাঠামোর মধ্যে পুঁজিবাদের ঐতিহাসিক বৈচিত্র্য ও পরিবর্তনের ওপর আলোকপাত করে।
সংক্ষেপে, কার্ল মার্ক্স হলেন মার্ক্সবাদের জনক। বারান, সুইজি, হার্ভে, আলথুসার এবং পুলান্টজাস সরাসরি মার্ক্সবাদী ধারার বিভিন্ন শাখার (নয়া-মার্ক্সবাদ, সমসাময়িক মার্ক্সবাদ, কাঠামোগত মার্ক্সবাদ) তাত্ত্বিক। ওয়ালারস্টেইন এবং রেগুলেশন স্কুলের তাত্ত্বিকরা (অ্যাগলিয়েটা, বয়ার) মার্ক্সবাদী চিন্তাধারা দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত এবং তাঁদের কাজ মার্ক্সীয় বিশ্লেষণকে নতুন পথে প্রসারিত করেছে। মিনস্কি পোস্ট-কেইন্সিয়ান হলেও তাঁর সংকট তত্ত্ব মার্ক্সীয় চিন্তার সাথে গুরুত্বপূর্ণ যোগসূত্র স্থাপন করে।
নন-মার্ক্সিস্ট ধারার
১. জন মেনার্ড কীনস (John Maynard Keynes):
ধরণ: কেইন্সিয়ান অর্থনীতির (Keynesian Economics) প্রতিষ্ঠাতা।
ব্যাখ্যা: কীনস বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রভাবশালী অর্থনীতিবিদ। তাঁর প্রধান কাজ “দ্য জেনারেল থিওরি অফ এমপ্লয়মেন্ট, ইন্টারেস্ট অ্যান্ড মানি” (১৯৩৬) ক্লাসিক্যাল অর্থনীতির মূল ধারণাগুলোকে চ্যালেঞ্জ করে, বিশেষত এই ধারণাকে যে বাজার স্বয়ংক্রিয়ভাবে পূর্ণ কর্মসংস্থান স্তরে পৌঁছায়। কীনস দেখিয়েছেন যে, অর্থনীতিতে সামগ্রিক চাহিদা (aggregate demand) একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং মন্দার সময় সরকার রাজস্ব নীতি (fiscal policy) ও আর্থিক নীতি (monetary policy) ব্যবহার করে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে পারে। তিনি সরকারি হস্তক্ষেপের মাধ্যমে বেকারত্ব দূরীকরণ এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার পক্ষে যুক্তি দেন। মহামন্দার (Great Depression) প্রেক্ষাপটে তাঁর তত্ত্ব বিশেষভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং বহু দশক ধরে পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থনৈতিক নীতিকে প্রভাবিত করে।
২. এভসে ডোমার (Evsey Domar) ও (স্যার) রয় হ্যারড (Roy Harrod) (আলোচনায় সোয়ানের নাম এসেছে, তবে হ্যারড-ডোমার মডেল হিসেবে এটি বেশি পরিচিত):
ধরণ: কেইন্সিয়ান ধারার প্রবৃদ্ধি মডেলের (Keynesian Growth Models) প্রবক্তা, বিশেষত হ্যারড-ডোমার মডেল (Harrod-Domar Model)-এর জন্য পরিচিত। (আলোচনায় পিটার সোয়ানের নাম ডোমারের সাথে এসেছে, যদিও সোয়ান স্বতন্ত্রভাবে অস্ট্রেলিয়ান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মডেল নিয়ে কাজ করেছেন যা কিছুটা ভিন্ন, তবে ডেট সাস্টেনিবিলিটির আলোচনায় ডোমারের কাজের সম্প্রসারণ হিসেবে তাঁর নাম আসতে পারে।)
ব্যাখ্যা: ডোমার (এবং হ্যারড, স্বতন্ত্রভাবে কাজ করেও প্রায় একই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন) কেইনসিয়ান বিশ্লেষণকে দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রসারিত করেন। হ্যারড-ডোমার মডেল দেখায় যে, একটি অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার নির্ভর করে তার সঞ্চয়ের হার এবং পুঁজির প্রান্তিক উৎপাদনশীলতার (বা পুঁজি-উৎপাদন অনুপাতের ব্যস্তানুপাতিক) ওপর। এই মডেলটি উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অর্থনৈতিক পরিকল্পনার ক্ষেত্রে বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়েছে, কারণ এটি দেখায় যে প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য বিনিয়োগ (যা সঞ্চয় থেকে আসে) অপরিহার্য। তবে এই মডেলের কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে, যেমন এটি অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির পথকে একটি “সঙ্কীর্ণ পথে” (knife-edge) চলার মতো অস্থিতিশীল হিসেবে দেখায়।
