২০১৮-২১ তুরস্কের অর্থনৈতিক সংকট

(সম্প্রসারিত হবে)

ভূমিকা

২০১৮-২১ সালের তুর্কি মুদ্রা এবং ঋণ সংকট হলো তুরস্কে একটি চলমান আর্থিক ও অর্থনৈতিক সংকট। তুর্কি লিরার মূল্যহ্রাস, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, ক্রমবর্ধমান ঋণ ব্যয় (borrowing cost), এবং অনুরূপভাবে ক্রমবর্ধমান ঋণ খেলাপি হলো এর বৈশিষ্ট্য। তুরস্কের অর্থনীতির অত্যধিক চলতি হিসাব ঘাটতি (current account deficit) এবং বিপুল পরিমাণ বেসরকারী বৈদেশিক মুদ্রা মনোনীত ঋণের (private foreign-currency denominated debt) কারণে এই সংকট দেখা দিয়েছে, সেই সাথে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদ এবং সুদের হার নীতি সম্পর্কে তার অপ্রচলিত ধারণাও এই সংকটের অন্যতম কারণ। কতিপয় বিশ্লেষক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভূ-রাজনৈতিক ঘর্ষণের প্রভাব এবং ইস্পাত এবং অ্যালুমিনিয়ামের মতো কিছু তুর্কি পণ্যের উপর ২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রশাসনের বলবৎ শুল্কের উপরও জোর দেন।

যদিও প্রথম দিকে মুদ্রার বড় অবমূল্যায়নের (depreciation of the currency) ওয়েভগুলোই সংকটটির দৃশ্যমান বৈশিষ্ট্য ছিল, পরবর্তী পর্যায়গুলিতে কর্পোরেট ঋণ খেলাপি এবং অবশেষে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সংকোচনও এর বৈশিষ্ট্য হিসেবে চিহ্নিত হয়। মুদ্রাস্ফীতির হার দুই অঙ্কে আটকে থাকায়, স্ট্যাগফ্লেশন (stagflation) শুরু হয়। এই সংকট এরদোয়ান নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে অতিরিক্ত উত্তপ্ত করে তুলেছে, যা মূলত বৈদেশিক ঋণ, সহজ এবং সস্তা ঋণ এবং সরকারী ব্যয়ের মাধ্যমে কনস্ট্রাকশন বুমের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এই সংকট এরদোগানের নেতৃত্বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির এক যুগের অবসান ঘটায়, যা নির্মাণ খাতের উত্থানের ফলে তৈরি হয়েছিল, যা সহজ ঋণ এবং একটি রাষ্ট্রীয় বাজেট দ্বারা সমর্থিত ছিল।

কোভিড-১৯ মহামারীর সময়কার ২০২০ সালে ও ২০২১ সালের শুরুতে সামান্য পুনরুদ্ধারের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান Naci Ağbal-কে বাদ দিয়ে Şahap Kavcıoğlu-কে দায়িত্ব প্রদানের পর তুর্কি লিরার আবার অবনয়ন ঘটে, সুদের হার ১৯% থেকে ১৫% এ নেমে আসে। মনে করা হচ্ছে অর্থনৈতিক সংকট এরদোয়ান এবং একেপির জনপ্রিয়তা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করেছে, দলটি ২০১৯ সালের স্থানীয় নির্বাচনে ইস্তানবুল এবং আঙ্কারা সহ তুরস্কের বেশিরভাগ বৃহত্তম শহরে পরাজিত হয়েছে। ২০২১ সালের ১১ অক্টোবর পর্যন্ত, ক্রমবর্ধমান ডলারের হার ৯ লিরা অতিক্রম করে এবং ১২ নভেম্বর পর্যন্ত, এটি ১০ লিরা অতিক্রম করে। ২৩ নভেম্বর, যা “ব্ল্যাক ট্যুসডে” নামেও পরিচিত, ১২ লিরা এবং তারপরে ১৩ লিরা হয়েছিল। এইভাবে ডলার ১ দিনে ২ লিরা বৃদ্ধি পেয়ে রেকর্ডে উন্নীত হয়। ২০২১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ সত্ত্বেও তা ১৪ লিরা ছাড়িয়ে যায় এবং ১৬ ডিসেম্বর ১৫ লিরা ছাড়িয়ে যায়।

বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, তুরস্কের দোকানগুলোতে পণ্য কম, কিন্তু চাহিদা প্রচুর, আর দোকানে মানুষের সারিও অনেক। এদিকে সারা দেশেই চিনি, ময়দা ও চর্বি পাওয়া যাচ্ছে না। রুটির দোকানগুলোর লাইন বাড়ছেই। বেসিক কনজিউমার গুডগুলোর ওপর বিক্রয়ে রেস্ট্রিকশন আনা হয়েছে, আর অনেক মুদির দোকানি দেউলিয়া হয়ে গেছে।

