Table of Contents
ভূমিকা
কিছু কিছু শব্দ আছে, শুনলেই মনটা কেমন ভারী হয়ে যায়। মনে হয়, না জানি কত কঠিন কোনো বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছে। ইভানজেলিক্যালিজম (Evangelicalism) তেমনই একটি শব্দ। খবরের কাগজে, টিভির টক শো-তে, বিশেষ করে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় এই শব্দটি আমরা প্রায়ই শুনি। শুনে মনে হয়, এটা হয়তো খ্রিস্টানদের কোনো বিশেষ দল বা গির্জার নাম। কিন্তু ব্যাপারটা ঠিক তা নয়। আবার পুরোপুরি ভুলও নয়। এই শব্দটির সাথে জড়িয়ে আছে রাজনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি এবং কোটি কোটি মানুষের ব্যক্তিগত বিশ্বাস।
তাহলে বিষয়টা কী? এর ভেতরে এত রহস্য কেন?
চলুন, আজ এই ভারী শব্দটির ভেতরের গল্পটা একটু সহজ করে বোঝার চেষ্টা করি। কোনো বিশেষজ্ঞের কঠিন ভাষায় নয়, বরং সাধারণ এক পথিকের মতো, যে কিনা কৌতুহল নিয়ে এক অচেনা জগতের দরজায় উঁকি দিচ্ছে। এই পথচলায় আমরা দেখব, কীভাবে একটি আধ্যাত্মিক আন্দোলন সময়ের সাথে সাথে পৃথিবীর অন্যতম প্রভাবশালী সামাজিক ও রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হলো।
ইভানজেলিক্যালিজম কোনো নির্দিষ্ট গির্জা বা সংগঠনের (Denomination) নাম নয়। আপনি একজন ক্যাথলিক (Catholic) বা একজন ব্যাপ্টিস্টকে (Baptist) যেভাবে সহজে চিনতে পারবেন, একজন ইভানজেলিকালকে (Evangelical) সেভাবে চিহ্নিত করা কঠিন। কারণ এটি একটি নির্দিষ্ট কাঠামো নয়, বরং একটি আন্দোলন (Movement) এবং এক ধরনের মানসিকতা, যা প্রোটেস্ট্যান্ট (Protestant) খ্রিস্টধর্মের বিভিন্ন শাখার মধ্যে ছড়িয়ে আছে। ভাবুন তো, একই সঙ্গে একজন মানুষ ব্যাপ্টিস্ট এবং ইভানজেলিকাল দুই-ই হতে পারেন। আবার একজন লুথারান (Lutheran), মেথডিস্ট (Methodist), বা পেন্টেকোস্টালও (Pentecostal) ইভানজেলিকাল হতে পারেন। বিষয়টা অনেকটা এরকম— সব বর্গক্ষেত্রই চতুর্ভুজ, কিন্তু সব চতুর্ভুজ বর্গক্ষেত্র নয়।
এই আন্দোলনের শেকড় অনেক গভীরে, কিন্তু এর মূল সুরটি খুব সাধারণ: ব্যক্তিগত বিশ্বাসের ওপর জোর দেওয়া। এটি এমন এক বিশ্বাস যা কেবল রবিবারের গির্জায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়ে। এই পথচলার মূল ভিত্তি কী? ঐতিহাসিক ডেভিড বেবিংটন (David Bebbington) এই আন্দোলনকে বুঝতে গিয়ে চারটি মূল স্তম্ভের কথা বলেছেন, যা ‘বেবিংটন কোয়াড্রিলেটারাল’ (Bebbington Quadrilateral) নামে পরিচিত। এই চারটি স্তম্ভকে যদি আমরা একটি চেয়ারের চারটি পায়ার সাথে তুলনা করি, তাহলে পুরো ধারণাটা বোঝা সহজ হবে (Bebbington, 1989)।
চেয়ারের চারটি পায়া: ইভানজেলিক্যালিজমের মূল ভিত্তি
চেয়ারে আরাম করে বসতে হলে যেমন চারটি পায়াই সমানভাবে জরুরি, ইভানজেলিক্যাল বিশ্বাসকে বুঝতে হলেও এই চারটি নীতিকে জানতে হবে। এই চারটি বৈশিষ্ট্য আলাদাভাবে নতুন কিছু নয়, কিন্তু একসাথে মিলে তারা এমন এক শক্তি তৈরি করে যা এই আন্দোলনকে স্বতন্ত্র পরিচয় দিয়েছে।
১. বাইবেলকেন্দ্রিকতা (Biblicism): ঈশ্বরের অব্যর্থ বাণী
ইভানজেলিকালদের জন্য বাইবেল শুধু একটি ধর্মগ্রন্থ নয়, এটি জীবনের জন্য ঈশ্বরের দেওয়া নির্দেশিকা (Instruction Manual)। তাদের বিশ্বাস, বাইবেল ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাণী (Inspired Word of God)। এই বিষয়ে তাদের মধ্যে দুটি প্রধান ধারণা প্রচলিত আছে: ইনএরান্সি (Inerrancy) এবং ইনফ্যালিবিলিটি (Infallibility)। কট্টরপন্থীরা ইনএরান্সি বা অভ্রান্তিতে বিশ্বাসী। তাদের মতে, বাইবেলের মূল পাণ্ডুলিপিতে কোনো ধরনের ভুল (ঐতিহাসিক, বৈজ্ঞানিক বা ধর্মতাত্ত্বিক) নেই। এটি আক্ষরিক অর্থেই নিখুঁত। এই ধারণাটি ১৯৭৮ সালের ‘শিকাগো স্টেটমেন্ট অন বিবলিক্যাল ইনএরান্সি’ (Chicago Statement on Biblical Inerrancy) নামক একটি ঘোষণাপত্রে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়, যা অনেক রক্ষণশীল ইভানজেলিকাল প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি মানদণ্ডে পরিণত হয়। অন্যদিকে, তুলনামূলক উদারপন্থীরা ইনফ্যালিবিলিটি বা অভ্রান্ততায় বিশ্বাসী। তারা মনে করেন, বিশ্বাস এবং পরিত্রাণের মতো আধ্যাত্মিক বিষয়ে বাইবেল সম্পূর্ণ নির্ভরযোগ্য, যদিও ইতিহাস বা বিজ্ঞানের খুঁটিনাটি বিষয়ে এতে সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে।
