রামানুজন ও তার ১৭২৯

1729_Ramanujan_number-300x119

ট্যাক্সিক্যাব নাম্বার হল ম্যাথমেটিক্স এর দুনিয়ার অন্যতম বিলাভেড ইন্টিজার। এদের অরিজিন ১৯১৮ সালে ইন্ডিয়ান জিনিয়াস শ্রীনিবাস রামানুজনের হাত ধরে। সম্প্রতি Emory University এর ম্যাথমেটিশিয়ানগণ আবিষ্কার করেছেন যে, রামানুজন কেবলই প্রথম ট্যাক্সিক্যাব নাম্বার ১৭২৯ ও এই ইন্টিজারগুলোর প্রোপার্টি আবিষ্কারই করেন নি, তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে এই নাম্বারগুলো এলিপ্টিক কার্ভ এবং k3 সারফেসের সাথে সম্পর্কযুক্ত। k3 সার্ফেস বর্তমান স্ট্রিং থিওরি ও কোয়ান্টাম ফিজিক্সে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

Emory University এর নাম্বার থিওরিস্ট Ken Ono জানিয়েছেন যে, অন্যেরা K3 সারফেস এর নাম করণ ও এটা নিয়ে কাজ শুরু করার ৩০ বছর আগেই রামানুজন এটাকে আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি আরও বলেন যে, রামানুজনের কাজ অনেক ডিপ স্ট্রাকচার এন্টিসিপেট করেছিল যা পরবর্তীতে এরিথমেটিক, জিওমেট্রি, নাম্বার থিওরি এবং ফিজিক্সের ফান্ডামেন্টাল অবজেক্ট হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

Ono এবং তার গ্রেজুয়েট স্টুডেন্ট Sarah Trebat-Leder, Research in Number Theory জার্নালে এটা নিয়ে গবেষণা প্রকাশ করছেন। এই স্টাডিতে থাকবে কিভাবে ট্যাক্সিক্যাব নাম্বার সম্পর্কিত রামানুজনের ফর্মুলাগুলো এলিপ্টিক কার্ভের সিক্রেটগুলো রিভিল করে।

তারা জানান, “রামানুজনের ফর্মুলা যা তিনি তার ১৯১৯ সালে তার ডেথবেডে লিখে রেখে গিয়েছিলেন, তা এতটাই ইনজিনিয়াস যে এর মধ্য দিয়ে তিনি ভবিষ্যতের ম্যাথমেটিশিয়ানদের জন্য একটি ম্যাজিক কি রেখে গিয়েছিলেন। এখন আমাদেরকে এই ম্যাজিক কি এর ক্ষমতা অনুধাবন করতে হবে এবং মডার্ন কনটেক্সটগুলোতে একে ব্যবহার করে সল্যুশন খুঁজতে হবে।”

১৯১৮ তে রামানুজন টিউবারকিউলোসিসের কারণে লন্ডনের একটি ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছিলেন। হার্ডি রামানুজনকে চিয়ার আপ করার জন্য বলেন, তিনি আজ একটি ট্যাক্সিতে করে রামানুজনের সাথে দেখা করতে এসেছেন আর সেই ট্যাক্সির নাম্বার ছিল ১৭২৯। তিনি বলেন, “নাম্বারটা কত সাধারণ”। রামানুজন বিছানায় বসে পড়েন এবং বলে, “না হার্ডি, এটা খুবই ইন্টারেস্টিং একটা নাম্বার! এটা এমন ক্ষুদ্রতম সংখ্যা যাকে দুভাবে দুটো কিউবিক সংখ্যার যোগফল হিসাবে প্রকাশ করা যায়।”

রামানুজন, যার কিনা কোন নাম্বারের ইডিওসিনক্রেটিক প্রোপার্টি সম্পর্কে ভূতুরে সেন্স ছিল সে হয়তো কোন না কোনভাবে জানত যে ১৭২৯ কে 1 cubed + 12 cubed এবং 9 cubed + 10 cubed এই দুইভাবে প্রকাশ করা যায় এবং এর চেয়ে কোন ছোট সংখ্যাকে এভাবে লেখা যায় না।

এই ঘটনা থেকেই হার্ডি-রামানুজন নাম্বার বা ট্যাক্সিক্যাব নাম্বারের জন্ম। এপর্যন্ত মাত্র ৬টি ট্যাক্সিক্যাব নাম্বার আবিষ্কৃত হয়েছে যার এই ১৭২৯ নাম্বারটির মত প্রোপার্টি আছে। এগুলো হল সেইসব ক্ষুদ্রতম নাম্বার যাকে n সংখ্যক উপায়ে দুটো কিউবের যোগফল হিসাবে প্রকাশ করা যায়। এবং যদি n এর মান যদি ২ হয় তাহলে এই সংখ্যাটা দাঁড়ায় ১৭২৯।

রামানুজনের অনেক আবিষ্কারের মতই দেখা গেল ১৭২৯ ও এমন একটি নাম্বার যার মধ্যে ম্যাথমেটিকাল ওডিটির বাইরেও আরও অনেক মিনিং লুকানো আছে। Ono বলেন, “রামানুজন কিভাবে থিওরিগুলো এন্টিসিপেট করতেন ১৭২৯ তারই একটা চূড়ান্ত উদাহরণ। তার নোটগুলো দেখলে মনে হয় এখানে কেবলই কিছু সিম্পল ফর্মুলা আছে। কিন্তু যদি আরও ভালভাবে এগুলোর দিকে তাকানো যায়, তাহলে এদের আরও ডিপার ইম্পিকেশন পাওয়া যাবে যা রামানুজনের সত্যিকারের ক্ষমতা রিভিল করে।”