অর্থনৈতিক সংকটের কারণ

চলতি হিসাব ঘাটতি : তুরস্কের অর্থনীতির একটি দীর্ঘদিনের বৈশিষ্ট্য হল কম সঞ্চয়ের হার (low savings rate)। রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ানের ক্ষমতায় আরোহনের পর থেকে তুরস্কে বিপুল এবং ক্রমবর্ধমান চলতি হিসাব ঘাটতি দেখা যেতে শুরু করে। এর পরিমাণ ছিল ২০১৬ সালে ৩৩.১ বিলিয়ন ডলার, ২০১৭ সালে ৪৭.৩ বিলিয়ন ডলার। ২০১৮ এর জানুয়ারি মাসে ৭.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঘাটতি হয়, তাতে রোলিং ১২ মাসের ঘাটতি গিয়ে দাঁড়ায় ৫১.৬ বিলিয়ন ডলারে। এভাবে তুরস্কের চলতি হিসাব ঘাটতি হয়ে ওঠে বিশ্বের বৃহত্তম চলতি হিসাব ঘাটতিগুলোর মধ্যে একটি। তুরস্কের অর্থনীতি বেসরকারী খাতের অতিরিক্ত অর্থায়নের জন্য মূলধন প্রবাহের (capital inflow) উপর নির্ভর করেছে, এক্ষেত্রে তুরস্কের ব্যাংক এবং বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায়শই বৈদেশিক মুদ্রায় প্রচুর ঋণ গ্রহণ করেছে। এই পরিস্থিতিতে তুরস্ককে তার ব্যাপক চলতি হিসাব ঘাটতি এবং পরিপক্ক ঋণের (maturing debt) জন্য বছরে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভে রাখতে হবে। কিন্তুর সবসময়ই ইনফ্লো শুকিয়ে যাবার রিস্কে থাকে, আর এর মোট বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ (foreign currency reserves) মাত্র ৮৫ বিলিয়ন ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ, যা বাজার দ্বারা অনুসরণ করা হয়, ২০১৮ সালের পরে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিট বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ২০২০ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ৭৭.৯ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে ৩৩.৯ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইভিডিএস ওয়ার্কিং গ্রুপের তথ্য অনুযায়ী, ৫ জানুয়ারি, ২০১৮ তারিখে মোট বৈদেশিক মুদ্রা ছিল ৮৭.৪৬৬ বিলিয়ন ডলার এবং ২৩ অক্টোবর, ২০২০ তারিখে তা ছিল ৪৫.০৮৬ বিলিয়ন ডলার। ২০০২ সালে তার জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি) নির্বাচনের পর থেকে এই প্রবণতাগুলির অন্তর্নিহিত অর্থনৈতিক নীতিটিকে এরদোয়ান ক্রমবর্ধমানভাবে মাইক্রোম্যানেজ করেছেন, এবং ২০০৮ সাল থেকে তিনি কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রিতে ফোকাস করে, স্টেইট এওয়ার্ডেড কনট্রাক্ট দিয়ে ও এর জন্য বিভিন্ন স্টিমুলার মিজার নিয়ে এই কাজটি আরও দৃঢ়ভাবে করেন। দেশের গবেষণা ও উন্নয়ন ব্যয় (জিডিপির % ) এবং শিক্ষার উপর সরকারী ব্যয় (জিডিপির%) একেপি সরকারের সময় প্রায় দ্বিগুণ হলেও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করা যায়নি।

বৈদেশিক মুদ্রার ঋণ : ২০১৭ সালের শেষের দিকে দেখা যায়, তুরস্কে কর্পোরেট বৈদেশিক মুদ্রার ঋণ ২০০৯ সাল থেকে দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে, তাদের বৈদেশিক মুদ্রাসম্পদের বিরুদ্ধে হিসাবের পর তা দাঁড়ায় ২১৪ বিলিয়ন ডলারে। সরকারী এবং বেসরকারী মিলিয়ে ২০১৭ সালের শেষে তুরস্কের মোট বৈদেশিক ঋণ দাঁড়ায় ৪৫৩.২ বিলিয়ন ডলারে। মার্চ ২০১৮ পর্যন্ত সরকারী ও বেসরকারী ১৮১.৮ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋণ এক বছরের মধ্যে পরিপক্ক হয়, অর্থাৎ লায়াবিলিটি থেকে দেনা হয়ে যায়। মার্চের শুরুতে দেশীয় শেয়ারের অনাবাসী (Non-resident) হোল্ডিং ছিল ৫৩.৩ বিলিয়ন ডলার, মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে ৩৯.৬ বিলিয়ন ডলার, মার্চের শুরুতে দেশীয় সরকারী বন্ডের অনাবাসী হোল্ডিং ছিল ৩২.০ বিলিয়ন ডলার এবং মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে ২৪.৭ বিলিয়ন ডলার। তুরস্কের ইক্যুইটি, সরকারী বন্ড এবং কর্পোরেট ঋণের সামগ্রিক অনাবাসীদের মালিকানা আগস্ট ২০১৭ সালে ৯২ বিলিয়ন ডলারের উচ্চতা থেকে কমে ১৩ জুলাই ২০১৮ পর্যন্ত মাত্র ৫৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের শেষে স্বল্পমেয়াদী বৈদেশিক ঋণের স্টক ১২৪.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেকর্ড করেছে, যা ২০২০ সালের শেষের তুলনায় ৯.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে, এই সময়ের মধ্যে, ব্যাংকগুলির স্বল্পমেয়াদী বৈদেশিক ঋণের স্টক ১.২ শতাংশ বৃদ্ধি হয়ে ৫৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে এবং অন্যান্য খাতের স্বল্পমেয়াদী বৈদেশিক ঋণের স্টক ১৫.১ শতাংশ বেড়ে ৪০.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। বিদেশ থেকে প্রাপ্ত ব্যাংকগুলির স্বল্পমেয়াদী এফএক্স ঋণ ৫.৬ শতাংশ কমে ১২.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০২০ সালের শেষের তুলনায় বাসিন্দাদের ব্যাংকের মধ্যে অনাবাসীদের (ব্যাংকিং খাত ব্যতীত) এফএক্স আমানত ৫.২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে ১৬.০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেকর্ড করা হয়েছে, এবং অনাবাসী ব্যাংকগুলির এফএক্স আমানত ১৫.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ১৪.১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। উপরন্তু, অনাবাসীদের তুর্কি লিরা আমানত ৭.৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে এবং ১৪.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেকর্ড করা হয়েছে। অন্যান্য খাতের অধীনে আমদানির কারণে ট্রেড ক্রেডিট ৩৫.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেকর্ড করা হয়েছে যা ২০২০ সালের শেষের তুলনায় ১৮.৯ শতাংশ বৃদ্ধি প্রতিফলিত করে। ঋণগ্রহীতাদের দিক থেকে, সরকারী খাতের স্বল্পমেয়াদী ঋণ, যা সরকারী ব্যাংক নিয়ে গঠিত, ১০.৩ শতাংশ বৃদ্ধি হয়ে ২৫.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে এবং বেসরকারী খাতের স্বল্পমেয়াদী ঋণ ২০২০ সালের শেষের তুলনায় ৫.৩ শতাংশ বেড়ে ৭৩.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। পাওনাদারদের দিক থেকে, বেসরকারী পাওনাদার আইটেমের অধীনে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির স্বল্পমেয়াদী ঋণ ৬.৭ শতাংশ বেড়ে ৬৯.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে এবং অ-আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে স্বল্পমেয়াদী ঋণ ১২.৯ শতাংশ বেড়ে ৫৪.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত স্বল্পমেয়াদী বন্ড ইস্যুর পরিমাণ ছিল ৫৩৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা ২০২০ সালের শেষে পর্যবেক্ষণ করা ৪৬৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই সময়ে, সরকারী পাওনাদারদের স্বল্পমেয়াদী ঋণ ১১৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রেকর্ড করা হয়েছে। সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত, স্বল্পমেয়াদী বৈদেশিক ঋণ স্টকের মুদ্রা ভাঙ্গন ৪২.৬ শতাংশ মার্কিন ডলার, ২৫.৪ শতাংশ ইউরো, ১২.৯ শতাংশ তুর্কি লিরা এবং ১৯.১ শতাংশ অন্যান্য মুদ্রা নিয়ে গঠিত। অবশিষ্ট পরিপক্কতার ভিত্তিতে স্বল্পমেয়াদী বৈদেশিক ঋণ স্টক, মূল পরিপক্কতা সম্পর্কিত ১ বছর বা তার কম সময়ের মধ্যে পরিপক্ক বাহ্যিক ঋণের উপর ভিত্তি করে গণনা করা হয়, তা ১৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেকর্ড করা হয়েছে, যার মধ্যে ১৭.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশে ব্যাংকের শাখা এবং অনুমোদিত সংস্থার আবাসিক ব্যাংক এবং বেসরকারী খাতের অন্তর্গত। ঋণগ্রহীতাদের দিক থেকে সরকারী খাতে ২২.২ শতাংশ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ১৫.৫ শতাংশ এবং বেসরকারী খাতে মোট স্টকে ৬২.৩ শতাংশ ছিল।

