আভাঁ-গার্দ (Avant-garde)

ভূমিকা

আভাঁ-গার্দ সিনেমা The Love of Zero (1928), একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র যা পরিচালনা করেছিলেন শিল্পী রবার্ট ফ্লোরে (Robert Florey)।

অবাক হচ্ছেন শিরোনাম দেখে? ‘আভাঁ-গার্দ’ (Avant-garde)! খটোমটো একটা শব্দ, তাই না? শুনলেই মনে হয়, এ বাবা, এ আবার কোন দেশি জিনিস! যেন ভারী কোনো শিল্পের কচকচানি। আসলে ব্যাপারটা অত ভয়ের কিছু নয়, বরং বেশ মজার। চলুন না, আজ এই আভাঁ-গার্দের নাড়ি-নক্ষত্র একটু ঘেঁটে দেখি।

শিল্প-সাহিত্যের বিশাল উঠোনে ‘আভাঁ-গার্দ’ শব্দটা উড়ে এসেছে ফরাসি মুলুক থেকে। এর মানে হলো ‘অগ্রবর্তী বাহিনী’ বা ধরুন গিয়ে, ‘সেনাদলের একদম সামনের সারির লড়াকু সৈনিক’ (advance guard or vanguard)। এই আভাঁ-গার্দ শিল্পী বা তাঁদের কাজগুলো হয় একেবারে অন্যরকম, যাকে বলে পরীক্ষামূলক (experimental)। তাঁরা এমন সব জিনিস বানিয়ে ফেলেন যা কিনা আমাদের বহুদিনের চেনা শিল্পরুচির সঙ্গে মোটেই মেলে না, বরং তাকে আচ্ছা করে একটা ধাক্কা দেয়। অনেক সময় দেখা যায়, এই কাজগুলো যখন প্রথম আলোর মুখ দেখে, তখন শিল্পবোদ্ধা থেকে শুরু করে আমজনতা – সবাই হাঁ হয়ে যান। সমাজের চোখে সেগুলো একেবারেই বেখাপ্পা, এমনকি কেউ কেউ তো রীতিমতো রে রে করে ওঠেন, বলেন – এ আবার কেমন ধারা শিল্প! (Cuddon, 1991)।

এই যে মিলিটারিদের একটা উপমা দিলাম, ‘অগ্রবর্তী বাহিনী’—এটা দিয়ে আসলে বোঝানো হয় সেইসব বাঘা শিল্পী-সাহিত্যিকদের, যাঁরা তাঁদের সময়ে শিল্পের যে প্রতিষ্ঠিত রীতিনীতি, যে ধ্যানধারণা চলে আসছিল, সেগুলোর শৈল্পিক ও নান্দনিক ভিত্তিটাকেই আচ্ছা করে ঝাঁকিয়ে দেন। তাঁদের নতুন কিছু করার নেশা, নতুন কিছু দেখানোর তাগিদ এতটাই প্রবল থাকে যে, তাঁরা প্রচলিত ভাবনাচিন্তার দেওয়ালে জোরসে একটা টোকা মারেন। যেমন ধরুন, যাঁরা একসময় ‘অ্যান্টি-নভেল’ (anti-novel) বা পরাবাস্তববাদ, ঐ যে ‘সাররিয়ালিজম’ (Surrealism) নিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন, তাঁরা তো তাঁদের সময়ের চেয়ে কয়েক কদম আগেই হাঁটছিলেন, তাই না? (Holman, 1980)।

সমাজের যাঁরা মাথা, মানে ঐ বুদ্ধিজীবী (intelligentsia) শ্রেণীর একটা অংশ হিসেবে এই আভাঁ-গার্দ শিল্পীরা সাধারণত প্রগতিশীল এবং একেবারে গোড়া ধরে নাড়িয়ে দেওয়া সংস্কারপন্থী রাজনীতির পক্ষে সওয়াল করেন। তাঁরা তাঁদের আঁকা ছবি, লেখা কবিতা বা বানানো সঙ্গীতের মাধ্যমে সমাজে একটা পরিবর্তনের হাওয়া বইয়ে দিতে চান। বেনজামিন ওলিন্দ রদ্রিগেজ (Benjamin Olinde Rodrigues) নামে এক ফরাসি ভদ্রলোক, সে বহু যুগ আগে, ১৮২৫ সালে তাঁর একখানা প্রবন্ধে – “শিল্পী, বিজ্ঞানী এবং শিল্পপতি” (“The Artist, the Scientist, and the Industrialist”) – এই আভাঁ-গার্দ শব্দটাকে রাজনৈতিক অর্থে ব্যবহার করেছিলেন। তিনি সোজাসাপ্টা বলেছিলেন, শিল্পীদের একটা মস্ত বড় নৈতিক দায়িত্ব হলো জনগণের ‘আভাঁ-গার্দ’ বা দিশারী হিসেবে কাজ করা। কারণ তাঁর মতে, “শিল্পকলার যে অসীম ক্ষমতা, সেটাই হলো সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সংস্কার আনার সবচেয়ে দ্রুত আর সবচেয়ে সরাসরি রাস্তা” (Calinescu, 1987)। ভাবুন তো একবার, সেই কোনকালে এমন যুগান্তকারী কথা বলে গেছেন তিনি!

