চীনের নতুন লবণাক্ত জলে চাষযোগ্য ধানের প্রজাতি ২০০ মিলিয়ন মানুষের ক্ষুধা মেটাতে পারে

চীনের বিজ্ঞানীরা প্রচন্ড-শক্ত “লবণাক্ত ধানের” একটি স্ট্রেন বা জাত বা প্রজাতি তৈরি করেছে যা কৃষকদের লবণাক্ত পানিতে জন্মাতে সাহায্য করতে পারে এবং এই চাল বিপ্লব ছড়িয়ে দিয়ে ২০০ মিলিয়ন মানুষকে খাদ্য সরবরাহে  সহায়তা করতে পারে।

চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, চীনের পূর্ব উপকূলে পূর্বাঞ্চলীয় কুইনডায় কাইংডাও স্যালাইন-আল্কালি টলারেন্ট রাইস রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার-এর ইউয়ান লংপিং যাকে হাইব্রিট চালের জনক বলা হয়, এর মাধ্যমে ধানের প্রাজাতি উন্নত হয়েছে ।

১৯৭০ এর দশকে, হাইব্রিড চালের জাতগুলো বিকাশের জন্য প্রথম বিজ্ঞানীদের মধ্যে একজন ইউয়ান। চীনের জনসংখ্যা আগামী কয়েক দশক ধরে বেড়েই চলেছে বলে আশঙ্কা প্রকাশের ফলে, তার দল চালের অসংখ্য প্রজাতি তৈরি করতে সক্ষম হয় যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়, অধিক ফলন ধরে এবং আরো চাপ সৃষ্টি করে।বর্তমানে বিশ্বের ২০ শতাংশের বেশী চাল আসে তারই তৈরি করা ধানের প্রজাতি থেকেই।

চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের মতে, ইউয়ান বলেন, “যদি একজন কৃষক লবণ-সহ্যকারী ধানের কিছু প্রকার জন্মাতে চেষ্টা করে এখন, সে ১৫০০ কিলোগ্রাম ধান পাবে প্রতি হেক্টরে। এটা কোনভাবেই লাভজনক নয় এবং এমনি প্রচেষ্টারও মূল্যায়ন নয়”। তিনি আরো বলেন, “ফলন দ্বিগুণ করলে কৃষকরা ধান উৎপাদনে যথেষ্ট উৎসাহী হবেন।“

বছর পর বছর বৈশিষ্ট্য নির্বাচন, ক্রসব্রীডিং এবং জেনেটিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে ধান উন্নত করা হয়। গত গ্রীষ্মকালে, চীনের মূল ভূখণ্ড এবং কোরিয়ান উপদ্বীপের মাঝে পীত সাগর থেকে লবণাক্ত সমুদ্রের পানি ধানের ক্ষেতে সরবরাহ করে গবেষকরা প্রথমবারের মতো ধান চাষের প্রথম পূর্ণ-মাত্রার পরীক্ষা সম্পন্ন করেন।

এই পরীক্ষা সাফল্যের পর থেকে চাল ইতিমধ্যে ডিনার প্লেটে চলে আসে। চাল বিতরণকারী কোম্পানি বলেছে, তারা ইতিমধ্যে ৬ টন (৬.৬ মার্কিন টন) বিক্রি করেছে। বর্তমানে এটি বেশ দামি, সাধারণ ধানের চেয়ে প্রায় ৮ গুণ বেশী খরচ হচ্ছে,  পরবর্তীতে বাণিজ্যিকীকরণের কারণে মূল্য হ্রাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই ধান চাষে কীটনাশকের প্রয়োজনীয়তা কম, কারণ জীবাণু এবং পোকামাকড় পানির লবণাক্ততার এই উচ্চতর সংশ্লেষণে টিকে থাকা কঠিন।

চীনা গ্রামাঞ্চলের বিপুল অংশ খালি জমি আছে কারণ এখানের মাটি ও পানি খুব লবণাক্ত এবং ক্ষারীয়। কয়েকটি বন্যধান রয়েছে যা লবণাক্ততায় ইতিমধ্যেই টিকে থাকতে পারে, কিন্তু সাধারণত তাদের ১.১২৫ থেকে ২২৫ টন প্রতি হেক্টর (১.১২ থেকে ২২৪ মার্কিন টন প্রতি একর) যা তুলনামূলক খুব খারাপ ফলন। তবে এই নতুন হাইব্রিড প্রজাতি, প্রতি হেক্টরে ৬.৫ থেকে ৯.৩ টন (২.৯ ও ৪ ইউএস টন প্রতি একর) উত্পন্ন হয়। ইউয়ান দক্ষিণ চীন মর্নিং পোস্ট বলেন, এই উৎপাদন প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির ফলে খাদ্যের জন্য ৫০ মিলিয়ন টন (৫৫ মিলিয়ন মার্কিন টন) উত্পাদন করতে পারে, যা ২০০ মিলিয়ন মানুষকে খাওয়ানোর জন্য যথেষ্ট।

সব থেকে ভাল খবর হচ্ছে এটি স্বাদের পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়েছে বলে মনে হয়।

এক চীনা ভোক্তা দক্ষিণ চীন মর্নিং পোস্ট-কে বলেন, “আমার প্রেমিক বলেছিলেন যে তার গ্রামে চালের মতো। এটি খুব ভাল”।

  1. https://www.worldfoodprize.org/index.cfm/87428/40007/a_worldbrand_name_yuan_longping_the_father_of_hybrid_rice
  2. http://news.xinhuanet.com/english/2017-09/28/c_136646404.htm
  3. http://www.scmp.com/news/china/society/article/2115250/chinese-scientists-put-rice-grown-seawater-nations-tables

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.