লিরার ক্রমহ্রাসমান মান ও বৈদেশিক বিনিয়োগ হ্রাস : অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে লিরা (ট্রাই) এর ক্রমহ্রাসমান মান, যা বিনিয়োগকারীদের মুনাফা মার্জিন অতিক্রম করার হুমকি দেয়। বিনিয়োগ প্রবাহও (Investment inflows) হ্রাস পেয়েছে কারণ এরদোয়ানের ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদ তুরস্কের আর্থিক বিশ্লেষকদের মুক্ত এবং তথ্যগত প্রতিবেদনকে দমন করেছে। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে বিদেশী পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীরা তুরস্কের ১৭.৫ বিলিয়ন ডলারের চলতি হিসাব ঘাটতির ১৩.২ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করে। অথচ ২০১৮ সালের একই সময়ে, তারা ২৭.৩ বিলিয়ন ডলারের বর্ধিষ্ণু ঘাটতির বিপরীতে মাত্র ৭৬৩ মিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ ও সুদের হার বৃদ্ধির বিরুদ্ধে অবস্থান : তুরস্ক অন্যান্য উদীয়মান বাজারের তুলনায় যথেষ্ট বেশি মুদ্রাস্ফীতি অনুভব করেছে। ২০১৭ সালের অক্টোবরে মুদ্রাস্ফীতি ছিল ১১.৯%, যা ২০০৮ সালের জুলাইয়ের পর সর্বোচ্চ হার। ২০১৮ সালে লিরার বিনিময় হার (exchange rate) এই অবনতি ত্বরান্বিত করে, মার্চের শেষের দিকে প্রতি মার্কিন ডলারে ৪.০ লিরা, মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে প্রতি মার্কিন ডলারে ৪.৫ লিরা, আগস্টের শুরুতে প্রতি মার্কিন ডলারে ৫.০ লিরা এবং আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রতি মার্কিন ডলারে ৭.০ লিরা হয়। ২০১৮ এর ১৫ আগস্ট কাতার তুরস্কের অর্থনীতিতে ১৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের অঙ্গীকার করে, যার ফলে লিরার মূল্য ৬% বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই বছরে ২৯ নভেম্বরে, তুর্কি লিরা মার্কিন ডলারের তুলনায় ৪ মাসের সর্বোচ্চ মূল্যে পৌঁছেছে। এটি ডলারের বিপরীতে ৭.০৭৩৮ থেকে ২৯ নভেম্বর ৫.১৭ এ পুনরুদ্ধার হয়েছে, যা ৩৬.৮% বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এরপর ২০১৯ সালে লিরার মান ডলার প্রতি ৫.৬৭৪ হয়। কোভিডকালিন সময়ে মুদ্রাস্ফীতি আরও বেড়ে গিয়ে ২০২০ সালে লিরার মান ডলার প্রতি ৭.০০৯, ও ২০২১ সালে ১৪.২৫৬ লিরায় গিয়ে পৌঁছায়। ২০২১ সালের ১১ অক্টোবর পর্যন্ত, ক্রমবর্ধমান ডলারের হার ৯ লিরা অতিক্রম করে এবং ১২ নভেম্বর পর্যন্ত, এটি ১০ লিরা অতিক্রম করে। ২৩ নভেম্বর, যা “ব্ল্যাক ট্যুসডে” নামেও পরিচিত, ১২ লিরা এবং তারপরে ১৩ লিরা হয়েছিল। এইভাবে ডলার ১ দিনে ২ লিরা বৃদ্ধি পেয়ে রেকর্ডে উন্নীত হয়। ২০২১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ সত্ত্বেও তা ১৪ লিরা ছাড়িয়ে যায় এবং ১৬ ডিসেম্বর ১৫ লিরা ছাড়িয়ে যায়। অর্থনীতিবিদদের মতে, রিসেপ তাইপ এরদোয়ান তুরস্কের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে প্রয়োজনীয় সুদের হার সমন্বয় (interest rate adjustments) করতে বাধা দিয়েছেন বলেই এমনটা ঘটে। এরদোয়ান বলেছিলেন, তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে সুদের হার “সমস্ত মন্দের মা এবং বাবা” হতে হবে, ব্লুমবার্গের সাথে ১৪ মে-র এক সাক্ষাৎকারে তিনি অপ্রচলিত সুদের হারের এই তত্ত্বটি টেনে আনেন, এবং বলেন যে “কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই স্বাধীনতা থাকতে পারেনা এবং এটি রাষ্ট্রপতির দেয়া সংকেতগুলিকে অগ্রাহ্য করতে পারেনা।” তুরস্কে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতির ওপর রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বৃত্তে “পাঠ্যপুস্তকীয় প্রাতিষ্ঠানিক পতনের” একটি সাধারণ ধারণা নিয়ে আসে। দেখা যায় এরদোয়ান রাজনীতিবিদদের উপর ক্রমবর্ধমানভাবে নির্ভরশীল, যেই রাজনীতিবিদদের একমাত্র যোগ্যতা হলো আনুগত্য প্রদান। যোগ্য ও অভিজ্ঞদের বদলে তিনি তার প্রতি অনুগতদেরকেই ক্ষমতায় এনেছেন। সেই সাথে ইসলাম যে ইন্টারেস্ট-ভিত্তিক ব্যাংকিং-কে নিষিদ্ধ করে ও সিরিয়াস ডেড-এন্ড বলে দাবি করে, এরদোয়ান দীর্ঘদিন ধরেই তার পক্ষে বলে যাচ্ছেন। তিনি ইন্টারেস্ট রেট বা সুদের হার বৃদ্ধিকে “দেশদ্রোহিতা” বলেও উল্লেখ করেছেন। এরদোগানের বিরোধিতা সত্ত্বেও তুরস্কের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার দ্রুত বৃদ্ধি করে। ফিনান্সিয়াল টাইমস শীর্ষস্থানীয় উদীয়মান বাজারের আর্থিক বিশ্লেষক টিমোথি অ্যাশকে উদ্ধৃত করে বিশ্লেষণ করেছে যে “তুরস্কের শক্তিশালী ব্যাংক, স্বাস্থ্যকর সরকারী অর্থ, ভাল জনসংখ্যা, ব্যবসায়িক সংস্কৃতি রয়েছে কিন্তু তা গত চার থেকে পাঁচ বছর ধরে অপ্রচলিত এবং আলগা সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা দ্বারা নষ্ট হয়ে গেছে।” জুনের মাঝামাঝি সময়ে লন্ডনের বিশ্লেষকরা পরামর্শ দেন যে বর্তমান সরকারের মাধ্যমে তুরস্ককে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ কমে যাওয়ার আগেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ঋণ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হবে, কারণ এটি এরদোয়ানের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাত শক্তিশালী করবে এবং তুরস্কের অর্থনৈতিক নীতির দৃঢ়তায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে পেতে সহায়তা করবে। অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগম্যান এই উন্মোচিত সংকটকে “আমাদের অনেকবার দেখা একটি ক্লাসিক মুদ্রা এবং ঋণ সংকট” হিসেবে বর্ণনা করেন, তিনি আরও বলেন: “এমন এক সময়ে, নেতৃত্বের মান হঠাৎ করে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে। আপনার এমন কর্মকর্তাদের প্রয়োজন যারা কি ঘটছে তা বুঝতে পারে, একটি প্রতিক্রিয়া উদ্ভাবন করতে পারে এবং যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্যতা রাখতে পারে যে বাজারগুলি তাদের সন্দেহের সুবিধা দেয়। কিছু উদীয়মান বাজারে এই জিনিসগুলি রয়েছে, এবং তারা মোটামুটি ভাবে অশান্তিটি চালিয়ে যাচ্ছে। এরদোয়ান শাসনব্যবস্থায় এর কিছুই নেই।”

