আফ্রিকার ভূ-প্রকৃতি, জলবায়ু, প্রাকৃতিক সম্পদ এবং ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব

আফ্রিকা পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাদেশ। শুধু বিশালত্বে নয়, প্রাচীনত্ব, ধর্ম, ভৌগোলিক অবস্থান, প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদের সমৃদ্ধির কারণে এ মহাদেশ ভূরাজনৈতিকভাবে দিন দিন গুরুত্ব পাচ্ছে। আফ্রিকানদের নিজেদের অনৈক্যের সুযোগে বৃহৎশক্তিবর্গ বেশির ভাগ আফ্রিকান রাষ্ট্রে আধিপত্য বিস্তার ১৯শ শতকের শেষ দিকে শুরু হয় যা পরবর্তীকালে আরো প্রসার লাভ করে। সমস্যা জর্জরিত হলেও এ মহাদেশ ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বের কারণে বৃহৎশক্তিগুলোর প্রতিযোগিতার লক্ষ্যবস্তু।

আয়তন ও অবস্থান

আফ্রিকা মহাদেশের মোট আয়তন আশেপাশের সংলগ্ন কিছু দ্বীপসহ ৩০, ২২১,৫৩২ বর্গ কিলোমিটার (১১.৬৬৮,৫৯৯ বর্গমাইল)। যা পুরো বিশ্বের ভূমির ২০.৪% প্রায়। আফ্রিকায় ৫৪টি পূর্ণ স্বীকৃতিপ্রাপ্ত স্বাধীন রাষ্ট্র, ২টি স্বাধীনতা ঘোষিত রাষ্ট্র রয়েছে। যেগুলো সীমিত স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বা অস্বীকৃত। আয়তনে সবচেয়ে বড় রাষ্ট্র আলজেরিয়া, যার আয়তন প্রায় ২,৩৮১,৭৪০ বর্গ কিলোমিটার। আয়তনে আফ্রিকার সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্র সিসিলজ (৪৫৫ বর্গ কি. মি.)। আফ্রিকা দৈর্ঘ্যে উত্তর থেকে দক্ষিণে ৮ হাজার কিলোমিটার (৫ হাজার মাইল) এবং প্রস্থে পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রায় ৭,৪০০ কিলোমিটার (৪,৬০০ মাইল)। আফ্রিকার উপকূলের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৬ হাজার কিলোমিটার বা ১৬,১০০ মাইল। সবচেয়ে উত্তরের দেশ তিউনিশিয়া আর দক্ষিণে দক্ষিণ আফ্রিকা। একমাত্র আফ্রিকা মহাদেশের উত্তর ও দক্ষিণ ভাগ দিয়ে কর্কটক্রান্তি এবং মকরক্রান্তি উভয় রেখা অতিক্রম করেছে। আবার বিষুবরেখা আফ্রিকাকে দুই ভাগে ভাগ করে স্ট্যানলি ও লিভিংস্টোন দিয়ে অতিক্রম করেছে। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ অঞ্চল বিষুবরেখার উত্তরে এবং এক-তৃতীয়াংশ দক্ষিণে অবস্থিত। আফ্রিকা মহাদেশ ৩৭.২১ উত্তর অক্ষরেখা থেকে প্রায় ৩৫° দক্ষিণ অক্ষরেখা এবং ১৭ (প্রায়) পশ্চিম দ্রাঘিমা রেখা থেকে ৫১ (প্রায়) পূর্ব দ্রাঘিমারেখা পর্যন্ত বিস্তৃত। আফ্রিকা এশিয়া মহাদেশেড়র পশ্চিমে অবস্থিত। আফ্রিকার উত্তরে ভূমধ্যসাগর অবস্থিত যা আফ্রিকাকে ইউরোপ থেকে পৃথক করেছে। আবার আফ্রিকাকে এশিয়া হতে বিচ্ছিন্ন করেছে সুয়েজখাল যা মিশরে অবস্থিত। আফ্রিকার পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর এবং পূর্বে ভারত মহাসাগর অবস্থিত। দক্ষিণে আটলান্টিক ও ভারত মহাসাগর অবস্থিত। আফ্রিকার উল্লেখযোগ্য দ্বীপ রাষ্ট্র মাদাগাস্কার। এছাড়া আরও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ৫টি দ্বীপ রাষ্ট্র আছে, যেমন- কেপ ভার্দে, কমোরোস, মরিশাস এবং সিসিলজ, সাওটোম ও প্রিন্সিপে।

আফ্রিকা নামের উৎপত্তি

‘আফ্রিকা’ (Africa) শব্দটির উৎপত্তি নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে। গ্রিক ঐতিহাসিক লিও আফ্রিকানস (Leo Africans) এর মতে, আফ্রিকা শব্দটি গ্রিক শব্দ ‘aphrike’ থেকে এসেছে যার অর্থ ‘ঠাণ্ডাবিহীন’। গ্রিক ভাষায় ‘phrike’ অর্থ ঠাণ্ডা এবং এর পূর্বে উপসর্গ ‘a’ বসে এর উক্ত অর্থ দাঁড়ায়। গ্রিক শব্দ ‘aphrike’ দ্বারা নির্দেশ করা হয় ‘a land free of cold and horrors’. আরেকটি মত অনুসারে আফ্রিকা শব্দটি এসেছে ল্যাটিন aprica থেকে, যার অর্থ sunny বা সূর্যালোকিত। আবার কারো কারো মতে, উত্তর আফ্রিকায় বসবাসকারী বার্বার উপজাতিভুক্ত একটি গোত্রের নাম আফ্রি (Afri) থেকে আফ্রিকা নামের উৎপত্তি। তার সাথে রোমান অনুসর্গ ‘ca’ যোগ হয়, যার অর্থ ‘দেশ’। অর্থাৎ আফ্রিদের দেশকে বলা হয় আফ্রিকা।

আফ্রিকার দেশসমূহ

আফ্রিকা মহাদেশে বর্তমানে ৫৪টি স্বাধীন রাষ্ট্র রয়েছে (১৯৬৭ সালের মধ্যে ৩৭টি স্বাধীন হয়)। জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিষয়ক দলিলে আফ্রিকা মহাদেশের দেশগুলোকে ৬টি অঞ্চলে বিভক্ত করেছে।

