গ্রামসির প্যাসিভ রেভোল্যুশন: নিঃশব্দ বিপ্লবের আখ্যান – যখন পরিবর্তন আসে চুপি চুপি

Table of Contents

ভূমিকা

বিপ্লব! আহা, কী তেজদীপ্ত এক শব্দ! শুনলেই কেমন যেন চোখের সামনে ভেসে ওঠে হাজার হাজার মানুষের বাঁধভাঙা স্রোত, পতপত করে ওড়া লাল পতাকা, শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত রাজপথ, আর ক্ষমতার মসনদ উল্টে ফেলার এক উদগ্র বাসনা। ফরাসি বিপ্লব থেকে রুশ বিপ্লব, কিউবা থেকে ভিয়েতনাম – ইতিহাস যেন সগর্বে ঘোষণা করে, বিপ্লব মানেই আমূল পরিবর্তন, রক্ত আর ঘামের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনা নতুন এক ভোর।

কিন্তু সব ভোর কি সূর্য ওঠার জানান দিয়েই আসে? নাকি এমনও কিছু পরিবর্তন আছে, যা ঘটে প্রায় নিঃশব্দে, রাতের অন্ধকারের মতো ধীরে ধীরে, টেরই পাওয়া যায় না কখন যেন পুরনো কাঠামোটা আলগা হয়ে এক নতুন বিন্যাস জায়গা করে নিয়েছে? পরিবর্তন, অথচ তীব্র ঝাঁকুনি নেই; বিপ্লব, কিন্তু রাজপথে অস্ত্রের গর্জন শোনা যায় না।

এমনই এক অদ্ভুত, প্রায় স্ববিরোধী ধারণার জন্ম দিয়েছিলেন বিংশ শতাব্দীর এক অসাধারণ মননশীল মানুষ – আন্তোনিও গ্রামসি (Antonio Gramsci)। ইতালির স্বৈরাচারী শাসক মুসোলিনির অন্ধকার কারাগারে বসে, রুগ্ন শরীরে, তীক্ষ্ণ মেধা আর গভীর অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে তিনি সমাজের গভীরে চলতে থাকা এক অন্য ধরনের পালাবদলের ছক এঁকেছিলেন। যার নাম তিনি দিয়েছিলেন ‘প্যাসিভ রেভোল্যুশন’ (Passive Revolution) বা ‘নিষ্ক্রিয় বিপ্লব’। চলুন, আজ আমরা গ্রামসির এই ‘নিষ্ক্রিয় বিপ্লব’-এর রহস্য ভেদ করার চেষ্টা করি, ডুব দিই তার চিন্তার সেই গভীর সমুদ্রে।

কে এই চিন্তানায়ক – আন্তোনিও গ্রামসি?

এই তত্ত্ব বোঝার আগে মানুষটাকে একটু চিনে নেওয়া দরকার। আন্তোনিও গ্রামসি (১৮৯১-১৯৩৭) ছিলেন ইতালির এক অসামান্য মার্কসবাদী দার্শনিক, সাংবাদিক এবং রাজনীতিবিদ। শুধু কেতাবি তাত্ত্বিক তিনি ছিলেন না, ছিলেন একেবারে মাটির কাছাকাছি থাকা একজন সক্রিয় কর্মী, ইতালির কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তার বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের ‘অপরাধে’ ফ্যাসিবাদী সরকার তাকে জেলে পুরেছিল। জীবনের প্রায় শেষ ১১টা বছর (১৯২৬-১৯৩৭) তিনি কারাগারেই কাটিয়েছেন। মুসোলিনি সদম্ভে ঘোষণা করেছিলেন, “We must stop this brain from functioning for twenty years!” (আমাদের এই মস্তিষ্কটাকে কুড়ি বছরের জন্য অকেজো করে দিতে হবে!)।

কিন্তু লোহার গারদ কি আর চিন্তার অবাধ প্রবাহকে আটকাতে পারে? গ্রামসির শরীর বন্দী থাকলেও, তার মন ছিল মুক্ত। জেলের সেল থেকে সেন্সরের কড়া নজর এড়িয়ে, সাংকেতিক ভাষায়, তিনি লিখে গেছেন একের পর এক নোটবুক। প্রায় ৩০০০ পৃষ্ঠা জুড়ে লেখা এই নোটবুকগুলোই পরবর্তীকালে ‘প্রিজন নোটবুকস’ (Prison Notebooks) নামে পরিচিতি পায়। এখানেই তিনি বুনেছিলেন তার বিখ্যাত সব তত্ত্বের জাল – ‘হেজিমনি’ (Hegemony) বা বুদ্ধিবৃত্তিক ও নৈতিক আধিপত্য, ‘সিভিল সোসাইটি’ (Civil Society) বা নাগরিক সমাজ, ‘পলিটিক্যাল সোসাইটি’ (Political Society) বা রাজনৈতিক সমাজ (রাষ্ট্র), ‘ওয়ার অফ পজিশন’ (War of Position) বা অবস্থানগত যুদ্ধ, ‘ওয়ার অফ ম্যানুভার’ (War of Maneuver) বা সম্মুখ সমর এবং আমাদের আজকের আলাপের কেন্দ্রবিন্দু – ‘প্যাসিভ রেভোল্যুশন’ (Passive Revolution)। (Gramsci, 1971)

প্যাসিভ রেভোল্যুশন: কী বস্তু এটা?

সহজ বাংলায় বললে, প্যাসিভ রেভোল্যুশন হলো এমন এক ধরনের সামাজিক-রাজনৈতিক পরিবর্তন বা আধুনিকায়ন প্রক্রিয়া, যা সমাজের ওপরতলা থেকে, অর্থাৎ শাসক বা প্রভাবশালী শ্রেণির (Ruling Class/Dominant Class) উদ্যোগে এবং নিয়ন্ত্রণে সাধিত হয়। এখানে নীচতলার মানুষের, অর্থাৎ সাধারণ জনগণ বা শোষিত শ্রেণির (Subaltern Classes) সক্রিয়, স্বাধীন উদ্যোগ বা গণবিপ্লবের কোনো ভূমিকা থাকে না বললেই চলে। তারা অনেকটা নিষ্ক্রিয় দর্শকের মতো থাকে, অথবা তাদের অংশগ্রহণকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয় যাতে পুরো প্রক্রিয়াটি শাসক শ্রেণির স্বার্থ রক্ষা করে।