তবে মতপার্থক্য যা-ই থাকুক, মূল কথা হলো, জীবনের যেকোনো সিদ্ধান্ত—বিয়ে, পেশা, নৈতিকতা, রাজনীতি—সবকিছুর চূড়ান্ত কর্তৃত্ব (Final Authority) বাইবেলের। অন্য কোনো ঐতিহ্য (Tradition), যুক্তি (Reason) বা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার (Experience) স্থান বাইবেলের নিচে। ধরা যাক, আপনি একটি নতুন শহরে গিয়েছেন। পথ চেনার জন্য আপনার হাতে একটি নির্ভরযোগ্য মানচিত্র আছে। ইভানজেলিকালদের জন্য বাইবেল হলো জীবন নামক এই সফরের সেই নির্ভুল মানচিত্র। তাই তাদের জীবনে বাইবেল পাঠ, এর ওপর আলোচনা (Bible Study) এবং এর শিক্ষা মুখস্থ করা একটি দৈনন্দিন অভ্যাস। এই বাইবেলকেন্দ্রিকতাই তাদের cosmovision বা বিশ্ববীক্ষা তৈরি করে দেয়। এর ব্যবহারিক প্রয়োগ দেখা যায় তাদের জীবনযাপনে। কোনো নৈতিক দ্বিধায় পড়লে তারা ভাবেন, “বাইবেল এই বিষয়ে কী বলে?” নব্বইয়ের দশকে জনপ্রিয় হওয়া “WWJD?” (What Would Jesus Do?) ব্রেসলেটগুলো এই মানসিকতারই একটি সরল প্রকাশ ছিল।
২. ক্রুশকেন্দ্রিকতা (Crucicentrism): যিশুর আত্মত্যাগের কেন্দ্রিকতা
খ্রিস্টধর্মের কেন্দ্রে আছেন যিশু খ্রিস্ট। আর ইভানজেলিকালদের বিশ্বাসের কেন্দ্রে রয়েছে যিশুর ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাটি। তাদের কাছে এটি শুধু একটি ঐতিহাসিক ঘটনা নয়, বরং মানবজাতির মুক্তির মূল চাবিকাঠি। তাদের ধর্মতত্ত্ব অনুযায়ী, মানুষ জন্মগতভাবে পাপী (Sinner) এবং পবিত্র ঈশ্বর থেকে বিচ্ছিন্ন। এই বিচ্ছিন্নতা দূর করার একমাত্র পথ হলো যিশুর প্রায়শ্চিত্তমূলক আত্মত্যাগ (Atoning Sacrifice)।
তারা প্রধানত ‘পেনাল সাবস্টিটিউশনারি অ্যাটোনমেন্ট’ (Penal Substitutionary Atonement) তত্ত্বে বিশ্বাসী। এর সহজ অর্থ হলো, যিশু ক্রুশে নিজের জীবন দিয়ে মানুষের পাপের আইনি শাস্তি (Penal debt) নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। তিনি আমাদের বিকল্প (Substitute) হিসেবে মৃত্যুবরণ করেছেন। এই ধারণাটি তাদের কাছে এতটাই কেন্দ্রীয় যে, তাদের কাছে এটিই হলো ‘সুসমাচার’ বা গসপেলের মূল বার্তা। অন্য কোনো কিছু—যিশুর নৈতিক শিক্ষা, তার অলৌকিক কাজ, বা গরিবদের প্রতি তার ভালোবাসা—এই কেন্দ্রীয় সত্যের তুলনায় গৌণ। তাই যিশুর এই মৃত্যুবরণ ও পুনরুত্থান (Resurrection) তাদের ধর্মতত্ত্বের (Theology) একেবারে হৃদপিণ্ড। তাদের উপাসনায়, গানে, প্রার্থনায় বারবার এই ক্রুশের কথা ফিরে আসে। তাদের জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে “In Christ Alone” বা “How Great Thou Art” এর মতো গানগুলোতে এই প্রায়শ্চিত্তের বিষয়টিই প্রধান হয়ে ওঠে। এটিই তাদের পরিত্রাণের (Salvation) একমাত্র আশা, যা ঈশ্বরের অনুগ্রহের (Grace) দান, কোনো মানবিক কর্মের ফল নয়।
৩. ধর্মান্তরবাদ (Conversionism): নবজন্মের অভিজ্ঞতা
ইভানজেলিকালদের জন্য খ্রিস্টান পরিবারে জন্ম নিলেই কেউ প্রকৃত খ্রিস্টান হয়ে যায় না। ক্যাথলিক বা অনেক মূলধারার প্রোটেস্ট্যান্ট চার্চে শৈশবে ব্যাপ্টিজম বা দীক্ষাস্নানের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি খ্রিস্টীয় সম্প্রদায়ের অংশ হয়ে যায়। কিন্তু ইভানজেলিকালদের মতে, এটি যথেষ্ট নয়। প্রকৃত খ্রিস্টান হওয়ার জন্য একটি ব্যক্তিগত ও সচেতন সিদ্ধান্তের প্রয়োজন।
এই সিদ্ধান্তটিকেই তারা বলেন ‘কনভার্সন’ (Conversion) বা ‘নবজন্ম’ (Born Again)। এই শব্দটি যোহনের লেখা সুসমাচারের তৃতীয় অধ্যায় থেকে এসেছে, যেখানে যিশু নিকোদীম নামের একজন ব্যক্তিকে বলছেন যে, স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করতে হলে তাকে অবশ্যই ‘নতুনভাবে জন্ম’ নিতে হবে। এটি একটি আধ্যাত্মিক মুহূর্ত, যখন একজন ব্যক্তি নিজের পাপ স্বীকার করে যিশুকে ব্যক্তিগত ত্রাণকর্তা (Personal Savior) হিসেবে গ্রহণ করে। এই অভিজ্ঞতা একেকজনের জন্য একেকরকম। এটি একটি নাটকীয়, আবেগঘন পরিবর্তন হতে পারে, আবার খুব শান্ত ও ব্যক্তিগত উপলব্ধিও হতে পারে। বিলি গ্রাহামের (Billy Graham) মতো বিখ্যাত ধর্মপ্রচারকদের বিশাল সমাবেশে (Crusade) হাজার হাজার মানুষ যেভাবে ‘অল্টার কল’ (Altar Call)-এর সময় মঞ্চের সামনে এসে হাঁটু গেড়ে প্রার্থনা করতেন, সেটি এই ‘কনভার্সন’ অভিজ্ঞতার একটি প্রকাশ্য রূপ। তাদের কাছে এই অভিজ্ঞতা ছাড়া আধ্যাত্মিক জীবন শুরুই হয় না। এটি যেন জীবনের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা, যা মানুষকে পুরোনো পাপপূর্ণ জীবন থেকে এক নতুন জীবনে নিয়ে আসে। এই অভিজ্ঞতার পর তারা একটি ব্যক্তিগত সাক্ষ্য (Personal Testimony) তৈরি করেন, যা তারা অন্যদের কাছে নিজেদের বিশ্বাসের প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরেন।
৪. সক্রিয়তাবাদ (Activism): বিশ্বাসকে কর্মে রূপ দেওয়া
