প্রাইমারিলি অবসেসোনাল অবসেসিভ-কমপালসিভ ডিসঅর্ডার

শুধুই চিন্তা, বাতিক নয়: এক অন্যরকম ওসিডি

অবসেসিভ-কমপালসিভ ডিসঅর্ডার, ছোট করে বললে ওসিডি (Obsessive-Compulsive Disorder) – এই নামটার সাথে আমরা কমবেশি পরিচিত। কিন্তু এর ভেতরেও লুকিয়ে আছে আরেকটা অন্যরকম জগৎ, যাকে বলে প্রাইমারিলি অবসেশনাল অবসেসিভ-কমপালসিভ ডিসঅর্ডার (Primarily obsessional obsessive-compulsive disorder)। অনেকে আবার ভালোবেসে, কিংবা হয়তো খানিকটা অসহায়ত্ব থেকে, একে ‘পিওর ও’ (Pure O) (Hyman & DeFrene, 2008) নামেও ডাকে। তবে একটা মজার ব্যাপার কী জানেন? মানসিক রোগ নির্ণয়ের যে ঢাউস বইটা আছে, ডিএসএম-৫ (DSM-5), সেখানে কিন্তু এর জন্য আলাদা করে কোনো পাত্তা দেওয়া হয়নি, মানে আলাদা কোনো রোগ হিসেবে স্বীকৃতি নেই (American Psychiatric Publishing, 2013a)। যাদের এই ‘পিওর ও’ নামক বিচিত্র ধরনের ওসিডি থাকে, তাদের মধ্যে বারবার হাত ধোয়া, জিনিসপত্র গুনে গুনে রাখা বা একই জিনিস বারবার পরীক্ষা করার মতো বাইরের বাতিকগুলো (compulsions) তেমন একটা দেখা যায় না। অথচ সাধারণ ওসিডি-তে এগুলোই তো সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে। তার মানে এই নয় যে তাদের মনে কোনো নিয়মকানুন বা চিন্তা তাড়ানোর চেষ্টা থাকে না। থাকে, তবে সেগুলো হলো সম্পূর্ণ মনের ভেতরের খেলা; যেমন, কোনো একটা বিশেষ চিন্তা সযত্নে এড়িয়ে যাওয়া, অথবা একটা সাধারণ বিষয় নিয়েই ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন ধরে ভেবে যাওয়া (excessive rumination) (Toates & Coschug-Toates, 2002)। এই ধরনের ওসিডি-তে হয় কী, মাথায় হুটহাট করে ঢুকে পড়ে রাজ্যের অনাহূত, অবাঞ্ছিত চিন্তা। আর সেই চিন্তাগুলো এমনই, যা কিনা মনে প্রচণ্ড কষ্ট দেয়। চিন্তাগুলো হতে পারে যৌনতা বিষয়ক, যা হয়তো সমাজের চোখে খুব একটা ভালো ঠেকে না, অথবা হিংস্র প্রকৃতির – যেমন ধরুন, আচমকা ভয়ংকর কিছু একটা করে ফেলার ভয় (Julien, O’Connor, & Aardema, 2009)।

ডিএসএম-৫ এ বিষয়ে বলছে, “অবসেসিভ-কমপালসিভ এবং এর সাথে সম্পর্কিত ডিসঅর্ডারগুলো স্বাভাবিক বয়স-উপযোগী চিন্তা ও আচার-আচরণ থেকে তখনই আলাদা, যখন সেগুলো মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যায় বা বয়সের তুলনায় অনেক বেশি সময় ধরে চলতে থাকে। কারো মধ্যে সামান্য কিছু লক্ষণ থাকা আর তার পুরোদস্তুর একটা ক্লিনিক্যাল ডিসঅর্ডার হয়েছে – এই দুটোর মধ্যে ফারাক বুঝতে হলে বেশ কিছু বিষয় খুঁটিয়ে দেখতে হয়। যেমন, ব্যক্তিটি কী পরিমাণ মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে আছে এবং তার দৈনন্দিন কাজকর্ম কতটা ব্যাহত হচ্ছে” (American Psychiatric Publishing, 2013a)। মোদ্দা কথা, বাড়াবাড়ি হলেই মুশকিল!

পেছনের কথা (History)

অনেকদিন আগের কথা। ধরুন ষাটের বা সত্তরের দশক। সেই সময়ে কয়েকজন মনোবিজ্ঞানী আর মনোরোগ বিশেষজ্ঞের চোখে পড়লো, আরে, কিছু ওসিডি রোগীর মধ্যে তো বাইরে থেকে বোঝার মতো কোনো বাতিক (overt compulsions) তেমন একটা নেই! (Clark & Guyitt, 2008)। এই যেমন ধরুন, ১৯৭১ সালে মনোবিজ্ঞানী স্ট্যানলি র‌্যাকম্যান (Stanley Rachman) লিখলেন, যেসব অবসেশন বা অনাকাঙ্ক্ষিত চিন্তার (obsessions) সাথে শারীরিক বাতিকগুলো থাকে না, সেগুলোর আচরণগত চিকিৎসা (behavioral treatment) করাটা জটিল এবং দুরূহ কাজ। তিনি আরও ইশারা করলেন যে, এই ধরনের অবসেশনগুলো প্রায়শই “অবসেশনাল রিউমিনেশন” (obsessional rumination) বা একই চিন্তা বারবার, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে করার একটা অভ্যাসের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকে (Rachman, 1971)। স্যার অব্রে লুইসও (Sir Aubrey Lewis) ১৯৬৬ সালে অনেকটা একই রকম কথা বলেছিলেন। তার মতে, এই অবসেশনাল রিউমিনেশনগুলো আসলে অবসেসিভ বা আবেশী লক্ষণেরই একটা বিশেষ উপবিভাগ, যেখানে মানুষ অবিরাম মানসিক প্রশ্ন আর উত্তর খোঁজার এক অন্তহীন খেলায় মেতে ওঠে (Lewis, 1966)।

