সর্বপ্রথম চার পায়ে দাঁড়ানো প্রাণী : বুনোস্টেগস আবিষ্কার

আধা জলহস্তী ও আধা গিরগিটির মত দেখতে ছবির এই প্রি-রেপটাইল বা প্রাথমিক সরিসৃপটিকে এখন বিজ্ঞানীরা আমাদের জানা প্রাণিদের মধ্যে চার পায়ের সবকটা ব্যাবহার করে হাঁটা প্রথম প্রাণী বলে মনে করছেন। Bunostegos akokanensis নামের এই প্রাণিটি আজ থেকে প্রায় ২৬০ মিলিয়ন বছর পূর্বে বর্তমান আফ্রিকান দেশ নাইজারে অঞ্চলে টিকে ছিল। এই প্রাণিটি প্যারেইয়াসর গ্রুপের অন্তর্ভূক্ত। এই প্রাণিটি থেকেই বিবর্তিত হয়ে কচ্ছপের আবির্ভাব বলে বিজ্ঞানীদের মধ্যে বহুদিনের একটি বিতর্ক চলছে।

২৬০ মিলিয়ন বছর পূর্বে পৃথিবীতে অবস্থান করা বুনোস্টেগস এর সাম্ভাব্য প্রতিকৃতি

” বুনোস্টেগস (Bunostegos) এর সময়ের অনেক প্রাণীরই এদের মত একই রকম আপরাইট অথবা সেমি আপরাইট হাইন্ড লিম্ব পোসচার (পেছনের পা)। কিন্ত বুনোস্টেগস এর মধ্যে যে জিনিসটি অন্য সবার থেকে আলাদা তা হল এদের ফোরলিম্ব বা সামনের পা।” জানিয়েছেন মরগান টার্নার, যিনি ভার্টেব্রাটা প্যালেওন্টোলজি জার্নালে পেপারটি পাবলিশিং এ কোঅথরিং করেন। তিনি বলেন, “এদের ফোরলিম্ব বা সামনের পায়ের যে স্ট্রাকচার দেখা যাচ্ছে তা এদের হামাগুড়ি দিতে এলাউ করবে না। আর এই ব্যাপারটাই বুনোস্টেগসদের মধ্যে ইউনিক।”

আগে ভাবা হত যে, বুনোস্টেগস সহ অন্যান্য সমস্ত প্যারেইয়াসোররা হামাগুড়ির মাধ্যমে চলত। এইসব প্রাণিদের শরীরে নিচের দিকে তীর্যকভাবে একটি অঙ্গ লাগানো থাকত যা ভূমিকে স্পর্শ করত ঠিক আজকের গিরগিটি ও স্যালাম্যান্ডারদের মত। প্রাণিরা সম্পূর্ণভাবে দাঁড়ানোর জন্য বিবর্তিত হবার আগে ভূমিতে এক জায়গায় থেকে আরেক জায়গায় যাবার জন্য এটাই ছিল আদীমতম উপায়।

এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি, এই হামাগুড়ি দেয়া অবস্থা থেকে পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় ট্রাঞ্জিশন হওয়াটা আগের ধারণার সময়ের চেয়ে আরও আগেই হয়ে গিয়েছিল। বুনোস্টেগসের ফসিল সবার প্রথমে ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিওন্টোলজিস্টদের দৃষ্টি কারে ২০০৩ সালে। টার্নার যখন এদের ফসিল দেখছিলেন তখন তিনি ভাবেন, অবশ্যই এদের লিম্বগুলো অবশ্যই শরীরের সরাসরি নিচে অবস্থিত।

শোল্ডার জয়েন্ট বা ঘাড়ের জয়েন্টগুলো এমনভাবে কোণ করে আছে যে এদের হিউমেরাস বা আপার আপ বোন এর দেহের সাইডওয়ে বা পাশাপাশি অবস্থানে আটকে থাকা অসম্ভব। তার উপর বেশিরভাগ হামাগুড়ি দেয়া প্রাণির হিউমেরাস টুইস্টেড বা পাঁকানো অবস্থায় থাকে যাতে পায়ের পাতা ও লোয়ার আর্ম মাটিতে পৌঁঁছাতে পারে আর এই ব্যাপারটা বুনোস্টেগাসদের হাড়ে দেখা যায় না যা নির্ধেশ করে এদের পাগুলোর পজিশন একইরকম উপায়ে ছিল না। আর এখানেই এভিডেন্সের শেষ নয়।

শোল্ডার জয়েন্ট (1), হিউমেরাস (2), হাঁটুর ন্যায় এলবো জয়েন্ট (3), এবং দীর্ঘ লোয়ার আর্ম (4) আমাদের নির্দেশ করছে যে বুনোস্টেগস দাঁড়াতে পারত।
শোল্ডার জয়েন্ট (1), হিউমেরাস (2), হাঁটুর ন্যায় এলবো জয়েন্ট (3), এবং দীর্ঘ লোয়ার আর্ম (4) আমাদের নির্দেশ করছে যে বুনোস্টেগস দাঁড়াতে পারত।

হামাগুড়ি দেয়া প্যারেইয়াসরদের এলবো বা কনুই এর জয়েন্ট খুবই ফ্লেক্সিবল থাকে কিন্তু বুনোস্টেগসদের বেলায় টার্নার এটা পান নি। এদের জয়েন্টগুলো বরং অনেকটা আমাদের হাঁটুর জয়েন্টের সাথেই মিলে যায় যা পায়ের পাতা ও লোয়ার আর্মকে সামনে আর পেছনে নড়তেই এলাউ করে। আর সবশেষে সমস্ত দাঁড়াতে সক্ষম প্রাণিদের সামনের ও পেছনের পা এর দৈর্ঘ্যের যে অনুপাত থাকে, যেখানে পেছনের পা সামনের পা এর চেয়ে দীর্ঘ হয় তা এদের বেলাতেও দেখা যায়।

টার্নার জানান, ” প্রাণীদের অঙ্গের চালচলন ও অবস্থান পরিবর্তনের বিবর্তনে অনেক জটিলতা আছে। আমরা প্রতিদিন এটা ভালভাবে বুঝতেই কাজ করছি। বুনোস্টেগস এর এনাটমি পুরোপুরি আনএক্সপেক্টেড ছিল আর এটা আমাদের বলে যে আমাদের আরও অনেক নতুন কিছুই শেখার আছে।”

হামাগুড়ি বা স্প্রলিং অবস্থা থেকে আপরাইট হবার অবস্থা একেবারে এক ধাপেই হয়ে যায় নি, ধীরে ধীরে হয়েছে। তাই টার্নার আশা করছেন যে পরে একই বৈশিষ্ট্যের বূনোস্টেগস প্রজাতির মত প্যারেইওসরদের আরও দাঁড়াতে সক্ষম প্রজাতির খোঁজ পাওয়া যাবে।

সূত্রঃ http://www.tandfonline.com/doi/abs/10.1080/02724634.2014.994746?journalCode=ujvp20&

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.