ওমনিপোটেন্স প্যারাডক্স বা সর্বশিক্তিমত্তা প্যারাডক্স

“ঈশ্বর কি এত ভারী পাথর তৈরি করতে পারেন যে তিনি এটি উত্তোলন করতে পারবেন না?” – এটি একটি ক্লাসিক দার্শনিক প্যারাডক্স। এটার অনেক ভার্সন আছে, যেমন “ঈশ্বর কি এমন একটি পাথর তৈরি করতে পারেন যা তিনি নিজেই ভাঙতে পারেন?”, “যদি ইউক্লিডীয় জ্যামিতির স্বতঃসিদ্ধতা দেওয়া হয়, তবে একজন সর্বশক্তিমান সত্তা কি এমন একটি ত্রিভুজ তৈরি করতে পারে যার কোণগুলি যোগ করলে ১৮০ ডিগ্রি হয়না?” এবং “ঈশ্বর কি এমন একটি কারাগার তৈরি করতে পারেন যা থেকে তিনি পালাতে পারবেন না?”। এখানে কেবল ক্লাসিকাল ভার্সনটি নিয়েই লেখা হবে…

এই প্রশ্নটি ঈশ্বরের সর্বশক্তিমত্তা (omnipotence) বিরুদ্ধে একটি যুক্তি হিসাবে ব্যবহৃত হয়, যেখানে “সর্বশক্তিমত্তা” এর ধারণাটি দ্বারা নির্দেশ করা হয়, ঈশ্বর সর্বশক্তিমান এবং যে কোনও কিছু করতে সক্ষম।

প্যারাডক্সের যুক্তিটি এরকম:

১. ঈশ্বর সর্বশক্তিমান হলে তিনি সবকিছু করতে পারেন।
২. উত্তোলন অসম্ভব এমন একটি ভারী পাথর তৈরি করা হচ্ছে সর্বশক্তিমত্তার একটি উদাহরণ।
৩. যদি ঈশ্বর এমন একটি পাথর তৈরি করতে পারেন যা ভাঙ্গা সম্ভব নয়, তবে এমন একটি কাজ থেকে যায় যা তিনি করতে পারেন না (পাথর উত্তোলন), যা সর্বশক্তিমত্তার দাবির সাথে সাংঘর্ষিক।
৪. যদি ঈশ্বর এমন পাথর তৈরি করতে না পারেন যা তিনি নিজে ভাঙতে পারবেন না, তবেও এমন একটি কাজ থেকে যায় যা তিনি করতে পারেন না (পাথর তৈরি করা), যেটাও সর্বশক্তিমত্তার দাবির সাথে সাংঘর্ষিক।

এই যুক্তিটি একটি প্যারাডক্স হিসাবে পরিচিত এবং এটি সর্বশক্তিমত্তার (omnipotence) ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করতে চায়। এটি পরামর্শ দেয় যে সর্বশক্তিমান সত্তার ধারণার মধ্যে একটি যৌক্তিক দ্বন্দ্ব রয়েছে কারণ সর্বদা এমন একটি কাজ থাকবে যা এই একজন সর্বশক্তিমান সত্তা সম্পাদন করতে পারে না। এটি ঈশ্বরের সর্বশক্তিমত্তার ধারণাটিকে চ্যালেঞ্জ করে এবং বলে সর্বশক্তিমত্তা বলতে কিছু থাকতে পারে না, ঈশ্বরের অস্তিত্ব থাকলেও তিনি সর্বশক্তিমান নন।

অনেকের মতে, এই প্যারাডক্সটি আসলেই সর্বশক্তিমত্তার ধারণার একটি প্রকৃত সীমাবদ্ধতা উন্মোচন করে এবং তাই ঈশ্বর সম্পর্কটি মানুষের ঐতিহ্যগত উপলব্ধিগুলিকে চ্যালেঞ্জ করে। কতিপয় দার্শনিকের মতে, এই প্যারাডক্সটি ও সেই সাথে আরও কিছু প্যারাডক্স দেখায় যে, সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ এবং সর্ব-মঙ্গলময় ঈশ্বরের ধারণাটি সহজাতভাবে পরস্পরবিরোধী এবং তাই সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ এবং সর্ব-মঙ্গলময় ঈশ্বরের এই ঐতিহ্যগত ধারণাটিকে পুনরায় পরীক্ষা করা দরকার।

