আর্কটিক এর দ্বীপে আবিষ্কৃত হওয়া ক্রান্তীয় অঞ্চলের বনের ফসিল দিচ্ছে উদ্ভিদের বিবর্তন ও অতীত পৃথিবীর পরিবেশ সংক্রান্ত অনেক তথ্য

photo credit: This is a reconstructed drawing of the Svalbard fossil forest. Dr. Chris Berry/Cardiff University

আর্কটিক মহাসাগরে নরওয়েজিয়ান দ্বীপ Svalbard এ সম্প্রতি একটি ট্রপিকাল ফরেস্ট উদ্ধার করা হয়েছে। এখানে বিজ্ঞানীগণ এই গ্রহের প্রথম দিকের গাহগুলোর কয়েকটা আবিষ্কার করেছে যা আমাদেরকে ৪০০ মিলিয়ন বছর পূর্বে কিভাবে পৃথিবীর জলবায়ু নাটকীয়ভাবে পরিবির্তিত হয় এটা সম্পর্কে মূল্যবান সংকেত দেয়।

এই ব্রিটিশ রিসার্চারগণ ৩৮০ মিলিয়ন বছর পূর্বের ডেভোনিয়ান পিরিয়ডের সংরক্ষিত অনেক গাছের গুড়ি উদ্ধার করেছেন। এই পিরিয়ডে পৃথিবী বিভিন্ন ধরণের গাছ গাছালির রাজত্ব ছিল বলা যায়।

বনগুলো খুবই গভীর ছিল। গাছগুলো ৪ মিটার বা ১৩ ফুট লম্বা ছিল আর এক একটি গাছের মধ্যবর্তী দূরত্ব ছিল ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটারের মধ্যে। বনগুলোর গাছগুলো ছিল লাইকোপড গাছ (Lycopod trees)। এরা কারবনিফেরাস যুগে যে গাছগুলো সমগ্র পৃথিবী আচ্ছাদিত করে রেখেছিল তাদের পূর্বপুরুষ। এই লাইকোপড গাছ গুলো পরবর্তীতে কয়লায় পরিণত হয়ে যায়।

গবেষণার প্রধান লেখক বলেন, “এই ফসিলগুলো আমাদের ৩৮০ মিলিয়ন বছর পূর্বে পৃথিবীতে প্রথম গাছ এর সূচনা হবার সময় এর ভেজিটেশন ও ল্যান্ডস্কেপ কিরকম ছিল এ বিষয়ে অনেক তথ্য দেয়।” ডেভোনিয়ান পিরিয়ডের সময় Svalbard পৃথিবীর বিষুব রেখার কাছাকাছি স্থানে অবস্থান করত। পরবর্তীতে প্লেট টেকটোনিক্স এর কারণে এটা ধীরে ধীরে সরে যায়।

গবেষণার তথ্যগুলো ডেভোনিয়ান পিরিয়ডে আমাদের পৃথিবীর অবস্থা সম্পর্কে আমাদের ধারণা দিতে পারে।বিজ্ঞানীদের কাছে প্রমাণ আছে যে সেই সময়ে পৃথিবী থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড এর পরিমাণ প্রচুর পরিমাণে কমে এসেছিল। আর এটা হয়েছিল মস ও ছোট ছোট প্ল্যান্ট এর গাছে বিবর্তিত হয়ে বনাঞ্চল তৈরির মধ্য দিয়ে। এই বনাঞ্চলের গাছগুলো প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে অক্সিজেন নিঃসরণ করেছিল।

Dr. Berry বলেন, “ডেভোনিয়ান পিরিয়ডে বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাই অক্সাইড লেভেল অনেক নিচে নেমে এসেছিল। কার্বন ডাই অক্সাইড লেভেল একেবারে এখনকার থেকে ১৫ গুণ বেশি থেকে কমে গিয়ে প্রায় এখনকার কার্বন ডাই অক্সাইড লেভেলে এসে পৌঁছায়। বিবর্তনের মাধ্যমে প্ল্যান্টগুলোর আকার পরিবর্তন করে গাছে রূপ নেয়ার ফলেই কার্বন ফাই অক্সাইড লেভেলের এই নাটকীয় পরিবর্তন ঘটেছিল। কারন গাছেরা  সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে তাদের টিস্যু তৈরি করতে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে। এছাড়া মাটি গঠন প্রক্রিয়া বা সয়েল ফর্মিং প্রোসেসের স্বারাও এটা ত্বরান্বিত হয়েছিল।”

যে গাছগুলো আবিষ্কৃত হয়েছে সেগুলো আর্দ্র এলাকায় বৃদ্ধি পেয়েছিল। আর সেই অঞ্চলটি খুব দ্রুত সরে যাওয়া বেসিনের উপর ছিল। এই বৈশিষ্ট্যগুলোর সাথে উচ্চ ঘন বনাঞ্চল মিলে এরা অনেক শক্তিশালী সয়েল ওয়েদারিং বা মাটি ক্ষয় ঘটিয়েছিল। এই ব্যাপারটা Dr. Berry এর আমেরিকান কলিগদের সাথে মিলে করা আগের গবেষণায় পাওয়া ফল থেকেও বেশি।

Dr. Berry বলেন, “এই ব্যাপারটা বলছে এদের বিবর্তিত হবার সাথে সাথেই ফরেস্ট প্ল্যান্ট টাইপের জিওডাইভার্সিটি এবং ইকোলজি তৈরি হয়ে গিয়েছিল।” অর্থাৎ এই গাছগুলোর বিবর্তিত হওয়ার খুব কম সময়ের মধ্যে বনে বনে বিভিন্ন ধরণের গাছ এসে যায় এবং তাদের মধ্যে বাস্তুসংস্থান তৈরি হয়ে যায়।

এই গবেষণাটি Geology জার্নালে প্রকাশিত হয়।

http://geology.gsapubs.org/content/43/12/1043

 

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.