শুরুর দিকে যখন এই ‘পিওর’ বা শুধু চিন্তাকেন্দ্রিক অবসেশনের চিকিৎসার চেষ্টা করা হলো, তখন ‘থট স্টপিং’ (thought stopping) বা চিন্তা থামানোর একটা কৌশল বেশ জনপ্রিয় ছিল। ব্যাপারটা ছিল এমন – রোগীদের বলা হতো তাদের সেই বিরক্তিকর অবসেশন বা চিন্তাটা নিয়ে ভাবতে। আর যেই না তারা ভাবতে শুরু করতো, অমনি থেরাপিস্ট সাহেব সজোরে ধমকের সুরে বলতেন, ‘থামো!’ ব্যস, চিন্তা থেমে যাবে! কখনো কখনো এই জোরালো নির্দেশের সাথে আবার অস্বস্তিকর কোনো উদ্দীপকও (aversive stimulus) জুড়ে দেওয়া হতো, যাতে রোগী ভয় পেয়ে চিন্তা করা বন্ধ করে দেয় (Clark & Guyitt, 2008; Stern, Lipsedge, & Marks, 1973)। মনোবিজ্ঞানী জোসেফ ভলপে (Joseph Wolpe) তো এই থট স্টপিং পদ্ধতির বিরাট ভক্ত ছিলেন (Wolpe, 1958; Wolpe, 1988)। কিন্তু হায়, এর কার্যকারিতা ছিল খুবই সামান্য, বলতে গেলে নেই বললেই চলে (Clark & Guyitt, 2008)। ১৯৮৯ সালের একটা বড়সড় গবেষণা পর্যালোচনা বা মেটা-অ্যানালিসিসে দেখা গেল, বিভিন্ন গবেষণায় অংশ নেওয়া রোগীদের মধ্যে অর্ধেকেরও কম রোগী জানিয়েছেন যে তাদের অবসেশন কিছুটা হলেও কমেছে। আর মনের কষ্ট কমেছে, এমন লোকের সংখ্যা তো আরও কম – মাত্র ১২ শতাংশের মতো (Salkovskis & Westbrook, 1989)। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম দাঁড়ালো যে, রোগের চিকিৎসা তো হলো, কিন্তু রোগী আর তেমন সারলো না। এ যেন মশা মারতে কামান দাগা, কিন্তু মশা দিব্যি উড়ে বেড়াচ্ছে!

কীভাবে দেখা দেয় (Presentation)

ভাবুন তো, এমন একটা অবস্থা, যাকে বলা হচ্ছে “ওসিডি-র সবচেয়ে কষ্টদায়ক ও চ্যালেঞ্জিং রূপগুলোর একটি” (Hyman & DeFrene, 2008; Shah, 2025)। যাদের এই ধরনের ‘পিওর ও’ ওসিডি থাকে, তাদের মাথায় “ঘন ঘন অত্যন্ত কষ্টদায়ক এবং একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু চিন্তা যেন বিনামেঘে বজ্রপাতের মতো হুট করে ঢুকে পড়ে।” আর এই চিন্তাগুলো কেমন জানেন? সেগুলো “সাধারণত এমন একটা গভীর ভয়কে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় যে, আপনি হয়তো এমন কিছু করে বসবেন যা আপনার স্বাভাবিক স্বভাবের পুরোপুরি বিপরীত, এমন কিছু… যা হয়তো আপনার নিজের বা অন্য কারো জন্য মারাত্মক… এমনকি প্রাণঘাতীও হতে পারে।” (Hyman & DeFrene, 2008)। আর এই চিন্তাগুলো “বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয় আগ্রাসী, নয়তো যৌন প্রকৃতির” (Hyman & DeFrene, 2008) হয়ে থাকে।

‘পিওর ও’ ওসিডি-র প্রকৃতি আর ধরন একেকজনের ক্ষেত্রে একেকরকম হতে পারে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সবার ক্ষেত্রেই মূল ব্যাপারটা হলো – একটা বিরক্তিকর, অনাহূত চিন্তা বা প্রশ্ন মনের মধ্যে জেঁকে বসা, একটা অপ্রত্যাশিত বা অনুপযুক্ত মানসিক ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠা, অথবা একটা তীব্র ভীতিকর তাড়না অনুভব করা। আর এই সবকিছু মিলে ব্যক্তিকে চরম উদ্বেগ আর আতঙ্কের মধ্যে ফেলে দেয়। কারণটা খুব সহজ। এই চিন্তাগুলো তাদের মনে গভীরভাবে গেঁথে থাকা ধর্মীয় বিশ্বাস, নৈতিকতার বোধ বা সামাজিক রীতিনীতির সাথে একেবারেই খাপ খায় না, বরং পুরোপুরি বিপরীত মেরুর (Hyman & Pedrick, 2010)। ‘পিওর ও’ ওসিডি-র সাথে যে ভয়গুলো জড়িয়ে থাকে, সেগুলো সাধারণ ওসিডি আক্রান্ত ব্যক্তির ভয়ের চেয়ে অনেক বেশি ব্যক্তিগত, অনেক বেশি আতঙ্কজনক। ‘পিওর ও’-তে আক্রান্তরা এমন সব আত্মবিধ্বংসী, ভয়াবহ পরিস্থিতির ভয় পায়, যা তাদের নিজের জীবন বা তাদের চারপাশের প্রিয় মানুষগুলোর জীবন একেবারে তছনছ করে দেবে বলে তারা মনে করে। একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টা হয়তো আরেকটু পরিষ্কার হবে। ধরুন, সাধারণ ওসিডি আক্রান্ত কেউ হয়তো ঘরের দরজা ঠিকমতো বন্ধ হয়েছে কিনা, বা নিজের হাতটা পরিষ্কার আছে কিনা, এসব নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তিত হতে পারে। কিন্তু ‘পিওর ও’ আক্রান্ত কেউ হয়তো এই ভেবেই আতঙ্কে নীল হয়ে যাবে যে, তার যৌন পরিচয়ে কোনো আমূল পরিবর্তন এসে গেছে (যেমন, সে হয়তো পেডোফাইল হয়ে গেছে বা হয়ে যেতে পারে!), অথবা সে হয়তো একজন খুনী হয়ে যেতে পারে, কিংবা সে তার কোনো প্রিয়জন বা কোনো নিরীহ ব্যক্তির, এমনকি নিজেরও কোনো ভয়ঙ্কর ক্ষতি করে ফেলতে পারে, অথবা সে হয়তো শেষমেশ পাগলই হয়ে যাবে!

