অবিশ্বাস করুন বা না করুন, প্রাচীন ইতিহাস বিবেচনায় নাস্তিকতা মানুষের কাছে ধর্মের মতই স্বাভাবিক ছিল

Assembly-of-twenty-gods.jpg

একটি নতুন গবেষণায় প্রস্তাব করা হয় যে, প্রাচীন বিশ্বের মানুষ সবসময় ঈশ্বরে বিশ্বাস করে নি। এতে এই ধারণার উপর সন্দেহ জাগে যে ধর্মীয় বিশ্বাস মানুষের জন্য একটি “ডিফল্ট সেটিং”।

“প্রারম্ভিক সমাজ অন্য সমাজের চেয়ে নাস্তিকতা ধারণে অনেক বেশি সক্ষম ছিল, স্বাভাবিক বিবেচিত জীবন প্রণালীর মধ্যে”- Tim Whitmarsh

ইতিহাসের বড় অংশ অলিখিত হওয়া সত্ত্বেও, প্রাচীন বিশ্বে নাস্তিকতা বহু ঈশ্বরবাদী সমাজে বিস্তার লাভ করে – একটি নতুন গবেষণা প্রস্তাব করা হয়। এটি মানুষের ধার্মিক হওয়ার প্রবণতা সম্পর্কে সন্দেহ সৃষ্টি করে।

গ্রিক সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সেন্ট জনস কলেজ, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো Tim Whitmarsh-এর লেখা একটি নতুন বইয়ের কেন্দ্রীয় দাবি এটি। এতে তিনি নাস্তিকতা সর্ম্পকে যে প্রস্তাব করেন তা হল – যা সাধারণত একটি আধুনিক দর্শন হিসেবে দেখা হয় –  প্রাচীন গ্রীস ও প্রাক খ্রিষ্টীয় রোমে এটি শুধু স্বাভাবিক ছিল না, বরং সম্ভবত অধিকাংশ সভ্যতার তুলনায় ঐ সমাজে আরও সমৃদ্ধি লাভ করে ছিল।

ফলস্বরূপ, গবেষণায় দুটি ধারণা যা বর্তমানে নাস্তিক এবং আস্তিকদের মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি করছে তা হল: প্রথমত, ধারণা যে, নিরীশ্বরবাদ একটি আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি, এবং দ্বিতীয়ত, “ধর্মীয় বিশ্বজনীনতা” এর ধারণা – যে মানুষ স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বাসী হয়।

কেমব্রিজ থেকে সমপ্রতি “Battling the Gods” নামক একটি বই প্রকাশ করা হয়।

Battling-the-gods-cover.jpg

বইটিতে বলা হয়েছে, অবিশ্বাসের দর্শন আসলে অতি প্রাচীন। যেমন Xenophanes এর (৫৭০-৪৭৫ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) নিরীশ্বরবাদী লেখা প্রারম্ভিক উদাহরণ, এটি দ্বিতীয় মন্দির-যুগের ইহুদীধর্মের সঙ্গে সমকালীন, এবং উল্লেখযোগ্যভাবে খ্রিষ্টান এবং ইসলামের অনেক আগের। এমনকি প্লেটো ৪র্থ শতাব্দীতে লেখেন যে সমকালীন অবিশ্বাসীরা “দেবতাদের সম্পর্কে এমন মত ধারণকারী প্রথম ছিল না।”

কারণ নাস্তিকতার প্রাচীন ইতিহাস মূলত লেখা হয়নি, তবে Whitmarsh প্রস্তাব করেন যে, এটি বর্তমান একেশ্বরবাদী / নাস্তিক বিতর্কে উভয় পক্ষের মধ্যে অনুপস্থিত। নাস্তিকরা মনে করে ধর্ম মানব উন্নয়নের আদিম মঞ্চ থেকে এসেছে। “ধর্মীয় বিশ্বজনীনতা” ধারণা অনুযায়ী, প্রাথমিক সমাজের মানুষ ঈশ্বরে বিশ্বাস করতো কারণ ঈশ্বরে বিশ্বাস করা সহজাত প্রবৃত্তি বলে মনে করা হয়।

উভয় দৃষ্টিভঙ্গি অসত্য: Whitmarsh-এর প্রস্তাব: “আস্তিকেরা নাস্তিকতা সম্পর্কে এমন ভাবে কথা বলতো যেন এটি আধুনিক পাশ্চাত্য সংস্কৃতির একটি বিশেষ উদ্ভূত পর্যায় যা এক সময় অতিক্রান্ত হবে, কিন্তু যদি আপনি কাউকে ভাল ভাবে ভাবতে বলেন, স্পষ্টভাবে লোকেরাও ভাবে এই চিন্তা অনাদিকাল ধরে চলে আসছে।”

প্রাচীন নাস্তিক্যবাদ আন্দোলন

Whitmarsh এর বইয়ে এক হাজার বছরের প্রাচীন ইতিহাস সার্ভে করে এটি প্রমাণ করা হয়েছে, যা বিভিন্ন দার্শনিক আন্দোলন, লেখক এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অবিশ্বাস কাটিঁয়ে দেয়।