এই প্যারাডক্সের দু’ রকম বিরোধিতা আছে, আবার বিরোধিতারও বিরোধিতা আছে, একে একে আলোচনা করা যাক…

১. এই যুক্তিটির একটি প্রতিক্রিয়া হ’ল এই প্যারাডক্সটি সর্বশক্তিমত্তা সম্পর্কে ভুল ধারণা রাখার ফল, মানে “সর্বশক্তিমত্তা” বা ওমনিপোটেন্সকে এখানে যেভাবে ধারণা করা হয়েছে, এটা আসলে সেরকম কিছু না। কতিপয় ধর্মতত্ত্ববিদ যুক্তি দেন যে সর্বশক্তিমত্তা বলতে বোঝা উচিৎ যৌক্তিকভাবে সম্ভব, এমন কাজ করার ক্ষমতাকে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে “ঈশ্বর এটি উত্তোলন করতে পারবেন না এমন একটি ভারী পাথর তৈরি করা” একটি যৌক্তিকভাবে পরস্পরবিরোধী কাজ, ঠিক যেমন “একটি বর্গাকার বৃত্ত তৈরি করা”, আর তাই এই যৌক্তিকভাবে অসম্ভব কাজটি সর্বশক্তিমত্তার কাজের আয়ত্তের বাইরে পড়ে।

এই মত অনুসারে, এই যুক্তিটি “শ্রেণীগত ভুল” বা “শ্রেণীগত ত্রুটি” (“category mistake” বা “category error”) নামে একটি যৌক্তিক হেত্বাভাস বা লজিকাল ফ্যালাসির উদাহরণ হিসাবে দেখা যেতে পারে। এটি ঘটে যখন কেউ কোনোকিছুকে ভুলভাবে কোনও নির্দিষ্ট বিভাগ বা ক্যাটাগরিতে ফেলে বা বরাদ্দ করে, যার ফলে ধারণাগুলিতে বিভ্রান্তি দেখা দেয়। এই যুক্তির ক্ষেত্রে, এখানে ক্যাটাগরি মিস্টেক হয়েছে, কারণ এখানে সর্বশক্তিমান ধারণাটির মধ্যে যৌক্তিকভাবে অসম্ভব কাজগুলি সম্পাদন করার ক্ষমতাকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অনেক ধর্মতত্ত্ববিদ এবং দার্শনিক মনে করেন যে, সর্বশক্তিমত্তার ধারণায় কেবল যৌক্তিকভাবে সম্ভাব্য কাজ সম্পাদন করার ক্ষমতাকেই রাখা উচিৎ, স্ব-বিরোধী বা যৌক্তিকভাবে অসঙ্গত কাজগুলিকে সর্বশক্তিমত্তার ধারণাগুলোর মধ্যে ফেলা উচিৎ নয়। সর্বশক্তিমত্তার (omnipotence) ধারণার মধ্যে যৌক্তিকভাবে অসম্ভব কাজগুলি অন্তর্ভুক্ত করা হলেই এই আর্গুমেন্টটি প্যারাডক্স হয়, কিন্তু যদি কেউ স্বীকার করে যে সর্বশক্তিমত্তার মধ্যে কেবল যৌক্তিকভাবে সম্ভাব্য কাজগুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, তবে যুক্তিটি তার শক্তি হারায়। এই দৃষ্টিভঙ্গিতে, সর্বশক্তিমত্তার ধারণার মধ্যে কোনও যৌক্তিক দ্বন্দ্ব বা ভ্রান্তি নেই, বরং এই আর্গুমেন্টটিতেই সর্বশক্তিমত্তার ধারণাটিকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