চেয়ারের শেষ পায়াটি হলো সক্রিয়তা। ইভানজেলিকালরা বিশ্বাস করেন, তাদের সুসমাচার (Gospel) নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার জন্য নয়, বরং এটি সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া তাদের পবিত্র দায়িত্ব। যিশুর দেওয়া এই নির্দেশকে বলা হয় ‘দ্য গ্রেট কমিশন’ (The Great Commission), যেখানে তিনি তার অনুসারীদের পৃথিবীর সকল জাতির কাছে গিয়ে তার শিক্ষা প্রচার করতে বলেছেন। এই প্রচারকাজকে বলা হয় ‘ইভানজেলিজম’ (Evangelism), যেখান থেকে ‘ইভানজেলিকাল’ শব্দটি এসেছে।
এই সক্রিয়তা কেবল ধর্মপ্রচারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি তাদের জীবনের প্রায় সকল ক্ষেত্রে বিস্তৃত। সমাজের নানা ক্ষেত্রেও এর প্রতিফলন দেখা যায়। হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা, স্কুল তৈরি, দরিদ্রদের সেবা, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণ বিতরণ, সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই—এসবই তাদের বিশ্বাসের ফলিত রূপ। তাদের মতে, বিশ্বাস যদি কর্মে রূপান্তরিত না হয়, তবে তা মৃত। তাই তারা সবসময়ই খুব উদ্যমী এবং সংগঠিত। অষ্টাদশ শতকে ব্রিটেনে দাসপ্রথা বিলোপের আন্দোলনে উইলিয়াম উইলবারফোর্সের (William Wilberforce) মতো ইভানজেলিকাল নেতাদের ভূমিকা এর এক ঐতিহাসিক উদাহরণ (Noll, 2004)। আধুনিক যুগেও স্যামারিটান’স পার্স (Samaritan’s Purse) বা ওয়ার্ল্ড ভিশন (World Vision) এর মতো বিশাল আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এই সক্রিয়তাবাদী মানসিকতারই ফসল। তারা ধর্ম প্রচারের পাশাপাশি মানবিক সাহায্য নিয়েও পৃথিবীর দুর্গমতম স্থানগুলোতে পৌঁছে যায়।
এই চারটি স্তম্ভকে একসাথে মিলিয়েই ইভানজেলিক্যালিজম আন্দোলনটি দাঁড়িয়ে আছে। তবে এর গল্পটা এখানেই শেষ নয়। এই আন্দোলনেরও একটি দীর্ঘ এবং আকর্ষণীয় ইতিহাস আছে।
সময়ের স্রোতে ইভানজেলিক্যালিজম: এক দীর্ঘ অভিযাত্রা
কোনো কিছুই শূন্য থেকে তৈরি হয় না। ইভানজেলিক্যালিজমের শেকড় খুঁজতে হলে আমাদের কয়েক শতাব্দী পিছিয়ে যেতে হবে।
শেকড়ের সন্ধান (১৭শ-১৮শ শতক): পিউরিটানিজম, পাইটিজম ও মেথডিজম
এর প্রাথমিক অনুপ্রেরণা পাওয়া যায় ষোড়শ শতকের প্রোটেস্ট্যান্ট সংস্কার (Protestant Reformation) থেকে, যেখানে মার্টিন লুথার (Martin Luther) এবং জন ক্যালভিনের (John Calvin) মতো নেতারা পোপের কর্তৃত্বের বদলে বাইবেলের ওপর (‘সোলা স্ক্রিপচুরা’ – Sola Scriptura) এবং অনুগ্রহের মাধ্যমে বিশ্বাসে পরিত্রাণের ওপর (‘সোলা ফিডে’ – Sola Fide) জোর দিয়েছিলেন।
তবে এর প্রত্যক্ষ পূর্বসূরি হিসেবে তিনটি আন্দোলনকে চিহ্নিত করা যায়:
-
ব্রিটিশ পিউরিটানিজম (British Puritanism): সপ্তদশ শতকে ইংল্যান্ডে পিউরিটানরা চার্চ অফ ইংল্যান্ডের ভেতর থেকে একটি সংস্কার আন্দোলন শুরু করেন। তারা ব্যক্তিগত পবিত্রতা, বাইবেল পাঠ এবং একনিষ্ঠ জীবনযাপনের ওপর খুব জোর দিতেন। তাদের কাছে ধর্ম ছিল একটি আন্তরিক এবং ব্যক্তিগত বিষয়, যা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ঈশ্বরের ইচ্ছাকে প্রতিফলিত করবে।
-
জার্মান পাইটিজম (German Pietism): একই সময়ে জার্মানিতে ফিলিপ জ্যাকব স্পেনার (Philipp Jakob Spener) এবং অগাস্ট হারমান ফ্রাঙ্কের (August Hermann Francke) নেতৃত্বে পাইটিজম আন্দোলন শুরু হয়। স্পেনার তার বিখ্যাত বই Pia Desideria (Pious Desires)-এ প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের শুষ্ক আনুষ্ঠানিকতার বদলে ব্যক্তিগত ভক্তি, ছোট ছোট দলে বাইবেল পাঠ (collegia pietatis), এবং আন্তরিক জীবনযাপনের ওপর গুরুত্ব দেন। এই ছোট ছোট দলগুলোই আধুনিক ইভানজেলিকাল চার্চের ‘স্মল গ্রুপ’ বা ‘সেল গ্রুপ’ এর পূর্বসূরি।
-
মেথডিজম (Methodism): অষ্টাদশ শতকে ইংল্যান্ডে জন ওয়েসলি (John Wesley) এবং তার ভাই চার্লস ওয়েসলির (Charles Wesley) হাত ধরে শুরু হয় মেথডিজম আন্দোলন। অক্সফোর্ডের এই ছাত্ররা একটি ‘পবিত্র ক্লাব’ (Holy Club) গঠন করেন এবং সুশৃঙ্খলভাবে আধ্যাত্মিক জীবনযাপনের চেষ্টা করতেন। জন ওয়েসলি পরবর্তীতে গির্জার চার দেয়ালের বাইরে, খোলা মাঠে, খনিতে, সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে ধর্মপ্রচার করতেন। তার আবেগঘন বক্তৃতা এবং ব্যক্তিগত পরিবর্তনের আহ্বান হাজার হাজার মানুষকে আকর্ষণ করেছিল। ১৭৩৮ সালে লন্ডনের অল্ডার্সগেট স্ট্রিটে তার বিখ্যাত ‘হৃদয় উষ্ণ হওয়ার’ (heart-warming) অভিজ্ঞতাকে অনেকেই ইভানজেলিক্যাল নবজন্মের আদর্শ উদাহরণ হিসেবে দেখেন।