ব্যাপারটা একটু খোলসা করা যাক। মার্কসবাদী তত্ত্ব অনুযায়ী, বিপ্লব আসে শ্রেণি সংগ্রামের (Class Struggle) পথ ধরে। শোষিত সর্বহারা শ্রেণি (Proletariat) বিপ্লবের মাধ্যমে বুর্জোয়া বা পুঁজিপতি শ্রেণির (Bourgeoisie) হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেয় এবং নতুন সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে। এটা হলো সক্রিয়, গণমুখী বিপ্লবের ছবি।

কিন্তু গ্রামসি দেখলেন, ইতিহাসে সবসময় এমনটা ঘটে না। বিশেষ করে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতে, যেখানে বুর্জোয়া শ্রেণির শাসন শুধু দমন-পীড়নের ওপর ভিত্তি করে নয়, বরং এক ধরনের সম্মতি আদায়ের (Consent) মাধ্যমেও টিকে থাকে (এটাই হেজিমনি), সেখানে সরাসরি বিপ্লব ঘটানো কঠিন। গ্রামসি ইতালির ইতিহাস বিশ্লেষণ করে, বিশেষত দেশটির একত্রীকরণ প্রক্রিয়া বা রিসর্জিমেন্তো (Risorgimento) পর্যবেক্ষণ করে এই সিদ্ধান্তে আসেন। তিনি দেখলেন, ইতালির বুর্জোয়ারা ফরাসি বিপ্লবের মতো কোনো র‌্যাডিক্যাল গণজাগরণের পথে না হেঁটে, বরং এক ধরনের ‘ওপর থেকে চাপানো বিপ্লব’ (Revolution from Above) বা সংস্কারের (Reform) মাধ্যমে রাষ্ট্র গঠন ও আধুনিকায়নের কাজটি সেরেছে। এর মূল কারণ ছিল দুটো:

১. জনগণের বিপ্লবী শক্তির ভয়: ইতালির বুর্জোয়ারা একদিকে যেমন পুরনো সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ভাঙতে চেয়েছিল, তেমনই অন্যদিকে তারা ভয় পেত নীচের তলার কৃষক ও শ্রমিকদের সম্ভাব্য র‌্যাডিক্যাল আন্দোলনকে। তারা চাইছিল পরিবর্তন হোক, কিন্তু সেটা যেন তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়।

২. নিজেদের দুর্বলতা: ইতালির বুর্জোয়া শ্রেণি ফরাসি বুর্জোয়াদের মতো অতটা শক্তিশালী বা আত্মবিশ্বাসী ছিল না যে তারা এককভাবে পুরনো ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে বা একটি পূর্ণাঙ্গ গণবিপ্লবের নেতৃত্ব দিতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে তারা এমন এক পথ বেছে নেয়, যেখানে কিছু পরিবর্তন আনা হয়, আধুনিক রাষ্ট্র গঠন করা হয়, পুঁজিবাদের বিকাশ ঘটানো হয়, কিন্তু পুরো প্রক্রিয়াটা থাকে তাদের নিয়ন্ত্রণে। জনগণের শক্তিকে ব্যবহার করার বদলে তাকে নিষ্ক্রিয় রাখা হয় বা সীমিত আকারে কাজে লাগানো হয়। একেই গ্রামসি বলছেন প্যাসিভ রেভোল্যুশন।

প্যাসিভ রেভোল্যুশনের বৈশিষ্ট্যগুলো কী কী?

গ্রামসির আলোচনা থেকে আমরা প্যাসিভ রেভোল্যুশনের কয়েকটি মূল বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করতে পারি:

  • কর্তৃত্ব ওপরতলার: পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি থাকে শাসক বা প্রভাবশালী শ্রেণি, যারা পুরনো ব্যবস্থার অংশ হলেও নতুন যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চায় বা টিকে থাকতে চায়।

  • ‘বিপ্লব-সংস্কার’ (Revolution-Restoration) চরিত্র: এতে কিছু বিপ্লবী উপাদান থাকে (যেমন পুরনো কিছু প্রথা ভাঙা, আধুনিকায়ন), কিন্তু একই সঙ্গে পুরনো ক্ষমতার কাঠামো ও সামাজিক সম্পর্ককে অক্ষুণ্ণ রাখার বা পুনরুদ্ধার করার চেষ্টাও প্রবল থাকে। এটা অনেকটা পুরনো বোতলে নতুন মদ ভরার মতো। মৌলিক পরিবর্তন না এনে শুধু ওপরের খোলসটা বদলানো হয়।

  • জনগণের নিষ্ক্রিয়তা বা নিয়ন্ত্রিত অংশগ্রহণ: সাধারণ মানুষ এই প্রক্রিয়ায় সক্রিয় কর্তা (active agent) নয়, বরং অনেকটা কর্ম (object) বা নিষ্ক্রিয় প্রাপক। তাদের অংশগ্রহণ যদি বা থাকে, তা হয় নিয়ন্ত্রিত এবং উপর থেকে নির্দেশিত। গণসংগ্রাম বা গণজাগরণের অনুপস্থিতি এর অন্যতম লক্ষণ।

  • ‘ট্রান্সফরমিজমো’ (Transformismo) বা রূপান্তরকরণের কৌশল: এটা প্যাসিভ রেভোল্যুশনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র। এর মাধ্যমে শাসক শ্রেণি বিরোধী বা সম্ভাব্য বিরোধী শক্তিগুলোর নেতৃত্বকে বা তাদের কিছু দাবি-দাওয়াকে নিজেদের ব্যবস্থায় অঙ্গীভূত (co-opt) করে নেয়। বিরোধী নেতারা হয়তো মন্ত্রীত্ব পান বা কিছু সুযোগ-সুবিধা লাভ করেন, যার বিনিময়ে তারা তাদের র‌্যাডিক্যাল দাবিগুলো থেকে সরে আসেন। এর ফলে বিরোধী আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে এবং শাসক শ্রেণির আধিপত্য বজায় থাকে। (Sassoon, 1980, pp. 115-119)

  • আধুনিকায়ন কিন্তু মৌলিক কাঠামো অপরিবর্তিত: প্যাসিভ রেভোল্যুশনের মাধ্যমে প্রায়শই অর্থনৈতিক আধুনিকায়ন (যেমন শিল্পের প্রসার, নতুন প্রযুক্তি), প্রশাসনিক সংস্কার বা রাষ্ট্রযন্ত্রের কেন্দ্রীকরণ ঘটে। কিন্তু সমাজের মূল ক্ষমতা কাঠামো, শ্রেণি সম্পর্ক এবং শোষণের প্রক্রিয়াগুলো কমবেশি একই থেকে যায়। বুর্জোয়া শ্রেণি ক্ষমতা অর্জন বা সুসংহত করে, কিন্তু শ্রমিক-কৃষকের অবস্থার মৌলিক কোনো পরিবর্তন হয় না।