সংস্কৃতির যে বিশাল আঙিনা, সেখানে আভাঁ-গার্দ শিল্পীরা তাঁদের শৈল্পিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে সমাজের নান্দনিকতার যে চিরাচরিত বাঁধাধরা গণ্ডি (aesthetic boundaries), সেটাকে ঠেলতে ঠেলতে আরও অনেক দূরে নিয়ে যান। উনিশ শতকের একেবারে শেষের দিকে এবং বিশ শতকের শুরুতে আধুনিকতাবাদের (modernism) যে প্রবল ঢেউ আছড়ে পড়েছিল আমাদের কবিতা, গল্প, নাটক, চিত্রকলা, সঙ্গীত আর বাড়ির নকশায় – তার পেছনে কিন্তু এই দুঃসাহসী আভাঁ-গার্দ শিল্পীদেরই মস্ত বড় অবদান ছিল (Cuddon, 1991)। শিল্পকলার ইতিহাসের পাতা ওল্টালে আমরা দেখতে পাই, সেই যে ডাডা (Dada) আন্দোলন (১৯১৫-১৯২০ এর দশক) থেকে শুরু করে সিচুয়েশনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল (Situationist International) (১৯৫৭-১৯৭২) আর তারপর আমেরিকান ল্যাঙ্গুয়েজ কবিদের (American Language poets) হাত ধরে উত্তরাধুনিকতাবাদ (postmodernism) (১৯৬০-১৯৭০ এর দশক) – এই দীর্ঘ পথপরিক্রমায় আভাঁ-গার্দ শিল্পের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ভূমিকাটা বেশ স্পষ্ট (Williams, 1989)।

ইতিহাস

রাজনৈতিক বিপ্লব প্রভাব ফেলেছিল “The Overthrow of the Autocracy” নামক সোভিয়েত আভাঁ-গার্দ চিত্রকর্মে—রুশ বিপ্লব চলাকালে তৈরি এই শিল্পকর্মে বিষয়বস্তু (content) এবং আঙ্গিক (form) উভয়ই ছিল বিপ্লব দ্বারা প্রভাবিত।

আগেই তো একবার বলেছি, ফরাসি সেনাদের পরিভাষা ‘আভাঁ-গার্দ’ (advanced guard) বলতে বোঝানো হতো সেনাবাহিনীর সেই দলটিকে, যারা সবার আগে আগে গিয়ে শত্রুপক্ষ কোনদিকে ঘাপটি মেরে আছে, আর সামনের রাস্তাঘাট কেমন, তার আগাম খবর নিয়ে আসত। উনিশ শতকের ফরাসি রাজনীতিতে এই ‘আভাঁ-গার্দ’ (vanguard) শব্দটা আবার ধার করে ব্যবহার করা হতো সেইসব বামপন্থী রাজনৈতিক সংস্কারকদের জন্য, যাঁরা ফরাসি সমাজে একেবারে আমূল একটা রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের জন্য জানপ্রাণ দিয়ে লড়ে যাচ্ছিলেন। আর উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে এসে, যখন সংস্কৃতির প্রসঙ্গে এই শব্দটা ব্যবহার করা শুরু হলো, তখন আভাঁ-গার্দ দিয়ে এমন এক ধরনের শিল্পধারাকে বোঝানো হতে লাগল, যা কিনা রাজনীতিকে শিল্পের একটা মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে সমাজে একটা বড়সড় পরিবর্তন আনতে চাইত। বিশ শতক থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত, আভাঁ-গার্দ শব্দটি বুদ্ধিজীবী (Intelligentsia) শ্রেণীর সেইসব ডাকাবুকো ঔপন্যাসিক, লেখক, শিল্পী, স্থপতি এবং আরও অনেককে বোঝায়, যাঁদের সৃজনশীল দৃষ্টিভঙ্গি, তাঁদের নতুন নতুন সব ধারণা, আর তাঁদের পরীক্ষামূলক শিল্পকর্ম সমসাময়িক বুর্জোয়া সমাজের গেঁড়ে বসা সাংস্কৃতিক মূল্যবোধগুলোকে সজোরে একটা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয় (Porter, 2004)।

ধরুন আমেরিকার ষাটের দশকের কথা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সে দেশের সংস্কৃতি আর সমাজে যে বিরাট একটা ওলটপালট ঘটছিল, তার ফলে আভাঁ-গার্দ শিল্পীরা এমন সব শিল্পকর্ম তৈরি করার সুযোগ পেলেন যা কিনা সে সময়ের জ্বলজ্যান্ত সমস্যাগুলোকে সাহসের সাথে তুলে ধরত। এই কাজগুলো সাধারণত রাজনৈতিক আর সমাজতাত্ত্বিক দিক থেকে জনপ্রিয় সংস্কৃতির ভেতরে লুকিয়ে থাকা একঘেয়েমি আর সবকিছু কিনে ফেলার যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা, মানে ঐ ভোগবাদকে (consumerism) জীবনদর্শন হিসেবে গ্রহণ করার তীব্র বিরোধিতা করত (Banes, 1993)।

তত্ত্বসমূহ

রেনাতো পোগ্গিওলি (Renato Poggioli) নামে এক মস্তবড় পণ্ডিত ব্যক্তি, ১৯৬২ সালে তাঁর একখানা বিখ্যাত বই – ‘থিওরি অফ দ্য আভাঁ-গার্দ’ (Teoria dell’arte d’avanguardia) – লিখেছিলেন। সেখানে তিনি এই আভাঁ-গার্দ ব্যাপারটাকে শিল্প এবং শৈল্পিক আন্দোলন হিসেবে কাটাছেঁড়া করে বিশ্লেষণ করার প্রথমদিকের একটা গুরুত্বপূর্ণ চেষ্টা করেছিলেন (Bru & Martens, 2016)। তিনি শৈল্পিক অগ্রগামিতার (artistic vanguardism) ঐতিহাসিক, সামাজিক, মনস্তাত্ত্বিক এবং দার্শনিক দিকগুলো খুব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছিলেন। পোগ্গিওলি তাঁর বইতে আভাঁ-গার্দ শিল্প, কবিতা আর সঙ্গীতের ভুরি ভুরি উদাহরণ টেনে দেখিয়েছিলেন যে, এই শিল্পীরা অনেকটা তাঁদের সময়ের বোহেমিয়ানদের (bohemians) মতোই কিছু বিশেষ মূল্যবোধ আর আদর্শ মনের মধ্যে পুষে রাখতেন (Poggioli, 1968)।