এই তিনটি ধারাই—পিউরিটানদের নৈতিক একাগ্রতা, পাইটিস্টদের আন্তরিক ভক্তি এবং মেথডিস্টদের সক্রিয় প্রচার—যেন ইভানজেলিক্যালিজমের জন্য উর্বর জমি তৈরি করে দিয়েছিল (Noll, 2004)।
মহাজাগরণ: যখন বিশ্বাসের ঢেউ এসে লাগল (The Great Awakenings)
আমেরিকার ইতিহাসে কয়েকটি ঘটনা ইভানজেলিক্যালিজমকে একটি শক্তিশালী গণআন্দোলনে পরিণত করে। এগুলো ‘মহাজাগরণ’ বা ‘Great Awakenings’ নামে পরিচিত।
-
প্রথম মহাজাগরণ (First Great Awakening, ১৭৩০-১৭৪০): এই সময়ে জর্জ হোয়াইটফিল্ড (George Whitefield) এবং জোনাথন এডওয়ার্ডসের (Jonathan Edwards) মতো ধর্মপ্রচারকরা কলোনিয়াল আমেরিকায় ঘুরে ঘুরে বক্তৃতা দিতেন। হোয়াইটফিল্ড ছিলেন একজন ক্যারিশম্যাটিক বক্তা, যিনি খোলা মাঠে হাজার হাজার মানুষের সামনে নাটকীয় ভঙ্গিতে প্রচার করতেন। অন্যদিকে, এডওয়ার্ডস ছিলেন একজন গভীর চিন্তাবিদ এবং ধর্মতাত্ত্বিক, যার বিখ্যাত বক্তৃতা “Sinners in the Hands of an Angry God” মানুষকে ঈশ্বরের পবিত্র ক্রোধ এবং করুণা সম্পর্কে ভাবতে বাধ্য করেছিল। এই জাগরণ আমেরিকার সমাজে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। এটি মানুষকে শিখিয়েছিল যে, ধর্মের জন্য কোনো যাজক বা রাজার ওপর নির্ভর করতে হয় না; ঈশ্বরের সঙ্গে সম্পর্কটা একান্তই ব্যক্তিগত। অনেক ঐতিহাসিকের মতে, এই গণতান্ত্রিক এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক মানসিকতাই পরবর্তীতে আমেরিকার স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে উস্কে দিয়েছিল (Marsden, 1980)।
-
দ্বিতীয় মহাজাগরণ (Second great Awakening, ১৮০০-১৮৪০): এই জাগরণ ছিল আরও ব্যাপক এবং দীর্ঘস্থায়ী। চার্লস ফিনি (Charles Finney) ছিলেন এর অন্যতম প্রধান নেতা। তিনি প্রচারের জন্য নতুন কিছু কৌশল (New Measures) উদ্ভাবন করেন, যেমন ‘অ্যাংজাইটি বেঞ্চ’ (anxious bench), যেখানে পাপবোধে কাতর মানুষরা এসে পরামর্শ ও প্রার্থনার জন্য বসতে পারতেন। এই সময়ে মানুষের স্বাধীন ইচ্ছার (Free Will) ওপর খুব জোর দেওয়া হয়। বলা হয়, মানুষ চাইলে নিজেই নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে এবং পরিত্রাণ বেছে নিতে পারে। এই জাগরণের একটি বড় বৈশিষ্ট্য ছিল সামাজিক সংস্কার। দাসপ্রথা বিলোপ (Abolitionism), মদ্যপান নিষিদ্ধকরণ (Temperance Movement), এবং নারী অধিকারের মতো অনেক সামাজিক আন্দোলনের পেছনে ইভানজেলিকালদের বড় ভূমিকা ছিল। তারা বিশ্বাস করতেন, একটি আদর্শ সমাজ (Perfect Society) গড়ে তোলা সম্ভব যদি মানুষ ব্যক্তিগতভাবে পরিবর্তিত হয়। এই আশাবাদী এবং কর্মী মানসিকতা আমেরিকান সংস্কৃতির একটি স্থায়ী অংশে পরিণত হয়।
আধুনিক যুগ এবং সংকট (২০শ শতক): মৌলবাদ থেকে নব্য-ইভানজেলিক্যালিজম
বিংশ শতাব্দীর শুরুতে ইভানজেলিক্যালিজম এক বড় সংকটের মুখে পড়ে। একদিকে ডারউইনের বিবর্তনবাদ (Theory of Evolution), আধুনিক মনোবিজ্ঞান এবং বাইবেলের ঐতিহাসিক সমালোচনার (Historical Criticism) মতো বিষয়গুলো তাদের বিশ্বাসকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছিল। এই চ্যালেঞ্জের মুখে প্রোটেস্ট্যান্টদের মধ্যে একটি বিভাজন তৈরি হয়।
একদল, যারা মডার্নিস্ট (Modernist) বা লিবারেল (Liberal) নামে পরিচিত, তারা ধর্মতত্ত্বের সঙ্গে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমন্বয় করতে চাইলেন। আরেকদল, যারা ফান্ডামেন্টালিস্ট (Fundamentalist) বা মৌলবাদী নামে পরিচিত, তারা আধুনিকতাকে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করে খ্রিস্টধর্মের কিছু মৌলিক সত্যকে (Five Fundamentals) আঁকড়ে ধরলেন। এই মৌলিক সত্যগুলো হলো: বাইবেলের অভ্রান্তি, যিশুর কুমারী গর্ভে জন্ম, তার প্রায়শ্চিত্তমূলক মৃত্যু, তার দৈহিক পুনরুত্থান এবং তার দ্বিতীয় আগমন। তারা সমাজ থেকে নিজেদের প্রায় গুটিয়ে নিলেন এবং আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে আধুনিকতার বিরোধিতা করতে লাগলেন। ১৯২৫ সালের স্কোপস ট্রায়াল (Scopes Trial), যেখানে একজন শিক্ষককে ক্লাসে বিবর্তনবাদ পড়ানোর জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছিল, সেটি মৌলবাদীদের জন্য একটি বড় জনসম্মানের পরাজয় ছিল। এরপর তারা মূলধারার সমাজ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং নিজস্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রকাশনা সংস্থা ও নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে (Marsden, 1980)।