এ এক অদ্ভুত গোলকধাঁধা! রোগী বোঝেন, তার ভয়টা হয়তো অমূলক, হয়তো একেবারেই অসম্ভব। কিন্তু মনের ভেতরের তীব্র উদ্বেগ সেই অবসেশন বা অনাকাঙ্ক্ষিত চিন্তাটাকে এতটাই বাস্তব আর জরুরি করে তোলে যে, সেটাকে অগ্রাহ্য করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। যাদের ‘পিওর ও’ ওসিডি নেই, তারা হয়তো মাথায় আসা অদ্ভুত, অনাহূত চিন্তা বা তাড়নাকে মনের স্বাভাবিক খেয়াল বা বৈচিত্র্য হিসেবে ধরে নিয়ে তেমন একটা পাত্তা দেবে না। কিন্তু ‘পিওর ও’ আক্রান্ত কেউ এতে প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যাবে, আর তারপর সেই চিন্তাটাকে মন থেকে দূর করতে বা ভবিষ্যতে যাতে আর না আসে, তার জন্য একেবারে মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাবে। ব্যক্তিটি তখন নিজেকে ক্রমাগত প্রশ্ন করতে শুরু করে, “আমি কি সত্যিই এমন কিছু করতে পারি?” অথবা “আচ্ছা, এটা কি সত্যিই ঘটতে পারে?” কিংবা “এই যে ভয়টা পাচ্ছি, এটা কি সত্যিই আমি?” (যদিও তারা সাধারণত মনে মনে জানে যে তাদের ভয়টা অযৌক্তিক, আর এই উপলব্ধিটা তাদের কষ্ট আরও বাড়িয়ে দেয়) (Toates & Coschug-Toates, 2000)। এরপর শুরু হয় এক অন্তহীন মানসিক যুদ্ধ – সেই অনাকাঙ্ক্ষিত চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে বা তার একটা যুক্তিসঙ্গত সমাধান খুঁজতে তারা সর্বশক্তি নিয়োগ করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা মানসিকভাবে একটুখানি স্বস্তি খোঁজার এবং একটা নিশ্চিত, সন্দেহাতীত উত্তর পাওয়ার এক দুষ্টচক্রে (vicious cycle) খুব বাজেভাবে আটকে যায় (Toates & Coschug-Toates, 2002; Hales, Yudofsky, & Gabbard, n.d.)।

সাধারণত যে ধরনের অনাহূত চিন্তা বা অবসেশনগুলো এদের মনে ঘুরপাক খায়, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হলো:

  • দায়িত্ববোধের বাড়াবাড়ি (Responsibility): অন্যের ভালো-মন্দ নিয়ে অতিরিক্ত, প্রায় অসুস্থরকমের উদ্বেগ। বিশেষ করে, তারা জেনে বা অজান্তে কারও ক্ষতি করে ফেলেছে বা ভবিষ্যতে করে ফেলতে পারে – এই ধরনের অমূলক বিশ্বাস থেকে তীব্র অপরাধবোধে ভোগা (OCD ONLINE, 2005)।

  • যৌনতা বিষয়ক চিন্তা (Sexuality): নিজের যৌন প্রবণতা নিয়ে বারবার সন্দেহ জাগা। এটাকে অনেকে HOCD বা ‘হোমোসেক্সুয়াল ওসিডি’ নামেও চেনে। এই ধরনের সমস্যায় আক্রান্তদের লক্ষণগুলো কিন্তু যারা সত্যিই নিজেদের যৌনতা নিয়ে সংকটে আছেন, তাদের থেকে বেশ আলাদা হয়। একটা বড় পার্থক্য হলো, HOCD আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণত এর আগে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি স্বাভাবিক যৌন আকর্ষণ অনুভব করার কথা বলেন। অন্যদিকে, সমকামী ব্যক্তিরা, তারা নিজেদের সমকামিতার কথা প্রকাশ করুন বা না করুন, সবসময়ই সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেন (NeuroticPlanet, 2011)। বেচারা রোগী তখন “আমি কি সমকামী?” (Winston & Seif, 2017) – এই একটা প্রশ্নের আবর্তে ঘুরপাক খেতে খেতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। মজার ব্যাপার হলো, এই ধরনের অবসেশনে ভোগা অনেকেই হয়তো বিপরীত লিঙ্গের কারও সাথে, অথবা সমলিঙ্গের কারও সাথেই (এক্ষেত্রে তাদের ভয়টা উল্টে গিয়ে দাঁড়ায় “আমি কি বিষমকামী?”) একটা সুস্থ ও পরিপূর্ণ রোমান্টিক সম্পর্কে আবদ্ধ থাকেন (Hyman & Pedrick, 2010; Obsessive-compulsive related disorders By Eric Hollander, pages 140-146; Homosexuality Anxiety: A Misunderstood Form of OCD, 2008; Bhatia & Kaur, 2015; Sebeki, 2008; Williams & Farris, 2011; Williams, Crozier, & Powers, 2011)।

  • শিশুকামিতা বা পেডোফিলিয়া নিয়ে ভয় (Pedophilia): ওসিডি-তে যৌনতা বিষয়ক চিন্তাগুলো কখনো কখনো পেডোফাইল হয়ে যাওয়ার ভয়কেও ঘিরে আবর্তিত হতে পারে। এর সাথে সাধারণত প্রচণ্ড মানসিক কষ্ট এবং এই ভেবে আতঙ্ক থাকে যে, তারা হয়তো সত্যি সত্যিই পেডোফিলিক বা শিশুকামী কোনো তাড়নার বশে কোনো অঘটন ঘটিয়ে ফেলবে (Bruce, Ching, & Williams, 2018)।

  • হিংস্রতা বা সহিংসতা নিয়ে চিন্তা (Violence): নিজের বা কোনো প্রিয়জনের ক্ষতি করে ফেলার একটা লাগাতার, অসহনীয় ভয় মনের মধ্যে চেপে বসে (Obsessive-compulsive related disorders By Eric Hollander, pages 140-146; Akhtar et al., 1975)।

  • বর্ণবাদ বিষয়ক চিন্তা (Racism): বর্ণবাদ বা কোনো বিশেষ জাতিগোষ্ঠী সম্পর্কিত অনাহূত, অবাঞ্ছিত চিন্তা বা অস্বস্তিকর তাড়না অনুভব করা (New England OCD Institute, n.d.; NOCD, 2021)।

  • ধার্মিকতা ও ধর্মদ্রোহিতা (Religiosity): ধর্ম সংক্রান্ত বিষয়ে নানারকম অনাহূত চিন্তা বা তাড়না, যা প্রায়শই ধর্মদ্রোহী বা অপবিত্র প্রকৃতির হয়, সেগুলো মনের মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে (Akhtar et al., 1975; Denys et al., n.d.)।