মার্কিন-তুর্কি সম্পর্কে টানাপোড়েন, এরদোয়ানের রাজনৈতিক মতবিরোধিতা প্রচারণা ও পশ্চিমা ধাচের অর্থনীতিতে অনাস্থা : এই ক্রাইসিসে সরাসরি সম্পর্ক না থাকলেও একটি বিষয় এখানে আলোচ্য। আফরিনে তুর্কি আক্রমণ মার্কিন-তুর্কি সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি করে এবং সিরিয়ায় ব্যাপক অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি করে। এর ফলে তুরস্ককে অপ্রয়োজনীয় আক্রমণকারী হিসেবে বিশ্বব্যাপী দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়। এই ধরনের ক্যাপিটাল ইনফ্লো এর প্রধান উৎস যেমন জার্মানি, ফ্রান্স এবং নেদারল্যান্ডস এর মত দেশগুলির সাথে এরদোয়ানের রাজনৈতিক মতবিরোধিতা প্ররোচনার কারণে এই বিনিয়োগের প্রবাহ (Investment inflows) ইতিমধ্যে হ্রাস পেয়েছে, যা এই সংকট আরও বৃদ্ধি করে। ২০১৬ সালের অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার পর সরকার অভ্যুত্থানকারীদের সাথে সম্পর্ক ত্বরান্বিত করলেও তাদের সম্পদ জব্দ করে। তুরস্কে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে যে দেশটিতে বিনিয়োগকারী বিদেশী কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে, সেই বিষয়ে এরদোয়ান তেমন গুরুত্ব দেননি। ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পর থেকে তুরস্কের প্রধান ব্যবসায়ী সংগঠন TUSIAD এর সেক্রেটারি জেনারেল এই নীতিগুলোর উদ্দেশ্যকে এরদোয়ানের পশ্চিমা ধাঁচের পুঁজিবাদের প্রতি বিশ্বাস হারানো বলে বর্ণনা করেছেন।

অন্যান্য কারণ : অন্যান্য কারণের মধ্যে আছে – সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের পর লক্ষ লক্ষ অভিবাসী তুরস্কে আসার সাথে সাথে অর্থনীতিতে শরণার্থী সমস্যার নেতিবাচক প্রভাব, এস-৪০০ সংকট যা যুক্তরাষ্ট্র-তুরস্ক সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি করেছে, সিবিআরটি সুদের হারের সিদ্ধান্তগুলি বিদেশী বিনিয়োগকারীদের দ্বারা প্রত্যাশিত দিকে না থাকা, হাগিয়া সোফিয়াকে জাদুঘরের মর্যাদা থেকে মসজিদে রূপান্তর, জো বাইডেনের তুরস্কের উপর ভারী নিষেধাজ্ঞার পক্ষে থাকা, পররাষ্ট্র নীতিতে উত্তেজনা বৃদ্ধি (ফ্রান্স এবং গ্রীসের সাথে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ কর্তৃক নিষেধাজ্ঞার বাক্যবাণ) ও দেশের অর্থনীতিতে সিওভিআইডি-১৯ মহামারীর প্রভাব।