প্রাথমিকভাবে অনেক ইভানজেলিকাল এই মৌলবাদী শিবিরের অংশ ছিলেন। কিন্তু ১৯৪০-এর দশকের পর এক নতুন ধারার জন্ম হয়, যারা নিজেদের ‘নিউ ইভানজেলিকাল’ (New Evangelicals) বলে পরিচয় দেন। বিলি গ্রাহাম, কার্ল এফ. এইচ. হেনরির (Carl F. H. Henry) এবং হ্যারল্ড ওকেঙ্গার (Harold Ockenga) মতো নেতারা ছিলেন এর পুরোধা। তারা মৌলবাদীদের মতো আক্রমণাত্মক এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী হতে চাইলেন না। তারা একদিকে যেমন বাইবেলের কর্তৃত্ব এবং খ্রিস্টের ক্রুশীয় মৃত্যুর মতো মৌলিক বিশ্বাসে অটল থাকলেন, তেমনি অন্যদিকে আধুনিক পৃথিবীর সঙ্গে যুক্ত হতে চাইলেন। কার্ল হেনরি তার প্রভাবশালী বই The Uneasy Conscience of Modern Fundamentalism (1947)-এ মৌলবাদীদের সামাজিক দায়িত্ব থেকে পালিয়ে যাওয়ার সমালোচনা করেন। বিলি গ্রাহাম তার বিশাল জনসভার মাধ্যমে ইভানজেলিক্যালিজমকে আবার মূলধারায় ফিরিয়ে আনেন। তারা জ্ঞানচর্চা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা (যেমন, ফুলার থিওলজিক্যাল সেমিনারি), ম্যাগাজিন প্রকাশ (যেমন, Christianity Today) এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডে মনোনিবেশ করলেন। এই নব্য-ইভানজেলিকাল আন্দোলনটিই আজকের দিনের প্রভাবশালী ইভানজেলিক্যালিজমের ভিত্তি তৈরি করে দেয় (Noll, 1994)।
এক আন্দোলন, অনেক মুখ: ইভানজেলিক্যালিজমের বিস্ময়কর বৈচিত্র্য
আমরা প্রায়ই ইভানজেলিকালদের একটি একাট্টা (Monolithic) গোষ্ঠী হিসেবে ভাবতে পছন্দ করি। বিশেষ করে মিডিয়াতে আমেরিকার শ্বেতাঙ্গ, রিপাবলিকান পার্টির সমর্থক হিসেবেই তাদের দেখানো হয়। কিন্তু বাস্তবতা অনেক বেশি জটিল এবং বৈচিত্র্যময়। এই আন্দোলনের ছাতার নিচে অনেক ধরনের মানুষ, অনেক ধরনের বিশ্বাস এবং অনেক ধরনের রাজনীতি রয়েছে।
ধর্মতাত্ত্বিক ও সাংগঠনিক বৈচিত্র্য
ধর্মতত্ত্বের দিক থেকে ইভানজেলিকালদের মধ্যে প্রধান দুটি ধারা দেখা যায়:
-
ক্যালভিনিজম (Calvinism): জন ক্যালভিনের অনুসারী এই ধারার অনুসারীরা ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বে (Sovereignty of God) বিশ্বাসী। তারা মনে করেন, ঈশ্বর পূর্ব থেকেই নির্দিষ্ট করে রেখেছেন কারা পরিত্রাণ পাবে (Predestination)। মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা এখানে গৌণ। ব্যাপ্টিস্ট এবং প্রেসবিটেরিয়ানদের (Presbyterian) মধ্যে এই ধারা বেশি দেখা যায়।
-
আর্মিনিয়ানিজম (Arminianism): জ্যাকোবাস আর্মিনিয়াসের অনুসারী এই ধারার অনুসারীরা মানুষের স্বাধীন ইচ্ছায় বিশ্বাসী। তারা মনে করেন, ঈশ্বর সবাইকে পরিত্রাণের সুযোগ দেন, কিন্তু সেটি গ্রহণ করা বা না করা মানুষের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল। মেথডিস্ট এবং পেন্টেকোস্টালদের মধ্যে এই মতবাদ প্রভাবশালী।
এই দুই ধারার মধ্যে বিতর্ক বহু পুরনো, কিন্তু উভয় ধারার অনুসারীরাই নিজেদের ইভানজেলিকাল হিসেবে পরিচয় দেন। এছাড়া সাংগঠনিকভাবেও ব্যাপ্টিস্ট, মেথডিস্ট, প্রেসবিটেরিয়ান, পেন্টেকোস্টাল এবং ক্রমবর্ধমান হারে নন-ডিনোমিনেশনাল (Non-denominational) বা অসাম্প্রদায়িক চার্চের মধ্যেও ইভানজেলিকালরা রয়েছেন।
পেন্টেকোস্টালিজম ও ক্যারিশম্যাটিক আন্দোলন: আত্মার উন্মাদনা
বিংশ শতাব্দীর শুরুতে ইভানজেলিক্যালিজমের ভেতর থেকেই এক নতুন এবং বিস্ফোরক ধারার জন্ম হয়, যা পেন্টেকোস্টালিজম (Pentecostalism) নামে পরিচিত। ১৯০৬ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসের আজুসা স্ট্রিট রিভাইভাল (Azusa Street Revival) থেকে এর সূচনা। এটি ছিল একটি বর্ণ-নির্বিশেষে আন্দোলন যেখানে কৃষ্ণাঙ্গ প্রচারক উইলিয়াম জে. সিমুরের (William J. Seymour) নেতৃত্বে বিভিন্ন বর্ণের মানুষ একত্রিত হয়ে উপাসনা করতেন। পেন্টেকোস্টালরা বেবিংটনের চারটি স্তম্ভে বিশ্বাস করার পাশাপাশি পবিত্র আত্মার (Holy Spirit) অলৌকিক ক্ষমতার ওপর বিশেষভাবে জোর দেন। তারা বিশ্বাস করেন, বাইবেলের যুগে যেমনটা হতো, তেমনি আজও বিশ্বাসীরা পবিত্র আত্মার শক্তিতে অলৌকিক কাজ করতে পারেন, যেমন—অন্য ভাষায় কথা বলা (Speaking in Tongues বা Glossolalia), ঐশ্বরিক নিরাময় (Divine Healing) এবং ভবিষ্যদ্বাণী (Prophecy) করা।
১৯৬০-এর দশক থেকে এই আন্দোলনের প্রভাব মূলধারার প্রোটেস্ট্যান্ট এবং ক্যাথলিক চার্চের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে, যা ক্যারিশম্যাটিক মুভমেন্ট (Charismatic Movement) নামে পরিচিত। এই দুটি ধারা মিলে আজ বিশ্বজুড়ে ইভানজেলিক্যালিজমের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল শাখায় পরিণত হয়েছে, বিশেষ করে গ্লোবাল সাউথে (Anderson, 2004)। তাদের উপাসনা অনেক বেশি আবেগঘন এবং অভিজ্ঞতানির্ভর।