অন্যদিকে, আর একজন ডাকসাইটে সাহিত্য সমালোচক, নাম তাঁর পিটার বার্গার (Peter Bürger)। তিনি আবার ১৯৭৪ সালে তাঁর ‘থিওরি অফ দ্য আভাঁ-গার্দ’ (Theorie der Avantgarde) বইতে দেখালেন, কীভাবে সমাজের মোড়লরা, মানে ঐ প্রতিষ্ঠিত সমাজব্যবস্থা (The Establishment), সামাজিকভাবে সমালোচনামূলক শিল্পকর্মগুলোকে দিব্যি আপন করে নেয়। বার্গারের মতে, এটা আসলে পুঁজিবাদী সমাজের একটা ধুরন্ধর চাল। এর মাধ্যমে শিল্পী আর আভাঁ-গার্দ শিল্পধারা – দুটোকেই নিজেদের থলেতে পুরে ফেলা হয়। কারণটা কী? কারণ, “শিল্প যখন নিজেই একটা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়, তখন সে একক শিল্পকর্মের ভেতরে যে রাজনৈতিক আগুনটা জ্বলছিল, সেটাকে ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে দেয়” (Bürger, 1984)। অর্থাৎ, পোষা বাঘ আর খাঁচার বাইরে থাকে না!

এরপরে, বেঞ্জামিন এইচ. ডি. বুখলো (Benjamin H. D. Buchloh) এলেন। তিনি ২০০০ সালে তাঁর ‘নিও-অ্যাভান্টগার্ড অ্যান্ড কালচার ইন্ডাস্ট্রি: এসেজ অন ইউরোপিয়ান অ্যান্ড আমেরিকান আর্ট ফ্রম ১৯৫৫ টু ১৯৭৫’ (Neo-avantgarde and Culture Industry: Essays on European and American Art from 1955 to 1975) বইতে এই যে আভাঁ-গার্দ শিল্পী আর তাঁদের শিল্পধারার রাজনৈতিক অবস্থান, সেগুলোর ক্ষেত্রে একটা দ্বান্দ্বিক (dialectical) দৃষ্টিভঙ্গি নেওয়ার পক্ষে জোর সওয়াল করলেন (Buchloh, 2001)। মানে, ব্যাপারটা এত সোজাসাপ্টা নয়, এর ভেতরে অনেক প্যাঁচপয়জার আছে।

সমাজ এবং আভাঁ-গার্দ

অ্যাভাঁ-গার্দ শিল্পের সাংস্কৃতিক উস্কানি (cultural provocation): Fountain (1917) মার্সেল দ্যুশাঁম্প (Marcel Duchamp)-এর একটি শিল্পকর্ম, যার ছবি তুলেছিলেন আলফ্রেড স্টিগলিটজ (Alfred Stieglitz)

সমাজতাত্ত্বিক দিক থেকে যদি ব্যাপারটাকে দেখি, তাহলে এই আভাঁ-গার্দ শিল্পী, লেখক, স্থপতি এবং তাঁদের মতো আরও যাঁরা আছেন, তাঁরা হলেন সমাজের বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর (intelligentsia) একটি বিশেষ অংশ। তাঁরা এমন সব শিল্পকর্ম, বইপত্র, বা বাড়ির নকশা তৈরি করেন যা কিনা সমাজের মূল স্রোতে ভেসে চলা গতানুগতিক ধ্যানধারণা আর মূল্যবোধের সাথে বুদ্ধির লড়াইতেও নামে, আবার আদর্শের দিক থেকেও একটা জোরদার টক্কর দেয় (Cuddon, 1991)। ক্লেমেন্ট গ্রিনবার্গ (Clement Greenberg) নামে এক সাহেব, ১৯৩৯ সালে ‘আভাঁ-গার্দ অ্যান্ড কিচ’ (Avant-Garde and Kitsch) শিরোনামে একখানা প্রবন্ধ লিখেছিলেন। সেখানে তিনি যা বলেছিলেন, তা শুনলে আপনারও চোখ কপালে উঠতে পারে! তিনি বললেন, এই শৈল্পিক অগ্রগামীরা (artistic vanguard) একদিকে যেমন তথাকথিত উচ্চমার্গের সংস্কৃতিকে (high culture) মোটেই পাত্তা দেন না, তেমনই আবার গণসংস্কৃতির (mass culture) যে মেকি চাকচিক্য, সেটাকেও দূর দূর করে তাড়িয়ে দেন। কারণ কী? কারণ, আভাঁ-গার্দ শিল্পীরা চান না যে সমাজটা দিনকে দিন আরও বোকা বনে যাক – তা সে নিম্নরুচির সংস্কৃতি (low culture) দিয়েই হোক, বা তথাকথিত উচ্চমার্গের সংস্কৃতি (high culture) দিয়েই হোক। গ্রিনবার্গের সাফ কথা, পুঁজিবাদী সমাজে গণমাধ্যমের প্রতিটি শাখা, সে টিভি হোক বা রেডিও, যেন শিল্পকর্ম তৈরির এক একটা কারখানায় পরিণত হয়েছে, যা আদতে কোনো খাঁটি শৈল্পিক মাধ্যমই নয়। তাই গণসংস্কৃতির পেট থেকে যেসব জিনিস বেরোয়, সেগুলো হলো ‘কিচ’ (kitsch) – মানে, শিল্পের নামে ভাঁওতাবাজি, শিল্পের সস্তা অনুকরণ বা নকল মাত্র (Greenberg, 1939)।

