ব্রোঞ্জ যুগের মাত্র কয়েকজন মানুষ ইউরোপের দুই তৃতীয়াংশ মানুষের পূর্বপুরুষ!

photo credit: Dads in Paris. David McSpadden/Flickr, CC BY-SA

ইউরোপের মত এত বিশাল একটি কালচারালি ডাইভার্স জায়গায় জেনেটিক ভেরাইটি আশ্চর্যজনকভাবে অনেক কম। কিভাবে এবং কখন এই মডার্ন জিন পিল আসল তার জানা একটি বিশাল জার্নি। কিন্তু নতুন টেকনোলজিকাল এডভান্সগুলোকে ধন্যবাদ। এদের জন্য একটি অধিক এফিশিয়েন্ট লাইফস্টাইলের মানুষদের বারবার কলোনাইজেশনের ছবি  আমাদের চোখের সামনে ধীরে ধীরে ভেসে উঠছে।

একটি নতুন গবেষণার ফলে আমরা এই পাজলে আরেকটি পিস সংযোজন করতে পেরেছি। এটা বলছে বেশির ভাগ ইউরোপিয়ান এর ওয়াই ক্রোমোজোমকে ট্র্যাক করে ৩,৫০০ থেকে ৭,৩০০  বছর আগের কেবল মাত্র ৩ জন মানুষকে পাওয়া গেছে!  কিভাবে তাদের লিনিয়েজ সম্পূর্ণ  ইউরোপকে ডমিনেট করল তার হিসেব খুবই ইন্টারেস্টিং। একটি পসিবিলিটি হল তাদের ডিএনএ ইউরোপে এসেছে ইয়ামনায়া বা Yamnaya নামে স্তেপ অঞ্চলের নমাডিক লোকদের আনা নতুন কালচার এর ওয়েভ এর মাধ্যমে।

স্টোন এজ ইউরোপ

ইউরোপে আসা প্রথম লোক হচ্ছে নিয়ানডারথালগণ এবং এরা কিছু জেনেটিক লেগেসিও রেখে গেছে। কিন্তু বেশিরভাগ আধুনিক ইউরোপিয়ান দের এনসেস্ট্রির জন্য যা দায়ী তা হল এর পরের ওয়েভগুলো। ইউরোপে প্রথম এনাটমিকালি মডার্ন হিউম্যান আসে ৪০,০০০ বছর পূর্বে। এরা প্যালেওলিথিক হান্টার গ্যাদারার ছিল যাদেরকে কখনও কখনও ক্রোম্যাগনন বলা হয়। এরা ইউরোপে অনেকটা বিচ্ছিন্নভাবে ইউরোপে জনসংখ্যা বৃদ্ধি করে আর তারা যে নিয়ানডারথালদের রিপ্লেস করে তাদের থেকে এদের লাইফস্টাইল খুব একটা ভিন্ন ছিল না।

এরপর মিডল ইস্টে একটি রিভোল্যুশনারি ব্যাপার ঘটে। এটা হল কৃষি যার ফলে প্রচুর পরিমাণে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। আমরা জানি প্রায় ৮,০০০ বছর পূর্বে কৃষি এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি ইউরোপ ও দক্ষিণ এশিয়ায় ব্যাপকভাবে শুরু হয়। কিন্তু যে জিনিসটা খুবই অস্পষ্ট তা হল কিভাবে এই মেকানিজমটি এত ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ল। এর কতটুকু কোন কৃষকের বাচ্চাকাচ্চার নতুন জায়গায় চলে যাওয়ার ফলে হয় আর কতটুকুই বা আশেপাশের হান্টার-গ্যাদারারদের এই নতুন ধরণের জীবনে অভ্যস্ত হবার ফলে হয়?

