হাইপোথাইরয়ডিজম: এক নীরব ঘাতকের পদধ্বনি

ভূমিকা

আমাদের শরীরটা একটা অদ্ভুত, রহস্যময় রাজ্য। এই রাজ্যের রাজা হলো মস্তিষ্ক (Brain), কিন্তু তার শাসনব্যবস্থা বড়ই জটিল। তার আছে অসংখ্য মন্ত্রী, পরামর্শদাতা আর গুপ্তচর। কেউ নির্দেশ দেয় হৃদপিণ্ডকে, ‘হে বন্ধু, আরেকটু জোরে চলো, ভালোবাসা বা ভয়—কোনো একটার জন্য প্রস্তুত হও।’ কেউ ফুসফুসকে ফিসফিস করে বলে, ‘শ্বাস নাও, আরও গভীর করে শ্বাস নাও, বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে জীবনের গন্ধ, অক্সিজেনের কণা।’ এই মন্ত্রীদের ভিড়ে, গলার ঠিক মাঝখানে, প্রজাপতির মতো ডানা মেলে বসে থাকা ছোট্ট একটা গ্রন্থি (gland) আছে, নাম তার থাইরয়েড (Thyroid)। দেখতে কী নিরীহ, শান্তশিষ্ট! ওজন বড়জোর ২০-২৫ গ্রাম। কিন্তু এই পুঁচকে অঙ্গের ক্ষমতা অপরিসীম। সে যেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী, শরীরের বিপাকক্রিয়ার (metabolism) মূল নিয়ন্ত্রক। তার হাতেই রয়েছে শরীরের শক্তি উৎপাদন, ব্যবহার আর সঞ্চয়ের চাবিকাঠি।

ভাবুন তো একবার, আপনার রান্নাঘরের চুলার নবটা যদি বিগড়ে যায়, কী হবে? আপনি চাইছেন দাউদাউ করে আগুন জ্বলুক, ঝটপট রান্না সারবেন, কিন্তু নবটা ঘুরেফিরে শুধু মিটমিটে আঁচই দিচ্ছে। সেই আঁচে কি আর রান্না জমে? ডাল সেদ্ধ হতে লাগে সারা দিন, ভাত হয় আধসেদ্ধ, সব কাজেই রাজ্যের ঢিলেমি। থাইরয়েড গ্রন্থি ঠিক সেই চুলার নিয়ন্ত্রকের মতোই। সে যখন নিয়ম মেনে কাজ করে, আমাদের শরীরের সবকিছু—হৃদস্পন্দন থেকে শুরু করে হজমশক্তি, চুলের বৃদ্ধি থেকে শুরু করে মনের আনন্দ—সবকিছুই সঠিক ‘আঁচে’ চলতে থাকে। কিন্তু যখন এই গ্রন্থিটা অলস হয়ে পড়ে, অভিমান করে তার ‘আঁচ’ কমিয়ে দেয়, তখনই শুরু হয় মহাবিপত্তি। শরীরের বিশাল ইঞ্জিনটা যেন হঠাৎ ধীর হয়ে আসে, সবকিছুতেই নেমে আসে এক ব্যাখ্যাতীত স্থবিরতা। এই অবস্থাকেই ডাক্তারিশাস্ত্রে বলা হয় হাইপোথাইরয়ডিজম (Hypothyroidism)।

আজকের গল্পটা এই নীরব ঘাতককে নিয়েই। এ এমন এক ঘাতক, যে তলোয়ার হাতে আসে না, আসে ক্লান্তি আর বিষণ্ণতার চাদর মুড়ি দিয়ে। আমরা এর নাড়িনক্ষত্র জানার চেষ্টা করব। কেন হয়, কীভাবে বুঝবেন, এর পেছনে লুকিয়ে থাকা বিজ্ঞানটাই বা কী, আর এর হাত থেকে নিস্তার পাওয়ার উপায়ই বা কী? চলুন, ডুব দেওয়া যাক এক গভীর, কুয়াশাচ্ছন্ন রহস্যের অতলে।

গলার প্রজাপতি – থাইরয়েড গ্রন্থির অন্দরমহল

গল্পের মূল চরিত্রকে না চিনলে গল্প জমে না। আমাদের গলার সামনের দিকে, যেখানে ছেলেদের অ্যাডাম’স অ্যাপল (Adam’s apple) বা স্বরযন্ত্র (larynx) থাকে, ঠিক তার নিচে প্রজাপতির মতো ডানা মেলা ছোট্ট একটি অঙ্গ এই থাইরয়েড গ্রন্থি। এর দুটি ভাগ বা লোব (lobe) থাকে, যা মাঝখানে ইস্থমাস (isthmus) নামক একটি অংশ দিয়ে যুক্ত। অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে দেখলে মনে হবে, এটি অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র থলি বা ফলিকল (follicle) দিয়ে তৈরি। এই ফলিকলগুলোর ভেতরেই ঘটে আসল কারসাজি।

এর প্রধান কাজ হলো দুটি হরমোন (hormone) তৈরি করা:

১. থাইরক্সিন (Thyroxine) বা T4: এর নামের ‘4’ দিয়ে বোঝানো হয় যে এর একটি অণুতে চারটি আয়োডিন (Iodine) পরমাণু আছে। থাইরয়েড গ্রন্থি মূলত এই হরমোনটিই বেশি পরিমাণে তৈরি করে (প্রায় ৮০%)।

২. ট্রাই-আয়োডোথাইরোনিন (Triiodothyronine) বা T3: এর নামের ‘3’ দিয়ে বোঝানো হয় যে এর একটি অণুতে তিনটি আয়োডিন পরমাণু আছে। এটি পরিমাণে কম তৈরি হলেও (প্রায় ২০%), T4-এর চেয়ে প্রায় চারগুণ বেশি শক্তিশালী এবং সক্রিয়।

ব্যাপারটা অনেকটা এমন—থাইরয়েড T4 নামক একটি ‘স্টোরেজ’ বা ‘রিজার্ভ’ হরমোন তৈরি করে রক্তে ছেড়ে দেয়। পরে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে, যেমন যকৃৎ (liver) ও কিডনিতে, এই T4 থেকে একটি আয়োডিন পরমাণু সরিয়ে নিয়ে তাকে সক্রিয় T3 হরমোনে রূপান্তরিত করা হয়। অর্থাৎ, T3-ই হলো আসল ‘কর্মী’, যে কোষের ভেতরে ঢুকে কাজটা করে। এই রূপান্তরের প্রক্রিয়াটিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ (Bianco, Salvatore, Gereben, Berry, & Larsen, 2002)।