  • হেজিমনি প্রতিষ্ঠা বা পুনর্গঠনের চেষ্টা: প্যাসিভ রেভোল্যুশনের চূড়ান্ত লক্ষ্য থাকে শাসক শ্রেণির হেজিমনি বা আধিপত্যকে (যা হয়তো সংকটের মুখে পড়েছিল) নতুন পরিস্থিতিতে টিকিয়ে রাখা বা আরও মজবুত করা। সংস্কারের মাধ্যমে তারা জনগণের একাংশের সম্মতি আদায় করে এবং সম্ভাব্য বিদ্রোহের পথ বন্ধ করে দেয়।

হেজিমনি, সিভিল সোসাইটি আর প্যাসিভ রেভোল্যুশন: ক্ষমতার অদৃশ্য জাল

প্যাসিভ রেভোল্যুশন বুঝতে গেলে গ্রামসির সবচেয়ে বিখ্যাত ধারণা ‘হেজিমনি’ (Hegemony) বা আধিপত্যকে বুঝতেই হবে। মার্কসীয় চিন্তায় এতদিন জোর দেওয়া হতো মূলত রাষ্ট্রের দমন-পীড়নের (Coercion) ভূমিকার ওপর। পুলিশ, মিলিটারি, আইন-আদালত দিয়ে শাসক শ্রেণি জোর করে শাসন চালায়। গ্রামসি বললেন, এটা অর্ধেক সত্যি। আধুনিক পুঁজিবাদী সমাজে, বিশেষ করে পশ্চিমে, শাসক শ্রেণি শুধু ভয়ের মাধ্যমে শাসন করে না, তারা জনগণের ‘সম্মতি’ (Consent) আদায় করেও শাসন করে।

এই সম্মতি কীভাবে তৈরি হয়? গ্রামসি বললেন, রাষ্ট্র (Political Society) ছাড়াও সমাজে আছে এক বিশাল ক্ষেত্র, যার নাম ‘সিভিল সোসাইটি’ (Civil Society) বা নাগরিক সমাজ। এর মধ্যে পড়ে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম (পত্রিকা, রেডিও, টিভি), ক্লাব, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন, বুদ্ধিজীবী মহল ইত্যাদি। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে শাসক শ্রেণি তাদের মতাদর্শ (Ideology), বিশ্বাস, মূল্যবোধ, সংস্কৃতি এমনভাবে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে দেয় যে, সাধারণ মানুষ সেগুলোকে স্বাভাবিক, শাশ্বত বা ‘কমন সেন্স’ (Common Sense) বলে মেনে নেয়। তারা শাসক শ্রেণির শাসনকে শুধু সহ্যই করে না, বরং তাকে নৈতিকভাবে সমর্থনও করে। এটাই হলো হেজিমনি – জোরজবরদস্তির সঙ্গে সম্মতির এক জটিল মিশ্রণ, যা দিয়ে শাসক শ্রেণি তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখে। গ্রামসি এই দুই ক্ষেত্র – পলিটিক্যাল সোসাইটি (জোর) এবং সিভিল সোসাইটি (সম্মতি) – মিলিয়ে পুরো ব্যবস্থাকে বলেছেন ‘ইন্টিগ্রাল স্টেট’ (Integral State) বা অখণ্ড রাষ্ট্র। (Gramsci, 1971, p. 263)

এখন, যখন কোনো কারণে এই হেজিমনি বা সম্মতির ভিত নড়ে যায়, যখন অর্থনৈতিক সংকট, যুদ্ধ বা অন্য কোনো কারণে জনগণ শাসক শ্রেণির নেতৃত্ব বা মতাদর্শ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করে, তখনই শাসক শ্রেণির কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে। তারা ভয় পায়, এই বুঝি নীচ থেকে সত্যিকারের বিপ্লবের ঢেউ এসে সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেল! এই সংকটময় পরিস্থিতিতে নিজেদের আধিপত্য টিকিয়ে রাখার জন্যই তারা অনেক সময় প্যাসিভ রেভোল্যুশনের পথে হাঁটে। তারা কিছু সংস্কার করে, কিছু দাবি মেনে নেয়, আধুনিকায়নের বুলি আওড়ায় – এই সবকিছুর লক্ষ্য থাকে জনগণের ক্ষোভ প্রশমিত করা, তাদের বিপ্লবী আকাঙ্ক্ষাকে ভোঁতা করে দেওয়া এবং শেষ পর্যন্ত নিজেদের হেজিমনি বা ক্ষমতাকে এক নতুন রূপে পুনর্প্রতিষ্ঠা করা।

এই কৌশলকে গ্রামসি তুলনা করেছেন ‘ওয়ার অফ পজিশন’ (War of Position) বা অবস্থানগত যুদ্ধের সঙ্গে। যেখানে সরাসরি সম্মুখ সমরের (War of Maneuver) মতো ক্ষমতা দখলের চেষ্টা না করে, ধীরে ধীরে সমাজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে (সিভিল সোসাইটির পরিখায়) নিজেদের মতাদর্শিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব বিস্তার করে প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করা হয়। প্যাসিভ রেভোল্যুশন হলো শাসক শ্রেণির পক্ষ থেকে চালানো এক ধরনের ডিফেন্সিভ বা রক্ষণাত্মক ‘ওয়ার অফ পজিশন’, যার মাধ্যমে তারা নিজেদের দূর্গকে রক্ষা করে এবং সম্ভাব্য আক্রমণ প্রতিহত করে। (Gramsci, 1971, pp. 229-239)

ইতালির রিসর্জিমেন্তো: প্যাসিভ রেভোল্যুশনের ধ্রুপদী উদাহরণ

গ্রামসি তার প্যাসিভ রেভোল্যুশনের ধারণাটি দাঁড় করিয়েছিলেন মূলত উনিশ শতকের ইতালির একত্রীকরণ বা রিসর্জিমেন্তো (Risorgimento) প্রক্রিয়াকে বিশ্লেষণ করে। তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন, কেন ইতালির বুর্জোয়ারা ফরাসি বিপ্লবের মতো একটি র‌্যাডিক্যাল, গণভিত্তিক পথে না হেঁটে বরং অন্য পথে গেল?