বহু ঈশ্বরবাদী গ্রিক সমাজের মৌলিক বৈচিত্র্যতার কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। ৬৫০ থেকে ৩২৩ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের মধ্যে, গ্রীসে আনুমানিক ১,২০০ পৃথক নগর রাষ্ট্র ছিল। প্রত্যেকের নিজস্ব রীতিনীতি, ঐতিহ্য ও শাসন ব্যবস্থা ছিল। ধর্ম ব্যক্তিগত রীতি, গ্রামের ধর্মানুষ্ঠান এবং বিভিন্ন উৎসবের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল।

এর অর্থ এই দাঁড়ায় যে, সে সময় ধর্মীয় গোঁড়ামি ছিল না। গ্রীকরা হোমারের মহাকাব্য পেয়েছিল যেখানে দেবতাদের কোন সুসঙ্গত নৈতিক দৃষ্টিতে দেখা হয়নি। বরং প্রকৃতপক্ষে তাদেরকে প্রায়ই অনৈতিক হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে। তাদেরকে মানুষের মতোই কল্পনা করা হয়েছে। একইভাবে, সেখানে কোন পুরোহিত ছিল না, মানুষ কিভাবে বাঁচবে বলে দেওয়ার জন্য। “গ্রিক জগতে পুরোহিত কর্তৃক নির্ধারিত জীবন শৈলী অজ্ঞাত ছিল।” Whitmarsh বলেন।

গ্রিসে নাস্তিক্যবাদ

ফলস্বরূপ, যখন যদিও কিছু মানুষ নাস্তিকতাকে ভুল হিসেবে মনে করতো, কিন্তু এটাকে তারা খুব কমই নৈতিকভাবে ভুল হিসেবে দেখতো। বস্তুত, এটা সাধারণত ঈশ্বর বিষয়ে মানুষ একটি মতামত হিসেবে দেখা হতো। শুধু মাঝে মাঝে এটা আইনত অপরাদ ছিল যখন এথেন্সে খ্রিষ্টপূর্বাব্দ ৫ম শতাব্দীতে সক্রেটিসকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছিল। নগরের দেবতাদের স্বীকৃতি না দেওয়ার জন্য তাঁকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা হয়।

Whitmarsh অনুযায়ী, প্রাচীন নাস্তিকেরা মৌলিক কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হয়, যা আজও মানুষ জিজ্ঞাস করে। যেমন কিভাবে ধর্মের মন্দ দিক তোলে ধরা যায়।

এই সম্পর্কে প্রাথমিক চিন্তাবিদদের কাজ থেকে কিছু ধারণা পাওয়া যায়। যেমন, Anaximander এবং Anaximenes মতো চিন্তাবিদেরা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন বজ্রপাত এবং ভূমিকম্প দেবতাদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয়, এটি একটি প্রাকৃতিক ঘটনা। বিখ্যাত লেখক ইউরিপিডিসের নাটক প্রকাশ্যে ঐশ্বরিক কার্যক্রমের সমালোচনা করে। সম্ভবত প্রাচীন বিশ্বের নাস্তিকদের সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রুপ, Epicureans, যুক্তি দেখিয়ে ব্যাখ্যা করেন যে অদৃশ্য দেবতাদের মানব জীবনের উপর কোন নিয়ন্ত্রণ নেই।

রোমের ধর্ম ধারণ

Whitmarsh প্রস্তাব করেন যে, এসময় প্রাচীন নাস্তিক্যবাদ যুগের সমাপ্তি ঘঠে। কারণ, যে বহু ঈশ্বরবাদী সমাজে সাধারণত একে বরদাস্ত করা হতো তা একেশ্বরবাদী, সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ধারা প্রতিস্থাপিত হয়ে গেছে। এই একেশ্বরবাদী ধর্ম একজন ঈশ্বরকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি রাখে। ৪র্থ শতাব্দীতে রোমের খ্রীষ্টধর্ম গ্রহণ ছিল; “সিসমিক”, কারণ তারা সাম্রাজ্যকে একত্রে রাখার জন্য ধর্মীয় স্বৈরতন্ত্র ব্যবহার করেছিল।

৩৮০ সালে সম্রাট Theodosius I একটি বিধান জারি করে ক্যাথলিকদের এবং অন্যান্য দের মধ্যে পার্থক্য করে দেন, যাদের তিনি “বিকৃতমস্তিষ্ক পাগল”(dementes vesanosque) মনে করতেন। এ ধরনের বিধানে অবিশ্বাসের জন্য কোনো জায়গা থাকে না।

মূল আর্টিকলটির লিংক: http://www.ancient-origins.net/human-origins-religions/disbelieve-it-or-not-ancient-history-suggests-atheism-natural-humans-020747

–সুস্মিতা দেব

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.