স্কিজোফ্রেনিয়া জিন বলতে কিছু নেই কারণ…

12963515_1160103254002110_3009431982474095667_n

বিংশ শতাব্দির প্রথম দিকে স্কিজোফ্রেনিয়ার জেনেটিক থিওরিগুলো খুব জনপ্রিয় ছিল। এই থিওরিগুলো দেয়া হয়েছিল উনিশ শতকের একটি ধারণা ইউজেনিক্স এর উপর ভিত্তি করে। ইউজেনিক্স ধরে নিত ইনসেনিটি, ইডিওসি, প্রস্টিটিউশন, এলকোহলিজম, এপিলেপ্সি ও অন্যান্য সাইকিয়াল বা সাইকোলজিকাল “বিচ্যুতিগুলো” ঘটে একটি বিকৃত বা টেইন্টেড জিন পুলের কারণে।

এখন আমরা কোয়ান্টিটেটিভ জেনেটিক্স বলতে যা বুঝি তার ভিত্তি স্থাপন করেন সেই সময়ের সাইকিয়াট্রিক জেনেটিসিস্টরা। কোয়ান্টিটেটিভ জেনেটিক্সে স্কিজোফ্রেনিয়ার মত ট্রেইট বা বৈশিষ্ট্যের ভেরিয়েশনের পরিমাণ হিসাব করার জন্য পরিবার, যমজ, এডপ্টেড চিল্ড্রেন ইত্যাদি নিয়ে স্টাডি করা হয় যে ট্রেইটগুলোর জন্য কোন জিনের সম্পর্ক থাকতে পারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফ্রাঞ্জ কালমান, এলিয়ট স্লাটারের মত বিখ্যাত সব ইউজেনেসিস্ট সাইকিয়াট্রিস্টরা যে স্টাডি করেছিলেন তাতে স্কিজোফ্রেনিয়ার অনেক বড় হেরিটেবিলিটি ধরা পরে। গবেষণায় বের হয়ে আসে স্কিজোফ্রেনিয়ার ক্ষেত্রে হেরিটেবিলিটি শতকরা ৮০ ভাগ। যার মানে হল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটা হয় জিনগত কারণে, এই ডিজর্ডারের ক্ষেত্রে তেমন কোন সামাজিক কারণ নেই।

পরবর্তীতে ডিএনএ স্ট্রাকচারের এর ডিকোডিং যুগ আসলে তৈরি হয় সাইকিয়াট্রির একটি নতুন শাখা, মলিক্যুলার সাইকিয়াট্রি। এই নতুন শাখাটি ইউজেনিক্সকে পরোয়া করে না। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জিনোম ওয়াইড এসোসিয়েশন স্টাডিজ (GWAS – genome wide association studies) এর উন্নয়নের ফলে একই সাথে প্রচুর জেনেটিক ভেরিয়েশন হিসাব করা সম্ভব হয়েছে। অনেক বড় স্যাম্পল ব্যাবহার করে (দশ হাজার রোগী) খুব ক্ষুদ্র এফেক্ট থাকা অনেক জিনকেই স্কিজোফ্রেনিয়ার সাথে সম্পর্কিত করা গেছে। এই ডেটাগুলোকে মিলিয়ে একটি পলিজেনিক রিস্ক স্কোর তৈরি করা হয়েছে যা একজন মানুষের পূর্ণাঙ্গ জেনেটিক রিস্ককে ব্যাখ্যা করতে পারে।

বড় বড় দাবী কিন্তু এভিডেন্সের অভাব

গতবছর ইউনিভার্সিটি অফ কার্ডিফের গবেষকরা স্কিজোফ্রেনিয়ার জন্য দায়ী রোজেটা স্টোন জিনটি খুঁজে বের করেছেন বলে দাবী করেন। এবছর হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা নিউইয়র্ক টাইমসের একটা আর্টিকেলে দাবী করেন যে তারা “একটি ঐতিহাসিক গবেষণা সমাপ্ত করেছেন যা একটি অতিপরিচিত মানসিক সমস্যার বায়োলজিকাল ব্যাখ্যা দেয়”। লন্ডনের স্যাংগার ইনস্টিটিউট নামে একটি রিসার্চ গ্রুপের গবেষকরা বলেন তারা SETD1A নামে একটি জিন খুঁজে পেয়েছেন যা স্কিজোফ্রেনিয়ার জন্য একটি একক এবং শক্তিশালী জিন।