  • ১. উত্তর আফ্রিকা : লিবিয়া, তিউনিশিয়া, আলজেরিয়া, সুদান, মরক্কো, মৌরিতানিয়া নিয়ে উত্তর আফ্রিকা গঠিত।
  • ২. উত্তর-পূর্ব আফ্রিকা : মিশর, ইথিওপিয়া, ইরিত্রিয়া, জিবুতি, সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান নিয়ে উত্তর-পূর্ব আফ্রিকা গঠিত।
  • ৩. পূর্ব আফ্রিকা : উগান্ডা, তাঞ্জানিয়া, রুয়ান্ডা, বুরুন্ডি নিয়ে পূর্ব আফ্রিকা গঠিত।
  • ৪. পশ্চিম আফ্রিকা : সেনেগাল, গাম্বিয়া, সিয়েরালিয়ন, সাওটোমো ও প্রিন্সিপে, নাইজেরিয়া, গিনি, গিনি বিসাউ, ঘানা, আইভরিকোস্ট, নাইজেরিয়া, মালি, নাইজার, বেনিন, বারকিনা ফাসো, কেপ ভার্দ, কোট ডি ভয়ার নিয়ে পশ্চিম আফ্রিকা গঠিত।
  • ৫. নিরক্ষীয় আফ্রিকা : চাদ, ক্যামেরুন, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, গ্যাবন, রিপাবলিক অব কঙ্গো, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব দি কঙ্গো, নিরক্ষীয় গিনি নিয়ে নিরক্ষীয় আফ্রিকা গঠিত।
  • ৬. দক্ষিণাঞ্চলীয় আফ্রিকা : অ্যাঙ্গোলা, জাম্বিয়া, মালাউই, মোজাম্বিক, বতসোয়ানা, দক্ষিণ আফ্রিকা, লেসোথো, সোয়াজিল্যান্ড, মাদাগাস্কার, কমোরোস, জিম্বাবুয়ে, নামিবিয়া, মরিশাস, সিসিলিজ নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলীয় আফ্রিকা গঠিত।

জনসংখ্যা ও অধিবাসী

২০১৩ সালের হিসাব অনুযায়ী আফ্রিকা মহাদেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১১০ কোটি যা বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় শতকরা ১৫ ভাগ। আফ্রিকা মহাদেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ মাইলে ৯৪ জন বা প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৩৬.৪ জন। অন্যান্য মহাদেশের তুলনায় আফ্রিকা মহাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এখনো বেশি প্রায় ২.০৮ (২০০৫)। তবে আফ্রিকার সর্বত্র জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সমান নয়। পশ্চিম, পূর্ব এবং মধ্য আফ্রিকার দেশগুলোর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অধিক, আবার উত্তর ও দক্ষিণ আফ্রিকার দেশগুলোর বৃদ্ধির হার তুলনামূলক বেশ কম। জনসংখ্যার দিক দিয়ে বৃহত্তম আফ্রিকান দেশ হচ্ছে নাইজেরিয়া, যার জনসংখ্যা প্রায় ১৪০ মিলিয়ন (২০১৩)। এরপর ইথিওপিয়ার প্রায় ৯৪ মিলিয়ন এবং মিশরের প্রায় ৮২ মিলিয়ন। প্রতি হাজারে জন্মহার আফ্রিকায় ৩৫.৩ জন (২০০৫), যা বিশ্বে সর্বোচ্চ। প্রতি হাজারে মৃত্যু হার ১৪.২ যা বিশ্বে সর্বোচ্চ। সাব-সাহারা অঞ্চলের তুলনায় উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কম। সাব-সাহারা অঞ্চলে প্রতি মহিলা জীবনে গড়ে প্রায় ৫ থেকে ৭টি সন্তান জন্ম দেয়। অধিক সন্তানকে আফ্রিকানরা ঐতিহ্যগতভাবে সম্মান ও সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে গণ্য করে। গড় আয়ু আফ্রিকার বেশির ভাগ অঞ্চল জুড়ে ৫০ বছরের কম। তবে পুরো আফ্রিকার গড় আয়ু ৫০.৪ বছর।

সেনেগাল থেকে ইথিওপিয়া এবং কেনিয়া পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ককেশীয়দের বাসভূমি। এদের পূর্ব পরিচয় ছিল হ্যামিটিক। এদের গায়ের রং ঘোর কৃষ্ণবর্ণ থেকে হালকা বর্ণের, মস্তক কুঞ্জিত কেশ বহুল, ঠোঁট ও নাক পাতলা এবং এরা লম্বা। নিগ্রোদের বাসভূমি ছিল পশ্চিম গাম্বিয়া থেকে দক্ষিণ এঙ্গোলা পর্যন্ত। আবার কেনিয়া থেকে মোজাম্বিক পর্যন্ত। এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলের অধিবাসীদের দু’ভাগে বিভক্ত করা যায় আদি নিগ্রো ও বান্টু। প্রথমটির বসতি ছিল আফ্রিকার উত্তর-পশ্চিমে এবং দ্বিতীয়টির দক্ষিণ ও পূর্বে। আদি নিগ্রো এবং বান্টুদের মধ্যে পার্থক্য জাতিগত অপেক্ষা অধিকতর ভাষাগত। বান্টুরা ছিল মূলত নিগ্রো, হ্যামিটিক, নেগ্রিলো এবং অন্যান্য উপজাতির সংমিশ্রণ জাত। এক সময় বান্টুরা দক্ষিণ সাহারাসহ আফ্রিকার এক-তৃতীয়াংশে বিস্তৃত ছিল। পূর্বে বান্টুদের বাসস্থান ছিল উগান্ডা এবং জাম্ববেসির মধ্যবর্তী অঞ্চলে, দক্ষিণ অঞ্চলে বান্টুদের বসতি দক্ষিণাংশে এবং মধ্যবর্তী বান্টুদের বাসস্থান মধ্য আফ্রিকা ও পশ্চিম মধ্য আফ্রিকায়। মোট কথা অ্যাঙ্গোলা, রোডিশিয়া, নয়াসাল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং দক্ষিণ পশ্চিম আফ্রিকা জুড়ে বান্টু এলাকা। নিগ্রো-রাষ্ট্র ভাষাভাষীরা কতগুলো উপজাতীয় দলে বিভক্ত যেমন জুলু, সোয়াজি, এনডেবেলে (Ndebele), পোন্ডো, টেম্বো, ঝোসা, তিসোয়ানা, বুশম্যান, হটেনটট, পিগমি ইত্যাদি।