  • স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ (Health): আপাতদৃষ্টিতে একেবারেই অসম্ভব কোনো উপায়ে (যেমন ধরুন, এমন কোনো জিনিস স্পর্শ করা যা হয়তো অনেকদিন আগে কোনো রোগাক্রান্ত ব্যক্তি স্পর্শ করেছিল) কোনো একটা মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হওয়ার বা রোগাক্রান্ত হয়ে যাওয়ার লাগাতার ভয় (এটা কিন্তু হাইপোকন্ড্রিয়াসিস বা রোগভীতি থেকে ভিন্ন)। অথবা, কোনো ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার ফলাফলের উপর কিছুতেই বিশ্বাস রাখতে না পারা (Akhtar et al., 1975; Denys et al., n.d.)।

  • সম্পর্কের অবসেশন (Relationship obsessions – ROCD): এই ক্ষেত্রে, কোনো রোমান্টিক সম্পর্কে থাকা ব্যক্তি সেই সম্পর্কে থাকার বা সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখার যৌক্তিকতা নিয়ে অবিরাম, অন্তহীনভাবে নিশ্চিত হতে চায়। এর মধ্যে এমন সব অবসেসিভ বা আবেশী চিন্তা থাকে, যেমন – “আমি কীভাবে জানব যে এটাই সত্যিকারের ভালোবাসা?”, “আমি কি এই মানুষটার প্রতি যথেষ্ট পরিমাণে আকৃষ্ট?”, “আমি কি এই মানুষটাকে সত্যিই ভালোবাসি, নাকি পুরোটাই শুধু মোহ?”, “আচ্ছা, সে কি সত্যিই আমাকে ভালোবাসে?” – এই ধরনের হাজারো প্রশ্ন। এছাড়াও, সঙ্গীর ছোটখাটো, অনুভূত ত্রুটিগুলো নিয়েও তারা অবসেসিভ চিন্তায় ডুবে থাকতে পারে (Doron, Derby, Szepsenwol, & Talmor, 2012a; Doron, Derby, Szepsenwol, & Talmor, 2012b)। একটা নিশ্চিত উত্তর পাওয়ার এই যে মরিয়া চেষ্টা, এর যন্ত্রণা একসময় এক তীব্র ও অন্তহীন উদ্বেগের চক্র তৈরি করে। কারণ, সত্যি বলতে, এ ধরনের প্রশ্নের কোনো নিশ্চিত উত্তর পাওয়া অসম্ভব। আবার এমনও হতে পারে, সঙ্গী তার ভালোবাসার মানুষটি কী করছে বা করতে পারে, বিশেষ করে সম্ভাব্য ও স্বাভাবিক প্রতারণার ধরণগুলো নিয়ে, গুরুতর সব উদ্বেগজনক চিন্তায় ডুবে থাকবে। যদিও এই চিন্তাগুলো আক্রান্ত ব্যক্তির দ্বারা চালিত হয় না এবং এগুলো আসলেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে মনে আসে, তবুও সঙ্গী নিজেকে এমনভাবে চিন্তা করার জন্য দোষারোপ করবে যা অন্যজনকে খারাপভাবে প্রতিপন্ন করে (Hyman & DeFrene, 2008)। মনের মধ্যে তখন নিয়ন্ত্রণহীন অপরাধবোধ, অজানা ভয় এবং ভবিষ্যতে কী হবে বা কী হতে পারে, তা নিয়ে কষ্টদায়ক চিন্তার এক অবিরাম স্রোত বয়ে চলে (Doron, Derby, Szepsenwol, & Talmor, 2012a)।

  • অস্তিত্ববাদ বিষয়ক চিন্তা (Existential): আত্মপরিচয়, বাস্তবতা, এই বিশাল মহাবিশ্ব এবং অন্যান্য গভীর দার্শনিক বিষয়গুলির প্রকৃতি সম্পর্কে ক্রমাগত এবং অবসেসিভ বা আবেশী প্রশ্ন মনের মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে (Intrusive Thoughts, 2019)।

  • সাধারণ দৈহিক ক্রিয়া নিয়ে চিন্তা (Somatic Function): শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া, চোখের পলক ফেলা বা ঢোক গেলার মতো একেবারেই সাধারণ এবং স্বাভাবিক মানবিক কাজগুলো নিয়েও তারা অতিরিক্ত চিন্তা করতে শুরু করে (The Gateway Institute, 2025)।

রোগ নির্ণয় (Diagnosis)

এবার আসি রোগ নির্ণয়ের কথায়। শুনতে অবাক লাগলেও, মানসিক রোগের সেই বিশাল গ্রন্থ ডিএসএম-৫ এ এমন কোনো রোগনির্ণয়ের উল্লেখ নেই। ডিএসএম-৫ এ ওসিডি বলতে যে রোগনির্ণয়টি রয়েছে, তা হলো সাধারণ অবসেসিভ-কমপালসিভ ডিসঅর্ডার (American Psychiatric Publishing, 2013a)। ডিএসএম-৫ অনুসারে, কম্পালশন বা বাতিকগুলো মানসিকও হতে পারে, ঠিকই, কিন্তু সেগুলো সবসময় পুনরাবৃত্তিমূলক বা বারবার করার মতো কাজ হয়ে থাকে, যেমন – “প্রার্থনা করা, মনে মনে সংখ্যা গণনা করা, অথবা নীরবে কোনো বিশেষ শব্দ বারবার পুনরাবৃত্তি করা” (American Psychiatric Publishing, 2013b)। ডিএসএম-৫ এর কোথাও কিন্তু এটা বলা নেই যে, কোনো একটা বিশেষ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়ানোটাও ওসিডি-র সাথে যুক্ত হতে পারে (American Psychiatric Publishing, 2013c)। কাজেই, ‘পিওর ও’-এর ব্যাপারটা একটু ধোঁয়াশাপূর্ণই থেকে যায় প্রাতিষ্ঠানিক সংজ্ঞার দিক থেকে।

বিকল্প (Alternatives)

যারা এই প্রাইমারিলি অবসেশনাল ওসিডি বা ‘পিওর ও’-তে ভোগেন, তাদের অনেককেই বাইরে থেকে দেখলে বেশ স্বাভাবিক, আর দশটা মানুষের মতোই কর্মঠ মনে হবে। কে বলবে, তাদের মনের ভেতরটা জুড়ে চলছে অবিরাম চিন্তার ঝড়! তারা তাদের কষ্টের কারণ হওয়া হাজারো প্রশ্নের সমাধান বা উত্তর খোঁজার জন্য দিনের বেশিরভাগ সময় ধরে একই চিন্তা বারবার করতে থাকেন, যাকে বলে রিউমিনেশন। প্রায়শই দেখা যায়, ‘পিওর ও’ আক্রান্ত ব্যক্তিরা মনের মধ্যে প্রচণ্ড অপরাধবোধ আর অসহ্য উদ্বেগ নিয়ে দিন কাটান। এই অসহনীয় কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টায় তারা কখনো কখনো কোনো একটা বিষয় ‘সঠিক উপায়ে’ বা ‘নিখুঁতভাবে’ ভাবার চেষ্টা করেন, আর সেটাও এই রিউমিনেশনেরই একটা অংশ হয়ে দাঁড়ায় (Toates & Coschug-Toates, 2002; Hyman & Pedrick, 2010)।