Ono এর কেরিয়ারের বেশিরভাগ অংশই গিয়েছে রামানুজনের রহস্য রিভিল করতে। ২০১৩ সালে ইংল্যান্ডে নাম্বার থিওরিস্ট Andrew Granville এবং John Coates এর সাথে দেখা করার সময় Ono কেমব্রিজে রামানুজন আর্কাইভ তন্নতন্ন করে খোঁজেন। তিনি ফরমুলায় ভরা একটা পৃষ্ঠা খুঁজে পান যা রামানুজন হার্ডির সাথে বসে ১৭২৯ এর প্রোপার্টি পয়েন্ট আউট করার এক বছর পরে লিখেছিলেন। সেসময় ৩২ বছরের রামানুজন ভারতে ফিরে আসেন এবং মৃত্যুর খুব কাছাকাছি সময়ে এসে পড়েচিলেন।

Ono বলেন, ” আমি রামানুজনের ডেথবেড নোটের একটা টেনে তুললাম। পেজটাতে ১৭২৯ ও তার ব্যাপারে কিছু নোট লেখা ছিল। এন্ড্রু এবং আমি অনুধাবন করলাম যে রামানুজন এক্সপোটেন্ট ৩ এর ক্ষেত্রে ফার্মার লাস্ট থিওরেম এর জন্য কিছু ইনফিনিটলি নেয়ার মিস (infinitely near misses) খুঁজে পেয়েছেন। আমরা এটা দেখে অনেক অবাক হয়েছিলাম এবং সত্যিসত্যি হাসতে শুরু করেছিলাম। রামানুজন যে অনেক বড় কিছু আবিষ্কার করেছিলেন এটাই ছিল আমাদের পাওয়া তার প্রথম প্রমাণ।”

ফার্মার লাস্ট থিওরেম হল একটা আইডিয়া যেটা বলে কয়েকটা সিম্পল ইকুয়েশনের কোন সল্যুশন নেই। যেমন দুটো কিউবের যোগফল কখনও আরেকটি কিউব হতে পারে না। রামানুজন ২টি ভেরিয়েবল ও ৩ ডিগ্রীর একটি কিউবিক সল্যুশনের এলিপ্টিক কার্ভ ব্যবহার করেন যা এর অসীম সংখ্যক সল্যুশন তৈরি করেছিল যেগুলো ফারমার লাস্ট থিওরেমের নেয়ারলি কাউন্টার এক্সাম্পল।

এলিপ্টিক কার্ভ নিয়ে হাজার বছর ধরে স্টাডি করা হচ্ছে। কিন্তু মাত্র ৫০ বছর পূর্বে ম্যাথমেটিক্স এর বাইরে এর এপলিকেশন খুঁজে পাওয়া গেছে। আর এই এপলিকেশনগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণও বটে যেমন ইন্টারনেট ক্রিপ্টোগ্রাফি সিস্টেমে ব্যাং একাউন্ট নাম্বার এর ইনফরমেশনের প্রোটেকশনের জন্য একে ব্যবহার করা হয়।

রামানুজন K3 সারফেস আবিষ্কার করেন এটা জানার অনেক আগেই Ono এটা নিয়ে কাজ করেছিলেন। রামানুজনের আবিষ্কারের অনেক পরে ১৯৫০ এর দিকে ম্যাথমেটিশিয়ান André Weil এর নামকরণ করেন। তিনি এর নামকরণ করেন তিনজন এলজেবরিক মাস্টার Kummer, Kähler এবং Kodaira এর স্মরণে। এদের তিনজনের নামের অদ্যাক্ষরই K। আর নামকরণটি করা হয় কাশ্মীরের মাউন্টেন K2 এর সাথে মিলিয়ে। K2 এমনই একটি পর্বত যেটাতে আরোহন করা অনেক কঠিন। এলিপ্টিক কার্ভগুলো জেনারালাইজ করে K3 সারফেস তৈরির প্রোসেসও অনেক কঠিন।

Ono এবং Trebat-Leder তাদের পেপারটি প্রস্তুত করতে রামানুজনের সব নোট টেনে এনেছেন, তার ফাইন্ডিংগুলোকে আলোকিত করেছেন সেগুলোকে মডার্ন ফ্রেমওয়ার্কে ট্রান্সলেট করছেন।

Ono বলেন, “রামানুজন ১৭২৯ এবং এলিপ্টিক কার্ভগুলোকে K3 সারফেস এর জন্য ফরমুলা ডেভেলপ করতে ব্যবহার করছিলেন। ম্যাথমেটিশিয়ানরা এখনও এই K3 সারফেস সংক্রান্ত ক্যালকুলেশন করতে হিমশিম খায়। আর তাই, এটা যে পুরোপুরিভাবে রামানুজনের ইনটুইশন ছিল এটা অবশ্যই একটা মেজর সারপ্রাইজ।”

রামানুজন ভারতে সুপরিচিত এবং সমগ্র বিশ্বের ম্যাথমেটিশিয়ানদের কাছেও সুপরিচিত। আর বেশ কিছুদিন আগে Pressman Films এর মুভি “The Man Who Knew Infinity,” এর দ্বারা সমগ্র বিশ্বের মানুষের কাছে পরিচিত হয়েছেন। Ono এই মুভির ম্যাথ কনসাল্টেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন। মুভিটিতে রামানুজনকে স্টারিং করেছেন Dev Patel এবং হার্ডিকে স্টারিং করেছেন Jeremy Irons। Ono এবং Bhargava মুভিটির এসোসিয়েট প্রোডিউসার।

http://www.sciencedaily.com/news/computers_math/mathematics/

– ভেলোসিটি হেড

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.