ওয়াল্টার বেনিয়ামিন (Walter Benjamin) তাঁর বিখ্যাত প্রবন্ধ “দ্য ওয়ার্ক অফ আর্ট ইন দ্য এজ অফ মেকানিক্যাল রিপ্রোডাকশন” (The Work of Art in the Age of Mechanical Reproduction) (১৯৩৯) এবং থিওডোর অ্যাডোর্নো (Theodor Adorno) ও ম্যাক্স হর্কহাইমার (Max Horkheimer) তাঁদের যুগান্তকারী বই “ডায়ালেকটিক অফ এনলাইটেনমেন্ট” (Dialectic of Enlightenment) (১৯৪৭)-এ দেখিয়েছেন যে, গণসংস্কৃতির এই যে কৃত্রিমতা, এই যে মেকি ব্যাপারস্যাপার, তা একটা শিল্পকর্মের আসল যে শৈল্পিক মূল্য, তার যে একটা নিজস্ব ‘অরা’ (aura) বা প্রভা থাকে, সেটাকে একেবারে নষ্ট করে দেয় (Benjamin, 1939; Adorno, 1991)। এই পুঁজিবাদী সংস্কৃতি শিল্প (culture industry) – যেমন ধরুন বই ছাপার ব্যবসা, গানের কোম্পানি, রেডিও স্টেশন, সিনেমার জগত ইত্যাদি – এরা দিনরাত কেবল সাধারণ মানুষের ভোগের জন্য কৃত্রিম সংস্কৃতি উৎপাদন করে চলেছে (Adorno, 1991)। মেশিনে তৈরি হওয়া মাঝারি মানের শিল্পপণ্যগুলো বাজারে এসে উঁচু দরের, ভালো কারিকাজ করা শিল্পকর্মগুলোকে কোণঠাসা করে ফেলে। ফলে, শিল্পের যখন সওদাগরি হয়, মানে যখন শিল্প নিজেই একটা পণ্য (art-as-commodity) হয়ে দাঁড়ায়, তখন তার লাভটাই মুখ্য হয়ে ওঠে, আর সেটাই শেষমেশ তার শৈল্পিক মূল্য নির্ধারণ করে দেয় (Adorno, 1991)।

“The Work of Art in the Age of Mechanical Reproduction” (1935) প্রবন্ধে ওয়াল্টার বেনিয়ামিন (Walter Benjamin) পুঁজিবাদী সমাজে শিল্পের শৈল্পিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক কার্যকারিতা নিয়ে আলোচনা করেছেন।

গাই ডিবোর্ড (Guy Debord) তাঁর ‘সোসাইটি অফ দ্য স্পেক্টাকল’ (The Society of the Spectacle) (১৯৬৭) বইতে একটা গুরুতর আশঙ্কার কথা বলেছিলেন। তিনি দেখলেন, নব্যউদারবাদী পুঁজিবাদ (neoliberal capitalism) কেমন করে এই আভাঁ-গার্দ শিল্পকে টাকা-পয়সার জোরে, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্যাঁচে ফেলে, আর অর্থনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য একটা সাধারণ পণ্যে পরিণত করেছে। এতে তাঁর মনে গভীর সন্দেহ জাগল যে, এই আভাঁ-গার্দ শিল্পীরা আর তাঁদের সমাজের কাছে সাংস্কৃতিক বা বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে প্রাসঙ্গিক থাকতে পারবেন তো? কারণ, তাঁদের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে, তাঁরা যেন সাংস্কৃতিক পরিবর্তন বা রাজনৈতিক অগ্রগতির চেয়ে মুনাফার দিকেই বেশি ঝুঁকে পড়ছেন। এর কিছুদিন পর, পল মান (Paul Mann) তাঁর ‘দ্য থিওরি-ডেথ অফ দ্য আভাঁ-গার্দ’ (The Theory-Death of the Avant-Garde) (১৯৯১) বইতে বললেন, আভাঁ-গার্দ শিল্প এখনকার দিনের প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোর (Establishment) সঙ্গে অর্থনৈতিকভাবে এমনভাবে জড়িয়ে গেছে, বিশেষ করে সংস্কৃতি শিল্পের (culture industry) একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে (Mann, 1991, cited in Schechner, 2010)। এই যে চিন্তাভাবনার একটা বিরাট পরিবর্তন ঘটল, সেদিকে আঙুল তুলে মাতেই ক্যালিনেস্কু (Matei Calinescu) তাঁর ‘ফাইভ ফেসেস অফ মডার্নিটি: মডার্নিজম, আভাঁ-গার্দ, ডিক্যাডেন্স, কিচ, পোস্টমডার্নিজম’ (Five Faces of Modernity: Modernism, Avant-garde, Decadence, Kitsch, Postmodernism) (১৯৮৭) (Wang, 1987) এবং হান্স বার্টেনস (Hans Bertens) তাঁর ‘দ্য আইডিয়া অফ দ্য পোস্টমডার্ন: এ হিস্টরি’ (The Idea of the Postmodern: A History) (১৯৯৫) (Bertens, 1995) এর মতো বাঘা বাঘা তাত্ত্বিকরা বললেন, পশ্চিমা সংস্কৃতি এমন এক উত্তরাধুনিক (post-modern) সময়ে এসে ঠেকেছে, যেখানে আধুনিকতাবাদী (modernist) ধ্যানধারণা, কাজকর্ম এবং শিল্প তৈরির পুরনো পদ্ধতিগুলো এই পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে কেমন যেন অচল, অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে (Calinescu, 1987; Bertens, 1995)।

সেই যে গ্রিনবার্গ সাহেব ১৯৩০-এর দশকের শেষের দিকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছিলেন, আর পোগ্গিওলিও ১৯৬০-এর দশকের শুরুতে কিছু গভীর অন্তর্দৃষ্টির পরিচয় দিয়েছিলেন – তাঁদের সেইসব ভাবনা থেকে খানিকটা সরে এসে, সমালোচক হ্যারল্ড রোজেনবার্গ (Harold Rosenberg) তাঁর ‘দ্য ডি-ডেফিনিশন অফ আর্ট: অ্যাকশন আর্ট টু পপ টু আর্থওয়ার্কস’ (The De-Definition of Art: Action Art to Pop to Earthworks) (১৯৮৩) বইতে একটা বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন। তিনি বললেন, ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে রাজনৈতিকভাবে প্রগতিশীল আভাঁ-গার্দ শিল্পীরা শিল্পের নামে ব্যবসা করা আর গণসংস্কৃতির যে মাঝারি মান, তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো বন্ধ করে দিয়েছেন। এই যে রাজনীতির সাথে তাঁদের একটা ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল, তার ফলে শিল্পী হওয়াটা এমন একটা “পেশায়” পরিণত হলো, “যার একটা দিক হলো (শিল্পী হওয়ার এই পেশাটাকেই) উচ্ছেদ করার ভান করা” (Rosenberg, 1983; Dickie, 1975)। কী সাংঘাতিক কথা বলুন তো! যেন চোর হয়ে সাধু সাজার চেষ্টা!