আরব মুসলমানগণ মনে করেন, ঐতিহাসিকভাবে আফ্রিকায় বসবাসকারীরা অন্যতম অভিবাসনকারী। খ্রিষ্টিয় সাত শতক থেকে উত্তর আফ্রিকায় বহিরাগতরা আগমন করতে শুরু করে। তারা এ অঞ্চলে বসবাস করতে শুরু করে এবং কালক্রমে ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটায়। পরবর্তীকালে সতের শতকে ইউরোপীয়গণ আফ্রিকার দক্ষিণ প্রান্তে (কেইপ অব গুড হোপ) প্রথম বসতি স্থাপন করে। পরে অনেক ইউরোপীয় দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে এবং আলজেরিয়ায় অভিবাসন করে। এছাড়া উপনিবেশিক শাসনামলে তাদের ঔপনিবেশিক স্বার্থ সংরক্ষণে ইউরোপীয়রা বহু সংখ্যক ভারতীয়কে আফ্রিকায় বিশেষ করে উগান্ডা, কেনিয়া, তাঞ্জানিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় নিয়ে আসে।

আফ্রিকার ভাষা

আফ্রিকার ভাষা বৈচিত্র্যময়। আফ্রিকায় মোট কতটি ভাষা প্রচলিত তা নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে বিস্তর মতভেদ রয়েছে। একদল ভাষাবিদ দাবি করেন আফ্রিকায় দুই হাজারের বেশি ভাষা প্রচলিত, আবার কোনো কোনো পণ্ডিত তা তিন হাজারের বেশি বলে মত প্রকাশ করেন। আফ্রিকার বেশির ভাগ মানুষের ভাষা হচ্ছে সোয়াহেলি (Swahili)। প্রায় ৮০ মিলিয়ন আফ্রিকান এ ভাষায় কথা বলে। এরপর হাওসা ও ইউরুবা ভাষায় ২০ মিলিয়নের অধিক আফ্রিকান কথা বলে। আবার অনেক ভাষা আছে যেগুলো মাত্র কয়েক হাজার মানুষের মাতৃভাষায় সীমাবদ্ধ। ভাষাবিদরা আফ্রিকার ভাষাগুলোকে প্রধান চারটি ভাষা পরিবারে বিভক্ত করে থাকেন, যেমন- নাইজার কঙ্গো, আফ্রো-এশিয়া, নিলো-সাহারান এবং কৌসান।

  • নাইজার-কঙ্গো ভাষা পরিবার : নাইজার-কঙ্গো ভাষা আফ্রিকার বৃহত্তম ভাষা পরিবার। আফ্রিকার প্রায় অর্ধেক মানুষ এ ভাষা পরিবারভুক্ত। পশ্চিমে সেনেগাল নদী থেকে পূর্বে ভারত মহাসাগর, দক্ষিণে কেইপ অব গুড হোপ (বা উত্তমাশা) পর্যন্ত তা বিস্তৃত। এ ভাষা পরিবারের অন্যতম প্রধান শাখা হচ্ছে বান্টু ভাষা। আজকের আফ্রিকায় বান্টু ভাষাভুক্ত ভাষাসমূহ আফ্রিকার দক্ষিণাংশে বেশি প্রচলিত। গণতান্ত্রিক কঙ্গো, উগান্ডা, তাঞ্জানিয়া, জিম্বাবুয়ের উপকূলীয় অঞ্চলসহ বিভিন্ন জায়গায় এ ভাষা বেশি ব্যবহৃত হয়।
  • আফ্রো-এশিয়া ভাষা পরিবার : আফ্রিকার উত্তরাঞ্চলে আফ্রো-এশিয়া ভাষাসমূহ বেশি প্রচলিত। তবে পূর্ব আফ্রিকায় ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়াতেও এ ভাষাসমূহ প্রচলিত আছে। এ ভাষা পরিবারে প্রায় ৩৭৫টি ভাষা আছে, যা প্রায় ২৮৫ মিলিয়ন মানুষ কথা বলে। আরবি, অরওমো (Oromo) এবং হাউসা ইত্যাদি এ ভাষা পরিবারভুক্ত। এ ভাষা পরিবার বিশ্বের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী এবং পুরাতন ভাষা পরিবার।
  • নিলো-সাহারান ভাষা পরিবার : অন্যান্য ভাষা বিকাশে এ ভাষা পরিবার মধ্য সাহারা ও পূর্ব আফ্রিকার কিছু অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ। সুদান, ইথিওপিয়া, উগান্ডা, কেনিয়া ও উত্তর তাঞ্জানিয়া অঞ্চলে প্রধানত এ ভাষা পরিবারভুক্ত ভাষাসমূহ প্রচলিত।
  • কৌসান ভাষা পরিবার : কৌসান ভাষাভুক্ত প্রায় ৫০টি ভাষা আছে, যা প্রায় ১,২০,০০০ মানুষ কথা বলে। এগুলো প্রধানত নামিবিয়া, বতসোয়ানা এবং এঙ্গোলায় ব্যবহৃত হয়।

ধর্ম

খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে ইহুদি ধর্ম আফ্রিকায় (মিশরে) প্রবেশ করে। খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতকে ইহুদি অভিবাসী দল ইথিওপিয়ায় বসতি স্থাপন করে। খ্রিষ্টিয় প্রথম শতকে খ্রিষ্ট ধর্ম আফ্রিকায় প্রসার লাভ করে। প্রাচীনকালে উত্তর আফ্রিকা, বিশেষ করে মিশর ও উত্তর-পূর্ব আফ্রিকা যেমন- ইথিওপিয়া, ইরিত্রিয়া অঞ্চলে খ্রিষ্ট ধর্ম প্রসার লাভ করে। তবে ১৯শ শতকের মাঝামাঝি ইউরোপীয় খ্রিষ্টধর্ম প্রচারক দল ব্যাপকভাবে আফ্রিকার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এবং খ্রিষ্ট ধর্মের ব্যাপক প্রচার ও প্রসার ঘটায়। কিন্তু মুসলমান অধ্যুষিত অঞ্চলে খ্রিষ্ট ধর্মের তেমন প্রসার ঘটেনি। ২০০৭ সালের হিসেবে আফ্রিকায় প্রায় ৩৫ কোটি ৫২ লক্ষ খ্রিষ্টান আছে, যা আফ্রিকার সমগ্র জনসংখ্যার প্রায় ৪০ ভাগ এবং বিশ্বের সমগ্র খ্রিষ্টানের ২০ ভাগের সামান্য বেশি।