উনিশ শতকের মাঝামাঝি ইতালি ছিল বহু ছোট ছোট রাজ্যে বিভক্ত, যার অধিকাংশই ছিল বিদেশী শক্তির (যেমন অস্ট্রিয়া) বা পুরনো সামন্ততান্ত্রিক বা আধা-সামন্ততান্ত্রিক শক্তির অধীনে। ইতালিকে একত্রিত ও আধুনিক করার আকাঙ্ক্ষা অনেকের মধ্যেই ছিল। একদিকে ছিলেন ম্যাৎসিনি (Giuseppe Mazzini)-র মতো ভাববাদী বিপ্লবীরা, যারা চাইতেন গণজাগরণের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে। অন্যদিকে ছিলেন ক্যাভুর (Count Cavour)-এর মতো বাস্তববাদী ও ধূর্ত রাজনীতিবিদরা, যারা ছিলেন উত্তর ইতালির পিডমন্ট-সার্ডিনিয়া (Piedmont-Sardinia) রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী। তারা চাইতেন পিডমন্টের রাজতন্ত্রের অধীনে ইতালিকে একত্রিত করতে, এবং তা যতটা সম্ভব গণআন্দোলনকে এড়িয়ে বা নিয়ন্ত্রণ করে।

গ্রামসির মতে, ক্যাভুর ও তার অনুসারী ‘মডারেট’ বা উদারপন্থী বুর্জোয়ারাই শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছিলেন। তারা একদিকে যেমন কূটনীতি ও সীমিত যুদ্ধের মাধ্যমে বিদেশী শক্তিকে হটিয়েছে, তেমনই ম্যাৎসিনির র‌্যাডিক্যাল গণতন্ত্রী এবং গ্যারিবল্ডি (Giuseppe Garibaldi)-র মতো জনপ্রিয় কিন্তু রাজনৈতিকভাবে সরল নেতাদের উদ্যোগকে কৌশলে নিয়ন্ত্রণ বা আত্মসাৎ করেছে। গ্যারিবল্ডি তার হাজারখানেক লাল-কুর্তিধারী স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে দক্ষিণ ইতালি জয় করলেও, শেষ পর্যন্ত পিডমন্টের রাজার হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে কার্যত বাধ্য হয়েছিলেন।

এই পুরো প্রক্রিয়ায়, গ্রামসি দেখালেন:

  • নেতৃত্ব ছিল সীমিত: পিডমন্টের অভিজাত ও বুর্জোয়া শ্রেণিই মূল নেতৃত্ব দিয়েছে।

  • জনগণের অংশগ্রহণ ছিল নিয়ন্ত্রিত: সাধারণ কৃষক বা শহুরে কারিগরদের ব্যাপক ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ঘটেনি। বিশেষ করে বিশাল গ্রামীণ জনগোষ্ঠী, যারা ছিল ইতালির জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ, তারা এই প্রক্রিয়ায় প্রায় উপেক্ষিতই থেকেছে। তাদের ভূমি সংস্কারের মতো মৌলিক দাবিগুলো পূরণ করা হয়নি।

  • র‍্যাডিক্যাল সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করা হয়েছে: ম্যাৎসিনি ও গ্যারিবল্ডির মতো যারা আরও গভীর সামাজিক পরিবর্তনের কথা বলতেন, তাদের কোণঠাসা করা হয়েছে বা তাদের শক্তিকে মডারেটদের স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে (ট্রান্সফরমিজমো)।

  • ফলাফল ছিল অসম্পূর্ণ: ইতালি একত্রিত রাষ্ট্র হিসেবে জন্ম নিলেও, উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য দূর হয়নি, বরং অনেক ক্ষেত্রে বেড়েছে। রাষ্ট্র গঠন হলেও, তা সত্যিকারের ‘জনগণ-রাষ্ট্র’ (People-Nation) হয়ে ওঠেনি।

এই কারণেই গ্রামসি রিসর্জিমেন্তোকে একটি ‘ব্যর্থ বিপ্লব’ (Failed Revolution) বা আরও সঠিকভাবে বললে, একটি ‘প্যাসিভ রেভোল্যুশন’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এখানে বুর্জোয়ারা তাদের নিজেদের শ্রেণিগত স্বার্থে রাষ্ট্র গঠন ও আধুনিকায়নের কাজটি করেছে, কিন্তু তা জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণে একটি সত্যিকারের জাতীয়-গণতান্ত্রিক (National-Popular) বিপ্লবের রূপ নেয়নি। (Gramsci, 1971, pp. 52-120; Davis, 2000)

প্যাসিভ রেভোল্যুশনের অন্যান্য উদাহরণ: ইতিহাসের পাতা থেকে

গ্রামসি শুধু ইতালি নিয়েই ভাবেননি। তিনি মনে করতেন, প্যাসিভ রেভোল্যুশন একটি বিশ্বজনীন প্রক্রিয়াও হতে পারে, বিশেষ করে যখন কোনো পশ্চাৎপদ দেশ বা সমাজ আধুনিক পুঁজিবাদী বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করে কিন্তু সেখানে শক্তিশালী বিপ্লবী বুর্জোয়া শ্রেণি বা সংগঠিত শ্রমিক শ্রেণির অভাব থাকে।

বিভিন্ন তাত্ত্বিক গ্রামসির এই ধারণাকে পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা ব্যাখ্যা করতে ব্যবহার করেছেন। যেমন:

  • জার্মানির বিসমার্কীয় একত্রীকরণ: অনেকে মনে করেন, বিসমার্ক যেভাবে প্রুশীয় রাজতন্ত্র ও সামরিক অভিজাততন্ত্রের নেতৃত্বে, গণবিপ্লবকে এড়িয়ে, ‘ওপর থেকে’ জার্মানিকে একত্রিত ও শিল্পোন্নত করেছিলেন, তার মধ্যে প্যাসিভ রেভোল্যুশনের উপাদান স্পষ্ট।

  • জাপানের মেইজি রেস্টোরেশন (Meiji Restoration): সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকে জাপানের দ্রুত আধুনিক পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে রূপান্তর, যা ঘটেছিল সম্রাটের নামে একদল অভিজাত সামুরাইয়ের নেতৃত্বে, তাকেও প্যাসিভ রেভোল্যুশনের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায়।

  • তুরস্কে কামাল আতাতুর্কের আধুনিকায়ন: অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর কামাল আতাতুর্ক যেভাবে একটি সেক্যুলার, আধুনিক তুর্কি রাষ্ট্র গঠন করেছিলেন, যেখানে রাষ্ট্র নিজেই ছিল পরিবর্তনের প্রধান শক্তি এবং জনগণের অংশগ্রহণ ছিল সীমিত বা নির্দেশিত, সেটাও এই তত্ত্বের আলোকে বিচার্য।