সম্প্রতি প্রাচীন হাড়ের ডিএনএ সিকুয়েন্স রিড করা সহ অন্যান্য আধুনিক টেকনোলজির ব্যবহার এই সব প্রশ্নে নতুন আলো দেখাচ্ছে। রিসার্চারগণ মডার্ন ইউরোপিয়ানদের ডিএনএ থেকে এই নিয়ান্ডারথাল ও ক্রোম্যাগনন এই দুই গ্রুপ এর এনসেস্ট্রি ছাড়াও ৩য় আরেকটি গ্রুপের অস্তিত্ব পেয়েছেন এই বছরের (২০১৫) প্রথম দিকে। আর অবাক করা এই তৃতীয় গ্রুপটার নাম হল Yamnaya

এই ইয়ামনারা ইউক্রেন ও রাশিয়ার স্তেপ অঞ্চল থেকে আসা নমাডিক পশুপালক ছিল। আর্কিওলজিকাল এভিডেন্সগুলো দেখায়, এরা ইউরোপে ৪,৫০০ বছর পূর্বে প্রবেশ করেছিল। সাথে করে এরা ঘোড়া, চাকা, তাদের বিখ্যাত ‘কুরগান’ বিউরিয়াল মাউন্ড ও সম্ভবত প্রোটো ইন্দো ইউরোপিয়ান ভাষা নিয়ে এসেছিল। প্রোটো-ইন্দোইউরোপিয়ান ভাষা হল বেশিরভাগ ইউরোপিয়ান এবং সাউদ এশিয়ান ভাষাগুলোর পূর্বপুরুষ ভাষা। কৃষি শুরুর আগে এদের সম্পদ, টেকনোলজি এবং আচরণ ইউরোপের পূর্বের অধিবাসীদের উপর কর্তৃত্ব করতে সাহায্য করে এবং এর ফলে এরা সমগ্র ইউরোপ জুড়ে তাদের জেনেটিক লেগেসি ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়।

An 1899 painting by Viktor Vasnetsov imagining a kurgan burial rite. wikimedia

এখন ৩৩৪ জন মডার্ন ইউরোপিয়ান ও মিডল ইস্টার্ন মানুষের ওয়াই ক্রোমোজোমের ভেরিয়েবিলিটি চেক করে আরেকটি ইন্টারেস্টিং প্যাটার্ন পাওয়া গেছে।

ওয়াই ক্রোমোজোম পপুলেশন নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী। প্রত্যেকটি মানুষের একটি ওয়াই ক্রোমোজোম থাকে যা সে তার পিতার কাছ থেকে পেয়েছে। অন্যান্য ডিএনএ এর মত ওয়াই ক্রোমোজোম এর ডিএনএ পরবর্তী জেনারেশনে পাস করার সময় অত পরিবর্তিত হয় না। তাই মিউটেশনের দ্বারা এর পরিবর্তন খুব ধীর গতিতে হয়। এই মিউটেশনগুলোকে ট্র্যাক করে বিজ্ঞানীরা পিতাপুত্রের সম্পর্কের ভিত্তিতে অনেক অতীত থেকে ফ্যামিলি ট্রি তৈরি করতে পারেন। প্রতিটি মানুষের কয়েকটি করে পুত্র থাকতে পারে, অথবা নাও থাকতে পারে। আবার কিছু ব্রাঞ্চ প্রতিটি জেনারেশনেই মারা যেতে পারে, এতে অন্যেরা আরও কমন হয়ে যায় এবং তারা নিজেরা আরও নতুন ব্রাঞ্চ এর জন্ম দেয়।

জেনেটিক রেভেলেশন

“নেক্সট জেনারেশন সিকুয়েন্সিং” নামক নতুন টেকনোলজির ফলে গবেষকগণ অনেক মিউটেশন সনাক্ত করতে পারেন এবং পূর্বের চেয়েও অনেক ডিটেইল্ড ফ্যামিলি ট্রি তৈরি করতে পারেন। নিচের ফিগার-১ এ ইউরোপিয়ান স্যাম্পল ইউস করে তৈরি করা একটি ট্রি দেখানো হল।

Figure 1: the Y chromosomal tree generated from our European samples, with their most recent shared ancestor at the top. Different major branches are displayed in different colours. Nature Communications

দুই তৃতীয়াংশ মডার্ন ইউরোপিয়ান পুরুষকেই কেবল মাত্র ৩টি ব্রাঞ্চ থেকে পাওয়া যায় ( I1, R1a এবং R1b)।  রিসার্চটি দেখায় যে এই তিনটি ব্রাঞ্চের সবগুলোই তাদের প্যারেন্টাল এনসেস্ট্রি থেকে বর্তমান মানুষদের ট্রেস করে (ফিগার ১ এ তিনটি ডট দ্বারা দেখানো হয়েছে)। প্রতিটি ব্রাঞ্চেই বিভিন্ন জেনারেশন এর পর জেনারেশন ধরে ঘটা মোট মিউটেশন গণনা করে দেখা গেছে এই ৩ জন মানুষ ৩,৫০০ থেকে ৭,৩০০ বছর পূর্বের মধ্যে বাস করত। এদের প্রত্যেকের লিনিয়েজই তাদের লাইফটাইমের পর শতাব্দি ধরে ইউরোপ ডোমিনেট করার জন্য বিষ্ফোরিত হয়!