খ্রিষ্টিয় সাত শতকে ভূমধ্যসাগরের উপকূলীয় অঞ্চলে বা উত্তর আফ্রিকায় ইসলাম ধর্ম প্রসার লাভ করে। আট শতকে আরব ব্যবসায়ীরা ইথিওপিয়া অঞ্চলে ইসলামের প্রসার ঘটায় এবং কালক্রমে সোমালিয়া, কেনিয়া, তাঞ্জানিয়া, নাইজেরিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে ইসলাম প্রবেশ করে। বর্তমানে আফ্রিকায় মুসলমানদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। World Book Encyclopedia এর তথ্য অনুসারে আফ্রিকার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪৫ ভাগ হচ্ছে মুসলমান। আফ্রিকায় মোট মুসলমান প্রায় ৪১ কোটি ২৩ লাখের সামান্য বেশি (২০০৭)। যা পুরো মুসলিম বিশ্বের প্রায় ২৭.২৩ ভাগ। এছাড়া সামান্য সংখ্যক হিন্দু, বৌদ্ধসহ অন্যান্য ধর্মের লোক আফ্রিকায় বসবাস করে।

আফ্রিকার আফ্রিকায় বহু ধর্ম প্রচলিত আছে। আফ্রিকাসহ বিশ্বের প্রায় সর্বত্রই আদি ধর্মাবলম্বীরা ছিল প্রকৃতি পূজারী। এখনো আফ্রিকায় বহু আদি ধর্ম মতানুসারী বাস করে (বিশেষ করে সাব-সাহারা অঞ্চলে)। লাইবেরিয়া, সিয়েরালিয়ন, মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র এবং মোজাম্বিকে শতকরা ৫০ জনের বেশি মানুষ প্রকৃতি পূজারী। বর্তমানে প্রায় ১০০ মিলিয়ন আফ্রিকান প্রকৃতি পূজারী।

ভূ-প্রকৃতি ও জলবায়ু

আফ্রিকা মহাদেশের ভূ-প্রকৃতি খুবই বৈচিত্র্যময়। একদিকে যেমন আছে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম নদী আবার ঘন বন-জঙ্গলের জন্যে আফ্রিকা মহাদেশকে অন্ধকার মহাদেশ নামেও আখ্যায়িত করা হত। কেননা আফ্রিকার বিশাল বনভূমি, যা ভেদ করে সূর্যের আলো সহজে প্রবেশ করতে পারে না। আবার আফ্রিকার বিশাল বনভূমিতে বিচিত্র সব জীব-জন্তু বাস করার কারণে আফ্রিকাকে পৃথিবীর বৃহদাকার চিড়িয়াখানা বলেও আখ্যায়িত করা হয়।

আফ্রিকার আবহাওয়া ও জীব বৈচিত্র্যে ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। বিষুবরেখা বরাবর আফ্রিকার দেশগুলো অত্যন্ত উষ্ণ এবং সেখানে সারা বছর বৃষ্টিপাত হয়। বিষুবরেখার উত্তরে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরে এবং দক্ষিণে অক্টোবর থেকে মার্চ মাসে বৃষ্টিপাত হয়। অন্যদিকে আফ্রিকার উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর প্রভাবে শীতকালে বৃষ্টিপাত হয় এবং পূর্ব ও পশ্চিম আফ্রিকার জলবায়ু মৌসুমি বায়ু দ্বারা প্রভাবিত হয়। সাভানা ও মরুভূমি অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে বৃষ্টিপাত হয় এবং শীতকাল একবারে শুষ্ক থাকে। আফ্রিকা মহাদেশ মূলত একটি সুবিস্তৃত মালভূমি। এর উত্তর ভাগ অপেক্ষা দক্ষিণ-পূর্ব ভাগ অধিক উঁচু। এ দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চল সমুদ্র সমতল হতে ১০০০ মিটার থেকে ২০০০ মিটার পর্যন্ত উঁচু। মরুভূমি

আফ্রিকা মহাদেশ মরুভূমির জন্য বিখ্যাত। এখানে রয়েছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ উষ্ণ মরুভূমি যা সাহারা মরুভূমি নামে পরিচিত। এটি পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর থেকে পূর্বে লোহিত সাগর পর্যন্ত এবং উত্তরে ভূমধ্যসাগর থেকে দক্ষিণে প্রায় ২০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। সাহারা মরুভূমির আয়তন ৯,০০০,০০০ বর্গ কিলোমিটারের চেয়ে বেশি। এটি আয়তনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সমান এবং অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে বড়। এই অঞ্চল পূর্বে মরুভূমি ছিল না। কালক্রমে তা মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। এখানে প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। বিশেষ করে লিবিয়া, আলজেরিয়ায় তেল ও গ্যাসের খনি পাওয়া গেছে। পশ্চিম সাহারা ও মরক্কোয় রয়েছে ফসফেটের মজুদ।

সাহারা ছাড়া নামিব ও কালাহারি আফ্রিকার উল্লেখযোগ্য মরুভূমি। নামিব মরুভূমি আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূল বরাবর প্রায় ১৫০০ কিলোমিটার দক্ষিণে অ্যাঙ্গোলা থেকে পুরো নামিবিয়া বরাবর এবং পশ্চিমে দক্ষিণ আফ্রিকা পর্যন্ত বিস্তৃত। কাছাকাছি রয়েছে কালাহারি মরুভূমি, যেটি বতসোয়ানা, নামিবিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা জুড়ে বিস্ত ত। কালাহারির আয়তন প্রায় ৯,০০,০০০ বর্গ কিলোমিটার। এ মরুভূমিতে সামান্য বৃষ্টিপাতও হয়। তবে গ্রীষ্মে তাপমাত্রা প্রচুর থাকে। এই মরুভূমি খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধ। এখানে কয়লা, কপার, নিকেল, ইউরেনিয়াম, হীরক ইত্যাদি পাওয়া যায়।

নদ-নদী

আফ্রিকা মহাদেশে নদীর সংখ্যা খুব বেশি না হলেও বিশ্বখ্যাত কয়েকটি নদী রয়েছে। এর মধ্যে বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ নদী হচ্ছে নীলনদ। নীলনদ আবার দুই ভাগে পরিচিত – সাদা ও নীল। ইথিওপিয়ার লেইক তানা থেকে নীলনদের উৎপত্তি। নীলনদ সুদানের রাজধানী খাতুমে সাদা নীলের সাথে মিলিত হয়ে নীলনদ নামে উত্তরে মিশরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভূমধ্যসাগরে পতিত হয়েছে। লেইক ভিক্টোরিয়ার থেকে উৎপত্তি হয়ে মূলত সাদা নীল উত্তরে খাতুমে নীলনদের সাথে মিলিত হয়। নীলনদের মোট দৈর্ঘ্য ৬,৬৬৯ কিলোমিটার। প্রাচীনকালে মিশরে এই নীলনদকে কেন্দ্র করে মিশরীয় সভ্যতা গড়ে উঠে। ইতিহাসের জনক গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডোটাস তাই মিশর ভ্রমণ করে বলেছিলেন ‘মিশর নীলনদের দানা।