  • বিংশ শতাব্দীর উন্নয়নশীল দেশ: অনেক তাত্ত্বিক মনে করেন, ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের পর বহু এশীয়, আফ্রিকান ও লাতিন আমেরিকান দেশে রাষ্ট্র নিজেই উন্নয়নের মূল কর্তা (agent of development) হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এই রাষ্ট্রগুলো প্রায়শই শিল্পায়ন, ভূমি সংস্কার (সীমিত আকারে), বা অন্যান্য আধুনিকায়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। কিন্তু এই প্রক্রিয়াগুলো প্রায়শই আমলাতান্ত্রিকভাবে, ওপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, যেখানে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ বা গণতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ ছিল সামান্যই। এইসব ‘রাষ্ট্র-নির্দেশিত উন্নয়ন’ (State-led Development) মডেলের মধ্যেও প্যাসিভ রেভোল্যুশনের ছায়া দেখতে পাওয়া যায়। রাষ্ট্র এখানে প্রগতিশীল শক্তি হিসেবে কাজ করার চেষ্টা করে, কিন্তু তা করে জনগণের বিপ্লবী শক্তিকে পাশ কাটিয়ে বা নিয়ন্ত্রণ করে। (Morton, 2007)

  • ফোর্ডিজম (Fordism) ও ওয়েলফেয়ার স্টেট: কেউ কেউ মনে করেন, বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে পশ্চিমা দেশগুলোতে যে ফোর্ডিস্ট উৎপাদন ব্যবস্থা (ব্যাপক উৎপাদন ও ভোগ) এবং কল্যাণ রাষ্ট্র (Welfare State) গড়ে উঠেছিল, তার মধ্যেও প্যাসিভ রেভোল্যুশনের উপাদান ছিল। শ্রমিকদের উচ্চ মজুরি এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে পুঁজিপতি শ্রেণি শ্রমিক আন্দোলনকে অনেকটাই নিজেদের সিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছিল, যার ফলে বিপ্লবী রাজনীতির ধার কমে গিয়েছিল। এটি ছিল এক ধরনের আপোষ, যা পুঁজিবাদের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করেছিল।

প্যাসিভ রেভোল্যুশনের কর্মপ্রণালী: কীভাবে ঘটে এই নিঃশব্দ বিপ্লব?

প্যাসিভ রেভোল্যুশন কোনো একক ঘটনা নয়, বরং একটি প্রক্রিয়া। এর কিছু নির্দিষ্ট কর্মপ্রণালী বা কৌশল আছে:

  • ১. আণবিক পরিবর্তন (Molecular Changes): পরিবর্তনগুলো প্রায়শই খুব ধীরে ধীরে, ছোট ছোট পদক্ষেপে ঘটে, যা সহজে সাধারণ মানুষের চোখে পড়ে না। আইন বা নীতির সামান্য রদবদল, প্রশাসনিক কাঠামোর ধীর সংস্কার – এগুলো জমতে জমতে একটা বড় পরিবর্তন নিয়ে আসে, কিন্তু কোনো আকস্মিক ঝাঁকুনি লাগে না।
  • ২. রাষ্ট্রের বর্ধিত ভূমিকা: প্যাসিভ রেভোল্যুশনে রাষ্ট্র প্রায়শই অর্থনীতি ও সমাজে প্রত্যক্ষভাবে হস্তক্ষেপ করে। রাষ্ট্র নিজেই উদ্যোক্তার ভূমিকা নেয়, শিল্প স্থাপন করে, বড় বড় প্রকল্প (যেমন বাঁধ, রাস্তাঘাট) তৈরি করে। এর মাধ্যমে রাষ্ট্র একদিকে যেমন অর্থনৈতিক উন্নয়নকে চালিত করে, তেমনই অন্যদিকে সমাজে নিজের নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাব বৃদ্ধি করে।
  • ৩. নেতৃত্বের কো-অপশন (Co-option of Leadership): আগেই বলা হয়েছে, বিরোধী বা সম্ভাব্য বিরোধী আন্দোলনের নেতাদের বা বুদ্ধিজীবীদেরকে রাষ্ট্র বা শাসক শ্রেণি নিজেদের বলয়ে টেনে নেয়। পদ, সুযোগ-সুবিধা বা ক্ষমতার ভাগ দিয়ে তাদের ‘শান্ত’ করা হয় (ট্রান্সফরমিজমো)।
  • ৪. আদর্শিক যুদ্ধ (Ideological Struggle): শাসক শ্রেণি গণমাধ্যম, শিক্ষা ব্যবস্থা ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক হাতিয়ার ব্যবহার করে তাদের সংস্কার কর্মসূচি বা আধুনিকায়ন প্রকল্পের পক্ষে জনমত তৈরি করে। তারা বোঝানোর চেষ্টা করে যে, এই পরিবর্তনগুলোই দেশের জন্য বা জনগণের জন্য মঙ্গলজনক এবং এটাই একমাত্র বাস্তবসম্মত পথ। জাতীয়তাবাদ (Nationalism) বা উন্নয়নের (Development) ধারণাকে প্রায়শই এই আদর্শিক যুদ্ধে ব্যবহার করা হয় শ্রেণি সংঘাত বা বৈষম্যের প্রশ্নগুলোকে আড়াল করার জন্য।
  • ৫. সীমাবদ্ধ সংস্কার (Limited Reforms): কিছু জনপ্রিয় দাবি মেনে নেওয়া হয় বা কিছু সংস্কার করা হয়, কিন্তু সেগুলো এমনভাবে করা হয় যাতে মূল ক্ষমতা কাঠামোতে কোনো আঘাত না লাগে। যেমন, ভূমি সংস্কার করা হলেও তা হয় অসম্পূর্ণ, বা শ্রমিকদের কিছু অধিকার দেওয়া হলেও তা ট্রেড ইউনিয়নের স্বাধীন কার্যকলাপকে সীমিত করে দেয়।

এইসব কৌশলের মাধ্যমে প্যাসিভ রেভোল্যুশন একদিকে যেমন কিছু প্রগতিশীল পরিবর্তন আনে (বা আনার ভান করে), তেমনই অন্যদিকে তা সমাজের গভীরে থাকা বিপ্লবী সম্ভাবনাগুলোকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দেয় বা পথভ্রষ্ট করে।

সমালোচনা ও সীমাবদ্ধতা

গ্রামসির প্যাসিভ রেভোল্যুশনের ধারণাটি অত্যন্ত প্রভাবশালী হলেও, এটি সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়।

  • অতি সরলীকরণ?: কেউ কেউ মনে করেন, এই তত্ত্বটি হয়তো কিছুটা যান্ত্রিক বা অতি সরলীকৃত। সব ধরনের ‘ওপর থেকে আসা’ সংস্কার বা পরিবর্তনকেই কি প্যাসিভ রেভোল্যুশন বলা যায়? শাসক শ্রেণির সব পদক্ষেপই কি শুধু নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার সচেতন ষড়যন্ত্র? তাদের মধ্যে কি কোনো প্রকৃত জনকল্যাণের ইচ্ছা থাকতে পারে না?