৩. পিটার সোয়ান (Trevor Winchester Swan):
ধরণ: নয়া-ক্লাসিক্যাল প্রবৃদ্ধি তত্ত্বের (Neoclassical Growth Theory) অন্যতম পথিকৃৎ, বিশেষত সোয়ান মডেল (Swan Model) বা সলো-সোয়ান মডেল (Solow-Swan Model)-এর জন্য রবার্ট সলোর সাথে যৌথভাবে (যদিও তাঁরা স্বতন্ত্রভাবে কাজ করেছেন) কৃতিত্বপ্রাপ্ত।
ব্যাখ্যা: সোয়ান (এবং রবার্ট সলো) হ্যারড-ডোমার মডেলের অস্থিতিশীলতার সমস্যা সমাধানের জন্য একটি বিকল্প মডেল প্রস্তাব করেন। তাঁদের মডেলে প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং শ্রম ও পুঁজির মধ্যে প্রতিস্থাপনযোগ্যতা (substitutability) অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সলো-সোয়ান মডেল দেখায় যে, দীর্ঘমেয়াদে একটি দেশের মাথাপিছু আয় স্থির অবস্থায় (steady state) পৌঁছায়, যা মূলত প্রযুক্তির স্তর এবং জনসংখ্যার প্রবৃদ্ধির হারের ওপর নির্ভরশীল, সঞ্চয়ের হারের ওপর নয় (যদিও সঞ্চয়ের হার মাথাপিছু আয়ের স্তরকে প্রভাবিত করে)। এই মডেলটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির আধুনিক তত্ত্বের ভিত্তি স্থাপন করেছে। তবে, এই লেখায় ডোমারের সাথে সোয়ানের নাম ঋণের টেকসইতার প্রসঙ্গে এসেছে, যা ডোমারের কাজের একটি প্রায়োগিক দিক হতে পারে, কিন্তু সোয়ানের মূল পরিচিতি প্রবৃদ্ধি তত্ত্বের জন্যই।
৪. জেমস বুকানন (James M. Buchanan) ও গর্ডন টুলক (Gordon Tullock):
ধরণ: পাবলিক চয়েস থিওরি (Public Choice Theory) বা জনগণের পছন্দ তত্ত্বের প্রধান প্রবক্তা। বুকানন এই কাজের জন্য অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পান।
ব্যাখ্যা: পাবলিক চয়েস থিওরি অর্থনীতির সরঞ্জাম ও পদ্ধতি ব্যবহার করে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করে। এই তত্ত্বের মূল বক্তব্য হলো, রাজনীতিবিদ, আমলা এবং ভোটাররা ব্যক্তিগত স্বার্থ (self-interest) দ্বারা চালিত হন, ঠিক যেমনটা অর্থনীতির তত্ত্বে ভোক্তা ও উৎপাদকদের ক্ষেত্রে ধরে নেওয়া হয়। তাঁরা বাজারের ব্যর্থতার (market failure) মতো “সরকারি ব্যর্থতার” (government failure) সম্ভাবনাও তুলে ধরেন। বুকানন ও টুলক তাঁদের প্রভাবশালী গ্রন্থ “দ্য ক্যালকুলাস অফ কনসেন্ট” (The Calculus of Consent)-এ দেখিয়েছেন কীভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক নিয়মকানুন (যেমন, ভোটাধিকার, সংবিধান) ব্যক্তিগত পছন্দের সমষ্টিগত ফলাফলের ওপর প্রভাব ফেলে। এই তত্ত্ব রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের কার্যকারিতা এবং ব্যপ্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলে এবং সীমিত সরকারের পক্ষে যুক্তি দেয়।
এই অর্থনীতিবিদরা মার্ক্সবাদী ঘরানার বাইরের এবং তাঁরা অর্থনীতির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে মৌলিক অবদান রেখেছেন, যেমন – সামষ্টিক অর্থনীতি, প্রবৃদ্ধি তত্ত্ব এবং রাজনৈতিক অর্থনীতি। তাঁদের তত্ত্ব ও মডেলগুলো আজও অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়ন এবং বিশ্লেষণকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।
সূত্র
- Aglietta, M. (1979). A Theory of Capitalist Regulation: The US Experience. London: Verso.
- Althusser, L. (1971). Lenin and Philosophy and Other Essays. New York: Monthly Review Press.