সংকট মোকাবেলায় সরকারের ‘কর্মপরিকল্পনা’

তুরস্ক সরকারের অর্থমন্ত্রী আলবায়রাক সাম্প্রতিক আর্থিক সংকট রোধে একটি নতুন অর্থনৈতিক কর্মসূচি উন্মোচন করেছেন। তিন বছরের পরিকল্পনার লক্ষ্য “মুদ্রাস্ফীতিতে লাগাম টানা, প্রবৃদ্ধিকে উৎসাহিত করা এবং চলতি অ্যাকাউন্ট ঘাটতি হ্রাস করা”। এই পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে সরকারী ব্যয় ১০ বিলিয়ন ডলার হ্রাস করা এবং যে সব প্রকল্পের দরপত্র এখনো সম্পন্ন করা হয়নি তাদের স্থগিত করা। ২০২১ সালের মধ্যে দুই মিলিয়ন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশের রপ্তানি পরিমাণ এবং দীর্ঘমেয়াদী উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এই পরিকল্পনার রূপান্তরমূলক পর্যায়টি মূল্য সংযোজন ক্ষেত্রগুলিতে মনোনিবেশ করবে। স্বল্প মেয়াদে (২০১৮ সালে ৫.৫% থেকে ৩.৮% এবং ২০১৯ সালে ২.৩% এর পূর্ববর্তী পূর্বাভাস থেকে) এই কর্মসূচি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যথেষ্ট পরিমাণে হ্রাস পাবে বলে আশা করা হচ্ছে, তবে ২০২১ সালের মধ্যে ধীরে ধীরে প্রবৃদ্ধি ৫% এর দিকে বৃদ্ধি পাবে।

তুরস্কে পরিণতি

সংকটের উত্থানের সময়, তুরস্কের ঋণদাতারা তাদের ইউএসডি বা ইউরো ভিত্তিক ঋণ পূরণ করতে অক্ষম কর্পোরেশনগুলির পুনর্গঠনের দাবি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, তুরস্কের লিরা দিয়ে তাদের উপার্জনের মূল্য হারানোর কারণে। যদিও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি অনেক বছর ধরে ইস্তানবুল স্টক এক্সচেঞ্জের চালক ছিল, যেগুলো এর মূল্যের প্রায় অর্ধেকের জন্য দায়ী, এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে তারা এর মাত্র এক-তৃতীয়াংশের জন্য দায়ী ছিল। মে এর শেষের দিকে ঋণদাতারা ঋণ পরিশোধের পুনর্বিন্যাস করতে চাওয়া সংস্থাগুলির চাহিদা বৃদ্ধির সম্মুখীন হন। জুলাই মাসের প্রথম দিকে, শুধুমাত্র দেশের কয়েকটি বড় ব্যবসার পাবলিক রিস্ট্রাকচারিং রিকুয়েস্ট ছিল ২০,০০০,০০০,০০০ মার্কিন ডলর, যেখানে অন্যান্য ঋণগ্রহীতাদের ঋণ পাবলিকলি লিস্ট করা হয়নি, অথবা তাদেরটা অত বেশি ছিলনা।

তুরস্কের ব্যাংকগুলোর সম্পদের মান এবং তাদের মূলধনের পর্যাপ্ততার অনুপাত পুরো সংকটকাল জুড়ে খারাপ হতে থাকে। জুনের মধ্যে বড় ঋণদাতাদের মধ্যে সবচেয়ে সংকটাপন্ন Halk Bankası গত গ্রীষ্মের পর থেকে তার মার্কিন ডলার মূল্যের ৬৩% হারিয়েছে এবং বইয়ের মূল্যের ৪০% এ লেনদেন করেছে। তবে এটা বলা কঠিন যে এটি মূলত তুরস্কের অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণেই হয়েছিল, কারণ এই ব্যাংকটি ইরানকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত স্যাংকশন এড়াতে সহায়তা করেছে, আর তাই ইউএস এটি নিয়ে তদন্ত করবে এমন গুজব দ্বারা হাল্কব্যাংকের ভেল্যুয়েশন বা মূল্যায়ন প্রভাবিত হয়েছে। ব্যাংকগুলি ক্রমাগত ব্যবসা এবং ভোক্তা ঋণ এবং বন্ধকী ঋণের হারের জন্য সুদের হার বার্ষিক ২০% পর্যন্ত বাড়িয়েছিল, এভাবে ব্যবসা এবং ভোক্তাদের চাহিদা কমানো করে। আমানতের বৃদ্ধির সাথে সাথে মোট আমানত এবং মোট ঋণের মধ্যে ব্যবধান (যা উদীয়মান বাজারে সর্বোচ্চ ছিল) সংকীর্ণ হতে শুরু করে।

