পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম: এক অদ্ভুত নারীরোগের সাতকাহন

ভূমিকা

পৃথিবীর সব রহস্যের সমাধান হয়ে যায়নি। কিছু রহস্য আমাদের একেবারে চোখের সামনে ভাসতে থাকে, অথচ তার কুলকিনারা মেলে না। আমরা সেগুলোর সাথে বাঁচতে শিখি, সেগুলোকে সামলে চলতে শিখি। চিকিৎসাবিজ্ঞানের জগতেও এমন কিছু ধোঁয়াশাভরা অধ্যায় আছে। মানবদেহ, বিশেষ করে নারীর শরীর, যেন এক জটিল মহাবিশ্ব। এর পরতে পরতে লুকিয়ে আছে বিস্ময়। এই বিস্ময়েরই এক ধোঁয়াটে অধ্যায়ের নাম পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (Polycystic Ovary Syndrome) বা সংক্ষেপে PCOS।

এই নামটা শুনলেই কেমন যেন ভয় ভয় করে। তিনটা কঠিন কঠিন শব্দ—পলি, সিস্টিক, সিন্ড্রোম। মনে হয় না জানি কত বড় কোনো অসুখ! কিন্তু ব্যাপারটা কি আসলেই ততটা ভয়ের? নাকি আমরা না জেনেই বেশি ভয় পাচ্ছি? চলুন, আজ এই অদ্ভুত রোগটার ভেতর-বাহির সব জেনে নেওয়া যাক। একেবারে সহজ ভাষায়, গল্পের মতো করে।

ধরুন, টিনা নামের একটি মেয়ে। বয়স উনিশ কি বিশ। ভার্সিটিতে পড়ে। জীবনটা তার আর দশটা মেয়ের মতোই হওয়ার কথা ছিল—ক্লাস, আড্ডা, স্বপ্ন দেখা। কিন্তু কিছুদিন ধরে তার পৃথিবীটা কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। মেজাজটা যেন তার নিজের নিয়ন্ত্রণে নেই। মায়ের সামান্য কথায় চোখে জল এসে যাচ্ছে, আবার পরক্ষণেই বন্ধুদের সাথে রাগের বিস্ফোরণ ঘটছে। একা থাকলেই মন খারাপের এক অদৃশ্য কালো মেঘ তাকে ঘিরে ধরছে। আয়নার সামনে দাঁড়াতে ভয় হয়। একসময়ের মসৃণ মুখটা ভরে গেছে জেদি ব্রণর উৎপাত, যেগুলো কিছুতেই সারতে চাইছে না। আর সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হলো, তার ওজন। তেমন কিছু না খেলেও তরতর করে ওজন বাড়ছে, বিশেষ করে পেটের চারপাশে। কমানোর জন্য খাওয়া-দাওয়া প্রায় ছেড়েই দিয়েছে, কিন্তু কাঁটাটা এক বিন্দুও নড়তে চায় না। সঙ্গে যোগ হয়েছে আরেক বিড়ম্বনা—মুখে, চিবুকে, বুকের কাছে অবাঞ্ছিত, গাঢ় লোমের আনাগোনা। নিজের শরীরটাকেই তার অচেনা মনে হচ্ছে। আর পিরিয়ড বা মাসিকের তো কোনো ঠিকঠিকানাই নেই। কখনো দুই মাস, কখনো তিন মাস, একবার তো প্রায় ছয় মাস দেখাই নেই।

টিনার মা, মেয়ের এই শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন দেখে চিন্তিত মুখে তাকে নিয়ে গেলেন একজন গাইনোকোলজিস্টের কাছে। ডাক্তার সব শুনে, টিনার বিব্রত মুখটার দিকে তাকিয়ে শান্তভাবে হাসলেন। তারপর কিছু রক্ত পরীক্ষা আর একটা আলট্রাসনোগ্রাম করতে দিলেন। রিপোর্ট আসার পর ডাক্তার যা বললেন, টিনা বা তার মা, কেউই সেই নামটির জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। রোগটির নাম পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম।

আমাদের আজকের গল্পটা টিনার মতো লক্ষ লক্ষ মেয়েকে নিয়ে, যারা নীরবে এই সিন্ড্রোমের সাথে লড়াই করে চলেছে। এই গল্প শুধু রোগের নয়, রোগের পেছনের বিজ্ঞান, শরীর ও মনের জটিল সমীকরণ এবং শেষ পর্যন্ত নিজেকে খুঁজে পাওয়ার গল্প।

এই PCOS জিনিসটা আসলে কী?

নামটা একটু ভেঙেচুরে দেখা যাক।

  • পলি (Poly): গ্রিক শব্দ, এর মানে হলো ‘অনেক’ বা ‘একাধিক’।

  • সিস্টিক (Cystic): এর মানে ‘সিস্ট’ সম্পর্কিত। সিস্ট হলো জলভরা থলের মতো।

  • ওভারি (Ovary): এর মানে ডিম্বাশয়। মেয়েদের শরীরে জরায়ুর দুই পাশে বাদামের মতো দেখতে দুটি ডিম্বাশয় থাকে, যেগুলো তাদের নারীত্বের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি। এখান থেকেই প্রতি মাসে ডিম্বাণু (Egg) বের হয়।

  • সিন্ড্রোম (Syndrome): এটি কোনো একক রোগ নয়, বরং অনেকগুলো লক্ষণের সমষ্টি। যখন কয়েকটি লক্ষণ একসাথে শরীরে দেখা দেয় এবং একটি নির্দিষ্ট শারীরিক অবস্থার ইঙ্গিত দেয়, তখন তাকে সিন্ড্রোম বলে।

তাহলে পুরো নামের অর্থ দাঁড়ায়, ‘ডিম্বাশয়ে অনেক সিস্ট হওয়া জনিত লক্ষণসমষ্টি’।

নাম শুনে মনে হচ্ছে, ডিম্বাশয়ের ভেতর বুঝি অনেকগুলো সিস্ট বা টিউমার হয়ে গিয়েছে। এখানেই প্রথম এবং সবচেয়ে বড় ভুল ধারণাটির জন্ম। PCOS-এ ডিম্বাশয়ে যেগুলো দেখা যায়, সেগুলো ঠিক সত্যিকারের সিস্ট নয়। এগুলো আসলে অপরিণত ডিম্বাণু বা ফলিকল (Follicle)।