কিন্তু যৌক্তিকভাবে অসম্ভব এমন ধারণাকে যদি সর্বশক্তিমত্তার ধারণা থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়, তাহলেও একটা মজার ব্যাপার ঘটে। সেটার ব্যাখ্যায় যাবার আগে, আরেকটি ক্লাসিকাল প্যারাডক্স নিয়ে আলোচনা করতে হবে। সেটা হচ্ছে, ইরেজিস্টেবল ফোর্স প্যারাডক্স বা অপ্রতিরোধ্য বল প্যারাডক্স। এটি হচ্ছে, “যদি একটি অপ্রতিরোধ্য শক্তি একটি সরানো অসম্ভব বা ইমমুভেবল বস্তুর সাথে সংঘর্ষ করে তবে কী হবে?” এই প্যারাডক্সের একটি প্রতিক্রিয়া হ’ল এর এই যুক্তির গঠনকে অস্বীকার করা। এই অস্বীকারটি এমন যে, যদি কোনও বল অপ্রতিরোধ্য হয় তবে সংজ্ঞা অনুসারে কোনও ইমমুভেবল বস্তুর অস্তিত্ব নেই; অথবা বিপরীতভাবে, যদি কোনও ইমমুভেবল বস্তু বিদ্যমান থাকে তবে সংজ্ঞা অনুসারে কোনও শক্তি অপ্রতিরোধ্য বা ইরেজিস্টেবল হতে পারে না। মানে যদি ইরেজিস্টেবল ফোর্স এর অস্তিত্ব থাকে যা যেকোন অবজেক্টকে সরিয়ে দিতে পারে, তাহলে তো ইমমুভেবল অবজেক্ট বা সরানো সম্ভব নয়, এমন কোন অবজেক্ট এর অস্তিত্বই সম্ভব নয়। আবার যদি ইমমুভেবল অবজেক্ট এর অস্তিত্ব থাকে, যাকে সরানো কখনোই সম্ভব নয়, তাহলে তো ইরেজিস্টেবল ফোর্স বলে কোন কিছুর অস্তিত্বও সম্ভব নয়, কেননা সেই ইমমুভেবল অবজেক্টের অস্তিত্ব আছে, যাকে কোন ফোর্সই সরাতে পারবে না, মানে ইরেজিস্টেবল ফোর্স মানে সব কিছুকে সরাতে পারে, এমন কোন বলেরই অস্তিত্ব নেই। অনেকে এরকম বলে যে, এই দুটোর অস্তিত্ব একসাথে থাকতে পারে, যদি দুটোর মধ্যে সংঘর্ষ না ঘটে। কিন্তু এই প্রতিক্রিয়াটি সমালোচিত কারণ, দুটোর সংঘর্ষ হোক বা না হোক, নীতিগতভাবে একটির অস্তিত্ব আছে মানে আরেকটির অস্তিত্ব নেই।

যাই হোক, এই রেস্পনসটি সলিড, কিন্তু মজা হয়, যখন এখানে ঈশ্বরকে ঢোকানো হয়। এই রেসপন্স অনুসারে, ঈশ্বরকে এই দুটি ক্ষমতার যেকোন একটি গ্রহণ করতে হবে কেননা উত্তোলন অযোগ্য বা অসীম ভরবিশিষ্ট বা ইমমুভেবল পাথর (যা ঈশ্বর নিজে তৈরি করছেন), এবং সব কিছু তুলতে পারার ইরেজিষ্টেবল ফোর্স (যা ঈশ্বরের রয়েছে) – একই সাথে অস্তিত্বশীল হতে পারেনা। অর্থাৎ যদি ইমমুভেবল অবজেক্ট এর অস্তিত্ব সত্য হয়, তাহলে একজন সর্বশক্তিমান ঈশ্বর তা তৈরী করতেই পারেন, কিন্তু সেক্ষেত্রে ইরেজিস্টেবল ফোর্স এর কনসেপ্টটি মিথ্যা, অর্থাৎ এমন কোন শক্তিই থাকতে পারেনা যা সেই ইমমুভেবল অবজেক্টকে সরিয়ে ফেলতে পারে, অর্থাৎ ঈশ্বরেরও ইরেজিস্টেবল ফোর্স থাকা সম্ভব নয়। আবার যদি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ইরেজিস্টেবল ফোর্স আছে এমন চিন্তা করি, অর্থাৎ ইরেজিস্টেবল ফোর্স এর অস্তিত্ব সত্য ভাবি, তবে অবশ্যই ইমমুভেবল অবজেক্ট এর অস্তিত্ব মিথ্যা হবে, অর্থাৎ এমন কোন কিছুর অস্তিত্বই কল্পনা করা যাবে না যা ইমমুভেবল, আর তাই ঈশ্বরেরও ইমমুভেবল অবজেক্ট তৈরি করার ক্ষমতা নেই – এমনটা ধরে নিতে হবে।