একটা উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা হয়তো আরেকটু পরিষ্কার হবে। ধরুন, কারো মাথায় হঠাৎ একটা অনাহূত চিন্তা এলো – “আমি বোধহয় এইমাত্র বিলকে হাতের স্টেক কাটার ছুরিটা দিয়ে মেরেই ফেলেছি!” ব্যস, এই চিন্তার পর পরই সেটার একটা বিপর্যয়মূলক ভুল ব্যাখ্যা মনের মধ্যে গেঁথে যেতে পারে, যেমন – “ছিঃ ছিঃ! আমি কীভাবে এমন একটা ভয়ংকর চিন্তা করতে পারলাম? আমার ভেতরে নিশ্চয়ই একটা সাইকোপ্যাথ বা মানসিক রোগী লুকিয়ে আছে!” (Rachman, 2003)। আর এই চিন্তা মাথায় আসার সাথে সাথেই হয়তো সেই ব্যক্তি ইন্টারনেটে সাইকোপ্যাথি বা মানসিক রোগ সম্পর্কিত অসংখ্য আর্টিকেল পড়তে শুরু করে দেবে, শুধু একটুখানি স্বস্তি পাওয়ার আশায়। কিন্তু এই স্বস্তি খোঁজার প্রক্রিয়া বা রিচুয়াল আদতে কোনো নতুন তথ্য বা স্পষ্টতা তো দেবেই না, উল্টো উত্তরের জন্য তার ভেতরের অনুসন্ধানের তীব্রতা আরও বহুগুণে বাড়িয়ে দিতে পারে। এখানে অসংখ্য জ্ঞানীয় পক্ষপাত বা কগনিটিভ বায়াস (cognitive biases) কাজ করে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো চিন্তা-ক্রিয়া একীকরণ (thought-action fusion) – অর্থাৎ, কোনো কিছু চিন্তা করা মানেই সেটা করে ফেলা বা করতে চাওয়ার সামিল; চিন্তার অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া – অর্থাৎ, মাথায় আসা সব চিন্তাকেই খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা; এবং চিন্তার উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটা তীব্র আকাঙ্ক্ষা (Rachman, 2003)।

চিকিৎসা (Treatment)

তাহলে এর থেকে মুক্তির উপায় কী? রাস্তা আছে বৈকি! প্রাইমারিলি অবসেশনাল ওসিডি-র জন্য সবচেয়ে কার্যকর চিকিৎসা হিসেবে ধরা হয় কগনিটিভ-বিহেভিওরাল থেরাপিকে (cognitive-behavioral therapy) (Abramowitz & Houts, n.d.)। এর মধ্যে আবার দুটো বিশেষ পদ্ধতি খুব কাজের – একটা হলো এক্সপোজার অ্যান্ড রেসপন্স প্রিভেনশন (Exposure and Response Prevention – ERP) আর অন্যটা হলো কগনিটিভ থেরাপি (Cognitive Therapy – CT) (Abramowitz & Houts, n.d.; Steketee, Frost, Rhéaume, & Wilhelm, n.d.)। এই থেরাপিগুলোর সাথে কখনো কখনো এসএসআরআই (SSRIs) জাতীয় ওষুধও ব্যবহার করা হতে পারে, আবার কখনো বা শুধু থেরাপিই যথেষ্ট (Toates & Coschug-Toates, 2002; OCD ONLINE, 2005a; Understanding and Treating Obsessive-Compulsive Disorder: A Cognitive-Behavioral Approach, 2005)। তবে কিছু গবেষক মনে করেন, যাদের মধ্যে বাইরে থেকে বোঝার মতো বাতিকগুলো তেমন একটা থাকে না, তারা ওসিডি-র অন্যান্য রোগীদের তুলনায় ইআরপি বা এক্সপোজার থেরাপিতে তুলনামূলকভাবে কম সাড়া দেন। সেক্ষেত্রে, ইআরপি-র চেয়ে কগনিটিভ থেরাপি (CT) হয়তো বেশি সফল হতে পারে (Purdon & Clark, 2005; Ling, 2005)।

‘পিওর ও’-এর জন্য এই যে এক্সপোজার অ্যান্ড রেসপন্স প্রিভেনশন (ERP) পদ্ধতির কথা বলা হলো, এটা তাত্ত্বিকভাবে ক্লাসিক্যাল কন্ডিশনিং এবং বিলুপ্তি বা এক্সটিঙ্কশনের (extinction) নীতির উপর ভিত্তি করে তৈরি। ‘স্পাইক’ বা সেই হুট করে মাথায় আসা অনাহূত চিন্তাটা (intrusive thought) প্রায়শই একটা অত্যন্ত জরুরি প্রশ্ন বা ভয়ঙ্কর কোনো বিপর্যয়কর পরিস্থিতি হিসেবে মনের মধ্যে দেখা দেয়। আর তার পরপরই শুরু হয় ভয়, উদ্বেগ, মনে মনে প্রশ্ন করা এবং একই চিন্তা বারবার করার মতো বাধ্যতামূলক প্রতিক্রিয়া বা কম্পালসিভ রেসপন্স (যেমন, আমি যদি সত্যিই কারও ক্ষতি করতে চাই? আমি যদি এইমাত্র কোনো পাপ করে ফেলি?)।

অন্যদিকে, একটা থেরাপিউটিক প্রতিক্রিয়া (therapeutic response) – যা কিনা এই অবসেসিং বা আবেশী চিন্তার চক্রটাকে ভাঙতে সাহায্য করবে – হলো এমন একটা প্রতিক্রিয়া, যা সেই স্পাইক বা অনাহূত চিন্তাটার উত্তর এমনভাবে দেয় যাতে কিছুটা অস্পষ্টতা বা অনিশ্চয়তা থেকে যায়। একটা থেরাপিউটিক প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে, ব্যক্তিটি সেই ভয় পাওয়া সম্ভাব্য খারাপ ফলাফলের ঝুঁকিটাকেই মেনে নেয় এবং সেই ঝুঁকিটা নিতে ইচ্ছুক হয়। সে বারবার নিজেকে এই বলে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে না যে, ভয়ের ঘটনাটা আদতে ঘটবে না।