  • জনগণের ভূমিকাকে লঘু করা?: এই তত্ত্ব কি সাধারণ মানুষের প্রতিরোধ, দর কষাকষি বা নীচ থেকে চাপ সৃষ্টি করার ক্ষমতাকে কিছুটা ছোট করে দেখে? প্যাসিভ রেভোল্যুশনের পরিস্থিতিতেও কি জনগণ সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় থাকে, নাকি তাদেরও সীমিত পরিসরে হলেও কিছু ভূমিকা থাকে?

  • সংজ্ঞা নিয়ে অস্পষ্টতা?: প্যাসিভ রেভোল্যুশন, ট্রান্সফরমিজমো, হেজিমনি – এই ধারণাগুলোর মধ্যে সম্পর্ক এবং তাদের সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নিয়ে তাত্ত্বিকদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। গ্রামসি নিজেই জেলে বসে লিখেছেন, তার লেখাগুলো সবসময় সম্পূর্ণ সুসংগঠিত বা চূড়ান্ত রূপ পায়নি।

এইসব সমালোচনা সত্ত্বেও, প্যাসিভ রেভোল্যুশনের ধারণাটি রাষ্ট্র, সমাজ ও ক্ষমতার সম্পর্ক বোঝার জন্য এক শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত।

আজকের দুনিয়ায় প্যাসিভ রেভোল্যুশন: কেন এই তত্ত্ব আজও প্রাসঙ্গিক?

আন্তোনিও গ্রামসি মারা গেছেন বহু বছর আগে, পৃথিবীও বদলেছে অনেক। কিন্তু তার চিন্তার প্রাসঙ্গিকতা যেন এতটুকু কমেনি। আজকের বিশ্বেও আমরা প্যাসিভ রেভোল্যুশনের নানা প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই।

  • নয়া-উদারনীতিবাদ (Neoliberalism): গত কয়েক দশকে বিশ্বজুড়ে নয়া-উদারনীতিবাদী সংস্কার (রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ শিথিল করা, বেসরকারিকরণ, বাজারকে অবাধ করে দেওয়া) মূলত ওপরতলা থেকেই চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রায়শই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) বা বিশ্বব্যাংকের (World Bank) মতো সংস্থার পরামর্শে বা চাপে এই নীতিগুলো গৃহীত হয়েছে, যেখানে সাধারণ জনগণের মতামত বা অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল খুবই সীমিত। এই প্রক্রিয়া অর্থনীতি ও সমাজকে আমূল বদলে দিয়েছে, কিন্তু তা ঘটেছে মূলত ক্ষমতাশালী শ্রেণি ও কর্পোরেট জগতের স্বার্থে। এর মধ্যেও প্যাসিভ রেভোল্যুশনের বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাওয়া যায় – পরিবর্তন হচ্ছে, কিন্তু তা গণতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণের বাইরে এবং spesso বৈষম্য বৃদ্ধি করছে।

  • টেকনোক্র্যাটিক শাসন (Technocratic Governance): অনেক দেশে আজকাল দেখা যায়, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের চেয়ে বিশেষজ্ঞ, আমলা বা টেকনোক্র্যাটরা নীতি নির্ধারণে বেশি প্রভাবশালী হয়ে উঠছেন। জটিল সমস্যা সমাধানের নামে বা ‘উন্নয়নের’ দোহাই দিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়াই নেওয়া হচ্ছে। এটাও এক ধরনের ‘ওপর থেকে শাসন’, যা গণতন্ত্রকে পাশ কাটিয়ে যায়।

  • সংকট মোকাবিলায় রাষ্ট্র: অর্থনৈতিক সংকট (যেমন ২০০৮ সালের বিশ্ব মন্দা) বা অতিমারীর (যেমন কোভিড-১৯) মতো পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রগুলো প্রায়শই ব্যাপক ক্ষমতা ব্যবহার করে। এই সময়ে নেওয়া জরুরি পদক্ষেপগুলো অনেক সময় দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে এবং রাষ্ট্রের ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে দেয়, যা অনেক ক্ষেত্রে জনগণের নজরদারি বা সম্মতির বাইরেই ঘটে।

  • পরিচয়বাদী রাজনীতির উত্থান: অনেক সময় শাসক শ্রেণি বা ক্ষমতালিপ্সু শক্তিগুলো ধর্ম, জাতি বা অঞ্চলের ভিত্তিতে পরিচয়বাদী রাজনীতিকে উস্কে দেয়। এর মাধ্যমে তারা জনগণের দৃষ্টি মূল অর্থনৈতিক বা শ্রেণিগত সমস্যাগুলো থেকে সরিয়ে দেয় এবং নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য সমাজের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে। এটাও এক ধরনের হেজিমনি পুনর্গঠনের কৌশল, যা প্যাসিভ রেভোল্যুশনের বৃহত্তর ছকের অংশ হতে পারে।

প্যাসিভ রেভোল্যুশন ও ফ্যাসিবাদের উত্থান: ব্যর্থতার গর্ভে জন্মানো দানব?

আন্তোনিও গ্রামসির কাছে, ফ্যাসিবাদের উত্থান কোনো আকস্মিক ঘটনা বা নিছক একনায়কতন্ত্রের প্রকাশ ছিল না। তিনি একে ইতালির ঐতিহাসিক বিকাশের, বিশেষ করে রিসর্জিমেন্তো (Risorgimento) প্রক্রিয়ার অসম্পূর্ণতা ও ব্যর্থতার (যা তিনি প্যাসিভ রেভোল্যুশন হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন) এক ভয়ংকর পরিণতি হিসেবে দেখেছিলেন। তার মতে, রিসর্জিমেন্তো একটি প্যাসিভ রেভোল্যুশন ছিল কারণ এটি বুর্জোয়া শ্রেণির নেতৃত্বে ওপর থেকে সংঘটিত হয়েছিল, কিন্তু তা ইতালির জনগণকে, বিশেষ করে কৃষক সমাজকে, জাতীয় জীবনে সঠিকভাবে অঙ্গীভূত করতে (integrate) ব্যর্থ হয়েছিল এবং তাদের মৌলিক সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। এর ফলে একটি দুর্বল লিবারেল বা উদারনৈতিক রাষ্ট্র কাঠামো তৈরি হয়, যা গভীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকটের মোকাবিলা করতে অক্ষম ছিল। (Gramsci, 1971, pp. 52-120)