এখানেই একটি মজার ব্যাপার আসছে বিবৃতি থেকে। “সর্বশক্তিমত্তার ধারণায় হয় ইরেজিস্টেবল ফোর্স এর অধিকারিত্ব থাকবে, নয় ইমমুভেবল অবজেক্ট সৃষ্টির ক্ষমতা থাকবে”। আর এই বিবৃতিকে একটু অন্যভাবে বলা যাক – “সর্বশক্তিমত্তা বিশিষ্ট ঈশ্বরের হয় ইরেজিস্টেবল ফোর্স নেই, না হয় তার ইমমুভেবল অবজেক্ট তৈরির ক্ষমতা নেই।” (দুটোর একটিও নেই এটা বাদ দিলাম, যেহেতু তাকে সর্বশক্তিমান ধরা হয়েছে।)” যদি তাই হয় তাহলে এই দুটো যুক্তিও সত্য হয় – (১) “সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ইরেজিস্টিবলে ফোর্স নাও থাকতে পারে বা না থাকা সম্ভব”, এবং (২) “সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ইমমুভেবল অবজেক্ট তৈরি করার ক্ষমতা নাও থাকতে পারে বা না থাকা সম্ভব”। আর এই দুই বিবৃতি আলাদা আলাদাভাবে ঈশ্বরের অক্ষমতাকে নির্দেশ করে, অন্ততপক্ষে ঐতিহ্যগতভাবে ও ধর্মীয়ভাবে। যৌক্তিকভাবে অসম্ভাব্যতাকে সর্বশক্তিমত্তার ধারণা থেকে বাদ দিলে ঈশ্বরের এই অক্ষমতাকে মেনে নিতে হবে।

২. প্রথম প্রতিক্রিয়ার ফলস্বরূপ ঈশ্বরের কিছু অক্ষমতা সামনে আসে, যা অনেকে মানতে চাননা। এরা থিওলজিস্ট ঘরানার লোক, আর তারা বলেন, ঈশ্বরের পক্ষে যৌক্তিকভাবে অসম্ভব কাজগুলো করা সম্ভব নয় – এই দাবিটা ভুল, কারণ এগুলোও ঈশ্বরের অক্ষমতাকেই নির্দেশ করে। তাদের মতে, সর্বশক্তিমত্তাকে যৌক্তিকভাবে সম্ভাব্য কাজগুলিতে সীমাবদ্ধ করা একটি সর্বশক্তিমান সত্তার ধারণাকে দুর্বল করে দেয়। যদি ঈশ্বরের শক্তি যুক্তি দ্বারা সীমাবদ্ধ হয়, তবে এটি ঐশ্বরিক শক্তির উপর সীমাবদ্ধতা হিসাবে দেখা যেতে পারে এবং ঈশ্বর প্রকৃতপক্ষে সর্বশক্তিমান নাও হতে পারেন। সর্বশক্তিমত্তার ধারণাটি ঐতিহ্যগতভাবে সীমাহীন শক্তিকে নির্দেশ করে, যেখানে ঈশ্বর কোন ব্যতিক্রম ছাড়াই যে কোনও কিছু করতে সক্ষম। কিন্তু এই যৌক্তিকভাবে সম্ভাব্যতার ধারণাটি ব্যক্তিক্রম আরোপ করে ও ঈশ্বরের সর্বশক্তিমত্তার ধারণাটিতে সীমাবদ্ধতা আরোপ করে তাকে সীমিত করে।

তো? সর্বশক্তিমত্তার ধারণাকে যৌক্তিকভাবে সম্ভাব্যতায় সীমিত না করলে সর্বশক্তিমত্তার ধারণা ভুল হয়, ঈশ্বর সর্বশক্তিমান হতে পারেননা, আবার যদি সর্বশক্তিমত্তার ধারণাকে যৌক্তিক সম্ভাব্যতায় সীমিত করা হয়, তবে ঈশ্বরের কিছু অক্ষমতা স্বীকার করতে হয় যা ঈশ্বরকে সীমিত করে। তাহলে এই ঘরানার থিওলজিস্টরা কোন দিকে যাচ্ছেন? তারা বলছেন, উত্তরটা হল “আমরা এটা জানতে বা বুঝতে সক্ষম নই”, বা “বা মানুষের পক্ষে বা সৃষ্টির কোন জীবের পক্ষে তাদের বুদ্ধি বা ভাষার সীমাবদ্ধতার জন্যই এটা জানা সম্ভব নয়”।