ব্যাপারটা বুঝতে হলে আগে আমাদের স্বাভাবিক মাসিক চক্রের আশ্চর্য প্রক্রিয়াটা একটু জেনে নিতে হবে। প্রতি মাসে একজন নারীর মস্তিষ্কের পিটুইটারি গ্রন্থি (Pituitary gland) থেকে ফলিকল-স্টিমুলেটিং হরমোন (FSH) নামক এক দূত এসে ডিম্বাশয়কে জাগিয়ে তোলে। তার ইশারায় ডিম্বাশয়ের ভেতরে থাকা অসংখ্য ক্ষুদ্র ফলিকলের মধ্যে কয়েকটি বড় হতে শুরু করে। এদের মধ্যে চলে এক প্রতিযোগিতা। শেষ পর্যন্ত সবচেয়ে যোগ্য ও শক্তিশালী একটি ফলিকল (যাকে বলা হয় ডমিন্যান্ট ফলিকল) বাকিদের টপকে বড় হয় এবং তার ভেতরে একটি ডিম্বাণু পরিপক্ক হতে থাকে। মাসের মাঝামাঝি সময়ে, মস্তিষ্কের নির্দেশে লুটিনাইজিং হরমোন (LH) নামক আরেক দূতের পরিমাণ হঠাৎ বেড়ে যায় (LH Surge)। এই সংকেত পেয়েই সেই পরিপক্ক ফলিকলটি ফেটে যায় এবং ডিম্বাণুটি ডিম্বাশয় থেকে মুক্ত হয়ে ফেলোপিয়ান টিউবে (Fallopian tube) চলে আসে। এই প্রক্রিয়াটির নাম ওভুলেশন (Ovulation) বা ডিম্বাণু নিঃসরণ।

এখন ভাবুন, PCOS-এ কী হয়। একটা বাগানে অনেকগুলো ফুলের কলি এসেছে। নিয়ম হলো, একটা বা দুটো কলি পুরোপুরিভাবে ফুটে ফুল হবে, আর বাকিগুলো ঝরে যাবে। কিন্তু কোনো এক অদ্ভুত কারণে—হয়তো মাটির দোষ, নয়তো আবহাওয়ার গড়মিল—বাগানের কোনো কলিই ঠিকমতো ফুটতে পারছে না। আধফোটা হয়েই আটকে আছে। PCOS-এ ডিম্বাশয়ের অবস্থাও ঠিক তাই। হরমোনের গোলমালের কারণে অনেকগুলো ফলিকল একসাথে বড় হওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু কোনোটিই সেই ‘ডমিন্যান্ট’ ফলিকল হয়ে উঠতে পারে না। ফলে, কোনোটিই পরিপক্ক (Mature) হয়ে ডিম্বাণু ছাড়তে (Ovulation) পারে না। আলট্রাসাউন্ড করলে এই আধফোটা, আটকে থাকা ফলিকলগুলোকেই ডিম্বাশয়ের পরিধির দিকে ছোট ছোট মুক্তোর মালার মতো দেখায়। একেই বলা হয় ‘পলিসিস্টিক’ অ্যাপিয়ারেন্স বা ‘স্ট্রিং অফ পার্লস’ সাইন।

সুতরাং, PCOS মানে ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার বা টিউমার নয়। এটি মূলত একটি এন্ডোক্রাইন (Endocrine) বা হরমোনজনিত সমস্যা, যা মেয়েদের প্রজনন স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে মেটাবলিজম (Metabolism) বা বিপাকক্রিয়া এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে (Azziz et al., 2004)। এটি প্রজননক্ষম বয়সের নারীদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হরমোনজনিত ব্যাধি। বিশ্বজুড়ে প্রতি দশজন মেয়ের মধ্যে একজন PCOS-এ আক্রান্ত, এবং দক্ষিণ এশীয় নারীদের মধ্যে এর প্রকোপ আরও বেশি। সংখ্যাটা নেহায়েত কম নয়।

কেন হয় এই অদ্ভুত রোগ? জট পাকানো সুতার জট ছাড়ানো

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্ভবত সবচেয়ে হতাশাজনক প্রশ্ন। কারণ এর কোনো সরল উত্তর নেই। বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিতভাবে বলতে পারেননি, ঠিক কী কারণে PCOS হয়। তবে তারা কিছু সম্ভাব্য কারণ খুঁজে পেয়েছেন, যেগুলো একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ব্যাপারটাকে একটা জট পাকানো সুতার গোলার মতো ভাবতে পারেন। একটা সুতা ধরে টান দিলে অন্যগুলোও নড়েচড়ে ওঠে।

১. জিনগত কারণ (Genetic Factors): পর্দার আড়ালের কারিগর: PCOS-এর সাথে বংশগতির একটি শক্তিশালী যোগসূত্র পাওয়া গেছে। আপনার মা, বোন বা ম্যাটারনাল আন্টের যদি PCOS থেকে থাকে, তাহলে আপনারও হওয়ার ঝুঁকি সাধারণের চেয়ে প্রায় ৩০-৫০% বেশি। বিজ্ঞানীরা নির্দিষ্ট কিছু জিনকে শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন যেগুলো এই অবস্থার জন্য দায়ী হতে পারে, কিন্তু এখনো কোনো একক ‘PCOS জিন’ খুঁজে পাওয়া যায়নি। মনে করা হয়, অনেকগুলো জিনের (Candidate genes) সম্মিলিত দুর্বলতা এবং পরিবেশগত ফ্যাক্টর মিলে এই রোগটি তৈরি করে। এই জিনগুলো মূলত ইনসুলিনের কার্যকারিতা, অ্যান্ড্রোজেন তৈরি এবং প্রদাহ নিয়ন্ত্রণের সাথে জড়িত (Legro et al., 1998)। এর সাথে যুক্ত হয়েছে এপিজেনেটিক্স (Epigenetics) এর ধারণা—অর্থাৎ, আপনার জিনে হয়তো রোগের প্রবণতা ছিল, কিন্তু আপনার জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাস বা পরিবেশ সেই জিনগুলোকে ‘সক্রিয়’ বা ‘নিষ্ক্রিয়’ করে দিতে পারে।

২. হরমোনের ভারসাম্যহীনতা (Hormonal Imbalance): রাজ্যের গোলযোগ: এটাই PCOS-এর মূল চালিকাশক্তি। আমাদের শরীর এক আশ্চর্য হরমোনের রাজ্য। মস্তিষ্ক থেকে শুরু করে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ হরমোনের সূক্ষ্ম সংকেতে চলে। PCOS-এ এই সংকেত ব্যবস্থাটাই এলোমেলো হয়ে যায়।

  • ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স (Insulin Resistance): মূল খলনায়ক: এই বিষয়টি বোঝা PCOS-কে বোঝার চাবিকাঠি। আমরা যখন শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার (ভাত, রুটি, চিনি) খাই, তখন তা ভেঙে রক্তে গ্লুকোজে (Glucose) পরিণত হয়। এই গ্লুকোজ হলো আমাদের শরীরের কোটি কোটি কোষের জ্বালানি। আমাদের অগ্ন্যাশয় (Pancreas) থেকে নিঃসৃত হওয়া ইনসুলিন (Insulin) নামের একটি হরমোন এই গ্লুকোজকে রক্ত থেকে কোষের ভেতরে ঢুকতে সাহায্য করে। ইনসুলিনকে কোষের দরজার চাবির সাথে তুলনা করা যেতে পারে।

    ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স মানে হলো, কোষগুলো এই ইনসুলিন হরমোনের প্রতি ঠিকমতো সাড়া দেয় না। যেন দরজার তালাগুলো জং ধরে গেছে, চাবি দিয়ে খুলতে অনেক বেশি চাপ দিতে হচ্ছে। ফলে, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়তে থাকে। এই অবস্থা সামাল দেওয়ার জন্য, বেচারা অগ্ন্যাশয় আরও বেশি করে ইনসুলিন তৈরি করতে শুরু করে, যাতে জোর করে হলেও গ্লুকোজকে কোষের ভেতর ঢোকানো যায়। রক্তে এই অতিরিক্ত ইনসুলিনের অবস্থাকে বলে হাইপারইনসুলিনেমিয়া (Hyperinsulinemia)।

    এই অতিরিক্ত ইনসুলিনই যত নষ্টের গোড়া। এটি একটি দুষ্টচক্রের (Vicious cycle) সূচনা করে। অতিরিক্ত ইনসুলিন ডিম্বাশয়কে সরাসরি উত্তেজিত করে আরও বেশি অ্যান্ড্রোজেন বা ‘পুরুষ হরমোন’ তৈরি করতে পাঠায়। আবার এই অতিরিক্ত ইনসুলিন এবং ওজন বৃদ্ধি শরীরের প্রদাহ বাড়ায়, যা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সকে আরও খারাপ করে তোলে (Dunaif, 1997)। PCOS-এ আক্রান্ত প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ নারীর মধ্যেই এই ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স দেখা যায়, তারা মোটা হোক বা চিকন (Lean PCOS)।

  • অ্যান্ড্রোজেনের আধিক্য (Excess Androgen বা Hyperandrogenism): অ্যান্ড্রোজেনকে সাধারণভাবে ‘পুরুষ হরমোন’ বলা হয়, যার মধ্যে প্রধান হলো টেস্টোস্টেরন (Testosterone)। তবে মজার ব্যাপার হলো, মেয়েদের শরীরেও অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি (Adrenal gland) এবং ডিম্বাশয় থেকে এই হরমোন অল্প পরিমাণে তৈরি হয়, যা তাদের পেশি, হাড় এবং যৌন ইচ্ছার জন্য জরুরি। PCOS-এ আক্রান্ত নারীদের ডিম্বাশয় এবং অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি থেকে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পরিমাণে অ্যান্ড্রোজেন তৈরি হতে থাকে। এর পেছনে বড় অনুঘটক হিসেবে কাজ করে রক্তে ভাসমান অতিরিক্ত ইনসুলিন। এই অতিরিক্ত অ্যান্ড্রোজেনই ব্রণ, অবাঞ্ছিত লোম (Hirsutism), এবং পুরুষালি টাকের (Androgenic Alopecia) মতো লক্ষণগুলোর জন্য দায়ী। শুধু তাই নয়, এই অ্যান্ড্রোজেন ডিম্বাশয়ের ভেতরে ফলিকলগুলোর স্বাভাবিক বৃদ্ধিকে বাধা দিয়ে ওভুলেশন বা ডিম্বাণু নিঃসরণ বন্ধ করে দেয় (Rosenfield, 2007)।

  • মস্তিষ্কের সংকেত বিভ্রাট (Hypothalamic-Pituitary-Ovarian Axis Dysfunction): আমাদের মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস (Hypothalamus) এবং পিটুইটারি গ্রন্থি (Pituitary gland) হলো ডিম্বাশয়ের কাজের প্রধান নিয়ন্ত্রক। পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে দুটি জরুরি হরমোন নিঃসৃত হয়—এলএইচ (Luteinizing Hormone – LH) এবং এফএসএইচ (Follicle-Stimulating Hormone – FSH)। স্বাভাবিক চক্রে, মাসের শুরুতে FSH-এর পরিমাণ LH-এর চেয়ে বেশি থাকে। PCOS-এ এই অনুপাতটাই নষ্ট হয়ে যায়। অনেক নারীর ক্ষেত্রে গোড়া থেকেই LH-এর মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে এবং স্পন্দনের হারও বেড়ে যায়, কিন্তু FSH-এর মাত্রা তুলনামূলকভাবে কম থাকে। এই উচ্চ LH ডিম্বাশয়ের থিকা কোষকে (Theca cells) অ্যান্ড্রোজেন তৈরিতে উৎসাহিত করে, আর কম FSH-এর কারণে ফলিকলগুলো ঠিকমতো পরিপক্ক হতে পারে না (Taylor et al., 1997)। ফলে শুরুতেই পুরো প্রক্রিয়াটি লাইনচ্যুত হয়ে যায়।

৩. মৃদু প্রদাহ (Low-grade Inflammation): নীরব আগুন: গবেষণায় দেখা গেছে, PCOS-এ আক্রান্ত নারীদের শরীরে এক ধরনের দীর্ঘস্থায়ী, নিম্ন-মাত্রার প্রদাহ থাকে। এটি কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় ব্যথা বা ফোলা নয়, বরং পুরো শরীরে ছড়িয়ে থাকা এক ‘নীরব আগুন’। এই প্রদাহ ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং ডিম্বাশয়কে অ্যান্ড্রোজেন তৈরিতে উদ্দীপিত করতে পারে। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং স্থূলতা এই প্রদাহকে আরও উস্কে দেয় (González et al., 2012)।

৪. অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম (Gut Microbiome): নতুন দিগন্ত: সাম্প্রতিক গবেষণা PCOS-এর সাথে আমাদের অন্ত্রে বসবাসকারী ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন অণুজীবের (Microbiome) একটি যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছে। অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমের ভারসাম্যহীনতা বা ডিসবায়োসিস (Dysbiosis) শরীরের প্রদাহ বাড়াতে পারে, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারে এবং এমনকি অ্যান্ড্রোজেনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও প্রভাব ফেলতে পারে। এটি গবেষণার একটি নতুন এবং সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র (He & Li, 2021)।

সুতরাং, PCOS কোনো একক কারণে হয় না। এটি জিন, হরমোন, জীবনযাত্রা এবং পরিবেশের এক জটিল এবং বহুমাত্রিক মিশ্রণের ফল।

লক্ষণগুলো কী কী? গোয়েন্দার চোখে

PCOS-এর লক্ষণগুলো একেকজনের ক্ষেত্রে একেকরকম হতে পারে। কারো হয়তো সবগুলো লক্ষণই প্রকট, আবার কারো হয়তো মাত্র দুই-একটি হালকাভাবে দেখা যায়। এই ভিন্নতার কারণেই রোগ নির্ণয় করাটা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। একজন ভালো ডাক্তার একজন গোয়েন্দার মতো করে ছোট ছোট সূত্র মিলিয়ে রোগটি শনাক্ত করেন।