নীলনদ ছাড়া আফ্রিকার বিখ্যাত নদীগুলোর মধ্যে কঙ্গো, নাইজার নদী অন্যতম। কঙ্গো আফ্রিকার দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৪,৬৬৭ কিলোমিটার (২,৯০০ মাইল)। পূর্বে এটি জায়ারে নদী নামে পরিচিত ছিল। এটি পানি প্রবাহের দিক দিয়ে আমাজানের পরেই বিখ্যাত। কঙ্গো নদীর নাম থেকে আফ্রিকার দুটি দেশের নাম হয়েছে। নাইজার নদী নীলনদ ও কঙ্গোর পরে আফ্রিকার দীর্ঘতম নদী। এটি পশ্চিম আফ্রিকায় অবস্থিত। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৪১৮০ কিলোমিটার। নাইজার নদী পশ্চিম হতে পূর্বে গিনি, মালি, নাইজার, বেনিন এবং নাইজেরিয়া হয়ে গিনি উপসাগর পতিত হয়েছে। এই নদীর নামানুসারে নাইজেরিয়া ও নাইজার এই দুটি দেশের নাম রাখা হয়েছে।

আফ্রিকায় ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের হ্রদ রয়েছে। মালাউই ও তানজানাইকা পূর্ব আফ্রিকায় অবস্থিত গভীর হ্রদ। তানজানাইকা বিশ্বের দ্বিতীয় গভীরতম হ্রদ। পশ্চিম আফ্রিকার লেক চাদ হচ্ছে অগভীর হ্রদ। ভিক্টোরিয়া হ্রদ পূর্ব আফ্রিকায় অবস্থিত। এটি আয়তনে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম হ্রদ। ভিক্টোরিয়া হ্রদ মূলত উগান্ডা, কেনিয়া এবং তাঞ্জানিয়া এই তিনটি দেশের সীমান্তে অবস্থিত। এর আয়তন ৬৯,৪৯০ বর্গ কিলোমিটার (২৬,৮৩০ বর্গ মাইল) এবং সমুদ্র সমতল হতে এর উচ্চতা ১,১৩০ মিটার। এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্বাদু পানির হ্রদ । নীলনদের উৎপত্তি আবিষ্কার করতে এসে ১৮৫৮ সালে ব্রিটিশ পর্যটক জন হ্যানিং স্পেক (John Hanning Speke) এই হ্রদ প্রথম দেখতে পান। তিনি ব্রিটেনের রাণী ভিক্টোরিয়ার নামানুসারে এর নামকরণ করেন ‘ভিক্টোরিয়া হ্রদ। পরে ১৮৭৫ সালে স্যার হেনরি মর্টন স্ট্যানলি এ হ্রদ দেখতে পান। এই হ্রদ অর্থনৈতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

চাদ লেক মধ্য আফ্রিকায় অবস্থিত। এটি চাদ, ক্যামেরুন, নাইজেরিয়া এবং নাইজার এই চারটি দেশের সামান্য বরাবর অবস্থিত। সমুদ্র সমতল হতে ২৫০ মিটার বা ৮২০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। এটি বর্ষাকালে বিশাল আয়তন ধারণ করে ২৫,৯০০ বর্গ কিলোমিটার হয়, কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে প্রায় ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার হয়।

পাহাড়-পর্বত

আফ্রিকা বন-জঙ্গল কিংবা মরুভূমির কারণে বিখ্যাত হলেও পাহাড় বা উঁচু পর্বতমালার ক্ষেত্রে কিছুটা পিছিয়ে। এ মহাদেশের সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গের নাম কিলিমানজারো। কিলিমানজারো মূলত উত্তর-পূর্ব তাঞ্জানিয়ায় কেনিয়ার সীমানা বরাবর অবস্থিত। এর উচ্চতা ৫,৮৯৫ মিটার (১৯৩৪০ ফুট)। এটি একটি সুপ্ত আগ্নেয়গিরি। মাউন্ট কেনিয়া আফ্রিকার দ্বিতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ। এর উচ্চতা ৫,১৯৯ মিটার (১৭,০৫৭ ফুট)। এটি মধ্য কেনিয়ার অবস্থিত এবং এটি একটি মৃত আগ্নেয়গিরি। পর্যটকদের জন্যে এই পর্বত খুবই আকর্ষণীয় স্থান। মাঘেরিটা চূড়া (Margherita Peak) আফ্রিকার তৃতীয় উঁচু পর্বত শৃঙ্গ যা গণতান্ত্রিক কঙ্গো (পূর্বের জায়ারে) এবং উগান্ডার সীমান্তে অবস্থিত। এটিও পূর্ব আফ্রিকায় অবস্থিত। এর উচ্চতা ৫,১০৯ মিটার (১৬, ৭৬২ ফুট)। ১৯০৬ সালে ইতালির পর্যটক Lungi Ameteo এতে প্রথম আরোহন করেন এবং ইটালির রাণী মাতার নামানুসারে এর এই নামকরণ করেন। রাস ডেসেন ( Ras Dashen) পর্বত উত্তর ইথিওপিয়ায় অবস্থিত আফ্রিকার চতুর্থ উঁচু পর্বত শৃঙ্গ। এর উচ্চতা ৪,৬২০ মিটার (১৫,১৫৭ ফুট)। এছাড়া আরও বেশ কিছু পর্বত আফ্রিকায় রয়েছে।