তবুও এই উন্নয়নের ফলে তুরস্কের প্রধান শহরগুলির উপকণ্ঠে অসম্পূর্ণ বা অসংরক্ষিত আবাসন তৈরি হয়েছে এবং বাণিজ্যিক রিয়েল এস্টেট ছড়িয়ে পড়েছে, কারণ এরদোয়ানের নীতিগুলি নির্মাণ খাতে ইন্ধন জুগিয়েছিল, সেখানে এরদোয়ানের অনেক ব্যবসায়িক মিত্র খুব সক্রিয়, যারা অতীতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নেতৃত্ব দিয়েছিল। ২০১৮ সালের মার্চে বাড়ি বিক্রি ১৪% এবং বন্ধকী বিক্রয় এক বছর আগের তুলনায় ৩৫% হ্রাস পায়। মে মাস পর্যন্ত তুরস্কে প্রায় ২,০০০,০০০ অবিক্রিত বাড়ি ছিল, যা নতুন আবাসন বিক্রয়ের গড় বার্ষিক সংখ্যার তিনগুণ ব্যাকলগ। ২০১৮ সালের প্রথমার্ধে নতুন অবিক্রিত আবাসনের মজুদ বাড়তে থাকে, অন্যদিকে তুরস্কে নতুন বাড়ির দাম বৃদ্ধি ভোক্তা মূল্যস্ফীতিকে ১০ শতাংশেরও বেশি পয়েন্ট পিছিয়ে দিচ্ছিল। যদিও ভারী পোর্টফোলিও মূলধন বহির্প্রবাহ (heavy portfolio capital outflows) অব্যাহত ছিল (জুন মাসে ৮৩০,০০০,০০০ মার্কিন ডলার), জুনের মধ্যে সরকারী বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ৬,৯০০,০০০,০০০ মার্কিন ডলার হ্রাস পেয়েছে, লিরার জন্য দুর্বল বিনিময় হারের কারণে জুন মাসে চলতি অ্যাকাউন্ট ঘাটতি হ্রাস পেতে শুরু করে। এটি সুষম অর্থনীতি পাওয়ার লক্ষণ হিসাবে বিবেচিত হয়েছিল। তুর্কি লিরা সেপ্টেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত তার লোকসান পুনরুদ্ধার শুরু করে এবং চলতি হিসাবের ঘাটতি সঙ্কুচিত হতে থাকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ, যা বাজার দ্বারা অনুসরণ করা হয়, ২০১৮ সালের পরে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিট বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ২০২০ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ৭৭.৯ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে ৩৩.৯ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইভিডিএস ওয়ার্কিং গ্রুপের তথ্য অনুযায়ী, ৫ জানুয়ারি, ২০১৮ তারিখে মোট বৈদেশিক মুদ্রা ছিল ৮৭.৪৬৬ বিলিয়ন ডলার এবং ২৩ অক্টোবর, ২০২০ তারিখে তা ছিল ৪৫.০৮৬ বিলিয়ন ডলার।

সহজ অর্থের (easy money) পূর্ববর্তী আর্থিক নীতির ফলে, যে কোনও নতুন ভঙ্গুর স্বল্পমেয়াদী সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা উচ্চতর সুদের হারের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে, এইভাবে তুরস্কের অর্থনীতির জন্য একটি মন্দার প্রভাব তৈরি হয়। জুনের মাঝামাঝি সময়ে ওয়াশিংটন পোস্ট ইস্তানবুলের এক প্রবীণ আর্থিক ব্যক্তিত্বের উদ্ধৃতি বহন করে যে, “বছরের পর বছর ধরে দায়িত্বজ্ঞানহীন নীতি তুরস্কের অর্থনীতিকে অতিরিক্ত উত্তপ্ত করে তুলেছে। উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির হার এবং চলতি অ্যাকাউন্টের ঘাটতি আঠালো প্রমাণিত হতে চলেছে। আমি মনে করি আমরা আমাদের দড়ির প্রান্তে এসে গেছি।”

আত্মহত্যা

২০১৮ সালের জানুয়ারিতে একজন শ্রমিক সংসদের সামনে নিজেকে পুড়িয়ে দেয়। অন্য একজন ব্যক্তি ও হতাইয়ের গভর্নরের অফিসে নিজেকে পুড়িয়ে ফেলে। ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে ইস্তানবুলের ফাতিহের একটি অ্যাপার্টমেন্টে চার ভাইবোনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়, তারা তাদের বিল পরিশোধ করতে না পারায় আত্মহত্যা করে। ২০১৯ সালে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে প্রায় ৫৭% এবং যুব বেকারত্ব দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৭%। অ্যাপার্টমেন্টের বিদ্যুতের বিল বেশ কয়েক মাস ধরে পরিশোধ করা হয়নি। ৯ এবং ৫ বছর বয়সী দুই শিশু সহ চারজনের একটি পরিবারকে একইভাবে এন্টালিয়াতে মৃত পাওয়া গেছে। পরিবারটি যে আর্থিক অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছিল তার বিশদ বিবরণ তারা একটি নোটে লিখে যায়। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে দ্য গার্ডিয়ান রিপোর্ট করে যে একজন বেনামী হিতৈষী তুজলার স্থানীয় মুদিদোকানে কিছু ঋণ পরিশোধ করেছে এবং আত্মহত্যার পর দরজার স্টপে নগদ অর্থের খাম রেখে গেছে। এদিকে সাম্প্রতিক মৃত্যুগুলি জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের কারণে ঘটেছে তা পার্টির কর্মকর্তা এবং প্রচার মাধ্যম অস্বীকার করেছে।

আন্তর্জাতিক পরিণতি

এই সংকট আর্থিক সংক্রামকের যথেষ্ট ঝুঁকি নিয়ে এসেছে। একটি দিক বিদেশী ঋণদাতাদের জন্য ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে, যেখানে ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটেলমেন্টস অনুসারে, আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলি তুরস্কের ঋণগ্রহীতাদের ২২৪ বিলিয়ন ডলার বকেয়া ঋণ দিয়েছিল, যার মধ্যে স্পেনের ব্যাংকগুলি থেকে ৮৩ বিলিয়ন ডলার, ফ্রান্সের ব্যাংকগুলি থেকে ৩৫ বিলিয়ন ডলার, ইতালির ব্যাংকগুলি থেকে ১৮ বিলিয়ন ডলার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের ব্যাংকগুলি থেকে ১৭ বিলিয়ন ডলার, এবং জার্মানির ব্যাংক থেকে ১৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছিল। আরেকটি দিক অন্যান্য উদীয়মান অর্থনীতির পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে, যেখানে উচ্চ মাত্রার ঋণ ইউএসডি বা ইউরোতে ডিনোমিনেটেড হয়, যার ক্ষেত্রে তুরস্ককে হয় “কয়লাখনিতে ক্যানারি” হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে। এমনকি তুরস্কের সংকট এবং এর খারাপ পরিচালনার কারণে তুরস্কের মত অন্যান্য দেশগুলোতে ঝুঁকির ধারণা বৃদ্ধির জন্য আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরাও সেই সব দেশে বিনিয়োগ করতে নিরুৎসাহিত হয়। ২০১৮ সালের ৩১ মে ইনস্টিটিউট অফ ফিনান্সিয়াল রিসার্চ (আইআইএফ) জানিয়েছে যে তুরস্কের সংকট ইতিমধ্যে লেবানন, কলম্বিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় ছড়িয়ে পড়েছে।