প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর ইতালিতে তীব্র অর্থনৈতিক সংকট, শ্রমিক আন্দোলন ও সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ভীতি, এবং লিবারেল রাষ্ট্রের চরম ব্যর্থতার পটভূমিতে ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। গ্রামসি দেখান যে, ফ্যাসিবাদ একদিকে যেমন বুর্জোয়া শ্রেণির শাসনকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছিল (বিশেষত বৃহৎ শিল্পপতি ও জমিদারদের স্বার্থ), তেমনই অন্যদিকে জনগণের একাংশের (বিশেষত পেটি বুর্জোয়া বা নিম্ন মধ্যবিত্ত) সমর্থন আদায় করেছিল জাতীয়তাবাদ, শৃঙ্খলা এবং সমাজতন্ত্র-বিরোধী বাগাড়ম্বরের মাধ্যমে।

ফ্যাসিবাদকে তাই এক অর্থে প্যাসিভ রেভোল্যুশনেরই এক বিকৃত ও আগ্রাসী রূপ হিসেবে দেখা যায়। এটিও ছিল ‘ওপর থেকে’ চাপানো এক ধরনের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া, যা বিদ্যমান সংকট সমাধান এবং একটি নতুন ধরনের (যদিও দমনমূলক) হেজিমনি বা আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিল। তবে এটি আগের লিবারেল প্যাসিভ রেভোল্যুশনের মতো সংস্কার বা ‘ট্রান্সফরমিজমো’-র পথে না হেঁটে, সরাসরি বলপ্রয়োগ, সন্ত্রাস এবং বিরোধী মত সম্পূর্ণ দমন করার মাধ্যমে ক্ষমতা দখল ও সংহত করেছিল। ফ্যাসিবাদ চেষ্টা করেছিল রাষ্ট্রযন্ত্রকে চরমভাবে শক্তিশালী করে এবং সিভিল সোসাইটিকে (Civil Society) সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্রের অধীনস্থ করে একটি ‘টোটালিটারিয়ান’ (Totalitarian) বা সর্বগ্রাসী ব্যবস্থা কায়েম করতে। এটি ছিল লিবারেল রাষ্ট্রের হেজিমনিক সংকটের (Crisis of Hegemony) একটি প্রতিক্রিয়া, কিন্তু তা কোনো প্রগতিশীল পথে না গিয়ে চরম প্রতিক্রিয়াশীল পথে চালিত হয়েছিল। গ্রামসির মতে, ফ্যাসিবাদ আসলে রিসর্জিমেন্তোর অসমাপ্ত কাজকেই সম্পন্ন করার চেষ্টা করেছিল – একটি ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী রাষ্ট্র গঠন – কিন্তু তা করেছিল জনগণের অধিকার হরণ করে এবং গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে। (Sassoon, 1980, pp. 210-218; Poulantzas, 1974)

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্যাসিভ রেভোল্যুশন: উন্নয়ন বনাম রূপান্তর?

স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্র গঠন (state formation), রাজনৈতিক বিবর্তন (political evolution) এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন (socio-economic development) প্রক্রিয়াকে আন্তোনিও গ্রামসির প্যাসিভ রেভোল্যুশনের তত্ত্বের আলোকে বিশ্লেষণ করার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। যদিও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি জনযুদ্ধ এবং সক্রিয় গণসংগ্রামের (active mass struggle) ফসল, কিন্তু যুদ্ধোত্তর রাষ্ট্র পুনর্গঠন এবং পরবর্তী উন্নয়ন যাত্রায় প্যাসিভ রেভোল্যুশনের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়।

বিশেষ করে, রাষ্ট্রযন্ত্রের (state apparatus), বিশেষত আমলাতন্ত্র ও বিভিন্ন সময়ে সামরিক-বেসামরিক এলিট গোষ্ঠীর, উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় নির্ধারক ভূমিকা পালন; উপর থেকে চাপানো (top-down) উন্নয়ন মডেল অনুসরণ; অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও আধুনিকায়নের উপর জোর দেওয়া হলেও প্রায়শই ক্ষমতা কাঠামো ও সামাজিক বৈষম্যের (social inequality) মৌলিক পরিবর্তনে অনীহা বা ব্যর্থতা; এবং বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বা ভিন্নমতকে আত্মস্থকরণ (co-option) বা প্রান্তিকীকরণের (marginalization) মাধ্যমে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার প্রবণতা – এই বিষয়গুলো প্যাসিভ রেভোল্যুশনের ধারণার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। (Sobhan, 1993; Jahan, 1980)

রাষ্ট্র নিজেই যখন উন্নয়নের প্রধান কারিগর (agent of development) হয়ে ওঠে এবং এই উন্নয়নকে জাতীয় অগ্রগতির সমার্থক হিসেবে উপস্থাপন করে, তখন প্রায়শই জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের প্রশ্নগুলো আড়ালে চলে যায়। ‘উন্নয়নের’ হেজিমনি (hegemony of development) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অনেক সময় গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা বা মৌলিক অধিকারের প্রশ্নগুলোকে গৌণ করে দেখা হয়। এনজিও বা সুশীল সমাজের (civil society) ভূমিকাও এই প্রেক্ষিতে জটিল। একদিকে তারা প্রান্তিক মানুষের জন্য কাজ করলেও, অন্যদিকে তারা অনেক সময় রাষ্ট্র বা আন্তর্জাতিক দাতাদের নির্ধারিত কাঠামোর মধ্যে পরিচালিত হওয়ায় মৌলিক ব্যবস্থা পরিবর্তনের চেয়ে স্থিতাবস্থা (status quo) বজায় রাখতেই পরোক্ষভাবে সহায়তা করে কিনা, সেই প্রশ্নটিও গ্রামসীয় দৃষ্টিকোণ থেকে তোলা সম্ভব। (Lewis, 2011; Ahmad, 2009)

সুতরাং, বাংলাদেশের উন্নয়নযাত্রা নিছক অগ্রগতি নাকি এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী প্যাসিভ রেভোল্যুশন প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট এলিট শ্রেণি তাদের ক্ষমতা ও আধিপত্যকে টিকিয়ে রেখে রাষ্ট্র ও সমাজকে পুনর্গঠন করছে – এই প্রশ্নটি গ্রামসির তত্ত্বের আলোকে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং গভীর আলোচনার দাবি রাখে।