উদাহরণস্বরূপ, স্পাইক বা অনাহূত চিন্তাটা হতে পারে এমন – “কাল হয়তো আমি আমার বসের সাথে কথা বলার সময় আপত্তিকর কিছু একটা বলে ফেলেছিলাম।” এক্ষেত্রে একটা প্রস্তাবিত থেরাপিউটিক প্রতিক্রিয়া হবে, “হুম, হয়তো বলেছিলাম। তাতে কী? বড়জোর সে আমাকে কালকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করবে, এই তো? সেই ঝুঁকিটা নিয়েই না হয় বেঁচে থাকব।” যদিও নিজেকে আশ্বস্ত করার এবং মনের ভেতরের কম্পালশন বা বাধ্যবাধকতাগুলো পালন করার তীব্র প্রয়োজনটাকে প্রতিহত করা প্রাথমিকভাবে উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দেবে, তবুও দীর্ঘ সময় ধরে এই কম্পালশনগুলো অনুশীলন না করলে ধীরে ধীরে তাদের অনাহূত চিন্তাগুলির চারপাশের উদ্বেগ কমতে শুরু করবে। ফলে, চিন্তাগুলো কম ঘন ঘন মাথায় আসবে (যেমন, সেগুলো কমই দেখা দেবে), এবং যখন আসবে, তখন সেগুলো আর ততটা কষ্টদায়ক মনে হবে না। এই পদ্ধতি ব্যবহার করার সময়, থেরাপিউটিক প্রতিক্রিয়া এবং নন-থেরাপিউটিক প্রতিক্রিয়া বা রিউমিনেশন (rumination)-এর মধ্যে পার্থক্যটা পরিষ্কারভাবে বোঝাটা অত্যন্ত জরুরি। থেরাপিউটিক প্রতিক্রিয়া সেই অস্বস্তিকর প্রশ্নের সরাসরি কোনো উত্তর খোঁজে না, বরং সেই অমীমাংসিত দ্বিধা বা উভয়সংকটের অনিশ্চয়তাটাকেই গ্রহণ করে নেয়।

অ্যাকসেপটেন্স অ্যান্ড কমিটমেন্ট থেরাপি (Acceptance and Commitment Therapy – ACT) ‘পিওর ও’-এর জন্য একটি থেরাপি হিসেবেও বেশ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে (Soondrum et al., 2022; Smith, Bluett, Lee, & Twohig, 2017)। ২০২৩ সালের একটি গবেষণায় তো এমনও দেখা গেছে যে, ACT বিশেষ করে অনাহূত চিন্তা সম্পর্কিত ওসিডি লক্ষণগুলি কমাতে বিশেষভাবে কার্যকর ছিল (Lee, Choi, & Lee, 2023)। বিভিন্ন প্রমাণ থেকে এটাও জানা যায় যে, মেটাকগনিটিভ থেরাপি (Metacognitive Therapy – MCT), যা ওসিডি-র আরেকটি স্বীকৃত চিকিৎসা পদ্ধতি (Exner et al., 2024; Atmaca, 2022), সেটাও ‘পিওর ও’-এর লক্ষণগুলি কার্যকরভাবে কমাতে সাহায্য করে (Andouz, Dolatshahi, Moshtagh, & Dadkhah, 2012)।

এছাড়াও, মাইন্ডফুলনেস-বেসড স্ট্রেস রিডাকশন (Mindfulness-based stress reduction – MBSR) বা মননশীলতা-ভিত্তিক মানসিক চাপ কমানোর কৌশলগুলোও এই অন্তহীন রিউমিনেশন বা একই চিন্তা বারবার করার চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে এবং অবসেসিং বা আবেশী চিন্তার এই দুষ্টচক্রটাকে ভাঙতে বেশ সহায়ক হতে পারে।

সমাজ ও সংস্কৃতিতে (In society and culture)

শুধু সাধারণ মানুষই নন, খ্যাতিমান ব্যক্তিরাও এর থেকে মুক্ত নন। ইংরেজ সাংবাদিক ব্রায়োনি গর্ডন (Bryony Gordon) এই প্রাইমারিলি অবসেশনাল ওসিডি-তে প্রচণ্ড ভুগেছিলেন। তিনি তার এই ডিসঅর্ডারের সাথে লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে ‘ম্যাড গার্ল’ (Mad Girl) নামে একটি মর্মস্পর্শী বইও লিখেছেন (Gordon, 2017)।

জনপ্রিয় গায়ক জর্জ এজরা (George Ezra), ক্রিশ্চিয়ান লি হাটসন (Christian Lee Hutson), এবং লিউক কম্বস (Luke Combs) – এরা প্রত্যেকেই প্রাইমারিলি অবসেশনাল ওসিডি-তে ভোগেন বলে জানা যায় (Savage, 2020; Dinges, 2021)। গায়ক হাটসন তো একবার বলেছিলেন যে, তিনি তার “ওসিডিমন” (OCDemon) নামের গানটি লিখেছিলেন অনেকটা থেরাপিউটিক অনুশীলন বা মানসিক আরোগ্য লাভের একটা উপায় হিসেবে (Lesuer, n.d.)।

২০১৯ সালে প্রচারিত টিভি সিরিজ ‘পিওর’ (Pure) এর প্রধান চরিত্র, ২৪ বছর বয়সী মার্নিকে প্রাইমারিলি অবসেশনাল অবসেসিভ-কমপালসিভ ডিসঅর্ডারের সাথে প্রতিনিয়ত লড়াই করতে দেখা যায় (McGurk, 2019)। বিখ্যাত পত্রিকা ‘দ্য গার্ডিয়ান’ (The Guardian) অনুসারে, যারা ‘পিওর ও’-তে আক্রান্ত, তারা সাধারণত এই শো-টির বাস্তবতার সাথে নিজেদের বেশ মেলাতে পেরেছেন এবং এর প্রশংসা করেছেন। তবে তাদের মধ্যে একটা চাপা ক্ষোভও ছিল এই ভেবে যে, মার্নির এই জটিল মানসিক অবস্থাটিকে যতটা গুরুত্বের সাথে তুলে ধরা উচিত ছিল, ততটা হয়তো করা হয়নি (Brethour, 2019)।

