আমাদের পূর্বপুরুষকে আফ্রিকা ছেড়ে বের হতে সাহায্য করা জিনই আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধির কারণ

একটা একক জিন মিউটেশন প্রাচীন মানুষদের ইউরোপ ও এশিয়ায় বরফ যুগের সময় টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করেছিল। এটা যেমন ঠিক আছে, তেমন সম্ভবত এটাই আবার আধুনিক মানুষদের ক্ষেত্রে আর্থ্রাইটিসের ঝুকি বাড়িয়েছে।

স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিন এবং হার্ভাড ইউনিভার্সিটি এর গবেষকগণ একটা জিন মিউটেশন খুঁজে পেয়েছেন যা তুলনামূলকভাবে ছোট অঙ্গের জন্য কোডিং এর মাধ্যমে আমাদের পূর্বপুরুষদের ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় টিকে থাকতে সাহায্য করেছে। নেচার জেনেটিকস জার্নালে প্রকাশিত হওয়া এক নতুন গবেষণায় এটি প্রকাশিত হয়।

গত বরফ যুগের সময় ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ বছর পূর্বের সময়ের মধ্যে আধুনিক মানুষ আফ্রিকা থেকে বের হয়। এতে তাদের ঠান্ডা আবহাওয়ার সাথে মোকাবেলা করতে হয়। বেষকদের মতামত অনুযায়ী তুলনামূলকভাবে ছোট অঙ্গের জন্য একটি জেনেটিক ভেরিয়েন্ট তাদের ফ্রস্টবাইট মোকাবেলায় সাহায্য করতে পারে। ক্ষুদ্র হাড় থাকার অর্থ হচ্ছে বরফে পিছলে গেলে হাড়ের ভাঙ্গার সম্ভাবনা কম হওয়া।

এই জিনের নাম GDF5, জিনটি হারের বৃদ্ধি ও জয়েন্ট গঠনের সাথে সম্পর্কিত। আবার সেই সাথে এটি অস্টিওআর্থাইটিসের ঝুকিও বৃদ্ধি করে। অস্টিওআর্থাইটিস হচ্ছে একটি সমস্যা যার ফলে হাড়ের জয়েন্টেগুলো বেদনাদায়ক ও শক্ত হয়ে যায়। মানুষের ক্ষেত্রে GDF5 জিনের মিউটেশনের ফলে অস্টিওআর্থাইটিসের ঝুঁকি ১.২ থেকে ১.৮ গুণ বেড়ে যায় বলে দেখা গেছে।

অবশ্যই বেদনাদায়ক জয়েন্ট কারো জন্যই আরামপ্রদ হতে পারে না, বিশেষ করে আপনি যদি বরফযুগ ইউরোপের কোন ম্যমথ শিকারি হন তাহলে তো এই জয়েন্টের ব্যাথা নিয়ে আপনার আরামে থাকার কোন সম্ভাবনাই নেই। তারপরও শীতল আবহাওয়ার ঝুঁকি, অস্টিওআর্থাইটিসের ঝুঁকিকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল, এক্ষেত্রে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে জীবনের প্রধান রিপ্রোডাক্টিভ বা প্রজননের বছরগুলোর পরেই সাধারণত অস্টিওআর্থ্রাইটিস ঘটে। এই জিনটিই মানবদেহের জন্য অধিক পছন্দসই ছিল বা মানব প্রজাতির জন্য অনুকুল হিসেবে নির্ধারিত হয় কারণ এরফলেই মানুষের পক্ষে আফ্রিকা ছেড়ে পৃথিবীর উষ্ণতর স্থানগুলোতে যেতে সক্ষম হয়। ধারণা করা হয় ইউরোপীয় ও এশীয়দের অন্তত অর্ধেক মানুষের মধ্যেই এই জিন ভেরিয়েন্ট আছে, আর আফ্রিকানদের মধ্যে এই জিন তুলনামূলকভাবে দুর্লভ।

স্ট্যানফোর্ড এর ডেভেলপমেন্টাল বায়োলজির প্রফেসর এবং গবেষণাটির অথর ডেভিড কিংসলে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘যেহেতু এটি ইতিবাচকভাবে নির্বাচিত, এই জিন ভেরিয়ান্টটি বর্তমানে বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষের মধ্যে রয়েছে। তাই যদিও এই জিনটির কারণে ঝুঁকি দ্বিগুণেরও কম পরিমাণে বৃদ্ধি পায়, তবুও সম্ভবত সারা পৃথিবী জুড়ে মিলিয়ন মিলিয়ন আর্থাইটিসের কেসের ক্ষেত্রে এই জিন ভেরিয়েন্টই দায়ী”। প্রফেসর কিংসলে মনে করেন তাদের এই গবেষণাটি আর্থ্রাইটিস চিকিৎসার জন্য ঔষধ তৈরিতে সহায়তা করবে।

তিনি আরো বলেন, “এটা আশ্চর্যজনকভাবে প্রভাবশালী ও প্রাচীন জিন ভেরিয়ান্ট। অস্টিওআর্থাইটিসের বিষয়ে অনেকেই মনে করেন যে, এটি একটি ক্ষয় জাতীয় রোগ, কিন্তু এই গবেষণা থেকে পরিষ্কারভাবেই এটা প্রমাণিত হয় যে এই রোগের পিছনেও জেনেটিক উপাদানই কাজ করে। এই গবেষণার মাধ্যমে আমরা দেখিয়েছি যে, একটি ইতিবাচক বিবর্তনীয় নির্বাচনই মানুষ বা হিউম্যান পপুলেশনের মধ্যে উচ্চতার তারতম্য এবং আর্থাইটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

 

তথ্যসূত্র:

  1. https://www.nature.com/…/vaop/ncurrent/full/ng.3911.html
  2. https://med.stanford.edu/profiles/david-kingsley
  3. http://med.stanford.edu/news/all-news/2017/07/decreasing-height-increasing-arthritis-risk-evolutionarily.html

 

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.