এই হরমোন দুটি রক্তের মাধ্যমে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রায় প্রতিটি কোষের নিউক্লিয়াসে (nucleus) থাকা রিসেপ্টরের (receptor) সাথে যুক্ত হয়। তারপর নির্দেশ দেয়—‘কাজ করো, শক্তি উৎপাদন করো, বিপাকক্রিয়া চালু রাখো।’ এরা আমাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে, হজমশক্তিকে প্রভাবিত করে, শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সাহায্য করে, এবং এমনকি আমাদের মন-মেজাজ, চিন্তাভাবনা ও স্মৃতির উপরেও এদের গভীর প্রভাব রয়েছে। শিশুরা যখন মায়ের গর্ভে থাকে, তখন তাদের মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের (nervous system) সঠিক বিকাশের জন্য এই থাইরয়েড হরমোন অপরিহার্য। এর অভাবে শিশুদের বুদ্ধি প্রতিবন্ধকতা বা ক্রেটিনিজম (Cretinism) হতে পারে (American Thyroid Association, 2021)।

সুতরাং, বোঝাই যাচ্ছে, এই হরমোন দুটির পরিমাণ কমে গেলে কী বিশাল একটা গণ্ডগোল বেধে যেতে পারে। শরীরের প্রতিটি বিভাগেই যেন কর্মবিরতি শুরু হয়ে যায়।

মহারাজের সেনাপতি – মস্তিষ্ক যেভাবে থাইরয়েডকে নিয়ন্ত্রণ করে

থাইরয়েড গ্রন্থি কিন্তু স্বাধীন নয়, নিজের ইচ্ছামতো কাজ করে না। তারও একজন বস আছে। আসলে বস দুজন। মস্তিষ্কের গভীরে থাকা হাইপোথ্যালামাস (Hypothalamus) হলো এই রাজ্যের মহারাজা। সে শরীরের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করে। যখন সে বুঝতে পারে যে রক্তে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা কমে গেছে বা শরীরের তাপমাত্রা কমে গেছে, তখন সে একটা হরমোন ছাড়ার নির্দেশ দেয়। এই হরমোনের নাম থাইরোট্রপিন-রিলিজিং হরমোন (Thyrotropin-Releasing Hormone বা TRH)

এই TRH রক্তের একটি বিশেষ সংযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে গিয়ে খবর দেয় সেনাপতিকে। সেনাপতির নাম পিটুইটারি গ্রন্থি (Pituitary Gland), সেও মস্তিষ্কের ভেতরেই সুরক্ষিত অবস্থায় থাকে। মহারাজের নির্দেশ পেয়ে সেনাপতি পিটুইটারি তার নিজের সেনা ছাড়ে। এই সেনার নাম থাইরয়েড-স্টিমুলেটিং হরমোন (Thyroid-Stimulating Hormone বা TSH), যার বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘থাইরয়েড উদ্দীপক হরমোন’।

নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে এর কাজ কী। TSH রক্তের সাধারণ স্রোতে ভেসে ভেসে থাইরয়েড গ্রন্থির কাছে গিয়ে তার দরজায় কড়া নাড়ে আর বলে, ‘ওহে থাইরয়েড, কাজ শুরু করো। মহারাজের নির্দেশ, আরও হরমোন বানাও।’ TSH-এর চাপেই থাইরয়েড আয়োডিন গ্রহণ করে এবং T4 ও T3 হরমোন তৈরি করে রক্তে ছেড়ে দেয়।

মজার ব্যাপার হলো, এখানে একটা চমৎকার স্বয়ংক্রিয় নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা (negative feedback loop) কাজ করে। রক্তে যখন T4 এবং T3 হরমোনের পরিমাণ বেড়ে একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় পৌঁছে যায়, তখন সেই খবরটা আবার হাইপোথ্যালামাস আর পিটুইটারির কাছে ফিরে যায়। এই বাড়তি হরমোন তখন তাদের বলে, ‘যথেষ্ট হয়েছে, আপাতত আর হরমোন দরকার নেই।’ তখন পিটুইটারি TSH তৈরি করা কমিয়ে দেয়, এবং হাইপোথ্যালামাসও TRH তৈরি কমিয়ে দেয়। ফলে থাইরয়েডও তার উৎপাদন কমিয়ে দেয়। আবার যখন রক্তে হরমোন কমে যায়, তখন এই বাধাটা উঠে যায় এবং TSH উৎপাদন বেড়ে যায়। পুরো ব্যাপারটা অনেকটা স্বয়ংক্রিয় ওয়াটার পাম্পের মতো—ট্যাংক ভরে গেলে পাম্প বন্ধ, খালি হলে আবার চালু (Chaker, Bianco, Jonklaas, & Peeters, 2017)।

হাইপোথাইরয়ডিজমের রহস্য বুঝতে হলে এই নিখুঁত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাটা বোঝা খুব জরুরি। কারণ সমস্যাটা থাইরয়েডে হতে পারে, আবার তার বস পিটুইটারি বা মহারাজা হাইপোথ্যালামাসেও হতে পারে।

যখন সুর কেটে যায় – হাইপোথাইরয়ডিজম কী এবং কত প্রকার?

সহজ কথায়, হাইপোথাইরয়ডিজম হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে থাইরয়েড গ্রন্থি শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী পর্যাপ্ত থাইরয়েড হরমোন তৈরি করতে পারে না। ফলে শরীরের বিপাকক্রিয়া ধীর হয়ে যায় এবং নানা রকম শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দেয়।

কারণ অনুযায়ী হাইপোথাইরয়ডিজমকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়:

১. প্রাইমারি হাইপোথাইরয়ডিজম (Primary Hypothyroidism): প্রায় ৯৯% ক্ষেত্রেই হাইপোথাইরয়ডিজম এই প্রকারের হয়। এক্ষেত্রে সমস্যাটা সরাসরি থাইরয়েড গ্রন্থির নিজের। সে অসুস্থ, আহত, প্রদাহে আক্রান্ত বা অলস হয়ে পড়েছে। তাই পিটুইটারি গ্রন্থি ক্রমাগত TSH পাঠিয়ে তাকে জাগানোর চেষ্টা করলেও সে হরমোন বানাতে পারে না। ফলে রক্তে TSH-এর মাত্রা অনেক বেড়ে যায় (কারণ পিটুইটারি ক্রমাগত ‘চাপ’ দিয়েই যাচ্ছে), কিন্তু T4-এর মাত্রা কমে যায়।

২. সেন্ট্রাল হাইপোথাইরয়ডিজম (Central Hypothyroidism): এটি বেশ বিরল এবং এক্ষেত্রে থাইরয়েড গ্রন্থি নিজে ঠিক আছে, কিন্তু ওপর থেকে নির্দেশ আসছে না। একে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়:

  • সেকেন্ডারি হাইপোথাইরয়ডিজম (Secondary Hypothyroidism): সমস্যাটা সেনাপতি পিটুইটারি গ্রন্থির। পিটুইটারি নিজেই অসুস্থ বা ক্ষতিগ্রস্ত (যেমন টিউমার, রেডিয়েশন বা সার্জারির কারণে), তাই সে পর্যাপ্ত TSH তৈরি করতে পারছে না। বস নির্দেশ না দিলে কর্মচারী কাজ করবে কীভাবে? ফলে থাইরয়েডও হরমোন তৈরি করে না। এক্ষেত্রে রক্ত পরীক্ষায় TSH এবং T4 দুটোই কম পাওয়া যায়।