গ্লিন ডিলনের (Glyn Dillon) ২০১২ সালে প্রকাশিত গ্রাফিক নভেল ‘দ্য নাও অফ ব্রাউন’ (The Nao of Brown) এর প্রধান চরিত্রকেও এই প্রাইমারিলি অবসেশনাল ওসিডি-র সাথে যুদ্ধ করতে দেখা যায় (Mautner, 2012)। শিল্প-সাহিত্যেও যে এই জটিল মানসিক অবস্থার ছায়া পড়ছে, এটাই তার প্রমাণ।

তথ্যসূত্র

  • Abramowitz, J. S., & Houts, A. C. (n.d.). Concepts and Controversies in Obsessive-Compulsive Disorder. Springer Science, Business Media.
  • Akhtar, S., Wig, N. A., Verma, V. K., Pershad, D., & Verma, S. K. (1975). A phenomenological analysis of symptoms in obsessive-compulsive neurosis.
  • American Psychiatric Publishing. (2013a). Diagnostic and statistical manual of mental disorders (DSM-5) (p. 235). Arlington, Virginia: American Psychiatric Publishing. ISBN 978-0-89042-555-8.
  • American Psychiatric Publishing. (2013b). Diagnostic and statistical manual of mental disorders (DSM-5) (p. 237). Arlington, Virginia: American Psychiatric Publishing. ISBN 978-0-89042-555-8.
  • American Psychiatric Publishing. (2013c). Diagnostic and statistical manual of mental disorders (DSM-5) (pp. 235–264). Arlington, Virginia: American Psychiatric Publishing. ISBN 978-0-89042-555-8.
  • Andouz, Z., Dolatshahi, B., Moshtagh, N., & Dadkhah, A. (2012). The efficacy of metacognitive therapy on patients suffering from pure obsession. Iranian Journal of Psychiatry, 7(1), 11–21. PMC 3395965. PMID 23056112.
  • Atmaca, M. (2022). Metacognitive Therapy in Patients with ObsessiveCompulsive Disorder: A review. Alpha Psychiatry, 23(5), 212–216. doi:10.5152/alphapsychiatry.2022.22840. PMC 9623217. PMID 36426268.
  • Bhatia, M. S., & Kaur, J. (2015). Homosexual Obsessive Compulsive Disorder (HOCD): A Rare Case Report. Journal of Clinical and Diagnostic Research, 9(1), VD01–VD02. doi:10.7860/JCDR/2015/10773.5377. PMC 4347158. PMID 25738067.
  • Brethour, D. (2019, February 20). ‘Not rock-bottom distressing enough’: Pure reviewed by people with OCD. The Guardian. ISSN 0261-3077. Retrieved 2025-02-20.
  • Bruce, S. L., Ching, T. H., & Williams, M. T. (2018). Pedophilia-Themed Obsessive-Compulsive Disorder: Assessment, Differential Diagnosis, and Treatment with Exposure and Response Prevention. Archives of Sexual Behavior, 47(2), 389–402. doi:10.1007/s10508-017-1031-4. PMID 28822003. S2CID 207092958.
  • Clark, D. A., & Guyitt, B. D. (2008). Pure Obsessions: Conceptual Misnomer or Clinical Anomaly?. In Obsessive-Compulsive Disorder: Subtypes and Spectrum Conditions (pp. 53–75). Elsevier. ISBN 9780080447018.
  • Denys, D., de Geus, F., van Megen, H., & Westenberg, H. (n.d.). Use of factor analysis to detect potential phenotypes in obsessive-compulsive disorder. Psychiatry Research, 128(3), 273-280.
  • Dinges, G. (2021, January 13). ‘I still have my moments’: Luke Combs opens up about anxiety struggles in Dan Rather special. USA TODAY. Retrieved 2025-02-20.
  • Doron, G., Derby, D., Szepsenwol, O., & Talmor, D. (2012a). Flaws and All: Exploring Partner-Focused Obsessive-Compulsive Symptoms. Journal of Obsessive-Compulsive and Related Disorders, 1(4), 234–243. doi:10.1016/j.jocrd.2012.05.004.
  • Doron, G., Derby, D., Szepsenwol, O., & Talmor, D. (2012b). Tainted Love: exploring relationship-centered obsessive compulsive symptoms in two non-clinical cohorts. Journal of Obsessive-Compulsive and Related Disorders, 1(1), 16–24. doi:10.1016/j.jocrd.2011.11.002.
  • Exner, C., Kleiman, A., Haberkamp, A., Hansmeier, J., Milde, C., & Glombiewski, J. A. (2024). Metacognitive therapy versus exposure and response prevention for obsessive-compulsive disorder – A non-inferiority randomized controlled trial. Journal of Anxiety Disorders, 104, 102873. doi:10.1016/j.janxdis.2024.102873.
  • Gordon, B. (2017, January 16). Bryony Gordon: How I walked my way back to sanity. Irish Independent. Retrieved 2025-02-20.
  • Hales, R. E., Yudofsky, S. C., & Gabbard, G. O. (n.d.). The American Psychiatric Publishing textbook of psychiatry. American Psychiatric Publishing. (Includes Purely Obsessional OCD in its definition of O.C.D.)
  • Hollander, E. (n.d.). Obsessive-compulsive related disorders (pp. 140-146).
  • Homosexuality Anxiety: A Misunderstood Form of OCD. (2008). Retrieved from http://www.brainphysics.com/research/HOCD_Williams2008.pdf (Archived 2015-09-23).
  • Hyman, B., & DeFrene, T. (2008). Coping with OCD (p. 58, 64). Oakland, California: New Harbinger Publications. ISBN 978-1572244689.
  • Hyman, B. M., & Pedrick, C. (2010). The OCD Workbook: Your Guide to Breaking Free from Obsessive-Compulsive Disorder (pp. 16–23). Oakland, California: New Harbinger Publications. ISBN 978-1572249219.
  • Intrusive Thoughts. (2019, March 4). Existential OCD. Retrieved from https://www.intrusivethoughts.org/ocd-symptoms/existential-ocd/
  • Julien, D., O’Connor, K. P., & Aardema, F. (2009). Intrusions related to obsessive-compulsive disorder: a question of content or context?. Journal of Clinical Psychology, 65(7), 709–722. doi:10.1002/jclp.20578. PMID 19388059.
  • Lee, S. W., Choi, M., & Lee, S. J. (2023). Is Acceptance and Commitment Therapy Effective for Any Obsessive-Compulsive Symptom Dimensions?. Psychiatry Investigation, 20(10), 991–996. doi:10.30773/pi.2023.0109. PMC 10620332. PMID 37899223.
