সময় যতই যাচ্ছে ততই ধুসর হচ্ছে এই নীল পৃথিবী। আর মড়ার ওপর খাড়ার ঘা হিসেবে রয়েছে জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহারে ব্যাপক পরিবেশগত ক্ষতি আর সেই জ্বালানী ফুরিয়ে যাবার ভয়। তবে বিজ্ঞানীরাও বসে নেই। এরই ধারাবাহিকতায় এল ইউনিভার্সিটি অব বাথের একদল গবেষকের হাতে তৈরি নতুন এক “মাইক্রোবায়েল ফুয়েল সেল” যাতে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা হবে – আর কিছু নয় মানুষের প্রস্রাব। আশা করা হচ্ছে মাত্র ১ বা ২ ইউরোর মধ্যেই পাওয়া যাবে মাত্র ১ বর্গইঞ্চির এসব “পাওয়ার সেল” যা আপনার মোবাইল ফোন কিংবা একটা এনার্জি লাইট জ্বালানোর জন্য যথেষ্ট হবে।
মূলত মাইক্রোবায়েল ফুয়েল সেলগুলো হল এমন ধরণের বিদ্যুৎকোষ যেখানে মূত্রের মত জৈববস্তুকে বিদ্যুৎে পরিণত করতে ‘বৈদ্যুতিক’ ব্যাকটেরিয়ার প্রাকৃতিক জৈবনিক ক্রিয়াকে কাজে লাগানো হয়। এই বিদ্যুৎকোষগুলো উৎপাদন এবং দামেও যেমন সস্তা তেমনি এর জ্বালানী বর্জ্যও অন্য বিদ্যুৎ সোর্স গুলোর তুলনায় একদম শূন্যের কাছাকাছি।
গবেষণাটির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টির কেমিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট, ডিপার্টমেন্ট অব কেমিস্ট্রি এন্ড দ্য সেন্টার ফর সাসটেইনেবল কেমিকেল টেকনোলজিস (CSCT) কাজ করেছে লন্ডনের বিখ্যাত কুইন মেরি ইউনিভারসিটি এবং ব্রিস্টল বায়োএনার্জি সেন্টারের সাথে। গবেষণাটির লক্ষ্য ছিল এমনই এক নতুন ধরণের বিদ্যুৎকোষ বানানো যেটা হবে আরও সাশ্রয়ী কিন্ত অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন। এজন্য তারা কোষটির ‘ক্যাথোডে’ সচরাচর প্লাটিনাম এর পরিবর্তে এমন এক কার্বন প্রভাবক ব্যবহার করেছেন যেটা অত্যন্ত সাশ্রয়ী এবং পুনঃব্যবহারযোগ্য। এই প্রভাবকটি পাওয়া গেছে গ্লুকোজ এবং ওভালবুমিন(ডিম থেকে পাওয়া প্রোটিন) এর সমন্বয়ে।এই নতুন প্রভাবক ব্যবহারের ফলে সদ্য আবিষ্কৃত বিদ্যুৎ কোষের মাত্র প্রতি ঘনমিটারে দুই ওয়াট পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা সম্ভব হবে যা মোবাইল ফোনের মত ডিভাইসগুলো অনায়াসে চালানো যাবে।
তবে এই কোষের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এটা অসম্ভব রকমের সাশ্রয়ী এবং জ্বালানী হিসেবে মানুষ বর্জ্যকে ব্যবহার করার সক্ষমতা। গবেষকরা তাই এটাকে আরও শক্তিশালী করতে কাজ করে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে CSCT এর প্রধান এবং কো ডিরেক্টর ডঃ টিম মেইস বলেছেনচ, নবায়নযোগ্য “pee power” যা বাংলায় করলে দাঁড়ায় মূত্রশক্তি নিশ্চয়ই উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলার ক্ষমতা রাখে যারা এখন জ্বালানীর সহজলভ্যতার দিক দিয়ে পিছিয়ে আছে।
সুতরাং আমরা আশা করতেই পারি অচিরেই আমাদের এই অযাচিত জৈব তরলটিকে নিশ্চয়ই নিজেদের উপকারে লাগাতে পারব।
“মূত্রশক্তির” জয় হোক।
জার্নাল রেফারেন্স:
http://dx.doi.org/10.1016/j.electacta.2016.01.112
-আল তৌফিক
Leave a Reply