রোগ নির্ণয়ের মূল ভিত্তি (Rotterdam Criteria): ২০০৩ সালে নেদারল্যান্ডসের রটারডাম শহরে অনুষ্ঠিত এক কনফারেন্সে PCOS নির্ণয়ের জন্য একটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ঠিক করা হয়, যা ‘রটারডাম ক্রাইটেরিয়া’ নামে পরিচিত। এই মানদণ্ড অনুযায়ী, নিচের তিনটি লক্ষণের মধ্যে অন্তত দুটি উপস্থিত থাকলে (এবং অন্যান্য সম্ভাব্য রোগ বাতিল করার পর) PCOS আছে বলে ধরে নেওয়া হয় (The Rotterdam ESHRE/ASRM-Sponsored PCOS Consensus Workshop Group, 2004)।

  1. অনিয়মিত মাসিক বা ডিম্বাণু নিঃসরণে সমস্যা (Oligo-ovulation or Anovulation):

    • অলিগোমেনোরিয়া (Oligomenorrhea): বছরে ৮ বারের কম মাসিক হওয়া বা মাসিকের চক্র ৩৫ দিনের বেশি লম্বা হওয়া।

    • অ্যামেনোরিয়া (Amenorrhea): টানা তিন মাস বা তার বেশি সময় ধরে মাসিক পুরোপুরি বন্ধ থাকা।

    • এটিই PCOS-এর সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ। অনিয়মিত ডিম্বাণু নিঃসরণের কারণেই মাসিক অনিয়মিত হয়।

  2. অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের আধিক্যের লক্ষণ (Clinical or Biochemical Hyperandrogenism):

    • ক্লিনিক্যাল লক্ষণ (যা চোখে দেখা যায়):

      • অবাঞ্ছিত লোম (Hirsutism): এটি প্রায় ৭০% PCOS রোগীর মধ্যে দেখা যায়। পুরুষের মতো শরীরের সেইসব জায়গায় (যেমন—ঠোঁটের উপরে, চিবুকে, বুকে, পেটের মাঝখানে, পিঠে) অতিরিক্ত ও গাঢ় লোম গজানো। এর তীব্রতা মাপার জন্য ডাক্তাররা ফেরিম্যান-গ্যালওয়ে স্কোর (Ferriman-Gallwey Score) ব্যবহার করেন।

      • ব্রণ (Acne): বিশেষ করে বয়ঃসন্ধি পার হয়ে যাওয়ার পরেও মুখে (বিশেষ করে চোয়ালের অংশে), বুকে বা পিঠে মাত্রাতিরিক্ত হয়, সিস্টিক ব্রণ হওয়া যা সহজে সারতে চায় না।

      • পুরুষালি টাক (Androgenic Alopecia): মাথার সামনের দিকে বা উপরিভাগের চুল পাতলা হয়ে যাওয়া, অনেকটা পুরুষদের টাক পড়ার ধরনের মতো।

    • বায়োকেমিক্যাল লক্ষণ (রক্ত পরীক্ষায় যা ধরা পড়ে):

      • রক্তে টেস্টোস্টেরন, ফ্রি-টেস্টোস্টেরন বা DHEA-S-এর মতো অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকা। অনেক সময় ক্লিনিক্যাল লক্ষণ না থাকলেও রক্ত পরীক্ষায় হরমোনের আধিক্য ধরা পড়তে পারে।

  3. আলট্রাসাউন্ডে পলিসিস্টিক ওভারি (Polycystic Ovarian Morphology – PCOM):

    • আলট্রাসনোগ্রামে ডিম্বাশয়ের ভেতরে ১২টি বা তার বেশি ছোট ছোট (২-৯ মি.মি. ব্যাসের) ফলিকল দেখা যাওয়া, অথবা ডিম্বাশয়ের আয়তন (Volume) স্বাভাবিকের চেয়ে বড় (১০ মিলি’র বেশি) হয়ে যাওয়া।

    • তবে মনে রাখা জরুরি, শুধু PCOM থাকাই PCOS নয়। প্রায় ২৫% সুস্থ, স্বাভাবিক নারীরও আলট্রাসাউন্ডে এমন ছবি আসতে পারে। আবার বয়ঃসন্ধিকালে এমন ডিম্বাশয় থাকাটা স্বাভাবিক।

PCOS-এর বিভিন্ন ধরন (Phenotypes): রটারডাম ক্রাইটেরিয়ার ওপর ভিত্তি করে PCOS-কে চারটি প্রধান ধরনে বা ফিনোটাইপে ভাগ করা হয়। এর কারণেই এক রোগীর সাথে আরেক রোগীর লক্ষণে এত তফাৎ দেখা যায়।

  • ফিনোটাইপ A (সম্পূর্ণ বা ক্লাসিক PCOS): সবচেয়ে তীব্র ধরন। এতে তিনটি ক্রাইটেরিয়াই (অনিয়মিত মাসিক, অ্যান্ড্রোজেনের আধিক্য, এবং PCOM) উপস্থিত থাকে। মেটাবলিক ঝুঁকিও এদের সবচেয়ে বেশি।

  • ফিনোটাইপ B (ক্লাসিক PCOS): অনিয়মিত মাসিক এবং অ্যান্ড্রোজেনের আধিক্য আছে, কিন্তু ওভারি দেখতে স্বাভাবিক।

  • ফিনোটাইপ C (ওভুলেটরি PCOS): মাসিক নিয়মিত, কিন্তু অ্যান্ড্রোজেনের আধিক্য এবং PCOM আছে।

  • ফিনোটাইপ D (নন-হাইপারঅ্যান্ড্রোজেনিক PCOS): অনিয়মিত মাসিক এবং PCOM আছে, কিন্তু অ্যান্ড্রোজেনের মাত্রা ও লক্ষণ স্বাভাবিক। এটি সবচেয়ে মৃদু ধরন।

অন্যান্য সাধারণ লক্ষণ:

  • ওজন বৃদ্ধি এবং কমাতে অসুবিধা: বিশেষ করে পেটের চারপাশে মেদ জমা (Central Obesity)। এটি সরাসরি ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের সাথে সম্পর্কিত এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

  • ত্বকে কালো ছোপ (Acanthosis Nigricans): ঘাড়ের পেছনে, গলা, বগল বা কুঁচকির চামড়া পুরু, কালচে এবং মখমলের মতো হয়ে যাওয়া। এটি ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের একটি অত্যন্ত স্পষ্ট বাহ্যিক লক্ষণ।

  • বন্ধ্যাত্ব বা গর্ভধারণে অসুবিধা (Subfertility/Infertility): অনিয়মিত বা অনুপস্থিত ডিম্বাণু নিঃসরণের কারণে গর্ভধারণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। PCOS নারীদের বন্ধ্যাত্বের অন্যতম প্রধান এবং চিকিৎসাযোগ্য কারণ।

  • মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব: বিষণ্ণতা (Depression), উদ্বেগ (Anxiety), প্যানিক অ্যাটাক, এবং মেজাজের আকস্মিক পরিবর্তন (Mood swings) PCOS-এর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শারীরিক লক্ষণগুলো, যেমন—অবাঞ্ছিত লোম বা ওজন বৃদ্ধি, নারীর আত্মবিশ্বাস, আত্মসম্মান এবং সামাজিক জীবনে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে (Deeks et al., 2010)।

