পম্পেই এর ধ্বংসাবশেষ এবং একজন “মাস্টারবেটিং ম্যান”

ইতিহাস কথা বলে…

৭৯ খ্রিষ্টাব্দে ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে ধ্বংস হয় পম্পেই নগরী। নগরী ধ্বংস হয়েছিল কিন্তু সেই ধ্বংসীভূত নগরী আমাদেরকে দিয়ে গিয়েছে সেই সময়ের একটি স্থির মুহূর্ত যার ঠিক আগের মুহূর্তেই সমগ্র পম্পেই মুখর ছিল জীবনের কলরোলে, আর ঠিক পরের মুহূর্তেই যেন সেই কলরোল থেমে যায় মৃত্যুর নিরবতায়। তবে এই অগ্ন্যুৎপাত আমাদের দিয়ে গিয়েছে এই পম্পেই নগরীর দৈনন্দিন জীবনের কিছু স্থির চিত্র যেগুলোকে দেখে আমরা যেন এক নিমেষে চলে যাই আজ থেকে ১,৯৩৮ বছর পূর্বের ৭৯ খ্রিষ্টাব্দের পম্পেই নগরীতে। হ্যাঁ, এই পম্পেই এর ধ্বংসাবশেষ থেকে প্রায় ১,৫০০ জন মানুষের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া গেছে যাদের কাঠামো এখনও ঠিক সেভাবেই আছে যেমনটা ছিল মৃত্যুর ঠিক আগ মুহূর্তে। এদের কোন কোনটা সাংঘাতিক হৃদয়স্পর্ষী। তাদের কেউ কেউ সময় কাটাচ্ছিলেন পরিবারের সাথে, দুজনকে দেখা গেছে মৃত্যুর সময় আলিঙ্গনরত অবস্থায়।

প্রায় দুহাজার বছর পরও মৃতদের মৃত্যুর সময়কার শারীরিক কাঠামোর এভাবে অবিকৃত থাকার কারণটাও ব্যাখ্যা করা উচিৎ। এরা আগ্নেয়গিরির পাইরোক্লাস্টিক সার্জের ফলে আকষ্মিকভাবে মারা যায়। এরপরই আগ্নেয়গিরির ছাই এদের উপর এসে পড়ে, অর্থাৎ এরা ছাই এর নিচে চলে যায়। কিন্তু এরা অবিকল থাকে কারণ এই ছাই পরে শক্ত হয়ে পোরাস বা ছিদ্রযুক্ত পাথরে পরিণত হয় যা পিউমিস নামে পরিচিত। মৃতদেহের উপরে ছিদ্রযুক্ত শেল থাকায় এর ছিদ্রগুলোর মধ্য দিয়ে শরীরের ভেতরের নরম অংশগুলো গলে আস্তে আস্তে ছিদ্রগুলো দিয়ে বের হয়ে যায়, বিনিময়ে সেই শেল শরীরের অবয়ব বা পোসচারটা ধারণ করে নেয়।

যাই হোক এদের একটি ছবি এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতে দেখা যাচ্ছে। আর সেটা হল একজন সাম্ভাব্য হস্তমৈথুনরত মানুষের ধ্বংসাবশেষ। লোকটি “মাস্টারবেটিং ম্যান” নামে এখন যথেষ্ট পরিচিতি পেয়েছেন। এই পোস্টের সাথে যে ছবিটি দেয়া হয়েছে, সেখানে সেই ধ্বংসাবশেষটিই দেখা যাচ্ছে।

ছবিটিতে আসলে দেখা যাচ্ছে, লোকটি তার ক্রাউচ রেজিয়নের উপরে ধরে আছেন। আসলে তিনি কি করছেন তা বোঝা যাচ্ছে না, হয়তো কখনই আমরা নিশ্চিত হতে পারব না। কিন্তু খুব সম্ভব যা ভাবা হচ্ছে তিনি তাই করছিলেন। সে যাই হোক, এখানে কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করার অবকাশ রয়েছে। পম্পেই এর ভিক্টিমরা কিভাবে মারা গিয়েছিল তা নিয়ে যে তৈরি করা থিওরি অনুসারে লোকগুলো আকষ্মিকভাবেই উষ্ণ গ্যাসের বিষ্ফোরণে মারা যায়, যা তারা কখনই বুঝে উঠতে পারে নি। ২০০১ সালের একটি গবেষণায় ভষ্ম থেকে ৮০টি দেহাবশেষ তুলে পরীক্ষা করা হয় যেগুলো এরকম কঠিন হয়ে গিয়েছিল। এগুলো থেকে এমন কোন চিহ্ন পাওয়া যায় নি যা দেখে মনে হয় যে তারা মৃত্যুর পূর্বে কোনরকম ব্যাথা অনুভূত করেছিল।

নেপলস দ্বিতীয় ফেডেরিকো বিশ্ববিদ্যালয়ের ডঃ আলবার্টো ইনকরোনাতো জানান, “এদের মধ্যে আত্মরক্ষামূলক কোনরকম ইচ্ছাকৃত প্রতিক্রিয়া বা দুঃখের চিহ্ন দেখা যায় নি, যা থেকে বোঝা যায় সচেতন প্রতিক্রিয়া তৈরির জন্য এদের কাছে খুব কম সময়ই ছিল। এর ফলে শহরের খুব কমই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল, কিন্তু এই লোকগুলো তাৎক্ষণিকভাবে মারা গিয়েছিল।”

পম্পেইতে যারা উষ্ণ গ্যাসের বিষ্ফোরণে মারা যায় নি, তারা দালানের ভেঙ্গে পড়ার ফলে বা ছাইয়ের কারণে দম বন্ধ হয়ে মারা গিয়েছিল। কিন্তু এই “মাস্টারবেটিং ম্যান” এর আশেপাশে সেরকম কোন ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায় নি। সুতরাং ধরে নেয় যায়, এই লোকটি সেই সব ভাগ্যবানদের মধ্যে একজন ছিলেন যিনি আকষ্মিকভাবেই মারা গিয়েছিলেন, আর আসন্ন মৃত্যুর ব্যাপারে কোন ধারণাই তার ছিল না।

হস্তমৈথুন করতে করতে ব্যাথাহীন মৃত্যু… এর চেয়ে সুখের মৃত্যু আর কী হতে পারে…

 

তথ্যসূত্র:

  1. https://twitter.com/PersianRose1/status/881330662321655808/photo/1
  2. http://www.telegraph.co.uk/news/science/science-news/4762420/Refugees-trying-to-shelter-from-Vesuvius-were-fried-alive-by-volcanic-ash.html

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.