বিদেশী চক্রান্ত হিসেবে তুর্কি সরকারের প্রচারণা

এরদোয়ান তুরস্ক সরকার এবং এরদোয়ানের রাজনৈতিইক দল একেপি এই অর্থনৈতিক সংকটের শুরু থেকেই একটি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচার করে আসছে যে, এই সংকটের কারণ তার দেশের অর্থনৈতিক নীতি নয়, বরং ছায়াময় বিদেশী এক্টরদের যারা তুরস্কের ক্ষতি করতে এবং প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সমর্থন কমানোর চেষ্টা করছে। ২৩ মে এর মেজোর লিরা সেল অফের সময় তুরস্কের জ্বালানি মন্ত্রী এরদোয়ানের জামাই বেরাত আলবায়রাক গণমাধ্যমকে বলেন, সম্প্রতি লিরার মূল্য দ্রুত হ্রাস তুরস্কের শত্রুদের চক্রান্তের ফল। ৩০ মে পররাষ্ট্রমন্ত্রী Mevlüt Çavuşoğlu বলেন, বিদেশে সংগঠিত প্রচারণার কারণে লিরার অবমূল্যায়ন ঘটেছে। তিনি আরও বলেন, এই ষড়যন্ত্রের মধ্যে “সুদের হারের লবি” এবং “কিছু মুসলিম দেশ” উভয়ই অন্তর্ভুক্ত থাকবে, যার নাম তিনি অবশ্য বলতে অস্বীকার করেন। ১১ জুন ইস্তানবুলে এক নির্বাচনী প্রচারণা র‍্যালিতে এরদোয়ান বলেন, সম্প্রতি প্রকাশিত ৭.৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যান জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত। আগস্ট মাসে এরদোয়ান “তুরস্কের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক যুদ্ধে বিশ্ব” এর সূত্র ব্যবহার করতে শুরু করেন। এই ধারণার একটি অংশ সম্ভবত মার্কিন নাগরিক অ্যান্ড্রু ব্রুনসনের ঘটনা নিয়ে আমেরিকার সাথে এক সারির সাথে সম্পর্কিত ছিল, যা তুরস্ক-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছিল। বিশেষ সরকারী ব্যক্তিদের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রদানের পাশাপাশি উভয় দেশ অর্থনৈতিক চাপ তৈরি করতে শুল্ক ব্যবহার করেছিল। ভক্স এটিকে “ট্রেড স্প্যাট” হিসাবে বর্ণনা করেছে। ভক্সের জেন কার্বির মতো ধারাভাষ্যকাররা ব্রুনসনের কেসকে এখানে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে ইঙ্গিত করেছেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তুরস্কের উপর ইস্পাত এবং অন্যান্য পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করেছিল। যাইহোক, সারা স্যান্ডার্স আমেরিকান শুল্ককে “জাতীয় প্রতিরক্ষা”, সম্পর্কিত বলে বর্ণনা করেছেন এবং কোন পরিস্থিতিতে এটি পরিবর্তনযোগ্য নয় বলে তিনি উল্লেখ করেছেন যে ব্রুনসনের মুক্তির পরে কেবল নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে। এরদোগান এই শুল্ককে তুরস্কের বিরুদ্ধে “অর্থনৈতিক যুদ্ধ” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এর প্রতিশোধ হিসেবে তুরস্ক আইফোনসহ মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। তুরস্কের শুল্কে আমেরিকান গাড়ি এবং কয়লার মতো পণ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়। হোয়াইট হাউসের এক সংবাদ সম্মেলনে স্যান্ডার্স এগুলিকে “দুঃখজনক” বলে বর্ণনা করেন। স্যান্ডার্স বলেন যে তুরস্কের অর্থনৈতিক সমস্যা একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রবণতার অংশ যা আমেরিকা কোন কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পর্কিত নয়।

২০১৮ এর ২২ আগস্টে জন আর বোল্টন রয়টার্সের সাথে কথা বলতে গিয়ে বলেন, “তুরস্ক সরকার যাজক ব্রুনসনকে মুক্তি না দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি বড় ভুল করেছে… সেই ভুলের দ্বারা চলতে থাকা দিনটিই অব্যাহত রয়েছে, যদি তারা ন্যাটো মিত্র, পশ্চিমের অংশ হিসাবে সঠিক কাজ করে এবং যাজক ব্রুনসনকে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেয় তবে এই সংকট তাৎক্ষণিকভাবে শেষ হতে পারে।” তিনি বলেন যে ন্যাটোতে তুরস্কের সদস্যপদ আমেরিকার জন্য পররাষ্ট্র নীতির প্রধান বিষয় নয়, বরং আমেরিকার দৃষ্টি ছিল এমন ব্যক্তিদের উপর যা যুক্তরাষ্ট্র বলেছে যে তুরস্ক অবৈধ কারণে ধরে রেখেছে। বোল্টন তুরস্কের অর্থনীতিতে কাতারের অর্থ সঞ্চারের প্রচেষ্টার বিষয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এরদোগানের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিন এক লিখিত বিবৃতিতে এই মন্তব্যকে একটি স্বীকারোক্তি হিসেবে বর্ণনা করেছেন যে, কনট্রা স্যান্ডার্স, আমেরিকান শুল্ক আসলে ব্রুনসন মামলার সাথে সম্পর্কিত এবং প্রমাণ যে আমেরিকা তাদের তুরস্কের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিকভাবে যুদ্ধের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল।

২০১৮ সালের এপ্রিলের এক জরিপে দেখা গেছে, ৪২ শতাংশ তুর্কি এবং এরদোয়ানের একেপি এর ভোটারদের ৫৯ শতাংশ লিরার অবমূল্যায়নকে বিদেশী শক্তির চক্রান্ত হিসেবে দেখেছে। জুলাই থেকে আরেকটি জরিপে ৩৬ শতাংশ জরিপের উত্তরদাতা বলেছেন যে তুরস্কের লিরার অবমূল্যায়নের জন্য একেপি সরকার সবচেয়ে বেশি দায়ী, আর ৪২ শতাংশ বলেছেন যে এটি বিদেশী সরকার। বলা হয় যে, এই বিষয়টি সরকারের প্রচার মাধ্যমের উপর সুদূরপ্রসারী নিয়ন্ত্রণের কারণে ঘটেছে।