এই প্রতিক্রিয়াটি অনুসারে, এই প্যারাডক্সটি কেবলই আমাদের মানুষের বোঝার এবং ভাষার সীমাবদ্ধতাকে নির্দেশ করছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে, প্যারাডক্সটি আসলে ঈশ্বরের সর্বশক্তিমত্তা সম্পর্কে কোন সত্যিকারের সীমাবদ্ধতাকে তুলে ধরার বদলে, সেই শক্তিমত্তা সম্পর্কে আমাদের বোঝার ও আমাদের ভাষার সীমাবদ্ধতা বা অক্ষমতাকে নির্দেশ করছে। মানে, আমাদের যে ঈশ্বরের শক্তিমত্তাকে সীমাবদ্ধ বলে মনে হচ্ছে, এটা আসলে তার সর্বশক্তিমত্তার সীমাবদ্ধতা নয়, বরং সমস্যাটা আমাদের বোঝাতেই, যে কারণে একে আমাদের সীমাবদ্ধ বা কন্ট্রাডিক্টরি বা দ্বন্দ্বপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

যুক্তিবিদ্যাগতভাবে এই রেসপন্স বেশ সমালোচিত, কারণ –

ক. অপর্যাপ্ত ব্যাখ্যা (Insufficient explanation): প্যারাডক্সটি মানুষের সীমাবদ্ধতার ফলস্বরূপ বলে দাবি করা একটি সন্তোষজনক সমাধান প্রদানের পরিবর্তে সমস্যাটি এড়িয়ে যায়। এই যুক্তিটি সর্বশক্তিমত্তার ধারণায় উপস্থিত অন্তর্নিহিত যৌক্তিক দ্বন্দ্বগুলির সাথে জড়িত নয়। এর সমালোচকরা যুক্তি দেখান যে, মানুষ সর্বশক্তিমান সত্তার প্রকৃতি পুরোপুরি বুঝুক বা না বুঝুক সমস্যাটি সমাধান করতে হবে, আর সেটার আগে পর্যন্ত এসব কথা সমস্যাটিকে এড়িয়ে যাবার অজুহাত মাত্র।

খ. যৌক্তিক ধারাবাহিকতার গুরুত্ব (Importance of logical consistency): এমনকি যদি মানুষ সর্বশক্তিমান সত্তার প্রকৃতি পুরোপুরি বুঝতে অক্ষম হয়, তবুও সেই সত্তা সম্পর্কে আমাদের বোঝার জন্য যৌক্তিকভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। যদি সর্বশক্তিমান সত্তার ধারণা প্যারাডক্সের দিকে পরিচালিত করে, তবে সেই সত্তার প্রতি একটি সুসঙ্গত এবং যুক্তিসঙ্গত বিশ্বাস বজায় রাখা কঠিন হয়ে যায়। সমালোচকরা যুক্তি দেখান যে, যে কোনও ধারণা, এমনকি ঐশ্বরিক ধারণাগুলিও যৌক্তিক ধারাবাহিকতার মানদণ্ডে রাখা উচিত এবং আমরা কেবল মানবিক সীমাবদ্ধতার ফলস্বরূপ দ্বন্দ্বগুলি প্রত্যাখ্যান করতে পারি না।

গ. রহস্যের উপর নির্ভরতা (Reliance on mystery): এরকম যুক্তি ঐশ্বরিক রহস্যের ধারণার উপর নির্ভরশীল। সমালোচকরা যুক্তি দেখান, যৌক্তিক দ্বন্দ্বের মুখে রহস্যের প্রতি আবেদন করা বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে অসন্তোষজনক হয় বা এমনকি বুদ্ধিবৃত্তিক আলস্য নির্দেশ করে। সেই সাথে তারা বলেন, কোন জিনিসের উত্তর নেই – তার জন্য মানুষের বোঝার সীমাবদ্ধতাকে দায়ী করার চেয়ে যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা খোঁজা এবং প্যারাডক্স দ্বারা উত্থাপিত যৌক্তিক বিষয়গুলির সাথে জড়িত হওয়া ভাল।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.