জাতিসংঘ প্রকাশিত ১০,০০০ মানুষ ধারণক্ষম ভাসমান শহরের ধারণা জলবায়ু পরিবর্তনের সংকটে ভূমিকা রাখতে পারে|ডেনিয়েল দত্ত

মানববসতি সংক্রান্ত জাতিসংঘ প্রকল্প ইউএন-হ্যাবিট্যাট-এর সাম্প্রতিক এক বিশেষ আয়োজনে , বহুমুখী দক্ষতাসম্পন্ন উদ্ভাবকদের একটি দল ১০,০০০ পর্যন্ত অধিবাসী ধারণে সক্ষম বিশ্বের প্রথম স্বনির্ভর ভাসমান শহরের একটি ধারণা দিয়েছেন।

এতে যদি আপনার মনশ্চক্ষুতে ভাসে “দি জেটসনস” কার্টুন এবং “ওয়াটার ওয়ার্ল্ড” সিনেমার মিলিত দৃশ্যকল্প, আপনি হয়তো অনেকটাই কাছাকাছি ভাবছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রতটের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনায় উপকূলীয় মানুষদের দুর্দশা নিরূপনকল্পে এই সম্মেলনে একত্রিত হয়েছিলেন একদল উদ্ভাবক, অভিযাত্রী, সামুদ্র প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানী। আরো নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, নিজস্ব খাদ্য, শক্তি, পানীয় জল উৎপাদনকারী ও বর্জ্যমুক্ত স্বনির্ভর ভাসমান জনবসতিগুলো কিভাবে এই ক্রমবর্ধমান জলবায়ুজনিত উদ্বেগ ও ভবিষ্যতের সম্ভাব্য স্থানচ্যুতিজনিত সমস্যায় ভূমিকা রাখতে পারে, তাই ছিল তাঁদের আলোচনার মূল লক্ষ্য।

জাতিসংঘের অধীনস্থ-মহাসচিব এবং ইউএন-হ্যাবিট্যাট এর নির্বাহী পরিচালক মাইমুনা মোহাম্মদ শরীফ এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “ আমরা জাতিসঙ্ঘের নিযুক্ত সেই সংস্থা যাদের কাজ শহর নিয়ে কাজ করা, হোক সে শহর মাটি বা জলের উপরে। এই বর্ধিষ্ণু খাত (ভাসমান শহর) যেন সকল মানুষের হিত ও উপকারার্থে আসে তা নিয়ে আমরা সংলাপে বসতে প্রস্তুত।”

এই কল্পিত ভাসমান শহরের পরিকল্পনা মিলিতভাবে প্রস্তাব করেছে স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান BIG, অলাভজনক সংস্থা OCEANIX এবং ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজির সমুদ্র প্রকৌশল কেন্দ্র। শহরটা হবে পরষ্পর সংযুক্ত নোঙ্গরবাঁধা কিছু ভাসমান প্লাটফর্মের সমষ্টি, যেখানে একই সাথে বসবাসের জন্যে আবাসন ও ব্যবসাকেন্দ্রিক কার্যক্রমের জন্যে স্থাপনা তৈরী করা হবে। পাশাপাশি থাকবে চাষাবাদ এবং জমায়েতের জন্যে ব্যবস্থাপনা। এছাড়াও প্রস্তুতকর্তারা বলছেন, কাছাকাছি উপকূলীয় এলাকার সাথে যাতায়াতের সুবিধার্থে পড-সদৃশ বৈদ্যুতিক বাহনের ব্যবস্থা থাকবে।

ওশানিক্স এর বক্তব্যানুসারে, সময়ের প্রেক্ষিতে এই শহর জৈবিকভাবে রূপান্তরিত হতে ও খাপ খাইয়ে নিতে এবং প্রয়োজনানুসারে ৩০০ আবাসিকের বসতি থেকে ১০,০০০ মানুষের শহরে বিকশিত হতে সক্ষম। ৫ একর আয়তনের তিন ডজন ভাসমান বসতি ও অসংখ্য উৎপাদনশীল ঘাঁটি সময়ের সাথে সাথে আরো বৃদ্ধি পাওয়া বা সংকুচিত হওয়া সম্ভব। তাঁরা আরো জানাচ্ছেন, এই শহরগুলো নিচের সামুদ্রিক  বাস্তুসংস্থানের সাথে সমন্বয় সাধন করতে সক্ষম। উদাহরণস্বরূপ, প্ল্যাটফর্মগুলোর ভিত্তি হিসেবে একপ্রকার ভাসমান প্রবাল বা জৈবপাথর ব্যবহার করা হবে। এই জৈবপাথরে সামুদ্রিক আগাছা, শামুক, ঝিনুক, গুগলি সংযুক্ত থাকবে, যাদের কাজ হবে আশপাশের জল পরিষ্কার রাখা এবং বাস্তুসংসস্থান পুনর্গঠন তরান্বিত করা।

ওশানিক্স এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধাণ নির্বাহী মার্ক কলিন্স চেন জানিয়েছেন, “এটা একেবারেই আমরা বনাম ওরা জাতীয় কোন বিষয় নয়। এই প্রযুক্তির একমাত্র উদ্দেশ্য সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থানকে ব্যজ]হত না করে যেন আমরা পানির উপরে বসবাস করতে পারি। আমাদের লক্ষ্য এটা নিশ্চিত করা যে, এই স্বনির্ভর বভাসমান শহরগুলো যেন উপকূলীয় এলাকার প্রয়োজনের সময় সহজলভ্য এবং সাশ্রয়ী হয়। এগুলো কিছুতেই শুধুমাত্র ধনীক শ্রেণির সুবিধার্থে ব্যবহার্য হতে পারেনা।”

তথ্যসূত্র

১।
https://www.iflscience.com/technology/un-reveals-concept-for-floating-city-that-can-hold-10000-amid-climate-change-concerns/

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.