২০১৮ জুন নির্বাচনী প্রচারণায় অর্থনৈতিক সংকট

রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী Muharrem İnce এবং İYİ পার্টির রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী Meral Akşener উভয়েই নির্বাচিত হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করেন। এদিকে নির্বাচনের পর প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান লন্ডন সফরের এক দিন পর ১৬ মে তুরস্কের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা রোধের পরামর্শ দিয়ে বাজার অস্থিতিশীল করেন। ২৬ মে তার প্রচারণার পথেএক সাক্ষাৎকারে সিএইচপি প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী Muharrem İnce অর্থনৈতিক নীতি সম্পর্কে বলেন, “কেন্দ্রীয় ব্যাংক কেবল সুদের হার বাড়িয়ে সাময়িকভাবে লিরার স্লাইড বন্ধ করতে পারে, কারণ এটি এমন নয় যে সুদের হার খুব বেশি বা খুব কম হওয়ার কারণে অবমূল্যায়ন মূলত উদ্ভূত হয়। সুতরাং, কেন্দ্রীয় ব্যাংক হস্তক্ষেপ করবে, কিন্তু যে কাজগুলি সত্যিই করা দরকার তা রাজনৈতিক এবং আইনি ক্ষেত্রে। তুরস্ককে অবিলম্বে এমন একটি রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে বের করে আনা দরকার যা অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার জন্ম দেয়, এবং এর অর্থনীতিঅবশ্যই স্বাধীন এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানদ্বারা পরিচালিত হতে হবে। আমার অর্থনৈতিক দল প্রস্তুত, এবং আমরা দীর্ঘদিন ধরে একসাথে কাজ করছি।” ১৩ থেকে ২০ মে-র মধ্যে পরিচালিত দেশব্যাপী এক জরিপে ৪৫ শতাংশ অর্থনীতিকে (ক্রমাগত লিরা এবং বেকারত্ব সহ) তুরস্কের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখেছে, যেখানে পররাষ্ট্র নীতিকে দেখেছে ১৮ শতাংশ, বিচার ব্যবস্থাকে ৭ শতাংশ এবং সন্ত্রাস ও নিরাপত্তাকে ৫ শতাংশ। İYİ দলের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী Meral Akşener, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রাক্তন গভর্নর Durmuş Yılmaz এর নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক দল দ্বারা সমর্থিত, ৭ মে তার দলের অর্থনৈতিক কর্মসূচি উপস্থাপন করে তিনি বলেছিলেন যে “আমরা ৪.৫ মিলিয়ন নাগরিকের ভোক্তা ঋণ, ক্রেডিট কার্ড এবং ওভারড্রাফ্ট অ্যাকাউন্ট থেকে ঋণ ক্রয় করব যাদের ঋণ ব্যাংক বা ভোক্তা অর্থায়ন সংস্থাগুলির আইনি তত্ত্বাবধানে রয়েছে এবং যাদের ঋণ ৩০ এপ্রিল ২০১৮ পর্যন্ত সংগ্রহ কারী সংস্থাগুলির কাছে বিক্রি করা হয়েছে। আমাদের নাগরিকদের এই শর্তে সাহায্য করা আমাদের কর্তব্য, কারণ রাষ্ট্র বড় সংস্থাগুলিকে কঠিন পরিস্থিতিতে সহায়তা করেছে।” ১৩ জুন সিএইচপি নেতা Kemal Kılıçdaroğlu বিরোধী দলের দৃষ্টিভঙ্গির পুনরাবৃত্তি করে বলেন যে, ২০১৬ সালের জুলাই থেকে চালু জরুরী অবস্থা তুরস্কের মুদ্রা, বিনিয়োগ এবং অর্থনীতির ক্ষেত্রে একটি বাধা। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন যে নির্বাচনে বিরোধী দলের জয়ের ক্ষেত্রে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে তা তুলে নেওয়া হবে। İYİ পার্টির নেতা এবং রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী Akşener ১৮ মে একই শপথ নিয়েছিলেন, অন্যদিকে সিএইচপি রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী İnce ৩০ মে বলেছিলেন: “বিদেশী দেশগুলো তুরস্ককে বিশ্বাস করে না, এভাবে তারা আমাদের দেশে বিনিয়োগ করে না। যখন তুরস্ক নিয়ম আইনের একটি দেশ হয়ে উঠবে, বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করবে এইভাবে লিরা মূল্য অর্জন করবে।” জুনের শুরুতে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান এক সাক্ষাৎকারে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে জরুরী নিয়ম তুলে নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করা হবে। তবে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন: “জরুরী অবস্থার কি সমস্যা?”

দুর্নীতি ও ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের বিবৃতি

এপ্রিলের শুরুতে পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির (এইচডিপি) রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী Selahattin Demirtaş কারাগার থেকে একটি চিঠিতে লিখেছেন— যেখানে ২০১৬ সাল থেকে তাকে দোষী সাব্যস্ত না করে রাখা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে শব্দ দিয়ে সহিংসতা উস্কে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে— তিনি বলেন, “তুরস্কের তরুণদের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে দুর্নীতি যা একেপি শাসনের সাথে যুক্ত হয়েছে।” মে’র শেষের দিকে রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) ডেপুটি চেয়ার Aykut Erdoğdu তুরস্কের ফিনান্সিয়াল ক্রাইমস ইনভেস্টিগেশন বোর্ডকে (এমএএসএকে) ফোন করে ২৩ মে লিরার মূল্য দ্রুত হ্রাস এবং আংশিক পুনরুদ্ধারের মধ্যে করা বিনিময় হার লেনদেনের তদন্ত করেন। তিনি বলেন, বাজারের অংশগ্রহণকারীরা ইনসাইডার ট্রেডিং করছেন, যারা তুরস্কের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৩০০ বেসিস পয়েন্ট সুদের হার বৃদ্ধির কথা আগে থেকেই জানতেন।

সূত্র

উইকিপিডিয়া ইংলিশ, উইকিপিডিয়া টার্কি ও তুরস্কের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইট

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.