শেষের কথা: নীরবতার শব্দ শোনা

গ্রামসির প্যাসিভ রেভোল্যুশন তত্ত্বটি আমাদের শেখায় আপাত শান্ত, স্বাভাবিক মনে হওয়া সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতির আড়ালে লুকিয়ে থাকা ক্ষমতার জটিল খেলাগুলোকে চিনতে। বিপ্লব মানেই যদি হয় পরিবর্তন, তাহলে সেই পরিবর্তন কীভাবে আসছে, কারা আনছে, কাদের স্বার্থে আনছে – এই প্রশ্নগুলো তোলা জরুরি। প্যাসিভ রেভোল্যুশন আমাদের সতর্ক করে দেয় যে, পরিবর্তন বা সংস্কারের নামে যা ঘটছে, তা সবসময় জনগণের ক্ষমতায়নের দিকে না-ও নিয়ে যেতে পারে। অনেক সময় তা হতে পারে শাসক শ্রেণির নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখারই এক সূক্ষ্ম, নীরব কৌশল।

এই তত্ত্ব আমাদের চোখ খুলে দেয়, কানকে সজাগ করে তোলে। আমরা যেন শুধু রাজপথের শ্লোগান বা ব্যারিকেডের শব্দই না শুনি, বরং সমাজের ভেতরে ঘটা নীরব পরিবর্তনগুলোর পদধ্বনিও শুনতে পাই। কারণ, অনেক সময়ই সবচেয়ে বড় পরিবর্তনগুলো ঘটে যায় আমাদের অগোচরে, চুপি চুপি, যেমন করে রাতের শিশির ঘাসের ডগায় জমে ওঠে – নিঃশব্দে, কিন্তু নিশ্চিতভাবে। গ্রামসির কাজ আমাদের সেই নীরবতার শব্দ শোনার ক্ষমতা দেয়, ক্ষমতার সেই অদৃশ্য জালকে চেনার দূরদৃষ্টি দেয়। আর আজকের জটিল পৃথিবীতে এই দূরদৃষ্টির প্রয়োজন হয়তো আগের চেয়েও অনেক বেশি।

তথ্যসূত্র (References)

  1. Gramsci, Antonio. (1971). Selections from the Prison Notebooks. Edited and translated by Quintin Hoare and Geoffrey Nowell Smith. Lawrence and Wishart. (মূল গ্রন্থ, গ্রামসির ধারণাগুলোর প্রাথমিক উৎস)

  2. Sassoon, Anne Showstack. (1980). Gramsci’s Politics. Hutchinson. (গ্রামসির রাজনৈতিক চিন্তার একটি ক্লাসিক আলোচনা)

  3. Buttigieg, Joseph A. (1995). “The Concept of ‘Passive Revolution’ in Gramsci’s Prison Notebooks.” Boundary 2, 22(3), pp. 21-42. (প্যাসিভ রেভোল্যুশন ধারণাটির উপর নিবদ্ধ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ)

  4. Morton, Adam David. (2007). Unravelling Gramsci: Hegemony and Passive Revolution in the Global Political Economy. Pluto Press. (আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ও উন্নয়নশীল বিশ্বে গ্রামসির তত্ত্বের প্রয়োগ নিয়ে আলোচনা)

  5. Davis, John A. (Ed.). (2000). Gramsci and Italy’s Passive Revolution. Croom Helm. (বিশেষভাবে ইতালির রিসর্জিমেন্তো ও প্যাসিভ রেভোল্যুশন নিয়ে প্রবন্ধ সংকলন)

  6. Femia, Joseph V. (1981). Gramsci’s Political Thought: Hegemony, Consciousness, and the Revolutionary Process. Clarendon Press. (গ্রামসির হেজিমনি ও বিপ্লবী কৌশল নিয়ে আলোচনা)

  7. Thomas, Peter D. (2009). The Gramscian Moment: Philosophy, Hegemony and Marxism. Brill. (গ্রামসির দার্শনিক ভিত্তি ও হেজিমনি তত্ত্বের গভীর বিশ্লেষণ)

  8. Green, Marcus E. (2011). “Rethinking the Subaltern and the Question of Censorship in Gramsci’s Prison Notebooks.” Postcolonial Studies, 14(4), pp. 387-404. (গ্রামসির সাবঅল্টার্ন ধারণা ও সেন্সরশিপের প্রেক্ষাপটে তার লেখার ব্যাখ্যা)

  9. Poulantzas, Nicos. (1974). Fascism and Dictatorship: The Third International and the Problem of Fascism. New Left Books. (এই বইয়ে গ্রামসির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ফ্যাসিবাদকে একটি বিশেষ ধরনের বুর্জোয়া রাষ্ট্রের সংকটকালীন রূপ হিসেবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে)

  10. Behan, Tom. (2003). The Resistible Rise of Benito Mussolini. Bookmarks Publications. (গ্রামসির সমসাময়িক ইতালির পরিস্থিতি ও ফ্যাসিবাদের উত্থান নিয়ে আলোচনা, যা গ্রামসির বিশ্লেষণ বুঝতে সহায়ক)

  11. Sobhan, Rehman. (1993). Bangladesh: Problems of Governance. Centre for Policy Dialogue/University Press Limited. (বাংলাদেশের শাসন প্রক্রিয়া ও এলিটদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা)

  12. Jahan, Rounaq. (1980). Bangladesh Politics: Problems and Issues. University Press Limited. (স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট ও রাষ্ট্র গঠন প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ)

  13. Lewis, David. (2011). Bangladesh: Politics, Economy and Civil Society. Cambridge University Press. (বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সুশীল সমাজের আন্তঃসম্পর্ক নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ)

  14. Ahmad, Ahrar. (2009). “Reading Gramsci in the New World Order: Some Theoretical Implications.” Journal of Third World Studies, 26(2), pp. 51-71. (যদিও সরাসরি বাংলাদেশ নিয়ে নয়, তবে উন্নয়নশীল বিশ্বে গ্রামসির প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরে, যা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে)

  15. Khan, Mushtaq H. (2000). “Rents, Efficiency and Growth.” In Rents, Rent-Seeking and Economic Development: Theory and Evidence in Asia. Edited by Mushtaq H. Khan and Jomo Kwame Sundaram. Cambridge University Press. (ক্ষমতা কাঠামো ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন মডেল নিয়ে আলোচনা, যা প্যাসিভ রেভোল্যুশনের ধারণার সাথে যুক্ত করে পড়া যেতে পারে)

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.