আভাঁ-গার্দকে বোঝাতে গিয়ে প্রায়শই এর ঠিক উল্টো একটা শব্দ ব্যবহার করা হয় – ‘আরিয়ের-গার্ড’ (arrière-garde)। এই আরিয়ের-গার্ড শব্দটা তার মূল সামরিক অর্থে বোঝায় সেনাবাহিনীর সেই পেছনের দলটিকে, যারা সামনের সারির যোদ্ধাদের, মানে ঐ অগ্রবর্তী বাহিনীকে (advance-guard) সুরক্ষা দেয় (Adamson & Norris, 2009a)। বিশ শতকের শিল্প সমালোচনার ইতিহাসে “আভাঁ-গার্দ” শব্দটা যতবার কানের কাছে এসেছে, “আরিয়ের-গার্ড” শব্দটা ততটা কল্কে পায়নি (Adamson & Norris, 2009b)। শিল্প ইতিহাসবিদ নাটালি অ্যাডামসন (Natalie Adamson) আর টবি নরিস (Toby Norris) অবশ্য একটা জরুরি কথা বলেছেন। তাঁরা যুক্তি দিয়েছেন যে, আরিয়ের-গার্ডকে শুধু খেলো বা কিচ (kitsch) শৈলী অথবা প্রতিক্রিয়াশীল মানসিকতার মধ্যে আটকে ফেললে চলবে না। বরং এই শব্দটা সেইসব শিল্পীদের বোঝাতেও ব্যবহার করা যেতে পারে, যাঁরা আভাঁ-গার্দের ঐতিহ্যকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে চান, কিন্তু একই সাথে তাঁরা এটাও খুব ভালো করে জানেন যে, এই কাজটা করা বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে কোনো না কোনোভাবে বেমানান, যাকে বলে কালপরিক্রমাহীন (anachronistic) (Adamson & Norris, 2009b)। আবার দেখুন, সমালোচক চার্লস আলটিয়েরি (Charles Altieri) বলেছেন যে, আভাঁ-গার্দ আর আরিয়ের-গার্ড আসলে একে অপরের ওপর নির্ভরশীল, অনেকটা পিঠোপিঠি ভাইয়ের মতো: “যেখানেই একটা আভাঁ-গার্দ থাকবে, সেখানে অনিবার্যভাবে একটা আরিয়ের-গার্ডও থাকতে বাধ্য” (Altieri, 1999)।

উদাহরণসমূহ

অনেক তো কচকচানি হলো, আসুন, এবার কিছু সত্যিকারের উদাহরণ দিয়ে ব্যাপারটাকে আরও একটু জলের মতো সোজা করে ফেলি।

সঙ্গীত (Music)

অ্যাভাঁ-গার্দ (avant-garde) ধারার বুদ্ধিজীবীরা (intellectuals): ম্যাক্স হর্কহাইমার (Max Horkheimer) (বামে) এবং থিয়োডর অ্যাডর্নো (Theodor Adorno) (ডানে) ১৯৬৫ সালে হেইডেলবার্গ (Heidelberg) শহরে।

সঙ্গীতের জগতে আভাঁ-গার্দ বলতে বোঝায় এমন যেকোনো ধরনের সঙ্গীত যা কিনা চিরাচরিত সুর, তাল, লয়ের কাঠামোর ভেতরে থেকেও কোনো না কোনোভাবে সেই চেনা সীমানাটাকে ভেঙে বেরিয়ে আসতে চায় (Nicholls, 1998)। এই শব্দটা বেশ ঢিলেঢালাভাবে সেইসব সঙ্গীতশিল্পীদের কাজ বোঝাতে ব্যবহার করা হয়, যাঁরা কিনা সঙ্গীতের বহুদিনের পুরনো ঐতিহ্য থেকে একেবারে আমূল একটা বাঁক নিয়ে অন্যদিকে হাঁটা দেন (Samson, 2001)। এই সংজ্ঞা অনুযায়ী, বিশ শতকের কিছু ডাকসাইটে আভাঁ-গার্দ সুরকার হলেন আর্নল্ড শোয়েনবার্গ (Arnold Schoenberg) – যাঁর সুর শুনলে অনেকে ভিরমি খান, রিচার্ড স্ট্রাউস (Richard Strauss) (তবে শুধুমাত্র তাঁর প্রথমদিকের কাজে), চার্লস আইভস (Charles Ives) – ইনি আবার ইন্স্যুরেন্সের ব্যবসার পাশাপাশি অদ্ভুত সব সুর তৈরি করতেন, ইগর স্ট্রাভিনস্কি (Igor Stravinsky) – যাঁর ‘রাইট অফ স্প্রিং’ প্রথমবার শুনে প্যারিসের লোক তুলকালাম কাণ্ড বাধিয়েছিল, অ্যান্টন ওয়েবার্ন (Anton Webern), এডগার ভারেস (Edgard Varèse) – ইনি তো রীতিমতো শব্দের ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন, আলবান বার্গ (Alban Berg), জর্জ অ্যান্থেইল (George Antheil) (তবে শুধুমাত্র তাঁর প্রথমদিকের কাজে), হেনরি কাওয়েল (Henry Cowell) (ইনিও কেবল প্রথম জীবনে), হ্যারি পার্চ (Harry Partch) – ইনি আবার নিজের বানানো বাদ্যযন্ত্রে সুর তুলতেন, জন কেজ (John Cage) – যিনি কিনা চার মিনিট তেত্রিশ সেকেন্ডের নীরবতাকে সঙ্গীত বলে চালিয়ে দিয়েছিলেন, আইয়ানিস জেনাকিস (Iannis Xenakis) – ইনি গণিত আর স্থাপত্যকে মিলিয়ে সুর বানাতেন, মর্টন ফেল্ডম্যান (Morton Feldman), কার্লহাইঞ্জ স্টকহাউসেন (Karlheinz Stockhausen), পলিন অলিভেরোস (Pauline Oliveros), ফিলিপ গ্লাস (Philip Glass), মেরেডিথ মঙ্ক (Meredith Monk), লরি অ্যান্ডারসন (Laurie Anderson), এবং ডায়ামান্ডা গালাস (Diamanda Galás) (Schwartz et al., 1998) (Sitsky, 2002)। এদের অনেকের গান শুনলে মনে হবে, এ বাবা, এ কেমন গান!