একইভাবে, মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ ব্যাবহার করে একটি ম্যাটারনাল ট্রি জেনারেট করা হয়েছে যা সম্পূর্ণভাবে মা ও তার সন্তানদের মাধ্যমে বাহিত হবে। সেক্ষেত্রে এরকম সিমিলার এক্সপ্লোশন পাওয়া যায় নি। এটা ইন্ডিকেট করছে যে, এই প্যাটার্নের জন্য যে কাজ করা ফ্যাক্টরগুলো পুরুষের ক্ষেত্রে স্পেসিফিক। যেহেতু ওয়াই ক্রোমোজোমে কিছু জিন থাকে যা একজন পুরুষকে অন্যের তুলনায় বেশি ইভোল্যুশনারি এডভান্টেজ দেয়, জিনের সাথে চান্স ও কালচারাল ফ্যাক্টরগুলোও এর এক্সপ্লানেশন হিসেবে কাজ করবে।

পূর্বে প্রস্তাব করা হয়েছিল যে এই ব্রাঞ্চগুলো ইউরোপ জুড়ে এস্ট্যাবলিশড হয়েছিল ইয়ামনা লেগেসি ছড়িয়ে পড়ার সময়। একজন ভাবতেই পারেন যে, যদি একজন মেল এলিট অনেক কম ইয়ামনায়া এবং/অথবা ইউরোপিয়ান ওয়াই লিনিয়েজ এর প্যারেন্টাল এনসেস্ট্রি বহন করে ইয়ামনায়া কালচার এর সুবিধাগুলো নিয়ে ইউরোপে এসে এস্ট্যাবলিশড হয়, তাহলে সে অনেক নারীকে আকৃষ্ট করে তাদেরকে পার্টনার বানিয়ে অনেক সন্তানের জন্ম দিতে পারে। এর ফলে অনেক জেনারেশন ধরে এই লিনিয়েজগুলো অনেক জায়গা জুড়ে ছড়িয়েও যাবে। প্রকৃতপক্ষে এই ঘটনাটিই ইনফারেন্স ইউরোপে প্রথম নিউলিথিক ফারমারেরা কৃষি নিয়ে ইউরোপে আসার পরে হয়েছিল।

এরপর ২,১০০ এবং ৪,২০০ বছর পূর্বের মধ্যে ব্রোঞ্জ এজ চলাকালীন সময়ে, অন্য একটি ইন্টারেস্টিং জিনিস ঘটে। আমাদের ট্রি অনেকগুলো ছোট ছোট ব্রাঞ্চ এ ভাগ হয়ে যেতে থাকে। এর অর্থ এই যে, পুরুষের রিপ্রোডিউস করার হার বাড়ছে (বেশি পুরুষ সন্তান জন্মে অবদান রাখছে)। এটা কি তুলনামূলকভাবে মনোগ্যামাস রিলেশনে ফিরে আসার সিস্টেমকে রিপ্রেজেন্ট করছে? এমনও কি হতে পারে যে ইয়ামনায়া কালচার এর প্যাকেজ ছড়িয়ে যেতে যেতে একটা সময় আর অন্যদের উপর কর্তৃত্ব করতে পারে নি?

এই প্রশ্নের উত্তর আমাদের হাতে নেই। কিন্তু প্রতিনিয়তই নতুন গবেষণা নতুন নতুন এভিডেন্স নিয়ে আসছে। আর নতুন টেকনোলজিগুলোর অবদানে আমাদের অতীতের ছবিগুলো ধীরে ধীরে আরও পূর্ণ ও আরও আশ্চর্যজনক হয়ে উঠছে।

http://www.nature.com/ncomms/2015/150519/ncomms8152/full/ncomms8152.html

1 Comment

1 Trackback / Pingback

  1. জানা গেল ইউরোপিয়ান ও সাউদ এশিয়ানদের এনসেস্ট্রির একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য | bibartanpath

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.