ইলেকট্রিক কারের ক্ষেত্রে অয়ারলেস চার্জিং খুব দ্রুত বাস্তব হতে চলেছে

ইলেক্ট্রিক কার বা বৈদ্যুতিক গাড়ির বর্তমান সীমাবদ্ধতা হল তাদের রিচার্জিং টাইম এর জন্য সময়ের পরিমাণ, কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানের একটি নতুন আবিষ্কার এই সমস্যাটির সমাধান হয়তো খুব শীঘ্রই করে ফেলবে।

নেচার  জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায়, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকগণ কিভাবে কাছাকাছি কোন বস্তুতে কোন তার ছাড়াই ইলেক্ট্রিক চার্জ পাঠানো যায় তা নিয়ে গবেষণা করেছেন। এক্ষেত্রে দলটি এক মিলিওয়াট চার্জ পাঠাতে সক্ষম হয়েছেন। যদিও এটি ইলেক্ট্রিক কারকে চালানোর জন্য যে চার্জ প্রয়োজন তার তুলনায় ১০ মিলিয়ন গুণ কম, কিন্তু তাও এটা একটি সম্ভাবনাময় অগ্রগতি।

গবেষণাটির সিনিয়র অথর এবং ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রোফেসর শানহুই ফান জানান, “ইলেক্ট্রিক কারকে চার্জ করার জন্য আমাদের ট্রান্সফার করা ইলেক্ট্রিসিটির পরিমাণ আরও অনেক বাড়াতে হবে, কিন্তু এটা ছাড়াও আমাদেরকে চার্জ পাঠানোর দূরত্বটাও আরও বাড়াতে হবে। আর যানবাহন ছাড়াও সেলফোনের মত পারসোনাল ডিভাইসগুলোতে অয়ারলেস চার্জিং এর উপায় করার জন্য আমাদের আরও নতুন টেকনোলজিও ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে এটাও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, যে বস্তুটি চার্জড হবে তা সচলও থাকতে পারে।”

এই নতুন আবিষ্কৃত ব্যবস্থাটি ড্রাইভ মোডে থাকা অবস্থায় গাড়ি চার্জ করার একটি অগ্রদূত হতে পারে, যেখানে তাত্ত্বিকভাবে গাড়িটিকে রিচার্জ করার জন্য একে থামাতে হবে না। বর্তমানে একটি ইলেক্ট্রিক কারের ব্যাটারিকে সম্পূর্ণ রিচার্জ করতে কয়েক ঘণ্টা লেগে যায়।

এই টেকনোলজিটি অয়ারলেস চার্জিং এর বর্তমানে করা কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার ভিত্তিতে তৈরি, যা ২০০৭ সালে ম্যাসাচুসেট ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে শুরু করা হয়। এই টেকনোলজিটি ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স এর ভিত্তিতে কাজ করে। এখানে ইলেকট্রিক চার্জ একটি অসিলেটিং ম্যাগনেটিক ফিল্ড বা কম্পিত চুম্বক ক্ষেত্র কর্তৃক প্রেরিত হয়। এই সেটাপের ক্ষেত্রে চার্জিং সারকিটকে এলাইনমেন্টে থাকতে হয়, এবং এর এডজাস্টমেন্টেরও প্রয়োজন হয়। যেখান থেকে চার্জ প্রেরিত হচ্ছে এবং যে জিনিসটি চার্জড হচ্ছে তাদের যেকোন একটি যদি সচল থাকে তাহলে এই এডজাস্টমেন্ট ম্যানুয়ালি করতে হয়, অর্থাৎ একজন মানুষকে এটা করে দিতে হয়।

সিস্টেম বা ব্যবস্থাকে একজন মানুষ কর্তৃক সার্বক্ষণিক ফাইন টিউন করা একটি অসম্ভব ব্যাপার। তাই এখানে এগিয়ে এলেন স্ট্যানফোর্ডের গবেষকগণ। তারা এখানে যোগ করলেন কমারশিয়ালি এভেইলেবল এমন একটি ভোল্টেজ এমপ্লিফায়ার এবং একটি ফিডব্যাক রেজিস্টর। আর এর ফলে মানুষের কোন হস্তক্ষেপ ও ইনপুট ছাড়াই সিস্টেমটি স্বয়ংক্রীয়ভাবে সব এডজাস্ট করতে সক্ষম হয়। গবেষণাটির লিড অথর সিড আসাওয়াওরেইট জানান, “এমপ্লিফায়ার এড করায় গ্রাহক কয়েলটি বিভিন্ন ওরিয়েন্টেশনে ঘুরে গেলেও পাওয়ার খুব কার্যকরীভাবেই তিন ফুট রেঞ্জের মধ্যে প্রেরণ করা যায়। এর ফলে সারকিটকে অবিরাম টিউনিং করার কোন প্রয়োজনীয়তা আর থাকে না।”

অধিক পাওয়ার বা ক্ষমতার চাবিকাঠি হয়তো এমপ্লিফায়ার নিজেই। গবেষকদের দলটি ১০ পারসেন্ট এফিশিয়েন্সির এমপ্লিফায়ার ব্যবহার করেছেন যা বাজারেই পাওয়া যায়। কিন্তু প্রয়োজন অনুসারে তৈরি করা এমপ্লিফায়ার ৯০ শতাংশেরও বেশি এফিশিয়েন্সি দেখাতে পারে।

ফান বলেন, “শুধু গাড়ি নয়, আমাদের শরীরের উপর বা শরীরের ভেতরে থাকা ছোট ছোট ডিভাইসেও কিভাবে বিদ্যুৎ প্রেরণ করা যায় তা নিয়েও আমরা এখন চিন্তা করতে পারি। এই ডাইনামিক, অয়ারলেস চার্জিং এর দ্বারা আমরা অনেকভাবে উপকৃত হব, তাই এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্ভাবনাময়।”

 

বর্তমানে শেভি বোল্ট একটি সিংগেল চার্জে ৩৮০ কিলোমিটার যায়, আর আসছে টেসলা মডেল ৩ সিংগেল চার্জিংএ ৩২০ কিলোমিটার যেতে সক্ষম হবে। কিন্তু এই গবেষণাটি বলছে, খুব শীঘ্রই এই সব নাম্বার নিয়ে আর কেয়ারই করতে হবে না, কারণ চার্জিং এর জন্য গাড়িকে আর থামতেই হবে না।

 

তথ্যসূত্র:

  1. https://www.nature.com/nature/journal/v546/n7658/full/nature22404.html
  2. http://news.stanford.edu/2017/06/14/big-advance-wireless-charging-moving-electric-cars/

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.