আবার দেখুন, “অ্যাভান্ট-গার্দিজম” (Avant-gardism) এর আরও একটা সংজ্ঞা আছে যা একে “আধুনিকতাবাদ” (modernism) থেকে একটু আলাদা করে দেখে। যেমন, সেই যে পিটার বার্গার (Peter Bürger) সাহেবের কথা বলেছিলাম, তিনি বলেন, অ্যাভান্ট-গার্দিজম আসলে “শিল্পের যে প্রতিষ্ঠান” (institution of art), সেটাকেই গোড়া থেকে প্রত্যাখ্যান করে এবং সমাজের আর শিল্পের প্রচলিত মূল্যবোধগুলোকে সজোরে একটা চ্যালেঞ্জ জানায়। তাই এর সাথে রাজনৈতিক, সামাজিক আর সাংস্কৃতিক ব্যাপারগুলো ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকতে বাধ্য (Samson, 2001)। সুরকার আর সঙ্গীতবোদ্ধা ল্যারি সিটস্কি (Larry Sitsky) এর মতে, বিশ শতকের প্রথম দিকের কিছু আধুনিকতাবাদী সুরকার আছেন, যাঁরা কিন্তু ঠিক আভাঁ-গার্দিস্টদের দলে পড়েন না। তাঁদের মধ্যে আছেন আর্নল্ড শোয়েনবার্গ, অ্যান্টন ওয়েবার্ন আর ইগর স্ট্রাভিনস্কি। আবার, পরবর্তী আধুনিকতাবাদী সুরকারদের মধ্যেও কেউ কেউ আছেন যাঁরা আভাঁ-গার্দিস্টদের এই খাস দলে জায়গা পাননি, যেমন এলিয়ট কার্টার (Elliott Carter), মিল্টন ব্যাবিট (Milton Babbitt), জিয়োর্জি লিগেটি (György Ligeti), উইটোল্ড লুটোস্লাভস্কি (Witold Lutosławski) আর লুসিয়ানো বেরিও (Luciano Berio)। কারণটা কী? সিটস্কি বলছেন, “তাঁদের আধুনিকতাবাদ কিন্তু দর্শকদের উত্তেজিত করার বা চমকে দেওয়ার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত ছিল না” (Sitsky, 2002f)। 

১৯৬০-এর দশকে জ্যাজ (jazz) সঙ্গীতের আঙিনায় একেবারে মুক্ত (free) আর যাকে বলে তুখোড় অ্যাভান্ট-গার্ড সঙ্গীতের একটা মস্ত বড় ঢেউ আছড়ে পড়েছিল। সেই ঢেউয়ের মাথায় সওয়ার ছিলেন অর্নেট কোলম্যান (Ornette Coleman), সান রা (Sun Ra) – যিনি নিজেকে ভিনগ্রহের মানুষ বলে দাবি করতেন, অ্যালবার্ট আইলার (Albert Ayler), আর্চি শেপ (Archie Shepp), জন কোলট্রেন (John Coltrane) আর মাইলস ডেভিস (Miles Davis) এর মতো দিকপাল শিল্পীরা (AllMusic, n.d.; West, 2015)। আবার, ১৯৭০-এর দশকের রক সঙ্গীতের (rock music) জগতে “আর্ট” (art) শব্দটা শুনলেই লোকে সাধারণত বুঝত, এটা হয় “আক্রমণাত্মকভাবে আভাঁ-গার্দ” কিছু একটা, অথবা “লোক দেখানো প্রগতিশীল” কোনো ব্যাপার (Murray, 2015)। ১৯৭০-এর দশকের শেষের দিকে পোস্ট-পাঙ্ক (Post-punk) শিল্পীরা আবার এই অ্যাভান্ট-গার্ড নান্দনিকতার প্রেমে পড়েছিলেন আর গতানুগতিক রক সঙ্গীতের ধ্যানধারণাগুলোকে আচ্ছা করে একটা ঝাঁকুনি দিয়েছিলেন।

থিয়েটার (Theatre)

যদিও বিশ শতকের সঙ্গীতে এই আভাঁ-গার্দের একটা বেশ লম্বা-চওড়া ইতিহাস আছে, তবে থিয়েটার আর পারফরম্যান্স আর্টে (performance art) এর দাপটটা বোধহয় আরও একটু বেশিই ছিল। আর প্রায়শই দেখা যেত, এর সাথে সঙ্গীতের নতুন নতুন ধারা আর সাউন্ড ডিজাইনের অভাবনীয় সব কারিকুরি, এমনকি ভিজ্যুয়াল মিডিয়া ডিজাইনের দারুণ সব উন্নতিও জুড়ে থাকত। থিয়েটারের ইতিহাসে এমন কিছু যুগান্তকারী আন্দোলন হয়েছে যা কিনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর ইউরোপ – দুই জায়গাতেই অ্যাভান্ট-গার্ড ঐতিহ্যে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ছাপ রেখে গেছে। এদের মধ্যে ফ্ল্যাক্সাস (Fluxus), হ্যাপেনিংস (Happenings), আর নিও-ডাডা (Neo-Dada) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মঞ্চে যে কত কী কাণ্ডকারখানা যে এঁরা ঘটিয়েছেন, তা ভাবলে অবাক হতে হয়!