রাজনৈতিক বৈচিত্র্য: ডান, বাম এবং মধ্যপন্থা
রাজনীতির ক্ষেত্রেও এই বৈচিত্র্য চোখে পড়ার মতো।
-
ধর্মীয় ডানপন্থা (The Religious Right): ১৯৭০-এর দশকের শেষের দিকে গর্ভপাতকে আইনি বৈধতা দেওয়া (Roe v. Wade, 1973) এবং স্কুলে প্রার্থনা নিষিদ্ধ করার মতো ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় জেরি ফলওয়েল (Jerry Falwell) এবং প্যাট রবার্টসনের (Pat Robertson) মতো নেতাদের হাত ধরে আমেরিকার রাজনীতিতে ইভানজেলিকালদের একটি শক্তিশালী রক্ষণশীল গোষ্ঠীর উত্থান হয়। তাদের প্রতিষ্ঠিত ‘মরাল মেজরিটি’ (Moral Majority) এবং ‘ক্রিশ্চিয়ান কোয়ালিশন’ (Christian Coalition) এর মতো সংগঠনগুলো রিপাবলিকান পার্টির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভোটব্যাংকে পরিণত হয়। গর্ভপাত, সমকামী অধিকার (LGBTQ+ Rights) এবং ঐতিহ্যগত পারিবারিক মূল্যবোধের মতো বিষয়গুলো তাদের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনে তাদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম (Du Mez, 2020)।
-
ইভানজেলিকাল বামপন্থা (The Evangelical Left): অন্যদিকে, জিম ওয়ালিস (Jim Wallis) এবং তার ‘সোজারনার্স’ (Sojourners) সংগঠনের মতো একটি বামপন্থী ধারাও রয়েছে। তারা দারিদ্র্য দূরীকরণ, সামাজিক ন্যায়বিচার (Social Justice), পরিবেশ রক্ষা এবং বর্ণবাদ বিরোধিতা করার ওপর জোর দেন। তারা মনে করেন, বাইবেলের বার্তা কেবল ব্যক্তিগত নৈতিকতার জন্য নয়, বরং একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের জন্যও। তারা প্রায়শই মূলধারার ইভানজেলিকালদের রাজনৈতিক রক্ষণশীলতার কঠোর সমালোচক।
-
মধ্যপন্থী ও অরাজনৈতিক (Centrists and Apolitical): এই দুই প্রান্তের বাইরেও বিশাল সংখ্যক ইভানজেলিকাল আছেন যারা নিজেদের কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের সঙ্গে একাত্ম করেন না এবং রাজনৈতিক বিতর্কের চেয়ে ব্যক্তিগত আধ্যাত্মিকতা ও স্থানীয় সামাজিক কাজকে বেশি গুরুত্ব দেন। তারা হয়তো সামাজিকভাবে রক্ষণশীল, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে সরকারের ভূমিকার সমর্থক হতে পারেন।
বিশ্বজুড়ে ইভানজেলিক্যালিজম: ভরকেন্দ্রের স্থানান্তর
ইভানজেলিক্যালিজমকে কেবল আমেরিকার ঘটনা ভাবলে মস্ত বড় ভুল হবে। একবিংশ শতাব্দীতে এই আন্দোলনের ভরকেন্দ্র পশ্চিমা বিশ্ব থেকে সরে গিয়ে গ্লোবাল সাউথ (Global South) অর্থাৎ লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা এবং এশিয়ায় চলে এসেছে।
-
লাতিন আমেরিকা: একসময় ক্যাথলিক ধর্মের দূর্গ হিসেবে পরিচিত এই মহাদেশে পেন্টেকোস্টাল এবং ইভানজেলিকাল চার্চের বিস্ময়কর বৃদ্ধি ঘটেছে। ব্রাজিলের মতো দেশে ইভানজেলিকালরা এখন জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এবং একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে।
-
আফ্রিকা: আফ্রিকায় খ্রিস্টধর্মের যে বিস্ফোরক বৃদ্ধি ঘটেছে, তার একটি বড় অংশই ইভানজেলিকাল এবং ক্যারিশম্যাটিক প্রকৃতির। এখানকার ইভানজেলিক্যালিজম স্থানীয় সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে মিশে এক নতুন রূপ নিয়েছে, যা প্রায়শই দারিদ্র্য, রোগ এবং দুর্নীতির মতো বাস্তব সমস্যাগুলোর আধ্যাত্মিক সমাধান দেয়। নাইজেরিয়ার রিডিমড ক্রিশ্চিয়ান চার্চ অফ গড (Redeemed Christian Church of God) এর মতো সংগঠনগুলোর শাখা এখন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে।
-
এশিয়া: দক্ষিণ কোরিয়া দীর্ঘদিন ধরেই বিশ্বের অন্যতম বড় ইভানজেলিকাল কেন্দ্র। বিশ্বের সবচেয়ে বড় কিছু মেগাচার্চ (Megachurch) এখানেই অবস্থিত, যেমন ইয়োইডো ফুল গসপেল চার্চ (Yoido Full Gospel Church)। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার মিশনারি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যান। এছাড়াও, চীনে কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যেও ‘হাউজ চার্চ’ (House Church) আন্দোলনের মাধ্যমে ইভানজেলিক্যালিজম নীরবে প্রসারিত হচ্ছে।
এই গ্লোবাল সাউথের ইভানজেলিক্যালিজম প্রায়শই আমেরিকার সংস্করণ থেকে ভিন্ন। তারা ঔপনিবেশিকতার ইতিহাস, দারিদ্র্য এবং সামাজিক অবিচারের মতো বিষয়গুলো নিয়ে অনেক বেশি সোচ্চার। তাই ইভানজেলিক্যালিজমের ভবিষ্যৎ বুঝতে হলে আমাদের অবশ্যই এই নতুন কেন্দ্রগুলোর দিকে তাকাতে হবে (Jenkins, 2002)।
বিশ্বাস ও জীবনযাপন: কেমন হয় একজন ইভানজেলিকালের দিনকাল?