আফ্রিকার জীব-জন্তু

আফ্রিকা মহাদেশের জঙ্গল বিভিন্ন প্রজাতির জীব-জন্তুর জন্য বিখ্যাত। মরুভূমি অঞ্চলে অ্যান্টিলোপ জাতীয় প্রাণী, হায়েনা, শেয়াল, লেপার্ড প্রভৃতি প্রাণী উল্লেখযোগ্য। আফ্রিকার সাভানা এলাকায় সিংহ, বাঘ, চিতা, জিরাফ, হাতি, গরিলা, বানর, জেব্রা, মোষ, গণ্ডার দেখতে পাওয়া যায়। আবার আফ্রিকার কোনো কোনো অঞ্চলে দুর্লভ প্রজাতির শিম্পাঞ্জি ও গরিলা বাস করে। আফ্রিকার জঙ্গলে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বিষধর সাপ। আফ্রিকায় রয়েছে হাজারো প্রজাতির পাখি। নদী বা হ্রদে বাস করে হরেক রকমের কুমির। এখানে জঙ্গলে বসবাস করে বিভিন্ন প্রজাতির মশা, মাছি এবং পিঁপড়া যা অন্যান্য প্রাণীর মতোই বিপদজনক। আফ্রিকার নদী বা হ্রদে রয়েছে নানাবিধ মাছ।

প্রাকৃতিক সম্পদ

  • কৃষিজ সম্পদ : আফ্রিকার বেশির ভাগ মানুষ কৃষি নির্ভর। যদিও কৃষিতে আফ্রিকা উন্নত নয়। প্রায় ৬০ ভাগ আফ্রিকাবাসী এই কৃষি নির্ভর, তাদের পাঁচ ভাগের তিন ভাগ কৃষক আবার প্রান্তি ক। ধান, গম, চীনা বাদাম, যব, ভুট্টা ইত্যাদির পাশাপাশি তারা অর্থকরী ফসল যেমন কফি, তুলা, কোকো, রাবার ইত্যাদি উৎপাদন করে থাকে।
  • বনজ সম্পদ : আফ্রিকা বনজ সম্পদে সমৃদ্ধ মহাদেশ। আফ্রিকায় রয়েছে বিশাল বনভূমি। এখানে মেহগনি, টিক, গাম, আবলুস, কর্পূর, রোজউড, কোকো, রাবার প্রভৃতি বৃক্ষ জন্মায়। কেনিয়া, সুদান, তাঞ্জানিয়া ও জিম্বাবুয়েতে রয়েছে বিশাল তৃণভূমি অঞ্চল। মরু অঞ্চলে জন্মে খেজুর গাছ। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে কর্ক, সিডার ও পাইন বৃক্ষ পাওয়া যায়। দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইথিওপিয়ার উচ্চ ভূমিতে নাতিশীতোষ্ণ বনভূমি দেখা যায়। এখানে বিভিন্ন প্রকারের পত্র পতনশীল বৃক্ষ জন্মায়। আফ্রিকার স্বল্প বৃক্ষযুক্ত বিশাল সাভানা অঞ্চলও রয়েছে।
  • খনিজ ও শিল্প সম্পদ : আফ্রিকায় মূল্যবান খনিজ সম্পদ রয়েছে। খনিজ তেল, প্লাটিনাম, গ্রাফাইট, কোবল্ট, গ্যাস, সোনা, কয়লা, হীরা, দস্তা, তামা, ইউরেনিয়াম ও দুষ্প্রাপ্য ধাতবের খনিজ আছে। পেট্রোলিয়াম সমৃদ্ধ উল্লেখযোগ্য দেশ হচ্ছে নাইজেরিয়া এবং লিবিয়া। হীরক খনির জন্য বিখ্যাত হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এই প্রাকৃতিক সম্পদকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং উত্তর আফ্রিকার কিছু রাষ্ট্র শিল্প উন্নত হলেও বাকি সাহারা অঞ্চলসহ আফ্রিকার বেশির ভাগ রাষ্ট্র এই ক্ষেত্রে খুবই পশ্চাদপদ। আফ্রিকা মহাদেশ শিল্পের ক্ষেত্রে সবচেয়ে অনগ্রসর মহাদেশ। আফ্রিকার শ্রমের মাত্র ১৫ ভাগ শিল্প ক্ষেত্রে নিয়োজিত। এছাড়া বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তি ও ব্যাংকিং খাতে আফ্রিকা পূর্বেকার পশ্চাদপদ অবস্থা থেকে বেশ দ্রুতই উন্নতি লাভ করছে। আফ্রিকা মহাদেশ ইউরোপ ও আমেরিকার উন্নত দেশগুলোর শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কাঁচামাল, শ্রম শক্তি ও খনিজ সামগ্রী সরবরাহ করে।

আফ্রিকা মহাদেশ হিসেবে পরিচিতির কারণ

বর্তমান বিশ্বে আফ্রিকা কয়েকটি কারণে বিশেষ পরিচিতি পেয়েছে, যেগুলোর বেশির ভাগ ইতিবাচক নয়। ক্ষুধা, দরিদ্র্য, গৃহযুদ্ধ, দুর্নীতি, মহামারী, রোগ-ব্যাধি যেমন এইডস, পুষ্টিহীনতা, শিশু মৃত্যুর হার এখানে অধিক। আফ্রিকার আধা সামন্ততান্ত্রিক সমাজ ইউরোপীয় উপনিবেশিক শাসনের ফলে ভেঙে যায়। ঔপনিবেশিক শাসনের প্রভাবে আফ্রিকার সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষা সবকিছুতেই আসে আমূল পরিবর্তন। আর এ পরিবর্তনের সাথে তারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই খাপ খাওয়াতে ব্যর্থ হয়। যার ফলে ঔপনিবেশিক শাসনের সমাপ্তি প্রায় অর্ধ শতক হলেও আফ্রিকা মহাদেশ চরম দুর্দশা অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। জাতিগত বিভেদ, সম্পদের অসম বণ্টন, শিক্ষায় অনগ্রসরতা, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ইত্যাদি কারণে আফ্রিকার জনগণ সুশাসন থেকে বঞ্চিত এবং আফ্রিকার বেশির ভাগ মানুষ দরিদ্র। জাতিসংঘের ২০০৬ সালের প্রতিবেদন অনুসারে বিশ্বের স্বল্পোন্নত ৫০টি রাষ্ট্রের ৩৪টিই হচ্ছে আফ্রিকান রাষ্ট্র। আফ্রিকার অনেক দেশে বাৎসরিক মাথাপিছু আয় ২০০ মার্কিন ডলারের নিচে। বেশির ভাগ আফ্রিকান রাষ্ট্রের মুদ্রাস্ফীতি গড়ে বাৎসরিক প্রায় ১০%। বেশির ভাগ রাষ্ট্রে মানুষের গড় আয়ু ৬০ বছরের কম। অনেক দেশে আবার গড় আয়ু ৫০ বছরের কম। আফ্রিকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বিশ্বের মধ্যে অন্যতম। বেশির ভাগ আফ্রিকান রাষ্ট্রে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২% এর বেশি। শিশু মৃত্যুর হারও আফ্রিকায় প্রায় ৯% যা অত্যধিক। ভয়াবহ ব্যাধি এইডস (AIDS) আফ্রিকায় প্রায় মহামারির আকার ধারণ করছে। সাব-সাহারা অঞ্চলে প্রায় ১১ ভাগ প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ এ রোগে আক্রান্ত। এক সমীক্ষায় জানা যায় ২০০৫ সালে এ অঞ্চলে প্রায় দুই মিলিয়ন মানুষ এইডস এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। বতসোয়ানা, জিম্বাবুয়ে, সোয়াজিল্যান্ড অঞ্চলে প্রায় প্রতি চারজনের একজন এ রোগে আক্রান্ত।