  • টারশিয়ারি হাইপোথাইরয়ডিজম (Tertiary Hypothyroidism): এটি আরও বিরল। সমস্যাটা মহারাজা হাইপোথ্যালামাসের। সে ঠিকমতো TRH তৈরি করতে পারে না, ফলে পিটুইটারি TSH বানায় না, আর থাইরয়েডও হরমোন তৈরি করে না।

৩. সাবক্লিনিক্যাল হাইপোথাইরয়ডিজম (Subclinical Hypothyroidism): এটা একটা অদ্ভুত এবং প্রায়শই বিভ্রান্তিকর অবস্থা। একে হাইপোথাইরয়ডিজমের ‘প্রি-ডায়াবেটিস’ স্টেজ বলা যেতে পারে। এক্ষেত্রে রক্তে TSH-এর মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে, কিন্তু T4-এর মাত্রা তখনও স্বাভাবিক সীমার মধ্যেই থাকে। এর মানে হলো, থাইরয়েড গ্রন্থি দুর্বল হয়ে পড়েছে, কিন্তু পিটুইটারি গ্রন্থি অতিরিক্ত TSH উৎপাদন করে কোনোমতে তার কাছ থেকে স্বাভাবিক পরিমাণ হরমোন বের করে আনছে। শরীরের চাহিদা পূরণ হচ্ছে, কিন্তু একটা বাড়তি চাপ দিয়ে। অনেকের ক্ষেত্রেই কোনো উপসর্গ থাকে না, কিন্তু এটি ভবিষ্যতে পুরোদস্তুর হাইপোথাইরয়ডিজমে রূপ নিতে পারে (Pearce, Brabant, Duntas, & Monzani, 2013)।

বিপত্তির পেছনের গল্প – হাইপোথাইরয়ডিজমের কারণসমূহ

একটা যন্ত্র বিগড়ে যাওয়ার পেছনে যেমন অনেক কারণ থাকতে পারে, থাইরয়েডের কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ার পেছনেও তেমনি নানা কারণ দায়ী।

১. হাশিমোতো’স থাইরয়েডাইটিস (Hashimoto’s Thyroiditis): এক আত্মঘাতী যুদ্ধ: হাইপোথাইরয়ডিজমের সবচেয়ে সাধারণ এবং প্রধান কারণ এটি, বিশেষ করে আয়োডিন সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলোতে। এটি একটি অটোইমিউন ডিজিজ (autoimmune disease)। ব্যাপারটা বেশ অদ্ভুত এবং দুঃখজনক। আমাদের শরীরের নিজস্ব সৈন্যবাহিনী বা ইমিউন সিস্টেম (immune system) আছে, যারা বাইরের জীবাণু—ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাসের সাথে লড়াই করে আমাদের সুস্থ রাখে। কিন্তু অটোইমিউন ডিজিজে এই সৈন্যবাহিনী দিকভ্রান্ত হয়ে যায়। তারা ভুল করে নিজের শরীরের কোনো অঙ্গকেই শত্রু ভেবে আক্রমণ করে বসে। হাশিমোতোর ক্ষেত্রে, এই সৈন্যরা (বিশেষত T-লিম্ফোসাইট নামক কোষ) থাইরয়েড গ্রন্থিকে আক্রমণ করে এবং অ্যান্টিবডি (antibody) তৈরি করে। দুটি প্রধান অ্যান্টিবডি হলো থাইরয়েড পারঅক্সিডেজ অ্যান্টিবডি (TPOAb) এবং থাইরোগ্লোবুলিন অ্যান্টিবডি (TgAb)। এই অ্যান্টিবডিগুলো থাইরয়েড কোষগুলোকে ধীরে ধীরে ধ্বংস করে দেয়, সেখানে প্রদাহ (inflammation) সৃষ্টি করে। ফলে গ্রন্থিটি আর আগের মতো হরমোন তৈরি করতে পারে না (Caturegli, De Remigis, & Rose, 2014)। কেন শরীর এমন অদ্ভুত আচরণ করে, তার সঠিক কারণ বিজ্ঞানীরা এখনও পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেননি। তবে জেনেটিক প্রবণতা (HLA জিন) এবং পরিবেশগত কিছু ফ্যাক্টর (যেমন, ইনফেকশন, অতিরিক্ত মানসিক চাপ, অতিরিক্ত আয়োডিন গ্রহণ) এর জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়।

২. আয়োডিনের অভাব (Iodine Deficiency): কারখানার কাঁচামাল সংকট: থাইরয়েড হরমোন (T4, T3) তৈরির মূল কাঁচামাল হলো আয়োডিন। আমরা খাবার এবং জলের মাধ্যমে এই আয়োডিন পেয়ে থাকি। যদি কোনো কারণে শরীরে আয়োডিনের মারাত্মক অভাব দেখা দেয়, তাহলে থাইরয়েড চাইলেও হরমোন তৈরি করতে পারে না। অনেকটা কারখানায় কাঁচামাল না থাকার মতো অবস্থা। তখন পিটুইটারি গ্রন্থি TSH বাড়িয়ে থাইরয়েডকে আরও বেশি কাজ করতে চাপ দেয়। এই অতিরিক্ত চাপের ফলে থাইরয়েড গ্রন্থি আকারে বড় হয়ে যায়, যাকে আমরা গলগণ্ড বা গয়টার (Goiter) বলি। একসময় পৃথিবীতে আয়োডিনের অভাব হাইপোথাইরয়ডিজম এবং ক্রেটিনিজমের প্রধান কারণ ছিল। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহারের ফলে এর প্রকোপ অনেক কমে এসেছে। তবে বিশ্বের কিছু কিছু পার্বত্য বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে এটি এখনও একটি বড় সমস্যা (Zimmermann & Boelaert, 2015)।

৩. চিকিৎসা সংক্রান্ত কারণ (Iatrogenic Causes):

  • থাইরয়েড অপারেশন (Thyroidectomy): কখনো কখনো থাইরয়েড ক্যান্সার, বড় আকারের গলগণ্ড বা হাইপারথাইরয়ডিজমের (hyperthyroidism) চিকিৎসার জন্য থাইরয়েড গ্রন্থির পুরোটাই (Total Thyroidectomy) বা আংশিক (Subtotal Thyroidectomy) কেটে বাদ দিতে হয়। গ্রন্থিটাই যদি না থাকে, তাহলে হরমোন তৈরি হবে কোত্থেকে? তখন বাইরে থেকে হরমোন গ্রহণ করা ছাড়া উপায় থাকে না।

