সকল স্ত্রী হাইব্রিড সালামান্ডারেরা প্রজননের জন্য তিনটি ভিন্ন প্রজাতির পুরুষের কাছ থেকে জিন গ্রহণ করে

এই প্রথমবারের মত গবেষকগণ একটি হাইব্রিড প্রাণীর ক্ষেত্রে দুই এর অধিক প্রজাতির জেনেটিক এক্সপ্রেশনের ভারসাম্যকে বিশ্লেষণ করেছেন। এক প্রকার সালামান্ডার পাওয়া গেছে যাদের নারী সদস্যরা তিনটি ভিন্ন প্রজাতির পুরুষ স্যালাম্যান্ডারের সাথে মিলিত হয়, এবং এরপর এরা এই তিন প্রজাতি থেকে সমান সংখ্যক জিন ব্যবহার করে সন্তান উৎপাদন করে, যাদের প্রত্যেকেই নারী স্যালাম্যান্ডার হয়ে থাকে।

অনেকেই বায়োলজি ক্লাসে বা অন্যান্য জায়গায় জেনেছেন যে, কেবল মাত্র একই প্রজাতির সদস্যরাই যৌন প্রজননের মাধ্যমে সন্তান উৎপাদন করে থাকে। কিন্তু প্রচুর পরিমাণে উদাহরণ আছে যারা প্রকৃতির এই নিয়মের বিরুদ্ধে যায়, আর উত্তর আমেরিকার এম্বিস্টোমা (Ambystoma) স্যালামান্ডার এদের মধ্যে একটি প্রধান উদাহরণ। এই স্যালাম্যান্ডার প্রজাতিদের পপুলেশন একটু অদ্ভূৎ কারণ এদের কোন কোন প্রজাতির সকল নারীই হাইব্রিড হয়ে থাকে।

এখানে এই বিষয়গুলো কিছুটা জটিল। এরা উত্তর আমেরিকার গ্রেট লেকের আশেপাশের অঞ্চলে বসবাস করে। হাইব্রিডরা একাধিক বা সর্বোচ্চ পাঁচটি ভিন্ন প্রজাতির পুরুষের সাথে মিলিত হয়, আর এরপর বিষয়টা আরও অদ্ভূৎ হয়ে যায়। কিছু হাইব্রিড তাদের ডিম্বাণু থেকে শুক্রাণু নির্গত করে যা শুধুমাত্র ভ্রুণের বিকাশের জন্য প্রয়োজন হয়। কিন্তু অন্য হাইব্রিডরা পুরুষদের ডিএনএ এর কিছু অংশ নিয়ে নতুন সন্তান উৎপাদন করে এবং এর ফলে জন্ম নেয়া সন্তানরাও নারীই হয়।

হাইব্রিড স্যালাম্যান্ডার নিয়ে সাম্প্রতিক গবেষণাটিতে শেষোক্ত ধরণটি নিয়ে মনোনিবেশ করা হয়, যেখানে হাইব্রিড স্যালাম্যান্ডাররা পুরুষদের থেকে কিছু জিন নেয় এবং বাদবাকি জিনকে বাদ দিয়ে দেয়। এরা মূলত তিনটি প্রজাতির পুরুষ স্যালাম্যান্ডারদের সাথে এরা যৌন প্রজননে অংশগ্রহণ করে। এরা হল ব্লু স্পটেড স্যালাম্যান্ডার (Ambystoma laterale), স্মল মাউথেড স্যালাম্যান্ডার (Ambystoma texanum) এবং টাইগার স্যালামান্ডার (Ambystoma tigrinum)। এই আচরণকে ক্লেপ্টোজেনেসিস (kleptogenesis) বলা হয়, যার অর্থ হচ্ছে জিন চুরি করা।

গবেষকগণ সিদ্ধান্ত নেন যে তারা দেখবেন্ম এই হাইব্রিড স্যালাম্যান্ডাররা ঠিক কোন স্যালাম্যান্ডার প্রজাতি থেকে ঠিক কোন জিন গ্রহণ করে। আর গবেষণার মধ্য দিয়ে তারা অবাক হয়ে দেখলেন যে, নারী হাইব্রিডরা প্রত্যেক প্রজাতির পুরুষ থেকেই সমান সংখ্যক জিন গ্রহণ করে। গবেষকগণ মনে করছেন, প্রজাতিগুলোর জিনোমে ব্যালেন্সিং বা ভারসাম্য রক্ষার ফলে তাদের সফলতার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়, আর এর ফলে তারা সন্তান গ্রহণ করতে সক্ষম হয়।

গবেষণাটির কো-অথর মউরিন নেইমান বলেন, “আমাদের অনুকল্প অনু্যায়ী সফল প্রাণীদের মধ্যে ব্যালেন্সড বা ভারসাম্যপূর্ণ জিনের প্রকাশ থাকে। সম্ভবত এই ভারসাম্যের কারণেই এই বিশেষ হাইব্রিড বংশটি প্রজননের মাধ্যমে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।” এই গবেষণাটি জিনোম বায়োলজি এন্ড ইভোল্যুশন  জার্নালে প্রকাশিত হয়।

গবেষকগণ জিনের এই সুষমতা বা ভারসাম্যকে একটা স্পোর্টস টিমের সাথে তুলনা করেন, যে স্পোর্টস টিমটিতে সকল খেলোয়ারই সমানভাবে যোগ্য। যদি স্পোর্টস টিমটিতে যোগ্যতার ভারসাম্য না থাকত, অর্থাৎ কারও যোগ্যতা বেশি, ও কারও যোগ্যতা কম থাকত, তাহলে প্রধান খেলোয়ার আহত হয়ে গেলে পুরো দলটিই খেলায়  পরাজিত হবে। গবেষকগণ বলেন, যদি এই স্যালাম্যান্ডারদের মধ্যে ভারসাম্যহীন জিনোম থাকত আর এদের ডিএনএ এর প্রধান অংশে কোন ক্ষতি হত তাহলে এই উভচরদের ফিটনেস কমে যেত। প্রত্যেকটি প্রজাতি থেকে সমান সংখ্যক জিন নেবার ফলে তাদের ক্ষতির সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।

কিভাবে এই হাইব্রিড সালামান্ডারেরা প্রতিটা প্রজাতি হতে সমান সংখ্যক জিন সংগ্রহ করে তা এখনও অজানা। বস্তুত নারী হাইব্রিড স্যালাম্যান্ডাররা এই ব্যাপারটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে কিনা তাই অনিশ্চিত। গবেষকগণ পরবর্তীতে এই বিষয়ে গবেষণা করবেন বলে জানিয়েছেন।

 

তথ্যসূত্র:

  1. http://www.iflscience.com/plants-and-animals/allfemale-hybrid-salamanders-take-genes-from-males-of-three-different-species-to-breed/
  2. https://www.sciencealert.com/researchers-find-this-all-female-polyamorous-salamander-has-three-equal-daddies
  3. https://now.uiowa.edu/2017/06/promiscuous-salamander-found-carry-genes-three-partners-equally
  4. https://bmcevolbiol.biomedcentral.com/articles/10.1186/1471-2148-8-158
  5. http://www.nrcresearchpress.com/doi/abs/1139/G06-152?journalCode=gen&
  6. https://academic.oup.com/gbe/article-lookup/doi/1093/gbe/evx059

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.