রোগ নির্ণয়ের পথ

শুধু লক্ষণ দেখেই PCOS নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। কারণ থাইরয়েডের সমস্যা (Hypothyroidism), রক্তে প্রোল্যাক্টিন হরমোন বেড়ে যাওয়া (Hyperprolactinemia), বা অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির কিছু রোগেও (যেমন, নন-ক্লাসিকাল কনজেনিটাল অ্যাড্রেনাল হাইপারপ্লাসিয়া) একই ধরণের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তাই ডাক্তারকে নিশ্চিত হওয়ার জন্য কিছু পরীক্ষার সাহায্য নিতে হয় এবং এই রোগগুলোকে বাতিল (Rule out) করতে হয়।

  1. বিস্তারিত ইতিহাস গ্রহণ (Detailed Medical History): ডাক্তার আপনার মাসিকের ইতিহাস (প্রথম মাসিক কবে শুরু হয়েছিল, চক্রের দৈর্ঘ্য, নিয়মিত কিনা), ওজন পরিবর্তনের ধারা, ব্রণ বা অবাঞ্ছিত লোমের সমস্যা, খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়ামের রুটিন এবং পারিবারিক অসুস্থতার (ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, PCOS) ইতিহাস খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জিজ্ঞেস করবেন।

  2. শারীরিক পরীক্ষা (Physical Examination): রক্তচাপ, ওজন, উচ্চতা মেপে বিএমআই (Body Mass Index) বের করা হয়। কোমরের মাপ নেওয়া হয়। ব্রণ, অবাঞ্ছিত লোম এবং অ্যাকানথোসিস নাইগ্রিকান্সের উপস্থিতি ও তীব্রতা পরীক্ষা করা হয়।

  3. রক্ত পরীক্ষা (Blood Tests):

    • হরমোন প্যানেল: Total Testosterone, Free Testosterone, DHEA-S (অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির অ্যান্ড্রোজেন), LH, FSH (এবং এদের অনুপাত), Prolactin, TSH (থাইরয়েড হরমোন), এবং 17-OH Progesterone (অন্যান্য রোগ বাতিল করার জন্য) পরীক্ষা করা হয়।

    • মেটাবলিক প্যানেল: OGTT (Oral Glucose Tolerance Test) পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তে গ্লুকোজ এবং ইনসুলিনের মাত্রা দেখা হয়। খালি পেটে এবং ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ খাওয়ার ২ ঘণ্টা পর রক্ত পরীক্ষা করে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বা প্রি-ডায়াবেটিস আছে কিনা তা সবচেয়ে ভালোভাবে বোঝা যায়। এছাড়াও HbA1c পরীক্ষা করা হয় গত তিন মাসের গড় ব্লাড সুগার দেখার জন্য।

    • লিপিড প্রোফাইল: রক্তে কোলেস্টেরল (Total Cholesterol, LDL, HDL) ও ট্রাইগ্লিসারাইডের (Triglycerides) মাত্রা দেখা হয়, কারণ PCOS-এ এগুলোর মাত্রা অস্বাভাবিক হওয়ার ঝুঁকি থাকে (Dyslipidemia)।

  4. পেটের আলট্রাসনোগ্রাম (Pelvic Ultrasound): সাধারণত যোনিপথে একটি ছোট প্রোব ঢুকিয়ে (Transvaginal Ultrasound) এই পরীক্ষা করা হয়, কারণ এতে ডিম্বাশয়ের ছবি অনেক পরিষ্কার আসে। এই পরীক্ষাতেই ডিম্বাশয়ের আকার, আয়তন এবং ফলিকলগুলোর সংখ্যা ও অবস্থা দেখা যায়।

এই সব পরীক্ষার ফলাফল এবং রোগীর লক্ষণ মিলিয়েই ডাক্তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসেন।

দীর্ঘমেয়াদী ঝুঁকিগুলো কী কী? আজকের অবহেলা, আগামীকালের বিপদ

PCOS শুধু মাসিক বা সৌন্দর্যের সমস্যা নয়। এটি একটি সিস্টেমিক, মেটাবলিক সিন্ড্রোম। এর কিছু দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যঝুঁকিও রয়েছে, যেগুলোর ব্যাপারে সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি। সচেতন থাকলে এবং সঠিক জীবনযাত্রা মেনে চললে এই ঝুঁকিগুলো অনেকাংশেই প্রতিরোধ করা সম্ভব।

  • টাইপ-২ ডায়াবেটিস (Type 2 Diabetes): ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের কারণে PCOS আক্রান্ত নারীদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি সাধারণ নারীদের চেয়ে ৪ থেকে ৭ গুণ বেশি। প্রায় ৫০ শতাংশ নারীর ৪০ বছর বয়সের আগেই প্রি-ডায়াবেটিস বা ডায়াবেটিস হতে পারে (Legro et al., 1999)।

  • হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ (Cardiovascular Disease and Hypertension): PCOS-এর সাথে উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের (LDL) মাত্রা বৃদ্ধি, ভালো কোলেস্টেরলের (HDL) মাত্রা কমে যাওয়া এবং ট্রাইগ্লিসারাইড বেড়ে যাওয়ার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। এসব কারণে হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি সময়ের আগেই বেড়ে যায়।

  • জরায়ুর ক্যান্সার (Endometrial Cancer): এটি একটি মারাত্মক ঝুঁকি। অনিয়মিত মাসিকের কারণে জরায়ুর ভেতরের স্তর (Endometrium) নিয়মিত ঝরে পড়তে পারে না। ওভুলেশন না হওয়ায় প্রোজেস্টেরন (Progesterone) হরমোন তৈরি হয় না, যা এই স্তরটিকে স্থিতিশীল রাখে। ফলে, ইস্ট্রোজেনের (Estrogen) ‘একচ্ছত্র’ প্রভাবে এই স্তরটি অস্বাভাবিকভাবে পুরু হতে থাকে (Endometrial Hyperplasia)। দীর্ঘদিন এই অবস্থা চলতে থাকলে এটি ক্যান্সারে রূপান্তরিত হওয়ার ঝুঁকি সাধারণের চেয়ে ৩ গুণ বেড়ে যায়। নিয়মিত মাসিক হওয়া বা ঔষধের মাধ্যমে পিরিয়ড করানো তাই জরায়ুকে সুরক্ষিত রাখার জন্য অত্যন্ত জরুরি।

  • গর্ভাবস্থায় জটিলতা (Pregnancy Complications): PCOS আক্রান্ত নারীরা গর্ভধারণ করলে তাদের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস (Gestational Diabetes), উচ্চ রক্তচাপ (Pre-eclampsia), এবং সময়ের আগে সন্তান প্রসবের (Preterm birth) ঝুঁকি বেশি থাকে। গর্ভপাতের ঝুঁকিও তুলনামূলকভাবে বেশি।

  • অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া (Obstructive Sleep Apnea): ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস বারবার অল্প সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যাওয়াকে স্লিপ অ্যাপনিয়া বলে। PCOS-এ আক্রান্ত নারীদের, বিশেষ করে যারা স্থূলকায়, তাদের এই সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এটি দিনের বেলা অতিরিক্ত ঘুম ঘুম ভাব, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

  • নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (NAFLD): ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের কারণে যকৃতে চর্বি জমতে পারে, যা থেকে লিভারের প্রদাহ (NASH) বা এমনকি সিরোসিসও হতে পারে।

  • মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা: দীর্ঘমেয়াদী বিষণ্ণতা, উদ্বেগ এবং ইটিং ডিসঅর্ডার (Eating Disorder) PCOS-এর একটি বড় সঙ্গী, যা জীবনের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে।

এই ঝুঁকিগুলোর কথা শুনে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বরং এগুলো জানার উদ্দেশ্য হলো সতর্ক হওয়া এবং জীবনকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য অনুপ্রাণিত হওয়া।

চিকিৎসার সাতকাহন: নিরাময় নয়, নিয়ন্ত্রণ

দুঃখের বিষয় হলো, PCOS পুরোপুরি নিরাময় করার মতো কোনো জাদুকরী ঔষধ এখনো আবিষ্কার হয়নি। কিন্তু হতাশ হওয়ারও কারণ নেই। একে চমৎকারভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এটি একটি ম্যারাথন দৌড়, স্প্রিন্ট নয়। চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হলো রোগীর বর্তমান সমস্যা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ওপর ভিত্তি করে ঠিক করা হয়।

জীবনযাত্রার পরিবর্তন (Lifestyle Modification) – আপনার হাতেই প্রধান চাবিকাঠি

এটাই PCOS চিকিৎসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রথম ধাপ। কোনো ঔষধই এর বিকল্প হতে পারে না। জীবনযাত্রায় কিছু পরিকল্পিত পরিবর্তন এনেই PCOS-এর অনেক লক্ষণকে নিয়ন্ত্রণে আনা যায় এবং দীর্ঘমেয়াদী ঝুঁকি কমানো যায়।

  • খাদ্যাভ্যাস (Diet): আপনি যা খান, আপনি তাই: PCOS-এর ডায়েটের মূল লক্ষ্য হলো ইনসুলিন এবং প্রদাহ নিয়ন্ত্রণ।

    • কী খাবেন: এমন খাবার খেতে হবে যা রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ করে বাড়িয়ে দেয় না। অর্থাৎ, লো-গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (Low-GI) খাবার। যেমন—লাল চালের ভাত, লাল আটার রুটি, ওটস, কুইনোয়া, ডাল, সব ধরনের শাকসবজি (বিশেষ করে সবুজ পাতাযুক্ত), মটরশুঁটি, ফল (বেরি, আপেল, পেয়ারা), ভালো মানের প্রোটিন (মাছ, মুরগির মাংস, ডিম), এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট (অ্যাভোকাডো, বাদাম, বীজ, অলিভ অয়েল)। প্রচুর পরিমাণে ফাইবারযুক্ত খাবার অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং তৃপ্তি দেয়। প্রদাহরোধী খাবার (Anti-inflammatory foods) যেমন—হলুদ, আদা, সবুজ চা, ওমেগা-৩ যুক্ত মাছ (স্যামন, ইলিশ) খাদ্যতালিকায় যোগ করা উপকারী।

    • কী এড়িয়ে চলবেন: উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার (Processed food), ফাস্ট ফুড, চিনি ও মিষ্টি, চিনিযুক্ত পানীয় (কোমল পানীয়, ফলের রস), সাদা চালের ভাত, ময়দার তৈরি খাবার (সাদা পাউরুটি, বিস্কুট, কেক), এবং ট্রান্স ফ্যাট (ডালডা, মার্জারিন) যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। মূল কথা হলো, চিনি এবং রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেটকে জীবনের শত্রু বানিয়ে ফেলতে হবে (Moran et al., 2013)।

  • ব্যায়াম (Exercise): শরীরের সেরা ঔষধ

    • সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি তীব্রতার ব্যায়াম (যেমন—দ্রুত হাঁটা, জগিং, সাইকেল চালানো, সাঁতার) করার লক্ষ্য রাখতে হবে। একে ৫ দিনে ৩০ মিনিট করে ভাগ করে নেওয়া যায়।

    • এর সাথে সপ্তাহে দুই দিন পেশি শক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম (Resistance/Weight training) যোগ করলে ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়াতে অভাবনীয় ফল পাওয়া যায়। পেশি গ্লুকোজ ব্যবহার করতে ভালোবাসে, তাই পেশি বাড়লে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমে।

    • HIIT (High-Intensity Interval Training) কম সময়ে বেশি উপকার দিতে পারে।

    • ব্যায়াম শুধু ওজন কমাতেই সাহায্য করে না, এটি সরাসরি কোষের ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায়, মানসিক চাপ কমায় এবং মন ভালো রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র ৫-১০% ওজন কমালেই হরমোনের ভারসাম্যে নাটকীয় উন্নতি হতে পারে, মাসিক নিয়মিত হওয়া শুরু হতে পারে এবং গর্ভধারণের সম্ভাবনা বেড়ে যায় (Harrison et al., 2011)।

  • মানসিক চাপ কমানো (Stress Management) ও ঘুম:

    • দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ কর্টিসল (Cortisol) নামক একটি হরমোন নিঃসরণ করে, যা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এবং পেটের মেদকে আরও খারাপ করে তোলে। তাই যোগব্যায়াম (Yoga), ধ্যান (Meditation), গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম (Deep breathing exercises) বা পছন্দের কোনো শখের (গান শোনা, ছবি আঁকা, বাগান করা) মাধ্যমে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।

    • প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুম হরমোনের ভারসাম্য রক্ষার জন্য অপরিহার্য। ঘুমের অভাব ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এবং ক্ষুধা বাড়ায়।

ঔষধ (Medications) – যখন সাহায্য প্রয়োজন

যখন শুধু জীবনযাত্রার পরিবর্তনে কাঙ্ক্ষিত ফল আসে না, তখন ডাক্তার কিছু ঔষধ দেওয়ার কথা ভাবতে পারেন। ঔষধের ব্যবহার নির্ভর করে রোগীর প্রধান সমস্যা এবং লক্ষ্যের ওপর (যেমন: মাসিক নিয়মিত করা, নাকি গর্ভধারণ করা)।

  • মাসিক নিয়মিত করা এবং অ্যান্ড্রোজেন নিয়ন্ত্রণের জন্য:

    • জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল (Combined Oral Contraceptives – COCs): এগুলো PCOS চিকিৎসার অন্যতম প্রধান ঔষধ। এই পিলগুলো ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরনের জোগান দিয়ে মাসিকের চক্রকে নিয়মিত করে এবং ডিম্বাশয়কে ‘বিশ্রাম’ দেয়। এটি মস্তিষ্কের LH নিঃসরণ কমায় এবং লিভার থেকে SHBG (Sex Hormone-Binding Globulin) নামক প্রোটিনের উৎপাদন বাড়ায়। এই SHBG রক্তে ভেসে বেড়ানো অতিরিক্ত টেস্টোস্টেরনকে বেঁধে ফেলে, ফলে ব্রণ এবং অবাঞ্ছিত লোমের সমস্যা কমে। সবচেয়ে বড় কথা, এটি জরায়ুর স্তরকে নিয়মিত ঝরিয়ে দিয়ে এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সারের ঝুঁকি প্রায় পুরোপুরি নির্মূল করে।

    • প্রোজেস্টিন থেরাপি (Progestin Therapy): যারা ইস্ট্রোজেন নিতে পারেন না, তাদের প্রতি ১-৩ মাস অন্তর ১০-১৪ দিনের জন্য প্রোজেস্টিন জাতীয় ঔষধ দিয়ে পিরিয়ড করানো হয়, যাতে জরায়ু সুরক্ষিত থাকে।

  • ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এবং মেটাবলিক সমস্যার জন্য:

    • মেটফর্মিন (Metformin): এটি মূলত টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঔষধ, কিন্তু PCOS-এর চিকিৎসায় এর বহুল ব্যবহার রয়েছে। মেটফর্মিন যকৃত থেকে গ্লুকোজ উৎপাদন কমায় এবং শরীরের কোষগুলোর ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায়। এর ফলে রক্তে ইনসুলিন এবং অ্যান্ড্রোজেনের মাত্রা কমে আসে। এটি ওজন কমাতেও কিছুটা সাহায্য করতে পারে এবং মাসিক নিয়মিত করতে ভূমিকা রাখে।

  • অবাঞ্ছিত লোম ও ব্রণের জন্য:

    • অ্যান্টি-অ্যান্ড্রোজেন ঔষধ (Anti-androgen Medications): স্পাইরোনোল্যাকটন (Spironolactone) নামক একটি ঔষধ অ্যান্ড্রোজেনকে তার রিসেপ্টরে কাজ করতে বাধা দেয়, ফলে লোম এবং ব্রণের সমস্যা কমাতে খুব কার্যকর। তবে এর ফল পেতে ৬-৯ মাস সময় লাগতে পারে এবং এটি খাওয়ার সময় কার্যকর গর্ভনিরোধক ব্যবস্থা নিতে হয়, কারণ এটি পুরুষ ভ্রূণের জন্য ক্ষতিকর।

  • গর্ভধারণে সহায়তার জন্য (Fertility Treatment):

    • যারা সন্তান নিতে চাইছেন, তাদের জন্য চিকিৎসার ধরন ভিন্ন।

    • লেট্রোজল (Letrozole): বর্তমানে এটিই PCOS-জনিত বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় প্রথম সারির ঔষধ হিসেবে বিশ্বজুড়ে ব্যবহৃত হয়। এটি ডিম্বাণু নিঃসরণ (Ovulation Induction) ঘটাতে অত্যন্ত কার্যকর।

    • ক্লোমিফেন সাইট্রেট (Clomiphene Citrate): এটিও ডিম্বাণু নিঃসরণে উদ্দীপনা জোগায়, তবে লেট্রোজলের চেয়ে এর সাফল্যের হার কিছুটা কম এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেশি।

    • এই ঔষধগুলোতে কাজ না হলে গোনাডোট্রপিন (Gonadotropin) ইনজেকশন বা সর্বশেষ উপায় হিসেবে আইইউআই (IUI) এবং আইভিএফ (In-Vitro Fertilization) -এর সাহায্য নেওয়া যেতে পারে (Legro et al., 2014)।

সাপ্লিমেন্টস ও বিকল্প পথ

কিছু সাপ্লিমেন্ট PCOS-এর লক্ষণ কমাতে সাহায্য করতে পারে বলে গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে। তবে যেকোনো সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে কথা বলে নিতে হবে।

  • ইনোসিটল (Inositol): মায়ো-ইনোসিটল (Myo-inositol) এবং ডি-কাইরো-ইনোসিটল (D-chiro-inositol) নামক দুটি সাপ্লিমেন্ট ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়াতে এবং হরমোনের ভারসাম্য ফেরাতে খুব কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। এটি মাসিক নিয়মিত করতে এবং ডিম্বাণুর মান উন্নত করতে সাহায্য করে (Unfer et al., 2017)।

  • ভিটামিন ডি (Vitamin D): PCOS-এ আক্রান্ত অধিকাংশ নারীরই ভিটামিন ডি-এর অভাব থাকে। এর অভাব ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এবং অন্যান্য লক্ষণের সাথে জড়িত।

  • ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড (Omega-3 Fatty Acids): মাছের তেল থেকে প্রাপ্ত এই সাপ্লিমেন্ট শরীরের প্রদাহ কমাতে, ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে এবং অ্যান্ড্রোজেনের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

  • এন-অ্যাসিটাইলসিস্টাইন (N-acetylcysteine – NAC): এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে এবং ডিম্বাণুর মান উন্নত করতে পারে।

মনের যত্ন, সেও বড় জরুরি

PCOS-এর শারীরিক কষ্টের চেয়ে অনেক সময় মানসিক কষ্টটা বেশি ভারী হয়ে ওঠে। সমাজের চোখে ‘সুন্দর’ হওয়ার প্রচলিত সংজ্ঞার সাথে যখন নিজের শরীর মেলে না, তখন আত্মবিশ্বাস তলানিতে এসে ঠেকে। অবাঞ্ছিত লোম, ব্রণ, স্থূলতা—এগুলো নিয়ে প্রতিনিয়ত এক সামাজিক এবং মানসিক যুদ্ধ চলে। ‘কেন আমার সাথেই এমন হলো?’—এই প্রশ্নটা মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে। হরমোনের ওঠানামা সরাসরি মস্তিষ্কের রাসায়নিক পদার্থ বা নিউরোট্রান্সমিটারকে (Neurotransmitter) প্রভাবিত করে, যা বিষণ্ণতা ও উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

এই যুদ্ধটা একা লড়ার নয়। মনে রাখবেন, আপনি একা নন। পৃথিবীর কোটি কোটি নারী আপনার মতোই এই পথ দিয়ে হাঁটছেন।

  • কথা বলুন: আপনার অনুভূতিগুলো নিজের ভেতর চেপে রাখবেন না। বিশ্বস্ত বন্ধু, পরিবারের সদস্য বা সঙ্গীর সাথে কথা বলুন। তাদের জানান যে এটা শুধু ‘মুড সুইং’ নয়, এটা একটা শারীরিক অবস্থার অংশ।