বিশ শতকের ষাটের দশক আফ্রিকার স্বাধীনতার জন্য স্মরণীয় সময়। এ সময়ই আফ্রিকার বেশির ভাগ রাষ্ট্র ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শাসনের হাত থেকে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করে। কিন্তু সে স্বাধীনতা আজও অর্থবহ হয়নি। তবে প্রচেষ্টা যে হয়নি বা হচ্ছে না তা নয়। আফ্রিকার বেশির ভাগ রাষ্ট্রের সমস্যা প্রায় একই প্রকৃতির। তাই প্রতিটি দেশ একত্রে কাজ করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে ২৫ মে, ১৯৬৩ সালে গড়ে তোলে একটি আঞ্চলিক সংস্থা যা ‘অরগানাইজেশন অব আফ্রিকান ইউনিটি’ নামে পরিচিত ছিল। ২০০২ সালে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘আফ্রিকান ইউনিয়ন”।

আফ্রিকার ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব

বিশ শতকের তুলনায় একুশ শতকের শুরুতেই বিশ্বের বড় বড় শক্তিগুলোর কাছে আফ্রিকার ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব অধিক লক্ষ্য করা যায়। আফ্রিকার ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব আলোচনায় আসার পূর্বে ভূ-রাজনীতির ইতিহাস সংক্ষেপে আলোকপাত করা যায়। প্রাচীনকাল থেকে ভূ-রাজনীতি সম্পর্কে পণ্ডিতদের মধ্যে আগ্রহ থাকলেও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে অর্থাৎ রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে এই ধারণার ব্যাপক বিকাশ ঘটে ১৯শ শতকে ইউরোপে। প্রায় একই সময়ে এশিয়ার জাপানেও এর গুরুত্ব ব্যাপকভাবে অনুভূত হয়। ইউরোপে ১৯শ শতকের ৭০ এর দশকে জার্মানি একত্রিত হয়ে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয় এবং ব্রিটেন, ফ্রান্সসহ অন্য ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রের মত নিজ দেশের বাইরে জায়গা দরকার এই ব্যাপারে জার্মান পণ্ডিতগণ গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব প্রচার করতে থাকেন। এমনি প্রেক্ষাপটেই আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপনকে কেন্দ্র করে অন্যান্য ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে যুদ্ধ বাধার উপক্রম হলে জার্মান নেতা বিসমার্ক ১৮৮৪ সালে ইউরোপীয় অন্যান্য শক্তিগুলোকে নিয়ে বার্লিনে সম্মেলনের আহ্বান করেন। এভাবে সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি শান্তিপূর্ণভাবে আফ্রিকাকে ভাগ করার ব্যবস্থা করেন। এর পর শুরু হয় আফ্রিকা নিয়ে কাড়াকাড়ি যা ‘স্ক্র্যাম্বল ফর আফ্রিকা’ নামে পরিচিত।

প্রথম মহাযুদ্ধের সময় মাত্র দুটি রাষ্ট্র ইথিওপিয়া (যা পূর্বে আবিসিনিয়া নামে পরিচিত ছিল) ও লাইবেরিয়া ছাড়া আফ্রিকার বাকি সব অংশ ইউরোপীয়দের উপনিবেশে পরিণত হয়। প্রথম মহাযুদ্ধে পরাজিত শক্তি জার্মানিকে আফ্রিকার উপনিবেশসমূহ ছেড়ে দিতে হয়। পরবর্তী সময়ে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় আফ্রিকার ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব পূর্বের চেয়ে বেশি করে অনুভূত হয়। আর আফ্রিকায় কর্তৃত্ব থাকায় এর সুফল পায় ব্রিটেন, ফ্রান্স বা মিত্র পক্ষ। অর্থাৎ তারা যুদ্ধের সময় আফ্রিকার মানব সম্পদসহ সব কিছুই নিজেদের পক্ষে ব্যবহার করে এবং যুদ্ধে জয়লাভ করতে সক্ষম হয়।

দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শেষ হতে না হতেই শুরু হয় নব্য পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতা। অন্যদিকে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শক্তিগুলোকে ব্যাপকভাবে দুর্বল করে দেয়। পঞ্চাশের দশকে একই সাথে আফ্রিকানদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশের ফলে তাদের স্বাধীনতার পথ উন্মুক্ত হয়। মোটামুটি সত্তরের দশকের মধ্যেই প্রায় সব রাষ্ট্র স্বাধীনতা লাভ করে। তৎকালীন দুই পরাশক্তি নিজ নিজ প্রভাব বৃদ্ধির জন্য আফ্রিকার নব্য স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। আফ্রিকান রাষ্ট্রগুলোর অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা ও বহির্বিশ্বের প্রভাবের ফলে স্বাধীনতার পর পরই শুরু হয় ব্যাপক রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা যা অনেক দেশে গৃহযুদ্ধের রূপ নেয়। এর অন্যতম কারণ আফ্রিকার সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা। স্নায়ুযুদ্ধের শেষে নব্বইয়ের দশকে আফ্রিকাতেও পরিবর্তন আসতে শুরু করে। ৯/১১ ঘটনার পর পুরো বিশ্বের ভূ-রাজনৈতিক মানচিত্র ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হতে থাকে। এর প্রভাব আফ্রিকাতেও পড়ে।

আফ্রিকার ভূ-রাজনীতির উপাদান

বিভিন্ন পণ্ডিত বিভিন্নভাবে ভূ-রাজনীতিকে ব্যাখ্যা করেছেন। তাদের আলোচনা থেকে যে বিষয়গুলো অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত অর্থাৎ ভূ-রাজনীতির উপাদান হচ্ছে ভৌগোলিক অবস্থান, জনসংখ্যা, প্রাকৃতিক সম্পদ।