  • Lesuer, M. (n.d.). Christian Lee Hutson Walks Us Through His Reflective New LP “Quitters” Track by Track. FLOOD. Retrieved 2025-02-20.
  • Lewis, A. (1966). Obessional Disorder. In R. B. Scott (Ed.), Price’s Textbook of the Practice of Medicine. Oxford University Press. doi:10.1111/j.1742-1241.1966.tb07092.x.
  • Ling, B. E. (2005). Obsessive Compulsive Disorder Research (p. 128). Nova Science Pub Inc.
  • Mautner, C. (2012, October 24). The Now of Glyn: An Interview with Glyn Dillon. The Comics Journal. Retrieved 2025-04-21.
  • McGurk, S. (2019, January 29). Channel 4’s OCD sex terror Pure is too pure for its own good. British GQ.
  • NeuroticPlanet. (2011, November 11). OCD and Homosexuality Obsessions (HOCD). Archived from the original on 2016-01-31. Retrieved from http://www.neuroticplanet.com/hocd.php.
  • New England OCD Institute. (n.d.). Racism and Racist Themed OCD. Retrieved 2023-09-24, from https://www.ocdtypes.com/racist-ocd.php
  • NOCD. (2021, May 15). What Is Race OCD? Overview, Symptoms and Treatment Options. Retrieved 2023-09-24, from https://www.treatmyocd.com/blog/what-is-race-ocd-overview-symptoms-treatment-options
  • OCD ONLINE. (2005a, March 22). What is Cognitive-Behavioral Therapy for O.C.D.?. Archived from the original on 2005-03-22. Retrieved from http://www.ocdonline.com/definecbt.php.
  • OCD ONLINE. (2005b, March 22). Guilt Beyond a Reasonable Doubt. Archived from the original on 2005-03-22. Retrieved from http://www.ocdonline.com/articlephillipson2.php.
  • Purdon, C. A., & Clark, D. A. (2005). Overcoming Obsessive Thoughts: How to gain control of your OCD. Oakland, CA: New Harbinger.
  • Rachman, S. (1971). Obsessional ruminations. Behaviour Research and Therapy, 9(3), 229–235. doi:10.1016/0005-7967(71)90008-8. PMID 5095078.
  • Rachman, S. (2003). The Treatment of Obsessions. Oxford University Press. Reviewed by Dean McKay, Ph.D., A.B.P.P. Fordham University, Bronx, New York. (https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC2292450/)
  • Salkovskis, P. M., & Westbrook, D. (1989). Behaviour therapy and obsessional ruminations: Can failure be turned into success?. Behaviour Research and Therapy, 27(2), 149–160. doi:10.1016/0005-7967(89)90073-9. PMID 2930440.
  • Savage, M. (2020, August 31). George Ezra opens up about OCD struggle. BBC. Retrieved 2025-02-20.
  • Sebeki, L. V. (2008). Leading-Edge Health Education Issues. Nova Publishers. ISBN 978-1-60021-874-3.
  • Shah, Y. (2025, January 31). ‘Pure O’ OCD: Signs, symptoms and treatment. NOCD. Retrieved 2025-03-06.
  • Smith, B. M., Bluett, E. J., Lee, E. B., & Twohig, M. P. (2017). Acceptance and Commitment Therapy for OCD. In The Wiley Handbook of Obsessive Compulsive Disorders (pp. 596–613). John Wiley & Sons, Ltd. doi:10.1002/9781118890233.ch33. ISBN 978-1-118-89023-3.
  • Soondrum, T., Wang, X., Gao, F., Liu, Q., Fan, J., & Zhu, X. (2022). The Applicability of Acceptance and Commitment Therapy for Obsessive-Compulsive Disorder: A Systematic Review and Meta-Analysis. Brain Sciences, 12(5), 656. doi:10.3390/brainsci12050656. PMC 9139700. PMID 35625042.
  • Steketee, G. S., Frost, R. O., Rhéaume, J., & Wilhelm, S. (n.d.). Cognitive theory and treatment of obsessive-compulsive disorder. In M. A. Jenike, L. Baer & W. E. Minichiello (Eds.), Obsessive-Compulsive Disorder: Theory and Management (3rd ed., pp. 368-399). Chicago: Mosby.
  • Stern, R. S., Lipsedge, M. S., & Marks, I. M. (1973). Obsessive ruminations : a controlled trial of thought-stopping technique. Behaviour Research and Therapy, 11(4), 659–662. doi:10.1016/0005-7967(73)90126-5. PMID 4777659.
  • The Gateway Institute. (2025, March 6). What to Know: Pure Obsessional OCD Symptoms & Care. Retrieved from https://www.gatewayocd.com/pure-obsessional-ocd-symptoms-and-treatment/
  • Toates, F. M., & Coschug-Toates, O. (2000). Obsessive-compulsive disorder (2nd ed., pp. 94-96).
  • Toates, F. M., & Coschug-Toates, O. (2002). Obsessive Compulsive Disorder: Practical, Tried-and-tested Strategies to Overcome OCD. Bridgwater, Somerset, England: Class Publishing Ltd. ISBN 978-1-85959-069-0.
  • Understanding and Treating Obsessive-Compulsive Disorder: A Cognitive-Behavioral Approach. (2005). Lawrence Erlbaum Associates, Inc. (1st ed.).
  • Williams, M. T., & Farris, S. G. (2011). Sexual orientation obsessions in obsessive-compulsive disorder: Prevalence and correlates. Psychiatry Research, 187(1), 156–159. doi:10.1016/j.psychres.2010.10.019. PMC 3070770. PMID 21094531.
  • Williams, M. T., Crozier, M., & Powers, M. (2011). Treatment of Sexual-Orientation Obsessions in Obsessive-Compulsive Disorder Using Exposure and Ritual Prevention. Clinical Case Studies, 10(1), 53–66. doi:10.1177/1534650110393732. PMC 3230880. PMID 22162667.
  • Winston, S. M., & Seif, M. N. (2017). Overcoming Unwanted Intrusive Thoughts: A CBT-Based Guide to Getting Over Frightening, Obsessive, or Disturbing Thoughts. New Harbinger Publications. ISBN 978-1-62625-436-7.
  • Wolpe, J. (1958). Psychotherapy by Reciprocal Inhibition (Orig. ed. 1958, [Reprinted] ed.). Stanford, California: Stanford University Press. ISBN 9780804705097.
  • Wolpe, J. (1988). Life Without Fear: Anxiety and Its Cure. Oakland, California: New Harbinger Publications. ISBN 9780934986496.

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.