  • রেডিওঅ্যাকটিভ আয়োডিন থেরাপি (Radioactive Iodine Therapy): হাইপারথাইরয়ডিজমের চিকিৎসায় এটি একটি কার্যকর পদ্ধতি। রোগীকে তেজস্ক্রিয় আয়োডিন (I-131) খাওয়ানো হয়। থাইরয়েড কোষ সাধারণ আয়োডিনের মতোই এই তেজস্ক্রিয় আয়োডিনকেও গ্রহণ করে এবং এর তেজস্ক্রিয়তায় কোষগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে স্থায়ী হাইপোথাইরয়ডিজম দেখা দেয়, যা পরে লিভোথাইরক্সিন দিয়ে চিকিৎসা করা হয়।

  • বাহ্যিক রেডিয়েশন থেরাপি (External Radiation Therapy): মাথা বা গলার ক্যান্সারের (যেমন, লিম্ফোমা) চিকিৎসার জন্য যখন উচ্চমাত্রার রেডিয়েশন দেওয়া হয়, তখন সেই তেজস্ক্রিয়তা আশেপাশের সুস্থ থাইরয়েড গ্রন্থিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং এর কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে।

৪. কিছু ঔষধের প্রভাব: কিছু ঔষধ দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহারের ফলে থাইরয়েডের কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে। যেমন—

  • লিথিয়াম (Lithium): বাইপোলার ডিজঅর্ডারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি থাইরয়েডের আয়োডিন গ্রহণ এবং হরমোন নিঃসরণে বাধা দেয়।

  • অ্যামিওডারোন (Amiodarone): হৃদরোগের অনিয়মিত ছন্দের (arrhythmia) চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এই ঔষধটিতে প্রচুর পরিমাণে আয়োডিন থাকে, যা উল্টো থাইরয়েডের কাজ বন্ধ করে দিতে পারে (Wolff-Chaikoff effect)।

  • ইন্টারফেরন-আলফা এবং কিছু আধুনিক ক্যান্সারের ইমিউনোথেরাপি (Immuno-oncology drugs): এগুলো ইমিউন সিস্টেমকে প্রভাবিত করে অটোইমিউন থাইরয়েডাইটিস তৈরি করতে পারে (Okosieme & Taylor, 2023)।

৫. জন্মগত হাইপোথাইরয়ডিজম (Congenital Hypothyroidism): প্রতি ৩০০০-৪০০০ নবজাতকের মধ্যে একজন এই সমস্যা নিয়ে জন্মায়। কিছু শিশু জন্ম থেকেই ত্রুটিপূর্ণ থাইরয়েড গ্রন্থি নিয়ে জন্মায় (thyroid dysgenesis), অথবা তাদের থাইরয়েড গ্রন্থিটিই থাকে না (athyreosis), অথবা গ্রন্থি থাকলেও হরমোন তৈরির এনজাইম ঠিকমতো কাজ করে না (dyshormonogenesis)। জন্মের পরপরই যদি এটি নির্ণয় করে চিকিৎসা শুরু করা না হয়, তাহলে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে। একারণে উন্নত দেশগুলোতে প্রতিটি নবজাতকের জন্মের ৪৮-৭২ ঘণ্টার মধ্যে হিল প্রিক টেস্টের (heel prick test) মাধ্যমে বাধ্যতামূলক থাইরয়েড স্ক্রিনিং করা হয় (Rastogi & LaFranchi, 2010)।

নীরব ঘাতকের পদধ্বনি – লক্ষণ ও উপসর্গ

হাইপোথাইরয়ডিজমের সবচেয়ে অস্বস্তিকর দিক হলো, এর লক্ষণগুলো খুবই সাধারণ, অস্পষ্ট এবং বিচিত্র। এগুলো এত ধীরে ধীরে প্রকাশ পায় যে অনেকেই একে বয়সের ছাপ, অতিরিক্ত কাজের চাপ, আবহাওয়া পরিবর্তন বা সাধারণ দুর্বলতা ভেবে ভুল করেন। একেকজনের ক্ষেত্রে লক্ষণ একেকরকম হতে পারে এবং এর তীব্রতাও নির্ভর করে হরমোনের ঘাটতি কতটা তার উপর।

আসুন, উপসর্গগুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে বোঝার চেষ্টা করি।

ক) মন ও মস্তিষ্কের উপর প্রভাব:

  • অতিরিক্ত ক্লান্তি ও অবসাদ (Profound Fatigue): এটা সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ। কোনো কারণ ছাড়াই সারাক্ষণ ক্লান্ত লাগা, ঘুম থেকে ওঠার পরেও সতেজ বোধ না করা, দিনের বেলায় ঘুম পাওয়া। শরীরের শক্তি উৎপাদন কারখানাগুলো কাজ না করলে ক্লান্তি তো আসবেই।

  • মন খারাপ ও বিষণ্ণতা (Depression): কোনো কারণ ছাড়াই মন খারাপ থাকা, কাজে উৎসাহ না পাওয়া, কান্না পাওয়া। থাইরয়েড হরমোনের সাথে মস্তিষ্কের সেরোটোনিন (serotonin) ও অন্যান্য নিউরোট্রান্সমিটারের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। তাই এর অভাবে বিষণ্ণতা দেখা দিতে পারে, যা অনেক সময় অ্যান্টি-ডিপ্রেসেন্টেও সারে না।

  • স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া ও মনোযোগের অভাব (Brain Fog): কোনো কিছু মনে রাখতে অসুবিধা হওয়া, শব্দ খুঁজে না পাওয়া, মনোযোগ দিতে না পারা, সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা। একে অনেকেই ‘মস্তিষ্কের কুয়াশা’ বা ব্রেইন ফগ বলে থাকেন।

  • উদ্বেগ ও খিটখিটে মেজাজ (Anxiety and Irritability): বিষণ্ণতার পাশাপাশি উদ্বেগ ও মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়ার প্রবণতাও দেখা যায়।

খ) শারীরিক পরিবর্তন:

  • অকারণ ওজন বৃদ্ধি (Unexplained Weight Gain): খাবার নিয়ন্ত্রণ বা ব্যায়াম করার পরও ওজন বেড়ে যাওয়া। এর প্রধান কারণ হলো বিপাকক্রিয়া ধীর হয়ে যাওয়ায় শরীর ক্যালরি পোড়াতে পারে না এবং শরীরে অতিরিক্ত জল ও লবণ জমে যায়। তবে খুব বেশি ওজন বাড়ে না, সাধারণত ২-৫ কেজি।

  • ঠান্ডা অসহ্য লাগা (Cold Intolerance): অন্যদের যেখানে স্বাভাবিক বা গরম লাগছে, সেখানেও শীত শীত করা। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে থাকা। শরীরের বিপাকক্রিয়া হলো আমাদের অভ্যন্তরীণ চুল্লি। সেই চুল্লি নিভে গেলে শরীর গরম থাকবে কী করে?