কিন্তু এই দাবীগুলোকি ওয়ারেন্টেড? গবেষণাগুলোকে খুব গভীরভাবে পর্যালোচনা করে বোঝা যায় এই দাবীগুলো সম্পর্কে তেমনভাবে নিশ্চিন্ত হওয়া যায় না। রোজেটা স্টোন জিন নিয়ে গবেষণাটি করা হয়েছিল ইঁদুরের উপরে আর ২০১২ সালের একটি পেশেন্ট স্টাডিজ রিভিউতে দেখা যায় DISC1 নামের সংশ্লিষ্ট জিনটির সাথে স্কিজোফ্রেনিয়ার কোন সম্পর্ক নেই। হার্ভার্ডের গবেষণায় জেনেটিক এফেক্ট খুব কম ছিল কিন্তু আবিষ্কারটির ব্যাখ্যা দেয়ার সময় গবেষকরা তা বাড়িয়ে বলেন। আর SETD1A নামের জিনটি ৮০০০ রোগীর মধ্যে মাত্র ১০ জনের বেলায় পাওয়া যায় যাদের সাতজনই স্কিজোফ্রেনিয়ার সাথে লার্নিং ডিফিকাল্টিজেও ভুগছিলেন।

আসলে চারপাশে তাকালে দেখা যায়, এপর্যন্ত পাওয়া মলিক্যুলার জেনেটিক রিসার্চগুলো সাংবাদিকদের জন্য খুব একটা ভাল মানের “স্কিজোফ্রেনিয়া জিন” এর গল্প তৈরি করতে পারে নি। GWAS যে সাইকিয়াট্রিক ডিজর্ডারের জেনারেল রিস্কের সাথে সম্পর্কিত শতশত ক্ষুদ্র এফেক্টের কমন জেনেটিক ভেরিয়েন্টস এর তথ্য দিয়েছিল সেগুলো শুধুমাত্র স্কিজোফ্রেনিয়া নয় ডিপ্রেশন এবং অটিজমের মত ডেভলপমেন্টাল প্রবলেমের সাথেও সংশ্লিষ্ট।

“স্কিজোফ্রেনিয়া জিন” বলতে কিছু নেই। প্রথমদিকের কোয়ান্টিটিভ জেনেটিক্স এর গবেষণাগুলোতে পাওয়া স্কিজোফ্রেনিয়ার উচ্চ হেরিটেবিলিটি পরিবেশগত প্রভাবকে বাতিল করে দিতে পারে না। এটা বরং গবেষকদের সামাজিক কারণগুলোকে সিরিয়াসলি নিতে নিরুৎসাহিত করেছে। কিন্তু এখন আমরা একটি প্রমাণিত সত্য জানি যেটা হল অসচ্ছল ও শহুরে পরিবেশ, মাইগ্রেশন, সাম্প্রতিক সময়ের প্রতিকূল অভিজ্ঞতা, চাইল্ডহুড ট্রমার (দৈহিক ও যৌন উৎপীড়ন এবং পিয়ার গ্রুপ দ্বারা বুলিং) মত একটি বড় রেঞ্জের সোশ্যাল রিস্ক ফ্যাক্টরের সাথে সাইকোসিসের একটি শক্তিশালী সম্পর্ক আছে। তাহলে এখনও মানসিক সমস্যাগুলো সম্পর্কে জেনেটিক স্টোরির এতটা আপিল কেন?

ইউজেনিক্স কি এখনও আমাদের মধ্যে আছে?

নাৎসিদের “ফাইনাল সল্যুশন” এ পৌঁছানোর পূর্বের রিহার্সাল হিসেবে মেডিকেল কিলিং সেন্টারগুলোতে সাইকিয়াট্রিক পেশেন্টদের হত্যার কারণে ইউজেনিক্স তুমুলভাবে সমালোচিত হয়েছিল। কিন্তু এখনও কোথাও কোথাও ইউজেনিক্স এর চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায়। ২০০৭ সালে ডিএনএ স্ট্রাকচারের সহ-আবিষ্কারক জেমস ওয়াটসন তার সাইকোটিক পুত্র নিয়ে আলোচনা করার সময় বলেন, যদি তার সময়ে জেনেটিক টেস্ট এভেইলেবল থাকত, তাহলে তিনি তার সন্তানের এবরশন করতেন। আর গতবছর কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির রোজেটা স্টোন এনাউন্সমেন্ট এর রিপোর্ট করা একটি ডেইলি মেইল আর্টিকেলের শিরোনাম ছিল “শিশুদের জন্য স্কিজোফ্রেনিয়ার জিন টেস্ট: মানষিক সমস্যার জিনগুলো বাচ্চাদের মধ্যেও কার্যকর থাকার সফল আবিষ্কার”। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যাতে সেই পুরনো অতীত আবার না ফিরে আসে।

– রিচার্ড বেনটল, ইউনিভার্সিটি অব লিভারপুল এবং ডেভিড পিলগ্রিম, প্রফেসর অব হেলথ এন্ড সোশ্যাল পলিসি, ইউনিভার্সিটি অব লিভারপুল

আর্টিকেলটি দ্য কনভারসেশনে ইংরেজিতে প্রকাশিত হয়। মূল আর্টিকেলটি পড়ুন এখানে :
https://theconversation.com/there-are-no-schizophrenia-genes-heres-why-57294

-Sumit Roy

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.