স্থাপত্য (Architecture)

বাড়ির নকশার জগতেও কিন্তু আভাঁ-গার্দের ছোঁয়া লেগেছিল। ঐ যে ব্রুটালিস্ট স্থাপত্য (Brutalist architecture) নামে এক ধরনের বাড়ি তৈরির রীতি চালু হয়েছিল, যেখানে কংক্রিটের ব্যবহারটা খুব প্রকটভাবে দেখা যেত – সেটা কিন্তু একটা অ্যাভান্ট-গার্ড আন্দোলন দ্বারা ভীষণভাবে প্রভাবিত হয়েছিল (Niebrzydowski, 2021)। বড় বড়, কেমন যেন একটু রুক্ষ চেহারার সব বিল্ডিং, দেখলে মনে হতো যেন ভবিষ্যতের কোনো শহর থেকে উঠে এসেছে!

আভাঁ-গার্দের নানা ধরন

আভাঁ-গার্দের যে কত রকমফের হতে পারে, তার একটা তালিকা নিচে দেওয়া হলো। পড়লেই বুঝবেন, কত দিকে যে এর ডালপালা ছড়িয়েছে!

  • অ্যাবস্ট্রাক্ট এক্সপ্রেশনিজম (Abstract expressionism) – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী আমেরিকান শিল্প আন্দোলন
  • আর্ট ফিল্ম (Art film) – চলচ্চিত্রের একটি ধারা
  • আর্টিভিজম (Artivism) – শিল্প সক্রিয়তা
  • বিট জেনারেশন (Beat Generation) – সাহিত্য আন্দোলন
  • কোবরা (COBRA) – শিল্পী গোষ্ঠী এবং শিল্প আন্দোলন
  • কনসেপচুয়াল আর্ট (Conceptual art) – শিল্প আন্দোলন
  • কনস্ট্রাকটিভিজম (Constructivism) – রাশিয়ায় উদ্ভূত শৈল্পিক ও স্থাপত্য দর্শন
  • ক্রিয়েশনিজম (Creationism) – ১৯১২ সালের দিকে শুরু হওয়া সাহিত্য আন্দোলন
  • কিউবিজম (Cubism) – ২০ শতকের আভাঁ-গার্দ শিল্প আন্দোলন
  • ডাডাইজম (Dadaism) – ২০ শতকের প্রথম দিকের আভাঁ-গার্দ শিল্প আন্দোলন
  • ডি স্টিল (De Stijl) – ১৯১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ডাচ শিল্প আন্দোলন
  • এক্সপ্রেশনিজম (Expressionism) – আধুনিকতাবাদী শিল্প আন্দোলন
  • ফভিজম (Fauvism) – শৈল্পিক শৈলী
  • ফ্ল্যাক্সাস (Fluxus) – শিল্পী, সুরকার এবং ডিজাইনারদের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক
  • ফিউচারিজম (Futurism) – শৈল্পিক ও সামাজিক আন্দোলন
  • হ্যাপেনিং (Happening) – পারফরম্যান্স আর্টওয়ার্কের একটি ধরন
  • ইমাজিনিজম (Imaginism) – রাশিয়ান কবিতা আন্দোলন
  • ইমেজিজম (Imagism) – ২০ শতকের কবিতা আন্দোলন
  • ইম্প্রেশনিজম (Impressionism) – ১৯ শতকের শিল্প আন্দোলন
  • ইনকোহেরেন্টস (Incoherents) – ১৯ শতকের ফরাসি শিল্প আন্দোলন
  • ল্যান্ড আর্ট (Land art) – ১৯৬০ ও ১৯৭০ এর দশকের শিল্প আন্দোলন
  • লে নাবি (Les Nabis) – ফরাসি শিল্পী
  • লিরিক্যাল অ্যাবস্ট্রাকশন (Lyrical Abstraction) – শিল্প আন্দোলন
  • মাসুররিয়ালিজম (Massurrealism) – ১৯৯০ এর দশকে শুরু হওয়া শিল্প আন্দোলন
  • মিনিমাল আর্ট (Minimal art) – ভিজ্যুয়াল আর্টস আন্দোলন
  • নিও-ডাডা (Neo-Dada) – ১৯৫০ এর দশকের শেষের দিকের শিল্প আন্দোলন, যার সাথে মূল ডাডা আন্দোলনের মিল রয়েছে
  • অর্ফিজম (Orphism) – শিল্প আন্দোলন, কিউবিজমের একটি শাখা
  • পপ আর্ট (Pop art) – ১৯৫০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে উদ্ভূত শিল্প আন্দোলন
  • প্রিসিশনিজম (Precisionism) – শিল্প আন্দোলন
  • প্রিমিটিভিজম (Primitivism) – শিল্প আন্দোলন
  • রেয়োনিজম (Rayonism) – রাশিয়ান শিল্প আন্দোলন
  • সিচুয়েশনিজম (Situationism) – সামাজিক বিপ্লবীদের আন্তর্জাতিক সংগঠন (১৯৫৭-৭২)
  • সুপ্রেমাটিজম (Suprematism) – ২০ শতকের প্রথম দিকের রাশিয়ান শিল্প আন্দোলন
  • সাররিয়ালিজম (Surrealism) – আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক আন্দোলন (১৯২০-১৯৫০ এর দশক)
  • সিম্বলিজম (Symbolism) – গভীর অর্থ বহনকারী উপস্থাপনা
  • ট্যাশিজম (Tachisme) – বিমূর্ত চিত্রকলার ফরাসি শৈলী
  • ইউনিভার্সাল কনস্ট্রাকটিভিজম (Universal Constructivism) – ১৯৩০-১৯৭০ পর্যন্ত শিল্প আন্দোলন
  • ভিয়েনিজ অ্যাকশনিজম (Viennese Actionism) – অস্ট্রিয়ান স্বল্পস্থায়ী শিল্প আন্দোলন
  • ভোর্টিসিজম (Vorticism) – ১৯১৪ সালে গঠিত ব্রিটিশ আধুনিকতাবাদী শিল্প আন্দোলন
  • নাদাইজম (Nadaism) – কলম্বিয়ান প্রতি-সংস্কৃতি আন্দোলন
  • স্ট্রিডেনটিজম (Stridentism) – মেক্সিকান আভাঁ-গার্দ আন্দোলন
  • আলট্রাইস্ট (Ultraist) – সাহিত্য আন্দোলন