  • ভৌগোলিক অবস্থান ; আফ্রিকার উত্তরে ভূমধ্যসাগর যা ইউরোপ হতে আফ্রিকাকে পৃথক করেছে। আর আফ্রিকাকে এশিয়া থেকে পৃথক করেছে মিশরের সুয়েজ খাল। ১৯শ শতকের শেষ দিকে সুয়েজ খাল চালু হয় যা ভূমধ্যসাগরকে লোহিত সাগরের সাথে যুক্ত করে। এই খাল খননের মাধ্যমে ইউরোপ হতে এশিয়ায় আসার পথ বা এশিয়া থেকে ইউরোপ যাওয়ার পথ বহুগুণ কমে যায়। যার ফলে সময় ও অর্থ উভয়ই কম লাগে। আর এ কারণে মিশরের গুরুত্ব ইউরোপ-আমেরিকার কাছে বহুগুণ বেড়ে যায়। পূর্বে ফ্রান্স ও ব্রিটেনের ব্যাপক প্রভাব ছিল মিশরে, বর্তমানে বিশ্বের একক পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব রয়েছে মিশরে। অর্থাৎ সুয়েজ খাল খননের মাধ্যমে আফ্রিকার উত্তর পূর্বাঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব অনেক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। আর আফ্রিকার পশ্চিমে রয়েছে বিশাল আটলান্টিক মহাসাগর এবং পূর্বে ভারত মহাসাগর। এসব মহাসাগর আফ্রিকার গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এসব মহাসাগরে রয়েছে প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ। এছাড়াও যাতায়াতের সুবিধার জন্য বিশাল উপকূল ভাগ আফ্রিকার ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব বৃদ্ধিতে বর্তমান সময়েও বড় শক্তিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
  • জনসংখ্যা : আফ্রিকা মহাদেশ জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাদেশ। ২০১৩ সালের হিসাব অনুযায়ী প্রায় ১১০ কোটি মানুষের বাস আফ্রিকায় যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার শতকরা প্রায় ১৫ ভাগ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২০০৫ এর হিসাব অনুযায়ী অনেক বেশি প্রায় ২.০৮%। যেখানে অধিক জনসংখ্যা বোঝা বলে বিবেচিত হতো সেখানে বর্তমানে জনসংখ্যাকে জনসম্পদ বলে প্রচারণা চালাচ্ছে পশ্চিমা পুঁজিবাদী সমাজ। কেননা পশ্চাদপদ আফ্রিকায় রয়েছে পুঁজিবাদী পশ্চিমা ও নব্য কিছু এশিয় রাষ্ট্রের এক বিশাল বাজার। আফ্রিকাকে বাজার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলো তাদের সুবিধা মতো আফ্রিকার অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বকে কাজে লাগাচ্ছে। আফ্রিকার একমাত্র শিল্পোন্নত দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়া বাকি সব দেশই ইউরোপ আমেরিকা থেকে প্রচুর পণ্যদ্রব্য আমদানি করে। অথচ ব্যাপক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও নিজেদের সম্পদকে তারা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারছে না।
  • প্রাকৃতিক সম্পদ : আফ্রিকা প্রাকৃতিক সম্পদে পূর্ণ একটি মহাদেশ। হীরক, স্বর্ণ, রৌপ্য সহ প্রচুর জ্বালানী তেল ও গ্যাসের খনি আছে আফ্রিকায়। ধারণা করা হয় আফ্রিকা মহাদেশে বিশ্বের ৯০% কোবাল্ট, ৯০% প্লাটিনাম, ৫০ স্বর্ণ, ৯৮% ক্রোমিয়াম, ৭০% ট্যানটালাইট, ৬৪% ম্যাঙ্গানিজ এবং এক-তৃতীয়াংশ ইউরেনিয়ামের মজুদ রয়েছে। এছাড়া মূল্যবান বৃক্ষ, ফল, বিভিন্ন বন্য প্রাণী ইত্যাদি প্রাকৃতিক সম্পদ সব সময়ই আফ্রিকার ভূ রাজনৈতিক গুরুত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। বড় বড় শক্তি আফ্রিকায় তাদের কর্তৃত্ব বা প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে যার হাত ধরে ১৯শ শতকের শেষে চলে আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপনের এক অসম প্রতিযোগিতা। প্রায় সম্পূর্ণ আফ্রিকা গ্রাস করে বিভিন্ন ইউরোপীয় শক্তি। এর অন্যতম কারণ ছিল আফ্রিকার সম্পদ দখল এবং আফ্রিকার সম্পদে নিজ দেশের সম্মান ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা। স্নায়ুযুদ্ধ শেষ হলেও বর্তমানে আফ্রিকায় চলছে একক পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও উদীয়মান শক্তি চীনের মধ্যে ব্যাপক প্রতিযোগিতা। কখনো প্রকাশ্যে কখনো বা গোপনে এ তৎপরতা চলছে। এই ক্ষেত্রে উদীয়মান আরেক শক্তি ভারতও পিছিয়ে নেই। আফ্রিকার বাজার এবং আফ্রিকার প্রাকৃতিক সম্পদ বিশেষ করে জ্বালানী তেল বড় শক্তিগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ২০০৫ সালের এক সমীক্ষায় দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্র আফ্রিকা থেকে তার আমদানির ১৮ ভাগ তেল আমদানি করেছে, যা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে নেয়া তেলের চেয়েও বেশি। Schaefer নামক গবেষক উল্লেখ করেন আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের এই তেল আমদানি অদূর ভবিষ্যতে বেড়ে শতকরা ১৮ থেকে ২৫ ভাগে উন্নীত হবে। অন্যদিকে চীন আফ্রিকার সুদান, জাম্বিয়া, গণতান্ত্রিক কঙ্গো, গ্যাবন, লাইবেরিয়া, জিম্বাবুয়েসহ বিভিন্ন দেশে প্রচুর বিনিয়োগ করছে এবং তাদের প্রাকৃতিক সম্পদের প্রতি নিজ কর্তৃত্ব বৃদ্ধি করে যাচ্ছে।

তথ্যসূত্র

আফ্রিকার ইতিহাস, ড. আবু মোঃ দেলোয়ার হোসেন, মোহাম্মদ গোলাম সাকলায়েন সাকী, মোহাম্মদ মোরাদ হোসেন খান, এ. এস. এম. মোহসীন, পৃ. ৩৯-৫০

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.