- Bangladesh Bank. (2024). Annual Report 2023–24. Dhaka: Bangladesh Bank.
- Bangladesh Bureau of Statistics. (2025). National Accounts Statistics: 2024–25. Dhaka: BBS.
- Baran, P. A., & Sweezy, P. M. (1966). Monopoly Capital: An Essay on the American Economic and Social Order. New York: Monthly Review Press.
- Boy, D. (1991). The Regulation School: Critical and Alternative Views. London: Routledge.
- Buchanan, J. M., & Tullock, G. (1962). The Calculus of Consent: Logical Foundations of Constitutional Democracy. Ann Arbor: University of Michigan Press.
- Diamond, D. W., & Dybvig, P. H. (1983). Bank runs, deposit insurance, and liquidity. Journal of Political Economy, 91(3), 401–419.
- Diamond, L., & Plattner, M. F. (Eds.). (2003). Economic Development and Political Reform. Baltimore: Johns Hopkins University Press.
- Domar, E. D. (1944). The “burden of the debt” and the national income. American Economic Review, 34(4), 798–827.
- Feldstein, M. (1999). The effects of fiscal policies when interest rates are stuck at zero (NBER Working Paper No. W7195). National Bureau of Economic Research.
- Frank, A. G. (1967). Capitalism and Underdevelopment in Latin America: Historical Studies of Chile and Brazil. New York: Monthly Review Press.
- Harvey, D. (2005). A Brief History of Neoliberalism. Oxford: Oxford University Press.
- Harvey, D. (2006). The Limits to Capital (Revised ed.). London: Verso.
- Keynes, J. M. (1936). The General Theory of Employment, Interest, and Money. London: Macmillan.
- Krugman, P. R., & Obstfeld, M. (2009). International Economics: Theory and Policy (8th ed.). Boston: Pearson.
- Marx, K. (1976). Capital: A Critique of Political Economy, Volume I (B. Fowkes, Trans.). London: Penguin Classics. (Original work published 1867)
- Marx, K. (1978). Capital: A Critique of Political Economy, Volume II (D. Fernbach, Trans.). London: Penguin Classics. (Original work published 1885)
- Marx, K. (1967). Capital: A Critique of Political Economy, Volume III (D. Fernbach, Trans.). London: Penguin Classics. (Original work published 1894)
- Ministry of Finance, Government of Bangladesh. (2025). Medium Term Macroeconomic Policy Statement 2025. Dhaka: MOF.
- Minsky, H. P. (1986). Stabilizing an Unstable Economy. New Haven: Yale University Press.
- Musgrave, R. A. (1959). The Theory of Public Finance: A Study in Public Economy. New York: McGraw-Hill.
- Musgrave, R. A., & Musgrave, P. B. (1989). Public Finance in Theory and Practice (5th ed.). New York: McGraw-Hill.
- OECD. (2020). Tax Administration 2020: Comparative Information on OECD and Other Advanced and Emerging Economies. Paris: OECD Publishing.
- Poulantzas, N. (1978). State, Power, Socialism. London: Verso.
- Prebisch, R. (1950). The economic development of Latin America and its principal problems. Economic Bulletin for Latin America, 7(1), 1–22.
- Ravallion, M. (2009). Evaluation of Targeted Cash Transfer Programs: Approaches and Evidence. World Bank.
- Reinhart, C. M., & Rogoff, K. S. (2010). This Time Is Different: Eight Centuries of Financial Folly. Princeton: Princeton University Press.
- Rogoff, K. S. (2022). The Curse of Cash: How Large-Denomination Bills Aid Crime and Tax Evasion and Constrain Monetary Policy. Princeton: Princeton University Press.
- Sen, A. (1999). Development as Freedom. New York: Alfred A. Knopf.
- Stiglitz, J. E. (2002). Globalization and Its Discontents. New York: W. W. Norton.
- Swan, T. W. (1956). Economic control in a dependent economy. Economic Record, 32(1–2), 334–361.
- Tanzi, V. (2000). Globalization, technological developments, and the work of fiscal term (IMF Working Paper WP/00/103). International Monetary Fund.
- Wallerstein, I. (1974). The Modern World-System I: Capitalist Agriculture and the Origins of the European World-Economy in the Sixteenth Century. New York: Academic Press.
- World Bank. (2019). Environmental and Social Framework. Washington, DC: World Bank.
- Yunus, M. (2003). Banker to the Poor: Micro-Lending and the Battle Against World Poverty. New York: PublicAffairs.
Leave a Reply