তথ্যসূত্র

  • Adamson, N., & Norris, T. (2009a). Introduction. In N. Adamson & T. Norris (Eds.), Academics, Pompiers, Official Artists and the Arrière-Garde: Defining Modern and Transitional in France (p. 18). Cambridge Scholars Publishing.
  • Adamson, N., & Norris, T. (2009b). Introduction. In N. Adamson & T. Norris (Eds.), Academics, Pompiers, Official Artists and the Arrière-Garde: Defining Modern and Transitional in France (pp. 17–20). Cambridge Scholars Publishing.
  • Adorno, T. (1991). Culture industry reconsidered. In The Culture Industry: Selected Essays on Mass Culture. London: Routledge. (Original work published 1975)
  • AllMusic. (n.d.). Avant-Garde Jazz Music Genre Overview. Retrieved March 16, 2023, from https://www.allmusic.com/subgenre/avant-garde-jazz-ma0000002438
  • Altieri, C. (1999). Avant-Garde or Arrière-Garde in Recent American Poetry. Poetics Today, 20(4), 633. JSTOR 1773194
  • Banes, S. (1993). Greenwich Village 1963: Avant-Garde Performance and the Effervescent Body. Duke University Press.
  • Benjamin, W. (1939). The Work of Art in the Age of Mechanical Reproduction. (Archived version: https://web.archive.org/web/20061205013822/http://bid.berkeley.edu/bidclass/readings/benjamin.html)
  • Bertens, H. (1995). The Idea of the Postmodern: A History. Routledge & CRC Press.
  • Bru, S., & Martens, G. (2016). The Invention of Politics in the European Avant-Garde (1906-1940) (p. 21). Brill.
  • Buchloh, B. H. D. (2001). Neo-avantgarde and Culture Industry: Essays on European and American Art from 1955 to 1975. MIT Press.
  • Bürger, P. (1984). Theory of the Avant-Garde (p. 90). University of Minnesota Press. (Original work published 1974)
  • Calinescu, M. (1987). Five Faces of Modernity: Modernism, Avant-Garde, Decadence, Kitsch, Postmodernism (pp. 00-00). Durham: Duke University Press. (Note: Original OCR mentions pp. 00-00 which is a placeholder, actual pages for Rodrigues reference would need to be verified in the book.)
  • Cuddon, J. A. (Ed.). (1991). Avant-garde. In Penguin Dictionary of Literary Terms and Literary Theory (3rd ed., p. 74).
  • Cuddon, J. A. (Ed.). (1991). Modernism. In Penguin Dictionary of Literary Terms and Literary Theory (3rd ed., pp. 550–551).
  • Dickie, G. (1975). Symposium on Marxist Aesthetic Thought: Commentary on the Papers by Rudich, San Juan, and Morawski. Arts in Society: Art and Social Experience: Our Changing Outlook on Culture, 12(2), 232.
  • Greenberg, C. (1939, Fall). Avant-Garde and Kitsch. The Partisan Review, 6(5), 34–49.
  • Holman, C. H. (Ed.). (1980). Avant-garde. In A Handbook to Literature (4th ed., pp. 41-42).
  • Mann, P. (1991). The Theory-Death of the Avant-Garde. Indiana University Press. (Cited in Schechner, 2010)
  • Murray, N. (2015, May 28). 60 minutes of music that sum up art-punk pioneers Wire. The A.V. Club.
  • Nicholls, D. (Ed.). (1998). The Cambridge History of American Music (pp. 122–24). Cambridge University Press.
  • Niebrzydowski, W. (2021, July). The Impact of Avant-Garde Art on Brutalist Architecture. Buildings, 11(7), 290.
  • Poggioli, R. (1968). The Theory of the Avant-Garde (p. 11) (G. Fitzgerald, Trans.). Belknap Press of Harvard University Press.
  • Porter, T. (2004). Archispeak : An Illustrated Guide to Architectural Terms. London: Taylor & Francis.
  • Rosenberg, H. (1983). The De-Definition of Art: Action Art to Pop to Earthworks (p. 219). University of Chicago Press.
  • Samson, J. (2001). Avant garde. In S. Sadie & J. Tyrrell (Eds.), The New Grove Dictionary of Music and Musicians (2nd ed.). Macmillan Publishers.
  • Schechner, R. (2010). The Conservative Avant-Garde. New Literary History, 41(4), 895–913.
  • Schwartz, E., Childs, B., & Fox, J. (Eds.). (1998). Contemporary Composers on Contemporary Music (p. 379). Da Capo Press.
  • Sitsky, L. (2002). Music of the Twentieth-Century Avant-Garde: A Biocritical Sourcebook (pp. xiii–xvii, 50, 222). Greenwood Press.
  • Wang, V. (1987, December 25). Five Faces of Modernity: Modernism Avant-Garde Decadence Kitsch. Duke University Press. (Note: This refers to Matei Calinescu’s book. Wang might be a reviewer or a citation for the archived version.)
  • West, M. (2015, April 2). In the year jazz went avant-garde, Ramsey Lewis went pop with a bang. The Washington Post.
  • Williams, R. (1989). The Politics of the Avant-Garde. In The Politics of Modernism (p. 000). Verso. (Note: Original OCR mentions p. 000, actual page needs verification).

1 Comment

  1. মঁসিয়, চমৎকার লেখা! এত ছোট করে যে বিষয়টি তুলে ধরেছেন, সেজন্য আপনি এক কাপ কফি পাওনা হয়ে গেলেন! এডোর্নোর রচনা পড়েছিলাম বহুকাল আগে! ভুলেই গিয়েছিলাম। তবে আমি কবি আবিদ আনোয়ার ভাইয়ের সঙ্গে এক মত। মূল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নতুন করে কিছু করা যায় না। (তাঁর গ্রন্থ: বাংলা কবিতার আধুনিকায়ন।) Thank you ❤️❤️❤️

Leave a Reply to মুসতাফা সায়ীদ Cancel reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.