  • সাপোর্ট গ্রুপ: অনলাইনে বা বাস্তবে PCOS সাপোর্ট গ্রুপে যোগ দিতে পারেন। নিজের মতো অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যাওয়া অন্যদের সাথে কথা বললে মনের ভার অনেক হালকা হয় এবং লড়াই করার শক্তি পাওয়া যায়।

  • পেশাদার সাহায্য: প্রয়োজনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা কাউন্সিলরের সাহায্য নিতে দ্বিধা করবেন না। মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়াটাও চিকিৎসারই একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (CBT) এক্ষেত্রে খুব কার্যকর হতে পারে।

  • নিজেকে ভালোবাসুন: আপনার শরীর যেমন আছে, তাকে ভালোবাসতে শিখুন। চিকিৎসা এবং জীবনযাত্রার মাধ্যমে আপনি একে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, কিন্তু এর জন্য নিজেকে দোষারোপ করবেন না। আপনার মূল্য আপনার চেহারা, ওজন বা প্রজনন ক্ষমতা দিয়ে নির্ধারিত হয় না।

শেষ কথা

পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম এক জটিল এবং আজীবনের সঙ্গী। একে ভয় পেয়ে দূরে ঠেলে দিলে চলবে না, আবার অবহেলা করলেও বিপদ। একে বুঝতে হবে, জানতে হবে এবং এর সাথে বন্ধুত্ব করে চলতে শিখতে হবে।

এটা অনেকটা মেঘলা দিনের মতো। আকাশ সবসময় মেঘাচ্ছন্ন থাকবে না। সঠিক জ্ঞান, সঠিক জীবনযাত্রা এবং সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এই মেঘ সরিয়ে রোদের ঝিলিক আনা সম্ভব। PCOS আপনার জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করবে না, বরং আপনিই একে নিয়ন্ত্রণ করবেন। আপনার হাতেই রয়েছে সেই চাবিকাঠি। শুধু দরকার একটু সচেতনতা, একটু ধৈর্য, নিজের প্রতি একটু মমতা আর পথচলার জন্য একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের সঠিক নির্দেশনা।

রহস্যময় এই রোগের সম্পূর্ণ সমাধান হয়তো একদিন হবে। সেই দিন পর্যন্ত, আসুন আমরা একে সামলে চলার শিল্পটা শিখে নিই। নিজের শরীরের ভাষাকে বুঝতে শিখি এবং স্বাস্থ্যকর ও সুখী জীবনের পথে এগিয়ে চলি।

তথ্যসূত্র

  • Azziz, R., Woods, K. S., Reyna, R., Key, T. J., Knochenhauer, E. S., & Yildiz, B. O. (2004). The prevalence and features of the polycystic ovary syndrome in an unselected population. The Journal of Clinical Endocrinology & Metabolism, 89(6), 2745–2749. https://doi.org/10.1210/jc.2003-032046
  • Deeks, A. A., Gibson-Helm, M. E., & Teede, H. J. (2010). Anxiety and depression in polycystic ovary syndrome: a comprehensive investigation. Fertility and Sterility, 93(7), 2421–2423. https://doi.org/10.1016/j.fertnstert.2009.09.020
  • Dunaif, A. (1997). Insulin resistance and the polycystic ovary syndrome: mechanism and implications for pathogenesis. Endocrine Reviews, 18(6), 774–800. https://doi.org/10.1210/edrv.18.6.0318
  • González, F., Rote, N. S., Minium, J., & Kirwan, J. P. (2012). Evidence of pro-inflammatory activation of monocytes in obese women with polycystic ovary syndrome. The Journal of Clinical Endocrinology & Metabolism, 97(10), 3746–3754. https://doi.org/10.1210/jc.2012-1934
  • Harrison, C. L., Lombard, C. B., Moran, L. J., & Teede, H. J. (2011). Exercise therapy in polycystic ovary syndrome: a systematic review. Human Reproduction Update, 17(2), 171–183. https://doi.org/10.1093/humupd/dmq045
  • He, F. F., & Li, Y. M. (2021). Role of gut microbiota in the development of insulin resistance and the mechanism of action of metformin. Metabolism and Target Organ Damage, 1, 9. https://doi.org/10.20517/mtod.2021.02
  • Legro, R. S., Driscoll, D., Strauss, J. F., 3rd, Fox, J., & Dunaif, A. (1998). Evidence for a genetic basis for hyperandrogenemia in polycystic ovary syndrome. Proceedings of the National Academy of Sciences of the United States of America, 95(25), 14956–14961. https://doi.org/10.1073/pnas.95.25.14956
  • Legro, R. S., Kunselman, A. R., Dodson, W. C., & Dunaif, A. (1999). Prevalence and predictors of risk for type 2 diabetes mellitus and impaired glucose tolerance in polycystic ovary syndrome: a prospective, controlled study in 254 affected women. The Journal of Clinical Endocrinology & Metabolism, 84(1), 165-169. https://doi.org/10.1210/jcem.84.1.5393
  • Legro, R. S., Brzyski, R. G., Diamond, M. P., Coutifaris, C., Schlaff, W. D., Casson, P., … & NICHD Reproductive Medicine Network. (2014). Letrozole versus clomiphene for infertility in the polycystic ovary syndrome. New England Journal of Medicine, 371(2), 119-129. https://doi.org/10.1056/NEJMoa1313517
  • Moran, L. J., Ko, H., Misso, M., Marsh, K., Noakes, M., Talbot, M., … & Teede, H. J. (2013). Dietary composition in the treatment of polycystic ovary syndrome: a systematic review to inform evidence-based guidelines. Journal of the Academy of Nutrition and Dietetics, 113(4), 520-545. https://doi.org/10.1016/j.jand.2012.12.010
  • Rosenfield, R. L. (2007). Hirsutism and the polycystic ovary syndrome. Endocrinology and Metabolism Clinics of North America, 36(2), 349-366. https://doi.org/10.1016/j.ecl.2007.03.003
  • Taylor, A. E., McCourt, B., Martin, K. A., Anderson, E. J., Adams, J. M., Schoenfeld, D., & Hall, J. E. (1997). Determinants of abnormal gonadotropin secretion in clinically defined women with polycystic ovary syndrome. The Journal of Clinical Endocrinology & Metabolism, 82(7), 2248–2256. https://doi.org/10.1210/jcem.82.7.4105
  • The Rotterdam ESHRE/ASRM-Sponsored PCOS Consensus Workshop Group. (2004). Revised 2003 consensus on diagnostic criteria and long-term health risks related to polycystic ovary syndrome (PCOS). Human Reproduction, 19(1), 41–47. https://doi.org/10.1093/humrep/deh098
  • Unfer, V., Facchinetti, F., Orrù, B., Giordani, B., & Nestler, J. (2017). Myo-inositol effects in women with PCOS: a meta-analysis of randomized controlled trials. Endocrine Connections, 6(8), 647–658. https://doi.org/10.1530/EC-17-0243

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.