একজন ইভানজেলিকালের জীবন কেবল রবিবারের উপাসনায় সীমাবদ্ধ থাকে না। তাদের বিশ্বাস দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি অংশকে প্রভাবিত করে।
উপাসনার ধরন ও মেগাচার্চ সংস্কৃতি
ইভানজেলিকাল চার্চগুলোর উপাসনার ধরনে ব্যাপক বৈচিত্র্য দেখা যায়। কিছু চার্চে এখনো পুরনো দিনের স্তবগান (Hymns) গাওয়া হয়, আবার অন্যদিকে মেগাচার্চগুলোতে রক কনসার্টের মতো পরিবেশে আধুনিক যন্ত্রপাতিসহ কনটেম্পোরারি ক্রিশ্চিয়ান মিউজিক (Contemporary Christian Music – CCM) পরিবেশন করা হয়। মূল লক্ষ্য থাকে একটি আবেগঘন এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তৈরি করা, যেখানে উপাসকরা ঈশ্বরের উপস্থিতি অনুভব করতে পারেন।
সাম্প্রতিক দশকে মেগাচার্চ (যে চার্চে প্রতি সপ্তাহে ২০০০-এর বেশি মানুষ উপাসনা করে) সংস্কৃতির ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। এই চার্চগুলো শুধু উপাসনার স্থান নয়, বরং একটি সামাজিক কেন্দ্র। এখানে ক্যাফে, বইয়ের দোকান, জিম, শিশুদের জন্য উন্নত মানের প্রোগ্রামসহ নানা সুযোগ-সুবিধা থাকে। এর আবেদন হলো এটি বড় শহরে বসবাসকারী একাকী মানুষদের জন্য একটি সম্প্রদায় (Community) খুঁজে পাওয়ার সুযোগ করে দেয়। এর সমালোচকরা বলেন, এই চার্চগুলো অনেক সময় কনজিউমারিজম বা ভোগবাদকে উৎসাহিত করে এবং আধ্যাত্মিক গভীরতার চেয়ে বাহ্যিক চাকচিক্যকে বেশি গুরুত্ব দেয়।
পরিবার, নৈতিকতা ও সংস্কৃতির যুদ্ধ (The Culture Wars)
ইভানজেলিকালরা সাধারণত ঐতিহ্যগত পারিবারিক কাঠামোর ওপর জোর দেন। তারা মনে করেন, বাইবেল অনুযায়ী বিবাহ হলো একজন পুরুষ এবং একজন নারীর মধ্যে একটি পবিত্র বন্ধন। এই বিশ্বাসের কারণে তারা গর্ভপাত এবং সমকামী বিবাহের তীব্র বিরোধী। তাদের মধ্যে অনেকেই নারী-পুরুষের ভূমিকা নিয়ে ‘কমপ্লিমেন্টেরিয়ানিজম’ (Complementarianism) তত্ত্বে বিশ্বাসী। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, নারী ও পুরুষ সমান মর্যাদার হলেও তাদের ভূমিকা ভিন্ন। পুরুষ পরিবারের এবং গির্জার নেতৃত্বের দায়িত্বে থাকবে, আর নারী সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তবে অনেক ইভানজেলিকাল আবার ‘ইগালিটেরিয়ানিজম’ (Egalitarianism) তত্ত্বে বিশ্বাসী, যেখানে নারী-পুরুষকে সব ক্ষেত্রে সমান ভূমিকার অধিকারী মনে করা হয়।
আমেরিকায়, এই নৈতিক অবস্থানগুলোই তথাকথিত ‘সংস্কৃতির যুদ্ধ’ বা ‘Culture Wars’-এর জন্ম দিয়েছে, যেখানে ইভানজেলিকালরা সমাজের ধর্মনিরপেক্ষ এবং উদারনৈতিক ধারার বিরুদ্ধে নিজেদের মূল্যবোধ রক্ষার জন্য লড়াই করছে। এই লড়াইয়ের অংশ হিসেবে তারা নিজস্ব একটি সমান্তরাল সংস্কৃতি (Parallel Culture) তৈরি করেছে—খ্রিস্টান স্কুল, হোমস্কুলিং, খ্রিস্টান বইয়ের দোকান, খ্রিস্টান চলচ্চিত্র এবং সঙ্গীত শিল্প।
বিতর্ক ও সমালোচনা: আয়নার অন্য পিঠ
যেকোনো বড় আন্দোলনের মতোই ইভানজেলিক্যালিজমও নানা কারণে বিতর্কিত এবং সমালোচিত। এই সমালোচনাগুলো এড়িয়ে গেলে এর পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া সম্ভব নয়।
রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়া ও খ্রিস্টান জাতীয়তাবাদ: সমালোচকদের মতে, বিশেষ করে আমেরিকায়, ইভানজেলিক্যালিজম রাজনৈতিক ক্ষমতার সঙ্গে খুব বেশি জড়িয়ে পড়েছে। একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের (রিপাবলিকান পার্টি) প্রতি অন্ধ আনুগত্য তাদের আধ্যাত্মিক বার্তাকে কলুষিত করেছে। ক্ষমতার লোভে তারা অনেক সময় তাদের মূল নৈতিক অবস্থান থেকে সরে এসেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি তাদের অবিচল সমর্থন। এই সমর্থনের পেছনে কাজ করেছে ‘খ্রিস্টান জাতীয়তাবাদ’ (Christian Nationalism) এর ধারণা। এটি এমন এক বিশ্বাস যা মনে করে আমেরিকা ঐতিহাসিকভাবে এবং ঐশ্বরিকভাবে একটি খ্রিস্টান রাষ্ট্র এবং এর আইন ও সংস্কৃতিকে অবশ্যই খ্রিস্টীয় মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে চলতে হবে (Whitehead & Perry, 2020)। সমালোচকরা বলেন, এই ধারণাটি আমেরিকার বহুত্ববাদ এবং গণতন্ত্রের জন্য হুমকি।
বিজ্ঞান বিরোধিতা ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংকট: অনেক ইভানজেলিকাল গোষ্ঠীর বিবর্তনবাদ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের প্রতি অবিশ্বাস তাদের সমালোচিত করেছে। বাইবেলের আক্ষরিক ব্যাখ্যাকে আঁকড়ে ধরতে গিয়ে তারা প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক সত্যকে অস্বীকার করছেন। এর ফলে ‘ক্রিয়েশনিজম’ (Creationism) বা ‘ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন’ (Intelligent Design) এর মতো বিকল্প তত্ত্ব প্রচারের জন্য তারা নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ও জাদুঘর (যেমন, কেনটাকির ক্রিয়েশন মিউজিয়াম) তৈরি করেছেন। ঐতিহাসিক মার্ক নল (Mark Noll) তার বিখ্যাত বই The Scandal of the Evangelical Mind-এ আক্ষেপ করে বলেছেন যে, ইভানজেলিকালরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চাকে অবহেলা করে এক ধরনের সংকট তৈরি করেছে (Noll, 1994)।
বর্ণবাদ এবং বিশ্বাস: এক জটিল অধ্যায়: ইভানজেলিক্যালিজমের ইতিহাসে বর্ণবাদের বিষয়টি একটি বেদনাদায়ক অধ্যায়। অতীতে, বিশেষ করে আমেরিকার দক্ষিণাঞ্চলে, অনেক শ্বেতাঙ্গ ইভানজেলিকাল বাইবেলের খণ্ডিত ব্যাখ্যা দিয়ে দাসপ্রথা এবং বর্ণবিদ্বেষকে সমর্থন করেছেন। মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র নিজে একজন ব্যাপ্টিস্ট যাজক হলেও শ্বেতাঙ্গ ইভানজেলিকাল চার্চের নীরবতায় তিনি গভীরভাবে হতাশ হয়েছিলেন। আজও আমেরিকার চার্চগুলো অনেকাংশে বর্ণ অনুযায়ী বিভক্ত, যা “the most segregated hour of the week” নামে পরিচিত। যদিও কৃষ্ণাঙ্গ ইভানজেলিকাল চার্চের একটি শক্তিশালী ঐতিহ্য রয়েছে, শ্বেতাঙ্গ ইভানজেলিক্যালিজমের মূলধারায় বর্ণগত ন্যায়বিচারের বিষয়টি এখনো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের সময় অনেক শ্বেতাঙ্গ ইভানজেলিকাল নেতার প্রতিক্রিয়া এই বিভেদকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে।