  • কোষ্ঠকাঠিন্য (Constipation): হজম প্রক্রিয়া এবং অন্ত্রের চলাচল (peristalsis) ধীর হয়ে যাওয়ার কারণে তীব্র কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দেয়।

  • পেশী ও জয়েন্টে ব্যথা (Muscle Aches and Joint Pain): প্রায়ই গা-হাত-পায়ে ব্যথা, পেশীতে টান ধরা (cramps) বা আড়ষ্টতা অনুভব করা।

  • ধীর হৃদস্পন্দন (Bradycardia): হার্ট রেট স্বাভাবিকের চেয়ে (৬০-এর নিচে) কমে যাওয়া। এর ফলে শরীরচর্চার সময় শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

গ) বাহ্যিক লক্ষণ:

  • শুষ্ক ও খসখসে ত্বক (Dry, Coarse Skin): ত্বক শুষ্ক, ফ্যাকাশে ও হলুদাভ হয়ে যেতে পারে। ঘাম কমে যায়।

  • চুল পড়া (Hair Loss): চুল পাতলা, ভঙ্গুর ও শুষ্ক হয়ে যায় এবং প্রচুর পরিমাণে পড়তে থাকে। শুধু মাথার চুল নয়, ভ্রুর বাইরের দিকের এক-তৃতীয়াংশ চুল পড়ে যাওয়া (Sign of Hertoghe) একটি ক্লাসিক লক্ষণ।

  • মুখ ফোলা ফোলা লাগা (Puffy Face): বিশেষ করে চোখের চারপাশে ও মুখে ফোলা ভাব দেখা যায়। ত্বক ও অন্যান্য টিস্যুতে ম্যুকোপলিস্যাকারাইড (mucopolysaccharide) নামক পদার্থ জমার কারণে এই ফোলা ভাব হয়, যাকে মিক্সিডিমা (Myxedema) বলা হয়।

  • গলার স্বর ভারী বা কর্কশ হয়ে যাওয়া (Hoarse Voice): স্বরযন্ত্রে মিক্সিডিমা জমার কারণে গলার স্বর ফ্যাসফেসে বা কর্কশ হয়ে যেতে পারে।

  • নখ ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া (Brittle Nails): নখগুলো সহজেই ভেঙে যায় বা ফেটে যায়।

ঘ) মহিলাদের ক্ষেত্রে বিশেষ লক্ষণ:

  • অনিয়মিত মাসিক (Irregular Menstrual Cycles): মহিলাদের ক্ষেত্রে মাসিকের অনিয়ম একটি খুব সাধারণ লক্ষণ। মাসিক দেরিতে হওয়া, খুব কম রক্তপাত (oligomenorrhea) বা অতিরিক্ত ও দীর্ঘস্থায়ী রক্তপাত (menorrhagia) হতে পারে।

  • বন্ধ্যাত্ব (Infertility): হাইপোথাইরয়ডিজম ডিম্বস্ফোটনে (ovulation) বাধা সৃষ্টি করে, যা গর্ভধারণে সমস্যা তৈরি করতে পারে।

  • বারবার গর্ভপাত (Recurrent Miscarriages): গর্ভধারণ করলেও এর কারণে বারবার গর্ভপাত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

এই লক্ষণগুলোর কোনো একটি থাকলেই যে আপনার হাইপোথাইরয়ডিজম আছে, তা কিন্তু নয়। কিন্তু যদি একসাথে বেশ কয়েকটি লক্ষণ দীর্ঘদিন ধরে আপনাকে ভোগায় এবং আপনার জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে, তাহলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

কাদের ঝুঁকি বেশি?

কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে হাইপোথাইরয়ডিজম হওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের চেয়ে বেশি থাকে।

  • নারী: পুরুষদের তুলনায় নারীদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৫ থেকে ৮ গুণ বেশি (Vanderpump, 2011)। এর কারণ হিসেবে হরমোনের ওঠানামা এবং অটোইমিউন রোগের প্রতি নারীদের বেশি সংবেদনশীলতাকে দায়ী করা হয়।

  • বয়স: বয়স বাড়ার সাথে সাথে, বিশেষ করে ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষের মধ্যে এর প্রকোপ বেশি দেখা যায়।

  • পারিবারিক ইতিহাস: পরিবারে কারো (মা, বাবা, ভাই, বোন) থাইরয়েড বা অন্য কোনো অটোইমিউন রোগ (যেমন, টাইপ-১ ডায়াবেটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস) থাকলে ঝুঁকি বাড়ে।

  • অন্য অটোইমিউন রোগ: যাদের টাইপ-১ ডায়াবেটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, পারনিসিয়াস অ্যানিমিয়া (Pernicious Anemia) বা সিলিয়াক ডিজিজের মতো অটোইমিউন রোগ আছে, তাদের হাশিমোতো’স হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

  • গর্ভধারণ ও প্রসব পরবর্তী সময়: গর্ভাবস্থায় এবং সন্তান জন্মের পর প্রথম এক বছরে থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দিতে পারে, যাকে পোস্টপার্টাম থাইরয়েডাইটিস (postpartum thyroiditis) বলা হয়।

  • ডাউন সিনড্রোম ও টার্নার সিনড্রোম: এই জেনেটিক কন্ডিশনগুলোর সাথে থাইরয়েড রোগের ঝুঁকি বেশি থাকে।

রহস্যভেদের চাবিকাঠি – রোগ নির্ণয়

হাইপোথাইরয়ডিজমের লক্ষণগুলো যেহেতু খুব অস্পষ্ট, তাই শুধুমাত্র লক্ষণের উপর ভিত্তি করে রোগ নির্ণয় করা প্রায় অসম্ভব এবং বিপজ্জনক। এর জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায় হলো রক্ত পরীক্ষা (Blood Test)

ডাক্তার সাধারণত কয়েকটি হরমোনের মাত্রা পরীক্ষা করতে দেন:

১. TSH (থাইরয়েড-স্টিমুলেটিং হরমোন): এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাথমিক স্ক্রিনিং পরীক্ষা। এর স্বাভাবিক মাত্রা সাধারণত 0.4 থেকে 4.5 mIU/L (milli-international units per liter) ধরা হয়, যদিও ল্যাবভেদে এই পরিসর কিছুটা ভিন্ন হতে পারে।

  • প্রাইমারি হাইপোথাইরয়ডিজমে: TSH-এর মাত্রা অনেক বেশি (সাধারণত > 4.5 mIU/L) থাকে।

  • সেন্ট্রাল হাইপোথাইরয়ডিজমে: TSH-এর মাত্রা কম বা অস্বাভাবিকভাবে স্বাভাবিক (inappropriately normal) থাকে।

২. Free T4 (ফ্রি থাইরক্সিন): এটি রক্তে ভাসমান সক্রিয় T4 হরমোনের পরিমাণ মাপে, যা কোষের ব্যবহারের জন্য সহজলভ্য। টোটাল T4-এর চেয়ে এটি বেশি নির্ভরযোগ্য।