প্রসপারিটি গসপেল (Prosperity Gospel): ইভানজেলিকাল আন্দোলনের ভেতরেই একটি বিতর্কিত ধারা হলো ‘প্রসপারিটি গসপেল’ বা ‘সমৃদ্ধির সুসমাচার’। এই ধারার প্রচারকরা (যেমন, জোয়েল ওস্টিন, কেনেথ কোপল্যান্ড) বলেন, ঈশ্বর চান তার সন্তানরা শুধু আত্মিকভাবেই নয়, আর্থিকভাবেও সমৃদ্ধ হোক। বিশ্বাস এবং ঈশ্বরকে অর্থ দান (seed-faith) করার মাধ্যমে অনুসারীরা স্বাস্থ্য, সম্পদ এবং সাফল্য লাভ করতে পারে। মূলধারার অনেক ইভানজেলিকাল নেতা এই তত্ত্বের কঠোর সমালোচক। তাদের মতে, এটি বাইবেলের শিক্ষার বিকৃতি, যা যিশুর আত্মত্যাগ এবং সেবার বার্তার পরিপন্থী। এটি গরিব ও দুর্বল মানুষকে শোষণ করার একটি উপায়, কারণ তাদের সামান্য সম্বলটুকুও মিথ্যা প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে হাতিয়ে নেওয়া হয়।
অভ্যন্তরীণ সংকট ও ‘এক্সভ্যানজেলিকাল’ আন্দোলন: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বে, অনেক মানুষ ইভানজেলিকাল চার্চ ছেড়ে দিচ্ছেন। রাজনৈতিক মোহভঙ্গ, চার্চের ভেতরে যৌন নিপীড়নের কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দেওয়া, বর্ণবাদের মতো বিষয়ে চার্চের নীরবতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক অসততার কারণে হতাশ হয়ে তারা বেরিয়ে আসছেন। এই মানুষদের অনেকেই নিজেদের ‘এক্সভ্যানজেলিকাল’ (Exvangelical) বলে পরিচয় দিচ্ছেন। ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তারা একত্রিত হচ্ছেন এবং নিজেদের অভিজ্ঞতা ও হতাশা ভাগ করে নিচ্ছেন। এই ‘ডিকনস্ট্রাকশন’ (Deconstruction) আন্দোলন ইভানজেলিক্যালিজমের ভিত্তিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে এবং এর ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে ভাবাতে বাধ্য করছে।
শেষ কথা
তাহলে এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আমরা ইভানজেলিক্যালিজম সম্পর্কে কী বুঝলাম?
বুঝলাম, এটি একটি সরলরৈখিক বিষয় নয়। এটি কোনো মনোলিথিক ব্লক নয়, বরং এটি একটি বৈচিত্র্যময়, গতিশীল এবং কখনও কখনও স্ববিরোধী এক আন্দোলন। এর একদিকে যেমন রয়েছে গভীর আধ্যাত্মিকতা, নিঃস্বার্থ সেবা এবং ব্যক্তিগত পরিবর্তনের শক্তিশালী গল্প, তেমনি অন্যদিকে রয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক, অসহিষ্ণুতা এবং অভ্যন্তরীণ সংকট।
একে শুধু আমেরিকার রক্ষণশীল রাজনীতি দিয়ে বিচার করলে যেমন ভুল হবে, তেমনি এর বিশ্বব্যাপী মানবিক কাজগুলোকে অস্বীকার করলেও অন্যায় হবে। এর গল্পটা অনেকটা নদীর মতো। কখনও শান্ত, কখনও উত্তাল। কখনও জীবনদায়ী, কখনও বিধ্বংসী। এর ভেতরে ক্যালভিনের কঠোর ধর্মতত্ত্ব যেমন আছে, তেমনি আছে পেন্টেকোস্টালদের আবেগঘন উপাসনা। একদিকে যেমন আছেন বিলি গ্রাহামের মতো ব্যক্তিত্ব, অন্যদিকে আছেন জিম ওয়ালিসের মতো সমালোচক।
এই আন্দোলনের ভবিষ্যৎ কী? পশ্চিমে এর প্রভাব হয়তো কমছে বা পরিবর্তিত হচ্ছে, কিন্তু গ্লোবাল সাউথে এর জয়যাত্রা চলছে। রাজনৈতিক মেরুকরণ, বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কার এবং আধুনিক বিশ্বের জটিল নৈতিক চ্যালেঞ্জগুলোর সঙ্গে এটি কীভাবে খাপ খাইয়ে নেবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। ইভানজেলিক্যালিজম কি তার রাজনৈতিক আসক্তি থেকে মুক্ত হয়ে সামাজিক ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে পারবে? এটি কি তার বুদ্ধিবৃত্তিক সংকট কাটিয়ে উঠে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারবে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তরের ওপরই এর ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।
ইভানজেলিক্যালিজমের গল্পটি এখনও লেখা হচ্ছে। এর পরবর্তী অধ্যায়ে কী আছে, তা সময়ই বলে দেবে। আমাদের মতো সাধারণ পথিকের কাজ হলো, কোনো উপসংহারে তাড়াহুড়ো না করে কৌতুহল নিয়ে এই জটিল এবং আকর্ষণীয় মানবিক গল্পটিকে বোঝার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। কারণ পৃথিবীর কোনো কিছুই সাদা বা কালো নয়, বরং ধূসর রঙের অসংখ্য স্তর দিয়ে তৈরি।
তথ্যসূত্র
- Anderson, A. (2004). An Introduction to Pentecostalism: Global Charismatic Christianity. Cambridge University Press.
- Bebbington, D. W. (1989). Evangelicalism in Modern Britain: A History from the 1730s to the 1980s. Unwin Hyman.
- Du Mez, K. K. (2020). Jesus and John Wayne: How White Evangelicals Corrupted a Faith and Fractured a Nation. Liveright Publishing.
- Jenkins, P. (2002). The Next Christendom: The Coming of Global Christianity. Oxford University Press.
- Marsden, G. M. (1980). Fundamentalism and American Culture: The Shaping of Twentieth-Century Evangelicalism, 1870-1925. Oxford University Press.
- Noll, M. A. (1994). The Scandal of the Evangelical Mind. William B. Eerdmans Publishing Company.
- Noll, M. A. (2004). The Rise of Evangelicalism: The Age of Edwards, Whitefield and the Wesleys. InterVarsity Press.
- Whitehead, A. L., & Perry, S. L. (2020). Taking America Back for God: Christian Nationalism in the United States. Oxford University Press.
Leave a Reply