  • ওভার্ট বা প্রকাশ্য হাইপোথাইরয়ডিজমে: Free T4-এর মাত্রা কম থাকে।

  • সাবক্লিনিক্যাল হাইপোথাইরয়ডিজমে: Free T4-এর মাত্রা স্বাভাবিক থাকে।

৩. থাইরয়েড অ্যান্টিবডি (Thyroid Antibodies): যদি হাশিমোতো’স থাইরয়েডাইটিস সন্দেহ করা হয়, তবে ডাক্তার অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করতে দিতে পারেন। থাইরয়েড পারঅক্সিডেজ অ্যান্টিবডি (TPOAb)-এর মাত্রা বেশি থাকলে তা হাশিমোতো’স রোগকে প্রায় নিশ্চিত করে দেয় (Garber et al., 2012)।

ফলাফল:

  • High TSH + Low Free T4 = প্রকাশ্য বা ওভার্ট হাইপোথাইরয়ডিজম (Overt Hypothyroidism)।

  • High TSH + Normal Free T4 = সাবক্লিনিক্যাল হাইপোথাইরয়ডিজম।

  • Low/Normal TSH + Low Free T4 = সেন্ট্রাল (সেকেন্ডারি/টারশিয়ারি) হাইপোথাইরয়ডিজম।

কখনো কখনো থাইরয়েডের গঠন দেখতে আল্ট্রাসাউন্ড (Ultrasound) করার প্রয়োজন হতে পারে, বিশেষ করে যদি গলগণ্ড বা কোনো পিণ্ড (nodule) অনুভূত হয়।

আলোয় ফেরা – হাইপোথাইরয়ডিজমের চিকিৎসা

শুনে হয়তো অবাক হবেন, এত জটিল ও জীবন-বিপর্যস্তকারী একটা রোগের চিকিৎসা কিন্তু খুবই সহজ, কার্যকর এবং সস্তা। যেহেতু শরীরে থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে, তাই বাইরে থেকে সেই হরমোন ট্যাবলেট আকারে গ্রহণ করতে হয়।

১. লিভোথাইরক্সিন (Levothyroxine): চিকিৎসার স্বর্ণমান: হাইপোথাইরয়ডিজমের স্ট্যান্ডার্ড চিকিৎসা হলো লিভোথাইরক্সিন নামক ঔষধ। এটি আসলে কৃত্রিমভাবে তৈরি T4 হরমোন। শরীর এই T4-কে প্রয়োজন অনুযায়ী সক্রিয় T3-তে রূপান্তরিত করে নিতে পারে, তাই এটি থাইরয়েড গ্রন্থির স্বাভাবিক কাজকে হুবহু অনুকরণ করে। এটি সারাজীবন ধরে খেয়ে যেতে হয়। ঔষধটি বিভিন্ন পাওয়ার বা ডোজে (যেমন: ২৫, ৫০, ৭৫, ৮৮, ১০০, ১১৩, ১২৫ মাইক্রোগ্রাম ইত্যাদি) পাওয়া যায়। আপনার বয়স, ওজন, রোগের তীব্রতা, গর্ভধারণ এবং অন্যান্য শারীরিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে ডাক্তার সঠিক ডোজ নির্ধারণ করে দেবেন। সাধারণত পূর্ণ বয়স্কদের জন্য প্রাথমিক ডোজ প্রতিদিন ১.৬ মাইক্রোগ্রাম/কেজি ওজন হিসেবে শুরু করা হয় (Jonklaas et al., 2014)।

ঔষধ খাওয়ার নিয়ম (এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ): লিভোথাইরক্সিনের কার্যকারিতা অনেকাংশে নির্ভর করে এটি সঠিকভাবে খাওয়া হচ্ছে কিনা তার উপর।

  • এটি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সম্পূর্ণ খালি পেটে শুধু জল দিয়ে খেতে হয়।

  • ঔষধ খাওয়ার পর অন্তত ৩০ থেকে ৬০ মিনিট কোনো ধরনের খাবার, পানীয় (জল ছাড়া), বা অন্য কোনো ঔষধ খাওয়া যাবে না।

  • বিশেষ করে ক্যালসিয়াম (দুধ, দই), আয়রন সাপ্লিমেন্ট, অ্যান্টাসিড, এবং উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার লিভোথাইরক্সিনের শোষণ (absorption) মারাত্মকভাবে কমিয়ে দেয়। তাই এসব ঔষধ বা খাবার লিভোথাইরক্সিন খাওয়ার অন্তত ৪ ঘণ্টা পরে খেতে হয়।

  • প্রতিদিন একই সময়ে ঔষধ খাওয়ার অভ্যাস করা ভালো। যদি সকালে খেতে ভুলে যান, তবে দিনের অন্য যেকোনো সময় খালি পেটে (খাবারের ২-৩ ঘণ্টা পর) খাওয়া যেতে পারে।

চিকিৎসা শুরু করার ৬-৮ সপ্তাহ পর ডাক্তার আবার TSH পরীক্ষা করে দেখবেন যে ডোজটি সঠিক আছে কিনা। TSH-এর মাত্রা স্বাভাবিক সীমার মধ্যে না আসা পর্যন্ত ডোজ সমন্বয় করা হয়। একবার সঠিক ডোজ নির্ধারিত হয়ে গেলে, বছরে একবার বা দুবার রক্ত পরীক্ষা করে নিলেই চলে। সঠিক মাত্রায় ঔষধ খেলে হাইপোথাইরয়ডিজমের রোগীরা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক, কর্মক্ষম জীবনযাপন করতে পারেন।

২. T3/T4 কম্বিনেশন থেরাপি: একটি বিতর্কিত অধ্যায়: অধিকাংশ রোগী লিভোথাইরক্সিন (T4) চিকিৎসায় সম্পূর্ণ সুস্থ বোধ করেন। কিন্তু অল্প কিছু রোগী আছেন, যাদের TSH স্বাভাবিক হওয়ার পরও ক্লান্তি বা ব্রেইন ফগের মতো উপসর্গগুলো থেকে যায়। ধারণা করা হয়, এদের শরীরে T4 থেকে T3-তে রূপান্তরের প্রক্রিয়াটি ঠিকমতো কাজ করে না। এদের জন্য কিছু ডাক্তার কৃত্রিম T3 (Liothyronine) বা প্রাকৃতিক উৎস থেকে তৈরি থাইরয়েড এক্সট্র্যাক্ট (Desiccated Thyroid Extract – DTE, যেমন Armour Thyroid) ব্যবহারের পরামর্শ দেন, যাতে T4 ও T3 দুটোই থাকে। তবে বড় বড় ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালগুলোতে এই কম্বিনেশন থেরাপির বিশেষ কোনো সুবিধা প্রমাণিত হয়নি এবং এর কিছু ঝুঁকিও আছে। তাই মূলধারার চিকিৎসা নির্দেশিকাগুলো একে সুপারিশ করে না (Wiersinga, 2021)।

জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে হাইপোথাইরয়ডিজম

১. গর্ভাবস্থায় হাইপোথাইরয়ডিজম: মা ও শিশুর জন্য সংকটকাল: গর্ভবতী মায়েদের জন্য থাইরয়েড হরমোন দ্বিগুণ জরুরি। এটি শুধু মায়ের শরীর ঠিক রাখে না, বরং গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে সরাসরি ভূমিকা রাখে, বিশেষ করে প্রথম তিন মাসে। গর্ভাবস্থায় মায়ের হাইপোথাইরয়ডিজম থাকলে এবং তার সঠিক চিকিৎসা না হলে গর্ভপাত, প্রি-এক্লাম্পসিয়া (preeclampsia), অকাল প্রসব, কম ওজনের শিশু জন্ম এবং শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ (IQ) স্থায়ীভাবে বাধাগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে (Alexander et al., 2017)। তাই গর্ভধারণের পরিকল্পনা করার আগেই থাইরয়েড পরীক্ষা করানো উচিত। যাদের আগে থেকেই হাইপোথাইরয়ডিজম আছে, তাদের গর্ভধারণের সাথে সাথেই ঔষধের ডোজ প্রায় ৩০-৫০% বাড়ানোর প্রয়োজন হয় এবং পুরো গর্ভাবস্থায় নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকতে হয়।

২. শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের হাইপোথাইরয়ডিজম: জন্মগত হাইপোথাইরয়ডিজম ছাড়াও শৈশব বা কৈশোরেও হাইপোথাইরয়ডিজম (Juvenile Hypothyroidism) হতে পারে, যার প্রধান কারণ হাশিমোতো’স। প্রাপ্তবয়স্কদের উপসর্গের পাশাপাশি এদের ক্ষেত্রে শারীরিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হওয়া (কম উচ্চতা) এবং বয়ঃসন্ধি (puberty) দেরিতে আসা বা বাধাগ্রস্ত হওয়া একটি প্রধান লক্ষণ। স্কুলে পারফরম্যান্স খারাপ হওয়া, মনোযোগের অভাবও দেখা যায়।

৩. বয়স্কদের ক্ষেত্রে হাইপোথাইরয়ডিজম: বয়স্কদের ক্ষেত্রে হাইপোথাইরয়ডিজমের লক্ষণগুলো প্রায়ই অস্পষ্ট থাকে এবং সেগুলোকে ‘বার্ধক্যের স্বাভাবিক লক্ষণ’ বলে ভুল করা হয়। ক্লান্তি, স্মৃতিভ্রম, কোষ্ঠকাঠিন্য, বিষণ্ণতা—এগুলো সবই বয়সের সাথে আসে বলে ধরে নেওয়া হয়। তাই বয়স্কদের ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় করাটা একটা চ্যালেঞ্জ।

দীর্ঘ ছায়া – চিকিৎসা না করালে যা হতে পারে

যদি হাইপোথাইরয়ডিজমের চিকিৎসা না করা হয়, তবে সময়ের সাথে সাথে এটি মারাত্মক জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে।

  • গলগণ্ড (Goiter): ক্রমাগত TSH-এর চাপে থাইরয়েড গ্রন্থি বড় হয়ে গলগণ্ড তৈরি করতে পারে, যা দেখতে খারাপ লাগার পাশাপাশি শ্বাসনালী বা খাদ্যনালীতে চাপ দিয়ে শ্বাসকষ্ট বা গিলতে অসুবিধা তৈরি করতে পারে।

  • হৃদরোগ: দীর্ঘস্থায়ী হাইপোথাইরয়ডিজম রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) এবং ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়িয়ে দেয়, যা ধমনীতে প্লাক জমিয়ে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস (atherosclerosis) ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। হার্ট রেট কমে যাওয়া এবং হার্টের পাম্পিং ক্ষমতা কমে গিয়ে হার্ট ফেইলিওরও (heart failure) হতে পারে।

  • মিক্সিডিমা কোমা (Myxedema Coma): এটি হাইপোথাইরয়ডিজমের একটি অত্যন্ত বিরল কিন্তু জীবন-হুমকির কারণ হতে পারে এমন জটিলতা। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা না করা হলে বা কোনো তীব্র ইনফেকশন, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক বা ঠান্ডার কারণে এটি হতে পারে। এতে রোগীর শরীরের তাপমাত্রা মারাত্মকভাবে কমে যায় (hypothermia), শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃদস্পন্দন অত্যন্ত ধীর হয়ে আসে এবং রোগী জ্ঞান হারিয়ে কোমাতে চলে যেতে পারে। এটি একটি মেডিকেল ইমারজেন্সি এবং এর জন্য জরুরি ভিত্তিতে আইসিইউতে ভর্তি করে শিরায় হরমোন ইনজেকশন দিতে হয়।

ঔষধের পাশাপাশি – খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রা ও কিছু ভুল ধারণা

ঔষধের পাশাপাশি কিছু জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস হাইপোথাইরয়ডিজম নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

  • আয়োডিন: আয়োডিনের অভাবে হাইপোথাইরয়ডিজম হলে আয়োডিনযুক্ত খাবার (সামুদ্রিক মাছ, দুগ্ধজাত পণ্য) বা লবণ গ্রহণ করা আবশ্যক। তবে হাশিমোতোর রোগীদের অতিরিক্ত আয়োডিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ হিতে বিপরীত হতে পারে এবং অটোইমিউন প্রক্রিয়াকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া আয়োডিন সাপ্লিমেন্ট খাওয়া উচিত নয় (Leung & Braverman, 2014)।

  • সেলেনিয়াম ও জিঙ্ক: এই দুটি খনিজ T4 থেকে সক্রিয় T3 হরমোন তৈরিতে সাহায্য করে। ব্রাজিল নাট (Brazil nuts), সামুদ্রিক মাছ, মাংস, ডিমে সেলেনিয়াম এবং ঝিনুক, মাংস, কুমড়োর বীচিতে জিঙ্ক পাওয়া যায়।

  • গয়ট্রোজেন (Goitrogens): কিছু খাবারে (যেমন—বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকলি, সয়াবিন, শালগম) প্রাকৃতিক উপাদান থাকে যা থাইরয়েডের আয়োডিন গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। তবে ভয়ের কিছু নেই। স্বাভাবিক পরিমাণে রান্না করে খেলে এগুলো সাধারণত কোনো সমস্যা করে না। সমস্যা হতে পারে যদি এগুলো কাঁচা এবং বিপুল পরিমাণে নিয়মিত খাওয়া হয়, বিশেষ করে যদি শরীরে আয়োডিনের অভাব থাকে।

  • গ্লুটেন (Gluten): গবেষণায় দেখা গেছে, হাশিমোতো’স থাইরয়েডাইটিসের সাথে সিলিয়াক ডিজিজ (celiac disease) বা গ্লুটেন সংবেদনশীলতার একটি যোগসূত্র থাকতে পারে। যাদের দুটোই আছে, তাদের গ্লুটেন-ফ্রি ডায়েট থাইরয়েড অ্যান্টিবডি কমাতে সাহায্য করতে পারে (Virili et al., 2012)।

  • ব্যায়াম ও মানসিক চাপ: নিয়মিত হালকা থেকে মাঝারি ব্যায়াম (যেমন হাঁটা, সাঁতার, সাইক্লিং) বিপাকক্রিয়া বাড়াতে, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। যোগব্যায়াম ও মেডিটেশন মানসিক চাপ কমিয়ে সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।

কিছু প্রচলিত ভুল ধারণা:

  • ভুল ধারণা ১: হাইপোথাইরয়ডিজম মানেই মোটা হয়ে যাওয়া। সত্য: ওজন কিছুটা বাড়ে, কিন্তু সঠিক চিকিৎসায় এবং জীবনযাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখলে এটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য। স্থূলতার একমাত্র কারণ এটি নয়।

  • ভুল ধারণা ২: ঔষধ শুরু করলে আর বন্ধ করা যাবে না। সত্য: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে (যেমন হাশিমোতো’স বা অপারেশনের পর) এটি সারাজীবনের রোগ। কিন্তু কিছু অস্থায়ী ক্ষেত্রে (যেমন পোস্টপার্টাম থাইরয়েডাইটিস) এটি সেরে যেতে পারে।

  • ভুল ধারণা ৩: প্রাকৃতিক বা ভেষজ চিকিৎসায় এটি পুরোপুরি সেরে যায়। সত্য: কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই যে ভেষজ চিকিৎসায় হাইপোথাইরয়ডিজম সারে। হরমোনের ঘাটতি পূরণের জন্য হরমোন রিপ্লেসমেন্টই একমাত্র প্রমাণিত চিকিৎসা।

শেষ কথা

হাইপোথাইরয়ডিজমকে প্রথম দেখায় একটি জটিল, কুয়াশাচ্ছন্ন ও ভীতিপ্রদ রোগ বলে মনে হতে পারে। এর লক্ষণগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনের আনন্দ আর ছন্দকে কেড়ে নিতে পারে, প্রিয় মানুষটিকে করে তুলতে পারে অচেনা, বিষণ্ণ এক ছায়া। কিন্তু আসল কথা হলো, এটি আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের সবচেয়ে সফলভাবে নিয়ন্ত্রণযোগ্য দীর্ঘস্থায়ী রোগগুলোর একটি।

শরীরের এই অদ্ভুত কারখানা আর তার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার গল্পটা আসলেই চমকপ্রদ। প্রজাপতির মতো দেখতে ছোট্ট একটা অঙ্গ আমাদের ভালো থাকা বা না থাকার কতখানি নিয়ন্ত্রণ করে, তা ভাবলে অবাক হতে হয়। এর কাজকর্মের সামান্য হেরফের আমাদের জীবনকে স্থবির করে দিতে পারে, আবার সঠিক চিকিৎসায় সেই জীবনই ফিরে পায় তার পুরনো গতি আর উজ্জ্বলতা।

যদি আপনার মনে হয়, এই নীরব ঘাতকের পদধ্বনি আপনি বা আপনার কোনো প্রিয়জন শুনতে পাচ্ছেন, ভয় পাবেন না। নিজেকে বা তাকে দোষারোপ করবেন না। এটি আপনার কোনো ভুল নয়, এটি একটি শারীরিক অবস্থা। একজন ভালো ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন, সঠিক পরীক্ষা করান এবং চিকিৎসা শুরু করুন। একটি ছোট্ট ট্যাবলেটই হতে পারে আপনার আলোয় ফেরার চাবিকাঠি। জীবন আবার হয়ে উঠবে প্রাণবন্ত ও সচল, ঠিক যেমনটা হওয়ার কথা ছিল। কুয়াশা কেটে যাবে, আবার দেখা যাবে ঝলমলে রোদ।

তথ্যসূত্র

  • Alexander, E. K., Pearce, E. N., Brent, G. A., Brown, R. S., Chen, H., Dosiou, C., … & Laurberg, P. (2017). 2017 Guidelines of the American Thyroid Association for the diagnosis and management of thyroid disease during pregnancy and the postpartum. Thyroid, 27(3), 315-389.
  • American Thyroid Association. (2021). General Information/Press Room. Retrieved from https://www.thyroid.org/media-main/press-room/
  • Bianco, A. C., Salvatore, D., Gereben, B., Berry, M. J., & Larsen, P. R. (2002). Biochemistry, cellular and molecular biology, and physiological roles of the iodothyronine selenodeiodinases. Endocrine reviews, 23(1), 38-89.
  • Caturegli, P., De Remigis, A., & Rose, N. R. (2014). Hashimoto thyroiditis: clinical and diagnostic criteria. Autoimmunity reviews, 13(4-5), 391-397.
  • Chaker, L., Bianco, A. C., Jonklaas, J., & Peeters, R. P. (2017). Hypothyroidism. The Lancet, 390(10101), 1550-1562.
  • Garber, J. R., Cobin, R. H., Gharib, H., Hennessey, J. V., Klein, I., Mechanick, J. I., … & Woeber, K. A. (2012). Clinical practice guidelines for hypothyroidism in adults: cosponsored by the American Association of Clinical Endocrinologists and the American Thyroid Association. Thyroid, 22(12), 1200-1235.
  • Jonklaas, J., Bianco, A. C., Bauer, A. J., Burman, K. D., Cappola, A. R., Celi, F. S., … & Sawka, A. M. (2014). Guidelines for the treatment of hypothyroidism: prepared by the American Thyroid Association task force on thyroid hormone replacement. Thyroid, 24(12), 1670-1751.
  • Leung, A. M., & Braverman, L. E. (2014). Consequences of excess iodine. Nature reviews Endocrinology, 10(3), 136-142.
  • Okosieme, O., & Taylor, P. N. (2023). Thyroid and antithyroid drugs. In Side Effects of Drugs Annual (Vol. 45, pp. 493-503). Elsevier.
  • Pearce, S. H., Brabant, G., Duntas, L. H., & Monzani, F. (2013). 2013 ETA guideline: management of subclinical hypothyroidism. European thyroid journal, 2(4), 215-228.
  • Rastogi, M. V., & LaFranchi, S. H. (2010). Congenital hypothyroidism. Orphanet journal of rare diseases, 5(1), 1-22.
  • Vanderpump, M. P. (2011). The epidemiology of thyroid disease. British medical bulletin, 99(1), 39-51.
  • Virili, C., Bassotti, G., Santaguida, M. G., Iuorio, R., Del Duca, S. C., Mercuri, V., … & Centanni, M. (2012). Atypical celiac disease as a cause of increased need for thyroxine: a systematic study. Journal of Clinical Endocrinology & Metabolism, 97(3), E419-E422.
  • Wiersinga, W. M. (2021). T4 + T3 combination therapy: any progress? Endocrinology and Metabolism, 36(2), 234-241.
  • Zimmermann, M. B., & Boelaert, K. (2015). Iodine deficiency and thyroid disorders. The Lancet Diabetes & Endocrinology, 3(4), 286-295.

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.